আকাশে তারার মেলা পর্ব ৩+৪

আকাশে তারার মেলা পর্ব ৩+৪
আসরিফা সুলতানা জেবা

❝যদি বলি আপনাতে মুগ্ধ হয়েছি আমি। আপনি কি বিশ্বাস করবেন আদ্র? আমি যদি বলি মন হারিয়েছি আপনি কি আমার মনটা খুঁজে দিবেন ড.আদ্র? মুগ্ধ হয়েছি আপনাতে, মন হারিয়েছে আপনার মনের খুঁজে। খুব মিস করেছি তোমাকে। পুরো দশ দিন দশ মাস মনে হয়েছে। প্রহর গুলো কাটানো সত্যিই কষ্ট সাধ্য ছিল আদ্র।❞

একটা মেয়ের শ্রুতিমধুর কন্ঠের কথা গুলো ভেসে এল মোবাইল থেকে। স্তব্ধ হয়ে বসে রইল তুলি চেয়ারে। অজানা এক কষ্টে অন্তর মুচড়ে উঠছে বার বার। ডাগর ডাগর চোখ দুটো তে টলটল করছে পানি। তুলির কিশোরী মন তবে কি আবারও ছেয়ে যাচ্ছে আঁধারে? আবারও ভয়েস মেসেজ টা চালু করল তুলি। কর্ণধার হওয়া প্রত্যেক টা শব্দ যেন খুবই বিষাক্ত! এতো মিষ্টি স্বর মেয়েটার তবুও যেন তুলির কাছে বিষাক্ত কিছু শব্দ যা তুলির হৃদপিণ্ডে আঘাত করছে অনবরত। তুলি নিজেও অনুভব করতে পারছে না কেন হচ্ছে তার এতো কষ্ট!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিছুক্ষণ আগেই আদ্রর সাথে হসপিটালে এসেছে তুলি। ইমারজেন্সি অপারেশন থাকায় তুলি কে কেবিনে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল আদ্র। যাওয়ার আগে নিজের মোবাইল টা দিয়ে গেল তুলির কাছে যেন তুলি বোরিং না ফিল করে। কড়া গলায় নিষেধ করে গেছে রুম এর বাহিরে না যাওয়ার। তুলি ও বাধ্য মেয়ের মতো অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে আদ্রর আদেশ। মোবাইলে আদ্রর একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল তুলির। সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে মগ্ন ছিল তখনই ভয়েস মেসেজ টা এল। নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে ভয়েস টা অন করতেই শুনতে পেল কোনো এক মেয়ের আদ্রর জন্য প্রকাশিত অনুরাগ।

খানিক সময় পর কেবিনে প্রবেশ করল আদ্র। চোখে মুখে তার খুশি উপচে পড়ছে। হয়তো অপারেশন টা সাকসেসফুল হয়েছে । চঞ্চল তুলি কে বিষন্ন অবস্থায় দেখে বুক টা কেঁপে উঠল আদ্রর। বড় বড় পা ফেলে তুলির কাছে এসে বসে পড়ল হাটু গেঁড়ে। নীরবতা ভঙ্গ করে প্রশ্ন করল,,,

—“কি হয়েছে তুলি?(শান্ত কন্ঠে)”
আদ্রর দিকে দৃষ্টি স্থির করে অসহায় স্বরে জবাব দিল,,,
–“কেন যে ভালো লাগছে না আদ্র ভাইয়া। আমায় বাসায় নিয়ে চলুন প্লিজ।”
ভ্রু কুঁচকাল আদ্র। সকাল বেলা ও কতো এক্সাইটেড ছিল হঠাৎ আবার কি হল মেয়েটার! কথাটা ভেবেই উঠে দাঁড়াল আদ্র। নিজের ফোন হাতে নিতেই চোখে পড়ল ভয়েস মেসেজ টা। থম মেরে রইল কিছুক্ষণ । শব্দগুলো কানে পৌঁছাতেই তুলির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। নিজের ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে তুলির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,,,

–চলো।
বাসায় এসে রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে তুলি। কিছুই ভালো লাগছে না তার। বসন্তের সৌন্দর্য ও আজ তার মনে ধরছে না। এক ফালি রোদ্দুর ও চায় না তুলির। তার তো এক রাশ ভালোবাসা ও এক মুঠো শান্তির প্রয়োজন। সতেরো বছরের একটা মেয়ের আর কি বা চাওয়া হতে পারে এর চেয়ে বেশি! দরজায় কখন থেকে কড়া নেড়ে যাচ্ছে কেউ। বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়াল তুলি। দরজা মেলতেই চোখে পড়ল আদ্রর রক্তিম চোখ। তুলি কিছুটা পিছিয়ে যেতেই ভিতরে ঢুকে দরজা টা লাগিয়ে দিল আদ্র। পিছন ফিরে কষিয়ে এক থাপ্পড় মারল তুলির গালে। গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে আদ্রর দিকে তাকাল তুলি। নিজের চোখের জল কিছুতেই আটকে রাখতে পারল না আর। ডুকরে কেঁদে উঠল শব্দ করে। হাত টা ধরে নিজের বুকে টেনে নিল আদ্র। আদ্রর বুকে গুটিসুটি মেরে রইল তুলি। চোখের পানি নাকের পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আদ্রর সাদা শার্ট টা। হিচকি তুলতে তুলতে বলে উঠল,,,

