আমার আছে জল পর্ব ৯

আমার আছে জল পর্ব ৯
মাহিমা রেহমান

এখন বেলা এগারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট।প্রায় এক ঘন্টা পনেরো মিনিট ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে শিথি।তার পাশে তখনকার সেই ছেলেটি ও এখন পর্যন্ত দাড়িয়ে আছে।এতক্ষন ছেলেটির সহিত বেশক্ষানিক আলাপ হয়েছে শিথির। আলাপের মূল বিষয় হচ্ছে,, অফিসের সকল নিয়ম-কানুন ও বস সম্পর্কিত।এতক্ষনে যা বুঝল শিথি,, বস নামক লোকটি খুব কড়া। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল শিথি।প্রথমদিন এসেই বস নামক মানুষটির কাছে বেশ জব্দ হতে হয়েছে তাকে।এতে শিথির বেশ বুঝতে পেরেছে লোকটি ঠিক কেমন? আজকের দিনের কথা মনে থাকলে আর কোনোদিন সে ভুল করে হলেও দেরি করে অফিসে আসবে না।

আকস্মাৎ এক এক করে রুম থেকে মানুষ বেরিয়ে আসতে লাগল। হকচকিয়ে উঠল শিথি। পরমুহুর্তে বুঝতে পারল মিটিং শেষ।তাই সাইড হয়ে দাড়িয়ে পড়ল।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করল শিথি।যাক অবশেষে মিটিং শেষ হলো! এতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার পা ব্যাথা হয়ে গেছে।সকলের পিছন পিছন সেও গেল।সকলে যে যার ডেস্কে চলে গেল। শিথি মৃদু পায়ে ম্যানেজারের রুমের দিকে এগোলো।ম্যানেজার শিথিকে তার রুম দেখিয়ে দিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আর বলল বসের রুমে যেতে।তার পাশের রুমটাই বসের রুম। দুরুদুরু বুকে সেদিক এগিয়ে গেল শিথি। কিঞ্চিৎ ভয় অনুভব হচ্ছে তার।বস যেই কড়া তাকে নাজানি বকুনি দেয় লেট করে আসার জন্য। রুমের সামনে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে ডোর নক করল শিথি।কিন্তু ভিতর থেকে কোনো রেসপন্স এলো না।বেশ কয়েকবার নক করার পরও যখন কেনো সাড়া শব্দ হলো না তখন শিথি আলগোছে ডোর খুলে ভিতরে প্রবেশ করল। আশেপাশে চোখ ঘুরতেই চোখ আটকে গেল বিশাল কাঁচের দেয়ালের সমীপে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ লম্বাটে সুঠাম দেহী একজন পুরুষের উপর।যায় গায়ে পরিহিত ব্ল্যাক জ্যাকেট।কেমন চেনা চেনা লাগছে শিথির।তাই পূনরায় বলে উঠল,

-“মে আই কাম ইন স্যার?”
সহসা ঘুরে দাড়ালো সেই পুরুষটি।চমকে উঠল শিথি।এটাতো সেই লোকটা, এইরে!এবার বুঝি তার চাকরিটা গেল। এই লোককে কত কথা শুনিয়েছে সে। কত ঝগড়া করেছে এই লোকের সাথে।এমনকি কতবার তাকে এই লোক বিপদের থেকে বাঁচিয়েছে পর্যন্ত।সেখানে সে লোকটাকে একটা ধন্যবাদ অবধি দেইনি।

এখন যদি তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয় কেমন হবে?আতঙ্কিত হলো চিত্ত।নুসাইব শিথির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে বেশ অ্যাটিটিউড নিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ল। ওষ্ঠ নেড়ে শিথির উদ্দ্যেশ্য বলে উঠল,
-“এসেই তো পড়েছেন।তাহলে আর পারমিশন নেয়ার কি দরকার?(কিছুটা তাচ্ছিল্যে ভাবে)বায় দা ওয়ে কাম হেয়ার এন্ড সিট।”

