অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৫৯

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৫৯
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল 

রাতের বেশিরভাগ সময়টা জেগে কাটানোর পর ভোরবেলা খানিকটা ঘুমিয়েছিল কুহু। যতকিছুই হোক, মানব শরীর তো। মনের অবস্থা যাই হোক, না খেয়ে না ঘুমিয়ে বাঁচা যায়না। এক্ষেত্রে ভয়ানক একগুঁয়ে আচরণ করে শরীর। অনিয়মের মাত্রা বাড়লেই ভয়ানক বিদ্রোহ ঘোষণা করে শরীরের প্রতিটা অঙ্গ। যেখানে নিজের শরীরই মনকে গুরুত্ব দিতে নারাজ সেখানে অন্যের কাছে সে আশা রাখা নিতান্তই নিরাশা।

ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ এসে দাঁড়িয়েছে বারান্দায়। ঠান্ডা পড়েছে তাই একটা শাল জড়িয়ে রেখেছে ছিপছিপে শরীরটায়। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কুয়াশা আর মেঘে আচ্ছন্ন আকাশের দিকে। নিজের জীবনটাও সেরকমই অস্পষ্ট, বিষাদে আবৃত মনে হল কুহুর। শরীরের জ\খম শুকিয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু মনের ক্ষত! সেতো বেড়েই চলেছে। ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে সেই মহা সংক্রামক ঘা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সেই ঘা/য়ের যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে কুহু। সেই ভয়া/নক রাতের কথা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠে ওর সমগ্র শরীর। সেই নরপশুদের ঘৃণ্য স্পর্শের কথা মনে পড়লে জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করে সর্বাঙ্গ। কিন্তু পারেনা। কিছুতেই পারেনা। মানসিকভাবেও প্রচন্ড দুর্বল ও। আত্ম/হ/ত্যার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস ঐ মনে নেই। জীবন মৃ/ত্যুর মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় বেঁচে থাকা কতটা নারকীয় অনুভূতি দেয় সেটা আজ বুঝতে পারছে নিষ্পাপ মেয়েটা।

নীরবের কথা মনে পড়ল। নীরবের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত। সেই মিষ্টি সুরে ডেকে ওঠা ‘নীরবতা’। নীরবের হৃদয়গ্রাসী স্বীকারোক্তি। ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মেয়েটার। সেদিনের পর একবারও কুহুর সামনে এসে দাঁড়ায়নি নীরব। হয়তো আর কোনদিন দাঁড়াবেও না। অথচ সব ঠিক থাকলে আজ নীরবের ঘরোনী হতো কুহু। নতুন জীবনে পা রাখত নীরবের হাত ধরে। কত স্বপ্ন সাজিয়ে ছিল দুজন মিলে। কিন্তু এখন সবটা আক্ষরিক অর্থেই স্বপ্ন।

অবাস্তব স্বপ্ন। যা হবার নয়। নীরবের ওপর রেগে নেই কুহু। নীরবের সঙ্গিনী হওয়ার যোগ্যতা ওর নেই। আগেও ছিলোনা হয়তো। আর এখনতো প্রশ্নই ওঠেনা। কিন্তু নীরবযে বলেছিল, “আমি তোমার পূর্ণতা দেখে তোমাকে ভালোবাসিনি। আমার নিজের পূরিপূরক হিসেবে ভালোবেসেছি। আমার অপূর্ণতাকে একমাত্র তুমিই পূর্ণ করতে পারো, তাই তোমাকে ভালোবেসেছি। আমার কোলাহলপূর্ণ জীবনের একমাত্র নীরবতাকে ভালোবেসেছি।”

সেসব কী ভুলে গেল সে? হয়তো। মুখে বলা কথাটা যখন সত্যিই বাস্তবে রূপ নিল। তখন হয়তো সত্যিকারের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছে নীরব। সে কারণেই হয়তো আর ফিরে তাকায়নি কুহুর দিকে। কুহু চায়ও না তাকাক। নীরব ভালো ছেলে। নিজের যোগ্য সঙ্গিনী খুঁজে নিয়ে খুব ভালো থাকুক। এটাই প্রার্থনা ওর। অজান্তেই কুহুর দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে এলো। আজকাল কুহুর খুব ইচ্ছে হয় চিৎকার করতে। গগন ফাঁটানো চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, জ্ঞানত কোনদিন কারো ক্ষতি করেনি ও। তবে সৃষ্টিকর্তা এতো ভয়ানক শাস্তি কেন দিলেন ওকে? কী অপরাধ ছিল ওর? কোন পাপের শাস্তি ছিল এটা?

