অবিনাশী পর্ব ৮

অবিনাশী পর্ব ৮
রেজওয়ানা আসিফা

দিয়া আয়ানের গালে একসাথে চার টা থা*প্পড় মেরেছে। সব কয়টা থাপ্পড়ের দাগ আয়ানের গালে এখনো বিদ্যমান।
মিসেস তমা দিয়াকে ধমক দিয়ে বললো,
– কতো বড়ো সাহস তোমার! আমার ছেলেকে মারলে?

-চুপ, অসভ্য মহিলা। আপনাদের মতো মানুষের জন্যই মেয়েদের জীবন নষ্ট হচ্ছে। আর এটা ছেলে? এটা তো একটা কাপুরুষ। এইসব ছেলেদের রাস্তায় ফেলে মারা দরকার।
আমান সাহেব মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলছে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-কিন্তু তুমিই তো আয়ানকে ভালোবেসে এই বাড়ি এসেছিলে। তাহলে এখন এইসব কেনো বলছো?
-আগে তো জানতাম না ওর আসল রূপ। এখন জানলাম তাই এসব বলছি।
দিয়া পেছন থেকে আয়ানের মোবাইল বের করতেই আয়ান এবং তমা দুই জনেই অবাক হয়ে গেলো।
-তুমি আমার মোবাইল কেনো ধরেছো? কেনো আমার অনুমতি ছাড়া আমার মোবাইল চেক করেছো। তোমার এতো সাহস কেনো?
-এই…… চুপ! গলা নামিয়ে কথা বল। আপনার ছেলের ফোনে হাজারো মেয়ের বাজে বাজে ছবি আর…… আর কিছু বললাম না।

দিয়া আয়ানের দিকে এগিয়ে বললো,
-তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। তাই ছেড়ে দিলাম। ভেবোনা একেবারেই ছেড়ে দিলাম। তোমাকে চোখে চোখে রাখলাম। আমার সামনে কখনো অন্য কোনো মেয়ে নিয়ে পরলেই তোমার জীবন ওখানেই শেষ। কথাটা মাথায় রেখো।
দিয়া তানিয়ার কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

আয়ান রেগে একটা ফুলদানি ভেঙে ফেলেছে। তানিয়া মনে মনে সেই হাসছে। তার কি যে খুশি লাগছে সে বলে বোঝাতে পারবে না। আসলে এই সব বুদ্ধি তিশার আর বুদ্ধি অনুযায়ী কাজ করেছে তানিয়া। তিশা আয়ানের ফোনের পাসওয়ার্ড জানতো। তানিয়া কে সে বলে আয়ানের ফোনের পাসওয়ার্ড দিয়াকে দিতে আর সে দিয়েছে এটা যেনো দিয়া কাউকে না বলে। এতেই কাজ হয়ে গেছে।
আমান চৌধুরী বললো,

-পাপ ঢাকা থাকে না। পাপ সবার সামনে একদিন না একদিন বেরিয়ে আসেই।
প্রখর রৌদ্রে পুরে বাড়ি ফিরেছে নূর। জামাল সিকদারের ছোট মেয়ে ফাতেমা বেরিয়ে ভাইকে এক গ্ল্যাস পানি দিতে যাবে তার আগেই তিশা পানি টা নিয়ে নিজে গেলো নূরের কাছে। নূর তিশার দিকে একবার তাকিয়ে পানি টা নিয়ে বললো,

-একটু মা কে ডেকে দে তো।
-মামি তো বাড়ি নেই। নূহার মাদ্রাসায় গেছে।
-ওহ্। তাহলে ফাতেমাকে ডেকে দে।
-আমাকে বললে কী হয়েছে? কখন থেকে একে ডেকে দে ওকে ডেকে দে করছো। আমাকেই বলো।
-খিদে পেয়েছে ভাত দে। দে ভাত দে।
-মামি তো রান্না করে রেখে যায়নি।

-এইজন্যই তো তোকে বলিনি। এখন বললাম এখন দে ভাত এনে দে।
-আচ্ছা আচ্ছা তুমি রাগ করো না আমি দেখছি।
-সব সময় দুই লাইন বেশি বোঝে। পাকা মেয়ে। ফাতেমাকে দিয়ে নিচ থেকে আমেনা আন্টির থেকে ভাত আনাবো। আম্মু বলে গেছিলো আসতে দেরী হলে ওখান থেকে এনে খেতে তাই তো ফাতেমা কে ডেকেছি।
তিশা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,

-আচ্ছা আমি ওকে পাঠাচ্ছি।
-শোন! তোর ভাইর খবর জানিস?
-কার? আয়ানের?
-হ্যা। একটা ভালো ভোলাভালা মেয়ের সাথে নাকি বাটপা*রি করতে গিয়েছিলো মেয়ে সব ধরে ফেলেছে।
-কখন হয়েছে এই কাজ?

