আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২১ || Maishara Jahan

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২১
Maishara Jahan

মারুর হাত পা বাঁধা অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। একটা পুরোনো বাড়িতে। মুখে টেপ লাগানো। মারু চোখ খুলে, রুমে অন্ধকার জালানা দিয়ে হালকা আলো আসছে। কোন জায়গা এটা কিছুই বুঝতে পারছে না। হাত পা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
আমি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি, সামনে কেও একজন এসে আমার সামনে দাঁড়ায়, আমি কোনো ভাবে উপরের দিকে তাকায়। সামনের জনকে দেখে আমি খুশি হয়ে যায়। হয়তো সে আমাকে বাঁচাতে এসেছে এটা ভেবে। কারন আমার সামনে সায়ন দাঁড়িয়ে আছে।
সায়ন আমাকে উঠিয়ে একটা চেয়ারে বসায়। বসিয়ে আমার চুল গুলো ঠিক করতে করতে কেমন যেনো একটা পাগলের মতো করে বলছে,,,, স স সরি ভাবী, সরি।

ক্ষনিকের মধ্যে রেগে গিয়ে বলে,,,,আমার লোক সব গুলো একটা ইডিয়ট। আমার ভাবীকে নিচে ফেলে রেখেছে গাধা। স সরি সরি।
আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। মানে কি এসবের। আমি ইশারা দিয়ে আর মুখ দিয়ে উম্ম উম্ম করে বলি আমার মুখের টেপটা খুলতে।
সায়ন,,,,,কি মুখের টেপ খুলে দিবো, এখনি দিচ্ছি।
বলে আস্তে আস্তে মুখের টেপ খুলে দেয়, আমি একটু জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকি। সায়ন কেমন মায়া ভরা কন্ঠে বলে,,,,, খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি। এখন তো আমার রাগ হচ্ছে, যে আপনাকে এভাবে মুখ বেঁধে ফেলে রেখেছে তাকে আমি মেরে ফেলবো প্রমিজ।
আমি একটু দম নিয়ে বললাম,,,,,, এসব কি হচ্ছে সায়ন, আমার হাতের বাঁধন তাড়াতাড়ি খুলো, এখান থেকে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। যানি না কারা আমাকে কিটনাপ করেছে৷

সায়ন,,,,সরি ভাবী আপনি তো এখান থেকে যেতে পারবেন না, কারন কিটনাপটা আমিই করেছি।
আমি অভাক হয়ে বললাম,,,,,,কিহহ মানে,, তুমি আমাকে কল করে ডেকেছো কারন তুমি নাকি অসুস্থ হয়ে রাস্তায় আছো গাড়ি চালাতে পারছো না। আর তোমার ভাইয়াকেও কিছু বলতে না করেছো।
সায়ন,,,,,তোমাকে কিটনাপ করার জন্যই তো করেছি।
,,,কিন্তু কেনো, আমি তোমার কি করেছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সায়ন একটু কান্না কান্না ভাবে বললো,,,, তোমাকে না মারলে, আমার দিয়া আমার সাথে দেখা করবে না। কথাও বলবে না।
হঠাৎ করেই আবার পাগলের মতো করে বলতে থাকে,,,,ও আমার সাথে কথা না বললে আমি থাকবো কিভাবে, অনেক ভালোবাসি আমি দিয়াকে। ও অনেক দিন আগেই বলেছিলো তোমাকে মারার জন্য। কিন্তু যানি না আমার কি হয়ে যেতো, তোমাকে মারতে গিয়েও পারি না। আর তাই দিয়া আমার সাথে রাগ করে আর আসে না। তাই আমি তোমাকে মারবো তারপর দিয়া আবার আগের মতো আমার সাথে কথা বলবে।
সায়নের কোনো কথায় আমি বুঝতে পারছি না। আমি সায়নকে জিজ্ঞেস করি,,,,, মানে কি এসবের,আর দিয়া আমাকে কেনো মারতে বলবে।

