আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ১৯ || Maishara Jahan

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ১৯
Maishara Jahan

বাট ফাইলটা রাখতে গিয়ে যা চোখে পড়লো তা বিশ্বাস করার মতো না, পুরো ফাইলটা পড়ে আমার মাথা ঝিম ঝিম করছে। ফাইলটা দেখে মনে হচ্ছে অয়ন আমার সাথে কোনো গেইম খেলছে, “কে বাঁচে কে মরে” এমন টাইপের গেইম। ফাইলটা নিয়ে আমি বিছানায় বসে পড়ি, চোখের পানি কোনো ভাবেই বাঁধা মানছে না।

আমি বসে বসে কান্না করছি, হঠাৎ আলোর কণ্ঠের আওয়াজ পেয়ে চোখের পানি মুছে ফেলি,হয়তো আমি যেমন ভাবছি ওমন নাও হতে পারে। আমি আমার চোখ মুছে সায়ন এর রুমে গেলাম, আলো সায়নকে চেক করছে, আমি সেখানে গিয়ে আলোকে জিজ্ঞেস করলাম ,,, কি হয়েছে আলো সায়ন ঠিক আছে তো।
আলো,,,,,হুমম ঠিক আছে, মেডিসিন গুলো একটু স্ট্রং তো তাই একটু প্রবলেম হচ্ছে।
আমার একটু অদ্ভুত লাগলো, মনে মনে ভাবতে লাগলাম এমন কি স্ট্রং মেডিসিন যেটা খেলে রাগ হয়।

আলো কেমন অদ্ভুত করছে,হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না আমার কারনে হয়তো, তাই আমি আলোর জন্য কফি আনার বাহানায় বাহিরে গেলাম আর দরজার আড়াল থেকে শুনার চেষ্টা করছি কি বলে। কারন আলোকে কেমন আমার সন্দেহ হচ্ছে।
আলো চেয়ার থেকে উঠে সায়নের সামনে বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করে,,,,সায়ন তোমার কেমন ফিল হচ্ছে একটু আমাকে বলবে।
সায়ন একটু উঠে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে অর্ধেক শুয়া অবস্থায় বলে,,,,,, জানি না হঠাৎ করেই আমার অনেক রাগ উঠছে, আবার প্রয়োজনের তুলোনায় খুব বেশি ঘুম ঘুম পাচ্ছে, মেমি তুমি চলে গেলে আমি হয়তো ঘুমিয়ে যাবো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

,,,,,আর কিছু মনে হচ্ছে।
,,,,না, জানি না কেমন সব উল্টো পাল্টা লাগছে।
,,,,,, তুমি চিন্তা করো না, এটা কোনো প্রবলেম না, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমাকে একটু বেশি বেশি রেস্ট করতে হবে। আর যেটা তোমার ভালো লাগে সেটা করতে হবে। যেমন গিটার বাঝানো, গান গাওয়া, এগুলো করবে দেখবে মন ভালো থাকবে। মন ভালো থাকলে সব কিছু এমনি ভালো থাকবে।
,,,হুমম।
আমি বাহিরে থেকে এসব শুনে চলে যায়,এটা তেমন কিছু সন্দেহর ব্যাপার না এটা ভেবে। গিয়ে আলোর জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসি। আলোকে কফি দিয়।
আলো,,,, থ্যাঙ্ক ইউ মেম।

আমি হেঁসে বলি,,,আমাকে মেম কেনো বলছো,অন্য কিছু বললে ভালো লাগবে।
আলো কিছু একটা চিন্তা করে বললো,, সায়ন তুমি মেমকে কি বলে ডাকো।
সায়ন ব্রু কুঁচকিয়ে বললো,,,আমার ভাবী হয় তো ভাবীই ডাকবো।
আলো হেঁসে বলে,, ওহহ তাহলে আমিও ভাবী ডাকবো, কোনো প্রবলেম নেয় তো ভাবী।
,,,না কোনো প্রবলেম নেয়, আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি।

