অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৭

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৭
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

বাহিরে এখনো আঁধার, বিছানায় তাকিয়ে দেখি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ভাইয়া।কি সুন্দর ঘুমাচ্ছেন তিনি। কি শা*ন্ত দেখাচ্ছে তাকে! কতো রু*প দেখবো তার গির*গিটির মতো রুপ ব*দল করছে ব্যাটা,,
–শুধু প্রত্যেক ভোরের আলোটাই নতুন,বাকি সব আগের মতোই ফ্যাকাশে,ভীষণ রকম ফ্যা*কাসে।এই আমি পুরোটাই ফ্যা*কাসে।
অথচ নিজেকে এখন অনেক বেশি অনেক তু*চ্ছ একজন মানুষ মনে হয়!

মনে হয় অহেতুক এই বেঁ*চে থাকা! কোনো মানেই নেই বে*চে থাকার! ছন্দহীন প্রতিটা মুহূর্ত। জীবনের প্রতিটা অধ্যায় ধূসর রঙের। হাজারো বি*ষন্নতার মাঝে এক টুকরো সুখ খোঁজের বিনিময়ে অসংখ্য শব্দহীন বেদনা ফেরত পাওয়া !
দাড়িয়েই আমি সূর্যোদয় দেখলাম। কি অপরুপ চিত্র! ভীষণ সুন্দর দৃশ্য! কিন্তু আমি সেখানে বি*ষাদ খুঁজে পেয়েছি। রুমে এসে দেখি আঁধার ভাই এখনো ঘুম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি আমার সাটিফিকেট আর এবারের মার্কশীট সব গুছিয়ে নিলাম।ভাবলাম নিজের কিছু জিনিসপত্রও নিবো কিন্তু আম্মুর কথা মনে করে আর নেওয়া হয়নি।আজ নাকি আমার শশুর বাড়িতে যেতে হবে কিন্তু আমাদের আরও দুদিন থাকার কথা ছিলো। আঁধার ভাইয়া হঠাৎ মত পাল্টে ফেলে। তাই রাতেই বলে সকালে বেরোবে তৈরি থাকতে। আমি আমার বুক শেল্ফ থেকে তিনটি উপন্যাসের বই নিলাম। ছোট থেকেই আমি উপন্যাসের প্রতি আ*সক্ত।ভাইয়া আগে আমার জন্য নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে আমি নিজেই পছন্দ মতো কিনতাম।

সকাল ৯টায় ছোট চাচী দরজায় নক দেয়ায় আমার ঘুম ভেঙে গেলো,আমি পড়ার টেবিলে মাথা রেখেছিলাম। কখন যে চোখ লেগে গেছে টের পাইনি। চাচী ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিচে যেতে বলে চলে গেলেন। আঁধার ভাইয়াকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে বললাম,

–ভাইয়া চাচী নিচে নাস্তা করার জন্য যেতে বলেছে।
ডাইনিং টেবিলে আব্বু সবার নাস্তা করার মাঝেই আঁধার ভাইয়া কে বললেন,
-বাবা আরো দুদিন থেকে গেলে হতো না।মেয়েটাকে না হয় রেখে যাও। দুই তিনটা দিন থাকুক তারপর আমি দিয়ে আসবো।

আমি ভাবলাম ভাইয়া হয়তো আমার এখানে থাকার বিষয়ে মানা করবে না। আমি তাই মনে মনে খুশিই হলাম কিন্তু তার উত্তর শুনে আমার খুশি বেশি সময় স্থায়ী হয় নি।
–স*রি বাবা,আমি এ ব্যা*পারে কিছুই করতে পারবো না,আম্মু ওকে ছাড়া গেলে আমাকে আ*স্ত রাখবে না। তার ছেলের বউ তাই আপনি আম্মুর কাছ থেকেই পারমিশন নিন।
আব্বু আর কিছুই বললো না।
আমরা ব্রেকফাস্ট করার পর পরই বের হলাম। আমি গাড়িতে গিয়ে বসার পর তিনি আবার গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতর গেলেন,

আঁধার ভাইয়া আমার আম্মুর কাছে গিয়ে মানি ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে উপস্থিত সবার সামনে বললেন,
–মা, টাকা গুলো রাখুন।
-বাবা এগুলো দিয়ে কি করবো আমি?আম্মু বললেন।
আব্বুও অবাক দৃ*ষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ততক্ষণে বাসার সবার দৃষ্টি আম্মুর দিকে পড়লো

–যত প্রয়োজন মিষ্টি কিনে নিয়েন।আমার বউ যে দুটো মিষ্টি নিয়েছিলো তার ক্ষ*তিপূরণ দিয়ে দিলাম। তবে একটা কথা সে কিন্তু তার বরের টাকার মিষ্টি খেয়েছিলো। অথচ আপনি চু*রির অ*পবাদ দিয়েছেন! তার ব*রের টাকায় তার যে অধিকার আছে আপনি তা ভুলে গেছেন তাই মনে করিয়ে দিলাম। রাতে পানির জন্য নিচে না নামলে হয়তো আপনার দ্বিতীয় রূ*প টা দেখা হতো না,, শাশুড়ী আম্মা