সায়ন কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলে,,,,কারন ওর খুব কষ্ট হয়, তোমাকে অয়ন ভাইয়ার সাথে এতো সুখী দেখতে। আর ওর কষ্ট হলে আমারো খুব কষ্ট হয়। তাই তোমাকে মরতে হবে। তুমি মরলেই আমার দিয়া আমার কাছে চলে আসবে।
বলে সায়ন একটা বন্ধুক বের করে আমার কপালে ধরে। সায়নকে দেখে মনে হচ্ছে এখনি গুলি মেরে দিবে।
সায়ন আমাকে গুলি মারতে গিয়ে আবার বন্ধুক সরিয়ে বলে,,,,, আমি তোমাকে এতো কষ্ট দিয়ে কিভাবে মারতে পারি। আমার ভায়ের ভালোবাসা তুমি। কিন্তু তোমাকে না মারলে আমার দিয়া কষ্ট পাবে। তুমি ফিরে কেনো এলে বলোতো।

দুবছর আগে তোমার এক্সিডেন্ট করায়,সেটাতে তুমি বেঁচে গেলে, অবশ্য বাঁচিয়েছি আমিই। তারপর জানতে পারলাম তোমার তোমার স্মৃতি নেয়, তাই পুরো বিষয়টা ভাইয়ার সামনে এমন ভাবে সাজালাম যেনো তুমি মরে গেছো। দুবছরে ভাইয়া অনেক কষ্ট পেয়েছে, এটা দেখে আমার দিয়া অনেক খুশি হতো, কিন্তু আমার কষ্ট লাগতো, অনেক ভালোবাসি তো আমার ভাইকে তাই।
যখন জানতে পারি তোমার বিয়ে, তখন আমিই প্লেন করে ভাইয়াকে দেশে পাঠায়, যাতে ভাইয়া জানতে পারে যে, তুমি বেঁচে আছো অন্য জনের বউ হয়ে, কিন্তু বেঁচে তো আছো, এটা যানলে ভাইয়া একটু কম কষ্ট পাবে।

কিন্তু ভাইয়া এর আগেই তোমাকে পেয়ে বিয়ে করে নেয়। এটা দেখে দিয়া আবার কষ্ট পাচ্ছে। এখন যেভাবে হোক ওর কষ্ট আমার কম করতে হবে। কিন্তু তোমাকে মারবো কিভাবে, হ্যাঁ দাঁড়াও আমি তোমার জন্য অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ এক সাথে মিশিয়ে আনছি, এতে করে তোমার মরতে কোনো কষ্ট হবে না।
বলে সায়ন ঘুমের ঔষধ আনতে যায়।

রিয়ান,অয়ন,প্রহর গাড়িতে উঠে আলোকে যেখানে রেখেছে ঐদিকে যাচ্ছে। রিয়ান পিছনে বসে তার মাথাটা সামনের দু সিটের মাঝখানে রেখে, এক হাত প্রহরের সিটে আরেক হাত অয়নের সিটে রেখে বলে,,,, আচ্ছা এই আলোটা আবার কে, ওকি মারুকে কিটনাপ করেছে।
অয়ন,,না আমার সন্দেহ ও আমার ভাই সায়নকে কিটনাপ করেছে, আর না হলে ও সায়নের বিষয়ে কিছু জানে।
রিয়ান,,,,,, আমার মনে হয় আগে মারুকে খুঁজা উচিত, ওর বডিগার্ডকে মেরে ফেলা হয়েছে। সো এটা বেশি জরুরি।
অয়ন গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,,,,, সায়নের ব্যাপারটাও অনেক সিরিয়াস, ও শুধু নিজের না অন্য জনের ক্ষতিও করতে পারে।আর আমার মনে হয় আলো হয়তো নীরের সম্পর্কে কিছু জানে।
প্রহর,,, এমন কেনো মনে হয়।

অয়ন,,,,,, আলো সায়নকে মেন্টাল হেলথ্ এর মেডিসিন দিচ্ছে। আর নীর আমাকে বলছিলো সায়ন নাকি তার গার্লফ্রেন্ড দিয়ার সাথে প্রতিদিন কথা বলে,নীর নাকি নিজে শুনেছে সায়নকে কথা বলতে।
প্রহর,,,,,কিহহ কিন্তু এটা কি করে হতে পারে।
রিয়ান,,,,,, কেনো হতে পারে না, মানুষ গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলবে না তো কি ভুতের সাথে কথা বলবে আজব, এতে এতো হয়রান হওয়ার কি আছে।
প্রহর,,,,,, কারন দিয়া অনেক বছর আগেই মারা গেছে।