–“আপনি আমাকে মারলেন কেন আদ্র ভাইয়া?”
—” মারলাম কোথায়? আমি তো আদর করলাম। গায়ে বসন্তের হাওয়া লেগেছিল। হাতটাও বেশ চুলকাচ্ছিল। ভাবলাম তোমাকে একটু আদর করে দেখি। ষ্টুপিড একটা! দরজা লাগিয়ে রেখেছিলে কেন?কখন থেকে ডাকছিলাম কোনো খেয়াল আছে?”(ধমকে)
কথাটা বলেই তুলি কে ধাক্কা দিয়ে বুক থেকে সরিয়ে দিল আদ্র। ধাক্কায় কয়েক পা পিছিয়ে গেল তুলি। পড়ে যেতে নিলেও কোনোভাবে সামলে নিল নিজেকে। অবাক ও লজ্জা যেন তার চিরসঙ্গী হয়ে উঠল মুহুর্তেই। ভাবতেই সারা শরীর শিউরে উঠছে তুলির যে আদ্রর বাহুতে আবদ্ধ ছিল কয়েক মিনিট। হৃদপিণ্ড কাঁপতে লাগল প্রচন্ড গতিতে। এ কেমন শিহরণ! এ কেমন অনুভূতি! ছোট্ট তুলি যেন নিমিষেই লজ্জায় লুটিয়ে পড়বে পড়বে ভাব। তুলির দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকাল আদ্র। নিজের শার্টের বুকের কাছের অংশ টা দেখে নিয়ে রাগী কন্ঠে বলল,,,

— “দরজা বন্ধ করে আর কখনও পেত্নীর মতো বসে থাকলে ছাদ থেকে ফেলে দিব আমি। একটুখানি একটা মেয়ে অথচ ভাব এমন যেন রাণী এলিজাবেথ। এখনো নাক দিয়ে পানি পড়ে আর ওনি দরজা বন্ধ রেখে বুঝায় ওনার প্রাইভেসি দরকার। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসবে। আর হে চোখে যেন কাজল না দেখি। দেখলে ময়লা পানিতে চুবিয়ে মারব তোমাকে।”

কথাগুলো বলে একটু খানিক সময় ও দাঁড়াল না আদ্র। তুলি তো ভীষণ চমকিত আদ্রর কথা শুনে। কি বলে গেল এসব আদ্র? মারার হুমকি দিয়ে গেল? চোখে কাজল দিলে ওনার কি সমস্যা?এখন কি ওনার জন্য আমার সাজা ও নিষিদ্ধ? কথাগুলো ভেবেই মিনমিন স্বরে বলে উঠল,,,
–“আপনি ভীষণ খারাপ আদ্র ভাই। আপনি তো নির্দয়, পাষাণ একজন মানুষ। কিন্তু আমার মনটা যে তা মানতে নারাজ।”

নিচে এসে আমরিনের পাশে দাঁড়াল তুলি। আদ্র বসে বসে ফোন ঘাটছিল। কারো আসার শব্দ পেয়ে মুখ তুলে এক পলক চাইল তুলির দিকে। ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে চুল গুলো টেনে নিল পিছনে। তুলি ও আমরিন গাড়ির পিছন সিটে বসতেই আদ্র ও বসে পড়ল তুলির সাথে। সাথে সাথেই অজানা কিছু অনুভূতি গ্রাস করে নিল তুলিকে। আদ্রর স্পর্শে বজ্রপাতের ন্যায় ছলকে উঠল সারা শরীর। আমরিনের দিকে একটু চেপে বসতে নিলেই আদ্র গম্ভীর স্বরে আস্তে বলে উঠল,,

–” থাপ্পড় টা মনে হয় তেমন লাগে নি। নড়াচড়া করছো কেন?সমস্যা নেই আদ্রর গায়ের জোর এতো কম না। পরের বার সবটুকু শক্তি দিয়েই দিব।”
হঠাৎ মনে পড়ল তুলির সেদিন রাতের কথা। ভয়ে আঁতকে উঠল। এই লোকের গায়ে যেই জোর তুলি ঐদিন রাতে বুঝিস নি? আর থাপ্পড় টাও কম ছিল না। চুপচাপ হয়ে বসে থাক তুলি। –মনে মনে কথাগুলো বলে একদম চুপ হয়ে আদ্রর সাথে বসে রইল।
আকস্মিক নিজের হাতে কারো হাতের ছোঁয়া অনুভব করতেই শীতল স্রোত বয়ে গেল তুলির মেরুদণ্ড বরাবর। এটা কি তুলির মনের ভুল? নাকি কোনো হ্যালুসিনেশন? চোখ ফিরে আদ্রর দিকে চাইল। আদ্র বাহিরে তাকিয়ে। কিন্তু তার হাতের মুঠোয় তুলির এক হাত যা আমরিনের অগোচরেই মুঠো বন্দী করে নিয়েছে আদ্র। তুলি কে একটু কাছে টেনে কানের কাছে ধীর কন্ঠে বলে উঠল,,,

