অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৪৬

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৪৬
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল 

বর্তমান~
দুপুর তিনটার দিকে অফিসে এসে পৌঁছলো তুহিন। রিপোর্ট করতে ডিজির কাছে গেলোনা। গিয়ে বিশেষ কোন লাভ হবেনা। বলার মতো নতুন কিছুই নেই। ভীষণ অস্হির লাগছে ওর। সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো খু’নির ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেনি ও। পরবর্তী টার্গেট কে হতে পারে সেটা কেবল অনুমান করতে পারছে। ওর অনুমান ভুলও হতে পারে।জানার মধ্যে জানতে পেরেছে ঐ তিনটে গ্রুপ সম্পর্কিত তথ্য। সোলার সিস্টেম সম্পর্ক চমকপ্রদ কিছু সত্য। তার সঙ্গে যে বাকি নয়টা খু’নের সম্পর্ক থাকতে পারে সে বিষয়েও ও শতভাগ নিশ্চিত নয়। কোন পাকাপোক্ত প্রমাণ নেই ওর কাছে। আছে কেবল কিছু যুক্তি। যা একটু চেষ্টা করলেই খন্ডন করা যায়। আজিজের দেওয়া ফাইল পড়ে ভেবেছিল বিশেষ কিছু পাবে। কিন্তু পারভেজের মৃত্যু আর আজিজের থিওরি ছাড়া কিছুই পেলোনা। যদিও সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

‘ স্যার আসব?’
তুহিন তাকিয়ে দেখল তমাল এসছে। ‘ইয়া’ বলে অলস ভঙ্গিতে চেয়ারে হেলান দিল। তমাল ভেতরে এসে বলল,
‘আমাদের সিক্রেট ফিল্ড ওয়ার্কারদের মতে স্যার ঢাকায় তিনজন আছে এরকম। যারা নিখুঁতভাবে জাল ইনফরমেশন কার্ড বানায়। ওদের সব ইনফরমেশন নিয়ে এসেছে স্যার।’
তুহিন ল্যাপটপ অন করতে করতে বলল, ‘ ওদের ধরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। কালকে সকালের মধ্যে ওদের আমি চাই।’
‘ ওকে স্যার।’
‘ বসো।’
তমাল বসল। তুহিন ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রেখে বলল, ‘ডার্ক নাইটের লীডারের নামটা কী ছিল?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ শওকত মীর্জা, স্যার।’
‘ গতকাল শুনেই নামটা চেনাচেনা লাগছিল। হঠাৎ করে তখন মাথায় খেলেনি। নিজেকেই বোকা মনে হচ্ছে এখন। এতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারটা মিস করে গেলাম? কিন্তু তুমিও খেয়াল করোনি?’
তমাল মাথা নিচু করে ইতস্তত করে বলল, ‘খেয়াল করেছিলাম, স্যার। আমি ভেবেছিলাম আপনি চিনেছেন।’
‘চিনলে কী ইমিডিয়েটলি রিঅ্যাক্ট করতাম না?’

তমাল মনে মনে ভাবল, তুহিন কীসে চমকায় আর কীসে না, কী ঘটলে কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাইতো এখনো অবধি বুঝে উঠতে পারেনা তমাল। স্বাভাবিক কোন ঘটনায়ও চমকে ওঠে, অস্বাভাবিক কিছু টের পেয়ে। আবার চরম অস্বাভাবিক কোন ঘটনা দেখেও এমন ভাব করে যেন তেমন কিছুই ঘটেনি। তমালের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে তুহিন বলল, ‘এবারের ইলেকশনে উনি অন্যতম প্রার্থী। তাইনা?’
‘ইয়েস স্যার। আর বেশ আটঘাত বেঁধেই নেমেছে। বর্তমান সরকারের নমিনেশনও পেয়েছে।’
‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের দাপট প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন এই রাজনীতি ক্যারিয়ারটাই ওনার শেষ ভরসা। ওনার ছেলে সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছিলাম। নিয়েছিলে?’

