আমার তুমি পর্ব ১৮

আমার তুমি পর্ব ১৮
জান্নাত সুলতানা

-“কিভাবে?
মাথা ঠিক আছে তোর?
কি সব বলছিস?”
-“একদম ঠিক আছে।
ভাব যদি বর্তমান এমপি মহোদয় নমিনেশন না পায়?”
-“মানে?”
সাদনান উত্তর দেয় না। শুধু বাঁকা হাসে।
রাহান বোঝলো এই হাসি মানেই ভয়ংকর কিছু চলছে তার বন্ধুর মাথায়।
তবে তা আর সে জানতে চাইলো না।

-“বোম টা টাইম বোম ছিল।”
রাহান ফোন টা কানে নিয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান কে বলে।
ওয়াসিফ দেওয়ান বড্ড চিন্তিত হলেন।
সাথে আঁতকে ওঠেন।
কিন্তু নিজে কে যথাসম্ভব শান্ত রেখে জিজ্ঞেস করে
-“সবাই সেফ আছে? ”
-“হ্যাঁ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাদনান আগেই সবাই কে কথা টা জানিয়ে দিয়েছে। তাই ওনারা প্রথমে মিটিং করার জন্য আগে যে জায়গায় করেছে ঠিক তবে সেটায় আমরা যাই নি।
নতুন আরেক জায়গায় বসিয়েছে লোক জন।”
রাহান নিজের কথা শেষ সাদনানের হাতে ফোন টা ধরিয়ে দেয়।
সাদনান ফোন টা নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ওয়াসিফ দেওয়ান কে বলে উঠে

-“কিছু করার প্রয়োজন নেই আপনার।
এখন যা করার জণগণ করবে।”
-“বোকা নই আমি।
আগে থেকে জানতে ব্যাপার টা তুমি। চাইলে আইনের সাহায্য নিয়ে কিছু করতে পারতে।
কিন্তু না তুমি তা করো নি।
কারণ টা আমি খুব ভালো করেই বোঝে গিয়েছি।

তখন শুধু কিছু সংখ্যক মানুষ জানতো আর এখন গোটা জেলা জেনে নিলো।
তবে আমি নির্বাচন কমিশন অফিসে কথা বলবো ব্যাপার টা নিয়ে।”
ওয়াসিফ দেওয়ান এর কথার কোনো উত্তর করে না সাদনান।
নিঃশব্দে ফোন কাটে।
রাত এখন প্রায় দশ টার বেশি সময় বাজে।
এখন শহরে যাওয়া সম্ভব নয়।

তাই এখানের এক চেয়ারম্যান এর বাড়িতে আজ তারা রাত টা থাকবে কাল সকালেই নিজের গন্তব্য রওনা দেবে।
এই চেয়ারম্যান এর সাথে ওয়াসিফ দেওয়ান এর কোনো এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় আছে।
আর ওয়াসিফ দেওয়ান কথা বলে আজ রাত টা থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
যদিও হবু এমপি হিসেবে তারা সাদনান কে আজ যেতে দিতো না।
আর নিজ থেকে মন্ত্রী হতে প্রস্তাব পেয়ে চেয়ারম্যান আহ্লাদে আটকান হয়ে গেছে।
তাই তো ভীষণ বন্দবস্ত করে এমপি কে আজ চেয়ারম্যান বাড়ি নিমন্ত্রণ জানিয়ে চেয়ারম্যান।

-“মেয়ে টা কে ছিল?
কবির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সামনে রাতের অন্ধকারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
কিন্তু হঠাৎ বাবার কণ্ঠে এমন প্রশ্নে অবাক হয়ে পেছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে
-“কোন মেয়ে?”
-“নাটক করো না।

দুপুরে যে মেয়ে টাকে তোমার গাড়ি করে হোস্টেল পৌঁছে দিয়ে ছিলে।”
কবির নিজের কুঁচকানো ভ্রু জোড়া এবার ঠিক করে নেয়।কিন্তু ওর মুখ টা এবার চরম বিরক্তিতে পরিণত হলো।
তার বাবা তকে অনুসরণ করছে?
সিরিয়াসলি ছেলে মেয়ে পটাতে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। আর তার বাপ সেটা নিয়ে তাকে আবার গোয়েন্দাদের মতো জেরাও করছে? এসব ভাবা যায়?

কিন্তু কিছু করার নেই তার বাপ তার সাথে সব সময়ই এভাবে কথা বলে।
কবির বিরক্ত হলেও তা আবার নিমেষেই উধাও হয়ে যায়।
বাবা তার জন্য নিজের সব ত্যাগ করেছে।
সব সময় তার পাশে ছায়ার মতো থেকেছে।
মা নেই সেটা উপলব্ধি করতে দেয় নি।বাবা মা দুই টাই হওয়া আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
কিন্তু চাইলেই কি সব সম্ভব?