কুয়াশা ঢাকা রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে উচ্ছ্বাস। ভীষণ ক্লান্ত সে। সারারাত জেগে কাটিয়েছে। নিরন্তর খাটাখাটনীর পর একটু বিশ্রাম চাইছে শরীর। শীঘ্রই বাড়ি ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করল উচ্ছ্বাস। লম্বা একটা হাই তুলে হাতঘড়ির দিকে তাকাল। আটটা বেজে বারো। ঘড়ি থেকে চোখ তুলে রাস্তায় তাকাতেই খানিক চমকে উঠল ও। নাজিফা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার কিনারে।

রিকশা খুঁজছে সম্ভবত। কোথায় যাচ্ছে ও? মেয়েটার ওপর মারাত্মক রাগ হলো উচ্ছ্বাসের। সাড়ে সাতমাসের গর্ভবতী অবস্থায় কোথায় বিশ্রাম নেবে তা-না। বাইরে এতো কী! বাড়ির লোকই বা কেমন? ছাড়ে কেন মেয়েটাকে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নাজিফার ঠিক সামনে গাড়িটা পার্ক করল উচ্ছ্বাস। নাজিফা খানিকটা চমকালো। কিন্তু পরমুহূর্তে উচ্ছ্বাসকে দেখে স্বস্তি পেল হয়তো। উচ্ছ্বাস ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কোথায় যাচ্ছো?’
নাজিফা বলল, ‘তোমাদের বাড়িতেই। কুহুকে দেখতে ইচ্ছে করছিল।’

‘এ অবস্থায় হুটহাট এভাবে বেরিয়ে পড়াটা ঠিক না নাজিফা। কেনো বুঝতে চাওনা? উঠে এসো।’
নাজিফা কোনরকম তর্ক না করে চুপচাপ উঠে এলো। গাড়ি চলতে শুরু করল আবার। নাজিফা শাড়ির আঁচলে মুখের ঘাম মুছল। এই শীতেও ঘেমে গেছে মেয়েটা। বোঝাই যাচ্ছে কষ্ট হয়েছে খুব। একটা দীর্ঘশ্বাস চাপল উচ্ছ্বাস। জীবনের অন্যতম সব খারাপ অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়েছে মেয়েটা গত একবছরে। নিজের ভালোবাসাকে ত্যাগ করে অন্যকারো সঙ্গে সংসার করাটা সহজ ছিলোনা।

একজনকে মনের রাজা বানিয়ে, অন্যকাউকে শরীরে রাজত্ব করতে দেওয়ার মতো বিশ্রী অনুভূতি আর হয়না। সে অনুভূতি যেকোন মেয়েকেই নারকীয় পীড়া দেয়। যদিও স্বামী সোহাগ জুটেছিল কপালে। কিন্তু সেই সোহাগ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। নাজিফা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ওর স্বামী। নতুন সংগ্রাম শুরু হয় তার পরেই। স্বামী না থাকলে শ্বশুরবাড়িতে মেয়েদের স্থান অনেকটা অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের মতোই হয়।

নাজিফার মতো তীব্র আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মেয়ের পক্ষে সেভাবে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই ফির‍ে আসে বাপের বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই। বাবা-মা, ভাইয়েরা মাথায় তুলে রাখলেও ভাবীদের এ বিষয়ে ঘোর আপত্তি। কিন্তু ভাইয়েরা ঠিক আছে বলেই সোজাসুজি কিছু বলতে পারেনা তারা। তবে নিত্যদিনের নীরব অশান্তি লেগেই থাকে।

এসবকিছু নাজিফার কাছেই শুনেছে উচ্ছ্বাস। রুদ্র আর কুহু হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় অনেকটা সময় একসঙ্গে থেকেছে দুজনে। উচ্ছ্বাসের চাপাচাপিতেই সবটা বলতে বাধ্য হয়েছে নাজিফা। ড্রাইভিং এর ফাঁকে নাজিফার দিকে আরো একবার তাকাল উচ্ছ্বাস।

