অবিনাশী পর্ব ২

অবিনাশী পর্ব ২
রেজওয়ানা আসিফা

আমার চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। কোথায় এসে পরলাম আমি।
আমার শাশুড়ি আয়ানকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
কিছুক্ষন পর আমার স্বামী ঈশানকে সেই লোকটা দিয়ে গেলো ঘরে। সে দুলছে। দুলতে দুলতে বিছানায় ধপাস করে পরে গেছে। পরেছে তো পরেছেই।

উঠে সবার মতো শক্তি নেই বোধহয় তার কাছে। আমি নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে চিৎকার করে কান্না করছি। কেনো হলো আমার সাথে এসব। সারারাত এক ভাবে বসে কাটলো আমার। কান্না করতে করতে চোখ ফুলে গেছে। আমার শাশুড়ি সকাল ৬ টা বাজে ঘর খোলা পেয়ে হন হন করে ঢুকলো। ঢুকেই আমাকে কথা শোনাতে লাগলো,
-মাথা ঠিক আছে তোমার? দরজা খুলে রেখেছিলে সারারাত? এইটুকু শিক্ষা দেয়নি যে বাসর রাতে কী কীভাবে করতে হয়?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

আমি হেসে বললাম বাসর রাত! এটাকে বাসর রাত বলে? বাসর রাতে মানুষের কতো সপ্ন থাকে। সব সপ্ন শেষ হয়ে গেছে আমার।
আমার শাশুড়ি মুখ ঝামটে বললো,

-তুমি এভাবে কান্না করছো মনে হচ্ছে তোমাকে কেউ মেরেছে।
– যেই যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে। মারলেও এতো যন্ত্রণা হতো না।
-এই মেয়ে ! একদম কথা কম বলবে। উঠো উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। সব আত্মীয়রা আসবে। আজকে পার্টি আছে।
আমি দেখেছি আমাদের এলাকায় বিয়ের তিন দিন পর অনুষ্ঠান করে মেয়েকে বাবার বাড়ি পাঠানো হয়।

কিন্তু ওনারা আজকে অনেক বড়ো করে অনুষ্ঠান কেনো করছে। আমি বাবার মুখে শুনেছি তারা নাকি ঠিক তিনদিন পরেই আমাকে নিতে আসবে। তাহলে আজকে কিসের এতো অনুষ্ঠান?কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। দামি শাড়ি পরিয়ে কেজি কেজি মেকআপ করিয়ে মাটির মুর্তির মতো বসিয়ে রেখেছে।
সব আত্মীয়রা এসে দেখে প্রশংসা করছে।
কেউ কেউ বলছে,

_ওমা এই মেয়ে কোথা থেকে আনলে গো? মনে হচ্ছে পরী। বিয়ের সময় তো আমাদের দাওয়াত ও দিলে না। আমারও দেখে আসতাম ওখান থেকে আমাদের ছেলের জন্যও পছন্দ করতাম।
আমার শাশুড়ি গর্ভ করে বললো,

-চৌধুরী বাড়িতে যা আসে ওই গুলো সব একটা করে থাকে গো আর ওই একটা এই বাড়িতেই আসে। আর তোমাদের দাওয়াত দিলাম না কোথায়, এইজে আজকে সবাই এসেছো।
-তারপরও যখন বলেছো ঈশানের জন্য মেয়ে দেখেছো। অনেক ইচ্ছে ছিলো দেখার কোনো বাবা এমন ছেলের জন্য মেয়ে দিচ্ছে। তা তোমার বউয়ের পরিবার সব যানে তো?

-আহ্। এইসব কি আবোল তাবোল বলছো তোমরা মেয়েটার সামনে? জানবে না কেনো? ঈশান দেখতে কোথাও খারাপ নাকি যে মেয়ে দেবে না। আমার ছেলেটা শুধু একটু অসুস্থ।
-একটু অসুস্থ !………
মহিলাটা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমার শাশুড়ি কিছু গহনার বক্স বের করে মহিলাটার হাতে দিতে দিতে বললো,

-এইসব অকাজের কথা রাখো আর এই গুলো দেখো। আমার বড়ো বউ এর জন্য বানানো হয়েছেব জতো যাই হোক এই বাড়ির বউ বলে কথা।
– বাহ্। বেশ সুন্দর তো? তা তোমার বউ এমন মুখ কালো করে রেখেছে কেনো? জুয়েলারি পছন্দ হয় নি নাকি?
-কি যে বলো, ও এমন মেয়েনা যে আমার পছন্দের উপর কথা বলবে। আসলে অনেক দূরে একা কখনো যায়নি ও বাবা মা ছাড়া একা তো এখানে। কাউকে ঠিক করে চেনেনা তাই ফ্রি হতে পারছে না।
-তোমার বেয়াই বাড়ির লোকেরা আসেনি?

– না ওনারা দুই দিন পর আসবে।
-কেনো! তুমি তো বউভাত আজকে করছো তাহলে তারা পরে আসবে কেন? আর তারা পরে আসলে তুমি আজকে আনুষ্ঠান করছো কেন?

