অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৪

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৪
Mousumi Akter

প্রভাত চট করে সোয়া থেকে উঠে বসল। প্যান্টের পকেট থেকে টিস্যু দিয়ে মোড়ানো নুপুর জোড়া বের করল।প্রভাতকে উঠতে দেখেই পূর্ণতাও উঠার জন্য কেবল -ই ঘাড় উঁচু করল। তখন ই প্রভাত বলল,

“উঁহু তুমি উঠোনা পূর্ণ। ” কণ্ঠে কেমন নেশালো মিশ্রণ। পূর্ণতা সুয়ে পড়ল।প্রভাত বিছানা ছেড়ে নামল।পূর্ণতার পায়ের কাছে গিয়ে বসল।সাদা রঙের টিস্যু থেকে রুপার নুপুর জোরা হাতে নিলো।পূর্ণতার সুন্দর পাজোড়ার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো প্রভাত।প্রভাতের কাছে মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা এই এক জোড়া পা-ই বিশেষ সুন্দর আর আকর্ষনীয় ভাবে সৃষ্টি করেছেন।না হলে এত সুন্দর হবে তার পা জোড়া।প্রভাত অনায়াসে তার ঠোঁট জোড়া পূর্ণতার পায়ে নামিয়ে এনে মৃদু স্পর্শের একনাগাড়ে কতগুলা চুম্বন অঙ্কন করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এত সুন্দর কেন তোমার পা?” প্রভাতের ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ায় পূর্ণতা পা সরিয়ে ফেলল।শির শির করে উঠল পায়ে র তালু থেকে সর্বাঙ্গ।সামান্য একটু স্পর্শে তার সমস্ত শরীর শির শির করতে থাকল।লোপকূপ সব দাঁড়িয়ে গেল।একটা শিতল অনুভূতি হচ্ছে সমস্ত শরীরে।প্রভাত পূর্ণতার অনুভূতি টের পেল।একমাত্র প্রিয় পুরুষ বা – প্রিয় নারীর স্পর্শ পেলেই তো ঘুমন্ত অনুভূতিরা জাগ্রত হয়।প্রভাতের মুখমণ্ডল এ কেমন যেন বিশ্বজয়ের হাসি।সে স্মিথ হাসছে।নুপুর জোড়া পূর্ণতার পায়ে খুব যত্নের সাথে পরিয়ে দিয়ে বলল,

” বললে না কেন এত সুন্দর তোমার পা?”
পূর্ণতা ভারী কণ্ঠে জবাব দিল,
” সবার পা-ই সুন্দর।”
” আমার চোখে এই পা-জোড়াই ভীষণ সুন্দর। ”
পূর্ণতার লজ্জায় আর কোনো উত্তর দিলোনা।
প্রভাত আরেকবার পূর্ণতার পায়ে চুম্বন এঁকে বলল,

“ভালবাসা পরিয়ে দিলাম তোমার পায়ে। আমার চোখের সামনে না থাকলেও নূপুরের ধ্বনি শুনলে বুঝতে পারব আশে-পাশে আছো।”
“শুধু এ-জন্যই নুপুর এনেছেন।”
” না অন্য কারণ ও আছে।”
” কি কারণ?”
” তোমার প্রতি নিজেকে আরোও আকৃষ্ট করার জন্য।নুপুর পরলে মেয়েদের পা অনেক সুন্দর দেখায়।নুপুর একটা অন্যতম সুন্দর অলংকার।নুপুরের রিনিঝিনি শব্দে নিজেকে আরোও আকৃষ্ট করতে চাচ্ছি।”

পূর্ণতা কোনো সাড়াশব্দ করল না।মাঝে মাঝে কিছু কথার উত্তর নিরবতাই শ্রেয়।এত ভালবাসামিশ্রিত কথার বিপরিতে কোন ভালবাসাময় বাক্য প্র‍য়োগ করবে পূর্ণতা সেটা জানেনা।প্রভাত আবার বিছানায় এল।এবার সে পূর্ণতার উপর ঝুঁকে সুয়ে পড়ল।একটু হলেই পূর্ণতা প্রভাতের নিচে চাপা পড়বে।নির্লজ্জের মত সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চোখের পলক কোনোভাবেই পড়ছে না।পূর্ণতার ভীষণ লজ্জা করছে।সে মাথা কাত করে বলল,

“সরুন আমার লজ্জা করছে।”
প্রভাত ফিসফিসিয়ে বলল,
“আমি না হয় নির্লজ্জ আমার বউতো আর নির্লজ্জ না।সে তো লজ্জা পাবেই।”
“দেখুন মজা না করে সরুন আমার ভীষণ লজ্জা করছে।”
“লজ্জা পাচ্ছো বলেই অন্যরকম সুন্দর লাগছে।এ যেন অন্যরকম সুন্দরীতমা দেখছি আমি।”
“আপনি সরবেন?”
“না।”
“কেন?”

