অবিনাশী পর্ব ৬

অবিনাশী পর্ব ৬
রেজওয়ানা আসিফা

মিসেস তমা প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেছে তানিয়ার নামে পার্সেল এসেছে শুনে।
বড়ো বক্সটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-শিউর! পার্সেল টা এই ঠিকানায় এসেছে?
ডেলিভারি ম্যান ঠিকানা দেখিয়ে বললো,
-ইয়েস ম্যাম। এই দেখুন ঠিকানা।
-হ্যা ঠিকানা তো ঠিকি আছে। কিন্তুু……….
আচ্ছা পার্সেল টা আমাকে দাও তানিয়া আমার ছেলের বউ।

-ওকে ম্যাম।
ডেলিভারি ম্যান চলে যেতেই, তমা বাড়ির দরজা বন্ধ করে সবার ঘরে তানিয়াকে ডাকলো।
-হ্যা মা!
– বিয়ের আগে প্রেম করেছিলে তুমি?
তানিয়া অবাক হয়ে বললো,
-না তোহ! কেনো?
তমা বাক্সের দিকে ইশারা করে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-তোমার জন্য কেউ এতো বড়ো বাক্সে করে কিছু পাঠিয়েছে।
-আচ্ছা মা কেউ কিছু দিলেই যে প্রেমিক দিয়েছে তা কিন্তু না। ওখানে যে পাঠিয়েছে লেখা আছে দেখলেই তো ঝামেলা শেষ।
তমা খেয়াল করে দেখলো আসলেই নাম আছে। তানিয়াকে ধমক দিয়ে বললো,

-বেশি পাকা পাকা কথা বলবে না একদম আমার সাথে বক্সটার কাছে গিয়ে দেখলো এটা তিশা পাঠিয়েছে। সন্দেহ হলো খুব তমার। তিশা কী পাঠিয়েছে এটার মধ্যে।
বক্সটা তমা নিজে খুললো,

ভিতরে শাড়ি আর কিছু কিছু জুয়েলারি। মিসেস তমা একটা একটা করে সব খুলছে। প্রতিটা কোনা চেক করছে।
তানিয়ার শশুর তমার এই রকম কাজ দেখে বিরক্ত হয়ে বললো,
-কি শুরু করলে বলোতো? ওর জিনিস ওকে দাও।
তমা তানিয়ার দিকে তাকিয়ে তানিয়ার শশুর কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-ওর সব কিছু এখন থেকে চেক করতে হবে। ও কাল কী করেছে জানো?
-কী করেছে?

-রাতে ওর ঘরের দরজা খোলা পেয়ে আমি ঘরে ঢুকে দেখি ওর কাছে মোবাইল।
তানিয়ার হঠাৎ মনে পরলো,
কালকে রাতে দরজা বন্ধ করতে একদম ভুলে গেছে সে। তার জন্যই সব হলো। তার জন্যই মোবাইল টা নিয়ে গেলো।

তানিয়ার শশুর তানিয়ার দিকে রাগি চোখে তাকায়। তানিয়া মাথা নিচু করে আছে।
তানিয়ার শশুর তাকে ধমক দিয়ে বলললো,
– এতো সাহস হয়ে গেছে? মেরে ঘরে বন্ধ করে রাখবো। সাবধান হয়ে যাও।
মিসেস তমা সব কিছু দেখলো। সন্দেহজনক কিছু নেই। বক্স টা তানিয়াকে তার ঘরে নিয়ে যেতে বললো।
তানিয়া ঘরে নিয়ে সব আবার দেখতে লাগললো।

শাড়ি গুলো দামি দামি। খুলে খুলে নিজের গায়ে জরাচ্ছে তানিয়া। নিচের জুয়েলারি টা তুলতেই জুয়েলারির পিছনে একটা কিছু খুব ভালো ভাবে লাগানো দেখলো। তানিয়া আগের বারের মতো কোনো ভুল করতে চায় না। তাই আগে দরজা টা বন্ধ করে এসে কাচি দিয়ে আস্তে আস্তে প্যাকেট টা খুলতে লাগলো।

