অবিনাশী গল্পের লিংক || রেজওয়ানা আসিফা

অবিনাশী পর্ব ১
রেজওয়ানা আসিফা

আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসে, কিন্তু কখনো সে আমার কাছে আসেনি। আমাকে ছুয়েও দেখেনি। কারণ সে মানসিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু আমার স্বামীরা অনেক বড়লোক। আমার শাশুড়ি ডক্টর আর শশুর অনেক বড়ো অফিসার। আমাদের দেখানো হয়েছিলো ছোট ছেলেকে কিন্তু বিয়ে দিয়েছে বড়ো ছেলেকে।

আমার স্বামীর আরো এক ভাই আছে জমজ। কিন্তু তবে আমার স্বামী একটু বড়ো। কিন্তু আমার দেবর সুস্থ। আমার স্বামী ঠিক মতো চলতে পারে না আর অনেক অগোছালো। তো বিয়ের দিন তাকে এমন ঔষধ দেওয়া হয় যাতে কোনো রকম ঠিক ভাবে থেকে বিয়েটা করতে পারে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

বিয়ের দিন আমার দেবর কে তারা বিয়েতে নেয় নি। আর অনেক তাড়াহুড়ো করে বিয়ে সম্পূর্ণ করে তারা। এ নিয়ে আমার বাবা কিছু বলতে গেলেও আমার সৎ মায়ের জন্য পারেনি। মা বলেছিলো, বড়োলোক মানুষ এরা বেশি প্রশ্ন করার দরকার নেই।

আমাদের নিয়ম বিয়ের দিন মেয়ের সাথে মেয়ের কিছু আত্মীয়রা যাবে। যখন আমার ছোট বোন আর চাচাতো বোন রেডী হলো যাওয়ার জন্য তারা সরাসরি না করে দেয়। এবার আমার বাবা রেগে গিয়ে বললো,
-আপনারা বেশ অদ্ভুত তো! আমাদের নিয়ম আছে এটা আপনারা কেনো বুঝতে চাইছেন না।
আমার শাশুড়ি বললো,

-আসলে আমাদের নিয়ম নেই। আমাদের নিয়ম হচ্ছে মেয়ের বাড়ির সবাই একসাথে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে আসবে।
আমার বাবা আর কিছু বলার আগেই আমার সৎ মা বলে উঠলো,
-তাহলে কারো যাওয়ার দরকার নেই। আমরা বরং একসাথে ওকে নিয়ে আসবো।

বাবা কিছু বলার চেষ্টা করলে মা তার হাতে টিপ দিয়ে তাকে থামিয়ে দেয়। এইভাবেই আমি প্রথম দিন ওই বাড়ি যাই। তারা তিনটা প্রাইভেট কার নিয়ে গিয়েছিলো একটায় আমি আমার স্বামী আমার শশুর শাশুড়ি ছিলাম।আর একটা অদ্ভুত বিষয় হলো জামাই বউর পাশে কাউকে আমি কখনো অন্য কাউকে বসতে দেখিনি।

কিন্তু আমার স্বামীকে একজন লোক তার বা পাশে বসে ধরে রেখেছে।বিয়ের মধ্যে একটা কথাও বলেনি আমার স্বামী শুধু কবুল বাদে। আমার বোনেরা অনেক ক্ষন তার সাথে মজা করার চেষ্টা করে কিন্তু সে কোনো রকম রিয়েক্ট করেনা। তো অন্য দুই গাড়িতে তাদের কিছু আত্মীয়রা এসেছে। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর দেখলাম ওই দুই টা গাড়ি সম্পূর্ণ ফাকা করে ওরা সবাই একসাথে কোথাও চলে গেলো। আমি চেয়ে চেয়ে সব দেখলাম।

গাড়ি গিয়ে থামলো একটা বড়ো বাড়ির সামনে। বাড়িটা তিন তলা। বেশ বড়ো। ছোট থেকে টিনের ঘরে বড়ো হয়েছি। এতো বড়ো বাড়িতে থাকার ভাগ্য কখনো হয়নি। বাড়িতে তালা দেওয়া। আমার শাশুড়ি তার ব্যাগ থেকে চাবি বের করে বাড়ি খুলে আমাকে নিয়ে ভেতরে গেলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর একটা বাজে গন্ধ। আমাকে একপাশে দার করিয়ে রেখে আমার শাশুড়ি আলো জালিয়ে দিলো। আলো জালাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম, আমার স্বামীর মতো দেখতে হুবহু একটা ছেলে সোফায় পরে আছে। পাশে অনেক ধরনের খাবার যেমন চিপস, চকলেট চানাচুর। আর ম*দ ও। আমি হা করে দেখছি।

হঠাৎ আমার স্বামী আমার গায়ের উপর পরে গেলো আমি তাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে গেলাম। আমার শাশুড়ি আমাকে না উঠিয়ে আমার স্বামী কে তুলে আমাকে চিৎকার করে বললো,
-দেখতে পাও না নাকি? যদি আমার ছেলেটার কিছু হতো! উঠে দারাও! শরীরে শক্তি নেই নাকি?
আমার শাশুড়ির কোনো কথাই আমার কানে গেলো না আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম আমার স্বামীকে। কেমন মাতালের মতো দুলছিলো।

আমার শশুর পাশে দারানো লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-মেডামের থেকে বড়ো সাহেবকে নিয়ে তার ঘরে রেখে আসো। ঔষধের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ভাগ্যিস তারাতাড়ি চলে এসেছি।
আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। কিসের ঔষধ কিসের কাজ।
লোকটা আমার স্বামী কে ঘরে নিয়ে গেলো। আমার শাশুড়ি আমাকে তুলতে তুলতে বললো,

