আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৮ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৮
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

ছাদের একদম শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। এই ছাদের মাঝে আমার আর ইউসুফ ভাইয়ার কত শত স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে। মনে হচ্ছে টিভির স্ক্রীনের সামনে বসে আছি। তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত ভেসে উঠচ্ছে তাতে। এইতো এখানে সেদিন বসে গান গেয়ে শুনাচ্ছিলেন তিনি।দোলনায় আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আকাশের হাজার, কোটি তারা গোনার বৃথা চেষ্টা করেছেন। পূর্ণিমা রাতে চন্দ্রবিলাস তো শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকুতে হাতে হাত ধরে বৃষ্টি বিলাস করেছি দুজনে। কখনো মাঝ রাতে কফি হাতে ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে হাজারো স্বপ্ন বুনেছিলাম ভবিষ্যতের। কিন্তু সব স্বপ্ন কি সত্যি হয়?

সব ভালবাসা কি পূর্ণতা পায়? মনের মাঝে অস্থিরতা বাড়ছে। দম আটকে আসচ্ছে। মনে ছাদ থেকে লাফ দিলে কেমন হয়?মারা যাবো? মরার মতো এতো কঠিন কাজটা কি আমার ধারা হবে? মরার সময় খালি হাতে না অত্যন্ত নিউটনের মধ্যাকর্ষণের সূত্র প্রমান নিয়ে পৃথিবীট পারবো! ভেবেই হেসে উঠলাম নিজে নিজেই এমন বাচ্চামো চিন্তা ভাবনার জন্য। হাসতে হাসতে আবার কেঁদেও দিলাম। হাসির সাথে কি কান্নার কোনো সংযোগ আছে? আগে তো এমন হয়নি এখন কেন হচ্ছে? এখন অতি সুখে আছি বলে? ভেবেই আবার হেসে ফেললাম। সুখ কথাটি আমার জন্য যে অতি তুচ্ছ! তা কি সুখ জানে? না জানে না! তাই তো হুট করে সুখের ছিটাফোঁটা ফেলে আবার এক রাশ বেদনা দিয়ে চলে যায়। এই তো কিছুক্ষণ আগের কথা। তখন তিথি দৌঁড়ে এসে বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“কুহু তোর রেজাল্ট দিয়েছে! জি.পি.এ-5 পেয়েছিস। খুশি হোস নি! ”
–” হে হয়েছি!”
–“মনে হচ্ছে না!”
–“ওহো!”
–“তোর কি মন খারাপ!”
–“নাহ্”
–“তাহলে এভাবে কেন কথা বলছিস! তোর কি শরীর খারাপ!”
কঁপালে ও গলায় হাত দিয়ে জিগ্যেস করলো তিথি। আমি বললাম,,
–” নাহ্। ঠিক আছি। ফিট এন্ড ফাইন।”
তিথি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,
–“মনে হচ্ছে না।তুই সত্যি ঠিক আছিস তো?”
–“হে!”

তিথি চলে গেল। আমি সত্যি অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু প্রকাশ করতে পারাচ্ছি না। এ খুশির কোনো মূল্য নেই। তাই কাউকে দেখাতে চাই না। এ ভেবেই ছোট শ্বাস ফেললাম। তখনি নানু মা ডাকলেন। দৌঁড়ে নিচে আসতেই হকচকিয়ে গেলাম।সামনে ডায়মন্ড বসে। টেবিলের সামনে এক গাদা মিষ্টির প্যাকেট। আমি যেতেই নানু বলল,,
–” তুই 5 পেয়েছিস শুনে এত মিষ্টি নিয়ে হাজির হলো ডায়মন্ড!”