–” থাপ্পড়ের জন্য সরি ছোট্ট তুলি।”
আদ্রর গরম নিশ্বাসের উত্তাপ তুলির হৃদপিণ্ডে তীব্র আঘাত হানতে সক্ষম। অজানা এক ঘোরে ডুবে গেল তুলি। মনে শুরু হয়েছে ঝড়। আদ্রর হাতের মুঠোয় বন্দী হাতটাও কাঁপছে মৃদু মৃদু। তুলির লজ্জায় নুয়ে যাওয়া মুখ টা দেখে আলতো হাসল আদ্র। হাতটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে মাথা এলিয়ে দিল সিটে। ওড়না তে টান অনুভব করতেই তুলির দুরুদুরু বুকের কম্পন বেড়ে গেল দ্বিগুণ। বিস্ফোরিত নয়নে আমরিনের দিকে চাইতেই দেখল আমরিন কানে হেডফোন গুঁজে সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। মনে সংকোচ নিয়ে আদ্রর উপর চক্ষু স্থির করল তুলি। চমকে উঠল! ভীষণ চমকে উঠল! আদ্র তুলির ওড়না মুখের উপর দিয়ে সিটে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে। আজ বোধ হয় তুলির হৃদপিণ্ডে স্পন্দন থেমেই যাবে। কি হচ্ছে এসব তার মস্তিষ্ক কিছুতেই ধারণ করতে পারছে না। ওড়না দিয়ে রাখাতে আদ্রর মুখের ভঙ্গি ও বুঝা দায় হয়ে পড়েছে। দুচোখ বুঁজে তুলি ও মাথা এলিয়ে দিল সিটে। যা হবার হোক এ মুহুর্তে হৃৎস্পন্দনের স্বাভাবিক হওয়া খুবই প্রয়োজন।

কলেজে ভর্তি করে দিল আদ্র তুলি ও আমরিন কে। তুলি স্কুলে সাইন্স বিভাগে পড়লেও এখন গ্রুপ চেঞ্জ করতে চেয়েছিল কিন্তু আদ্রর কড়া নির্দেশ সাইন্স গ্রুপে পড়তে না চাইলে ভর্তি করাবে না আদ্র। বেচারি তুলি মুখ ফুটে সবার সামনে বলতেই পারল না বায়োলজি তে তার ভীষণ দুর্বলতা।
হাস্যকর হলেও ইহা তুলির কাছে ভয়ের অপর নাম। আদ্রর চোখ রাঙানো তে শেষমেশ ভর্তি হল তুলি। গেইটের কাছে আসতেই আমরিন বলে উঠল,,

–“ভাইয়া রিমি দের বাসায় যাব। আম্মুকে বলে এসেছি। তুলি কে ও সাথে নিয়ে যাব।”
–” তুলি আমার সাথে বাসায় যাবে। তুই গাড়ি নিয়ে চলে যা। বাসে চলে যাব আমি তুলি কে নিয়ে।”
চোখের আকৃতি বড় হয়ে এল আমরিনের। সে কি ঠিক শুনল? যেই আদ্র আহনাফ তার সাতাশ বছরের জীবনে কখনও বাসে চড়ে নি সে নাকি আজ বাসে চড়বে। অবাক স্বরে আমরিন বলল,,,
–” ভাইয়া তুমি তো বাসে চড়ো না। ”
–“তো কি হয়েছে? আজ চড়ব। তুই তো বিপরীত দিকে যাবি এতে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরতে ও দেরি হয়ে যাবে। তার চেয়ে ভালো হবে তুই গাড়ি নিয়ে চলে যা। আমি তুলি কে নিয়ে বাসে চলে যাব।”

তুলি বরাবরই নীরব দর্শক। কিন্তু তার মনে অজানা কোনো কারণে ভেজে উঠছে খুশির ঝংকার। আদ্রর সাথে বাসে যাবে ভাবতেই কেন যে অসংখ্য ভালো লাগা ছেয়ে গেল মন জুড়ে। আমরিন ভাইয়ের মুখের উপর আর কথা বলল না। তার ভালো করেই জানা আছে ভাই রেগে গেলে আর নিস্তার নাই।

বাসে উঠে চোখ কপালে উঠে গেল আদ্রর। একটা ও সিট খালি নেই। কোনোমতে তুলি কে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তুলি ঠিকমতো দাঁড়াতে ও পারছে না। বাসের ঝাঁকুনি তে বার বার পড়ে যাওয়ার অবস্থা। একে তো এমন পরিস্থিতি তার উপর কিছু ছেলে এসে দাঁড়াল কাছে। মাথা তুলে আদ্রর দিকে অসহায় চোখে চাইল তুলি। নিমিষেই কোমরে হাত রেখে নিজের একদম কাছে টেনে নিল আদ্র তুলিকে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বুকের মাঝে আঁকড়ে নিল আদ্র। কোমরে আদ্রর হাতের ছোঁয়া তুলির মন টা নাড়িয়ে দিল। খামচে মুঠোতে পুরে নিল আদ্রর নীল জ্যাকেটের কিছু অংশ। আদ্র মুচকি হেসে মনোযোগ দিল তার দেওয়া তুলা নামের মেয়েটা কে আগলে রাখতে।

