অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৮

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৮
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_এই মেয়েকে সবাই নিচে ডাকতে ডাকতে কা*হিল হয়ে যাচ্ছে আর সে রুমে বসে কানে তুলো গুঁজে বসে আছে নাকি!আশ্চর্য
আঁধার বিরবির করে বলতে বলতেই রুমে গেল কিন্তু রুমে গিয়ে সে ঐশী কে পেলনা। আঁধার ভেবেই পাচ্ছে না এই রাতের বেলায় ও এই মেয়ে বারান্দা পরিষ্কার এর কাজ চালাচ্ছে নাকি। একজনের উপর ময়লা পানি ফেলে তার শান্তি হয় নি!এবার কার উপর অ*ত্যাচার চালাবে!এসব ভাবনার মাঝেই সে বারান্দায় প্রবেশ করলো।রেলিঙের ধারেও পেলো না। দোলনার দিক টায় যেতেই আঁধার থমকে দাঁড়ালো।তার সময় টা যেন এখানেই থ*মকে গেছে। ভেবেছিল এখানে এসে মেয়েটাকে আচ্ছা ভাবে বকে দেবে।কিন্তু সে স্তব্ধ!

“পৃথিবীতে মায়ার চেয়ে চর*ম দু*র্বলতা আর কিছুই নেই, আর এই মায়াদেবী দোলনায় দুলে তার মায়া বিলাচ্ছে।”
শ্যামবর্ণ চামড়ার মাঝে মায়াদেবী অদ্ভুত রকমের সুন্দর।সে মায়াময়, সে মুগ্ধতা, সে কল্পনার সমাহার। সে মায়াদেবী একান্তই তার তুলনা।চোখ তার যেন সদ্য লেখা কবিতার কথা জমা পদ্ম, তবে তা নীলপদ্ম
মায়াদেবীর নীরবতা ভাষা হলে সে ভাষাই হবে সদ্য লিখিত প্রেমপদ্য!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আঁধারের মধ্যে কি কাজ করছে তা তার জানা নেই, তবে পুরনো এক অনুভূতি তাকে ভীষণ ভাবে পী*ড়া দিচ্ছে।সে এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে নিচে বসেই মায়াদেবীর মুখের কাছেই নিজের হাতের উপর মুখ রেখে নি*রীক্ষণ করছে সেই মায়া কন্যাকে
অ*ভিমানে ভরা বুনোফুলের ন্যায় মুখখানা সেই মায়াকন্যার,যেন রাগিনী। চোখের আ*ঙিনায় ঝরে আছে অনর্থক কিছু অবাধ্য অশ্রুকণা
সেই অ*শ্রুসিক্ত নয়নে শুকোতে চাইছে এক পুরুষ, দাবানলে জ্ব*লে ভ*স্ম হয়ে যেতে চাইছে সে,,মায়াদেবীর কি সে খবর আছে!

সেই অনুভূতি না দেখেই পেয়ে গেলো মায়াকন্যা, আজ*ন্মকালের রেহাই।
আঁধার তার এই অনুভূতির কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা। যতবারই খুজেছে ততবারই ফলাফল শূ*ন্য।রাতের আঁধারে কেনো এই মায়াদেবী এভাবে মায়া বিলাচ্ছে।আবছা নীল রঙের ওড়নার অর্ধেক পড়ে আছে নিচে।কোমড় অব্দি কালো কেশে ঢেকে আছে পুরো শরীর। অগোছালো কিছু চুল মুখে এসে পড়েছে। অথচ তার হু*শ নেই।বেহু*শে ঘুমিয়ে অন্যকে মাতাল করছে সে।আঁধার এক দৃষ্টিতে চেয়ে ভাবছে”সরলতার প্রতিমা” গানটা এই মায়াদেবীর জন্যই গাওয়া উচিত।

