অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৬

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৬
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

“ঐশী,তুমি এখনো রুমে যাচ্ছো না যে,কাল তো তোমাদের রিসিপশন। সকাল বেলা তোমাকে সাজানোর লোকজন তাড়াতাড়ি চলে আসবে। তাই জলদি ঘুমিয়ে পড়া উচিত তোমার। আজকে কি আমার রুমে থাকার ইচ্ছে আছে তোমার?”
-না মানে আপু আমি আজকে এখানে ঘুমাই?ওই রুমে তোমার ভাইয়ের নাক ডা*কার জন্য আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার মাথাটা তাই আজ অনেক ব্য*থা করছিলো (মিথ্যা বললাম আমি)
আপু অবাক হয়ে বলল,

-সিরি*য়াসলি ঐশী, ভাইয়া নাক ডাকে! যাক ভাইয়া কে পচা*নোর কোনো উপায় তো পাওয়া গেলো।ধন্যবাদ তোমাকে এত্তো ইমপরটেন্ট একটা খবর দেয়ার জন্য।
আমি চি-ন্তায় পড়লাম এবার।আমি তো ঐ হি*টলার এর রুমে সকালের ঘটনার কথা মনে করে যাই নি।তখন তো সাহস দেখিয়ে থা*প্পড় টা দিয়েছিলাম কিন্তু এখন রুমে যদি প্রতিক্রিয়া দেখায় সে তখন আমি কি করবো! তাই তো বা*চার জন্য আপুর রুমে যাতে থাকতে পারি এই জন্য বললাম নাক ডাকে। এখন যদি হিটলার জানতে পারে তখন!
ধুর আমার এখন একটু ঘুম দেওয়া দরকার যা হবে দেখা যাবে।এসব ভেবে আপুর রুমে ঘুমিয়ে পড়লাম। আপুও কোনো অমত করে নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আঁধার রাতেও কাজ করছিলো প্রায় রাত ১টার দিকে আঁধারের কাজ শেষ হলো। সে খেয়াল করলো এখন পর্যন্ত ঐশী রুমে আসে নি। খাবার টেবিলে একবার দেখেছিলো। মেয়েটা এখন তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। সে ভাবলো হয়তো একটু বেশিই রুড বিহেভিয়ার করে ফেলেছে সে।তাই তো রুমেও আসে নি।সে অনুতপ্ত হলো মনে মনে

ভু*ত সেজে আই মিন অনেক বেশি সেজে সেই তখন থেকে বসে আছি। রিসিপশন প্রায় শেষের দিকে।
আব্বু -আম্মু,আপু,চাচা-চাচী, আমার কাজিনরা অনেকেই এসেছেন। সবাই আমার সাথে কথা বলে গেছেন শুরু আম্মু বলে নি।জানিনা ছোট বেলা থেকে কেনো যেন তিনি আমায় ভীষণ অপ*ছন্দ করেন।কখনো তার কাছে আমি আমার বড় বোনের মতো আমি তার কাছে স্নেহ পাইনি।

নিশু, আমার বড় আপু বাড়িতে যত স্বাধী*নতা পেয়েছে আমি তার এক অংশও পাই নি।আপু আমার বড় অথচ তার বিয়ে দেয় নি,ইন্টারে তার রেজাল্ট খুব খা*রাপ হয়েছিল কিন্তু সে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করছে,আর আমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে । আপুকে আম্মু হাত খরচের জন্য প্রতি মাসে টাকা দেয় কিন্তু আমি আমার টিউশন খরচ দিয়ে চলতাম।পিরি*য়ডের সময় আপু বেড রেস্ট নিতো, হট ওয়াটার ব্যাগ ইউজ করতো কিন্তু আমি পে*ইন নিয়ে বাসায় সব কাজ করতাম।একটা পে*ইন কি*লার পর্যন্ত আমার কপালে জুটতো না। আম্মু বলতো এমনিতেই আমি যা পাচ্ছি তাই নাকি ঢের বেশি।

আমার চাচী এ ব্যাপারে কোনো কথা বললে, আম্মু এটা আমাদের ফেমিলির পারসোনাল ব্যাপার বলে মিট*মাট করে ফেলতো।বড়ো চাচীর ছেলে আলিফ ভাইয়া থাকলে আমি একটু শা*ন্তিতে বসবাস করতে পারতাম। কিন্তু ভাইয়া আমার ফেন্ড সায়মাকে বিয়ে করার পর থেকে আলাদা থাকে।
এসব ভাবনার মাঝেই আমায় অবাক করে দিয়ে আঁধার ভাইয়া বললেন,
-ঐশী, হাত দাও, তোমাদের বাসায় যেতে হবে।

