অবিনাশী পর্ব ৪

অবিনাশী পর্ব ৪
রেজওয়ানা আসিফা

তিশাকে ঘরে আটকে রেখেছে তার মা। বাড়ির নিচে একটা আন্ডারগ্রাউন্ড আছে। যেখানে তিশা কে আটকে রেখে আয়ান পাহারা দিচ্ছে আর অন্য একটা মেয়ের সাথে পার্টি করছে। তিশা বার বার ছোটার চেষ্টা করছে। কিছুতেই ছুটতে পারছে না। অনেকক্ষন চেষ্টা করার পর তিশা চিৎকার করে বললো,

-তুই আমার ভাই! ছিঃ লজ্জা করছে আমার। এভাবে নিজের বোনকে আটকে রেখে বোনের সামনে এসব করছিস!
আয়ান মা*তাল কন্ঠে বললো,
-সরি বোন। মার কথা মানতে হবে। তাহলেই তো ওই মেয়েটাকে পাবো। মা বলেছে তোরে আটকিয়ে রাখতে পারলে ওই মেয়েটাকে আমার করে দেবে। তাই সরি। তোকে ছারতে পারবো। আর কিছুক্ষন অপেক্ষা কর। তারপর ছেড়ে দেবো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

– প্রথমত তোর বাবা মা মেয়েটার জীবন টা নষ্ট করছে। তারপর আবার তুই এইগুলা বলছিস? তোর লজ্জা লাগে না? আর যাইহোক ওটা তো তোর ভাইর বউ!
-আমি যদি ওরে আরেকটু ভালো ভাবে দেখতাম তাহলে আর ভাইর বউ হতে পারতো না।
-তোর এসব ফালতু কথা শোনার টাইম নেই। আমাকে ছাড়, ভালোয় ভালোয় বলছি।
পাশে থাকা মেয়েটা বললো,

-আয়ান বেবি তো বলেছে, একটু পর ছেড়ে দেবে তারপরও এতো কথা বলছো কেন? শুধু শুধু নিজেকে ক্লান্ত করছো। চুপ করে বসে থাকো তাহলে আর শরীরের ক্যালোরি নষ্ট হবে না।
তানিয়া জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললো,

-সাধারন মানুষ যারা ব*স্তিতে থাকে তাদের ব*স্তির ছেলে মেয়ে বলে। আসলে এটা ভুল! যেসব মেয়েরা রাতে নাইট ক্লাবে নাচে আর এইসব বাজে ছেলেদের সাথে মিশে তারা আসলে প্রকৃত ব*স্তির মেয়ে। আর সেই ব*স্তির মেয়ে নাকি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে।
মেয়েটা রেগে গিয়ে তিশার সামনে এসে তিশার গায়ে হাত দিতে গেলেই তিশা খুব জোরে মেয়েটার পেঠে লা*থি মারে। তিশার হাত বাধা ছিলো কিন্তু পা খোলা ছিলো।
আয়ান মেয়েটাকে ধরে বললো,

-বেশি সাহস দেখাচ্ছিস? আমার বোনের গায়ে হাত দিবি?
কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই আবার বললো,
-তোমাকে বলেছি না তুমি কথা বলো না। আমার বোনের রাগ অনেক বেশি। ওর কাছে যেয়ো না।
বাবা যাওয়ার সময় অনেকক্ষন কান্না করলো তানিয়া।

বুক ছিড়ে জাচ্ছে তার। খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো তার, যে আমাকে নিয়ে যাও। এরা খুব ভয়ংকর। তার বাবা জাওয়ার পর তানিয়া কান্না করতে করতে ঘরে চলে গেলো।
আজকে তার ওই বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তার শাশুড়ি হঠাৎ কর বলে আজকে যেতে দিবে না। এতো দূরের পথ আরো পরে যাবে। এসব নিয়ম পালন করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বাধ্য হয়ে তানিয়াকে রেখেই চলে গেলো তার বাবা।