ফুচকা স্টলের সামনে দাড়িয়ে আছে তুলি। উদ্দেশ্য একটাই ফুচকা খাওয়া। তখন বাস থেকে মাঝ রাস্তায় নেমে গেল আদ্র। তুলির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বলল,,,
–“চলো ফুচকা খেয়ে যাই তুলা।”
আদ্রর কথাটা শুনে মাথা দুলাল তুলি। বিস্মিত হয় নি সে। হবেই বা কেন? অনেক ছেলেরাই ফুচকা পছন্দ করে। স্কুলে ও তো দেখত মেয়েদের আগে ছেলে গুলোই লাইন লাগিয়ে রাখত স্কুল গেইটে ফুচকা খাওয়ার জন্য। প্রথমদিকে বিস্মিত না হলেও পরক্ষনে হতেই হল যখন আদ্র মুখে হাসি টেনে বলল,,

–“ছোট খাটো একটা প্রতিযোগিতা হলে কেমন হয় বলো তো? দেখি কে কতো প্লেট ফুচকা খেতে পারে!”
কথাটা শুনে তুলি বোধ হয় চাঁদ হাতে পেয়ে গেল। ফুচকা এক প্লেট খেয়ে কখনও তার মন ভরে না। প্রতিযোগিতার উছিলায় তো অনেক প্লেট খাওয়া যাবে। উফ সকাল বেলা কষ্ট অনুভূত হলেও এখন তুলির খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে।

হাতে ফুচকার প্লেট পেয়ে বেঞ্চে বসে পড়ল আদ্রর পাশে। গাড়ি নিয়ে এসেছে ড্রাইভার। বাসেই ফোন করে দিয়েছিল আদ্র। পুরো তিন প্লেট ফুচকা সাবাড় করে ফেলেছে তুলি ও আদ্র। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে শ্যামবর্ণা তুলির। আরেক প্লেট খাওয়া তুলির পক্ষে সম্ভব না। অথচ আদ্র খেয়েই যাচ্ছে। একটা ছেলে এতো ফুচকা কেমনে খায়? কথাটা ভেবেই উঠে দাঁড়াল তুলি। ভিতর জ্বলে যাচ্ছে তার। মাথা ঘুরাচ্ছে। চারদিকে তাকিয়ে কোনো উপায় না পেয়ে লাগাল দৌড় গাড়ির দিকে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল আদ্র। ডেকে উঠল তুলিকে। আদ্রর দিকে ফিরে বলে উঠল তুলি,,,

–“আমার ভীষণ পেয়েছে আদ্র।”
তাড়াতাড়ি বিল মিটিয়ে দৌড়ে তুলির পিছন পিছন গাড়িতে এসে বসল আদ্র। তুলি গাড়ি থাকা এক বোতল পানি গড়গড় করে খেয়ে নিল। চোখ বড় বড় করে অবাক স্বরে বলল আদ্র,,
–“তোমার না ভীষণ পেয়েছে তাহলে এভাবে পানি খাচ্ছো কেন? এভাবে পানি খেলে তো এখানেই কাজ শেষ। ”
আদ্রর কথার মানে বুঝতে একটু ও দেরি হল না তুলির। এখন বুঝতে পারছে তখন ঝালের ঠেলায় কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছে! এই মুহূর্তে পালাতে পারলে বেশ হতো। কিভাবে আদ্র কে মুখ দেখাবে সে? নিজের ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে লজ্জিত কন্ঠে বলে উঠল,,

–” আমার ভীষণ পায় নি আদ্র ভাইয়া। আমার তো ভীষণ ঝাল লেগেছে।”
তুলির কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল আদ্র। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,,,
–” ঝাল লাগলে যে কেউ দৌড়ায় তা আজ প্রথম দেখলাম। তবে কথাটা কিন্তু সেই ছিল তুলা।
আবারও হেসে দিল আদ্র। বিড়বিড় করে বলে উঠল তুলি,,
–“ছি!ছি! কি বিব্রতকর পরিস্থিতি!

