আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১১

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১১
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

যে ছেলেকে কামিনী মাথায় রাখে নি উঁকুনের ভয়ে আর মাটিতে রাখে নি পিঁপড়ার ভয়ে সেই আদরের ছেলেকে তোড়ার বাড়ির লোকজন বেঁধে রেখেছে!যে ছেলেকে কামিনী জীবনেও একটা টোকা দিয়ে দেখে নি সেই ছেলেকে তোড়ার বাড়ির লোকজন মারধর করেছে!

এই নিউজ শোনামাত্র কামিনী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।
জারিফ চৌধুরী এবার পড়ে গেলেন মহা ঝামেলায়। তিনি এখন কামিনীর জ্ঞান ফেরাবেন না কুশানকে আনতে যাবেন সেই চিন্তায় শেষ হয়ে গেলেন।
তখন ইরা,মিরা,লিরা তাদের স্বামীদের নিয়ে তোড়াদের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিছুক্ষন পর কামিনীর জ্ঞান ফিরে আসলো।কামিনীর জ্ঞান ফেরা মাত্রই কুশান কুশান বলে চিৎকার করতে লাগলেন।তখন জারিফ চৌধুরী অনেক বুঝিয়ে কামিনী কে শান্ত করলো।আর বললো কিছুই হয় নি কুশানের।তুমি একটু শান্ত হও।
কিন্তু কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা কিছুতেই শুনলো না।তিনি একা একাই বাড়ি থেকে বের হলেন।জারিফ চৌধুরী তা দেখে নিজেও কামিনীর পিছু পিছু চলে গেলেন।

এদিকে কুশানকে এরকম বাঁধা অবস্থায় দেখে তোড়া বার বার তার বাবাকে রিকুয়েষ্ট করলো যেনো তারা কুশানকে ছেড়ে দেয়।কিন্তু গোলাপ সাহেব তোড়ার কথা কিছুতেই শুনলেন না।তিনি উলটো চামেলি বেগমকে বললেন, তোড়াকে ঘরে নিয়ে যাও।

তোড়া তার বাবার কথা শোনামাত্র বললো,না আমি যাবো না কোথাও।প্লিজ কুশানকে ছেড়ে দাও তোমরা।
গোলাপ সাহেব এবার তোড়ার কাছে এগিয়ে এসে বললো,তুই চাচ্ছিস কি তোড়া?তুই কি আবার ওই বাড়িতে যেতে চাচ্ছিস?এই ছেলের সাথে তুই এখনো একসাথে থাকার কথা ভাবছিস?
তোড়া তার বাবার প্রশ্ন শুনে কুশানের দিকে তাকালো।কুশানও তোড়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
তোড়া তখন বললো, হ্যাঁ।যেতে চাচ্ছি। আমার ভাগ্যে যেটা আছে সেটাই হবে।প্লিজ ছেড়ে দাও বাবা কুশানকে।
হেনা তোড়ার কথা শুনে এগিয়ে এসে বললো,

ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নে তোড়া।তুই কি আবার ওই জাহান্নামে যেতে চাচ্ছিস?
কামিনী আর তার মেয়েরা যে ডেঞ্জারাস!তোকে যদি মেরে ফেলে?
তোড়া তখন বললো,তোমরাও তো কম ডেঞ্জারাস নও।কিভাবে নির্দোষ ছেলেটাকে মারছো?
ওকে মেরে কোনো লাভ নাই।যদি শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছা থাকে ওর মা আর বোনদের দাও।ছেড়ে দাও কুশানকে।
গোলাপ সাহেব তখন বললো তুই যদি কুশানের সাথে ওই বাড়িতে আবার যাস তাহলে কিন্তু আমাদের বাড়িতে আর আসতে পারবি না।কারণ ঐ রকম একটা জঘন্য পরিবারে আমরা তোকে কিছুতেই পাঠাবো না।আর ঐ পরিবারের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্কও নাই।

