অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৫

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৫
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

-“কিছু মানুষ আমাদের আ*শ্বাস দেয়,কিন্তু কাজের বেলায় শু*ন্য”,
কথাটা আজ আপনার সাথে মিলে গেলো।আমি হয়তো ভু*ল মানুষের কাছে প্রত্যাশা করেছিলাম!কথা দিয়ে কথা রাখায় ভালো মান*সিকতার প্রকাশ পায়।আপনার উচিত ছিলো আমার জিনিস ফেরত দেয়া।
আঁধার মেসেজটা পড়ে মুচকি হেসে রিপ্লাই দিলো,

-কথাতো আপনিও রাখেন নি। আমি তো আপনাকে অনুক*রণ করলাম মাত্র।আপনি নিজে আসেননি। তাই আমিও দেই নি।একদিক থেকে আমরা দুইজনই সমান অপ*রাধী, স্বর্ণলতা।
– আমার জিনিস আমাকেই ফেরত দিবেন তাহলে এতো শ*র্ত কিসের,জনাব?আপনি কিন্তু অ*ন্যায় করছেন এটা।
আধার এবার রিপ্লাই দিলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-আমি ডাইরির মালিকানা তার আসল মালিককেই হস্তা*ন্ত*র করতে চাই।এতটা যত্ন করে রেখেছি এই কয়দিন সো তার মালিক দেখার প্রত্যাশা তো আমারও ছিলো। আপনি তো সেই প্রত্যাশায় এক বস্তা গো*বর ডেলে দিলেন আপনার জায়গায় অন্যকে পাঠিয়ে।
-ওকে আমিই আসবো নিতে, দয়া করে আবার আসিয়েন।
আঁধার এবার কিছু একটা ভেবে লিখলো
-না,আমি কলেজ এ যাবো না। আপনার কলেজ এর পাশে খুলশী টাউন সেন্টারের কফি শপে থাকবো।সেইম টাইমে,আপনি আসবেন।

আই হোপ নিজের প্রিয় জিনিস এর জন্য এতোটুকু ক*ষ্ট অন্তত করতে পারবেন।
-ওকে, কিন্তু আপনাকে চিনবো কিভাবে(সেই মেয়ে)
-যাক,,, আপনার সাথে দেখা হচ্ছে তবে!আমার টেবিলে আপনার ডাইরি থাকবে,তা দেখে চিনতে পারবেন আদারওয়াইজ এসে জাস্ট একটা কল দিবেন অথবা মেসেজ দিবেন। কিন্তু শিওরলি আপনি আসবেন তো? নাকি ওই দিন এর মতো চা*লাকি করবেন!তাহলে কিন্তু আর ফেরত পাবেন না।
মেয়েটির রিপ্লাই আসলো,

-আমি সেদিন কলেজ যেতে পারি নি, তাই আমার ফ্রেন্ডকে বলেছিলাম কালেক্ট করতে। আমি আগামীকাল তাকে নিয়েই যাবো কফি শপে। প্রমি*জ করছি।এটা আমার কাছে অনেক মূল্য*বান.. প্লিজ… আমার জিনিস আমায় ফেরত দিয়েন।
পরের দিন আঁধার ঠিক সময় এ পৌছালেও, পৌছায়নি সেই মানবী। অনেক অপেক্ষা করেছিলো আঁধার কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।হাজারটা কল দিয়েছিল সেই নাম্বারে কিন্তু প্রত্যেক বারই নাম্বার সুইচড অফ বলছে।

সেদিন অনেক্ক্ষণ কলেজ এর সামনে দাড়িয়ে ছিল কিন্তু সেদিন মেয়েটিকেও সে দেখতে পায় নি। অতঃপর সে এসএমএস করলো, যাতে ফোন ওপেন করলে কল দেয় অথবা এসএমএসের রিপ্লাই দেয়।কিন্তু সেদিন এর পর প্রায় ২মাস চলে গেছে সেই নাম্বার ওপেন হয়নি।আঁধার প্রায় সময়ই সেই কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতো কিন্তু ওই মেয়েটার দেখাও সে পায়নি। একপর্যায়ে সে দারোয়ান কে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেছে কিন্তু সফল হয় নি।

প্রায় ৩মাস পর সেই নাম্বারে আঁধারের কল রিসিভ হয়। আঁধার তখন অনেক বেশি এক্সাইটেড ছিলো। কিন্তু আঁধারের মুখের হাসি বেশি সময় টিকে নি। কারণ কলটা একজন পুরুষ রিসিভ করেছিলো। আশা*হত হলো আঁধার তারপরও ভাবলো হয়তো সেই মানবীর ভাই হবে কিন্তু তার সেই ভাবনাও বি*ফলে গেল পুরুষ মানুষ টির উত্তর শুনে,
-আপনি যার নাম্বারে কল করেছেন আমি তার হাসবেন্ড। সে ছাদে গেছে। আপনি পনেরো মিনিট পর কল করুন।
নিরাশ হলো আঁধার। আবারও জিজ্ঞেস করলো,

্আপনার স্ত্রী কবে থেকে মোবাইলটা ফোনটা উইজ করছে?আপনাদের বিয়ে কবে হয়েছে?
লোক টি বললো,
-এটা তার নিজের ফোন। আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় আড়াই মাস।বিয়ের আগে। ফোনটা যেহেতু তার তাই নিশ্চয়ই সে অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করছে। কিন্তু আপনি কে হন তার?