কথাটা বলে শিথিকে তর্জনী আঙ্গুলের ইশারায় নিজের সন্মুখে ডাকল নুসাইব। অ-চঞ্চল পায়ে সেদিক এগিয়ে গেল শিথি।একটা চেয়ার টেনে দুরুদুরু চিত্তে নুসাইবের সন্মুখে বসে পড়ল শিথি।
খুব গভীর দৃষ্টিতে শিথিকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল নুসাইব।নুসাইবের এহেন দৃষ্টি দেখে বারবার নিজের ওড়না টেনে ঠিক করতে লাগল শিথি। বারংবার শিথির এহেন ওড়না টানা-টানি দেখে গলা শুকিয়ে গেল নুসাইবের। ঈষৎ কেশে উঠল সে। স্বত্বর নিজের আঁখি জোড়া অন্যত্রে ঘুরিয়ে ভরাট কণ্ঠে শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

-“এখানে কোনো মডেলিংয়ের শো চলছে না যে আপনি বারংবার নিজের ওড়না নিয়ে টানাটানি করছেন।”
নুসাইবের এহেন কথা কর্ণকুহর অবধি পৌঁছতেই অসস্তিতে পড়ে গেল শিথি।লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করল তার দু-গাল।পরমুহুর্তে নুসাইবের ডাকে চৈতন্য ফিরতেই নিজেকে ধাতস্থ করে তার পানে তাকাল শিথি।নুসাইব কিঞ্চিৎ গম্ভীর কণ্ঠে শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

-“আজকে আপনি লেট করেছিলেন।তার শাস্তি আপনি তখনই পেয়ে গেছেন আই হোপ।সো নেক্সট টাইম আর লেট করার দুঃসাহস করবেন না। নতুবা আপনার বেতন থেকে ৫০% কেটে নেওয়া হবে।বায় দা ওয়ে,, যান আমার জন্য কড়া করে এক কাপ কফি বানিয়ে নিতে আসুন।আর হ্যাঁ (তর্জনী আঙ্গুল তুলে) অবশ্যই আপনি বানাবেন।যদি অন্য কেউ বানায় তাহলে… (আঙ্গুল নাড়িয়ে থ্রেট দেয়ার ভঙ্গিতে)”

কথাগুলো বলে ল্যাপটপ নিয়ে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল নুসাইব।আতঙ্কিত চিত্তে কিঞ্চিৎ ঢোক গিলা শিথি।লোকটাকে তার কেমন ভয়ঙ্কর লাগছে।এর আগে কত ঝগড়া কক করেছে সে লোকটির সহিত।এখন যদি সেই সবকিছুর প্রতিশোধ নেয় এই লোক?তখন কি করবে সে?ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে শিথির।শঙ্কিত মনে উঠে দাঁড়াল শিথি।কফি বানানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল সে।

ক্ষণকাল পর হাতে কফি সমেত ফিরে এলো শিথি। দেখতে পেল নুসাইব এখনো ল্যাপটপে ব্যস্ত।কফির মগখানা নুসাইবের দিকে এগিয়ে দিয়ে কম্পিত ওষ্ঠজোড়া নেড়ে বলে উঠল শিথি,
-“স্যা…র আপনার কফি।”

এহেন কম্পিত কণ্ঠ কর্ণগোচোর হতেই মাথা তুলে তাকালো নুসাইব।সহসা তার আঁখি জোড়া আটকে গেল বারংবার কম্পিত হওয়া গোলাপী আভাময় ওষ্ঠদ্বয়ের উপর।নির্নিমেষ সেদিক গভীর দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইল নুসাইব।পুনরায় শিথির ডাকে ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো সে। শিথি কাঁপা কাঁপা হাতে কফিটা এগিয়ে দিল নুসাইবকে। শিথির হাত থেকে কফিটা নিয়ে টেবিলে রেখে দিল নুসাইব।পূনরায় ল্যাপটপে মনোযোগ দিল সে। শিথি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে উঠল,

-“স্যার আমি এখন কি করব?”
ল্যাপটপের দিকে চোখ রেখেই বলে উঠল নুসাইব,
-“টেবিলের উপর হেই ফাইল গুলো আছে সেগুলো চেক করে নিতে আসুন যান।”
মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে ফাইলগুলো তুলে নেয় শিথি।এখানে প্রায় কম হলেও পনেরোটার মত ফাইল আছে।তবে কিছু বলে না শিথি।যতটুকু করার সামর্থ্য তার আছে ততটুকু সে করবে।আর যতটুকু সে করতে পারবে না তার জন্য নাহয় বকা খেয়ে নিবে।রুমের বাইরে কেবল পা রাখতে যাবে সে আকস্মাৎ নুসাইবের বলা কিছু বাক্য শুনে দাঁড়িয়ে পড়ল সে।