তোড়া তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, আব্বু এভাবে কেনো বলছো?আমি কি নিজের ইচ্ছাতে বিয়ে করেছি নাকি?তোমরা তো নিজেরাই বিয়ে দিয়েছো আমাকে।এখন এরকম করছো কেনো?
গোলাপ সাহেব তখন বললো এতো যুক্তি শুনতে চাই না আমি।তুই সাফ জানিয়ে দে কি করতে চাস?
তোড়া তার বাবার কথা শুনে নিজেই কুশানের বাঁধন খুলে দিতে লাগলো।
সায়ক তখন বললো তোড়া কি করছিস এটা?ওর বাঁধন খুলিস না এখনি।ওর বাবা মাকে আগে আসতে দে।
তোড়া কিছুতেই সায়কের কথা শুনলো না।সে কুশানের বাঁধন খুলে দিয়ে বললো, কুশান চলে যাও এখন।আর কখনোই আসবে না এ বাড়িতে।

কুশান তখন বললো আমি তোমাকে ছাড়া যাবো না তোড়া।তাছাড়া তুমি তো কথা দিয়েছো আমার সাথে যাবে তুমি।এই বলে কুশান সবার সামনে তোড়ার হাত ধরলো।
সায়ক এবার গোলাপ সাহেবের কানে কানে বললো,এখন কি করবেন চাচা?তোড়া তো এই ছেলেরই পক্ষ নিচ্ছে।
গোলাপ সাহেব তখন বললো কেউ যদি জেনে শুনে বিষপান করে তাতে আমার কিছুই করার নাই।আমি কখনোই ওকে বেঁধে রাখি নি।ওকে পূর্ন স্বাধীনতা দিয়েছি আমি।আজও সেটাই দিলাম।এই বলে গোলাপ সাহেব চলে গেলেন।

সায়ক নিজেও আর দাঁড়িয়ে না থেকে তার বন্ধুদের নিয়ে চলে গেলো।
চামেলি আর হেনা বেগম আবার তোড়াকে বোঝাতে লাগলো।যে এখনো সময় আছে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নে তোড়া?
তোড়া সাফ জানিয়ে দিলো সে কুশানের সাথেই থাকতে চাই।
হেনা আর চামেলি বেগম সেজন্য আর কিছু বললো না।কারণ তোড়া এখন বড় হয়ে গেছে।সে নিশ্চয় তার ভালো টা বোঝে।

কুশানের গাল দুই টা একদম লাল হয়ে গেছে।ফর্সা গালে চড় মারার দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।তোড়া হঠাৎ কোনো কথা না বলে কুশানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।তার কুশানের জন্য খুব খারাপ লাগছে।সে নিজেই নিজেকে আজ বকতে লাগলো।কারণ সে তো নিজেও কামিনী আর তার মেয়েদের অপরাধের জন্য সব সময় কুশানকেই দায়ী করতো।আর আজ তার বাবাও কামিনীর করা অপরাধের জন্য কুশানকেই মারলো।

কুশান তোড়াকে কাঁদতে দেখে বললো, তোমার আবার কি হলো?মার খাইছি আমি।আর কাঁদছো তুমি?
তোড়া চুপচাপ কেঁদেই যাচ্ছে।এতোদিন কুশানের উপর করা জমানো রাগগুলো তার কান্না হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।সে আগেও কুশানের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে আর বিয়ের পর থেকেও সেই একই ব্যবহার করে যাচ্ছে।
কুশান এবার তোড়ার মুখটি উপরে তুলে তার কপালে একটা কিস করে বললো,

আমি জানতাম এই রকম একটা দিন আসবে।তুমি আম্মু আর আপুদের ব্যবহারে মন খারাপ করবে আর তার জন্য শুধু আমাকেই দোষারোপ করবে।এই ভয়েই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইতাম না।শুধু সময় চাইতাম তোমার কাছে।কারণ আমি অপেক্ষা করছিলাম আমার পড়াশোনা কম্পিলিট হওয়ার জন্য।যাতে করে আমি একটা জব করতে পারি।যাতে নিজে কিছু ইনকাম করতে পারি।পরের অধীনে আমি থাকতে পারলেও তুমি যে পারবে না সেটা আমি জানতাম।আর পুরুষ মানুষের নিজের ইনকাম না থাকলে তাকে যে কত টা মেরুদণ্ডহীন ভাবে বেঁচে থাকতে হয় তা আমার থেকে কেউ ভালো জানে না।