গর্ভকালীন এক অদ্ভুত জৌলুস থাকলেও কোথাও একটা উদাসীনতা রয়েই গেছে চেহারায়। দুচোখে যেন একসমুদ্র বিষাদ। বুকের মধ্যে অদ্ভুত চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল উচ্ছ্বাস। ওতো চেয়েছিল মেয়েটা যেন সুখে থাকে। ওর ভাগের সব সুখটুকু যেন নাজিফা পায় সে প্রার্থনাই করতো সবসময়। নিজে দুঃখের সাগরে ডুবে থেকেও নাজিফার সুখ চেয়েছিল উচ্ছ্বাস। কিন্তু কী অদ্ভুত নিয়তি! নীরবের সেই প্রার্থনাও বিফল হল। সুখতো দূরে থাক, কী ভীষণ দুঃখই না লিখে রেখেছিলেন খোদা ওর ভাগ্যে! নিষ্ঠুর ভাগ্য।

‘কোথায় গিয়েছিলে? চোখমুখ এমন লাগছে! রাতে ঘুমাও নি?’
নাজিফার কথার ভাবনা থেকে ফিরে এলো উচ্ছ্বাস। একহাতে চোখ কচলে বলল, ‘রাতে বাইরে ছিলাম।’
‘কোথায় ছিলে?’
উচ্ছ্বাস জবাব দিলোনা। নাজিফা বুঝল ব্যপারটা এড়িয়ে যেতে চাইছে তাই সে। তাই প্রসঙ্গ বদলে বলল, ‘নীরব ভাইয়ের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পেরেছিলে?’
‘না।’

‘আমি ভাবতে পারিনি লোকটা এরকম কিছু করবে। আমার মনে হয়েছিল সত্যিই কুহুকে ভীষণ ভালোবাসে। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা জানো? হসপিটালের দিনগুলোতে নীরব ভাইকে ভালোভাবে দেখেছি আমি। কী অবস্থা হয়েছিল ছেলেটার। ওনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না। সেই নীরব ভাই কি-না_’

‘ওটাতো কিছুইনা। কুহুকে যখন উদ্ধার করলাম তখন যেভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলো। তুমি দেখলে তুমিও কেঁদে ফেলতে। আসলে ওটা সাডেন রিঅ্যাকশন ছিল। কুহুর প্রতি দুর্বলতা ছিল ওর। সেটা সত্যি। তাই এরকম ঘটনায় কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু পরে হয়তো আবেগ আর বাস্তবতার পার্থক্যটা বুঝেছে। তারওপর ওর বাবা-মাতো আছেনই।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নাজিফা। বলল, ‘রুদ্র ভাই নিশ্চয়ই রেগে আছে ওনার ওপর?’
‘ মারাত্মক। সামনে পেলে একটা মা/র অন্তত খাবেই।’

‘ আসলে নীরব ভাইকেও পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায়না। আমাদের সমাজটাই এমনভাবে তৈরী যে না চাইতেও ছোটবেলা থেকে আমাদের মাইন্ড সেটআপ এরকম হয়ে গেছে। মুখে আমরা যতবড় বুলিই ছাড়িনা কেন, সমাজে বাস করে এমন অবস্থায় নিজের পয়েন্টে স্টিক করে থাকাটা সহজ কথা নয়। বুকের পাটা লাগে। আমার মনে হয়েছিল নীরব ভাইয়ের সেটা আছে।’

উচ্ছ্বাস চুপ থাকল। নাজিফা বলল, ‘কী অদ্ভুত না? লড়াই তোমাদের দুটো দলের পুরুষদের মধ্যে ছিল। কিন্তু এর নিষ্ঠুর পরিণাম ভোগ করতে হলো ঐ নিষ্পাপ মেয়েটাকে। এটাতো শুধু আজ নয় ইতিহাস ঘেটে দেখো, তোমাদের পুরুষদের দ্বন্দ্বে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয় নারীরা।’
উচ্ছ্বাস দীর্ঘশ্বাস চাপল। কথা সত্যি। আদিযুগ থেকে এটাইতো হয়ে আসছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হতাশ কন্ঠে বলল, ‘আমি ভাবছি আমার বোনটার কথা। দিনকে দিন ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নীরবকে ভীষণ দরকার ছিল।’
নাজিফা কী বলবে ভেবে পেলোনা। সত্যিই নীরবকে খুব দরকার ছিল এখন। একমাত্র ঐ পারতো কুহুকে স্বাভাবিক করতে।