নানুর কথায় তার দিক তাকালাম ধন্যবাদ বলার জন্য। তার দিক তাকাতেই তার ভঙ্গিমা দেখে গা জ্বলে গেল আমার। কি বিচ্ছিরি সেই হাসি, সেই চাওয়া। দেখলেই গা রাগে রি রি করে। আমি মাথা নত করে এদিক সেদিক তাকালাম। কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারচ্ছি লোকটি তার লোভাতুর দৃষ্টিতে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে যাচ্ছে। দেখেই গা গুলিয়ে বমি আসচ্ছে। এই লোকটির নাম ডায়মন্ড হলেও তার ক্যারেক্টার বাংলা সিনেমার মিশা সওদাগরের মতো।

দেখলেই বমি বমি পায় ওয়াক! বড় মামা থাকতে এই লোকটিকে কখনো বাসায় আনতো না।আর আনলেও আমাদের কাউকে সামনে আসতে দিত না। আর আজ কি সিন্দর মিষ্টি নিয়ে চলে আসচ্ছে ভাব খানা এমন যেন না জানি তার সাথে কত ভাল সম্পর্ক আমাদের। এই লোকটি ইন্টারেস্টিং একটি কথা আছে। লোকটি নিগ্রোদের মতো কালো তাই তাকে আমরা ডাকি, “ব্ল্যাক ডায়মন্ড” বলে। একবার তো এক পিচ্চি তাকে দেখে ভয়ে চিৎকার কি বাবা গো বাবা।আমার ভাবনায় বাঁধা পড়লো লোকটির ডাকে। তার হলদে দাঁতে হেসে বলল,,

–” কেমন আছো কুহু!”
–“ভালো!”
–“বসো এখানে!”
–“না তারা আছে আমার!”
নানু মা সাথে সাথে ধমকে উঠলেন বললেন,,
–” এ কেমন বেয়াদবি কুহু বড় মানুষ কিছু বললে শুন্তে হয়! এ শিখিয়েছি তোরে! বস!”

আমার মন খারাপ হলো! সাথে নানু মার ব্যবহারেও অবাক? কেন করছেন এমন! আমি বসতে নিবো তখনি ফোনো কথা বলতে বলতে বাসার ভিতরে ঢুকেন ইউসুফ ভাই। তাকে দেখে অটোমেটিক হাত পা কাঁপা শুরু আমার। এক হাত দিয়ে অন্য হাত মুচড়ে যাচ্ছি। ইউসুফ ভাই ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলেন এখানে হচ্ছে টা কি! নানু মা কিছুটা ঘাবড়ে গেছেন। তাউ মুখে হাসি রেখা টেনে বললেন,,

–“আরে ইউসুফ! আয় দাদু ভাই বস!”
তিনি নামুর কথা পাত্তা না দিয়ে ডিরেক্ট প্রম্ন ছুঁড়লেন ডায়মন্ড কে,
–“তুমি এখানে? রাহুল ভাইয়াতো বাসায় নেই!আউট অফ টাউন!তাহলে?”
ডায়মন্ড হেসে বলল,,
–” আমি কুহুর কাছে এসেছি। না মানে আজকে ওর রেজাল্ট দিল। এত ভাল রেজাল্ট শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।কি হলো কুহু বসছো না যে? বসো?”
তখনি ইউসুফ ভাই চোখ-মুখ শক্ত করে বলে উঠলেন,,
–” কুহু রুমে যা! এখন এই মুহূর্তে!”

আমি তখনি দৌড়ে উপরে চলে গেলাম। তারপর উকি দিয়ে নিচে তাকালাম। ইউসুফ ভাই ভ্রুকুটি কুচকে বললেন,
–” আজ তো তাহলে তিথিরও রেজাল্ট। শুধু মিষ্টি কুহুর জন্য কেন?”
ডায়মন্ড তখন হাসার চেষ্টা করে, আমতা আমতা করে বলল,,
–” না মানে ওই আর কি! দুজনের জন্য!”
এটুকু বলতেই যেন ঘাম ছুটে গেছে ডায়মন্ডের। তিনিও ইউসুফ ভাইকে এক প্রকার ভয়ই পান বলতে গেলে। এর আগেও ডায়মন্ড আমার কাছ ঘেঁষার ট্রাই করেছিল। ইউসুফ তখন ইশরা ইঙ্গিতে অনেক কিছু বলেছিলেন। এর পর কয়েকদিন এই আপদের অত্যাচার বন্ধ্য ছিল। আর এখন আবার শুরু। ইউসুফ ভাই তার বরাবর পা তুলে বসতেই সে দাঁড়িয়ে গেল, ইউসুফ ভাই তখন বললেন,,,

