অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৭

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৭
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

“চো*রের মতো আলোর রুমে লুকিয়ে আছো কেনো? তুমি এতটাই দায়িত্বশীল বউ যে বরকে ঘর মোছার পানি দিয়ে গোসল করিয়েছো!তোমার মতো দায়িত্বশীল বউকে আমি পুরস্কার হিসেবে ড্রেনের পানিতে চোবা*বো। জাস্ট একবার রুম থেকে বের হও তুমি। তোমার বউগিরির ভু*ত আজকে আমি নামিয়ে ছাড়বো। ”

আমি একটু শব্দ ও করলাম না।এখানে আমার দো*ষ কোথায়। আমি তো উনার উপকার করছিলাম। নিচে যে উনি আছেন তা কি আমি দেখেছি নাকি। এবার তো রুম থেকে চোরের মতোকরে বের হতে হবে। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। আর প্রতি*শোধ নিবো না বাবা।বেশিই করছি আমি।অতিরিক্ত ছ্যা*চড়ামি হয়ে যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিকেলের দিকে আমার চাচী শাশুড়ী আর ফুফু শাশুড়ীরা সবাই এসেছেন।বাবা,মা, আপু আর আমার বর মশাই তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন।আমিও সেখানে গিয়ে বর মশাইয়ের পাশে গিয়ে দাড়ালাম। দেখলাম অনেক মানুষ। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তারা সংখ্যায় তিন চার জন হবে কিন্তু এখানে তো তাদের দু পরিবারের লোকজন মিলিয়ে এগারো জন।ফুফাজী আর চাচা ঈদের পর আসবেন।

এখানে ফুফুমনির এক মেয়ে রোজা আর এক ছেলে বউসহ এসেছেন। আর চাচী তার এক মেয়ে কলি ও জমজ ছেলে কে নিয়ে এসেছেন।জমজ ছেলে দুইটা ভিন্ন কোষী জমজ তাই এক জনের সাথে আরেক জনের কোনো মিল নাই।তারা নাকি আমার ব্যাচমেট।রোজা আপু ল’ নিয়ে নিয়ে পড়ছে আর কলি আপু আলো আপুর ব্যাচমেট হয়।আমি যখন সবাই কে পর্যবেক্ষণ করছিলাম তখন কলি আপুর দৃষ্টি লক্ষ্য করলাম। মনে হচ্ছে তিনি আমাকে দেখে অনেক বিরক্ত ফিল করছেন।কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন! তার এমনভাবে তাকানোর কারণ বুঝতে পারলাম না আমি।
এরমধ্যেই রোজা আপু আমায় এসে জড়িয়ে ধরলেন। আমার গাল টেনে দিয়ে বললেন,

_ভাবী তুমি পিচ্চি শুনেছিলাম কিন্তু একেবারে বাচ্চা টাইপের পিচ্চি তা ভাবি নি।এসো বাকিদেরও দেখতে দাও তোমার আদর আদর চেহারা টা।
আমার সামনে দুজন ভদ্রমহিলা আছেন কিন্তু এদের মধ্যে কে ফুফু শাশুড়ী আর কে যে চাচী শাশুড়ী বুঝলাম না।তাই উভয় কেই একসঙ্গে সালাম দিলাম।একদম সুন্দর মহিলা টা আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। মাথায় হাত রেখে বললেন
_এই ড্যাবড্যাব চোখের মেয়েটা বুঝি ধ্রুবর বউ!একদম আমার মায়ের চোখের মতো! একে কোথায় পেয়েছো গো দাদাভাই।

উনার কথায় বুঝতে পারলাম উনি আমার বর মশাইয়ের ফুফু। তার কথায় বাবা মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,
_আমার বন্ধুর মেয়ে।তোকে বলেছিলাম না আমি আমার মায়ের প্রতিবিম্ব পেয়েছি তাই তো দেরি না করে ধ্রুব এর সাথে বিয়ে করিয়ে পারমানেন্ট আমার ছোট আম্মা বানিয়ে এ বাড়িতে নিয়ে এসেছি।
_ভাবি আমার ছোট মায়ের যেন এখানে কোনো ত্রুটি না হয়। মনে রাখবা।আমার আম্মাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে কথা টা বললেন ফুফুমনি।
তাদের আলাপের মাঝেই আঁধার বললেন,

