অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৯

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৯
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

–মারেহ মা,ভাং*গার জন্য বুঝি এই রুমের দরজা টাই পাইসে!কোন হাবা রামের কাজজ,,,জ,,
দরজায় তাকাতে বাকি কথা মুখেই রয়ে গেলো। আরে ভাই এইভাবে তাকাইস না।ড*র লাগে তো!ঐ দৃষ্টি আমার বাচ্চা হার্ট নিতে পারবে না।চোখ দিয়া মানুষ খু*ন করার প্রশিক্ষণ নিসোস নাকি!

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি বনমোরগটা আমার দিকে রা*গী দৃ*ষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই বার ব্যাপার টা আমি বুঝলাম।দরজা বা*রি ভাইয়াই দিয়েছে। হয়তো আমার না বলে আসার জন্য এভাবে রে*গে আছেন। উনার এখনকার রা*গটা জায়েজ। তাই বলে আমার এতো সুন্দর ঘুমটার এভাবে তেরোটা বাজাতে হবে!ব্যাটা লেজ কাটা বাদর! আমি তোরে কইছিলাম আমারে হারিকেন লাগাই খুজতে! হুদাই এত্তো কাহিনি হইছে। মার কাছে বকা খাইছি।ব্যাটা বেদ্দপ! এখন আবার আমারে এখানে ডর লাগাচ্ছোস। যা হুশশ,,,শ!অন্য জায়গায় যা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–আমাকে না বলে ভাসিটি থেকে বেড়িয়েছো কেনো?এতো সাহস কেনো তোমার?বলো…
উনার ধমকে আমার আত্মা কেপে গেল।।
–আবে আমি ভেবেছিলাম আপনি কাজে যাবেন, আপু তো ক্লাসে ছিলো। তাই বাসায় চলে এসেছিলাম।
–তোমাকে এতটা ভাবতে কে বলেছে? আমি বলেছি? স্পিক আপ, ডাফারর
–আমি চাইনি আমার জন্য আপনার কাজে ঝামেলা হো…

–তোমার চাওয়া মাই ফুট!ফোন কোথায় ছিলো তোমার?বন্ধ কেনো রেখেছো?কয়বার কল করেছি হিসেব আছে?সবাই কতো আ*তংকে ছিলো জানো?
এতটা চিল্লিয়ে বললেন যে আমার কানের অবস্থা খা*রাপ। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়েই বললাম,
–ভাইয়া ফোন অফ ছিল,,,লো।ফোনে…

আর কিছুই বলার আগেই আবার কিছু আ*ছাড় পড়ার শব্দ পেলাম। তাকিয়ে দেখি আমার শখের ফোন ফ্লোরে তিন চার ভাগে খন্ড হয়ে আছে।অশ্রু*সিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছি ফোন টার দিকে। ক*ষ্ট লাগছে ভীষণ ক*ষ্ট!আমার বাবার দেওয়া ফোন ছিলো এটা। এসএসসি তে এ+ ও বোর্ড বৃওি পাওয়ার জন্য আব্বু উপহার হিসেবে ফোনটা কিনে দেয় আমাকে। যদিও আপুরটা ফোনটা অনেক বেশি দামী ছিলো কিন্তু আমার কাছে এটাই শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। দু’বছরে একটুও আঁচড় পর্যন্ত লাগতে দেই নি আমি। আর এখন সেই ফোন আমার সামনে খন্ড আকারে পরে আছে।

— ফোন যেহেতু অফ থাকবে তাহলে সেই ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। ঝামেলা শেষ।এবারের তোমার ভু*লের শা*স্তি তোমার ফোনকে দিয়েছি নেক্সট টাইম এরকম সাহস দেখালে তোমার জন্য প্রচুর খারা*প হবে।মনে রাখবেন মিসেস আঁধার রেজোয়ান চৌধুরী।
এবার আমার প্রচুর রাগ হলো,প্রচুর!! ইচ্ছে করছে ভাইয়াকে খু*ন করে ফেলতে। অনেক দেখছি তোর রাগ, অনেক স*য্য করছি!তাই কলার নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিলাম। ভাইয়া রা*গী স্বরে গজে উঠে বললেন,

—–হাউ ডেয়ার ইউ!!!কলার ছাড়,,,,ড়ো,,,,,ঐশী। বেশি সাহস করছো তুমি!
আমি তার কথা পাত্তা না দিয়েই বললাম,,
—আমি ঐশী। আমার নামের সাথে নিজের নাম জুড়বেন না।আর সাহস এর কি দেখেছেন আপনি!খু*ন করে ফেলবো আপনাকে আমি। কোন অধিকারে আমার ফোন ভে*ঙেছেন আপনি?ওটা আমার বাবার দেয়া প্রথম উপহার ছিলো,,, এতদিন যাবৎ সামলে এসেছি।আর আপনি! কেনো করেছেন? বলুন?? কিসের এতো অধিকার দেখাচ্ছেন আপনি?আমাকে কি আপনি হাতের খেলনা পেয়েছেন,, যে যেভাবে ইচ্ছে চালনা করবেন।
আমার হাত থেকে কলার ছাড়িয়ে ভাইয়া বললেন,

–তোমার প্রতি সব অধিকার আছে আমার। আমি যেমনটা চাইবো তোমায় ঠিক তেমনি চলতে হবে।
তার কথাটায় আমার গা জ্ব*লে উঠলো। তার দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
—অধিকার,,,,সিরিয়াসলি!কিসের অধিকার এর কথা বলছেন আপনি? আপনার কী স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়েছে নাকি?ভুলে গেছেন বিয়ের রাতে কি কি বলেছিলেন,,, কতটা অপ*মান করেছিলেন। নাকি আপনার মস্তিষ্ক এতোটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে যে, আমাকে কথাগুলো মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে।আপনাকে আমি বলেছিলাম না আমার থেকে দূরে থাকতে?তাহলে আমার ব্যাপার এ এতো নাক গলাচ্ছেন কেন!