কুহুর জন্যে খাবার নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে জ্যোতি। ঘন্টাখানেক আগে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে এসেছে। তাই আর ডাকেনি। রাতে ঠিককরে ঘুমোতে পারেনা মেয়েটা। দুঃস্বপ্ন দেখে লাফিয়ে ওঠে। ঘামে ভিজে যায় গোটা শরীর। অতঃপর বালিশে মুখ গুজে কাঁদে নিঃশব্দ কান্না। হয়তো সে রাতের সেই ভয়ানক ঘটনা স্বপ্নেও তাড়া করে বেড়ায় মেয়েটাকে। প্রতিরাতে কুহুর নীরব আর্তনাদ শুনতে শুনতে মন তিক্ত হয়ে গেছে জ্যোতির।

সারা বাড়িতে কাজের লোক, প্রহরী ছাড়া এখন জ্যোতি আর কুহুই আছে। কিছুক্ষণ আগেই কোনরকমে খেয়ে বেরিয়ে গেছে প্রিয়তা। ভার্সিটিতে কিছু কাজ আছে তাই। মেয়েটা গর্ভবতী অথচ নিজের যত্ন নিচ্ছেনা একদমই। ঐ দুর্ঘটনার পর প্রিয়তার আরেক রূপ দেখেছে জ্যোতি। ঐ মেয়েটা না থাকলে সবকিছু সামলানো সহজ হতোনা। কী চমৎকার হাতে সামলে রেখেছে গোটা আমের পরিবারকে। নিজে ভেঙ্গে না পরে সবাইকে সামলে উঠতে সাহায্য করেছে। করে চলেছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিজেও যে ভেঙ্গে পড়েছে সেটাও বুঝতে পারে জ্যোতি। কেমন প্রচ্ছন্ন ছটফটানী লক্ষ্য করা যায় প্রিয়তার মধ্যে। কিন্তু সবার কথা ভেবে নিজেকে শক্ত রাখে মেয়েটা।

রুদ্র, উচ্ছ্বাস আর জাফর বরাবরের মতোই বেরিয়েছে। ইদানিং ভীষণ চিন্তিত, অস্থির তারা। কিছু একটা নিয়ে তাদের ছোটাছুটি লেগেই আছে নিরন্তর। বিশেষ করে রুদ্র আর উচ্ছ্বাস। কাল রাতেতো বাড়িতেই ফেরেনি দুজনের কেউই। টগবগে দুই যুবকের এমন চেহারা কোনদিন দেখেনি জ্যোতি।

রাশেদ ইদানিং খুব কম বের হন। হঠাৎই আজ বেরিয়েছেন। বের হওয়ার আগে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল তাকে। ক’দিনেই সকলের চেনা সেই রাশেদ আমের যেন বদলে গেছেন। সেই দৃঢ়, বজ্রকন্ঠি, তেজস্বী রাশেদকে যেন সত্যিই বার্ধক্য ঘিরে ধরেছে। দরকার ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলেন না। নিজের সেই ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে, চোখ বন্ধ করে একের পর এক সিগারেট টেনে যান। কোন এক গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকেন সারাক্ষণ। একটা দু/র্ঘটনা পুরো আমের পরিবারে বিষাদের সাগরে ফেলে দিয়েছে। ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে ওরা সবাই।

তবে আজ বের হওয়ার সময় রাশেদের চোখেমুখে অদ্ভুত কিছু দেখেছে সবাই। সেই দৃঢ়তা, সেই তেজ। নতুন যুক্ত হয়েছে দুচোখের শীতলতা। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে খাবার সাজানো হয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্রেটা নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো জ্যোতি। তখনই একসঙ্গে ঘরে প্রবেশ করল উচ্ছ্বাস-নাজিফা। ওদের দেখে মেকি হাসল জ্যোতি। জিজ্ঞেস করল, ‘ভালো আছো নাজিফা?’