‘ইয়েস স্যার। সেটাই বলতে যাচ্ছিলাম। ওনার ছেলের নাম শান। দেশেই আছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ঢাকায় আছে। কিন্তু কোথায় আছে এখনো জানা যায় নি। খোঁজ চলছে।’
তুহিন গম্ভীরভাবে মিনিটখানেক ভেবে বলল, ‘তারমানে খু’নিও ঢাকার মধ্যে আছে। আর ঢাকা থেকে ও ততক্ষণ বের হবেনা যতক্ষণ না শানকে মারতে পারবে। চেকপোস্টে স্কেচের ছবি পাঠিয়ে লাভ নেই। আমার মনে হয়না স্কেচে খু’নির আসল চেহারা আছে। যা করার দ্রুত করতে হবে তমাল। পরের টার্গেট ওই হবে। তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। মিস শায়লাকে খুঁজে বের করো। প্রথমবার হালকা মিথ্যা বলেছে। এবার ছাড়া যাবেনা। কেসটা ভয়ানক সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে।’

‘রাইট, স্যার।’
‘আমের ভিলার কারো কোন খোঁজ পেলে?’
কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকল তমাল। তারপর বলল, ‘ না স্যার। তবে কুহু আর প্রিয়তা যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তো সেখানে খোঁজ নিয়েছি। কুহুর এক বান্ধবী ছিল। রীতি। ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। ও জানেনা ওরা কোথায়। কোনরকম যোগাযোগ নেই ওদের সঙ্গে। কিন্তু…’
ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকাল তুহিন। ভ্রু বাঁকিয়ে বলল, ‘কিন্তু?’
‘রীতির কাছে জানতে পেরেছি কুহুর একজন বয়ফ্রেন্ড ছিল। তার নাম ছিল। তার নাম নীরব। ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট নাঈমুর রহমানের ছেলে।’
‘ সেখানে খোঁজ নিয়েছিলে?’
‘ ওখান থেকেই ফিরলাম স্যার। আর যেটা জানলাম সেটা আরও অদ্ভুত।’
সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তমালের দিকে তাকাল তুহিন। তমাল বলল, ‘নীরবও নিখোঁজ, স্যার।’

নিজের কেবিনে বসে চা খাচ্ছেন ডিজি শাফায়াত হোসেইন। কমিশনারের কল এসেছিল তার কাছে। কেসটা কতদূর এগিয়েছে সেই বিষয়ে কথা বলতে। তুহিনকে কল করে কেবিনে ডাকবেন বলে ঠিক করেছেন। কিন্তু তার আগেই দরজায় নক করল তুহিন। তাকিয়ে তুহিনকে দেখে সন্তুষ্ট হলেন শাফায়াত। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে বললেন, ‘এসো, এসো। তোমাকেই ডাকতাম এখন। বসো।’
তুহিন এসে বসল চেয়ারে। শাফায়াত তুহিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কোন নতুন খবর?’
‘ স্যার পলিটিশিয়ান শওকত মীর্জার ছেলে শান মীর্জার বর্তমান লোকেশনটা জানা দরকার আমার। যেকোন মূল্যে।’
‘ কেন?’

‘ কারণ আমি অলমোস্ট শিওর পরবর্তী টার্গেট শান মীর্জা। আগের খুনের প্যাটার্ন সেটাই বলছে। আমি জানতে পেরেছি ও ঢাকাতেই আছে। আর আমি যদি খুব ভুল না হই স্যার আজ রাতের মধ্যেই ও খুন হবে। যদি আমরা সময়মতো পৌঁছতে না পারি।’
চমকে উঠলেন শাফায়াত। প্রায় আর্তনাদের ভঙ্গিতে বললেন, ‘হোয়াট! হাউ কুড ইউ সো শিওর?’

