অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৯

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৯
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_কাকীমনি,বউকে যদি সারাদিন সারভেন্টদের কাজ করতে হয় তাহলে বিয়ে না করে একটা এক্সট্রা সারভেন্ট রাখতেই পারতাম। এতো কষ্ট করে বিয়ে করার কি দরকার ছিল!আর বউয়ের রুপ ধুয়ে কি সবাই পানি খাবে যে বউকে ভীষণ রূপবতী হতে হবে! বউয়ের রুপ-গুণ নিয়ে যদি শশুড়-শাশুড়ীর আর বরের কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে তৃতীয় পক্ষের এতো মাথা ব্য*থার কারণ টা ঠিক বুঝতে পারছি না।

তাদের তো কোনো সমস্যা থাকার কথাই না।কারন আমার বউ হয়তো তার জামাইয়ের টাকার খাচ্ছে নয়তো তার শ্বশুর মশাইয়ের টাকার খাচ্ছে, আপনারা তো আমার বউকে ভাত, কাপড় দিচ্ছেন না।তাহলে আপনাদের এতো মাথাব্যথা কেনো আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার এ??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর রইলো বউয়ের জব করার ব্যাপার,, আচ্ছা কাকীমনি,আপনার মেয়ে তো জব করে তাইনা? তাহলে সে কতোবার অফিস স্টাফদের সাথে ভেগে গেছে,, বলুন তো??কি হলো চুপ করে আছেন কেনো, বলুন কলি কতোবার স্টাফদের সাথে পালিয়েছে?
আঁধারের কড়া কথাগুলো এবং প্রশ্নে কাকীমনির মুখ অপমানে মিয়িয়ে গেল। তিনি মুখ কাচুমাচু করে বললেন,

_আমি তো তোমাদের ভালোর জন্যই বলছিলাম, ধ্রুব। বউ মানুষদের কাজে পটু থাকা ভালো। বউ যদি সাংসারিক হয় তাহলে বাহিরের কাজ করার কি প্রয়োজন আছে। আম,,মি

_আর বলবেন না কাকীমনি, আমাদের ভালো আমরা আপনার চাইতে বেশি বুঝি।আপনাদের মতো মানুষরা কীভাবে একটা মেয়ের সম্মুখে তাকে অসম্মান করতে পারেন আমি বুঝি না।এতো নিচু মন-মানসিকতা কেনো আপনাদের।আপনি এতো শোনালেন অথচ ঐশী চুপচাপ সহ্য করেছে কেনো জানেন, কারণ আপনি গুরুজন। সে যদি কিছু উত্তর দেয় অথবা প্রতিবাদ করে তাহলে আপনারই অসম্মান হবে।মেয়েটা আপনার সম্মানের কথা ভেবেছে আর আপনি তার সম্মানের ফালুদা বানিয়ে দিয়েছেন। আবার বলছেন আমাদের ভালো ভেবেছেন!

কাকীমা শুনুন, বেড়াতে এসেছেন, বেড়িয়ে চলে যান।আমার তাতে বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই কিন্তু অযথাই আমার বউয়ের পিছনে লাগবেন না,তাকে অসম্মান করবেন না।
আঁধার তার খাবারে আবার মনোযোগ দিলেন। কাকীমনি আর টেবিলে বসলেন না। দাড়ানো থাকা অবস্থায় মাকে বললেন,

_ভাবী তোমার ছেলে নিজের বউয়ের জন্য এভাবে আমায় কথা শুনিয়েছে আর চুপচাপ শুনলে?
_তুমিও তো ঐশীকে অনেক শুনিয়েছো। ধ্রুব তো তোমার ভাষায় উত্তর দিয়েছে।আমি তোমাকে যা বলতাম তা ধ্রুবই বলে দিয়েছে।এখানে আমি আর কি বলবো, ছোট!একথা বলে মা ড্রইং রুমে চলে গেলেন।
কাকীমনিও মায়ের পিছু পিছু গেল।টেবিলের বাকিরা অবাক। আলো আপু তো আমায় চিমটি কেটেই বললো,