-“আমার সম্মুখে এলে নিজের ওষ্ঠজোড়াকে একটু সামলে রাখবেন মিস.।এদের এহেন কাঁপা কাঁপিয়ে মোটেও সহ্য হবে না আমার।ভুল কিছু হয়ে যেতে পারে। সো বি কেয়ারফুল।”
সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল শিথির।বলে কি এই লোক?সে কি করে করে নাকি?ভয় পেয়েই না বারংবার কাঁপছিল হয়তো!কি সর্বনাশা কথা বার্তা?আর একমুহুর্ত ব্যয় করল না শিথি।গটগট পেয়ে বেরিয়ে গেল।

কোলের উপর ল্যপটপ রেখে অফিসের ডিভানে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখের উপর একহাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে নুসাইব।গভীর চিন্তায় মগ্ন সে।’হুমায়রা শিথি’ নামের মেয়েটার সাথে যেদিন থেকে দেখা হয়েছে তার সেদিন থেকেই তার সবকিছুই কেমন অগুছালো হয়ে পড়েছে।তার পুরো লাইফ স্টাইলটাই কেমন চেঞ্জ হয়ে গেছে।তার উপর মেয়েটা যখন তার সামনে আসে তখন তার হৃদযন্ত্রটা কেমন বেসামাল হয়ে পড়ে।

শিথির উপস্থিতিতে এর স্পন্দন এতটাই দ্রুতগতিতে পায় যেন মনে হয় ভিতর থেকে বেরিয়ে একদম শিথির কাছে চলে যেতে চাইছে। আকস্মাৎ চোখ খুলে ঘনঘন নিশ্বাস ত্যাগ করে নুসাইব।এক মেয়েকে দেখলে সে নিজেই কেমন বেপরোয়া হয়ে যায়।নিজেকে কন্ট্রোল করা বেশ দায় হয়ে পড়ে।এই মেয়ে নিশ্চয়ই তার হৃদযন্ত্রটাকে একদিন ঠিকই ছিনিয়ে নিলে তার কাছ থেকে।

টানা সময় ধরে ফাইলগুলো চেক করে চলছে শিথি। কোমড় পুরো ব্যথা হয়ে গেছে।তাই একটু উঠে দাড়ালো।সহসা একজন লোক এসে বলে গেল তাকে বস ডাকছে।কথাটা কর্ণকুহরে অবধি পৌঁছানোর সাথে সাথে মুখটা একদম ফ্যাকাশে রূপ ধারণ শিথির।যে ফাইলগুলো চেক করা শেষ হয়েছে তা হাতে তুলে নিয়ে নুসাইবের রুমের দিকে অগ্রসর হলো শিথি। ডোর নক করে প্রবেশ করল ভিতরে।দেখতে পেল তার দিক কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নুসাইব।অসস্তিতে পড়ে গেল শিথি। সত্বর মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে নুসাইবের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে উঠল,

-“স্যার ডেকেছিলেন?”
অকপট কণ্ঠে নুসাইব বলে উঠল,
-“ইয়েস, যান আমার জন্য এককাপ কফির ব্যবস্থা করুন।আর হ্যা অবশ্যই আপনি নিজে বানিয়ে নিয়ে আসবেন।”
কথাটা শুনে শিথি মাথা তুলল।আর দেখতে পেল সেই আগের মতই নুসাইব তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে। ঢোক গিলল শিথি। কাঁপা কাঁপা হাতে ফাইল গুলো এগিয়ে দিল নুসাইবের দিকে।চোখের পল্লব না ফেলে সেই একইভাবে তাকিয়ে শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

