অবিনাশী পর্ব ৭

অবিনাশী পর্ব ৭
রেজওয়ানা আসিফা

যখন মিসেস তমার ভাই জামাল আয়ানকে মারে তখন খুব ক্ষিপ্ত হয়ে ভাইকে কথা শোনাতে যায় মিসেস তমা। জামাল শিকদারও সেইদিন ছেড়ে কথা বলেনি। ইচ্ছে মতো ধুয়েছে তমাকে। ভাইয়ের অপমান খুব গায়ে লাগে তার। এরপর থেকেই ভাইয়ের সাথে কথা বলেনা।

জামাল সিকদারের এক ছেলে দুই মেয়ে। বড়ো ছেলে নূর মোহাম্মদ। সবাই নূর বলে ডাকে। বেশ ধারমিক সে। আর মেয়ে নূহা। নূহার সাথেই আসভ্যতামি করেছিলো আয়ান। মেয়েটা মাদ্রাসায় পরে। সব সময় পর্দা করে থাকে। কখনো কোনো ছেলের সামনে যায়না।
তিশাও সব সময় বোরকা পরে। কখনো বোরকা ছাড়া বের হয় না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

আয়ান এই বাড়ি আসে এটা নূহা একদম পছন্দ করেনা। আর নূরের সাথে তো লেগেই যায়। নূর ব্যবসা করে। নিজের বিশাল বিজনেস। বেশ চুপচাপ সভাবের ছেলে। গায়ের রং বেশ ফরসা। গাল ভরতি চাপ দাড়ি।
জামাল সিকদারের স্ত্রী মারিয়া বেগম। ছেলে মেয়েকে সব আদর্শ তার শেখানো। তিশার খুব আফসোস হয় মাঝে মাঝে কেনো সে এই লোকটার গর্ভে না হয়ে ওই তমার পেটে হয়েছে। ছোট থেকেই তিশার বেশির ভাগ সময় এই বাড়িতে কেটেছে।

সকাল থেকে মিসেস তমা অনেক আয়োজন করছে। সব রান্না করছে তানিয়া।
আয়ান চৌধুরী লোকটা তানিয়ার সাথ খারাপ করলেও তমার অনেক কাজ তার পছন্দ না। সকাল সকাল এতো আয়োজন দেখে পেপার পরতে পরতে বললো

-যেমন আয়োজন করছো মনে হচ্ছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছো আজকে জামাই আসবে। আর ও তো এক বছর বা এক মাস পর আসছে না যে এতো খাবার রান্না করতে হবে। কোনো মহান কাজ করেও আসছে না। ঘুরতে গিয়েছিলো সেখান থেকে আসছে তাহলে এতো আয়োজন কিসের? আর ভালো কথা! ওর জন্য এসব না করে বরোং অন্য কিছুর ব্যবস্থা করো। বুঝতেই পারছো কিসের কথা বলছি।

আমান চৌধুরীর এসব কথায় তমার রাগ হলো না। রাগ হলো তানিয়ার সামনে বলছে তাই। বিরক্ত হয়ে বললো,
-তোমাকে এতো বেশি কথা বলতে হবে না। আমার ছেলের জন্য আমার জা ভালো মনে হবে তাই করবো।
তানিয়া এতোক্ষন কিছু না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছে যে আয়ান আসবে।

দুপুরের দিকে আয়ান বাড়ি ফিরলো। সাথে নতুন একটা মেয়ে। তানিয়া দূরে দারিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
তানিয়া বেশ অবাক হয়ে দেখছে। আয়ানকে অনেক চেঞ্জ লাগছে। সাদা শার্ট পরা। চুল গুলো এলোমেলো না।
আর পাশের মেয়েটা একটা পাতলা শাড়ি পড়া। দেখতে খুব ভদ্র মনে হচ্ছে। তানিয়া মনে মনে বললো,