প্যাকেট টা খুলে তানিয়া অবাক হয়ে গেলো। ভেতরে একটা মোবাইল। টাচ স্কিন। মোবাইল টা দেখে তানিয়ার হাত কেপে উঠলো। মোবাইল টা খুলে দেখলো ভিতরে সিম কার্ড ও আছে। তিশা সব রেডি করেই পাঠিয়েছে। তানিয়া খেয়াল করলো একটা ডাইরি এ্যাপ। ভিতরে ঢুকলেই দেখলো একটা মেছেজ লেখা,

-কাল যখন মা তোমার ফোনের কথা জেনে যায় তখন আমি সব শুনেছি। মা লাইন কাটতে ভুলে গেছিলো। তাই আজকে সব পাঠালাম। ডেলিভারি ম্যানকে খুব রিকুয়েস্ট করে রাতের মধ্যে পাঠিয়েছি। যাতে সকালে সব ঠিকঠাক ভাবে পাও তুমি। চিন্তা করো না কোনো। আমি ৫০০ টাকা রিচার্জ করে দিয়েছি। পরে আবার ফোন করে বলো। আর সাবধানে থেকো। আয়ান কিছু দিন পর দেশে ফিরবে।

মেছেজ টা পরতে পরতে হঠাৎ দরজা ধাক্কার আওয়াজ পেলো তানিয়া। ভয়ে তার হাত কাপছে তারাতাড়ি ফোনটা খাঠের নিচে একটা শাড়ি দিয়ে মুরিয়ে রেখে আরেকটা শাড়ি নিজের গায়ে জরিয়ে দরজা খুললো। দরজা খুলতেই তমা হন হন করে ঘরে ঢুকে আশপাশে, দেখতে লাগলো।
-রান্না রেখে এতোক্ষন কী করছো ঘরের মধ্যে? কী করছিলে বলো?
তানিয়া তোতলাতে তোতলাতে বললো,

-আমি তো শাড়ি পরে দেখছিলাম! এই যে এই দেখেন, কী সুন্দর লাগছে আমাকে! আগে কখনো এতো সুন্দর শাড়ি পরিনি তো তাই…..
-ঠিক আছে ঠিক আছে। এসব পড়ে দেখো নিচে এসো। ঈশান খাবে ওর খিদে পেয়েছে।
-আপনি যান। আমি সব ভাজ করে আসছি।
-তারাতাড়ি। ১০ মিনিটের বেশি যাতে না লাগে।

তানিয়া আবার দরজা লাগালো। কাপড় গুলো একটার পর একটা ভাজ করে আলমারিতে রাখলো আর আলমারির পেছনের দিকে মোবাইল টা আস্তে করে ফেলে দিলো। ওখানে কেউ সন্দেহ করবে না এই ভেবে।
রান্না করতে করতে যখনি মোবাইল টার কথা ভাবছে তানিয়ার বেশ খুশি লাগছে। তমা সোফায় বসে মোবাইল টিপছে আর আড়ে আড়ে তানিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। তানিয়ার হাসি মুখ তার সুবিধার ঠেকছে না।

-মুচকি মুচকি হাসছো কেনো?
তানিয়া সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে দিয়ে মাথা নিচু করে বললো,
-শাড়ি আর গহনা গুলো খুব পছন্দ হয়েছে মা।
আমার কথা মতো চলবে আর বাবার বাড়ির কাউকে কিছু যানাবে না। দেখবে আরো দামি দামি সুন্দর সুন্দর শাড়ি দেবো।
তানিয়া মনে মনে খুব হেসে বললো,

-বোকা বনে পাঠিয়ে দিলাম। তার মানে আমার হাসির কারন বুঝেনি সে।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো তানিয়া দরজা খুলে দেখলো একটা মহিলা। তমা তানিয়া কে মহিলা টাকে নিয়ে ভেতরে আসতে বললো। মহিলাটাকে তমা বাড়ির কাজের জন্য এনেছে বললো তানিয়াকে। কিন্তু তানিয়ার বুঝতে বাকি নেই কেনো এনেছে। আসলে তমা এবার নতুন একটা মেডিকেলে জয়েন করবে। বাড়িতে ঈশান আর তানিয়া একা থাকবে। তানিয়া যদি পালিয়ে যায় বা বাইরের কাউকে কিছু বলে দেয় তাই এই প্ল্যান করে তমা।
তমা মহিলাটার সাথে কথা বলে কালকে থেকে চলে আসতে বললো। এই বাড়িতেই থাকবে এখন থেকে।
বিকেলে সবাই ঘুমাচ্ছে। তানিয়া দরজা বন্ধ করে তিশাকে কল করলো। একবার রিং হওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ করলো তিশা।