-“ফাইল গুলো টেবিলে রেখে এবার তাড়াতাড়ি যান।”
তরান্বিত শিথি ফাইল গুলো টেবিলে রেখে ব্যগ্র পায়ে রুম ত্যাগ করল।বাহিরে এসে হাঁপাতে লাগল শিথি।মনে মনে আওড়াতে লাগল,
-“কি অদ্ভুত দৃষ্টি এই লোকের?”
ঘনঘন নিশ্বাস ত্যাগ করে নিজেকে ঠিকঠাক করে কফি বানিয়ে নুসাইবের রুমের উদ্দেশ্যে পুনরায় উদ্যত হলো শিথি।কফি সমেত ফিরে এসে যেন কফিটা নুসাইবকে দিতে যাবে আকস্মাৎ নুসাইবের এহেন ত্যাড়া কথা কর্ণপাত হতেই আপনা আপনি ভ্রু কুঁচকে গেল শিথির।কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই আয়েশি ভঙ্গিতে পায়ের উপর পা তুলে ডিভানে বসে নুসাইব পুনরায় বলে উঠল,

-“তাড়াতাড়ি খান।আগে নিজে খেয়ে এরপর আমাকে দিন। মেয়ে মানুষের আবার বিশ্বাস নেই।বলতো যায় না এতে বিষ ও থাকতে পারে।”
গা জ্বলে উঠল শিথির।এই লোক বলে কি?সে কোনো এই লোকের কফিতে বিষ মিলাতে যাবে? এতো ঢং কোথা থেকে পায় এই লোক তাই ভেবে কুল পায় না শিথি।এরই মাঝে এই লোকের আবার আরেক ড্রামা শুরু।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গরম কফিতে মুখ ডুবিয়ে দেয় শিথি। হাত থেকে কফিটা টেবিলের সাইডে রেখে সহসা ওয়াশরুমের দিয়ে দৌড় লাগায় শিথি। আঁতকে উঠে নুসাইব।শিথির পিছন পিছন সেও যায়। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নুসাইবকে দেখতে পেয়ে হচকিয়ে উঠল শিথি।নুসাইব শঙ্কিত কণ্ঠে শিথিকে জিজ্ঞেস করে উঠল,

-“কি হয়েছিল?ঠিক আছেন আপনি?”
শিথি বেশ অবাক হয়ে।এই লোকের এটি চিন্তা তার জন্য।পুনরায় নুসাইবের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ কর্ণপাত হতেই ইতস্তত বোধ করে বলে উঠল শিথি,
-“তেমন কিছুই হয়নি স্যার।কফি কিছুটা গরম ছিল তাই।”

সহসা শিথির খুব সান্নিধ্যে চলে আসে নুসাইব।শিথির কপোল আলগোছে চেপে ধরে শিথির মুখের ভিতর ফুঁ দিতে থাকে নুসাইব।চমকে উঠল শিথি।করছে কি এই লোক?পাগল নাকি? সত্বর শরীরের সকল বল প্রয়োগ করে নুসাইবকে ধাক্কা মারে শিথি।কিছুটা পিছিয়ে যায় নুসাইব।আমতা আমতা করে শিথি নুসাইবের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“স্যার আমি ঠিক আছি।”

কথাটা বলেই শিথি রুম ত্যাগ করতে নিলেই নুসাইব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল,
-“যাচ্ছেন কোথায়?আপনাকে আমি যেতে বলেছি?”
কথাটুকু বলে নুসাইব নিজের চেয়ারে বসে মোবাইলে টাইম দেখে ভাবহীন ভঙ্গিতে শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“এখন লাঞ্চ পিরিয়ড।সো (ঘাড় বাঁকা করে) যান গিয়ে আমার লাঞ্চের ব্যবস্থা করুন।আর আপনি নিজেও আমার সাথেই লাঞ্চ করবেন। সো তাড়াতাড়ি জন।ঠিক পাঁচমিনিট পর আপনাকে আমি এখানে দেখতে চাই।”

কথাটুকু বলে নুসাইব ফাইল চেক করতে লাগল। শিথি ব্যগ্র পায়ে বেরিয়ে পরল খাবার আবার উদ্দেশ্যে।
খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করল শিথি। কাঁপা কাঁপা হাতে এগিয়ে দিল নুসাইবের দিকে।যেই বেরিয়ে যেতে নিবে সহসা ডেকে উঠল নুসাইব। শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?আপনাকে আমি যেতে বলেছি?আর আমার পারমিশন ছাড়া বারবার বেরিয়ে যাওয়ার সাহস কোথা থেকে পান আপনি?”