“তোমাকে যখন দেখি; তার চাইতেও বেশি দেখি যখন দেখিনা!”
লাইনটা তার জন্যে উৎসর্গ করা প্রয়োজন !
রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ’র ‘খুব কাছে এসোনা’ কবিতা-টাও তারই প্রাপ্য।
কিংবা রবীন্দ্রনাথ এর ‘নয়ন তোমায় পায়না দেখিতে’ তার জন্যে ।
কিছু গান, কিছু কবিতা, কিছু অনুভূতি শুধু নির্দিষ্ট একজন মানুষের জন্যে হওয়া উচিত,তবে কি আঁধার মারাত্মক ভাবে এই মানুষটার প্রতি আসক্ত হচ্ছে!
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে আমায় কেউ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি চোখ খুললাম। ভীষণ অবাক হলাম আমি। আঁধার আমারই মুখোমুখি বসে আছে তাও আবার আমার দিকে তাকিয়ে। আমি ঠিক হয়ে বসলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম

_এখানে এভাবে বসে আছেন যে?কিছু দরকার?
_মায়াদেবীকে ভী*ষণ দরকার (মিনমিন করে)
_মুখে রেখে কি কথা বলছেন! কিছু দরকার আপনার?
আমার প্রশ্নে তার ধ্যা*ন ভাঙ*লো। তিনি দ্রুত উঠে দাড়ালেন। গম্ভীর গলায় বললেন,
_খাবার টেবিলে খেতে ডেকেছে মা।বাড়িতে মেহমান আছে তা ভুলে গেছো!নিচে সবাই খুজছে আর মহারানী এখানে বেহু*শ হয়ে পরে ঘুমোচ্ছে।
বাড়ির মেহমানের কথা একদম ই ভুলে গেছি আমি।তখন ভাবতে ভাবতে চোখ যে কখন লেগে গেছে টেরই পাইনি আমি

_sorry,আসলে আমার এখানে চোখ লেগে গিয়েছিল। আর হবে না।
একথা বলে আমি তার পাশ কাটিয়ে নিচে চলে এলাম।
ঐশী নিচে চলে আসার পর আধার নিজেই নিজেকে শুধালো,
_এর আবার কি হলো! সকাল থেকে তো উ*ল্টো পা*ল্টা কাজ করছিলো এখন এতো চুপচাপ! মূহুর্তেই এতো ভালো!বউগিরির ভু*ত তাহলে মাথা থেকে নামছে মহারাণীর।

আঁধার দোলনায় বসে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ভাবছে।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে তো বিয়ে টাকে মানতে চায় নি তাহলে কেনো মেয়েটাকে ছাড়া তার এক মূহুর্ত চলে না! কেনো এই মেয়েটার মায়ায় পড়ছে। কেনো মেয়েটাকে নিয়ে এতো ভাবনা তার।মেয়েটার কাছেই থাকলে কেনো তার অদ্ভুত অনুভূতি হয়!

ডাইনিং টেবিলে সবাই বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।মানুষ যেহেতু বেশি তাই খাবার পার্ট একটু আগেই সারবেন বড়োরা। এরপর সবাই মিলে গল্পগুজব করবেন যেহেতু এতোদিন পর বেড়াতে এসেছেন তারা।ডাইনিং টা বেশ বড় হওয়ার কারণে কারোই বসার অসুবিধা হয়নি।

আমি আর আলো আপু সারভেন্টদের টেবিলে জিনিস আনতে সাহায্য করছিলাম এরই মাঝেই আঁধার এসে বসলেন। আলো আপু ও তার নিজের চেয়ারে বসলেন।তারপর আগমন ঘটলো কলি আপুর।তাকে দেখে রোজা আপু, রোহান ভাইয়া(ফুপির ছেলে), ভাবি প্রায় সবার মুখে বিরক্তির ছাপ দেখা গেলো। মুখে ফেইসপ্যাক লাগানো তার।তা দেখে নীল ভাইয়া আলো আপুকে ফিসফিস করে বললেন,

_গরুর গোবর মুখে নিয়েই আসতে হবে এরে!খাবার খাওয়ার মুডটাই নষ্ট করে দিচ্ছে এই মেয়ে।
কলি আপু এসেই আঁধার এর পাশের চেয়ারটায় বসতে গেলেই আলো আপু বললো,
_কলি,ঐ চেয়ারটা ঐশীর। তুই আমার পাশে বস।
_চেয়ারের গায়ে কি নাম লিখা আছে নাকি, আশ্চর্য!চেয়ার তো সবগুলোই একই। ঐশী কে আজ তোমার পাশেই বসতে বলো।(থম থম গলায় কলি আপু বললেন)