-ওর সাথে এতো ভদ্র শান্ত মেয়ে কোথা থেকে আসলো।
আয়ান মেয়েটার হাত ধরে বললো।
-মা ওকে আমি বিয়ে করবো।
মেয়েটা এসে তমার পায়ে সালাম করলো। আয়ান হাসি হাসি মুখ করে তানিয়ার দিকে এগিয়ে তানিয়ার দুই কাধে হাত রেখে বললো,

-দিশু(দিয়া) এটা হচ্ছে আমার ভাবি। মায়ের সমতূল্য ভাবি আমার। আমার ভাবিও তোমার মতো বেশ ভদ্র বুঝেছো।
মেয়েটা এসে তানিয়ার পায়ে সালাম করলো। তানিয়ার সব কিছু সন্দেহজনক লাগছে। মনে মনে বললো,
-বিষয় টা তারাতাড়ি তিশাকে জানাতে হবে। আচ্ছা আয়ান কী তিশার ওইদিক দিয়ে আসেনি! তিশার তো এতোক্ষনে মার ফোনে কল করার কথা ছিলো। নিশ্চয়ই ওখান দিয়ে আসেনি।
মিসেস তমা আয়ানের হাত ধরে টেনে দূরে নিয়ে গিয়ে বললো,

-কোথা থেকে এনেছো এই মেয়েকে? মেয়ে জানে তোমার সম্পর্কে? এই মেয়ের তো তোমার সাথে আসার কথা না।
গিয়েছিলে ইতালি কিন্তু মেয়ে তো আমাদের দেশের।
আয়ান হেসে বললো,

-আমি ইতালি জাইনি। দেশেই ছিলাম। আর তোমার কি মনে হয় আমার সম্পর্কে যানলে এই মেয়ে জীবনে পটতো?
-সেটাই তো মনে হচ্ছে।
-এতো কথা বুঝি না মা। এই মেয়েকে বিয়ে করবো। ওর ভাই বোন কেউ নেই বাবার একমাত্র মেয়ে। বাবা এমেরিকায় থাকে। একটা প্রেম করেছিলো। ছেলেটা নাকি কী কারনে ব্রেকআপ করে দিয়েছে। দেখছোই তো খুব প্রাচীন টাইপের মেয়ে। এই ব্রেকআপ নিয়ে তার কি যে কষ্ট। আমার সাথে দেখা হয় একটা রেস্টুরেন্টে। মামার বাসা থেকে বের হয়ে যখন খেতে যাই তখন। দেখেই ভালো লাগে। একটু খোচা মারতেই সব কথা ফর ফর করে বেরিয়ে গেলো। এইজন্য আর ইতালি জাইনি। সজা ওদের বাসায় বসে ওরে পটাইছি।

তোমার যেই স্বামী আমি জানি সব সম্পত্তি ঈশান আর তিশার নামে দিবে। তাই এই সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইনা। একবার ওকে বিয়ে করতে পারলে ওর বাবার সব সম্পত্তি আমার। আর তানিয়াকে ভালো ভাবে বারন করবে যাতে দিয়া কিচ্ছু জানতে না পারে। দিয়া যদি কিচ্ছু জানতে পারে বিয়ের আগে। আমি কিন্তু তানিয়াকে খু*ন করে ফেলবো।
মিসেস অনেক চিন্তা করে বললো,

-আচ্ছা ঠিক আছে ও কিচ্ছু জানতে পারবে না। কিন্তু বিয়ের পর যদি এই মেয়ে তোর সম্পর্কে যানে তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস? ওর বাবা তোর কি অবস্থা করবে?
-কিছুই করতে পারবেনা। ওরে একবার ইমোশনার বানাই ফেললে ওই ওর বাবার হাত থেকে আমাকে বাচাবে।
-ঠিক আছে। শোন তুই ওকে তানিয়ার ঘরে পাঠা তানিয়ার সাথে। একটা নতুন লোক রেখেছি সে এসে তোর ঘরটা পরিষ্কার করে দিবে। তোর ঘরের সেই অবস্থা। ওকে কোনো ভাবেই নেওয়া যাবে না।