_তোমাদের সবার রেস্টের প্রয়োজন। ইফতারের সময় হতে এখনো দেরি আছে সবাই ফ্রেশ হয়ে আসো। পরে আলাপ করতে পারবে।
তার কথা বলতে দেরি অথচ সবার যেতে দেরি হলো না।বুঝি না এনারে সবাই এতো ভয় কেনো পায়।রোজা আর কলি আপুরা আলো আপুর রুমে থাকবে। হিমেল আর পবন দুই জমজ নীল ভাইয়ার সাথে থাকবেন। আর চাচী,ফুফু গেস্টরুমে থাকবেন।

রাতে আলো আপুর রুমে নীল ভাইয়া সহ সবাই বসে গল্প করছে। আঁধার ভাইয়া নেই হয়তো বেরিয়েছেন। আমিও তাদের মাঝে চেয়ার টেনে বসলাম। তাদের কথা বলার বিষয় হচ্ছে রোজা আপু। রোজা আপুর বিয়ের জন্য দেখতে আসে পাত্রপক্ষ কিন্তু আপু রাজি নন বিয়ে করতে।সবার মাঝে থেকেই নীল ভাইয়া বলে উঠলেন,
_রোজা তুই কি কাউকে ভালোটালো বাসোস নাকি যে বিয়ে তে রাজি হচ্ছিস না?এবারের পাত্র তো অনেক ভালো।বিসিএস ক্যাডার তাহলে রাজি হতে সমস্যা কোথায়? নাকি তলে তলে তুমি প্রেম করছো!

_তোদের মতো বিন্দাস লাইফ নাই আমার যে প্রেম করবো।পড়তে পড়তে আমার অবস্থা টাই*ট হয়ে যায়।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বইয়ের পাতা গুলো চায়ে চুবিয়ে খেয়ে ফেলি।লয়ার হওয়া এতো সহজ না ভাই।আগে ক্যারিয়ার গড়ি তারপর বিয়েশাদির চিন্তা করবো। খুব বিরসতা নিয়ে বললো রোজা আপু।
_আপু তুমি তো বিয়ের পরেও স্টাডি করতে পারবে। আমি তো কখনো ভাবি নি যে বিয়ের পর আর পড়াশোনা করা হবে কিন্তু দেখো আমিও করছি। রোজা আপুকে উদ্দেশ্য করে আমি বললাম।
আমার কথার উত্তরে রোজা আপু কিছু বলবে তার পূর্বেই কলি আপু বললেন,

_সবার শশুড় বাড়ি তো তোমার মতো নয়।সবার ভাগ্য তোমার মতো হবে এমন কোনো নিয়ম নেই।দেখো তুমি দেখতে শ্যামলা তারপরও আঁধার ভাইয়ার মতো হ্যান্ডসাম ডাক্তার বর পেয়েছো।অথচ ভাইয়া তোমার থেকে সুন্দর, হাই লেভেল এর স্টাইলিশ একটা মেয়ে বউ হিসেবে ডির্সাভ করে।তোমার মতো হাটুর বয়সী মেয়েকে নয়।
_কলি…বেশি কথা বলছো!সব জায়গায় তোমার নাক গলাতেই হয় দেখছি। ও তোমার বয়সে ছোট হলেও বড় ভাইয়ের বউ এটা মনে রাখবা। সম্মান দিয়ে কথা বলবা।আলো আপু ধম*কে কথাটা বললেন।

কলি আপুর কথাটা তী*রের মতো বিধ*লো আমার গায়ে
।আসলে,,,”কিছু মানুষ কখনোই বুঝবে নাহ!আর কখনো বুঝার চেষ্টা ও করবে না যে,
তাদের ব্যবহৃত শব্দ ধ্বনি ধা*রালো অ*স্ত্রের চাইতেও বেশি আ*ঘাত দিয়ে থাকে আমাদের মন-মস্তিষ্কে “।।
সত্যি বলতে একটা কথা আছে না—

“পৃথিবী যখন ঠে*স মারা লোকে ভর্তি তখন অতিরিক্ত আত্মসম্মানবোধের মতো প্যা*রা আর কিছুতে নেই!”
কলি আপু কথাটা সত্যিই বলেছে আসলেই ভাইয়া আমাকে ডির্জাভ করে না। তাই তো ভাইয়া নিজেও আমাকে বিয়ের দিন মানতে পারেনি।থাক ভাইয়া পরবর্তীতে নাহয় better কাউকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিবেন।
কলি আপু আলো আপুর কথায় রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। রোজা আপু তখন আমায় উদ্দেশ্য করে বলেন,
_ওর কথায় কিছু মনে করো না পিচ্চি ভাবী। কলির একটু বেশি প্যাক প্যাক করার অভ্যাস।
_আমি কিছু মনে করিনি আপু।আসলে “নিজের সমালোচনা সহ্য করতে পারাটা সবচেয়ে বড় যোগ্যতা।সবার হৃদয়ে স্থান পেতে হলে নিজের সমালোচনা সহ্য করে যেতে হয়।এটাই নিয়ম। ”