নাজিফাও একই হাসি দিয়ে বলর, ‘জ্বী আপু। তুমি?’
‘এইতো আছি।’
‘কুহু কোথায়?’
জ্যোতি একবার ওপরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঘন্টাখানেক আগে ঘুমে দেখে এসছি। দেখি উঠেছে কি-না। খাওয়াতে হবে কিছু।’
নাজিফা বলল, ‘চলো, আমিও যাই।’

ঠিক তখনই প্রায় হন্তদন্ত হয়ে হাজির হলো নীরব। জ্যোতি, উচ্ছ্বাস, নাজিফা হতবাক হয়ে দেখলো ওকে। উস্কোখুস্কো চুল, অযত্নে গজিয়ে ওঠা দাড়িগোফ। বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে ওকে। কিছুক্ষণ কারো মুখ থেকে কথা বের হল না। সবার আগে সামলে নিল জ্যোতিই। কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘তুমি?’
‘কুহু কোথায়?’ নীরবের কন্ঠে একরাজ্যের অসহায়ত্ত্ব।
উচ্ছ্বাস এগিয়ে গিয়ে চোখমুখ শক্ত করে বলল, ‘সেটা জানার কী খুব বেশি প্রয়োজনীয়তা আছে তোমার?’
‘আছে। আমি কথা বলব ওর সাথে।’

জ্যোতি বলল, ‘যদি কোনরকম সান্ত্বনা দিতে এসে থাকো তাহলে চলে যাও। এখন কেন এসেছো? পাগলের মতো তোমার সঙ্গে যোগ করার চেষ্টা করছিলাম সবাই। এতোদিন যখন আসতে পারোনি, আজও দরকার নেই তোমাকে। তোমাকে দেখলে আরও ভেঙ্গে পড়বে মেয়েটা। আমরা আছি ওকে সামলানোর জন্যে।’
উচ্ছ্বাসও বলল, ‘আর সবতো চুকিয়ে চলে গেছো। ছেড়ে যখন দিয়েছো তো এখন কী দেখতে এসেছো?’
নীরব এবার খানিকটা জোরে বলল, ‘কিচ্ছু চোকেনি। ওকে ছাড়ার কথা আমি ভাবতেও পারিনা। প্লিজ আমার কথাগুলো আগে শোন, উচ্ছ্বাস ভাই। প্লিজ। আই বেগ ইউ।’

বলতে বলতে প্রায় কেঁদে ফেলল নীরব। নীরবের কথায় থমকে গেল ওরা সবাই। এতক্ষণ রাগের মাথায় যা-তা শুনিয়ে দিলেও এবার নীরবকে ভালোভাবে লক্ষ্য করল ওরা। ছেলেটা সত্যিই ঠিক নেই। ওকে ধরে সোফায় বসালো উচ্ছ্বাস। চোখে ইশারা করতেই এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো জ্যোতি। সেটা নিয়ে নীরবের দিকে এগিয়ে দিল উচ্ছ্বাস। একঢোকে পুরো গ্লাস শেষ করল নীরব। জোরে জোরে শ্বাস ফেলল। উচ্ছ্বাস ওকে সময় দিল সামলে নিতে। যখন দেখল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে তখন বলল, ‘এবার বলো।’

লম্বা শ্বাস ফেলে ঘরে উপস্থিত বাকি তিনজনকে একবার দেখে নিল নীরব। তারপর বলতে শুরু করল। নিজেও ফিরে গেল কয়েকঘন্টা পেছনে-
নিজের বিছানায় দু হাতে মুখ ঢেকে বসে আছে নীরব। গতরাত থেকে এভাবেই বসে আছে ও। দ্বিধা, দোটানায় ছটফট করে পাড় করেছে সম্পূর্ণ নির্ঘুম এক রাত। এক রাত তো নয়! কুহুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পর থেকে একটা রাতও ঠিককরে চোখের পাতা এক করতে পারেনি ও। শরীর টিকিয়ে রাখতে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই। প্রথমত কুহুর চিন্তা, তারওপর নিজের বাবা-মায়ের দেওয়া বাড়তি চাপে পিষ্ট ছেলেটা।

শেষবার ওর বাবা-মা যখন ওর সঙ্গে আমের ভিলায় গিয়েছিল, ও ভেবেছিল কুহুর সঙ্গে ওর বিয়েটা পেছানো নিয়ে কিংবা বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু ওনারা যে বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়ে এসেছে সে বিষয়টা জেনেছে সেদিন রাতে। তাদের এহেন মতবদলে দিশেহারা বোধ করেছিল নীরব। ওর সঙ্গে কোনরকম কথাবার্তা না বলে, এইরকম একটা পরিস্থিতিতে যে তারা এমন কিছু করে আসবেন সেটা কল্পনার অতীত ছিলো।