-উফফফফ! তোমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম। বললাম তো তারা অনেক দূর থেকে আসবে তাই পরে আসবে। আর আমার একার পক্ষে তো এতো কিছু সামলানো সম্ভব না। এইজন্য আজকে আমাদের আশেপাশের সবাইকে ইনভাই করলাম। ওনারা আসলে আলাদা আপপ্যায়ন করবো।
-হয়েছে হয়েছে। তোমাদের দামি বেয়াইর সাথে আমাদের দেখা করতে দিবে না তাই বলো।
আমার শাশুড়ি হেসে বলো,

-যা ভাবো তোমরা।
আমি বুঝতে পারলাম, কেনো আজকে বউভাত করা হচ্ছে। যাতে করে আমার বাড়ির কেউ এখানের কারো সাথে কথা না বলতে পারে আর তাদের এই ভয়ংকর সত্যি না জানতে পারে।
অনেক ক্ষন পর ঈশানকে আমার পাশের চেয়ারে বসানো হলো। আর সেই লোকটা তার পাশে দারিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আজও ঔষধ দিয়েছে। নাহয় এতো টা সুস্থ লাগতোনা।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। আমার শাশুড়ি আমার খুব কাছে এসে ফিস ফিস করে বলললো,

-মুখ টা এমন করে রেখেছো কেনো তানিয়া? মানুষ ভাবছে কী? আর নিজের বরের দিকে খেয়াল নেই কেনো? কতো কাল আমি দেখে রাখবো? তোমাকে এনেছি কেনো?
আমি কোনো কথা বলছিনা। চুপ করেই আছি। আমার কোনো জবাব না পেয়ে আমার শাশুড়ি ঈশানের হাত টা আমার হাতে রেখে চলে গেলো। ওর হাত টা ধরে রাখতে একদম ইচ্ছে করছেনা আমার। বিরক্ত লাগছে খুব। আমি নিতে পারছিনা ওকে।

হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার পিঠে হাত দিয়েছে তাকিয়ে দেখি আয়ান। আমি থমকে কিছু টা সরে গেয়াল। ও আমার ঘারের খুব কাছে এসে বললো,
-কেমন আছো ভাবি,,,
ওর মুখ থেকে বাজে গন্ধ আসছে। আমার বমি পাচ্ছে।
পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,

-কিরে আয়ান। ভাবির সাথে এতো ভাব হয়ে গেলো নাকি?
আয়ান আমাকে বাজে ভাবে দেখতে দেখতে বললো,
-হ্যা আন্টি। আসলে ভাবি আমার দেখতে তো পরী। তাই ভাব না হয়ে পারলো না।
-দেখিস ! তোর যেই সভাব। আবার ভাবিকেই না ভালো লেগে যায়।
আয়ান বাজেভাবে হেসে বললো,

-ভালো লাগবে না কেনো বলোতো! কার ভাইয়ের বউকে ভালো লাগে। যতো যাইহোক, ভাইয়ের বউ তো আমাদের খুব শ্রদ্ধার পাত্রী।
আমার খুব বিরক্ত লাগছে এখানে। মনে হচ্ছে কোনো ভিন্ন ধর্মের মধ্যে এসে পরেছি। এদের মধ্যে মুসলিম ধর্মের কোন আভাস নেই।

হঠাৎ আমার শাশুড়ি আয়ান সহ বাড়ির সব লোক সদর দরজায় ভির জমালো, সবাইকে ঠেলে একটা মেয়ে ভিতরে আসলো, মেয়েটা আমার সামনে এসে দারালো আমার শাশুড়ি তার পিছে দারিয়ে আছে। তার চোখে অনেক ভয় দেখা জাচ্ছে আর মেয়েটার চোখে রাগ!
মেয়েটা হঠাৎ বলে উঠলো,

-বাহ্, পরীর মতো দেখতে মেয়েটার জীবনটা ছারখার করে দিলে, পারোও মা তুমি !
আমার শাশুড়ি মেয়েটাকে আর একটা কথাও বলতে দিলোনা। হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। জতোটা বুঝলাম এই হচ্ছে তিশা। মানে আমার ননদ। বিয়ের সময় বাবা অনেক বার ওর কথা জিগ্যেস করেছে। আমার শাশুড়ি বলেছে ওর নাকি পরিক্ষা চলছে তাই আসতে পারবে না ও ঢাকায় থাকে। কিন্তু ওর চোখের রাগ দেখে মনে হচ্ছে ও এই বিয়েতে রাজি ছিলো না। তাই ওকে ইচ্ছে করে নেয়নি আমার শাশুড়ি।
অনুষ্ঠান শেষে রাতে সবাই একসাথে বসে আছে। সাথে আমিও। তিশা চেচিয়ে বলছে আমার শশুর কে,

-কতোবার বললাম তোমাদের এমন ছেলেকে বিয়ে দিয়ো না। কেনো করলা এমন? আমি বলেছিলাম, একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করোনা। শুনলে না আমার কথা। আমার সাথে যদি এমন হতো তাহলে কী করতে? লজ্জা করে না তোমাদের? কীভাবে ঠকালে একটা পরিবার আর একটা মেয়েকে।
আমার শশুর ল্যাপটপে কাজ করছে তিশাকে শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো,

-ওরা গরিব ওরা এতো কিছু দেখে না। আমি চাইনা মেয়েটার সামনে তুমি এসব নিয়ে আর কথা বলো।
-তোমরা আসলেই শিক্ষিত? তোমরা মানুষের কাতারে পড়ো? ছিঃ ভাবলেই ঘৃণা হচ্ছে আমার আমি তোমাদের সন্তান।
আমার শাশুড়ি বলে উঠলো,

অবিনাশী পর্ব ১

-বাবার সাথে ভালো ভাবে কথা বলো তিশা। এভাবে কেউ কথা বলে বাবা মার সাথে। আর তুমি বড়ো হয়েছো। তাই আমি তোমাকে সব খুলে কিছু বলতে চাচ্ছি না। তারপরও বলছি, প্রতিটা মানুষের শারীরিক চাহিদা আছে। সেটা হোক সে অসুস্থ আর সুস্থ। এর বেশি তোমাকে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না আমি।

অবিনাশী পর্ব ৩