_বাহহ,কি ভালোবাসা তোমার প্রতি ভাইয়ের। আহা!দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে গেল!
আমি একটুও অবাক হলাম না।কারণ, আমি তাকে আমার বাবার বাড়িতে আমার জন্য এর আগেও প্রতি*বাদ করতে দেখেছি।দরজার বাহিরে থাকায় উনি আমায় সেদিন দেখে নি।আমার মা’কেও তিনি কথা শুনাতে ছাড় দেন নি।আমি এসব ভাবতে ভাবতে উনি দাঁড়িয়ে বললেন,

_প্লেটের একটা খাবারও যেন অপ*চয় না হয়।অন্যের রা*গ খাবারের প্রতি দেখালে থা*পড়াবো।অন্য সময় তো মুখ দিয়ে খই ফুটে আর একটু আগে মুখে কি সুপার গ্লু লাগিয়ে রেখেছিলে,ষ্টুপি*ড। প্রতিবাদ করতে পারো নি।আরেকজন উনাকে নিয়ে আজাইরা বিশ্লেষণ করছে আর উনি বসে বসে চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে মহৎ উপাধি অর্জন করছে!ইডি*য়ট কোথাকার বলেই তিনি গটগট করে উপরে চলে গেলেন।

_পিচ্চি ভাবী,ভাই তোমায় নিয়ে ভীষণ possessive তাই আমাদের এখন থেকে সচেতন ভাবে কথা বলতে হবে নয়তো ভাই মে*রে গুম করে দিবে।বলেই আলো আপু সহ হাসাহাসি করলেন।
আমি কোনোমতে খেয়ে এদের পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলাম।এদের সাথে ফাইজলামিতে জড়ানোর মোটেও ইচ্ছে নেই।

ঈদ পেরিয়ে গেছে অনেক ১০ দিন হবে। মেহমানদের মধ্যে বড়রা চলে গেছেন। বাকিরা আরও সপ্তাহক্ষানেক পরে যাবেন। বিকেল বেলায় সবাই মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো।আমি কাপড় নামাতে গেলে রোজা আপু আমাকেও বসিয়ে দিলেন সেখানে। দেখলাম পাশের বিল্ডিং থেকে চারজন এসেছেন আড্ডা দেয়ার জন্য। নীল ভাইয়া গিটার নিয়ে সুর তুলছেন। আর সবাই তাই নিয়ে হাসতে হাসতে রীতিমতো গড়াগড়ি খাচ্ছে।রোজা আপু তারপর বললেন চলো সবাই গানের কলি খেলি।নীল, হিমেল আর পবন এক দল আর আমি, পিচ্চি, আলো, কলি আর বাকিরা সহ একদলে, ঠিক আছে?

_না ঠিক নেই।তোরা অনেক কিন্তু আমাদের সংখ্যা কম তাই আমরা পিচ্চি ভাবীকে আমাদের দলে নিবো।ভাবী তুমি আমার পাশের চেয়ারটায় এসে বসো তো।খরগোশ এর মতো দাত বের করে নীল ভাইয়া বললেন।
এরমাঝেই কলি আপু বললেন,
_তোমাদের এইসব বাচ্চামো খেলায় আমার থাকার ইচ্ছে নেই।আমি গেলাম।
_এবার ঠিক আছে।ডা*ইনি মুক্ত পরিবেশ। বলেই নীল ভাইয়া দাত কেলিয়ে হাসলেন।
_দেখি তোরা আগে গান কর।এরপর শেষ অক্ষর দিয়ে আমরা শুরু করবো। রোজা আপু বললো।এরপর নীল ভাইয়া তার ভ*য়ংকর কন্ঠে গান শুরু করলেন,

“চলে গেছো তাতে কি, নতুন একটা পেয়েছি
তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী,
_ভাই তুই থাম, আর খেলতে হবে না গানের কলি। তুই একেবারে মুডটাই খা*রাপ করে দিছোস।
এরপর তারা ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলা শুরু করেছে। আমিও ছিলাম তাদের মাঝে। ক্রমে সবার পালাই পরেছে। ট্রুথই বেশি নিচ্ছে সবাই।আমার পালা পরায় আমি ডেয়ার নিলাম। কারন এদের বিশ্বাস নেই ট্রুথ নিলে কি থেকে কি জিজ্ঞেস করে বসবে।আলো আপু আমার কাধে হাত রেখে বললো,