তুহিন সোজা হয়ে বসল। পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে মেলে রাখল টেবিলে। কলম হাতে নিয়ে বলল, ‘স্যার ঢাকায় হওয়া খু’নগূলোর দিকে একবার নজর দিন। প্রথম খু’নটা হয় ৯ জানুয়ারির, পরের দুটো খু’ন একই তারিখে ১০ জানুয়ারি, গ্যাপ মাত্র একদিন। আর খু’নগুলো একই এলাকায় গুলশানে। পরের খু’নটা ১২ জানুয়ারি, গ্যাপ দুইদিন। জায়গাটা গুলশান থেকে একটু দূরে। মীরপুর। পরের খুনটা এক সপ্তাহ পরে কিশোরগঞ্জ, গ্যাপ সাতদিন। কিন্তু স্যার এই সাতদিনে চট্টগ্রামে আরও একটা খু’নের রিপোর্ট পেয়েছি আমি। চট্টগ্রামে। আন্ডারওয়ার্ল্ডেরই। সুতরাং খু’নি মাঝে চট্টগ্রাম গিয়েছিল। কিন্তু কিশোরগঞ্জে খু’ন হওয়ার ঠিক পরেরদিনই কিন্তু বনানীতে সাজ্জাদ খু’ন হয়। তার দুদিন পর লক্ষ্মীবাজার সুজনের খু’ন। তারপর ফেনীতে তিনদিন পর পলাশের খু’ন। তারমানে বোঝাই যাচ্ছে স্যার ঢাকাতে হওয়া খুনগুলোর মধ্যকার পার্থক্য সর্বোচ্চ একদিন বা দুইদিন। পলাশের খুনের একদিন পেরিয়ে গেছে স্যার। আমার মনে হয় আজ রাতটাকেই খু’নি টার্গেট করবে।’

শাফায়াত হতভম্ব চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তুহিনের দিকে। অস্ফুট স্বরে বলল, ‘মাই গড!’
তুহিন খানিকটা ব্যস্ত গলায় বলল, ‘স্যার আপনি যেকরেই হোক শান কোথায় আছে খোঁজ নিন। শওকত মীর্জার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। দরকারে পুলিশের সাহায্য নিন। গোটা শহর খুঁজতে হবে স্যার। হোটেল, রিসোর্ট, মল, বার এনি হয়ার। আমি চাইনা আর একটাও খু’ন।’
শাফায়াত কিছু একটা চিন্তা করতে করতে বলল, ‘ইউ আর রাইট। আমি এক্ষুনি সব ব্যবস্থা করছি। আই হোপ কয়েক ঘন্টার মধ্যে শানকে পেয়ে যাব আমরা।’ আর একটু থেমে বলল, ‘ এন্ড ইয়েস, ওয়েল ডান।’
‘ থ্যাংক ইউ স্যার। আসছি।’
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন শাফায়াত। তুহিন বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। শাফায়াত সন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে দেখলেন নিজের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে তুখোড় এবং শান্ত ব্যক্তিত্বের ইনভেস্টিগেটরকে।

রাত ন’টা বাজে কেবল। বেশ ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরল তুহিন। মানসিক চাপ বেশি পড়ছে। ওর ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম কেস যেখানে ওর নিজেরই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটা জটিল কেইস দেখেছে ও। সলভও করেছে। কিন্তু এটা এমন একটা কেইস যেখানে ও মোটামুটি বুঝতে পারছে কী ঘটেছে, কেন ঘটেছে। কিন্তু কাউকে বোঝানোর মতো উপযুক্ত প্রমাণ হাতে পাচ্ছেনা।

শাওয়ার নিয়ে চুপচাপ বসে রইল বিছানায়। বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কল আসছেনা এখনো। ও কেসটা হাতে নেওয়ার পরেও দুটো খু’ন হয়ে গেছে। আর একটা খু’নও হতে দিতে চায়না ও। শানকে বাঁচাতেই হবে। যে করেই হোক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত শানের কোন খবর পাচ্ছেনা।সময় যত যাচ্ছে, ভয় ততই বাড়ছে ওর। খুব বেশি দেরী হয়ে গেলে শানকে আর পাবেনা ও। পাবে কেবল শানের লা’শ। যেটা ওর চরম ব্যর্থতার পরিচয় হবে।
মাহমুদা কফি নিয়ে এলেন তুহিনের ঘরে। টি-টেবিলে কফির কাপটা রেখে বললেন, ‘রাতে কিছু খাবেনা, বাবা?’
‘ না খালা। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।’