আঁধার কোনো উত্তর না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো। এছাড়া তার কাছে আর কোনো উপায় নেই। মরী*চিকার পিছনে ছুটছিল সে। দো*ষ তো তার নিজেরই। একতরফা সে নিজেই অনু*ভূতি পু*ষিয়ে রেখেছিল। কিন্তু মেয়েটাকে তো সে বুঝাতে চেয়েছিলো। হয়তো সে বুঝাতে পারেনি।তারপরও তার বিশ্বা*স হচ্ছিলো না তাই সে এতদিন পর্যন্ত খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কোনো শিওরিটি পায় নি।

বর্তমান
আঁধার তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। আজ সকালে সেই কলেজ এর সামনে দিয়ে ড্রাইভিং করে যাওয়ার সময় সে সেদিন এর মেয়ে টাকে দেখতে পায় যে ওই দিন দারোয়ান এর কাছ থেকে ডাইরি নিতে গিয়েছিল। আঁধার গাড়ি থামিয়ে তাড়াতাড়ি সেই মেয়েটার কাছে যায়। মেয়েটার একটু তাড়া ছিলো তারপরও সে আঁধারের ডাকে পিছনে ফিরে।আঁধার জিজ্ঞেস করলো,

-আপু স*রি এভাবে রাস্তায় ডি*স্টার্ব করার জন্য, একটা প্রশ্ন করার ছিলো,
-একটু তাড়াতাড়ি বলুন ভাইয়া, আমার আরজেন্ট কাজ আছে। মেয়েটি বললো
-আপু আপনি আরও ২ বছর আগে এই কলেজ এর দারোয়ান এর কাছ থেকে একটি ডাইরি নিতে এসেছিলেন। আপনার বান্ধুবি পাঠিয়েছিলো। আমি তার জিনিসটা ফেরত দিতে চাই।
মেয়েটি অনেক চিন্তা করে বললো,

-মনে পড়েছে। কিন্তু ভাইয়া ওর তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমার সাথে যোগাযোগ হয় না ওর।আর আমি ওর ক্লোজ ফ্রেন্ড না। আমাদের কলেজ এ পরিচয় হয়েছে। তাই আমি একচুয়ালি আপনার কোনো সাহায্য করতে পারছি না।দুঃ*খিত।
এ কথা বলে মেয়েটা চলে গেলো। আঁধার আজ পুরোপুরি নিশ্চিত হলো যে তার স্বর্নলতা আর কোনো দিন ও তার হবে না। সে গত দেড় বছর ধরে অন্যের স্ত্রী। তার কথা মনে করেই সে গতকাল রাতে ঐশীকে অনেক কথা শুনিয়েছে। আবার সকাল বেলায়ও অনি*চ্ছাকৃত ভাবে মেয়েটার হাতে কফি পড়ে গেছে,তারপরও সে মেয়েটার সাথে ভীষণ খা*রাপ আচরণ করেছে।এতটা খা*রাপ আচ*রণ সে কখনো কোনো মেয়ের সাথে করে নি। সে অ*ন্যায় করেছে মেয়েটার সাথে। ক্ষ*মা চাওয়া উচিত তার।

এসব কথা চিন্তার মাঝেই তার নাম্বারে কল আসে,তার মা কল করেছে। আঁধার রিসিভ করে জানিয়ে দেয় সে আধা ঘণ্টার ভিতর বাসায় ফিরছে।
আঁধার বাসায় ফিরে দেখে ড্রইং রুমে সবাই মিলে আলোচনা করছে।আঁধার সেখানে গেলে তার বাবা বলে,
-তোমাদের রিসিপশনের কথা আলোচনা করছি অথচ তোমরা দুটোই গায়ে*ব। বসো এখানে।
ঘন্টা খানেক সেখানে আলোচনা করার পর সবাই নিজ রুমে চলে গেলেন।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৪

আঁধার রুমে গিয়ে ঐশীকে পেলো না।বললো, এ আবার কোথায় গেলো!হয়তো আলোর রুমে গেছে আর কিছু না ভেবে তার ডিভানে ল্যাপটপ নিয়ে যে কাজ গুলো বাকি আছে তা শেষ করতে বসলো..

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৬