তানিয়ার শাশুড়ি, মিসেস তমা তানির বাবা মা চলে যাওয়ার সাথে সাথে তারাতাড়ি তিশার কাছে এলো। মিসেস তমা এসে তিশার হাত খুলে দিলো। তিশা রাগে খোপে চলে সেখান থেকে চলে আসলো। তানিয়ার ঘরে গিয়ে দেখলো সে কাদছে। তিশা রেগে গিয়ে বললো,

-এখন কাদছো কেনো? এখন কেদে কী হবে। ঠিক আছে। ভালো হয়েছে। একটা সুযোগ ছিলো তোমার সেটাও শেষ। এখন আজীবন এখানে পচে মরো।
-তুমি বুঝবে না আমার অবস্থা। তোমার মা আমার সৎ মাকে ৮ হাজার টাকা দিয়েছে যাতে বাবা আমাকে নেওয়ার জন্য জোর করলে আমার সৎ মা তাকে বাধা দেয়। হ্যাঁ সব তোমার মার ইচ্ছে মতোই হলো। প*চে মরার কথা বলছো? হ্যাঁ পচে মরবো। করার কিছু নেই। দুই ভাই বোন নিয়ে বাবা মা নিজেই খেতে পায় না। তারপর কতো গুলো টাকা ধার করা। এর মধ্যে আমি এসব বলে আরো কষ্ট দেবো! ছোট থেকে অঢেল টাকার মধ্যে বড়ো হয়েছো। অর্থের অভাব তুমি বুঝবে না।

-তোমার জন্য খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই।
– এক ভাই বিয়ে করে আরেক ভাই ন*ষ্টামি করছে। এই রকম পরিবার জীবনে দেখিনি। আমি তোমাদের পরিবারের মতো এতো শিক্ষিত না। কিন্তু আমরা মানুষের কাতারে পরি। তোমার পরিবার মানুষের কাতারে পরে না। সব অসুস্থ। মানসিক ভাবে সব গুলো অসুস্থ।

রাতে সবাই খাবার খাচ্ছে। তানিয়া খায়নি।তিশা তানিয়ার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। তানিয়া কান্না করছিলো। তিশাকে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না সে। তিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো

– কান্না করো কেনো তুমি? তুমি কী কষ্ট পাচ্ছো?
তানিয়া আর তিশা দুই জনেই তাকালো। দেখলো ঈশান একা হেটে এসেছে। আর কথা গুলো সেই বলেছে।
তাদের দুই জনের সামনে হঠাৎ করে সে বিছানায় পরে গেলো। সাথে সাথে ঘুমিয়ে গেলো।
-দেখো তানিয়া! আমি জতোদিন এখানে আছি ততোদিন তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। আর আয়ানকেও তোমার কাছে আসতে দেবো না। কিন্তু তার পর কী হবে জানিনা।

আর তার পরের কথা ভাবলেও আমার ভয় হচ্ছে। মা এখানে আমাকে বেশি দিন থাকতে দেবে না। ছোট থেকেই ওদের সব কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে ছিলাম আমি। তাই এসএস সি পরিক্ষা দেবার পরেই আলাদা রাখে আমাকে। তার আগেও একবার ঢাকা আমাকে মামার বাসায় রেখে এসেছিলো। আমি চলে এসেছিলাম। লজ্জার কথা। তারপরও তোমাকে বলতে হবে। তোমাকে সাবধান করার জন্য,

-একবার, বাড়ির এক কাজের মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করলো আয়ান। মেয়েটা কান্না করতে করতে সব বিচার দিলো মায়ের কাছে। মা তার মান সন্মান বাচানোর জন্য মেয়েটাকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বের করে দিলো। তার উচিৎ ছিলো আয়ানকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার।