এহেন শক্ত কণ্ঠের কথা কর্ণপাত হতেই কিঞ্চিৎ ভয় পেল শিথি।ইতস্তত বোধ করে বলে উঠল,
-“ইয়ে মানে স্যার! এখন তো লাঞ্চ পিরিয়ড তাই আমি বরং আবার ডেস্কে গিয়ে খাবার…”
কথাটা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই নুসাইব বলে উঠল,
-“হুম তার জন্যই তো আমার রুমে বসে খাবেন।তাছাড়া আমার কি লাগবে না লাগবে টা নিশ্চয়ই আপনাকেই দেখতে হবে তাই না?সো এখন থেকে আপনাকে আমার রুমে আমার সাথে বসেই লাঞ্চ করতে হবে। আপনি বসুন আমি কাউকে আপনার জন্য খাবার আনার কথা বলছি।”

শিথি আর কথা না বাড়িয়ে নুসাইবের জন্য প্লেটে খাবার সাজাতে লাগল।গ্লাসে পানি ঢেলে প্লেটের পাশে রেখে দিল।লাঞ্চ শেষে নুসাইব শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“সন্ধ্যায় তৈরি থাকবেন।রেডিসন-ব্লুতে আমাদের একটা বিজনেস মিটিং আছে।আমার সাথে আপনাকে ও যেতে হবে।”
শিথি আমতা আমতা করে বলে উঠল,

-“কিন্তু স্যার অফিস টাইম’তো সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ হয়ে যায়।তাহলে কিভাবে কি?”
নির্নিমেষ শিথির দিকে তাকিয়ে নুসাইব বলে উঠল,
-“আমার পি.এ কে?নিশ্চয়ই আপনি?আর পি.এ কাজ নিশ্চয়ই সারাক্ষণ বসের আশেপাশে থাকা? আই হোপ আপনি বুঝতে পেরেছেন?”

মাথা নেড়ে সায় জানাল শিথি।জিজ্ঞেস করে উঠল,
-“স্যার আমি কি তাহলে এখন আমার ডেস্কে যাবো?আমার আরো কিছু ফাইল চেক করা বাকি।”
ল্যাপটপের দিকে নজর রেখেই নুসাইব উত্তর দিল,
-“ইয়াহ সিউর।”

এখন বিকেল পাঁচটা বেজে বিশ মিনিট। সহসা অফিস থেকে বেরিয়ে এলো নুসাইব।তার পিছু পিছু বেরিয়ে এলো শিথি। কারের ডোর খুলে নুসাইব গিয়ে সোজা পিছনের সিটে বসে পড়ল। তাড়াহুড়ো করে শিথি গাড়ির সামনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে নিলেই আকস্মিক তার কর্ণকুহরে স্পর্শ করল গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠস্বর,
-“আপনি কি ড্রাইভারের সাথে বসতে চাচ্ছেন?”
হচকিয়ে উঠল শিথি।কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই নুসাইব চোখমুখ শক্ত করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল,
-“চুপচাপ পিছনে এসে বসে পড়ুন।”

শিথি আর কথা না বাড়িয়ে পিছনে নুসাইবের পাশে গিয়ে বসে পড়ল। সারা রাস্তা কেউ আর কোনো রকম কথা বলল না। গাড়ি এসে থামল রেডিসন ব্লু হোটেলের সমীপে। ড্রাইভার সত্বর গিয়ে গাড়ির ডোর খুলে দিল।গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো নুসাইব। কিয়ৎ কাল পর নিজেই গিয়ে শিথির পাশের ডোর খুলে দিল।

আমার আছে জল পর্ব ৮

নুসাইবের এহেন কাজে বেশ অবাক হলো ড্রাইভার।যেখানে তার স্যারের একেক কাজের জন্য আলাদা আলাদা কাজের লোক নিয়োগ করা সেখানে সেই মানুষটা এই মেয়ের কত খেয়ালই না রাখছে?
বাহিরে বেরিয়ে এলো শিথি। হোটেলের অন্তঃর্মুখে এগিয়ে গেল নুসাইব।নুসাইবের পিছন পিছন গেল শিথি।

আমার আছে জল পর্ব ১০