কুহু কথা বলতে না পারেনা। সেকারণে এমনিতেই ওদের বিয়েটা পুরোপুরি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি নীরবের মা আতিফা। নীরবের জেদ, আর নাঈমুর বোঝানোতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু নতুন ঘটা এই দুর্ঘটনাতে নীরবের বাবাও সম্পূর্ণ বেঁকে বসেছেন। ছেলে তাদের সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণ। রূপ, গুন, উজ্জ্বল ভবিষ্যত। কোনকিছুর কমতি নেই। তার অমন সোনার টুকরো ছেলের জীবনে বোবা একটা মেয়েকে বহু কষ্টে মেনে নিলেও কোন ধ/র্ষি/তা মেয়েকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ছেলে তাদের ফেলনা নাকি?

কুহুকে ভালোবাসে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বাবা-মাকেও ভীষণ ভালোবাসে নীরব। তাই সঙ্গেসঙ্গে রেগে যায়নি। মাথা ঠান্ডা রেখেছে। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে তাদের মানানোর। যদিও আমের ভিলার অনেকেই ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু লজ্জায়, সঙ্কোচে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি নীরব। কোনমুখে করবে? নিজেকে কাপুরুষ মনে হয়েছে ওর। তাই এদিকের ব্যপারটা পুরোপুরি মিটিয়ে তবেই ওদের মুখোমুখি হবে বলে ঠিক করেছিল। কিন্তু বিধি বাম। কোনভাবেই বাবা-মাকে মানাতে পারলনা।

প্রথমে শান্তভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। সবরকম যুক্তি সামনে রেখেছে। কিন্তু আমলে নেননি তারা। যেন ছোট কোন বাচ্চা অদ্ভুত কিছু বায়না করছে। ভালোভাবে বোঝানোতে যখন কোনভাবেই লাভ হয়নি তখন ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে নীরব। এ বিষয়ে রোজই ছোটখাটো ঝামেলা হচ্ছে বাড়িতে। কিন্তু গতরাতে ঝামেলার সব সীমা পেরিয়ে গেল। ভয়ানক তর্ক হলো বাবা-মা আর সন্তানের মধ্যে। নীরব নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে বলল, ‘বিয়ে আমি কুহুকেই করব। সেটাও খুব তাড়াতাড়ি। শুধু ওর স্বাভাবিক হয়ে ওঠার অপেক্ষা।’

কিন্তু নাঈমুর আর আতিফাও নাছোড়বান্দা। কোনভাবেই ছেলেকে বোঝাতে না পেরে শেষে বললেন, ‘যদি তুমি ঐ মেয়েকেই বিয়ে করো তাহলে আমাদের সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ রেখোনা। ঐ মেয়েকে নিয়ে তুমি আমার বাড়িতে উঠতে পারবেনা। ত্যাজ্যপুত্র করব তোমাকে আমরা।’

নীরব হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিজের বাবা-মায়ের দিকে। ওনাদের ও যথেষ্ট আধুনিক চিন্তাধারার মানুষ বলেই জানতো। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার জন্যে কোন মেয়েকে এতোটা তুচ্ছ করে দেখছেন! কোন যুগে পড়ে আছে এরা? সে কথার পর আর একটা কথাও না বলে চুপচাপ নিজের ঘরে এসে দরজাটা বন্ধ করে দেয় নীরব। সারারাত পাগলের মতো ছটফট করে। বাবা-মাকে ছেড়ে থাকার চিন্তা কোন সুপুত্র করতে পারেনা।

অপরদিকে ভালোবাসার মানুষটার হাত মাঝপথে ছেড়ে দেওয়াটাও কোন আদর্শ প্রেমিকের বৈশিষ্ট্য নয়। নীরব ভেবেছে। সারারাত ভেবেছে। একরাতে জীবনের ভয়ংকরতম প্রলয় ঘটে গেছে মনের মধ্যে। গোটা রাত পাথরের মতো একই জায়গায় বসে কাটিয়ে দিয়েছে। চিন্তায় এতোটাই বিভোর ছিল যে কখন রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেছে নিজেও বুঝে উঠতে পারেনি।