আমি সেখান থেকে চলে যায়। আলো সায়নকে ঔষধ খায়িয়ে সেখান থেকে চলে যায়। আমি বারান্দায় বসে আছি, মাথায় শুধু দুটো কথায় চলছে। একটু পরে একজনের হাঁটার আওয়াজ শুনেই আমি আমি বুঝতে পারি সেটা কে।
আমার নাম ধরে ডাকছে, আমি তার সামনে যায়, গিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। অয়ন আমাকে দেখে মুচকি হাসে, কিন্তু আমার কোনো চোখে পানি থেকে অয়নের হাসি গায়েব হয়ে যায়,আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে।
আমি অয়নের হাত ছুটিয়ে অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বলি,,,,ভালোবাসো আমাকে তাই না।
অয়ন মুচকি হেঁসে বলে,,, কেনো কোনো সন্দেহ আছে নাকি।

,,,,,,থাকার কথা নয়।
,,,,মানে।
,,,,মানে যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে মারার চেষ্টা কেনো করবে।
অয়ন অভাক হয়ে বললো,,,,, মানেহহ,,আমি তোমাকে মারার চেষ্টা করবো পাগল হয়ে গেছো নাকি। কেও নিজেকে খুন করার চেষ্টা কেনো করবে।
,,,,,ঠিক আছে তাহলে প্রমান দিচ্ছি, দাঁড়ান।
আমি টেবিল থেকে ফাইলটা নিয়ে অয়নের সামনে ধরি, অয়ন ফাইলটা নিয়ে পড়ে অভাক হয়ে যায়। ফাইলে, যেসব লোকেরা আমার মারার চেষ্টা করেছে তাদের ছবি, নাম্বার, কন্ট্রেকের পেপার সব কিছু ছিলো। অয়ন এসব কিছু ভালো করে দেখে রাগে আমার দু বাহু ধরে বলে,,
কোথায় পেয়েছো এটা, যার কাছ থেকে এটা পাওয়া গেছে মানে সেই এটা করেছে৷ তুমি তার নামটা শুধু বলো।
আমি থিম গলায় বললাম,,,,,, অয়ন খান।
অয়ন আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,,,, মানে।

,,,, মানে ফাইলটা আমি আপনার রুমে আপনার আলমারিতে পেয়েছি, তাহলে কি দাঁড়ায় এতে।
অয়ন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,, তোমার কি মনে হয় এসব আমি করেছি।
আমি নিশ্চুপ হয়ে নিচের দিকে নিরভে চোখের পানি ফেলছি।
অয়ন তুচ্ছ হাসি দিয়ে ফাইটা নিচে রাগে ফেলে বলে,,,তোমার মনে হয় তোমাকে মারার প্লেনটা আমি করেছি ওয়াও,, এতো দিনে আমাকে এক ফোঁটাও চিনতে পারলে না। আমার এতো কাছে গিয়েও আমার ভালোবাসাটা চিনতে পারলে না। তুমি এটা ভাবলেও কি করে।
আমি অয়নের দিকে অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে রাগে চিৎকার বলি,,,,, যেটা দেখবো ঐটাই তো বিশ্বাস করবো। আর আপনাকে সন্দেহ করার অনেক কারন আছে আমার কাছে। আরে আমি তো এখনো আমাদের বিয়ের সত্যিটাই জানতে পারলাম না।

