অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ২০

অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ২০
সাদিয়া মেহরুজ দোলা

ড্রাইভিং করার সময় বারংবার অহর্নিশ আয়ন্তিকার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। কখনো তো হাত দিয়ে আয়ন্তির গাল টেনে দিচ্ছে তো কখনো চুল ধরে টান দিচ্ছে। এমন আচরণে আয়ন্তিকা মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত! পরিশেষে অহর্নিশ আবার তার গাল ধরে টান দিতে আসলেই আয়ন্তিকা ঘাড় বাকিয়ে নিয়ে অহর্নিশের আঙুলে কামড় দিয়ে বসলো। অহর্নিশ বিহ্বলিত, ব্যাথায় কাতরে সজোরে ব্রেক দিয়ে গাড়ি থামায়।
অহর্নিশ হতবাক হয়ে তাকিয়ে হাত ঝাড়া দিয়ে বলল,

‘ কামড় দিলে কেনো?দেখছো না আমি ড্রাইভিং করছি। এখন এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো যদি!’
আয়ন্তিকা তুমুল রেগে নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ এক্সিডেন্ট? এই আপনি যে এতক্ষণ আমার গাল, চুল ধরে টানাটানি করলেন তার কি?তখন কি এক্সিডেন্ট হতে পারতো না হ্যা?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অহর্নিশ আয়ন্তিকার দিকে পূর্ণতর দৃষ্টি দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলল, ‘ ইউ নো আয়ন্তিকা? তুমি যখন রেগে গিয়ে নাক ফুলিয়ে কথা বলো না?তখন তোমায় দেখে মনে হয় তুমি আমাকে আদর করতে বলছো। তোমার নাক, মুখ চোখ তোমায় আমাকে আদর করতে বলছে! ছিহ্! নটি মাইন্ড তোমার। আমায় সোজাসুজি বললেই তো পারো। ডাবল আদর করে দিবো। ‘
আয়ন্তিকা কিংকর্তব্যবিমুঢ়!
মানে, এই লোক কোথাকার কথা কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভাবা যায়? অতীব লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয় সে। মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,
‘ আপনি একজন অতিমাত্রায় অসভ্য লোক! ‘
অহর্নিশ ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলল, ‘ অহ রিয়েলি?’
আয়ন্তিকা তপ্তশ্বাস ফেলে বিরক্তি কন্ঠে বলল,
‘ জি! ‘

‘ আচ্ছা বুঝলাম! সবই বুঝলাম। আগা হতে মাথা অব্দি! এখন বলোতো কি আদর দিবো? চুমু খাবো ঠোঁটে নাকি জরীয়ে ধরবো?তুমি যেটা বলবে আমি সেটাই করবো ইভেন এক্সট্রা করে করবো। আফটার অল এতদিন দূরে ছিলে। একটু আদর, চুমু তো প্রাপ্য তোমার। ‘
আয়ন্তিকা ঝাঁঝ মেশানো কন্ঠস্বরে বলল, ‘ আপনি কি গাড়ি স্টার্ট দিবেন? নাকি আমি এখনি এখান থেকে নেমে যাবো, বলুন?’
অহর্নিশ মৃদু হেঁসে বলল, ‘ বাসার গিয়ে আদর নিতে চাও? আচ্ছা ব্যাপার নাহ! চলো, আমারও আবার রাস্তার মাঝে চুমু টুমু দিতে ভিষণ লজ্জা লাগবে। ‘