_পাটকাঠি তোমার গানের গলা নাকি ভীষণ সুন্দর, তোমার বোন থেকে শুনেছি। তাই তুমি একটা গান শুনাও।নীলের গান শুনতে শুনতে কান পেকে গেছে। ডেয়ার কিন্তু না বলতে পারবানা। আমি পরলাম বিপাকে। ট্রুথ নেওয়া উচিত ছিলো। যদিও স্কুলের অনুষ্ঠানে অনেক গেয়েছি।তাই আর কোনো চিন্তা না করে কয়েক লাইন গাইলাম
মাধবীলতা আমি, আমি কাননবালা
তোমার গানের সুর আমি,আমি গলার মালা
দীঘির জলের রোদ আমি,আমি সাঝের বেলা
মাধবীলতা আমি, আমি কাননবালা(ভুল থাকতে পারে)
সবাই গানের ভীষণ প্রশংসা করলো।নীল ভাইয়া তো হাতে তালি দিয়েই যাচ্ছেন।

_হাজার বছরের পুরনো গান, এসব লেম মার্কা বাংলা গান পাগলেও গায় না। আধুনিক যুগের মানুষ এখন ইংলিশ, হিন্দি গানের আসর বসায়।
পিছন থেকে কলি আপুর ভয়েস শুনে তার দিকে তাকালাম। দেখি পাশে আঁধার ও দাড়িয়ে আছেন। তিনি এখনো তার মোবাইলে ব্যস্ত। এই মেয়েটা দিন দিন বেশিই করতেছে। ইচ্ছে তো করছে কানের নিচে একটা দিতে।সারাদিন মা আর মাইয়া দুটো মানুষের পিছে পড়ে থাকে।তাই আমি বললাম,

_আসলে কি আপু, রুচি বলেও মানুষের একটা কথা আছে। সবার রুচিবোধ তো সমান নয়। দেখো এখানের প্রত্যেকটা মেয়ের পোশাকের কতো শালীনতা অথচ তোমার পড়নে উ*গ্র পোশাক। তোমার রুচি সত্যিই আমাদের থেকে আলাদা। আর আমরা যেহেতু বাঙালি তাই আমাদের পছন্দের শীর্ষে অবশ্যই বাংলা থাকবে।
আমার কথা কলি আপুর যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।

_তুমি কিন্তু বেশি বলছো।অপ*মান করছো আমায়।
_আপনি তো বেশি শুনার মতোই বলেছেন। আপনি যেমন বলেছেন আমিও আপনায় মান দিয়েছে। এটা অপ*মান নয় যোগ্য জবাব।
_wow,,পিচ্চি ভাবী তুমি তো ফাটিয়ে দিলে।এই কলি তুই না নিচে গেসোস তাহলে আবার এখানে কি চাই। থাকলে মুখ অফ রাখ। সারাদিন অন্যের পিছনে লাগিস না।গাইজ,,দেখো অনেক দিন পর আমরা ধ্রুব ভাইকে পেয়েছি সো ভাই এখন আমাদের তাহসানের এক খানা গান শোনাবে।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৮

একথা বলে উনাকে টেনে বসিয়ে দিলেন নীল ভাইয়া। তিনি গাইতে নারাজ। সবাই রিকোয়েস্ট করছে।পবন আর হিমেল তো তার গলায় গিটার ঝুলিয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি রাজি হচ্ছে না।বুঝি না উনি এতো ডং কেনো করছেন। তাহসান এর “আলো” গান টা গাইলেই তো পারছেন। অতঃপর পাশের বিল্ডিং থেকে আসা একজন আপু বললেন,
_ধ্রুব তুই তো আগে প্রত্যেক আড্ডায় গান গাইতি।তাহলে আজকে কেনো না বলছিস!মানলাম সব ফ্রেন্ডরা নেই তো কি হয়েছে! আমার রিকোয়েস্ট টা রাখ। প্লিজ।।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২০