আমি আমার আব্বুকে দেখি,সবসময় আম্মুর থেকে টাকা চেয়ে নেয়,একটা সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা হলে খেতে পারে না।অন্য একটা বাহানা দেখিয়ে টাকা নেয়।আমার বোন জামাই দের ও সেই অবস্থা।আমি সবসময় চাইতাম আগে নিজে কিছু করবো তারপর বিয়ে করবো।কারণ বিয়ের পর বউ এর একটা পার্সোনাল জিনিস কেনার জন্য যাতে মায়ের কাছে হাত পাততে না হয়।তাকে যেনো বলতে না হয় আমার বউ এর পিরিয়ড হয়েছে সেজন্য প্যাড কিনতে হবে,আমার বউ আইস্ক্রিম খেতে চেয়েছে টাকা দাও,আমার বউ আজ ফুঁচকা খেতে চাইছে সেজন্য টাকা দাও ঘুরতে বের হবো।আমার বউ এর জন্য জামা কিনতে হবে টাকা দাও।

কিন্তু আমার স্বপ্ন পূরন হওয়ার আগেই বাসার সবাই বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেলো।এটা নাকি আমাদের বংশের একটা নিয়ম।
কুশান তখন বললো বিশ্বাস করো সেদিন আমি নিজের ইচ্ছাতে পাত্রী দেখতে আসি নি।আমার দুলাভাই রা তাদের এক রিলেটিভের বাড়ি যাবে বলে জানিয়েছে।কিন্তু সেই পাত্রী যে তুমিই হবে সেটা আমি কখনোই ভাবি নি।হয়তো এটাই আমাদের নিয়তি ছিলো।

তোড়া কুশানের এতোগুলো কথা শুনেও সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে আছে আর কাঁদছে।কারণ তার চোখের পানি আজ কিছুতেই থামছে না।
কুশান এবার তোড়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো আমি হলাম আমার মায়ের কলিজা।তিন মেয়ের পর আমার জন্ম হয়েছো।বুঝতেই পারছো আমি কত টা প্রিয় সবার?তুমি তো নিজের চোখেই দেখলে আম্মু এখনো আমাকে নিজের হাতে খাওয়ায় দেয়।

আমার আম্মু আমাকে ভীষণ আদর করে।কখনোই কোনো জিনিষের অভাব রাখে না আম্মু।আকাশের চাঁদ চাইলে মনে হয় সেটাও এনে দিতে চাইবে।যখন যা চাইতাম তখন তাই দিয়েছে আমাকে।আমার জীবনে কোনো অপূর্ণতাই রাখে নি তারা।সেইজন্য তো আমাকেও সেক্রিফাইস করতে হয়।তারা যা বলে সেটাই শুনতে হয় আমাকে।যা করতে বলে সেটাই করতে হয়।এই যে তোমাকে তারা কটু কথা বলছে,নানাভাবে অপমান করছে তা শুনে তো আমারও খারাপ লাগে।তোমার থেকে দ্বিগুন কষ্ট আমারই হয়।

আমি তো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রতিবাদ করতে পারছি না।এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে তো আমাকে একটু সময় দিতে হবে তাই না?এই সহজ জিনিস টা তোমাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।
হঠাৎ ইরা,মিরা,লিরার কন্ঠ শোনা গেলো।তারা তিন বোন একসাথে চিৎকার করে করে বলছে,
কার এতো বড় সাহস যে আমার ভাইকে বেঁধে রাখে?সাহস থাকলে বের হয়ে আসুক সে একবার।যে হাত দিয়ে আমার ভাইকে মেরেছে সেই হাত একদম ভেঙে ফেলবো আমরা।

ইরা,মিরা লিরার চিল্লানি শুনে কুশান নিজেই বের হয়ে আসলো।
কুশান কে দেখামাত্র তিনবোনই দৌঁড়ে আসলো।আর কুশানের গাল মুখ ঠোঁট স্পর্শ করে বললো,ভাই তুই ঠিক আছিস?ভাই তোর কিছু হয় নি তো?