এটা শুনে রিয়ান অভাক হয়ে একটু ভয়ে মুখে হাসি এনে বলে,,,,হতে পারে একি নামের অন্য মেয়েছে গার্লফ্রেন্ড করেছে।
অয়ন,,,,,, নীর দিয়ার ছবি দেখিয়ে বলেছে, সায়ন নাকি এর সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলে। সায়ন নাকি নিজে এ কথা বলেছে।
প্রহর,,,,, হোয়াট এটা তো অনেক সিরিয়াস ব্যাপার, কিন্তু এটা কি করে হতে পারে, দিয়ার সাথে ও কিভাবে কথা বলতে পারে।
অয়ন,,,,সেটাই তো আমারো কথা।
রিয়ান,,,,,, মনে হয় সায়নের উপর ভূতের ছায়া পড়েছে।
অয়ন বিরক্তি নিয়ে বলে,,হোয়াট ননসেন্স।
রিয়ান,,,,,, আরে এমন হয়।
প্রহর,,,,,,, রিয়ান কিছু ক্ষনের জন্য একটু সাইলেন্ট থাকো পিল্জ।

তিনজনে আলোর ক্লিনিকে পৌঁছে যায়। আলো ওদের বার বার যেতে দিতে বলছে। অয়ন আসার সাথে সাথে আলো উঠে দাঁড়িয়ে বলে,, স্যার আজ আমি নিজেই আপনার কাছে এসে সব কিছু বলে দিলাম হলে।
অয়ন রাগে ধমক দিয়ে বলে,,,, আমার ভাইকে কেনো মেন্টাল হেলথ্ এর মেডিসিন দিয়েছো। আর কি বলতে চাও হুমম।
আলো অয়নকে বুঝানোর চেষ্টা করে বলে,,,,,, স্যার সায়নের মেন্টাল হেলথ্ একদমি ভালো না। আমি যা করেছি ওর জন্য করেছি।
অয়ন,,,,,,এটা তুমি আমাকে বলতে পারতে, কেনো বলোনি, কি করেছো আমার ভাইয়ের সাথে।
প্রহর,,,,,,অয়ন এভাবে চিৎকার করলে কিছু জানা যাবে না, আগে শান্ত হয়ে শুন কি বলে।
অয়ন শান্তা হয়ে বলে,,,, ঠিক আছে, বলো কি বলবে। কিন্তু তাড়াতাড়ি সময় নেয় আমাদের কাছে।

আলো শান্ত হয়ে বলতে থাকে,,,,,, আপনি তো যানেনই আমি সাইকোলজি নিয়ে পড়ালেখা করছি। সায়নকে প্রথম দেখায় আমার ভালো লাগে, তাই তার বিষয়ে জানার আগ্রহ আমার বেড়ে যায়।
একদিন ওকে আমি একা একা কথা বলতে দেখি, তারপর ওর সাথে কথা বলে আমার স্বাভাবিক মনে হয়নি, আমি সিউর ছিলাম না তাই কিছু জিজ্ঞেস করিনি। সায়নের রুম খুঁজে আমি কিছু মেডিসিন পাই যেগুলো মাথা ঠান্ডা রাখে, আরো কিছু দিয়ার ছবি।
তারপর খবর নিয়ে জানতে পারি দিয়া তো অনেক আগেই মারা গেছে। সায়নের সাথে কথা বলে আমি অভাক হয়ে যায়,কারন সায়ন দিয়াকে দেখতে পারতো। ওর সাথে কথা বলতো।
এর মানে এটাই দাঁড়ায় যে, দিয়া মারা যাওয়াটা সায়ন মেনে নিতে পারেনি, এটা তার ব্রেইন এক্সেপ্ট করে নি।তাই তার ব্রেইন দিয়াকে দেখাচ্ছে, সায়ন তার সাথে কথা বলতে চাই, তাই সে যেটা ভাবছে , সেটাই তার ব্রেইন তাকে দেখাচ্ছে। এটা সায়নের জন্য মোটেও ভালো না।

