অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৮

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৮
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

–ঐশী স্যার এর সব প্রশ্নের উত্তর দাও।আপু বলল,
আজকে আমার ভার্সিটি ভর্তির তারিখ ছিলো । আলো আপু আর আমাকে হিটলারটা নিয়ে এসেছে। যেহেতু আলো আপু এখানে পড়ছে তাই আজকে ক্লাস বাদ দিয়ে সে আমাকে হেল্প করার জন্য এসেছে। ভতির টাইম অনেক আগেই শেষ।সীট খালি থাকায় আমার আবেদন পরে গ্রহণ করা হয়েছিল। এখানের প্রিন্সিপালের সাথে নাকি আঁধার ভাইয়ের অনেক ঘনি*ষ্ঠ সম্পর্ক তাই সবার কার্যক্রম ডিপার্টমেন্টে হলেও আমারটা প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমে হয়েছে যেহেতু আমি সময় মতো ভতি হতে পারিনি তাই। উনার ফোনে কল আসায় তিনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।.

–আঁধার তোমার কি হয়?প্রিন্সিপাল স্যার জিজ্ঞেস করলো।
কি উওর দিবো আমি!সত্যি বললে হিটলার যদি আবার রুড বিহেভ করে তখন! তাই আমতাআমতা করে বললাম,
–ইয়ে,,মানে,,,ভাইয়া….
–নিজের হাসবেন্ড কে বুঝি ভাই বলতে হয়!প্রিন্সিপাল স্যার চশমা নাক বরাবর টেনে বললেন কথাটা।
এইবার আমি কি বলবো!বেটা ব*দমাইশ,হা*রামি,চারচোখ যখন জানোসই তখন আবার আমার থেকে জানতে হবে।চরম লেভেল এর ফা*জিল প্রিন্সিপাল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— স্যার আমার ভাবী ভাইকে “ভাইয়া” বলেই ডাকে।হেসেই আলো আপু স্যারকে বললো।
এমন সময় আঁধার ভাইয়া আসলো সেই কক্ষে। প্রিন্সিপাল স্যার তাকে মুচকি হেসে বললেন,
— তোমার বউ দেখি তোমাকে ভাই বলে,,,ধ্রুব!সে এখন কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে পা দিয়েছে। কিছুতো তুমিও তাকে শিক্ষাও। সব শিক্ষা তো আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া সম্ভব নয়।।
-“কিছু মানুষ মস্তিষ্কে নয়,শুধু হাতে পায়ে বড় হয় “-আপনি হয়তো এই প্রবাদ টা শুনেছেন স্যার আঁধার ভাইয়া এটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলেন।

আবারো অ*পমান করলো আমায়।ই*বলিশ তুই নিজেই তো একটা গা*ধা।আবার আমাকে উল্টা পাল্টা বলিস।
আমি আলো আপুর সাথে প্রিন্সিপালের রুম থেকে বের হলাম। হিটলার টা এখনও সেই টাকলু স্যার এর সাথে কথা বলছে।
আপুদের ভার্সিটিটা অনেক বড়ো। আপু আর আমি একই ডিপার্টমেন্ট এ শুধু আপু আমার সিনিয়র হয়। কথা বলতে বলতেই আমরা আমাদের ডিপার্টমেন্টে গেলাম। আমাদের ডিপার্টমেন্ট পাহাড়ের একেবারে শেষ সীমানায়। উঠতে উঠতে আমার পায়ের অবস্থা নাজেহাল। বুঝলাম না নিচে কি জায়গার অভাব ছিল যে পাহাড়ি রাস্তায় ডিপার্টমেন্ট দিতে হবে।আমি এমনিতেই ক্লাসে ১০মিনিট লেইটে যাই।কিন্তু এখন তো আমি যাইতে যাইতেই ক্লাস শেষ হয়ে যাবে।

আপুর নাকি এখন অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে তাই আপু ক্লাসে গেছে। আমি একা একা পুরো ডিপার্টমেন্ট ঘুরে ফিরে দেখলাম।প্রশাসন ভবনে ফিরে আসতে আমার ১৫ মিনিট লাগলো। কিন্তু এখনো স্যার আর তার কথা শেষ হয় নাই।আমি কি করবো চলে যাবো নাকি দাড়াবো?ধূর উনি তো মেবি গাড়ি নিয়ে উনার কাজে যাবেন। আমি বরং চলে যাই। বাসা তো বেশি দূর নয়।৩০ মিনিট লাগবে।বেড়িয়ে গেলাম সেখান থেকে। আপু ক্লাসে আর ফোনে টাকাও নাই তাই আপুকে জানানো হলো না। সমস্যা নেই বাসায় গিয়ে মার ফোন দিয়ে জানিয়ে দেবো।