“তুমি এত সুন্দর কেন পূর্ণ? চোখ ফেরাতে পারছি না।হুর রা বুঝি এমন ই সুন্দর। ”
“আপনি আমাকে নিয়ে সব সময় বাড়িয়ে বলেন কেন?”
“আমার হৃদয় তোমার হৃদয়ে প্রতিস্থাপন করে দেখলে বুঝতে।আমার হৃদয় জানে পৃথিবীর সমস্ত সুন্দরের উর্দ্ধে তুমি।অপরুপা সুন্দরী তুমি।”

পূর্ণতা লজ্জায় চুপ রইলো।ভাললাগায় হৃদয় দুলিয়ে উঠল।প্রভাত পূর্ণতার কপালে চুমু দিয়ে বলল,
” তুমি সত্যিই আমার জীবনের পূর্ণতা।যে আমার জীবনে না এলে সবই অপূর্ণ থেকে যেত।আমি জানি তুমি এ বাড়ি অপছন্দ করো।শাহজাহান এর মত তাজমহল গড়তে পারব না। তবে প্রভাত ও একটা তাজমহল তোমার জন্য গড়বে।সেই তাজমহলের মহারানি হবে তুমি।সেখানে একটা রাজকীয় চেয়ার বানাব।তুমি সেখানে বসে রাজ্য চালাবে।তোমার ছেলে -মেয়েদের নিয়ে সেই মহলে তোমার বসবাস হবে।তোমার পরণে থাকবে রানিদের শাড়ি।গা-ভর্তি গহনা।তুমি চেয়ারে বসে সবাইকে হুকুম করবে, সবাই তোমার সেই হুকুম মেনে চলবে।আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার রানিকে দেখব।হ্যাঁ,আমার রানির সেবাযত্নের জন্য দাস -দাসী লাগবে না।আমিই তার সর্বদা সেবাযত্ন করব।আর আদর করে ডাকব আমার রানি।আমার অপূর্ণ জীবনের পূর্ণতা।”

পূর্ণতা নিমিষেই চোখের সামনে কল্পনা করল, কোনো এক রাজকীয় চেয়ারে সে রানির মত বসে আছে।পূর্ণতার ভাবনার ছেদ না কাটতেই প্রভাতের নেশাতুর চোখের নেশা আরোও বাড়ল।সে ওষ্ট নামাল পূর্ণতার ঘাড়ে।মুহুর্তে পূর্ণতা কেঁপে উঠল।কম্পিত ঠোঁটে পূর্ণতা কিছু বলতে যাবে তখনই প্রভাত পূর্ণতার ওষ্টে আরেক জোড়া ওষ্ট নেমে এল।প্রভাতের এমন আচরণ পূর্ণতাকে বিন্দুমাত্র ভাবাল না।বিরক্ত ও করল।শুধু ভারী কণ্ঠে বলল,
“সরুন।” আর কিছু বলতে যাবে তখনই প্রভাত দুই ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে নিষেধ করল।প্রভাত এই মুহুর্তে পূর্ণতার থেকে কিছু শুনতে চাইলো না।
আবেদনময়ী কণ্ঠে বলল,

“পূর্ণ গিভ মি টিইট হাগ প্লিজ!” এমন আবেদনময়ী কণ্ঠ কোনো পুরুষের ও হয়।পূর্ণতা যে প্রভাতকে ভালবাসে তা শুধু মুখে প্রকাশের অপেক্ষা।মুখে প্রকাশ ছাড়াই তার বাহ্যিক সমস্ত আচরণে তা প্রকাশ পেয়ে যায়।এইযে প্রভাতের আকুল আবেদন এখন ফেলতে পারল না।অনায়াসে প্রভাতকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরল।দুজনের মাঝে প্রবল উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল আগ্নেয়গিরির ন্যায়।দুটি হৃদয় যেন মিলিত হল।দুটি হৃদয় দুটি হৃদয়ের খুব কাছাকাছি চলে এল।যখন হৃদয় কাছাকাছি চলে আসে তখন শরীর ও কাছাকাছি চলে আসে।দুটি ভালবাসার মানুষ মিলিত হল নতুন এক ভালবাসায়।উত্তপ্ত দুপুর একাকি সাক্ষী হয়ে রইলো সেই মধুর মুহুর্তের।

দুপুর গড়িয়ে রাত হল।বাড়িতে বিয়ের আনন্দ লেগেছে।জমেলা, ওয়াজেদ চৌধুরী আর ওয়াসেল চৌধুরীর মুখ ভারী।তারা এ বিয়েতে রাজি নয়।ওয়াসেল চৌধুরী গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে। কেন যেন আতংকিত সে।কিন্তু কেন তা বুঝা যাচ্ছে না।প্রভাত বাড়ির বাড়ির সবাই কে নিয়ে শপিং এ গিয়েছে। সাথে পূজাও গিয়েছিলো।বিয়ে উপলক্ষে পূজাকে অনেক গুলা ড্রেস কিনে দিয়েছে।বিয়ের সমস্ত শপিং শেষ।রাতে খাবার টেবিলে বসেছে সবাই।মেরি পুষ্পের প্লেটে মাছের বড় মাথা তুলে দিয়ে বলল, ” খাও মা, দু’দিন পরেতো শ্বশুর বাড়িতে চলে যাবে।”