অয়ন আবারো তুচ্ছ হাসি দিয়ে চোখে অশ্রু নিয়ে বলে,,, তুমি আমার তৃষ্ণা হতেই পারো না, আমি ভুল মানুষকে ঠিক ভেবে বিয়ে করে ফেলেছি হয়তো। তুমি আমার নীর হতেই পারো না, কারন আমার নীর আমাকে চিনে, সে নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস আমাকে করে। তুমি আমার নীর না, তবে এটা বলতে পারি কেও আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আর যে এটা করছে তাকে আমি ছাড়বো না।
বলে অয়ন রাগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়,আমি অয়নকে আটকাতে গিয়েও পারিনি। চুপচাপ বিছানায় বসে ভাবতে থাকি,,অয়নকে দেখে মনে তো হচ্ছে না যে এমন কিছু করেছে আর তাছাড়া অয়নের চোখে আমি আমার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি। হতে পারে কেও অয়নকে ফাশাচ্ছে। কিন্তু কে এমন করবে,আর আমাদের রুমেই বা কে আসবে। অয়নকে হার্ট করে ফেলেছি।
অয়ন বাহিরে বেরিয়ে যায় রাগে, যাওয়ার সময় প্রহরের সাথে ধাক্কা খায় কিন্তু তাও থামে না, সোজা গাড়ি নিয়ে চলে যায়, প্রহর ডাকে তাও শুনে না। প্রহর তাড়াতাড়ি মারুর কাছে যায়।

প্রহর এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে,,,,, কি হয়েছে মারু, অয়ন এমন রাগে চলে গেলো।
আমি প্রহরকে সব কিছু বলি, প্রহর ফাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,, এখন কি করবো।
আমার কথায় প্রহরের হুঁশ আসে, সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,অয়ন তোমাকে মারার চেষ্টা করতেই পারে না, তাহলে এটা অয়নকে ফাশানোর জন্য কে করলো। কিন্তু ফাইলটা দেখে তো মনে হচ্ছে অয়নের। তোমার ওকে সন্দেহ করা ঠিক হয়নি। আমি অয়নকে কল করছি।
আমি প্রহরকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,,, অয়নকে আমি কল করছি, আপনি রুমে যান।
,,,, ওকে আমি ফাইলটা নিয়ে যাচ্ছি। খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। তুমি অয়নকে কল করো।
,,,হুমম।
প্রহর চলে যায়, আমি অয়নকে কল করি কিন্তু ধরছে না, তাই বার বার করি। একটু পরে দেখি ফোন অফ শুনাচ্ছে।আমার অনেক ভয় লাগছে।

অনেক ক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি, কিন্তু অয়ন আসছে না, এখন তো আমার ভয়টা বেড়ে গেছে। প্রহরকে কি বলবো। আমি আর না ভেবে রুম থেকে বের হয়, গিটারের আওয়াজ শুনে সায়ন এর রুমে যায়, সায়ন কেমন পাগলের মতো গিটার বাজাচ্ছে।
আমি একটু ভয়ে সায়ন বলে ডাক দিয়, সায়ন আমার দিকে তাকিয়ে রাগী একটা লুক দেয়, আমি বুঝতে না পেরে সায়নকে জিজ্ঞেস করি,,,, কি হয়েছে সায়ন তুমি ঠিক আছো তো।

আমার কথা শুনে সায়ন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বললো,,,, ভাবী জানি না আমার কি হচ্ছে, আমার প্রচুর রাগ হচ্ছে, পিল্জ এখান থেকে চলে যান,না হলে আপনাকে আঘাত করতে পারি।
আমি মুচকি হেঁসে বলি,,,,আমি জানি তুমি আমাকে আঘাত করতে পারবে না, তুমি ঐদিন বলেছিলে না, ভাবী নাকি মায়ের মতো, তো আমাকে তুমি আঘাত করতেই পারো না।
সায়ন চোখের কোনায় পানি নিয়ে বলে,,,ভাবী আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না, প্রচুর রাগ হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে, সব ইমোশন এক সাথে কাজ করছে, জানি না এমন কেনো হচ্ছে।