আমি আঁধার কে লক্ষ্য করলাম এক্ষেত্রে তিনি ভ্রুক্ষেপহীন। তিনি তার মতোই ফোন চালাচ্ছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে ফোন চালানোই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই আমি কলি আপুকে বললাম,
_আপু সমস্যা নেই। তুমি আমার টায় বসো।একথা বলে আমি নীল ভাইয়া আর আলো আপুর মাঝখানের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লাম।নীল ভাইয়া আমার সামনে প্লেট এগিয়ে দিতে বললেন,

_এভাবে নিজের অধিকার অন্য কে দিতে নেই, পিচ্ছি ভাবী। আমাদের তোমার জায়গায় ডা*ইনিকে দেখতে কষ্ট হচ্ছে।
ভাইয়ার কথায় আমি আর আলো আপু দুজনেই হেসে দিলাম। নীল ভাইয়া অনেক মজার মানুষ। তার কথা মিনিটেই মানুষের মন ভালো করে দিতে পারে।হাসতে হাসতেই খেয়াল করলাম হিটলার টা রা*গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি এখন কোনো ভুল করছি বলে মনে তো হচ্ছে না তাহলে এভাবে হিং*স্র বিলাইয়ের মতো তাকাই আছে কেনো,আজব!
আমি এক মাত্র খাবার মুখে তুলবো ঠিক ঐ সময়ই হিটলার নীল ভাইয়ার কাছে প্লেট সহ দাঁড়িয়ে বলল,

_নীল, তুই আমার চেয়ারে যা তো।ওখানে ঠিকমতো ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না আমি।আরলি যা,,
নীল ভাইয়া মাত্রই খাওয়া শুরু করেছিলেন। বেচারা বিরস মুখে প্লেট নিয়ে চেয়ার ছাড়তে ছাড়তে বললেন,
_ভাই,তোমার গা থেকে পো*ড়া পো*ড়া স্মেল পাচ্ছি! আমি।তোমার কি কোথাও পুড়*ছে…আর বলতে পারেনি হিটলারের চোখ রাঙা*নির কারনে।কলি আপু বাদে সবাই মিটিমিটি হাসছে।
ফুপি আর বাবার খাওয়া শেষ তাই ড্রইং রুমে দুই ভাই বোন গল্পের আসর জমিয়েছেন। মা ও শেষ করে উঠে যাচ্ছিলেন তখনই চাচী বললেন,

_ভাবী,তোমাদের বাড়ির সবকাজই তো সারভেন্টরা করে তাহলে বউ আর এনেছো কেনো?বউ আমাদের কলির মতো সুন্দর হলে নাহয় ভাবা যেত।এমন রূপহীন -গুণহীন মেয়েকে কি শোপিস হিসেবে সাজিয়ে রাখবে নাকি!
চাচীর কথা শুনে টেবিলের সবাই তার দিকে দৃষ্টি রাখলেন। কলি আপু কে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ খুশি। আমি প্লেটের বাকি খাবার গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। এমনিতেই খেতে ইচ্ছে করছিল না। আর এখন তো চাচীর কথায় পেটের বাকি অংশ ভরে গেছে।মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি আবার বললেন,

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৭

_শুনেছি তোমার ছেলের বউ নাকি জবও করে। দেখো আবার অফিসের স্টাফ এর সাথে আবার ভে*গে না যায়।
এতক্ষণ যা চোখের পানি ক*ন্ট্রোল করতে পেরেছিলাম।এবার গড়িয়ে পড়লো দুফোঁটা। মেয়ে আর ঘরের বউতে মানুষ এতো তফাৎ খোঁজ করে কেনো!আরও আগেই উঠে যেতাম টেবিল থেকে কিন্তু এই আলো আপুটা হাত ধরে আছে।কি করবো নিজে প্র*তিবাদ করলে ও বলবে, বউ বড়ো দের সাথে বেয়া*দপি করছে। বাপ-মা সঠিক শিক্ষা দিতে পারেনি,আদব শেখায়নি।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৯