-তানিয়ার ঘরে নেওয়ার আগে তুমি তানিয়াকে সব বলে দাও।
তানিয়া এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। তমার ডাকে তার হুশ ফিরলো। তমা কাছে ডেকে বললো,
-ওকে তোমার সাথে তোমার ঘরে নিয়ে যাও। আর ও যাতে কিচ্ছু জানতে না পারে। ও যদি কিছু যানে তোমার কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা হবে।

তানিয়া মাথা নেড়ে দিয়া কে নিয়ে চলে গেলো। মেয়েটা আশপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর তানিয়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।
তানিয়ার এমন ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে মেয়েটা বললো,
-এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আমার মুখে কী কিছু লেগে আছে?
-আরে না না। তুমি অনেক সুন্দর তাই দেখছিলাম।
আচ্ছা তোমার বাড়ি কই? আর আয়ানের সাথে কীভাবে পরিচয়?

-আমার বাসা ঢাকায়। আয়ানের সাথে তো একটা রেস্টুরেন্টে পরিচয়। যানেন, লোকটা আমার জন্য কি না করেছে। আমার মন খারাপ এইজন্য ইতালি জায়নি। তিন মাস আগে আমার প্রথম প্রেমিক আমাকে ছেড়ে চলে যায়। কতো ছেলে আমাকে ইমপ্রেশ করার চেষ্টা করেছে কারো ব্যবহার বা কারো কথাই আমার ভালো লাগেনি। কিন্তু ও আমাকে পাচদিনে যেই ভালোবাসা দিয়েছে তাতে আমি দুই বছরের প্রেম ভুলে গেছি। মানুষ টা এতো ভালো। এমন একটা মানুষ পেয়েছি আমার ভাগ্যের প্রশংসা করতে হয়।

তানিয়া সব বুঝতে পারলো।
নতুন মহিলা টা এসে আয়ানের ঘর পরিষ্কর করে দিলো। আয়ান দিয়া কে নিজের দেখালো। তারপর দিয়াকে অন্য রুমে থাকতে দিলো। রাতে আমান চৌধুরী এসে এসব শুনে খুব রেগে গেলো। কিন্তু তমার জন্য কিছু বলতে পারলো না।

রাতে সবার সব কাজ শেষ করে রুমে গেলো তানিয়া। ঈশান আগেই ঘুমিয়ে ছিলো। বারান্দায় গিয়ে তিশাকে ফোন করে সব বললো।

তিশা চিন্তিত হয়ে বললো,
– একবার বিয়েটা হয়ে গেলে মেয়েটার জীবন শেষ। যেকোরেই হোক বিয়েটা আটকাতে হবে। তুমি একটা কাজ করো, তুমি মেয়েটাকে সব বলে দাও।
-তুমি চেনো না তোমার মা ভাইকে? আমাকে বারবার বলে রেখেছে কিচ্ছু না বলতে। তাহলে অন্য কিছু করতে হবে।
-কী করবে? কোনো বুদ্ধি?
-হ্যা!

সকালে উঠে সবাই খেতে বসেছে। হঠাৎ আয়ান বললো বিয়ে দুই দিনের মধ্যে হবে।দিয়া
দিয়া অবাক হয়ে বললো,
-বাবাকে আসতে দেবে তো। বাবা বলেছে পরের সপ্তাহে এসে তোমার সাথে কথা বলবে।
আয়ান ধমক দিয়ে বললো,

-আমি বলেছি তো দুই দিনের মধ্যে হবে।
দিয়া অবাক হয়ে গেলো আয়ানের এমন ব্যবহার দেখে। ছলছল চোখে বললো,
-তুমি এমন করছো কেন? এভাবে কথা বলছো কেনো?

অবিনাশী পর্ব ৬

-আরে আরে পাগল কাদছো কেনো? আমার কিছু দিন পরেই একটা কাজের জন্য বাইরে জেতে হবে। তাই তোমাকে নিয়ে যাবো।এইজন্য বললাম। তুমি কান্না করো না প্লিজ।

অবিনাশী পর্ব ৮