অবিনাশী পর্ব ৩

অবিনাশী পর্ব ৩
রেজওয়ানা আসিফা

তিশা বাড়ির মানুষ গুলো কে খুব ঘৃণা করে। প্রচণ্ড রকমের খারাপ ভাবে এইজন্য সব সময় দূর দূরে থাকে। তার মতে তার পরিবারের সবাই অসুস্থ। কোনো সুস্থ মানুষ এমন কাজ করতে পারে না। অসুস্থ মানুষের দ্বারাই এমন এমন কাজ সম্ভব।গতো দুই দিন ধরে এই বাড়ি আছি। আমার স্বামীর মুখ থেকে শুধু এইটুকুই শুনেছি,
-আমি এই এতো মোটা সুই দেবো না। বাবা আমি সুই দেবোনা।

তার কন্ঠ স্বর বেশ ভয়ংকর। আমার একটুও ভালো লাগে না। ছোট থেকেই নরম মনের মানুষ আমি। কখনো কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলিনা। কালোকেও সুন্দর বলে সন্মান করি। কারো ক্ষুত কখনো দেখেও দেখিনি। কিন্তু তারপরও এই মানুষটার প্রতি কোনো মায়া হচ্ছে না। এখন আমার একটাই চিন্তা কীভাবে এখান থেকে মুক্ত হবো।
আমার শাশুড়ি সকাল সকাল আমাকে অনেক গুলো জুয়েলারি দিয়ে বললো, তারাতাড়ি রেডী হও। আজকে তোমার বাবা মা রা আসবে। আমি চাইনা তুমি তাদের সামনে দুঃখি থাকো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

কথা গুলো বলে সে চলে জাচ্ছিলো আবার থেমে আমার কাছে এসে বললো,
-দেখো তানিয়া! আমি চাইনা তুমি কিচ্ছু তোমার পরিবার কে শেয়ার করো। যদি শুনেছি কিচ্ছু বলেছো! এর ফল খুব খারাপ বলে খুব ! আর যদি বলেও দাও তাহলেও তোমার বাবা কিচ্ছু করতে পারবেনা কারণ আমার ক্ষমতা সম্পর্কে এতো দিনে তুমি বুঝে গেছো।

আমি চুপ করে শুনছি। আমার শাশুড়ি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-আমার লক্ষি বউমা! আশা করি তুমি সব বুঝতে পেরেছো। তৈরি হয়ে নাও। বসে খাওয়ার দিন আজকেই শেষ।
তার কথা গুলো শুনে এখান থেকে মুক্ত হওয়ার চিন্তা আশা নিমিশেই শেষ হয়ে গেলো আমার।
আমার শাশুড়ি যাওয়ার পরেই তিশা আসলো আমার ঘরে। ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো অনেকক্ষন ধরে আমার কাছে আসার চেষ্টা করছিলো।

-শোনো তানিয়া! তুমি আমার বড়ো তারপরও নাম ধরে ডাকলাম। কিছু মনে করো না। আজকে তোমার পরিবার আসলে আমি সব বলে দিবো আর তুমি তাদের সাথে চলে যাবে। আমার কথার সাথে তাল মিলাবে। মা তোমাকে বলবে কিছু না বলতে। কিন্তু তুমি মায়ের কথা শুনে নিজের জীবন টা নষ্ট করবে না একদম।
কথাটা বলেই তিশা বেড়িয়ে জাচ্ছিলো। আমি ওর হাত ধরলাম। সে পিছনে ঘুরে তাকালো,
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-তুমি আসার আগে মা এই কথা গুলো বলার জন্যই এসেছিলো। সে বাবাকে কিছু জানাতে বারন করেছে। আর আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার বাবা দিন আনে দিন খায়। আমার বিয়ের জন্য অনেক গুলো টাকা ধার করেছে। মেয়ের অনেক বড়ো বাড়িতে বিয়ে হবে। তাদের ভালো ভাবে আদর যত্ন করতে হবে। এখন আবার আমি যদি এইসব কথা বলি তাহলে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পরবে। আমার বাবা ছোট থেকে আমার জন্য কষ্ট করছে। আমি চাই না বাবা আমার জন্য আর কষ্ট করুক। তুমি প্লিজ কিছু বলোনা।

-কিন্তু আমি তোমার জীবন টা এভাবে নষ্ট হতে দেবোনা।
-কিন্তু এখন যদি তুমি গিয়ে সব বলে দেও তাহলে আমার বাবা কষ্ট পাবে আর বাবা কষ্ট পেলে আমিও পাবো।
তিশা আর কোনো কথা বললো না। চলে গেলো। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। বাবা মা এসে এতো বড়ো বাড়ি দেখে আমার গা ভরতি গহনা দেখে হা করে দেখছে। আমার বাবার চোখে পানি। সে আমার মুখে হাত বুলিয়ে বললো,