কিন্তু সে তা করলো না। মিসেস তমা তার দুই ছেলে বলতে অঙ্গান। আয়ান ক্লাস ৯ এ বসে নেশায় জড়িয়ে যায়। আমি যখন ৪ এ পড়ি। একদিন ওর ঘরে গিয়ে না বুঝে ওর ওই গুলোতে হাত দেই। ও রাগে আমাকে খুব মারে। মার খেতে খেতে আমি অঙ্গান হয়ে যাই। তারপরও মা কিচ্ছু বলেনি ওকে।
এটা পাপের সং*সার।
-আমাকে তোমার দেখে রাখতে হবে না। আমি আর এই জীবন নিয়ে ভাবি না। যা হবার হবে।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো ৩ মাস!
এই তিন মাস তিশা বাড়ি থেকে জায়নি। অনেক জোর করেও ওকে ঢাকা পাঠাতে পারেনাই তমা। প্রতিটা সময় তানিয়াকে দেখে রেখেছে। বতর্মানে তানিয়াকে আটকে রেখেছে মিসেস তমা। কয়ক দিন আগে তিশা প্রতিবেশীদের কাছে গিয়ে সব বলে দেয়। সেটা তমা শুনতে পেয়ে তানিয়া কে মেরে সাবধান করে জাতে বাইরের কারো সামনে কিছু না বলতে। আর মেরে ফেলার হুমকি পযর্ন্ত দেয়। আর যখন প্রতিবেশীরা খোজ নিতে আসে। তখন তিশকে ভুল প্রমান করে তানিয়া মিথ্যা বলে।

আজকে তিশা একটু বাইরে গেছে। তানিয়া ঘরে। হঠাৎ আয়ান তানিয়ার ঘরে ঢুকে পরে। তানিয়ার সাথে জোরাজুরি করলে ঈশান ঘরে ঢুকে পরে। ঈশানের চোখ লাল হয়ে আছে। আয়ানের কাছে এসে আয়ানকে অনেক জোরে মারে ঈশান। আয়ান নিজেকে বাচানোর চেষ্টা করলেও পারলো না। কী জানি কীভাবে সব শক্তি ওর শরীরে চলে এসেছে। মিসেস তমা সব শুনতে পেয়ে আয়ানকে বাচায়। আয়ানকে ঈশানের হাত থেকে ছাড়াতেই ঈশান মেঝেতে পরে যায়। বাড়ি এসে তিশা সব শুনে অনেক অবাক হয়। আর বললো,

-তারপরও ভালো তুমি বেচে গেছো।
তানিয়া হেসে বলে এভাবে আর কতো দিন। একদিন দুই দিন! বিয়ের তিন মাস হয়ে গেলো বাবাকে দেখিনা। তুমি ঠিকি বলেছিলে এখানেই পচে মরতে হবে আমার।
তিশার কলেজ থেকে বারবার ফোন আশায় এবার তাকে যেতে হবে। তিশা তানিয়াকে নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছে। আবার রাগ হচ্ছে। সেইদিন যদি চলে জেতো আজ এই দিন দেখতে হতো না।

তিশা সব গুছিয়ে রাখছে। তানিয়া তিশার ঘরে এসে তিশার কাছে বসলো। হঠাৎ তিশা ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো। তানিয়া বেশ অবাক হলো। দরজা বন্ধ করে বিছানার নিচ থেকে একটা ফোন বের করে তানিয়ার হাতে দিলো। তানিয়া ফোন দেখে ভয় পেয়ে গেলো,

-এ কী করছো? এটা আমার কাছে দিচ্ছো কেনো? তোমার মা দেখলে আমার রেহাই নেই।
-দেখবে না। আলমারিতে লুকিয়ে রাখবে। কখনো খারাপ কিছু হলে সাথে সাথে আমাকে কল করবে।
-কিন্তু একবার দেখে ফেললে কী হতে পারে তোমার আমার ধারনার বাইরে।

অবিনাশী পর্ব ৩

-তারপরও এটা তোমার কাছে রাখো। তুমি অনেক বোকা। তুমি এখনো বুঝতে পারছো না তোমাকে আটকে রেখেছে। এখন যদি তোমাকে মেরে কোথাও ফেলেও দেয় তাহলে কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না। এরা অনেক ভয়ংকর বার বার বলছি তোমাকে। তোমাকে আগে সব কথা বলার সময় আমার ছিলো না। আগে যদি এসব কিছু বলতে পারতাম তাহলে তুমি চলে জেতে পারতে।

অবিনাশী পর্ব ৫