এক গাদা বই দেখে জ্বর জ্বর ভাব চলে এসেছে তুলির। সোফায় বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ইনশিতা ও আমরিনের সাথে। নতুন বই দেখে আমরিন তো মহা খুশি। কিন্তু বেচারী তুলির অবস্থা বেহাল। তুলির দিক তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে ইনশিতা ও আমরিন। সায়েরা বেগম যে সেই কখন ওদের জন্য কফি পাঠিয়েছে সেই খেয়াল ও নেই কারো। কেউ মাথায় হাত দিয়ে রাখতে ব্যস্ত তো কেউ ব্যস্ত অবলোকন করতে।

একটু আগেই আদ্র বই গুলো এনেছে। ড্রইং রুমের টেবিলে সার্ভেন্ট কে বই গুলো রাখার ইশারা করে তুলির মুখের দিকে এক পলক চেয়ে চলে গেল উপরে। তুলি তো বই দেখেই অজ্ঞান অজ্ঞান অবস্থা আদ্রর দিকে তাকানোর ও আর সুযোগ পায় নি। সায়েরা বেগম পাশে এসে বসল। হাসি মুখে বলে উঠল,
–“বাহ্! আদ্র দেখছি তোদের বই ও নিয়ে এসেছে। ভালোই হলো। এখন থেকেই পড়া শুরু করে দে দু’জন। ভালো জিপিএ পেতে হবে কিন্তু। ”

সায়েরা বেগমের কথা হয়তো কারোই কর্ণগোচর হয় নি। সবার দিকে চেয়ে তার চোখ গেল তুলির উপর। নিজের দুই মেয়ে কে ধমকে উঠলেন তিনি।
–“কফি না খেয়ে ঠান্ডা করে ফেললি। আর বোকার মতো বসে আছিস কেন দু’জন? তোদের কে কি এখন সেরা বোকার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে যে এমন ভান ধরে বসে আছিস?”
মায়ের ধমকে ভরকে গেল ইনশিতা ও আমরিন। মুচকি হেসে বলল,,
–“তোমার বোনের মেয়ের মাথায় হাত কেন আম্মু? দেখো না ছোট্ট তুলি কি চিন্তিত! ”
ইনশিতার কথা শুনে ঠিক হয়ে বসল তুলি। সায়েরা বেগম তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,

–“কি হয়েছে মা? তুই কি কোনো কারণে চিন্তিত? ”
–” হুম খালা মণি। আমি বায়োলজির ব্যাপারে খুবই চিন্তিত। দেখো না তোমার ছেলে কতগুলো বই নিয়ে এসেছে। এতগুলোই কি পড়তে হবে? আর বায়োলজি দুইটা পার্ট!”
বিষন্ন স্বরে কথাটা বলে উঠল তুলি। তুলির কথা শুনে ইনশিতা ও আমরিন জোরে হেসে দিল। মানুষ ম্যাথ, ইংরেজি, ফিজিক্সে দুর্বল হয় কিন্তু তুলির শেষ পর্যন্ত বায়োলজি তে ভীতি। ইনশিতা হেসে বলে উঠল,,
–“সমস্যা নেই তুলি। ভাইয়া খুব ভালো বায়োলজি পড়ায়। তোকে বরং ভাইয়া পড়িয়ে দিবে।”
মেয়ের দিকে চাইলেন সায়েরা বেগম। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,,

–“আদ্র তো সারাদিন হসপিটালে থেকে রাতে খুব টায়ার্ড থাকে। তার চেয়ে বরং ভালো হবে আদ্রর ফ্রেন্ড সিয়াম কে আমি বলব তুলি কে পড়াতে। শুনেছি সিয়াম ও খুব ভালো পড়ায়।”
আমরিন ও বলে উঠল,,,
–“ঠিক বলেছ আম্মু। আমিও পড়ব সিয়াম ভাইয়ার কাছে। ”
–“ঠিক আছে। তোরা বস। আমি আবার কফি করে আনছি।”
তুলির বিষন্ন মন খুশিতে ভরে গিয়েছিল আদ্রর কাছে পড়তে পারবে শুনে। কিন্তু এখন আরো বেশি বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে তুলি কে অন্য কারো কাছে পড়তে হবে ভেবে। তুলি নিজেই ঠাওর করতে পারছে না আসলে তুলির মন কি চায়। আদ্র নামটা শুনলেও প্রশান্তি বয়ে যায় হৃদয় জুড়ে। উপর থেকে সব কথাই শুনল আদ্র। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চলে গেল রুমে।

আজ খাবার টেবিলে আদ্র কে দেখতে পায় নি তুলি। আদ্র নাকি খাবে না বলে জানিয়েছে। সন্ধ্যার পর একবার ও দেখা মিলে নি আদ্রর। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। তুলির চোখে এক ফোঁটা ও ঘুম নেই। আদ্র কে দেখতে না পেয়ে ছটফট করছে তার মন। অন্য এক কারণে ও মনে ছেয়ে আছে অমানিশা। আহান ফোন দিয়েছিল আজ অনেক বার। কিন্তু ফোন রিসিভ করে নি তুলি। কেন করবে? সে তো চায় না কোনো পিছুটান। আহানের প্রতি কৃতজ্ঞ ও তুলি কারণ বিয়েটা না ভাঙলে হয়তো কখনও এখানে আসা হতো না তুলির।