আমি চেয়েছিলাম এ সব কিছু আপনাকে বলতে, বাট প্রমান ছাড়া কথার কোনো বৃত্তি নেয়। তাই আমি সায়নে আগে থেকেই কিছু মেডিসিন দিয়। আর কালকে তো সায়নের টেস্টও করিয়েছি। তার মাথায় কোনো প্রবলেম নেয়, সব সাইকোলজিকাল প্রবলেম। আর এটা অনেক ক্ষতিকারক হতে পারে সবার জন্য।
আর আমার দেওয়া মেডিসিন খেয়ে সায়ন প্রচুর ঘুমাচ্ছে, যার কারনে দিয়াকে হয়তো সে দেখতে পারছে না। তাই সে বেশ কিছু দিন বা মাস পাগলের মতো করবে। ও কখন কি করে না করে ও নিজেও জানে না৷
অয়ন দেওয়ালে একটা ঘুষি দিয়ে বলে, আমি নীরের কষ্টে এতোটাই ডুবে ছিলাম যে নিজের ভাইয়ের এতো বড় সমস্যা আমার চোখেই পড়েনি।

প্রহর,,,,,, এতো বছরে আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না,এটা কি করে হতে পারে।
আলো,,,,,, এই ধরনের রোগীরা খুবি সতর্ক হয়ে থাকে। সায়নের হয়তো ধারনা দিয়ার সম্পর্কে কেও কিছু জানতে পারলে হয়তো দিয়া রাগ করে আর আসবে না, আর না হলে দিয়াকে কেও মেরে ফেলবে। এমন ধারনা করে ফেলেছে হয়তো। আচ্ছা দিয়া কিভাবে মারা গেছে। ও যদি এক্সিডেন্টলি মারা যায় তাহলে কারো ক্ষতি সায়ন সহজে করবে না।আর যদি কেও খুন করে থাকে আর এটা কে করেছে সেটা সে যানে তাহলে।
প্রহর,,,,,,তাহলে।

আলো,,,,তাহলে সায়ন তাকে মারার চেষ্টা করবে। অথবা তার কোনো প্রিয় কিছু বা মানুষকে ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে।
অয়ন,,,,,, হোয়াট,, তাহলে নীরের জান বিপদে, চল প্রহর।
প্রহর,,,,,, তাড়াতাড়ি চল।
রিয়ান,,,,, মারু কি দিয়াকে মেরেছে নাকি, এটা তো হতেই পারে না।
প্রহর,,,কথা বলার সময় নেয় এখন।
আলো,,,,আমিও যাবো।
সবাই গাড়ি উঠে অয়ন গাড়ি অনেক দ্রুত গতিতে চালাতে থাকে।
রিয়ান,,,,,, কোথায় যাচ্ছো,, তোমরা কি যানো নাকি মারু কোথায় আছে।
প্রহর,,,,সায়ন যদি মারুকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারে।

আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না, সায়ন কি বলছে বুঝতে পারছি না। ওয়ি আমাকে মারার চেষ্টা করছে আবার ওয়ি আমাকে বাঁচাচ্ছে। তারমানে কি অয়ন আমার জীবনে আমার আতীতেও ছিলো।
একটু পর সায়ন আসে, একটা গ্লাসে চামচ ঘুরাতে ঘুরাতে, হয়তো গ্লাসে ঘুমের ঔষধ মিশানো। সায়ন গ্লাসে চামচ ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,,, যানো এটা কোন জায়গা, এটা আমাদের একটা ফার্মহাউস। দেখে মনে হচ্ছে না তাই না। হবে কিভাবে অনেক বছর আগে আমিই জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম এই পুরো বাড়িটাকে। জানো কেনো।
কারন এখানেই মারা হয়েছিলো আমার দিয়াকে।

সায়ন চোখে পানি নিয়ে বলে,,,, এই রুমেই পড়ে ছিলো আমার দিয়ার লাশ, রক্তে মাখানো অবস্থায়। মাথায় গুলি লাগার কারনে সাথে সাথে মারা যায় আমার দিয়া। আর আমি কিছু করতেই পারি নায়।
আমি এভার ভয়ে বললাম,,,,,দিয়া মারা গেছে মানে, তাহলে তোমার সাথে কথা বলে কিভাবে।
সায়ন আমার সামনে এসে বসে বলে,,,,, আমার ভালোবাসার কারনে যেতে পারেনি। সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেও আমাকে ছাড়া না থাকতে পেরে আমার কাছে চলে এসেছে। এটা একটা বড় সিক্রেট, সুসস কাওকে বলবে না কিন্তু। আমি শুধু তোমাকে বলছি।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,,,,,,, তাহলে সে আমাকে মারতে চাই কেনো, আমি কি তাকে মেরেছি।