কিছু বলতে গিয়েও বলল না মাহমুদা। বুঝতে পারল তুহিন আসলেই বেশ চিন্তায়। আজ ওকে একা ছেড়ে দেওয়াই ভালো। কফির মগটা হাতে নিয়ে আমের ভিলা আর ফাউন্ডেশন থেকে নিয়ে আসা কিছু কাগজপত্র নিয়ে বসল তুহিন। অনেক গোপন তথ্য ওর নাগালে এসেছে। কিন্তু এখনই সেসব প্রকাশ করা উচিত হবেনা। ওকে আরেকটু রিসার্চ করতে হবে। ধোঁয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাগজগুলো পড়ল। ফাঁকা একটা কাগজে কিছু লিখে হিসেব করল। এসব করতে করতে কখন একটা ঘন্টা পেরিয়ে গেল তুহিন নিজেও বুঝতে পারল না। ওর মনোযোগ কাড়ল মোবাইল ফোনের রিংটোন। তুহিন স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল নাম্বারটা ফারিয়ার। কলটা রিসিভ করে বলল, ‘বলো।’
ওপাশ থেকে ফারিয়া বলল, ‘স্যার ইনফরমেশন আছে।’

ঘাড়টা কাত করে একহাত দিয়ে টিপে ধরল তুহিন। আড়মোড়া ভেঙে ক্লান্তি ঝেড়ে বলল, ‘বলে ফেলো।’
‘ স্যার আমের ভিলায় যে ফটো অ‍্যালবাম পেয়েছিলাম আমরা। একটা ছবি নষ্ট ছিল। চা পড়ার কারণে। মনে আছে?’
‘ আছে।’
‘ স্যার সেই নষ্ট কাগজটুকু টেস্ট করে পয়জন পাওয়া গেছে।’
অবাক হলো তুহিন। অস্ফুট স্বরে বলল, ‘পয়জন?’
‘ ইয়েস স্যার।’
‘ আর কিছু?’
‘ না স্যার। এইটুকুই জানা গেছে এখনো।’

তুহিন কিছু না বলে কলটা কেটে দিল। কথা বলার সময় ইরার কল আসছিল। এখনো বাজছে। এই মুহূর্তে কল রিসিভ করতে ইচ্ছে করছেনা। ওর মাথায় ঘুরছে বিষের কথা। ফটো অ‍্যালবামে বিষ কীকরে এলো! তাও বৈঠকঘরে? কে নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু বেশিক্ষণ চিন্তা ভাবনা করার সময় পেলোনা তুহিন। ফোন বিরতিহীনভাবে বেজেই চলেছে। তুহিন না পেরে বাধ্য হয়ে ফোনটা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে ইরা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ ফোন ধরছিলেনা কেন তুহিন? লাস্ট কখন আমাদের কথা হয়েছিল সত্যিই মনে আছেতো তোমার? সারাদিন কল করেছি তোমাকে। একটাবার ধরা যেতোনা?’
তুহিন ক্লান্ত গলায় বলল, ‘ইরাবতী প্লিজ। এখন না। আমার ঝগড়া করার ধৈর্য নেই এখন।’

যে ইরা সহজেই তুহিনের ক্লান্তি বুঝতে পারে। সমস্যা বুঝতে পারে। সে আজ কিছুই বুঝলো না। তুহিনের এমন শান্ত উত্তর তাকে আরও চটিয়ে দিলো। ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘তিন বছর যেতে না যেতেই ভালো লাগছেনা তুহিন?’
তুহিন ‘চ্যাহ্’ শব্দ করে অস্বস্তি নিয়ে বলল, ‘কী হয়েছে কী তোমার?’
‘ ফোন ধরছিলে না কেন?’
‘ কাজ ছিলো, ইরা।’

‘ তো সে কাজগুলো কী আমার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ? আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড তুহিন। আমারও তোমার কাছে কিছু এক্সপেক্টেশন থাকে। আমি জানি তুমি ব্যস্ত থাকো। তোমার কাজ থাকে। তাই আমি সবসময় কম্প্রোমাইজ করি। তোমাকে স্পেস দেই। অনেককিছু মেনে নেই। কিন্তু তুমি? তুমি কী কোনদিন একফোঁটা কম্প্রোমাইজ করেছো তুহিন। বলতে পারবে?’
অন্যসময় হলে তুহিন হয়তো বুঝতো। ভালোভাবে ঠান্ডা মাথায় ব্যপারটা সামলাতো। কিন্তু আজ তুহিনেরও মাথা হ্যাং হয়ে আছে। ঔ বলল, ‘ আজ এসব বাদ দাও প্লিজ। অসহ্য লাগছে।’
ইরা চুপ রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, ‘ কল করে বিজি পেয়েছিলাম। কে ছিল ফোনে?’
তুহিন ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ইরা আজ তোমার মুড ঠিক নেই। ঘুম দাও। কাল সকালে কথা বলব।
ইরা জেদ ধরে বলল, ‘আমার সব ঠিক আছে। তুমি বলবে?’