ওয়াজেদ চৌধুরী বলল, ” এখনি আর মাছ খাইয়েও না ভাবি।যেখানে যাচ্ছে শুধু মাছ ই খেতে হবে।”
ওয়াসেল চৌধুরী বলল, “প্রভাত এখনো ভেবে দেখো।”
প্রভাত খেতে খেতে বলল,”হুম ভেবেছি।”
“কি ভেবেছো?”
“বউ নিয়ে হানিমুনে যাচ্ছি আমি।সেখানে গিয়ে কি কি করব সেসব ই ভাবছি।”
ওয়াসেল চৌধুরী কেশে উঠল।খাবার টেবিলের সবাই লজ্জা পেল।

ওয়াসেল চৌধুরী বলল, ” বাবার সাথে কি বলতে হয় জানোনা। নির্লজ্জ কোথাকার।”
“তুমিই বা কেমন বাপ।এতদিন বিয়ে করেছি একদিন ও তো বললে না ‘ হানিমুন করে আয়।”
“তুমি একাই তো পাঁচশ আর কি বলব।তুমি পুষ্পের ব্যাপারে ভাবো।”
“বেশী ভাবতে বললে,আজ রাতেই রাজন কে ডেকে বিয়ে টা পড়িয়ে দিবো।ভাল হবে সেটা?”
ওয়াসেল চৌধুরী মেরি কে বলল,

“তোমার ছেলেকে বুঝাও মেরি।”
“আপনি তো বুঝাচ্ছেন,মনে হচ্ছে সে কথা শুনবে।তাছাড়া পাত্র হিসাবে রাজন কে আমার পছন্দ।”
ওয়াজেদ চৌধুরী বলল, “প্রভাত তুমি ভেবে দেখো আরেকবার।”
প্রভাত ওয়াসেল চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“নিজে তো মাশাল্লাহ হিরার টুকরা জামাই পেয়েছেন চাচা।এখন ভাতিজির জন্য কি তামার টুকরা চাচ্ছেন?”
ওয়াজেদ চৌধুরী আর কোনো কথা বাড়াল না।

দুপুর থেকে পূর্ণতা লজ্জায় আর প্রভাতের দিকে তাকাচ্ছে না, কথা পর্যন্ত বলছে না।পূর্ণতার পায়ের উপর কারো পা পড়ল।পূর্ণতার পাশেই পূজা।পূর্ণতা পূজার দিকে তাকিয়ে বলল, “সমস্যা কি পূজা।বার বার পা দিয়ে সুরসুরি দিচ্ছিস কেন?”
পূজা যেন আকাশ থেকে পড়ল।সে সাথে সাথে টেবিলের নিচে মাথা দিল।দেখল প্রভাত ই পূর্ণতাকে সুরসুরি দিচ্ছে।পূজার চোখ মুখে হাসি। সে পূর্ণতার কানে কানে বলল,

“আমি না প্রভাত দা করছে এ -কাজ।”
পূর্ণ এবার প্রভাতের দিকে তাকাল।প্রভাত ডান চোখ টিপে দুষ্টুদের মত হাসছে।
ওয়াজেদ চৌধুরী খাওয়া শেষ করে উঠল।পূজা কে বলল,
“পূজা আমার জন্য একটা চা দিয়ে যাস ঘুমোতে যাবার আগে।”
পূজা বলল, “আচ্ছা জেঠু।”

প্রভাত পূজার দিকে উদ্দেশ্য করে বলল, “তুমি এ বাড়িতে উনার জন্য আসোনি।চাচীর জন্য এসেছো।চাচী ছাড়া আর কারো কাজে যাবানা।”
ওয়াজেদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৩

“চাচা আপনার প্রয়োজন হলে পারসোনাল কাজের মহিলা নিয়ে আসতে পারেন সমস্যা নেই।কিন্তু ভুলেও পূজাকে ডাকবেন না।ও দু’মাসের জন্য এ বাড়িতে এসছে।” প্রভাত খুব শক্তভাবে কথাটা বলল।
কিন্তু পূজার মাথায় এলোনা। এক কাপ চায়ের জন্য কেন এমন বলছে প্রভাত।সবাই যে যার ঘরে সুয়ে পড়লে পূজার মনে হল,
“এক কাপ চা দিলে কি এমন ক্ষতি হবে।যাই দিয়ে আসি।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৫