কুশান তখন হাসতে হাসতে তার বোনদের বললো,এই তোরা কি পাগল হইলি নাকি?কিছুই হয় নি আমার।ঠিক আছি আমি।
মিরা তখন বললো আব্বুকে যে ফোন করে বললো তোমার ছেলেকে বেঁধে রেখেছি।ইচ্ছামতো পিটাচ্ছি।সাহস থাকলে নিজেরা এসে নিয়ে যাও কুশানকে।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, এমনিতেই মজা করে বলেছে।তোরা সবাই যাতে এই বাড়িতে আসিস সেজন্য বলেছে।
লিরা তখন বললো, Are you crazy bro?What are you saying?
ইরা বললো, এই রকম একটা ব্যাপার নিয়ে কেউ ফান করে?বাসার সবাই কত টা টেনশনের মধ্যে পড়েছে তোর কি ধারণা আছে?

মিরা তখন বললো, আম্মু তো শুনেই কুশান কুশান বলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।
কুশান তখন বললো তোরা অনেক হাঁপাচ্ছিস, আগে একটু রেস্ট নে, তারপর বুঝিয়ে বলছি সব।এই বলে কুশান তোড়াকে ডাকতে লাগলো আর বললো,আপুদের জন্য কিছু ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত নিয়ে এসো।
তিনবোন শরবতের কথা শোনামাত্র একসাথে বললো, না,না।লাগবে না শরবত।আমরা ঠিক আছি।
কুশান তখন হাসতে হাসতে বললো পেট খারাপের ভয় পাচ্ছিস নাকি আবার?কিছুই হবে না।এই বলে কুশান তাদের বোনদের নিয়ে রুমে চলে গেলো।

ইরা,মিরা,লিরা কিছুই বুঝতে পারছে না।তারা আসলো কিসের জন্য আর দেখছে কি এসব?
শাহিন,মাহিন,তুহিনও কিছু বুঝতে পারছে না।
অন্যদিকে চামেলি বেগম আর হেনা বেগম এখনো দূরেই দাঁড়িয়ে আছে।কারণ গোলাপ সাহেব যদি দেখে তারা কুশানের আত্নীয় স্বজনদের সাথে কথা বলছে তাহলে হয় তো তাদের উপরও রাগ করবে।
সেজন্য তোড়া তার কাজিন স্বর্ণার সাহায্য নিয়ে নিজেই নাস্তা রেডি করতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর কামিনীও চিল্লাতে চিল্লাতে তোড়াদের বাড়িতে প্রবেশ করলো।কিন্তু কামিনী যখন দেখলো কুশান সুস্থ সবল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে তখন তিনি এগিয়ে এসে বললেন,বাবা কি দেখছি এসব?তুই তো দেখি ঠিকই আছিস।তোকে নাকি ওরা বেঁধে রেখেছে। কোথায় মেরেছে বাবা?এই বলে কামিনী ও কুশানের গাল মুখ স্পর্শ করতে লাগলো।
কুশান তখন তার মাকেও বোঝাতে লাগলো যে তার কিছুই হয় নি।

কুশানের এমন কথা শুনে কামিনী রেগে আগুন হয়ে গেলো। আর চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,এটা কি ধরনের মজা বাবা?শুনে তো আমার জানটাই বের হতে ধরেছিলো।
কুশান তখন বললো,তোমরা আমাকে নিয়ে সবাই যেভাবে অস্থির হচ্ছো মনে হচ্ছে দুনিয়ায় আমিই একমাত্র আদরের সন্তান।এভাবে মনে হয় আর কারো বাবা মা আদর করে না।
কামিনী সেই কথা শুনে বললো এভাবে বলছিস কেনো বাবা?তুই তো আমাদের সবার চোখের মনি।তুই হলি আমাদের বংশের একমাত্র প্রদীপ।

কুশান তখন কামিনী কে শোফায় বসিয়ে বললো,আম্মু স্থির হয়ে বসো প্লিজ।আমার কথাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শোনো।এই বলে কুশান তার মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো আর বললো,
আমাকে বেঁধে রেখেছে আর পিটাচ্ছে শুনে তোমরা সবাই যেভাবে অস্থির হয়ে গেছো ঠিক সেভাবেই তোড়ার ফ্যামিলির লোকজন ও অস্থির হয়ে গিয়েছে।