যখন টের পেল রাত কেটে গেছে, তখন ওর মনের অন্ধকারও দূর হয়ে গেছে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে ও। ‍যে সিদ্ধান্ত ওর অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। লম্বা শ্বাস ফেলে দু-হাতের তালু দিয়ে নিজের মুখ ঘষে নিল নীরব। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝল আর দেরী করা ঠিক হবেনা।

বসার ঘরে পাশাপাশি বসে চা খাচ্ছিলেন নাইমুর এবং তার স্ত্রী। নীরব এবং কুহুর ব্যপারটা নিয়েই আলোচনা করছিলেন। হঠাৎ নীরবকে বড় একটা লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখে অবাক হলেন। নীরব ওনাদের সামনে এসে দাঁড়াতেই উঠে দাঁড়ালেন দুজন। অবাক চোখে একবার নীরবকে একবার লাগেজটা দেখলেন। নাঈমুর বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছিস তুই?’
নীরব কঠোরভাবে বলল, ‘যেখানে আমার যাওয়া উচিত। সেখানেই।’

আতিফা অবাক কন্ঠে বললেন, ‘মানে?’
‘মানেটাতো আমার চেয়ে ভালো তোমরা জানো মা। কাল রাতে তোমরা আমাকে দুটো অপশন দিয়েছিলে। একটা অপশনতো বেছে নিতেই হতো।’
হতবাক চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন ওনারা। নীরব যে একরাতের মধ্যেই নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে সেটা ওনারা কল্পনাও করতে পারেন নি। আতিফা কন্ঠে অবিশ্বাস ঢেলে বললেন, ‘তারমানে তুই আমাদের ফেলে ঐ মেয়েটার কাছে চলে যাচ্ছিস?’

নীরব বলল, ‘ওর একটা নাম আছে। কুহু। হ্যাঁ, চলে যাচ্ছি। কারণ এই মুহূর্ত ওর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাকে। এতোটা স্বার্থপর হতে পারবনা আমি।’
আতিফা ব্যথিত কন্ঠে বললেন, ‘আর নিজের বাবা-মাকে ত্যাগ করতে পারবি। তাইতো?’
নীরব চোখমুখ শক্ত করে বলল, ‘ত্যাগ করছিনা। তোমরা নিজেরাই আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো। আমি তোমাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করছি মাত্র।’

নাঈমুর এতক্ষণ চুপ ছিলেন। অতঃপর গম্ভীর গলায় বলল, ‘যা করছো ভেবে করছো?’
‘সারারাত ভেবেছি বাবা। বরং অনেক দেরী করে ফেলেছি ভাবতে। আরও অনেক আগেই ভাবা উচিত ছিল আমার। তোমাদের মানাতে গিয়ে যথেষ্ট কষ্ট দিয়ে ফেলেছি মেয়েটাকে। আর পারব না।’
আতিফা কেঁদে ফেললেন। ছেলেকে ধরে রাখতে এবার ইমোশনাল ব্লাকমেইলের রাস্তা ধরলেন উনি। কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললেন, ‘সাতাশ বছর যাবত যে ভালোবাসা দিয়ে, যত্ন দিয়ে তোকে মানুষ করেছি। তোর সব চাহিদা পূরণ করেছি। সেটার কোন মূল্য নেই? ঐ মেয়েটাই সব? আমাদের ছেড়ে যেতেও আজ তোর বুক কাঁপছেনা?’

নীরব অসহায় দৃষ্টিতে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দাম চাইছো?’
এবার নাইমূর এগিয়ে এলেন। নীরবের কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘দেখ বাবা। আমরা তোর খারাপ চাই না। তুই যা করছিস আবেগের বশে করছিস। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমি তোর বাবা। তাই সবকিছু তোকে খোলাখুলি বলতে পারছিনা। কিন্তু কদিন পর তোর নিজেরই আফসোস হবে।’
আতিফা তাল মিলিয়ে বললেন, ‘তোর জন্যে আরও অনেক অনেক বেশি ভালো মেয়ে আনবো আমরা। একদম তোর যোগ্য। ঐ মেয়েটার কথা ভুলে যা বাবা।’