-হ্যা হ্যালো!
-হ্যা তিশা।
-সব ঠিকঠাক ভাবে পেয়েছো? মা সন্দেহ করেনি তো?
– না সে কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। আমি নিজেও তো বুঝিনি। যদি ওইদিক চোখ না যেতো তাহলে তো পেতামি না। কিন্তু তুমি এতো তারাতাড়ি কীভাবে করলে এসব?
-এখানে এসেই তোমার জন্য ফোন কিনেছিলাম। ভাবছিলাম কীভাবে পাঠাবো। তাই ওইসব কিনেছি। যখন কালকে তুমি ধরা পরে গেলে তখনই পাঠানোর ব্যবস্থা করলাম। যেখানে খরচ পরতো ১৫০ টাকা সেখানে খরচ পরেছে ১০০০ টাকা।

-শুধু শুধু এতো তারাহুরু করেছো আর তুমি কি যেনো বলছিলে, আয়ান দেশে ফিরবে?
-ওহ্ হ্যা, ও কালকে আমাকে ফোন করেছিলো। কথায় মনে হলো দুই একদিনের মধ্যেই আসবে। তাই বললাম তোমাকে।
-আমার কী মনে হয় জানোতো, এবার বোধহয় মা ওকে এই বাড়িতে রাখবে না।
-কেনো? হঠাৎ তোমার এমন মনে হলো কেনো?

তানিয়া আর কথা বলতে পারলো না। সন্ধ্যা হয়ে গেলো তাই নিচে থেকে তমা ডাকছে চা তৈরি করার জন্য।
তিশা তার মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। মিসেস তমার মতো না একদমি তার ভাই। প্রচণ্ড সৎ আর কোমল মনের মানুষ সে। যখন শুনতে পায় একটা মেয়েকে ঠকিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে তমা। তখন রাগে ক্ষোপে সে যায়নি। আর তানিয়াকে তো তমা নেয়নি।

আয়ান ওই বাড়ি গেলেও তেমন দেখতে পারে না তাকে। তমার সাথে তো তার ভাইয়ের দেখা হয় না প্রায় দুই বছর। তানিয়ার শশুর কেও দেখতে পারে না তিশার মামা জামাল সিকদার।
সত্যি কথা বলতে খুব কষ্ট করে আদরের বোন তমা কে ডক্টর বানায়। নিজের জমি বিক্রি করে ১০লক্ষ টাকা সব টাই বোনের পিছনে খরচ করে। ডাক্তার হয়ে তমার পা মাটিতে পরে না। আকাশ সমান অহংকার তার। তারপর প্রেম করে বিয়ে করে আমান চৌধুরীকে বিয়ে করে ভাই ভাইয়ের অনুমতি ছাড়াই।

তারপরও কিচ্ছু বলেনি জামাল। কিন্তু পরে বুঝতে পারে তার বোন আর বোনের জামাইয়ের অহংকার অনেক। তিশার জন্মের পর যখন প্রথম তিশাকে তার কাছে রেখে যায়, যখন তিশাকে দেখে জামাল তখনি তার মনে হয় তিশা ভালো হবে। ওই পরিবারের রক্ত তিশার শরীরে আসেনি।

অবিনাশী পর্ব ৫

তখন থেকেই তিশাকে নিজের কাছে রাখে সে। আয়ান কে একদম পছন্দ না তার। একবার জামান সিকদারের ছোট মেয়ের সাথে অনেক অসভ্যতামি করে। ওইদিন জামাল সিকদার ও ছাড়ে নি। এমন মার মেরেছে দুই দিন পযর্ন্ত ভর্তি ছিলো মেডিকেল। আয়ান ও ভয়ে তেমন কথা বলে না তার সাথে।

অবিনাশী পর্ব ৭