‘ ইরা..’
‘ কে ছিল?’
তুহিন বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ফারিয়া ছিল। হ্যাপি?’
‘ ও আচ্ছা। ওর সঙ্গে কথা বলার সময় পাওয়া যায়। একটাবার আমার কল রিসিভ করার সময় পাওয়া যায়না তাইনা?’
তুহিন রেগে গেল। তবুও যথেষ্ট শান্ত গলায় বলল, ‘ইরা ডোন্ট ইউ থিংক তুমি বাড়াবাড়ি করছো?’
‘ এখন আমার সবকিছুই তোমার বাড়াবাড়ি মনে হয়। তোমার এখন আমাকে সত্যিই ভালো লাগেনা তুহিন? নাকি নতুন কাউকে পেয়েছো? ফারিয়াকে পছন্দ হয়ে গেছে?’

তুহিন ধমক দিয়ে বলল, ‘ইরা! নোংরা কথা বলোনা। তোমার মুখে মানায় না।’
ইরা জেদ ধরে বলল, ‘ তুমি বাধ্য করছো। এভাবে চলতে পারেনা তুহিন। তোমার বোঝা উচিত।’
তুহিনের এমনিতেই ঘাড় মাথা ভাড় হয়ে আছে। কারো কোন কথা ভালো লাগছেনা। তারওপর ইরার এসব কথা। তাই শান্ত হয়ে বলল, ‘তোমাকে জোর করে ধরে রাখিনি আমি।’

কথাটা বলে ফোন কেটে দিলো তুহিন। ভালো লাগছেনা কিছু। বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ফেলল। এখন একটু ঘুমাবে ও। খুব ক্লান্ত লাগছে। চোখটা লেগে যেতেই ফোন নামক যন্ত্রটা অসহ্য আওয়াজে বেজে উঠল। তুহিন বিরক্ত হয়ে চোখ খুলল। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে ঘুম ঘুম গলায় বলল, ‘হ্যালো?’
ওপাশ থেকে তমাল ব্যস্ত কন্ঠে বলল, ‘স্যার, শান মীর্জার খবর পাওয়া গেছে। সাভারে আছে। ওর বাবার ফ্ল্যাটে। জায়গাটা সিক্রেট ছিল। তাই খুঁজে পেতে এতো সময় লাগল।’

তুহিন দ্রুত দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাল। পৌনে বারোটা বাজে। তুহিন কিছু একটা ভেবে চমকে উঠল। বলল, ‘শাফায়াত স্যারকে বলো কমিশনারকে বলে ওখানে পুলিশ পাঠাতে। ইমিডিয়েটলি। গাড়িটা নিয়ে আমার ফ্ল্যাটের নিচে এসো। দ্রুত।’
‘ আমি রাস্তাতেই আছি, স্যার। পাঁচ মিনিট লাগবে।’

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৪৫

ফোনটা রেখে দ্রুত উঠে দাঁড়াল তুহিন। দ্রুত হাতে কোনরকমে চেঞ্জ করল। হোলস্টার পরে নিজের বেরেটা পিস্তলটা নিলো সঙ্গে। কোনমতে মাহমুদাকে দরজা লাগাতে বলে বেরিয়ে গেল। ক্লান্তি, অবসাদ কখন পালিয়ে গেছে টেরও পেলোনা।

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৪৭ (১)

1 COMMENT

  1. Beautiful
    অসাধারণ একটা গল্প
    কিন্তু অনিয়মিতভাবে গল্প দেয়।
    বাকি পর্ব গুলো দেওয়ার সময় চেষ্টা করবেন নিয়মিত গল্প দেওয়ার
    ধন্যবাদ। ???

Comments are closed.