নীরব যান্ত্রিক স্বরে বলল, ‘কিন্তু আমারতো পারফেক্ট কাউকে চাইনাহ। আমি শুধু কুহুকেই চাই।’
চুপ করে গেলেন আতিফা। নীরব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘সত্যি বলতে বুক কাঁপছে তোমাদের ছেড়ে যেতে। কিন্তু আমি নিরুপায়। ভালোবাসা, যত্নের সাথে আরও একটা জিনিস দিয়েছো তোমরা আমাকে। শিক্ষা। একটা মেয়েকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে, তাকে ভালোবাসার দাবী করার পর তারই সবচেয়ে খারাপ সময়ে তার হাত ছেড়ে দেওয়ার,

স্বার্থপর কাপুরুষের মতো পালিয়ে আসার শিক্ষা তোমরা আমাকে দেওনি। নিজেদের দেওয়া সেই শিক্ষা তোমরা ভুলে গেছো ঠিকই। কিন্তু আমি ভুলিনি। তাতে যদি আমাকে তোমাদের কাছ থেকে সাময়িকভাবে দূরে থাকতে হয়, থাকবো। তোমাদের দেওয়া শিক্ষার মান রাখতে এইটুকু কষ্ট সহ্য করে নেওয়াই যায়। আর আমি জানি তোমরা খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। নিজে নিয়ে আসবে আমাদের। নিজের বাবা-মার প্রতি এইটুকু আস্থা আছে আমার।’

নাইমূর আর আতিফা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। এই কথার জবাবে কী বলা যায় জানা নেই ওনাদের। নীরব আর অপেক্ষা করল না। আরও একবার নিজের বাবা-মার দিকে চোখ বুলালো। মৃদু গলায় বলল, ‘আসছি।’
বলেই ব্যস্ত পায়ে বেরিয়ে গেল নীরব। অনুতাপে জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে ভেতরটা। কাজটা ওর অনেক আগে করা উচিত ছিল। না-জানি কী অবস্থায় আছে মেয়েটা। যদি নিজের সঙ্গে খারাপ কিছু করে বসে তো! কুহুর কোন ক্ষতি হলে নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবেনা নীরব। এতোদিন কেন মাথায় আসেনি এসব?’

সবটা শুনে ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বাকি তিনজনেরই। উচ্ছ্বাস নরম গলায় বলল, ‘তোমার একবার অন্তত যোগাযোগ করা উচিত ছিল আমাদের সাথে।’
নীরব হতাশ গলায় বলল, ‘সেটাই ভুল করেছি। আসলে সাহস পাচ্ছিলাম না। লজ্জা করছিল ভীষণ।’
জ্যোতি বলল, ‘কিন্তু যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো ভেবে নিয়েছো তো? পরে মত ঘুরে যাবেনাতো?’

নীরব মলিন হেসে বলল, ‘সেটা বুঝতেই তো এতোটা সময় নিলাম আপু। নিশ্চিত হয়েই এসেছি। আর আমার বিশ্বাস বাবা-মাও নিজেদের জায়গায় বেশিদিন স্টিক করে থাকবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
‘যাও তবে। নিজের ঘরে আছে।’
নীরব আর অপেক্ষা করল না। প্রায় দৌড়ে চলে গেল কুহুর ঘরে উদ্দেশ্যে। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল জ্যোতি, উচ্ছ্বাস আর নাজিফা। এতো বিষাদের মাঝেও স্বস্তির শীতল স্রোত বয়ে গেল ওদের মধ্যে ম। এবার বোধ হয় সব ঠিক হবে। কিন্তু কেউ জানল না ভাগ্যবিধাতা কী নিষ্ঠুর বিধান লিখেছেন ওদের ভাগ্যে। আর কোনদিন কিছু ঠিক হবার নয়।

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৫৮

[ আর জীবনেও বলব না যে নিয়মিত দেব। কারণ আমি এই মহান বাক্যখানা লিখলেই মিনিমাম বিশদিনের জন্যে লেখা বন্ধ হয়ে যায় আমার। ??
এই পর্বটা রীতি চারবার লিখেছি আর ডিলিট করেছি। কিছুতেই মনমতো হচ্ছিলো না। কখনও মনে হচ্ছিলো বাক্য ঠিক নেই। কখন মনে হচ্ছিল কিছু একটা মিসিং। জাস্ট অসহ্য। বেচারা ফোন মহাশয় ভয়ানক এক আ/ছাড়ও খেয়ে ফেলেছে তার বদৌলতে। ‍যাই হোক মাঝরাতে, হ্যাপি রিডিং।]

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৬০