অহর্নিশ গাড়ি স্টার্ট দেয়। লম্বা শ্বাস ফেললো সে সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে। আয়ন্তিকা কে একটুখানি ব্যাস্ত রাখারা তাগিদে এমন কথা বলা তার। অহর্নিশ আয়ন্তিকার ব্যাপারে তার এক সাইক্রিয়েটিষ্ট ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলেছিলো। তার ফ্রেন্ড বলল, আয়ন্তিকার ওপর দিয়ে ভিষণ বড় কিছু প্রভাবিত হয়েছে। যা তার ব্রেন নিতে পারেনি বা সহন করতে পারেনি। তাই ঐ মূর্হতটায় সে পাগল এবং উদ্ভট বিহেভ করেছে। এখন এমন এটার্ক আবার আসতে পারে আয়ন্তিকার ওপর তাই তাকে ব্যাস্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলো অহর্নিশের ফ্রেন্ড অহর্নিশ কে!
মৃদু সতেজতা মিশ্রিত বাতাস টেনে নিয়ে অহর্নিশ আয়ন্তিকার দিকে তাকায়। আয়ন্তিকার সর্বমুখে চিন্তা এবং মলিনতার ছাপ! অহর্নিশ বুঝতে পারে না মাহির ঠিক কি বলেছে আয়ন্তিকে? কি এমন বলেছে যে একদিন, এক ঘন্টার ব্যাবধানেই আয়ন্তির এই বিপর্যস্ত অবস্থা? নিভৃতে রাগের স্তুপ তৈরি করে সে। একবার মাহিরকে পেলে সে কেটে কুচিকুচি করে ফেলবে।

মাগরিবের আজানের ধ্বনি কর্ণপাত হওয়ার পর- পরই আয়ন্তিকা ঘুম থেকে উঠে পড়ে। বাসায় আসার পর অহর্নিশ তাকে জোর করে ঘুমোতে পাঠিয়েছে। প্রথম প্রথম সে ঘুমোতে না চাওয়ার পর অহর্নিশের কড়া ধমকে ঘুম আপনা – আপনি চলে এসেছে তার। আয়ন্তিকার কষ্ট হয়! তুমুল পরিমাণে, অহর্নিশ শুধু তার সাথে রেগেই কথা বলে আজকাল একটু বেশিই!

অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ১৯

নামাজের উদ্দেশ্যে বিছানা থেকে নামতে নিলে তীব্র পেট ব্যাথায় পেট চেপে ধরে বিছানায় বসে পড়ল আয়ন্তি! দাঁত মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। আজ আর নামাজ পড়া হবেনা তার। বহুকষ্টে ওয়াশরুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে এসে ফের বিছানায় শুইয়ে পড়ল আয়ন্তিকা! পেট ব্যাথা ক্রমাগত বাড়ছে। তার সাথে বাড়ছে আয়ন্তিকার কান্নার বেগ। এই সময়টাতে সে একদমই ঠিক থাকেনা। নিজেকে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে পড়ে। পরিশেষে ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে দেয়।

কান্নার আওয়াজ কর্ণধারে আসে অহর্নিশের। সে ডিভানে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিলো সবেমাত্র। কিন্তু কান্নার আওয়াজে অহর্নিশের কাজে বিঘ্ন ঘটল! দ্রুত পায়ে আয়ন্তিকার রুমে এসে দেখে আয়ন্তিকা পেট চেপে ধরে কান্না করছে। অহর্নিশ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। লম্বা পা ফেলে আয়ন্তিকার পাশে এসে বসে অস্থির হয়ে বলল,
‘ আয়ন্তিকা? এই মেয়ে কি হয়েছে? দেখি চোখ খোলো! তাকাও তো একটু আমার দিকে। ‘
আয়ন্তিকা ফট করে চোখ খুলে নেয়। লজ্জা লাগছে তার প্রবল।পরিশেষে ব্যাথাতুর কন্ঠে বলল,

‘ পেট ব্যাথা প্রচুর.. ‘
এতটুকু বলে থেমে যায় আয়ন্তিকা।
অহর্নিশ প্রশ্নাত্মক চাহনি দিয়ে বলল, ‘ পেট ব্যাথা হটাৎ.. ‘
পরক্ষণেই চুপ হয়ে যায় অহর্নিশ। তার কাছে পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যায় ক্ষনেই। দাঁড়িয়ে সে বের হয়ে যায় রুম হতে। মিনিট পনেরোর পর ফিরে এসে আয়ন্তিকা কে টেনে শোয়া থেকে উঠিয়ে দেয়! হাতে কিছু প্যাকেট দিয়ে বলল,

‘ এতো লজ্জা না পেয়ে ডাইরেক্ট বললেই তো পারো। পর না বর হই তোমার। এভাবে লজ্জা পেলে আমার বাবুর আম্মু কিভাবে হবে তুমি? ‘

অন্তর্লীন প্রণয় পর্ব ২১