আমি অবাকের চূড়ান্ত পযার্য়ে আছি। এবার সে নিজ থেকেই আমার হাত ধরে বললেন,
-কানের নিচে একটা দিবো,,হাত দিতে এতক্ষণ লাগে? লি*লিপুট মেয়ে একটা! তোমার লেহেঙ্গা তোমার ডাবল লম্বা তাই তা সামলে নিচে নামতে যদি পড়ে যাও তবে এই ভরা মজলিসে তোমার সাথে সাথে আমার নাকটাও কা*টবে। আমি নিজের নাক বা*চা*নোর জন্যই বলেছিলাম হাত দিতে,ষ্টু*পিড।

তিনি আমার হাত ধরে নামছেন।আমি এখনো তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। তার ভাব*ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে,সে এই বিয়েতে ভীষণ আনন্দিত। বউ তার ভীষণ ভালোবাসার। বউকে একমিনিটও নিজের আড়াল করা যাবে না।কিন্তু এসব লোক দেখানো কাজ করে কি লাভ তার! ছ’মাস পর তো তার রাস্তা আর আমার রাস্তা পুরোপুরি আ*লাদা!

প্রায় ১ ঘন্টা পর আমাদের বাসায় এসে পৌছালাম। রাস্তায় প্রচুর জ্যা*ম ছিলো। এই এক ঘন্টায় আমি ৩বার এর মতো বমি করেছি।আমি ভেবেছিলাম আঁধার ভাইয়া হয়তো মাঝরাস্তায় ফেলে চলে যাবে কিন্তু তিনি রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে আমাকে নামতে সাহায্য করেছেন আবার গাড়ি থেকে পানি এনে আমাকে মুখ ধুতে সাহায্য করেছেন হঠাৎ করে আমার প্রতি কেনো এতো যত্নশী*লতার কারনটা ঠিক বুঝতে পারছি না। এটা তার নতুন চাল নয়তো আমাকে ক*ষ্ট দেয়ার!
আমরা বাসায় ঢুকতেই সবাই জামাই আপ্যায়ন এ ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আম্মু যেন আঁধার ভাইয়াকে চোখে হারা*চ্ছেন। আমার কোনো পা*ত্তাই নাই। আমি অসহায় এর মতো তার পাশে বসে আছি।

ছোট চাচী বিষয়টা লক্ষ্য করে আমায় নিয়ে রুমে এসে বললেন,
-কিরে তোর অবস্থার বারোটা কেনো বে*জে আছে!বমি কয়বার করসোস?আয় দেখি, রুমে চল ফ্রেশ হবি।
এ বাড়িতে আমার ছোট চাচী,আর বড়ো চাচী আমায় ভীষণ ভালোবাসেন। তারা আম্মু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলে আমার কাজগুলো করে ফেলে আর আমাকে রুমে পাঠিয়ে দেয়।

আমি ফ্রেশ হয়ে অনেক্ক্ষণ পর নিচে গিয়ে দেখি এদের আপ্যায়ন পাঠ শেষ। সবাই যার যার ঘরে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আম্মু আঁধার ভাইয়া কে আমার রুমে নিয়ে গেছেন।আমার ভীষণ খু*দা লাগছে। এমনিতেই আজকে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি তারপর আবার বমি।চাচীরাও চলে গেছেন তাদের রুমে।
রান্না ঘরের সব পাতিল ফাঁকা। খাওয়ার মতো কিছুই পেলাম না তাই বা*ধ্য হয়েই ফ্রিজ খুললাম। বাহ,অ*ন্নেক মিষ্টি! পেট পুজো ভালোই হবে!
বনফুলের মিষ্টি সেই খে*তে। দুটো তাড়াতাড়ি খে*য়ে ফেললাম। তিন নাম্বারটা মুখে নিবো তখনই আম্মু আমার হাত ধরে ফেললেন,

-নিজের জামাই এর টাকার মিষ্টি তাই বলে সব খেতে হবে!যেই চেহারা তাতে জামাইতো কপালে জুটতো না,,পরিচিত তাই জুটছে তাই বলে এতো খেতে হবে।
-আম্মু ফ্রিজে তো আরও অনেক প্যাকেট আছে। আমি মাত্র দুটো খেয়েছি। খিদে পেয়েছিল খুব রান্না ঘরে তো খাওয়ার মতো কিছুই নেই তাই খাচ্ছি,,,লা

