অবিনাশী পর্ব ৫

অবিনাশী পর্ব ৫
রেজওয়ানা আসিফা

তিশার যাওয়ার পর তানিয়া বেশির ভাগ সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকে।বিশেষ করে তিশার দেওয়া মোবাইল টা নিয়ে তার ভয়ের মাত্রা আরো বেশি। তিশাকে দিয়ে আসতে আয়ান গেছে। ওখান থেকে ১০ দিনের জন্য ইতালি গেছে ঘুর
তে। তাই এখন আয়ান কে নিয়ে ভয় কম।

তিশা গিয়ে ফোন করে কথা বলেছে তানিয়ার সাথে। জতোক্ষন কথা বলেছে ততোক্ষন পযর্ন্ত মিসেস তমা এক পলক অন্য দিকে তাকাইনি। এই ভেবে যদি তিশা কোনো বাজে বুদ্ধি শিখিয়ে দেয় তানিয়াকে।তানিয়া বোকা সহজ সরল মেয়ে তা সে যানে। বিয়ের আগে সব খোজ নিয়েছে। কিন্তু তিশা! তার সব বিপদ তিশাকে নিয়ে। নিজের মেয়ে কতোটা চালাক আর তার জন্য কতোটা ভয়ংকর তা সে ভালো করে যানে। তাই তিশাকে নিয়ে সে কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চায়না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তানিয়ার বাবা বলেছিলো মিসেস তমা কে। তানিয়াকে যেনো একটা বাটন ফোন দেয়। মিসেস তমা সোজা বলে দেয়। তাদের বাড়ির বউরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেনা। কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে হলে বড়োদের ফোন থেকেই কথা বলবে। তাই তানিয়ার বাবা প্রতিদিন নিয়ম করে একবার মিসেস তমার মোবাইলে ফোন করে মেয়ের সাথে কথা বলে। তানিয়া কান্না আটকে রাখতে চাইলেও পারে না।

মাঝে মাঝে কান্না করে দেয়। কি হয়েছে জিগ্যেস করলে মিসেস তমা বলে বাচ্চা মানুষ তো আপনাকে ছাড়া থাকছে তাই আপনার কথা মনে পরলে কান্না করে।
ঈশান আগের মতো তানিয়াকে দেখলেই রিয়েক্ট করে না।

আর এখন একটু আধটু কথাও বলে। একদিন মিসেস তমা কথায় কথায় বলে ফেলে আয়ান ঈশান কে একবার অনেক মারে এরপর থেকেই আয়ানকে ভয় পায় ঈশান। তবে যখন আয়ান বাড়ি না থাকে তখন ঈশান অনেক টা সাভাবিক হয়ে যায়। আর এর প্রমাণও তানিয়া পেয়েছে। কারণ দুই দিন আগে তানিয়া প্রথম এই বাড়িতে এসে রান্না করে। এমনে সব কাজ করলেও রান্না করতো না। মিসেস তমা সব কাজ কাজের লোক দিয়ে করালেও রান্না নিজে করে।

তানিয়া খেয়াল করলো আয়ান বাড়ি না থাকলে তার সাথেও খারাপ ব্যবহার করে না তেমন মিসেস তমা। যেহেতু এই বাড়ি এসে পরেছে। ভাগ্য কে মেনে নিয়ে তানিয়াও সব গুছিয়ে নিতে লাগলো। দুই দিন আগে যখন তমা রান্না করছিলো তানিয়া ইচ্ছে করে গিয়ে বলে সে রান্না করতে চায়। মিসেস তমা গম্ভীর গলায় বললো,
-ভেবে বলো! রান্না খারাপ হলে ঈশানের বাবা একদম খেতে পারেনা। আর বাড়িতে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
তানিয়া শান্ত গলায় বললো,

-আমি পারবো। আপনি দিন আমাকে।
সেইদিন তানিয়া তাদের গ্রামের কিছু রান্না করে।
সব রান্না শেষ করে খাবার টিবেলে রেখে রান্না ঘর পরিষ্কার করছিলো তানিয়া। হঠাৎ তার শাশুড়ি ডেকে উঠলো,
তানিয়া আসতেই দেখলো তার শশুরের খাবার তালুতে উঠে গেছে। মিসেস তমা তানিয়া কে ধমক দিয়ে বললো,

-কী রান্না করেছো এসব। মুখে দিতেই খাবার তালুতে উঠে যায়! এইজন্য বললাম বেশি পাকামো করো না। অনেক বেশি বোঝো হ্যাঁ।
তানিয়ার শশুর পানি খেতে খেতে বললো,

-খাবার খারাপ হলে এমন হয় নাকি তমা? কবে থেকে এটা আবিষ্কার করলে?
মিসেস তমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঈশান বলে উঠলো,
-খাবার টা কী মজা! এটা খুব মজা। প্রতিদিনের ওই দুধ আর অসট্ থেকে খুব মজা।
মিসেস তমা ঈশানের কথা শুনে সম্পূর্ণ খেয়াল টা তার দিকে দিয়ে বললো,

-মজা হয়েছে? তোমার কাছে মজা লেগেছে? আরো একটু দেই।
ঈশান প্লেট এগিয়ে দিলো। মিসেস তমা খুব খুশি হয়ে ঈশানের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে।
আর তানিয়ার শশুর বলছে,

-আমি বলতে চাচ্ছিলাম খাবার টা মজা হয়েছে আর ঈশান বলে দিলো। বাহ্।
মিসেস তমা তানিয়াকে বললো,
-বাসার সব কাজ অন্য লোক করবে। রান্না তুমি করবে এখন থেকে। তোমার রান্না ঈশানের ভালো লেগেছে।
তানিয়া হঠাৎ বলে উঠলো,

-প্রতিদিন ওই দুধ কলা আর গম গুরো কার ভালো লাগে।
তমা চোখ গরম করে তাকাতেই তানিয়া রান্না ঘরে চলে গেলো।
রাতে তানিয়া বই পরছে। ঈশান ঘরে এসে বললো,
-খুব মজা করে রান্না করো তুমি। দাদু চলে যাওয়ার পর আজকে প্রথম এতো মজার খাবার খেলাম তুমি আমাকে প্রতিদিন মজার খাবার দিয়ো!?