সয়ন একটু হেঁসে বলে,,,,,আরে না, সেদিনি তো তোমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো দিয়ার। ঐদিন আমি দিয়াকে সবার সামনে বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছিলাম, আমরা দুজন অনেক হেপি ছিলাম, কিন্তু ভাইয়া আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে মেরে ফেলে আমার দিয়াকে।
আর তাই তো দিয়া ভাইয়াকে দেখতে পারে না। চাইলে আমি ভাইয়াকে সেখানেই মেরে ফেলতে পারতাম কিন্তু কি করবো অনেক ভালোবাসি ভাইয়াকে। ভাইয়া বলেছে এটা নাকি ভুলে হয়ে গেছে, অনেক মাফ ও চেয়েছে। তাই তো মাফ করে দিয়েছি। কিন্তু দিয়া মাফ করতে পারেনি।

তাইতো দিয়া চাই, ঠিক যেভাবে আমরা কষ্ট পাচ্ছি, ঠিক একই ভাবে ভাইয়াও যেনো কষ্ট পাক। ভালোবাসা হাড়ানোর কষ্ট। আর তাই তো তোমাকে মারার এতো চেষ্টা করা।
সায়নকে দেখে মনে হচ্ছে, অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে মনে। যেটা ওর চেহেরায় ভেসে উঠছে। একদিকে সায়নের জন্য কষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে নিজের জন্য ভয় লাগছে৷ আর অয়ন এমন কাজ জীবনেও করতে পারে না। নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে। কিন্তু এমন কি কারন থাকতে পারে।
সায়ন আমার সামনে গ্লাসটা ধরে বলে,,,, খেয়ে নাও, একটুও কষ্ট হবে না প্রমিজ।

আমি ভয়ে ভয়ে বলি,,,,,সায়ন তুমি কি করছো তুমি নিজেও যানো না। পিল্জ একটু শান্ত হও।আমি যানি না ঠিক তোমার সাথে কি হয়েছে। কিন্তু আমার থেকে ভালো তুমি তোমার ভাইয়াকে চিনো। তোমার মনে হয় তোমার ভাইয়া এমন কিছু তোমার সাথে করবে।
সায়ন কেমন অদ্ভুত ভাবে কান্না করতে করতে নিচে বসে বলে,,,,,, কিন্তু করেছে তো। আমি ছাড়া দিয়ার আর কেও ছিলো না। আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতাম। কতো স্বপ্ন আমরা এক সাথে দেখেছি। ওর শুধু একটাই কমতি ছিলো, সেটা হলো ওর একটা সমস্যার কারনে ও কোনো দিন মা হতে পারবে না। কিন্তু আমরা ভেবে নিয়েছিলাম আমরা দুটো বাচ্চা এডড্রপ করবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। একসাথে পথ চলা হলো না আমাদের। ও আমার কাছে থেকেও নেয়।
এগুলে বলতে বলতে সায়নের চোখ দিয়ে অধারে পানি পড়ছে। ওর কথা শুনে আমিও আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারছি না। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো অপূর্ণ কেনো থেকে যায়।

নিজের চোখের পানি মুছে সায়ন বলে,,,এটা খেয়ে নাও এটা খেলেই আমার দিয়া আমার কাছে চলে আসবে আবার।
সায়ন এটা আমাকে খাওয়ানোর জন্য জোরাজোরি করতে থাকে, আর আমি মুখ এদিক সেদিক করে নাড়াতে থাকি। সায়ন আমার মুখ ধরে পানির গ্লাসটা আমার দিকে ধরে খওয়াতে যাবে, তখনি আমি বলি,,,,আমি মা হতে যাচ্ছি সায়ন।
এটা শুনে সায়ন থেমে যায়।তার হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে যায়। আমি মা হতে যাচ্ছি বিষয়টা আমি কালকেই বুঝতে পেরেছি, টেস্ট ও করেছি, কিন্তু এসব জামেলার কারনে অয়নকে বলা হয়নি।
আমি চোখে পানি নিয়ে বলি,,, আমার ভিতরে আরেকটা জান আছে। আমাকে মেরে ফেললে সেও মরে যাবে আমার সাথে।পিল্জ আমি বাচ্চাটাকে এই পৃথিবীতে আনতে চাই।