প্রায় পনেরো মিনিট হাটলাম কিন্তু কোনো গাড়ি পেলাম না। দুপুর টাইম তাই সব ফিলাপ রয়েছে। নতুন জুতা পরার কারণে পায়েও ফো*স্কা পরে গেছে।তাই জুতো খুলে হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য এখন একটাই রিকশা খোঁজ করা।
প্রখর রোদের কারণে উত্ত*প্ত গরম নগরীর মতো মনে হচ্ছে জায়গা টা কে। খালি পায়ে রোদের ভিজে একেবারে নিজেকে হুমায়ুন আহমেদ এর গল্পের হিমুর মতো মনে হচ্ছে। শুধু একটা হলুদ রঙের জামা পরলেই পুরাই হিমু। সবার নাকি হিমু হওয়ার অনেক ইচ্ছে কিন্তু হিমু সমগ্র পরে আমার হলুদ রঙের উপর এক প্রকার অনিহা চলে এসেছে কারন হলুদ রঙের কোনো কিছু দেখলেই আমার একটা লাইন মনে পড়তো,,

–হিমুর হলুদ রঙ পছন্দ কারণ সে খালি পায়ে হাটতে গিয়ে প্রায়ই বি*ষ্ঠায় পাড়া দিতো,,আর বি*ষ্ঠার রঙ হলুদ 🐸
সিরিয়াসলি এই লাইনটা না লিখলে কি এমন অ*শুদ্ধ হয়ে যেতো হুমায়ুন আহমেদ এর!
এসব ভাবনার মাঝেই একটা রিকশা পেলাম। তাই ঝটপট উঠে পরলাম তাতে।ত্রিশ মিনিটের রাস্তা অথচ আমি হাটলামই ৩০ মিনিট।কথায় আছে না,,,,অতি চা*লাকের গ*লায় দড়ি এখন নিজের কপালেই নিজের বারি দিতে ইচ্ছা করতেছে। তবুও রিকশা পাইছি এটাই ঢেরবেশি নয়তো আরও হাটতে হাটতে বেচারা পা দুটো অকালে শ*হীদ হয়ে যেতো। রিকশায় যেতেই অন্য একটা রিকশা তে দেখলাম একটা কাপল কি সুন্দর মেয়েটা ছেলেটার কাধে মাথা রেখে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। মুহূর্তেই আমার মনটা বি*ষাদে রূপান্তরিত হলো।

কিন্তু আমি মন খা*রাপ একদমই করবো না।থাক ভাইয়া যখন আমাকে ডি*ভোর্স দিয়ে দিবে তার পরে আমি একটা অসুন্দর কেয়ারিং ছেলে দেখে বিয়ে করে নিবো। কারণ সুন্দর পোলা দের অ*হংকার অনেক বেশি একদম আধার ভাইয়ার মতো। লাগবে না আমার এতো ধলা বিলাই মার্কা বনমোরগ,, হুহহ,,,,,আমি দেশি আবুল আর বলদ মার্কা একটা মোরগ কে বিয়ে করবো নে। আপাতত নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবি।
বাসায় পৌঁছে গেলাম। নেমে ভাড়া দিলাম চাচাকে,

-ভাংতি দেন মা, ৫০টাকার ভাড়া, আমার কাছে ৫শত টাকার নোট ভাংতি নেই।
আমার কাছেও ভাংতি আর নেই। সকালে আমার শশুর মশাইকে সালাম করে বেরিয়ে আসতে তিনি আমায় তিন হাজার টাকা দিয়েছেন। এখান থেকেই চাচাকে আমি এই নোটখানা দিলাম।বাসার আশেপাশে সব দোকান ও অফ। তাই আর উপায় না পেয়ে বললাম,,