এ কথা বলে রুমে চলে আসলাম।রুমে যে যম*দূত ভয় তা ভুলেই গেলাম।অবশ্য রুমে এসে আঁধার কে দেখিনি। ভালো লাগছে না কিছুই
আমার তো এসব খো*চামার্কা কথা ও বাড়িতে নিত্য শোনা হতো তারপরও কলি আপুর কথাটায় এতো মন খারা*প হচ্ছে কেন! কিছু দিনের অতিথি আমি এই বাড়িতে তাই কলি আপুর কথাটা এতো গায়ে লাগানো ঠিক না।রুমে হেটেও শান্তি পাচ্ছিলাম না তাই বারান্দায় চলে এলাম।উনি এসে যদি বকা দেয় তার বারান্দায় আসার জন্য, দেক।এটাও সহ্য করে যাবো। একটু বিশুদ্ধ শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। রুমের বাতাস বিষাক্ত লাগছে।

আমি গিয়ে দোলনায় বসলাম। আকাশ পানে লক্ষ্য করলাম। চিকন এক ফালি চাঁদ রয়েছে আকাশে। আর তার নিকটেই রয়েছে শুকতারা। এই তারাটাই হয়তো চাঁদের সৌন্দর্য টা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই মনোরম সৌন্দর্য দেখেও আমার ভালো লাগছে না। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। মানুষের যখন মন খারাপ থাকে মায়ের কাছে কিছুটা হলেও শান্তি পায়।আমি তো সবসময় মায়ের কাছে বি*ষাক্ত বাণী শুনেছি। এ কথা ভাবতেই ফোটা ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে।
এতোটা দিন পর দেখলাম;
যতই হাসিখুশি থাকতে চাই, তারপর ও মনের মধ্যে জমানো বলতে আমার কেবল দুঃখগুলোই আছে…!

[#বি_দ্র:আসসালামু আলাইকুম মিষ্টি পাঠক -পাঠিকা। আমার নিজের কাছেই গল্পটা প্রচুর বোরিং লাগছিল তাই লিখার আগ্রহ পাচ্ছিলাম না। তাই গত কয়েক পাঠ এ একটু ফানি সাইড এড করেছিলাম।এতে অনেকে প্রশংসা করেছেন আবার গত পাঠে কিছু পাঠিকা বলেছেন নায়িকা ন্যাকামি করছে। তাদের উদ্দেশ্য,আপুরা নায়িকা জাস্ট অভিনয় করছে।ডেয়ার টা কমপ্লিট করছিল। আবার অনেকে বলেছেন অপ্রয়োজনীয় কথা বেশি, আসলে মজার বিষয় গুলো অপ্রয়োজনীয় কাজেই প্রকাশ পায়।গল্পে যদি টক,ঝাল, মিষ্টি না থাকে তাহলে গল্পটা রোবোটিকস টাইপের হয়ে যায়।এরপরও যদি খারাপ লাগে আমি ভীষণ ভীষণ,,, দুঃখিত।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৬

গল্প না পড়তে ইচ্ছে করলে পড়বেন না, আমি একথা কখনোই আমি বলবোনা। এটা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। একথা বলার রাইটস কোনো লেখিকার ই নেই।মন্তব্য করার অধিকার অবশ্যই প্রত্যেকের আছে।আপনারা অবশ্যই লেখিকার ভুল ধরিয়ে দিবেন
তবে অভদ্র ভাষায় মন্তব্য,,,, এক পর্ব পড়ে “ফাউল, ফালতু হয়েছে” এরকম কমেন্ট এর পাঠিকা আমার দরকার নেই।যদিও আমার কিছু পাঠকরা তাতে যোগ্য প্রতিবাদ করেছেন।তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ
আপনার কাছে যেটা “ফালতু ” মনে হয়েছে তা অন্য দশজনের মুখের হাসির কারণ হয়েছে। সো আমার কাছে আপনার কমেন্ট এর চেয়ে তাদের হাসি মূল্যবান।ধন্যবাদ🌸 ]

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ১৮