,,,,তুমি ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
,,,হুমম
,,,কোনো হুমম না, আমার সামনে ঔষধ গুলো খাও।
সায়ন ঔষধ গুলো বের করে খেতে থাকে, দেখে অভাক হলাম, জাস্ট কেটে যাওয়ার জন্য এতো ঔষধ। অয়নের সাথে কথা বলতে হবে। ঔষধ খেতেই সায়ন বলে তার নাকি খুব ঘুম পাচ্ছে, এতো তাড়াতাড়ি ঘুম এসে গেছে,নিশ্চয়ই অনেক স্ট্রং মেডিসিন।
আমি দরজা বন্ধ করে, প্রহরের রুমে যেতে নিয়, তখনি গাড়ি আসার আওয়াজ শুনে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলি, দরজা খুলে দেখি অয়ন দাঁড়িয়ে আছে, আমি অয়নকে দেখে খুশি হলেও পরে ওর মাথার দিকে কিছুটা কাটা দেখে তাড়াতাড়ি গিয়ে অয়নকে ধরে বলি,,,,কি হয়েছে অয়ন তোমার মাথা কাটলো কিভাবে।
অয়ন আমার হাত সরিয়ে বলে,,,কিছু হয়নি।

আমি গাড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝেছি যে নিশ্চয়ই এক্সিডেন্ট করেছে। অয়ন উপরে সিরি দিয়ে উঠে রুমে যায়, আমিও অয়নের পিছনে পিছনে যায়। আবার আমার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হতে নেয়, আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলি,,,কোথায় যাচ্ছেন আবার।
,,,প্রহরের রুমে।
,,,,কেনো।
,,,,একটা খুনির সাথে শুলে তোমার ভয়ে ঘুম আসবে না তাই।
আমি মাথা নিচু করে বলি,,,,সরি অয়ন,, অনেক রাগ হয়েছে আমার কথা শুনে তাই না।
,,,রাগ না কষ্ট হচ্ছে তোমার কথা শুনে নীর।
,,,,সরি

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ১৮

অয়ন অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে, আমি অয়নের হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে ফাস্ট বক্স নিয়ে আসি। নিয়ে এসে অয়নের সামনে বসিয়ে কপালে মেডিসিন লাগাতে যায় অয়ন তার মুখ সরিয়ে ফেলে, আমি একটা নিশ্বাস ফেলে অয়নের গাল চেপে ধরে আমার সামনে এনে মেডিসিন লাগাতে থাকি, অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলছি না, মাথায় একটা ওয়ান টাইম লাগিয়ে দিয়।
তারপর অয়নের শরীর ভালো করে চেক করতে করতে বলি,,,,,, অন্য কোনো জায়গায় লাগেনি তো।
,,,আমার লাগলেই কি না লাগলেই কি, আমি তো খুনি কার কি এসে যায়।
,,,,, আমার এসে যায়,কি করবো ভালোবেসে ফেলেছি যে।
অয়ন আমার দিকে অভাক হয়ে তাকিয়ে বলে,,,কি বলেছো, আবার বলো তো।

,,,কি বলবো ভালোবেসে ফেলেছি।
অয়ন চোখে মুখে খুশির ঝলক নিয়ে বলে,,,ভালোবাসো আমাকে।
,,,,,, ভালো না বাসলে, আপনার এতো কাছে বার বার যেতাম না, সব কথা বলতে হয় নাকি।
অয়ন আমাকে জরিয়ে ধরতে নিয়ে আবার সরে যায়, আমি মুখটা একটু কালো করে অয়নে জরিয়ে ধরে বলি,,,আম সরি তো,,,, আসলে আমার মাথায় এতো কিছু ঘুরছিলো যে, হঠাৎ এটা সামনে আসায় আমি বেশি কিছু ভেবে দেখিনি, যা মাথায় এসেছি বলে ফেলেছি, মন দিয়ে ভাবিনি। সরি সরি।

,,,,,হুম হুম হয়েছে। যাক এটার কারনে ভালোবাসিবএটা তো বলেছো।
অয়ন ও আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে, আমি ভাবছি এখন কি আমি আমার অতীতের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবো, না না এটা সঠিক সময় না জিজ্ঞেস করার।
সকালে,,,,,,,
সায়নের চিৎকার শুনে আমরা সবাই নিচে দৌড়ে যায়।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২০