আর না কখনও আদ্র নামক মানুষটার সাথে দেখা হতো। তবে আহান তো একবার হলেও ঝুমুর কথা বলতে পারত তুলিকে। এই একটা গোপন সত্যই তুলি কে কষ্ট দিচ্ছে। বার বার বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে ছোট্ট মন টা। বেলকনিতে এসে দাঁড়াল তুলি। হঠাৎ চোখ গেল পাশের বেলকনিতে। খুবই কাছাকাছি বেলকনি টা। অন্ধকারে কারো বসে থাকার উপস্থিতি বুঝা যাচ্ছে। হাতে জলন্ত সিগারেট। ভ্রু কুঁচকে তাকাল তুলি। কিছু টা কাছে যেতেই নিজের বারান্দার ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় মানুষ টা কে চিনতে একটু হয় ভুল হয় নি তুলির। গলা শুকিয়ে গেল তুলির। শুকনো কন্ঠে আলতো স্বরে ডেকে উঠল,,

–“আদ্র”
ডেকে নিজের মুখে নিজেই চেপে ধরল খুব জোরে। কি হচ্ছে তার এসব? ইদানীং সে আদ্র কে নাম ধরেই সম্বোধন করছে। না চাইতে ও মুখ দিয়ে শুধু এটাই চলে আসছে। তুলির মিষ্টি স্বর কানে এসে বাজতেই হাতের সিগারেট টা ফেলে দিল আদ্র। উঠে দাড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইল তুলির দিকে। হুট করেই লাফ দিয়ে উপস্থিত হল তুলির একদম কাছে। কেঁপে উঠল তুলি। বারান্দা দুটো প্রায় কাছাকাছি ও খোলামেলা। যে কেউ অনাসয়ে আসা যাওয়া করতে পারবে একটি থেকে অপরটি তে।

নিজের এতো কাছে আদ্রর উপস্থিতি যেন তুলির শরীরে অজস্র শিহরণ জাগিয়ে তুলল। আস্তে আস্তে এক কদম এক কদম করে পিছিয়ে দেয়ালে গিয়ে ঠেকল তুলি। সম্মোহিত চাহনি নিয়ে আদ্র দেয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে পড়ল তুলির দিকে। হাতুড়ি পিটা শব্দ শুরু হল তুলির হৃদপিণ্ডে। সেই সাথে হৃদয়ে শীতল স্রোত অনুভব করল আদ্র। তুলির দিকে ঝুঁকে চেয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। সম্মুখে থাকা মেয়েটার হৃৎস্পন্দন স্পষ্ট তার কানে এসে বাজছে। শ্যামবতী কন্যার মুখশ্রী তে চোখ বুলাল আদ্র। কম্পনরত ঠোঁটের উপর গিয়ে নজর ঠেকল তার। বুকে শুরু হল ভয়ানক ঝড়। সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিল সে।

“কোনো ক্রমেই ভুল করা যাবে না আদ্র। মেয়েটা এখনো ছোট। তার অবুঝ মনের সুযোগ তুই নিতে পারিস না। কন্ট্রোল কর নিজেকে৷ ”
মনে মনে কথাটা বলেই তুলির উপর থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল আদ্র। তুলি এখনও দেয়ালের সাথে মিশে আছে। বুকে ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে অনবরত। চোখ দুটো বুঁজে নিয়েছে সেই কখন। তুলির কপালে আসা চুলগুলো কানের পিছনে পরম যত্নে গুঁজে দিল আদ্র। অস্পষ্ট, ঘোর লাগা গলায় বলে উঠল,,

—“সবসময় আদ্র ডাকটাই যেন তোমার মুখে থাকে তুলি। আদ্র ব্যতীত যেন আর কোনো ডাকই এতো মধুর ভাবে না আসে তোমার কন্ঠ থেকে। নয়তো তোমায় বোবা হয়ে থাকতে হবে চিরকাল। ”
চোখ মেলে আদ্রর উজ্জ্বল ফর্সা চেহারায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তুলি। ডাগরডাগর আঁখি দু’টো তে বিরাজ করছে মুগ্ধতা। আদ্রর প্রতি মুগ্ধতা! আদ্রর চোখ দুটো তে অদ্ভুত এক নেশা। প্রচন্ড বেগে বুকটা ধুক করে উঠল তুলির। তড়িঘড়ি করে মুখ ফিরিয়ে নিতেই আলতো হেসে বলে উঠল আদ্র,,

—” মানুষ কে মারাত্মক নেশায় ডুবিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে চলবে? শাস্তি তো পেতেই হবে তুলা!”
চমকাল তুলি। কিছুই বুঝতে পারল না। আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল,,
–“কেমন শাস্তি?”
জবাব দিল না আদ্র। তুলির ডান হাত টা টেনে কামড় বসিয়ে দিল আঙুলে। ব্যাথায় চিল্লাতে নিলে সেকেন্ডেই তুলির মুখে হাত চেপে ধরল আদ্র। তুলির চোখের চাহনিতে নিজের চোখ জোড়া রেখে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠল,,