নিজেই তো বলেছিলেন আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে। আমি তো তাই করছি, তাহলে কেনো এতো দরদ প্রকাশ করছেন আমার প্রতি?কেনো মুহূর্তে মুহূর্তে গিরগিটির রুপ নিচ্ছেন। বলেছি তো চলে যাবো ছমাস পর তাহলে ছয় মাসের জন্য কেনো এতো অধিকার দেখাচ্ছেন? কিসের প্রতি*শোধ নিচ্ছেন।

সেদিন রাতে আমার আত্মসম্মান এ আঘাত করেছেন। এখন আবার আমার প্রিয় জিনিসটা ভে*ঙে ফেলেছেন। এভাবে আমার দূর্বলতায় আঘাত করে কি লাভ পাচ্ছেন আপনি? নাকি এরূপ ব্যবহার করে আপনার প্রতি আমাকে দু*র্বল করার চেষ্টা করছেন না তো?আপনি বলার পর ও আপনাকে বিয়ে করেছি তার প্রতিশো*ধ এভাবে নিতে চাচ্ছেন!!
–কি হলো উত্তর দিন?এতক্ষণ তো ভাষণ দিচ্ছিলেন। এখন চুপ হয়েছেন কেনো।উত্তর পাচ্ছেন না নাকি!

তাকিয়ে ছিলাম উত্তরের আশায় তার দিকে। কিন্তু তিনি হাত মুষ্টিব*দ্ধ করে দাড়িয়ে আছেন। অতপর তার পায়ের ধারের টি টেবিলের পায়ায় জোরে এক লা*থি দিলেন। শব্দে আমি কে*পে উঠলাম। তারপর হনহন করে চলে গেলেন রুমের বাহিরে।
টপটপ করে আমার চোখের অশ্রু ঝরছে। হাতে আমার ভা*ঙাচূড়া মোবাইল এর অংশ বিশেষ। হয়তো আর ঠিক হবে না মোবাইল টা।

–এই পাটকাঠি তুমি আজকে কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলা?আমি আর ভাইয়া তোমাকে পুরো,,,,,,,
আপুর গলার আওয়াজে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মোছার প্রয়াস চালিয়ে আপুর দিকে তাকালাম।
—এই ঐশী তুমি কাদ*ছো!তোমার ফোন ভাং*গা কেনো? ভাইয়া ভে*ঙেছে?
আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁ*দে দিলাম। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আপু বললেন
–দেখি আর কান্না করে না। থামো বোন।ভাইয়া রে*গে ছিলো ভীষণ! রেগে গেলে তার ভাং*চুর করার স্বভাব আছে। এর আগে নিজের কয়টা ফোন ভাঙছে তার হিসেব নেই।আমারও দুটো পছন্দের ফোন তার হাতে শ*হীদ হয়েছে।

–আমার বাবার দেওয়া প্রথম উপহার ছিলো এইটা। কান্না করতে করতেই বললাম আমি।
–তুমি জানো, ভাই তোমাকে পাগলের মতো খুঁজেছে। আমিও খুঁজেছি। আমরা ভীষণ চিন্তিত ছিলাম ময়না পাখি।মা যখন বলেছে তুমি একা একা বাসায় চলে এসেছো তখন ভাই একটু স্থির হয়েছে। কিন্তু তার রাগ একবিন্দু ও কমে নি বরং বেড়েছে। তাই একটু মিসবিহেব করে ফেলেছে হয়তো। সমস্যা নেই তোমাকে নিউ ফোন এনে দিবে অথবা আমি বাবা কে বলে এনে দিতে বলবো।

–লাগবে না নতুন। আমাকে এইটাই ঠিক করে এনে দাও আপু,প্লিজ
–এটা আর ঠিক হবে না। এটার পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে।
আপু আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার মাঝেই মা আসলেন।মা জিজ্ঞেস করতেই আপু মাকে বুঝিয়ে বললেন। মা শুনে রেগে গেলেন। বললেন

–ধ্রুবর কাজটা একদম ঠিক হয় নি। নিজের রা*গটা এখন পর্যন্ত সে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেনি। দিন দিন অস*ভ্যের মতো আচরণ করছে।আজ ফিরুক আমি আচ্ছা করে বকে দিবো।এরপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
–তুমি কিছু মনে করো না, মা। ও অনেক জিদ্দি। ছোট থেকেই নিজের রাগ কন্টোল করতে পারে না।আমার আলমারি তে একটা নতুন ফোন আছে তুমি সেটা ব্যবহার করবে।কোনো না আমি শুনবো না।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৮

মা আমাকে অনেক সময় পর্যন্ত সান্ত্বনা দিয়ে তারপর চলে গেলেন। আপু এখন মার দেওয়া ফোনটায় সীম সেট করায় ব্যস্ত। আমি বুঝতে পারছি না ভাইয়ার আমাকে নিয়ে এতো চিন্তার কারণ। উনার তো পছন্দ করা মেয়ে আছে তাহলে উনি হটাৎ এতো পসেসিভ হওয়ার কারণ!কী চান উনি!

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১০