-বিকেলে। আমাকে আংকেল ফোন করে বললো।
-বাবা ফোন করেছিলো তোমাকে?
-হ্যা।

তিশার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। ঘরে গিয়ে তানিয়াকে ফোন করতে যাবে ফোনটা হাতে নিয়ে আবার রেখে দিলো।
মনে মনে বললো, এখন আর ফোন করার দরকার নেই ওকে। ও ফ্রি হলে সময় বুঝে দিবে। তার চেয়ে ভালো মাকে ফোন করা যাক। দেখি তার আদরের ছেলে নিয়ে তার কী মতামত। নিশ্চয়ই দিয়া মেয়েটা তাকেও ধুয়ে দিয়ে গিয়েছে।

মিসেস তমা চোখ মুখ রাগে লাল করে বসে আছে সোফায়।
ফোন বাজতেই ফোনের দিকে তাকালো। দেখলো তিশা কল করেছে। এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপর তিশার ফোন দেখে তার বুঝতে বাকি নেই তিশা সব শুনেছে। আর এখন গা পোড়ানো কথা বলার জন্য ফোন করেছে। তিশার ফোনটা কেটে দিলো সে। তিশাও হারা মানছে না। বার বার ফোন করছে। আর তমাও বারবার কাটছে। তিশা বিরক্ত হয়ে আমান চৌধুরীর মোবাইলে কল করলো। সে ফোন ধরলেই তিশা বললো,

-মার ফোনে কী আগুন লেগেছে? বার বার কেটে দিচ্ছে কেনো?
-ফোনে নারে মা। মনে আগুন লেগেছে।মনে।
আমান চৌধুরীর দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে তমা। না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু করতে।
-শুনলাম বাড়িতে কি যেনো হয়েছে।
-হ্যা। গুনধর ছেলের গুনের কামাল দেখিয়েছে আর কি হবে। বাদ দে। পরে কথা বলবো এখন বাইরে যেতে হবে। রাখি মা।
আয়ান জোরে তানিয়ার হাত ধরে বললো,

-তুই কিছু করেছিস। আমার বার বার সন্দেহ হচ্ছে তুই কিছু করেছিস। কী বলেছিস ওকে? সত্যি করে বল। তাহলে আজকে মেরে তোকে শেষ করে দেবো। তমা আয়ান কে ছাড়িয়ে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ওর সাথে এমন কেনো করছো? আমার মনে হয় না ও কিছু করেছে। কারণ ওর এতো সাহস হয় নি যে ও আমি বারন করার পরেও কিছু করার সাহস করবে। তুমিই মেয়েটাকে চেনোনি। মেয়েটাকে জতোটা বোকা ভেবেছো ততোটা বোকা না। দেখেছো তোমার ফোন চেক করেছে ও। সেটাও তুমি জানোই না।

-কিন্তু মা ও আমার পাসওয়ার্ড কীভাবে জানবে কোনো মতেই না।
-আমার মনে হচ্ছে যখন তুমি ওয়াশ রুম বা খানিকক্ষনের জন্য বাইরে গেছো তখন এই কাজ করেছে। হয়তো ফোনের লক খোলা ছিলো।

-তুমি দেখো! আমি ওকে ছারবো না। কিছুতেই ছারবো না দেখো। যেভাবেই হোক এর প্রতিশোধ নেবো আমি
– দরকার নেই। বাদ দাও যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর……
তমা একবার আমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-মনে রেখো। তুমি একা। তোমার পাশে কেউ নেই বুঝেছো।তাই সাবধানে চলবে।

রাত ২ টা বাজে। হঠাৎ ঈশান কেমন করে উঠছে। সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তানিয়া অনেক বার বুকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তারপরও কাজ হচ্ছে না। শেষে কোনো দিক না পেয়ে তারাতাড়ি গিয়ে সবাইকে ডেকে আনলো।মিসেস তমা এসে ঈশান কে একটা ইনজেকশন দিতেই ঈশান সান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলো। তানিয়া কান্না করে দিয়েছে ঈশানের এমন অবস্থা দেখে। লোকটাকে স্বামী হিসাবে মানতে না পারলেও ভালো বন্ধু তার। আর তার সাথেই তানিয়ার সারাটা সময় কাটে।

আমান চৌধুরী ঈশানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-এই তুমি আর তোমার ওই ছেলের জন্য আমার ছেলেটার আজকে হঠাৎ এমন হলো।কতো বার বলেছি সারাদিন বাড়ির মধ্যে এতো চেচামেচি করো না। শোনো না তো। এখন দেখো ছেলেটার কী অবস্থা।
মিসেস তমা মাথা নিচু করে চলে গেলো ঘর থেকে। তানিয়া ঈশানের পাশে গিয়ে বসলো। আমান চৌধুরী উঠে বললো,

-চিন্তা নেই ঘুমিয়ে পরো ঠিক হয়ে যাবে।
আমান চৌধুরী চলে যাওয়ার পর তানিয়া দরজা বন্ধ করে অনেক ক্ষন ঈশানের মাথায় হাত বুলিয়ে তারপর সুয়ে পরলো।

ছোট বেলায় এমন বিরক্তকর ছিলো না আয়ান তার বাবার কাছে। যখন দেখে দুই ছেলের এক ছেলে সাভাবিক না। তখন আমান চৌধুরীর সব ভরসা ছিলো আয়ানের উপর। কিন্তু বিয়ের আট বছর পর সন্তান হওয়ায় তমা নিজের সন্তানদের প্রতি হয়ে পরে প্রচণ্ড দুর্বল।

অবিনাশী পর্ব ৭

আয়ান যখন খারাপ কাজের নেশায় জরাচ্ছিলো তখন সে নিজেও কিছু বলেনি ছেলে কষ্ট পাবে বলে আর আমান চৌধুরীর থেকেও লুকিয়েছে। যখন আমান চৌধুরী জানতে পারে তখন সে আয়ানকে প্রচণ্ড মারে। আর সেই মার ছাড়াতে গিয়ে তমা নিজের স্বামীর গালে থা*প্পড় মারে।
এর পর থেকেই আয়ানকে দেখতে পারে না আমান চৌধুরী।

অবিনাশী পর্ব ৯