কথাগুলো বলে ভাইয়া বেড়িয়ে আসলো। আমি ততক্ষণে নিজের জায়গায় পুনরায় গিয়ে বসলাম। বুঝতেই দেই নি যে আমি দরজার সামনে দাড়িয়ে সবটাই শুনেছি। এই মুহূর্তে আমি তার আরেক ভিন্ন রূপ দেখলাম। আচ্ছা উনি এসব কেনো করছেন! আমার বিষয়এ তিনি হঠাৎ করে এতো ভাবছেন কেনো?দায়িত্ববোধ সম্পন্ন করছেন!হয়তো

~~সী*ট বেল্ট লাগাও।
–এই মেয়ে সীটবেল্ট লাগাতে বলেছি, কথা কানে যায় নি তোমাররর?
আঁধার ভাইয়ার ধমকে চিন্তার জগৎ থেকে বিদায় নিলাম।
— হ্যাঁ…মানে লাগাচ্ছি,ভাইয়া।
প্রায় আধা ঘণ্টা হবে তিনি ড্রাইভ করছেন।আমার হু*ট করেই খারাপ লাগা শুরু হলো। আমি ব*মি যাতে না হয় সেই জন্য মেডিসিন নিয়েছিলাম কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছে বমি হবে তাই কোনোভাবে ক*ন্ট্রোল করে বললাম,

–ভাইয়া, প্লিজ গাড়ি থামান,,,, ন।
তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে গাড়ি থামিয়ে বললেন,
-এনি প্রবলেম?
আমি তাকে কিছু না বলে কোনোমতে বমি কন্ট্রোল করে গাড়ির দরজা খুলে দ্রুত নামবো কিন্তু সীট বেল্ট এর কারণে পারলাম না। ভাইয়া আমার কাহিনী দেখে কিছু একটা ভেবে আমার কাছে এসে বেল্ট খুলছিল তখনই ঘটে গেল বিপ*ত্তি আমি তার গায়েই বমি করে দিলাম।

কী করলাম আমি! শেষ পর্যন্ত তার গায়ে। ঐশী তুই আজকে শে*ষ! এই বেটা নির্ঘাত তোরে আজকে মা*ইরে গু*ম কইরে দিবে।মিনিমাম দশ বারোটা থা*প্পড় তো তুই খাবি আজকে এই বনমোরগ এর হাতে!
উনার দিকে তাকিয়ে দেখি,উনি হত*বিহ্বল ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বেচারার ব্লাক কম্বিনেশন এর কোট এবং শার্ট দুটোরই নাজেহাল অবস্থা। আমার কি দো*ষ! আমিতো অনেক কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু তার সীট বেল্ট এর কারণে তো এরকম টা হলো।ইশ!বেচারার কি হালটাই না হলো।

আমি এবার গাড়ি থেকে নেমে আরও বমি করলাম। শেষে তাকিয়ে দেখি উনি গাড়ি থেকে নামছে। টিস্যু দিয়ে মোছার পরোও তার গায়ের শাটে স্পষ্ট দাগ দেখা যাচ্ছে। এর আগে তো আমার হাতে গরম কফি ঢেলেছে এবার কি করবে! এখন নিশ্চিত আমাকে চু*লায় দিয়ে রান্না করে ফেলবে। আমি মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তার রা*গের স্বীকা*র হওয়ার জন্য।সে বলল,

–আমি বোতলের পানি ঢালছি তুমি মুখে পানি দাও। আর্লি করো,, মা কল দিয়েছে।তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।
আমি অবাকের চূ*ড়ান্ত পযা*র্য়ের আছি। মনে হচ্ছে কল্পনার জগতে আছি।আজকে কি আমার শুধু অবাকই হওয়ার দিন!এই মানুষ টা এরকম অদ্ভুত আচরন করছে কেনো!উনার কী স্মৃ*তিশক্তি হ্রা*স পাইসে নাকি হারাই ফেলসে!আশ্চর্য!
আমরা বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথেই মা জিজ্ঞেস করলো,

-ধ্রুব,,,কীরে তো জামার এই অবস্থা কীভাবে হলো?মায়ের প্রশ্নে বাবা আলো আপু আর নীল ভাইয়াও তার দিকে তাকালো।
ভাইয়ার মেজাজের গতিবিধি এখন শী*র্ষে। তাই আমিই পুরো কাহিনি বললাম।
আমার কথা শুনে আলো আপু আর নীল ভাইয়া হেসে গড়া*গড়ি খাচ্ছে।
আঁধার ভাইয়া কিছু না বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলেন। আমি রুমে যাইনি। ডাইনিং রুম থেকে হাত মুখ ধুলাম। ক্লান্ত লাগছে খুব তাই ড্রইং রুমে আলো আপু আর নীল ভাইয়ার সাথে বসে তাদের আলাপে যোগ দিলাম।

ড্রইং রুমে বসে কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা নিয়ে এখন ও ভাবছিলাম।
আন্টি আমাদেরকে কিছু ফ্রুটস আর আমার হাতে এক গ্লাস জুস ধরিয়ে দিলেন।
তখনই মার কন্ঠ পেলাম,

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৬

-গ্লাসটা মিনিটে শে*ষ করো।আর বাপের বাড়ি যাওয়ার দরকার নেই। ভালোর জন্য পাঠাইছি অথচ রো*গী হয়ে ফিরছো! এমন জানলে পাঠাইতাম না।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৮