পুলিশ আংকেল তোড়ার আব্বুকে সবকিছু বলে দিয়েছে আম্মু।তোড়াও কিন্তু তার বাবা মার একমাত্র সন্তান।তোড়াকে যখন তোমরা একের পর এক অপমান করেছো,তাকে এ বাড়িতে রাখবে না বলে জানিয়েছো,মাত্র এক দিন হলো বিয়ে হয়েছে তাতেই ডিভোর্সের ভয় দেখিয়েছো,নিজের হাত কেটে তোড়ার নামে পুলিশের কাছে কম্পিলিন করেছো এসব শুনলে কার বাবা মার মাথা ঠিক থাকবে?তোমরা যেমন আমাকে আদর করো আর ভালোবাসো তারাও ঠিক একই ভাবে তাদের মেয়েকে ভালোবাসে।সেজন্য তোড়ার ফ্যামিলির লোকজন রাগ করে আমাকে বেঁধে রেখেছে।আর মেরেছেও।

বুঝাতে পারলাম কি?
কামিনী তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো হ্যাঁ বুঝেছি।যে ছেলে জীবনেও বাবা মার হাতের মার খায় নি সে আজ তার শশুড় বাড়ির লোকজনের হাতের মার খেলো।
কিন্তু তুই এ বাড়িতে আসলি কিভাবে?তুই তো বন্ধুদের সাথে পিকনিকে গিয়েছিস?

কুশান তখন নিচ মুখ হয়ে বললো, আম্মু আমি মিথ্যা কথা বলেছি।আমি তোড়াকে নিতে এসেছিলাম।আমি ওকে কখনোই ডিভোর্স দিতে পারবো না।আর অন্য মেয়েকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না।এখন তোমরা কি করতে চাও সেটা সাফ জানিয়ে দাও।আমি কিন্তু তোড়াকে ছাড়া কিছুতেই যাবো না।

ইরা,মিরা,লিরা কুশানের কথা শুনে বললো,ভাই কি সব বলছিস?যে ফ্যামিলির লোকজন তোকে এভাবে মারলো সেই ফ্যামিলির মেয়েকে এখনো আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবি বলে ভাবছিস?
–হ্যাঁ ভাবছি।কারন তারা আমাকে মেরেছে নিজের মেয়েকে ভালোবাসে বলে,তারা আমাকে মেরেছে তাদের মেয়ের উপর হওয়া অত্যাচারের বদলা নেওয়ার জন্য?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো কিন্তু তুই তো তোড়াকে কিছু বলিস নি বাবা?অন্যায় করেছে ইরা মিরা লিরা।অন্যায় করেছে কামিনী।কিন্তু তারা তোকে কেনো মারলো?
কুশান তখন বললো, তারা তো আমার হাতেই তাদের মেয়েকে তুলে দিয়েছে,তাকে সারাজীবন সুখে শান্তিতে রাখবো বলে আমি নিজেও অঙ্গীকার করেছি।এখন সেই মেয়ে যদি কষ্টে থাকে,তার উপর যদি অত্যাচার করা হয় তখন তো সবাই আমাকেই ধরবে।

আমাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করবে কেনো আমি স্বামী হয়ে বউ উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করলাম না?
গোলাপ সাহেব পাশের রুম থেকে কুশানের লেকচার শুনছিলেন।কুশানের কথাবার্তা শুনে তিনি একদম আশ্চর্য হয়ে গেলেন।কারণ কুশান যা যা বলছিলো সব একদম সত্যি কথাই বলছিলো।গোলাপ সাহেবের ইচ্ছা করছিলো এখুনি গিয়ে কুশানের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে।এরকম সহজ সরল ভদ্র ছেলেটাকে তারা কোন দুঃখে মারতে গেলো?
কামিনী হঠাৎ করে বললো কুশান তোর কি লেকচার দেওয়া শেষ হয়ে গেছে?যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যা।

কুশান তখন বললো, আম্মু আমি তো বলেছি তোড়াকে ছাড়া কিছুতেই যাবো না আমি।
কামিনী তখন বললো আমি কি ওকে নিয়ে যেতে বারণ করলাম?তুই যখন ওই মেয়ের সাথেই থাকতে চাস তাহলে তো তোর উপর অযথা জোড় করে কোনো লাভ হবে না।থাক ওকে নিয়েই থাক।
কুশান তখন বললো,আমি জানতাম তুমি কখনোই আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে না।সেজন্যই তো সবসময় তোমার কথা মতো চলি আম্মু।