-কোনদিন ভাবি নাই রে মা। তুই এতো সুখী হবি।
বাবার কথা শুনে উপরে হাসছি। কিন্তু ভেতরে আমার কলিজা ছারখার হয়ে যাচ্ছে।
পাশে দারিয়ে আমার শাশুড়ি হেসে বললো,

-আমার বউ মা তো। অসুখী থাকবে কেনো।
বাবা মা তার তিন ঘন্টার মধ্যে আমার শাশুড়ি পাচ বার আমাকে বলে গেলে,
-তানিয়া দেখো ! তুমি কিচ্ছু বলবে না। তোমার বাবা যাওয়ার সময় আমি অনেক গুলো টাকা দিয়ে দিবো। এতে করে তোমার বাবা কিছু দিন ভালো ভাবে চলতে পারতে।
আমি তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম,

-এতো ভয় পেতে হবে না। আমি বলবো না। আপনি চিন্তা করবেন না। এতো চিন্তা করলে তো মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে। কেমন ঘেমে ঘেমে গেছেন।
সে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
-গুড। আমি জানতাম তুমি খুব বুদ্ধিমান।

আমার বোনেরা বারবার ঈশানের কথা জিগ্যেস করছিলো। আমার চাচাতো বোন আমার থেকে এক বছরের ছোট। ভালো মন্দ সে বোঝে। আমার কাছে এসে বললো?
-আপা দুলাভাইকে আমার কেমন জানি অদ্ভুত লাগে। কেমন জানি মাতাল মাতাল লাগে। কোনো কথা বলেনা। তোর সাথেও কী এভাবে থাকে?

আমি ওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম,
-আরে না। আমি এখানে আসার পর আমার কতো আদর যত্ন করেছে। ওই তো আমাকে সারাক্ষন দেখে দেখে রাখে। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

-আচ্ছা তোর শশুর শাশুড়ি বাদে আর কাউরে দেখি না। আজকে বউভাত তো তাদের আত্মীয়রা আসবে না?
আমি জানিনা। জা সর এতো প্রশ্ন করে মাথা খাস না।
-আচ্ছা আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন! তোর না একটা ননদ আছে? সে আসেনাই? কোথায় সে?
কথাটা শুনেই হঠাৎ আমার মনে পরলো!মনে মনে বললাম

-ঠিকি তো তিশা কোথায় ! ওর খোজ করা দরকার।
আমার শাশুড়ির কাছে গিয়ে জিগ্যেস করলাম তিশার কথা।
সে আমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বললো,
-তোমার বাড়ির কেউ যদি ওর কথা জিগ্যেস করে তাহলে বলবে ও আসেনি।
-কিন্তুু কেনো?

-যা বললাম তাই করবে। বেশি কথা জিগ্যেস করবেনা। ওকে আমার বিশ্বাস নেই যেকোনো সময় ঝামেলা করতে পারে। তাই ওকে দূরে পিঠিয়েছি।
আমি আর কোনো কথা বললাম না। এদের সাথে কথা বলার রুচি শেষ হয়ে গেছে। কতোটা ভয়ংকর মানুষ হলে এই কাজ করতে পারে মানুষ আমার জানা নেই। ছোট থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। কিন্তু জীবনে এমন কিছু হবে কখনো ভাবতেও পারিনি।

আমার শশুর ঈশান কে সবার সামনে নিয়ে আসলো। কাল থেকে ওক ঔষধ দিচ্ছে যাতে করে আমার পরিবারের সামনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে। কিন্তু আমার মনে অন্য কথা! এভাবে আর কতো দিন! কতোদিন লুকিয়ে রাখবে। কালকে বাবা যখন ফোন করে ঈশানকে চায়। তখন আয়ানকে দিয়ে কথা বলিয়েছে। আমার বাবা তো এটাও জানে না যে ওরা দুই ভাই।

আমাকে ক্ষমা করো বাবা, তোমারে আমি বলতে পারলাম না সব।
ঈশান আজকে একটু আধটু কথা বলেছে। আমার সৎ মা এসে আমার সাথে কথা না বলে আমার গায়ের গহনা নেরে নেরে দেখছে। বাড়ির দামি দামি জিনিস গুলো এটা রেখে ওটা ধরছে আবার কিছু পছন্দ হলে ব্যাগে পুরে নিচ্ছে। আমার চাচাতো বোন কে ডেকে তাকে সাবধান করতে বললাম।

অবিনাশী পর্ব ২

অনেক ক্ষন হয়েছে। অনেক ক্ষন না আজকে সারাদিনে আয়ান কে দেখলাম না। হয়তো তাকেও সরিয়ে দিয়েছে। যাতে করে বুঝতে না পারে তারা দুই ভাই। হে আল্লাহ ! এরা এতো নিষ্ঠুর এতো ভয়ংকর কীভাবে হয়। সব বড়লোকরা কী এমন? গরিব দের বোকা বানিয়ে পিষে মারে?

অবিনাশী পর্ব ৪