তানিয়া আবার বই নিয়ে বসলো। শান্ত কন্ঠে বললো,
-দেবো তবে শর্ত আছে একটা।
-শর্ত? কী শর্ত?
তানিয়া ঈশানের খুব কাছে গিয়ে বললো,
-এটা খুব গোপন কথা। কানে কানে বলতে হবে।
ঈশান ফিশ ফিস করে বললো,

– হ্যা। তুমি বলো! আমি বলবো না কাউকে,
-আয়ানকে আর ভয় পেলে চলবে না। এটাই আমার শর্ত।
আয়ানের কথা শুনেই ঈশান ঘাবরে যায়। ফিস ফিস করে বলে,

-ও তো খুব খারাপ। খারাপ লোকেদের ভয় পেয়ে হয়।
-ও খারাপ কিন্তু তুমি তো ভালো। আর খারাপ লোকদের ভয় পেতে হয় না।তাই তোমাকে ভয় পেলে চলবে না। আর যদি তুমি ওকে ভয় পাও তাহলে আমি আর তোমাকে মজার খাবার রান্না করে দিবোনা।
-ঠিক আছে ঠিক আছে। আমি আর ভয় পাবো না ওকে।
তানিয়া হেসে বললো,
-এইতো ভালো ছেলে!

ঈশান কে আগে তানিয়ার জতোটা অসহ্য লাগতো এখন ততোটা লাগে না।
এভাবেই এখন ঈশানের সাথে খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে তানিয়া।
তানিয়া সুয়ে আছে। হঠাৎ সেই মোবাইল টার কথা মনে পরলো। ইশানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও ঘুমাচ্ছে। আস্তে আস্তে করে আলমারি থেকে মোবাইল টা নিয়ে বারান্দায় গেলো। দেখলো তিশা অনেক গুলো কল করেছিলো। কল ব্যাক করে হ্যালো বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে কেউ তার মোবাইল টা টান মেরে নিয়ে গেলো।

সাথে সাথে তানিয়া আতকে উঠলো। তার বুকে ধুকপুক করছে। ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকাতেই দেখরো মিসেস তমা। তমাকে দেখে কিছুক্ষনের জন্য তানিয়ার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। তমা ভয়ংকর কন্ঠে জিগ্যেস করলো কার সাথে কথা বলছিলে?
তানিয়া চুপ করে আছে। মিসেস তমা ধমক দিয়ে আবার জিগ্যেস করলো,
-কী হলো বলো কার সাথে কথা বলছিলে?

তমার মনে পরলো মোবাইল টা তো তার কাছেই। মোবাইল টার স্কিনে তাকিয়ে দেখলো তিশার নাম্বার। ফোনটা কেটে মোবাইল টা নিজের কাছে রেখে বললো,
-আচ্ছা তানিয়া বলোতো, তোমাকে এখানে কেউ মারে? নাকি আমি তোমাকে দিয়ে সব কাজ করাই? গরিবের মেয়ে তুমি। এখানে কতো সুখে আছো। নিজের বাড়িতে তো ভালো মন্দ খেতেও পারতে না। আর এখানে এই এতো বড়ো বাড়ির বউ হয়ে আছো।এটা ভালো না খারাপ? শুধু শুধু এই সব কাজ করে আমার মাথা গরম করোনা।
কথা গুলো বলে মোবাইল টা নিয়ে তমা চলে গেলো।

তানিয়া সেখানেই দারিয়ে আছে। এতো দিন এই মোবাইল টা দিয়ে লুকিয়ে বাবার সাথে কথা বলতো। এখন আর হবে না। তার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। তানিয়া মনে মনে বলছে,
-গরবি ঘরের মেয়ে বলেই আষ্টেপৃষ্ঠে এভাবে চিবিয়ে খাচ্ছে। অন্য কেউ হলে এতো দিন সব ফাস হয়ে হয়ে জাবে।
সে রাতে আর তানিয়ার ঘুম হলো না। সকাল বেলা রান্না করছে তানিয়া। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। তানিয়া দরজা খুলতে যাবে তার আগেই মিসেস তমা তানিয়াকে ইশারা করে বারন করলো যেতে। তানিয়া আবার রান্না ঘরে চলে গেলো।

অবিনাশী পর্ব ৪

মিসেস তমা দরজা খুলে দেখলো ডেলিভারি ম্যান অনেক বড়ো একটা বাক্স নিয়ে দারিয়ে আছে।
মিসেস তমা কিছু বলার আগেই ডেলিভারি ম্যান বললো,
-এটা কী মিসেস তানিয়ার ঠিকানা? ওনার জন্য একটা পার্সেল এসেছে।

অবিনাশী পর্ব ৬