-আইএম সরি! আসলে আমার ছেলের কিছু হলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।
আমি উঠে দারালাম। আমার শাশুড়ি সামনে ম*দ খেয়ে পড়ে থাকা ছেলেটার চোখে পানি ছিটিয়ে তুললো, ছেলেটা ঘোলা ঘোলা চোখে আমার দিকে তাকালো আমার শাশুড়ি তাকে টেনে তুললো।ছেলেটা চোখ ডোলতে ডোলতে বললো,

-চলে এসেছো, আসলে আমার একদম জ্ঞান ছিলো না যে তোমরা চলে আসবে। কখন ঘুমিয়ে গেছি।
আমার শাশুড়ি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-ওয়াও মা! যা দেখে এসেছিলাম তার চেয়ে এখন বেশি সুন্দর লাগছে।
আমার কাছে এসে ঘুরে ঘুরে দেখছে আমাকে। আমার শাশুড়ি কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-কি এনেছো তুমি। জাস্ট ওয়াও। সেই!
আমার শাশুড়ি মুচকি হেসে বললো,

-হ্যা তোমার ভাইয়ের বউ। সুন্দর হবে না!। আর তুমি তো ওই সময় রাগ করে ভালো করে দেখো নি। এখন যাও ফ্রেশ হও আর তিশাকে ফোন করে বাড়ি আসতে বলো।
আমি তানিয়া, মা বাবার এক মেয়ে, মা মারা যায় যখন আমার ১০ বছর বয়স। তার ক্যান্সার হয়েছিলো। বাবা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। পরে আবার বিয়ে করে বাবা। আমার সৎ আরো দুই ভাই বোন আছে। একজন ক্লাস ৬আর আরেকজন ৪ এ পড়ে।

আমি এসএসসির পর আর লেখাপড়া করতে পারিনি সৎ মায়ের জন্য। গরিব ঘরের মেয়ে আমি বাবার তেমন টাকা নেই। দেখতে বেশ সুন্দর আমি। এলাকার সবাই খুব পছন্দ করতো। কিন্তু একদিন ঘটক একটা প্রস্তাব নিয়ে আসে। এবং সব খুলে বলে।যখন ঘটক বলে ওদের অনেক টাকা আছে আমার সৎ মা লোভ সামলাতে পারে না। আমার বাবার প্রথমে সন্দেহ হয় এতো বড়োলোক মানুষ কেমন না কেমন হবে।

আর ওরা অনেক দূরের আমাদের বাড়ি থেকে। আমাদের সাথে মিশবে কিনা কিন্তু আমার সৎ মা বাবাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেলে। ওরা তিন ভাই বোন। দুই ভাই আর একবোন।আমার স্বামীর নাম ইশান আর দেবরের নাম আয়ান। আর ননদ তিশা।
রাতে যখন আমাকে বাসর ঘরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে তখন আমার শাশুড়ি আমার চুল বাধতে বাধতে বললো,

-আমার ছেলে কিন্তু একটু রাগী ওকে কিছু নিয়ে জোর করবে না। ও যেভাবে চায় সেইভাবেই চলবে। কেমন।
-আমি হ্যা সুচক মাথা নারলাম।
আমাকে একটা ফুলে সাজানো ঘরে দিয়ে আমার শাশুড়ি বললো,
-ও এখন গেম খেলছে। শেষ হলে আসবে তুমি এখানে থাকবে। আর এটাই তোমার ঘর। ঠিক আছে।
আমার সব কিছু অবাক লাগছে। বার বার আল্লাহ্কে ডাকছি। কোথায় এসে পরলাম আমি।
আমার শাশুড়ি চলে যাওয়ার ১৫ মিনিট পর আমার দেবর আসলো। এসে পাশে রাখা সোফায় বসে বললো,

-ঈশানের জন্য বসে আছো, ইসসসস ও তোমাকে খুশি করতে পারবে না। ওই বাড়ি তোমাকে দেখতে গিয়ে যদি তোমাকে ভালো ভাবে দেখতাম তাহলে তোমাকে কখনো হাত ছাড়া করতাম না।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,

-আপনি দেখতে গিয়েছিলেন মানে? আমি তো শুনেছিলাম শুধু ছেলে আর ছেলের মা আর বাবা গিয়েছিলো।
-আরে হ্যা, ঈশান কী মেয়ে দেখতে যাওয়ার মতো অবস্থায় থাকে নাকি। এইজন্যই তো মা আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন আফসোস হচ্ছে গো।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। কী বলছে এইসব।
আয়ান সোফা থেকে উঠে বিছানায় এসে আমার পাশে বসলো। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ সে খপ করে আমার হাত ধরে বলে,

– প্লিজ তুমি আমার হয়ে যাও। ওই পা*গল ঈশান তোমাকে খুশি করতে পারবে না।
হঠাৎ এমন কিছু হবে আমি ভাবতেও পারিনাই। আমি ভয়ে চিৎকার দিলাম। আমার শাশুড়ি দৌড়ে আসলো। আয়ন কে দেখে সে হেসে বললো,

-আয়ান! আজকের জন্য ছেড়ে দাও। মেয়েটা ভয় পাবে।
– তুমি আমাকে ঠকিয়েছো মা। ওকে আমার পাবার কথা ছিলো!
-তোমার কাছে কিন্তু চান্স ছিলো। তুমি মিস করেছো।
তাদের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো পন্য। আমাকে নিয়ে ভাগাভাগি হচ্ছে। আমার চোখ থেকে পানি পরছে। আমার শাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

-তোমার দেবর হয়। পরপুরুষ না। এভাবে চিৎকার করার কি আছে। আর আয়ান তুমি এখন যাও। ঈশান ঘরে আসবে।
আমার শাশুড়ির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। দেবর নাকি পরপুরুষ না!

অবিনাশী পর্ব ২