কবির এসব হাবিজাবি চিন্তা করে শান্ত কণ্ঠে বাবা কে বলে
-“কাল ঠিক তিন টায় তোমার অফিসের পাশে রেস্টুরেন্টে থাকবা।
তোমার সব কনফিউশান দূর করে দেবো।
এখন চলো ঘুমাতে যাও।”
কালাম খাঁন আর কিছু বলে না ছেলে যখন একবার বলেছে তার মানে ঠিক কাল তার সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবো।
কিন্তু কথা হলো আজ আর তিনি ঘুমুতে পারবে না।

প্রিয়তা রাত দশ টার দিকে সারা সহ ও পরীক্ষার প্রয়োজনীয় জিনিস সব গুছিয়ে নিলো।
সারা প্রিয়তা এক সাথেই আজ পড়েছে সাদনানের ছোট লাইব্রেরীতে।
এই বাড়িতে ছোট একটা লাইব্রেরী আছে।

যেটায় অনেক বই আছে।
সেখানেই সারা আর প্রিয়তা পড়তে বসেছে।
আজ সারা থাকবে প্রিয়তার সাথে। মূলত এটা আম্বিয়া মির্জার নির্দেশ।
কারণ টা প্রিয়তা বুঝতে পেরেছে।

কারণ সারা কে সাথে থাকার কথা বলাতে সালেহা বেগম অমত পোষণ করলে তিনি সোজা বলে দিয়েছেন বউ মানুষ একা কিছুতেই থাকতে দেওয়া যাবে সাথে বয়স কম আবার চালায় ফোন। তার ধারণা মতে প্রিয়তা যদি রাত জেগে কোনো পরপুরুষ বা কোনো খারাপ কাজ করে?
সাথে এটাও বলেছে তিনি প্রিয়তা এসএসসি পরীক্ষা পর আর পড়া লেখা করাবে না।
বউ মানুষ আবার এতো পড়া লেখা কিসের?

বউ তো বউই সে সংসার করবে সে কেন বাহিরে স্বামীর সাথে ঘুরেবেড়াবে?
প্রিয়তা কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ডান চোখ দিয়ে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে বইয়ের উপর পরে।
সারার নজর তখন প্রিয়তার দিকে যায়।
সারা প্রিয়তা কে কাঁদতে দেখে একটু অবাক হয় না। কারণ আম্বিয়া মির্জা সত্যি আজ বড্ড কটু কথা বলেছে।
আর একটা মেয়ের কাছে এই কথা গুলো খারাপ লাগবে এটাই স্বভাবিক।
সারা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে এসে এক হাতে প্রিয়তা কে জড়িয়ে নিয়ে স্বান্তনার স্বরে বলল
-“দাদি আগের দিনের মানুষ।

তুই তো জানিস তাই একটু বেশি বাচবিচার করে চলাফেরা করি আমরা সবাই।
আর তাছাড়া লেখা পড়া বন্ধ করে দিবে বলেছে?
দেয় নি তো।
আমার ভাই থাকতে এটা সম্ভব হবেও না।
এটা তুই আমি সবাই জানি।
দাদিও জানে।কিন্তু রাগের মাথায় বলে ফেলেছে।
তুই মন খারাপ করিস না।
এখন চল ঘুমিয়ে পড়ি।”
প্রিয়তা শুনে সারার কথা কোনো উত্তর দেয় না।
শুধু উঠে গিয়ে বিছানার এক পাশে চুপ চাপ শুয়ে পড়ে।
সারাও গিয়ে প্রিয়তার পাশে শুয়ে পড়ে।

প্রিয়তা সারা দুই জন পরীক্ষা শেষ হল থেকে বেড়িয়ে আসে।
দুই জনে একই হলে পড়েছে।
তবে দুই জনে দুই সারিতে।
প্রিয়তা সামনে সারাও সামনে।
দুই জনের পরীক্ষায় ভালো হয়েছে। সহজ পরীক্ষা ছিল বাংলা।
সারা প্রিয়তা কথা বলতে বলতে কলেজ হতে বেরিয়ে আসে।
কাল পরীক্ষা নেই।

তবে প্রিয়তার মন টা বড্ড ছটফট করছে।
তার একমাত্র কারণ হলো সাদনান আসার কথা এসছে কি?
ওর মন সাদনান কে দেখার জন্য ছটফট করছে।
গেইট দিয়ে বাহিরে এসেই দেখলো অনেক ভীড় মানুষ জন গিজগিজ করছে।
প্রিয়তা সারা সেই ভীড় ঠেলে একটু রাস্তার সাইডে এসে একটু ফাঁকা জায়গা দাঁড়ালো।
এখানেও মানুষ আছে।
তবে বেশি না।

প্রিয়তা চোখ এদিক সেদিক কিছু খুঁজে চলছে।
সারা পাশে দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছে।
তার ঠিক মিনিট দুই এর মাথায় সাদনান এর কালো গাড়ি টা দেখা গেলো।
কিন্তু তার বিপরীত দিক হতে রাহাতের গাড়ি টাও এসে দুই দিক হতে দুই টা গাড়ি ওদের সামনে থামে।
রাহাত জানতো না সাদনান আসবে নয়তো ও আসতো না।

-“আমি সারা কে নিয়ে বাড়ি যাই?”
রাহাত গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞেস করে
সাদনান শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে
-“সাথে ড্রাইভার নিয়ে যাও।”
-“আচ্ছা।”
রাহাত বাধ্য ছেলের মতো রাজি হয়ে যায়।
সারা গিয়ে ততক্ষণে পেছনে বসে পড়েছে।
রাহাতও গিয়ে বসে।

অতঃপর তারা এই স্থান ত্যাগ করে।
প্রিয়তা তখনো সাদনান এর দিকে একটু পর পর আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।
সাদনান সেটা লক্ষ করে ঠোঁট এলিয়ে হাসে। কিন্তু সেটা প্রিয়তার নজরে আসে না।
তার কারণ সাদনান মাক্স পড়ে আছে।

আমার তুমি পর্ব ১৭

-“বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই?”
সাদনান পাঞ্জাবির হাত গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে।
প্রিয়তা সে দিকে একবার তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠে
-“ইচ্ছে না থাকলে বুঝি রেখে যাবেন?
-“না, একদম না।

আমার তুমি পর্ব ১৯