–” তো তিথি কই!”
দাদু বললেন,,
–” কি জেরা শুরু করেছিস? ওকে? বাবা তুমি ব..!”
নানু মাকে তার কথা পুরো করতে না দিয়ে ইউসুফ ভাই বললেন,,
–” তুমি এখন যেতে পারো!”
ডায়মন্ড মুখ কালো করে চলে যেতেই নানু মা ঘেন গেন করতে শুরু করলেন।ইউসুফ ভাই সে দিকে কান না দিয়ে বড় বড় পা ফেলে উপরে আসতে দেখে এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে আসলাম। খাটের এক কোনে জড়সড় হয়ে বসে রইলাম।উনি যে আমার ঘরেই আসচ্ছেন তা আমি ১০০% সিউর। এভেবেই গায় কাঁটা দিয়ে উঠচ্ছে।

আমার রুমের দরজা দাম করে খুলে ভিতরে ঢুকলেন উনি। তার ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। হাত পা কাঁপা শুরু।হৃদস্পন্দন যেন চক্রবৃদ্ধি হাড়ে বাড়চ্ছে। উনার লাল টকটকা চোখ আর মুখ দেখে ভয়ে গলা শুকুয়ে কাঠ। উনি দ্রুত বেগে আমার দিকে তেড়ে এসে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরলেন। হঠাৎ করে তার এমন আক্রমণে হার্টফেল করার উপক্রম। চোখ দুটি খিচে বন্ধ করে তার হাত দুটো খামচে ধরে আছি।ইউসুফ তখন হিসহিস করে বলল,,

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৭

–” খুব শখ পরপুরুষের সামনে যাওয়ার? হুম?(বলে আরেকটু চেপে ধরলেন আমি চোখ বন্ধ করেই “আহ্” করে উঠলাম..! সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দাঁতে দাঁত চেপে আবার বললেন) মানা করেছিলাম না? তাহলে কেন গেলি? তাও ওই ইতরের সামনে? ”
আমি এবার ব্যথা শইতে না পেরে কেঁদে দেই। তাতেও তার হেলদুল হলো না। উল্টো ধমকে বললেন,,
–” একদম কাঁদবি না! কাঁদলে চোখ দুটো এখনি পকেটে করে নিয়ে যাবো! বেদ্দপ? আর তুই নিচে কেন গেছিস! কি হলো বলছিস না কেন?”
–” অ…আমি জানমাত না! ন..নানু মা ডেকেছিলেন!আমি জানতাম না ডায়মন্ড ভাই এসেছে!”
ফুঁপিয়ে কেঁদে কাঁপা স্বরে কথা গুলো বললাম। ইউসুফ ভাই আমাকে ছেড়ে দিলেন।আলতো হাতে চোকের পানি মুছে দিয়ে বললেন,,

–“সরি বাবুইপাখি! আমার মাথা ঠিক ছিল না। সরি! কান্না করিস না! আচ্ছা এই দেক কানে ধরেছি!”
আমি নিঃশব্দে কেঁদেই যাচ্ছি। কষ্ট লাগচ্ছে খুব। রাগে অভিমানে তার দিক তাকালাম না। কেন তাকাবো? আজ কত দিন পর তিনি আমার সামনে তাও এমন রুড ব্যবহার করছেন। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। ইউসুফ ভাই আমার মুখ তার দিক ঘুরিয়ে ইনোসেন্ট ফেইস করে তাকিয়ে বললেন,,
–” সরি!”

তার এমন মুখ খানা দেখে বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো। সুন্দর মুখ খানা কেমন শুখনো হয়ে আছে। পছন্দের চুল গুলো এলোমলো ভাবে কঁপালে লেপ্টে আছে। অাগে থেকে অনেক খানি শুকিয়ে গেছেন। তার এই হাল দেখে বুকে ছ্যাত করে উঠলো। কি হাল তার চেহারার। আমি সইতে না পেরে আমি ইউসুফ ভাইয়ার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কেঁদে দিলাম। ইউসুফ ভাইয়াও পরম যত্নে আগলে নিলেন তার বুকে শক্ত করে। আর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
–” প্লীজ বাবুইপাখি কাঁদিস না! প্লীজ!”

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৯