সায়ন আমার কথা শুনে খুশি হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,আমি চাচ্চু হতে যাচ্ছি।
হঠাৎ করেই আবার মুখটা মলিন করে হাসতে হাসতে মাটিতে বসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বলে,,,, তাহলে দেখা যায়, আমার দিয়াকে পাওয়া আর হবে না।কারন আমি নিজের ভাইস্তা বা ভাতিজাকে কিভাবে মারবো যে এখনো এই দুনিয়াতে পাও রাখে নাই।
আমার সাথেই কেনো আল্লাহ এমন করে। এখন আমি কি করবো। আমি তোমাকে মারতে পারবো না, আর তোমাকে না মারলে দিয়া আসবে না, আর দিয়া না আসলে আমি বাঁচবো কিভাবে।
এই সময় সবাই চলে আসে। সবাই দৌড়ে এসে আমাকে ঘিরে ধরে। অয়ন আমার চেহেরা ধরে বলে,,,তুমি ঠিক আছো।
আমি হুমম বলি,, রিয়ান আমার হাত পা খুলে দিচ্ছে। অয়ন সায়নের দিকে চোখে পানি নিয়ে তাকিয়ে আছে। সায়ন জোরে জোরে হেঁসে বলছে,, ভাইয়া তুমি বাবা হতে যাচ্ছো।

এটা শুনে অয়ন আমার দিকে তাকায়। আমিও ইশারা করে হ্যাঁ বলি। সায়ন আবার বলে,,,তো এখন কি করা যায়।ভাবীকে তো আমি মারতে পারবো না। আর আমি দিয়াকে ছাড়াও থাকতে পারবো না। তো এক কাজ করি, আমিই দিয়ার কাছে চলে যায়।
অয়ন,,,,,সায়ন ভাই আমার বাড়ি ফিরে চল সেখানে আমরা বসে কথা বলবো। তুই চাইলে আমাকে মেরে ফেল।
সায়ন হেঁসে বলে,,,,ভাই সেটা পারলে তো কবেই করে ফেলতাম। আমার কাছে আর কোনো রাস্তা নেয়। যখন তোমার সন্তান এই পৃথিবীতে আসবে তখন আমার ছবি দেখিয়ে বলবে কিন্তু, তার একটা চাচ্চু ছিলো। কিন্তু তাদের পিল্জ এটা বলো না যে আমি একটা খুনি ছিলাম।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২০

অয়নের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, সে বলছে,,,ভাই এমন কথা বলিস না৷ তুই না থাকলে আমার বাচ্চারা চাচ্চু বলে কাকে ডাকবে। আর তাদের ঘুরতেই বা কে নিয়ে যাবে।
সায়ন,,,,, আমি থাকতে পারবো না ভাই। শুধু মাত্র তোমার কারনে আমি একা হয়ে গেছি। আমার এই অবস্থা শুধু তোমার কারনে।
প্রহর,,,,,অয়ন সত্যিটা বলে দে পিল্জ।
অয়ন,,,,, প্রহর সুসস, চুপ কর পিল্জ। সায়ন আমার কতা শুন ভাই আমার।

সায়ন তার লোকদের ডেকে তাদের সবার সামনে দাঁড়াতে বলে, কেও যেনো তার কাছে না আসতে পারে সেটা বলে দিয়েছে। সবাই তাদের ঘিরে ধরে। তখন সায়ন একটা বন্ধুক বের করে বলে,,, আমাকে এখন দিয়ার কাছে যেতে কেও আটকাতে পারবে না, আমি আসছি দিয়া।
এটা শুনে অয়ন প্রহর রিয়ান আটকাতে যায় কিন্তু বডিগার্ডদের জন্য পারে না, তাই তারা তিনজন মারামারি লাগিয়ে দেয়। সায়ন এসব দেখে হেঁসে বন্ধুক তার মাথায় ধরে বলে,,,আমি আসছি দিয়া। আর কেও আমাদের আলাদা করতে পারবে না। আসছি আমি তোমার কাছে।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২২