-হইসে,চু*রি করতে ধ*রা পরলে সব চো*র রাই এমন বলে।
আমি হাতের মিষ্টিটা প্যাকেট এ রেখে কিছু না বলে ড্রইং রুমে চলে আসলাম। কিছুই বলার নেই আমার এগুলো আগের নিত্ত*নৈ*মিত্তিক ঘটনা। শাশুড়ীর আদর পেয়ে হয়তো ভুলে গেছিলাম। এখন আবার ও মনে পরে গেল।
আধ ঘন্টা পর রুমে গেলাম, গিয়ে দেখি ভাইয়া বিছানায় শুয়ে ফোন ঘাটছে।এবার কি হবে!কালকে তো আপুর রুমে বাহানা দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম এখন কি করবো? আমার রুমে আঁধার ভাইয়ার রুমের মতো সোফাও নাই। এসব চিন্তা ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বাজলো।

কিছুক্ষনের মধ্যেই নিশু আপু আমার রুমে এসে ভাইয়ার কাছে একটা পার্সেল দিয়ে চলে গেলো। আমি এখনো দাড়িয়ে এসব তামা*শা দেখছি।এরপর আঁধার ভাইয়া ত*রিৎ*গতিতে আমার কাছে এসে আমার কানে তার ফোন ধরলেন। এতোটাই দ্রুত কাজটা ঘটলো যে আমি ভয়ে দু পা পিছিয়ে গেলাম।ফোনে আমার শাশুড়ীর আওয়াজ শুনে সালাম দিলাম। কিছু বলবো তার আগেই মা বললেন,

-কোনো কথা ছাড়া খাবার গুলো খেয়ে শেষ করবে। আঁধার বলেছে গাড়িতে নাকি বমি করেছো!আজকে এমনিতেই সারাদিনে কিছু খাওয়া হয়নি তোমার। আমি ব্যস্ত ছিলাম তাই খে*য়াল রাখতে পারিনি। এখন খেতে ইচ্ছে না করলেও খেয়ে নিবে। আমার কথা অমা*ন্য করা আমি মোটেও পছন্দ করি না।
-আচ্ছা মা।

ভাইয়া এবার কানের কাছ থেকে তার মোবাইল নিয়ে আবার মার সাথে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। আমারও ভীষণ খিদে পেয়েছিল তাই বিরিয়ানি খেয়ে নিলাম। আমি নি*চে বিছানা করছিলাম তখন শুনতে পেলাম,
-বিছানায় অনা*য়াসে ২জন ঘুমাতে পারবে।নিচে বিছানা করার দরকার নেই।
-সমস্যা নেই ভাইয়া, আমি নিচে ঘুমিয়ে পড়বো। আপনি বিছানায় ঘুমান।

-আমি তোমার মতামত চাই নি। বলেছি বিছানায় ঘুমাতে তাহলে মেলো*ড্রামা করছো কেনো?
তার কথায় আমার ভীষণ রা*গ লাগলো। তুই বেটা আমারে বউ মানোস না।বিয়েও মানবি না।অপমানও করবি আবার অধিকার দেখিয়ে কথাও বলবি।তাই বললাম,

-মে*লো*ড্রামা আমি না আপনি করছেন,বিয়ে তো মানেন না।আবার এতো অধিকার দেখিয়ে কেনো কথা বলছেন?আমি অবশ্যই আপনার কথা মতো চলতে বা*ধ্য নই মিস্টার আঁধার। আর আমার মতো লো*ভী মেয়ে মানুষ নিশ্চয়ই আপনার পাশে মা*নায় না তাই আপনি একাই ঘুমান।ধন্যবাদ

বলেই আমি বালিশ নিয়ে নিচে ঘুমিয়ে পড়লাম। আর যাই হোক তার করা অ*পমান আমি ভুলবো না।আমার নিজের আত্মসম্মান প্রখর। তার কথা শুনার পর আমার ইচ্ছে ছিলো না বিয়ে করার কিন্তু আব্বু সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন আর আম্মু তো আমায় বিদায় করার জন্য উঠে পরে লেগেছিলেন।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৫

তাই উপায় ছিলো না।এখন তিনি এমন ভাবে কথা বলছে যেনো আমাকে বলা কথা গুলো তার মনেই নেই।শুনতে বা*ধ্য নই আমি তার কোনোই কথা। আমার কোনো সেল্ফরেসপেক্ট নাই নাকি!উনার যখন ইচ্ছে করবে রু*ড বিহেভিয়ার করবে আবার ভালোও সাজবে!গি*র*গি*টি,সাদা তেলাপোকা, বনমোরগ একটা….

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৭