-চাচা রেখে দিন পুরোটা,লাগবে না ভাংতি দেওয়া।
চাচা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
–আল্লাহ তোমাকে সুখে রাখুক, তোমার আশা নিয়ত পূরণ করুক।
যখন কেউ স্নেহ মাখা কন্ঠে হাসি মুখে দোয়া করেন তখন আর কি লাগে মনটাকে প্রফুল্ল করতে! কিছুই না এই অল্পতেই আমি ভীষন ভাবে সন্তুষ্ট। এই হাসির জন্য হাজার টাকা ল*স হলেও এই হাসিই লাভজনক আমার জন্য।
বাসায় ডুকে দেখলাম মা চিন্তিত হয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখেই তাড়াতাড়ি আমার কাছে এগিয়ে আসলেন আমি কিছু বলার পূর্বেই তিনি আমাকে দু হাতে ধরে জিজ্ঞেস করলেন

— তুমি কোথায় গেছিলে???? না ধ্রুবকে কিছু বলেছো, না আলো কে কিছু বলেছো! কোথায় গিয়েছিলে? আমি এত্তো গুলো কল দিলাম।ধ্রুব আর আলো দুজনেই কল দিচ্ছে কিন্তু তোমার ফোন সুইচড অফ!! কতটা টেনশনে ফেলে রেখেছো এতক্ষণ জানো!ধ্রুব আর আলো তোমাকে পুরো ভাসিটি খুঁজে ফেলেছে। কোথায় হাওয়া হয়ে গেছিলে?
-মা, আমি তো বাসায় আসছিলাম। ভেবেছি ভাইয়া নিজের কাজে যাবেন। আলো আপু তো ক্লাস করবে তাই নিজে নিজে চলে আসি। রাস্তায় গাড়ি পাইনি তাই লেট হয়েছে আসতে। আর আমার ফোনে চার্জ ছিলো না তাই অফ হয়ে গেছে। ভ*য়ে ভ*য়ে বললাম আমি।

–তুমি একা কেনো আসবে?তোমার কি একটা বার ও মনে হলো না ধ্রুব কে জানিয়ে আসতে অথবা আলো কে বলে আসলেই তো হতো।সে দুজন তোমায় খুঁজে খুঁজে পা*গল হয়ে যাচ্ছে…..
এর মধ্যেই মায়ের ফোনে ভাইয়ার কল এলো। মা রিসিভ করে বললেন,
–ধ্রুব, ঐশীকে আর খুজতে হবে না। ও একা একাই বাসায় চলে এসেছে। গাড়ি পায় নি তাই ওর দেরি হয়েছে। তুই শান্ত হোহ।আলোকে নিয়ে তুই ও বাসায় চলে আয়।

-মা আমি খুবই দুঃ*খিত। আমি আসলে বুঝতে পারি নি আপনারা এই বিষয় নিয়ে এতটা হাই*পার হয়ে যাবেন। আমি এরপর থেকে আপনাকে জানিয়ে সব কাজ করবো। রাস্তায় কোনো গাড়ি পাইনি এছাড়া রিকশাও অনেক পরে পেয়েছি এই কারণে বেশি লেট হয়েছে।
–আমাদের কতটা টেনশনে ফেলেছো তুমি জানো? এর পর থেকে এরকম ভু*ল যেন না হয়,,,,,মনে রাখবে এটা।
–আচ্ছা মা।আমি মাথা নিচু করে বললাম।

–যাও গোসল করে নেও। পুরো ঘামে ভেজা তুমি। তারপর যেন খাবার টেবিলে খেতে দেখি তোমায়। যাও।।
আমি এবার রুমে এসে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম। গোসল শেষে নিচে গিয়ে দেখি আলো আপু আর ভাইয়া এখনো ফিরে নি।ব্যাপারটা আমার ভীষণ খারাপ লাগলো। উচিত ছিলো আজকে অন্ততপক্ষে আপুদের সাথে আশা। শুধু শুধু ভালো করতে গিয়ে তাদের ঝামে*লা বাড়িয়ে দিলাম। এসব ভাবনার মাঝেই খাবার শেষ করলাম।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৭

আজকে অনেক হাটছি একটু রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন। তাই রুমে গিয়ে আগে ফোন টা চার্জ এ দিলাম।বালিশ নিয়ে সোফায় পিঠ টা এলিয়ে দিলাম। আহ!শান্তি লাগছে এবার। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরই পাইনি।
আধ ঘন্টা পর খুব জোরে রুমের দরজার বারির শব্দে আমার এতো সাধনার ঘুম ভে*ঙে গেলো। আমি লাফিয়ে উঠলাম। সাথে সাথেই উঠে দাড়ালাম। কি হয়েছে! তা বুঝার চেষ্টা করলাম…

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৯