–“আর কখনও ওড়না ছাড়া যেন বেলকনিতে না দেখি। আশা করি কামড় টা তোমায় স্মরণ করিয়ে দিবে।”
কথাটা শেষ করেই আদ্র চোখের পলকে তুলি কে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল নিজের বেলকনিতে। থমকে রইল তুলি। ওড়না রুমে রয়ে গেছে খেয়ালই ছিল না তার। হুঁশ আসতেই দৌড়ে গিয়ে ওড়না নিয়ে এল রুম থেকে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রর দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল,,,

–“সিগারেট খেলে ফুসফুসের ক্ষতি হয়, ক্যান্সার হয় আপনি কি ডাক্তার হয়ে এটা জানেন না ডাক্তার সাহেব?”
—” ক্যান্সার হলে তো মরে যেতাম। কিন্তু আমি তো এর চেয়ে ও মারাত্মক ব্যাধি তে আক্রান্ত যা ঘুমোতে ও দেয় না শান্তির নিঃশ্বাস ও ফেলতে দেয় না।”

ধীর স্বরে কথা গুলো বলে রুমের দিকে পা বাড়াল আদ্র। কন্ঠে কেমন যেন বিষাদ মিশে ছিল। তুলি দু-চোখ ছোট করে তাকাল।
” আদ্রর কথাগুলোর মাঝে এতো রহস্য কেন? ওনি কি সহজ ভাষায় কথা বলতে পারেন না?আমার মস্তিষ্ক তো ওনার কথা ধারণ করতে পারে না। এখনই মিষ্টি স্বর তো এখনই আবার গম্ভীরতা। হঠাৎ দূরে যায় আবার হঠাৎ কাছে এসে আমার হৃদপিণ্ডের চলাচল প্রায় থামিয়ে দেয়। অদ্ভুত আপনি আদ্র! ”
আদ্রর যাওয়ার পানে চেয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল তুলি।

কলেজে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে প্রায় পনেরো দিনের মতো হয়েছে। এই পনেরো দিনে তুলি ও আমরিন নতুন নতুন বান্ধবী ও জুটিয়ে ফেলেছে। তুলি ও আমরিনের মাঝে সময়ের স্রোতে গড়ে উঠেছে গভীর বন্ধুত্ব। গত তিনদিন ধরে আমরিন কে ওদের ক্লাসের একটা ছেলে ফেইসবুকে প্রেম নিবেদন করছে। ছেলেটা দেখতে খারাপ না। কিন্তু তুলির কথা হলো ছেলেদের ফাঁদে কিছুতেই পা দেওয়া যাবে না। আজকাল তলে তলে একাধিক প্রেম করে আবার সুন্দরী মেয়ে দেখলেই প্রেমের প্রস্তাব দিতে শুরু করে। ছেলেটা ক্লাসে ঢুকতেই আমরিন ইশারা করে দেখাল তুলি কে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হাসল তুলি। আমরিনের দিকে চেয়ে বলল,,,

–“তাহলে পরীক্ষা করে দেখা যাক?”
আমরিন ও দুষ্ট হেসে বলল,,
–“অবশ্যই। ”
‘আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে। তোমার কাছে আমাকে কেমন লাগে? যদি ভালো লাগে তবে কলেজ ছুটির পর কলেজের পিছনের গোলাপ গাছ থেকে একটা কালো গোলাপ এনে আমায় দিও। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।’

একটা কাগজে সুন্দর করে বাক্য গুলো লিখে কাগজ টা মুড়ে ছুঁড়ে মারল ছেলেটার দিকে। একটু পিছনের দিকে বসায় কারোই চোখে পড়ে নি তুলির এই কান্ড টা। কাগজ টা গিয়ে ছেলেটার গায়ে পড়ল। ফিরে তাকাতেই চোখ পিটপিট করে চাইল তুলি। সাথে সাথেই ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হেসে কাগজ টা পকেটে ঢুকিয়ে নিল। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আমরিন।তুলির হাত চেপে ধরতেই তুলি গলা ঝেড়ে বলে উঠল,,
–দেখলি তো কেমন ছেলে?তুই যে পাশে আছিস তাও তো তোয়াক্কা করে নি। তার জন্যই পরীক্ষা টা করা। শালা, অসভ্য পোলা। হেতেরে তো আমি ছাড়মু না। একবার ছুটি হোক কলেজ টা। জুতো পিটা করমু ফাজিল পোলা রে।

তুলির কাধে মাথা হেলিয়ে আমরিন ঠোঁট ভেঙে বলল,,
–ঠিক বলেছিস দোস্ত। অসভ্য পোলার প্রেমে যদি আমি ডুবে যেতাম তাহলে আমার সর্বনাশ হয়ে যেত। ভয়ংকর সর্বনাশ। এই পোলারে তুই আর আমি মিলে আজকে উচিত শিক্ষা দিমু।

গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে আদ্র। কালো শার্ট, চোখে সানগ্লাস। অস্থির এক লুক নিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে ফেসবুক স্ক্রল করতে মগ্ন। কিছু মেয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে। চোখ মোবাইলে নিবদ্ধ থাকলেও কারো কারো নজর যে নিজের উপর তা ঠিকি অনুধাবন করতে সক্ষম আদ্র। মুচকি হেসে মোবাইল টা পকেটে ঢুকিয়ে নিল। আমরিন ও তুলির অপেক্ষায় ছিল এতোক্ষণ। এদিক দিয়েই বাসায় যাবে তাই ভাবছিল তুলি ও আমরিন কে সাথে নিয়ে যাবে। তিন তিনটা দিন তুলি কে দেখে নি তার আঁখি দুটো। সেমিনার থেকে ফিরে সোজা কলেজের সামনেই হাজির। তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো সামনের দিকে তাক করতেই চড়চড় করে রক্ত উঠে গেল আদ্রর মাথায়। চোখ দুটো তীব্র লাল হয়ে এল। হাত মুঠ করে নিজের চুল গুলো টেনে গাড়িতে খুব জোরে ঘুষি বসিয়ে দিল। এমন কান্ড দেখে ঘাবড়ে গেল মেয়েগুলো। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে সরে গেল সেখান থেকে।

ক্লাসের সেই ছেলেটা সত্যি সত্যিই গোলাপ নিয়ে হাজির আমরিন ও তুলির সামনে। গোলাপ টা তুলির দিকে বাড়িয়ে রেখেছে পাঁচ মিনিট যাবত। মুখ চেপে হাসছে তুলি। চোখ কটমট করে রাগী কন্ঠে বলে উঠল আমরিন,,
–এই ছেলে তোমার লজ্জা করে না? আমাকে প্রপোজ করে আবার আমার বেস্টি কেই ফুল দিচ্ছ।
একটু হাসল ছেলেটা। এক হাত দিয়ে মাথা চুলকে বলল,,

–লজ্জা কিসের? তুমি আর তোমার বেস্টি তো একই। একজন আমার গার্লফ্রেন্ড হলেই হয়।
ধপ করে জ্বলে উঠল আমরিন। পায়ের জুতো খুলে ছেলেটা কে মারতে নিলে তুলি বাঁধা দিয়ে বলে উঠল,,,
–দোস্ত আমি কখনও কালো গোলাপ দেখি নি রে। বেচারা কতো কষ্ট করে চুরি করে গোলাপ টা এনেছে। এই ছেলে গোলাপ দিয়ে দাও আমায়। তারপর খাও আমরিনের জুতোপেটা।হেব্বি মজা কিন্তু! এই আমরিন কষিয়ে দিস।

আকাশে তারার মেলা পর্ব ১+২

ছু মেরে গোলাপ টা হাতে নিতে না নিতেই তুলি ছিটকে পড়ল মাটিতে। তুলি কে পড়তে দেখে আতঙ্কিত নয়নে চাইল আমরিন ও ছেলেটা। মাথা তুলে ভাইয়ের লাল বর্ণের চোখ দেখে পিলে চমকে উঠল আমরিনের। থরথর করে কাঁপতে লাগল সে। জুতাও হাত থেকে পড়ে গেছে। ছেলেটা সেই কখনই প্রগাঢ়পাড়। তুলির দিকে দৃষ্টি রেখেই আদ্র আমরিনের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,,,
–গাড়িতে গিয়ে বস।

অসহায় চোখে তুলির দিকে চেয়ে ভোঁ দৌড় মারল আমরিন। বিস্ময়ে অভিভূত তুলি। চোখে অজস্র ভয়। এক হাঁটু গেড়ে তুলির কাছে বসল আদ্র। হাত বাড়িয়ে তুলির লাল হয়ে যাওয়া গাল টায় স্পর্শ করল। জ্বলে উঠল গাল টা। চোখ ছাপিয়ে নেমে এল জল। দাঁড়িয়ে পড়ল আদ্র। রাগ টা বজায় রেখে বলে উঠল,,,
–উঠে দাঁড়া।
তুলি কোনো রেসপন্স করল না। থাপ্পড় টা এতোটাই জোরে লেগেছে যে কানটা ও ঝিম ধরে আছে। তুলির সাহস দেখে মেজাজ প্রচন্ড গরম হয়ে গেল আদ্রর।

–আমি কি বলেছি তোর কানে ঢুকে নাই? সাহস বেড়ে গেছে তাই না? হাত পা কেটে ফেলব তোর। উঠে দাঁড়া বলছি,,,,,!
আদ্রর উচ্চস্বরে ধমকে কেঁপে উঠল তুলি। বহু কষ্টে উঠে দাঁড়াতেই হাতের কনুই ধরে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে এল আদ্র।চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল,,,
–আজ তোকে কালো গোলাপ পিষে খাওয়াবো। কালো গোলাপের শখ আজীবনের জন্য মিটিয়ে দিব।

আকাশে তারার মেলা পর্ব ৫+৬

1 COMMENT

  1. Faltu chele.. educated hoye o gunda der moto behave kore..eta kemon nayok…chi… Ar nayika ta emon durbol keno…nayok er lathi guta khai tarporo takei bhalobashe.. disgusting… pathetic love story…

Comments are closed.