কামিনী তখন বললো আমার কথা এখনো শেষ হয় নি কুশান।তুই তো ভালো করেই জানিস আমার সংসারে সবাই আমার কথামতো চলে।আমি যাকে যেভাবে চলতে বলি সে সেভাবেই চলে।সেজন্য একটা কথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি আমার সংসারে তোর বউ যেনো অযথা মাতব্বরি না করে।আমি যেভাবে চলতে বলবো সেভাবেই চলতে হবে তাকে।কারন ওটা আমার সংসার।

কামিনীর কথা শুনে এবার গোলাপ সাহেব বের হয়ে আসলেন।আর এসেই বললেন,
আমার মেয়ে কি নদীর জলে ভেসে এসেছে না তাকে আমরা কুড়িয়ে পেয়েছি যে তাকে আপনার বাড়িতে পাঠাতেই হবে আমাদের।আমার মেয়ে স্বাধীন ভাবে বড় হয়েছে।তার যখন যেটা মন চাইবে সে তখন সেটাই করবে।
আপনার কথামতো সে কেনো চলবে?

কামিনী তখন বললো নিজের বাড়িতে যেভাবে চলেছে স্বামীর বাড়িতে গিয়েও কি সে সেভাবে চলবে?আপনি বাবা হয়ে কি মেয়েকে শিখিয়ে দেবেন তা না করে উস্কানিমূলক কথা বলছেন?

–আমি কোনো উস্কানিমূলক কথা বলছি না।তোড়ার যতটুকু করা দরকার ততটুকু সে অবশ্যই করবে।শশুড় শাশুড়ীর খেদমত করবে,ননদ দের দেখাশোনা করবে।রান্নাবান্নায় হেল্প করবে।সব করবে।এসব করতে তো মানা করছি না।কিন্তু এসবের বাহিরে তো তার নিজের একটা স্বাধীনতা আছে।আমি তো শুনেছি আপনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সে যেনো রান্নাঘরের আশপাশ না যেতে পারে,কখন কি রান্না হবে সব আপনার কথামতোই হবে,তারপর আরো অনেক কথাই শুনেছি।যা বাচ্চাদের সামনে বললাম না।ছেলেকে যেহেতু বিয়ে করিয়েছেন এখন একটু তাকে আঁচল থেকে বের করে আনুন।সে তো আর ছোটো নেই।এবার একটু তাকেও স্বাধীনতা দিন।

কামিনী তখন বললো আমার ছেলেকে আমি স্বাধীনতা দিবো না ঘরে বন্দি করে রাখবো সেটা আমার একান্তই পার্সোনাল ব্যাপার।আমার ছেলের ব্যাপারে খবরদার কেউ নাক গলাবেন না।আমার ছেলের ভালোমন্দ আমাকেই বুঝতে দিন।
গোলাপ সাহেব সেই কথা শুনে বললো সমস্যা তো এই জায়গাতেই আপনার।শুধু নিজের ছেলেকেই ভালোবাসবেন,কিন্তু তার সাথে যার বিয়ে দিয়েছেন তাকে ভালোবাসবেন না।আপনার মন মানসিকতা চেঞ্জ করুন কামিনী বেগম।তারপর তোড়াকে নিয়ে যায়েন।যেদিন বুঝতে পারবেন আপনার নিজের ছেলের পাশাপাশি তার বউকেও ভালোবাসতে পারছেন সেদিন এসে নিয়ে যাবেন আমার মেয়েটাকে।

এই বলে গোলাপ সাহেব কুশানের হাত ধরে বললো, বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিও।তোমার উপর আমাদের আর কোনো অভিযোগ নেই।কিন্তু শুধু তোমার ভরসায় আমি আমার মেয়েকে পাঠাতে পারবো না।কারণ ঐ বাড়িতে তো তুমি শুধু একাই থাকো না।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১০

তোমার আম্মু আর বোনদের আগে ভালো হতে হবে।তারা যেদিন তোড়াকে আপন করে নিতে পারবে, নিজের পরিবারের কেউ ভাববে সেদিন আমি নিজেই তোড়াকে রেখে আসবো।এই রিকুয়েষ্ট টা তোমাকে রাখতেই হবে।তা না হলে কিছুদিন পর আবার একটা অঘটন ঘটবে।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১২