অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৫৪

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৫৪
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল 

রাত সাড়ে এগারোটা। হোটেল রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। এখান থেকে সরাসরি সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। এই সিজনে বরাবরই সমুদ্র শান্ত থাকে। এখনো তাই। তবে শান্ত সমুদ্রতেও আলাদারকম সৌন্দর্য আছে। আকর্ষণ আছে। হিমশীতল বাতাস শরীর ছুয়ে যাচ্ছে। খোলা চুলগুলো এলোমেলোভাবে দুলছে। ঠান্ডায় কাঁপছে ঠোঁট সেদিকে কোন খেয়াল নেই মেয়েটার। ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে।

রুমে ঢুকে প্রিয়তাকে না পেয়ে বারান্দায় উঁকি দিয়েছিল রুদ্র। তখনই এই দৃশ্য দেখতে পেল। মেয়েটার মন খারাপ হয়তো। চারদিন হয়ে গেলো কক্সবাজার এসেছে। অথচ! ওকে নিয়ে সেভাবে হোটেল থেকে বের হতেই পারেনি রুদ্র। একদিন মাত্র বিচে নিয়ে গিয়েছিল। তাও মাত্র আধ ঘন্টার জন্যে। কী করবে? পরশু মাল ডেলিভারী। এর আগেই সব কাজ গুছিয়ে রাখতে হয়েছে ওকে। প্রিয়তা কয়েকবার বাইরে যাওয়ার বায়না করেছে। কী ব্যপার জিজ্ঞেস করেছে। কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি রুদ্র।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুদ্র একটা চাদর নিয়ে চলে গের প্রিয়তার কাছে। পেছন থেকে চাদরটা জড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ঠান্ডার মধ্যে এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কিছু গায়ে জড়িয়ে নিতে?’
প্রিয়তা জবাব দিলোনা। রুদ্র প্রিয়তাকে ধরে নিজের দিকে ঘোরালো। থুতনি ধরে মাথা উঁচু করে বলল, ‘কী হয়েছে? মন খারাপ কেন?’
রুদ্র প্রিয়তার চোখে চোখ রেখে বলল, ‘কোথায় ছিলেন?’
‘কাজ ছিল।’
প্রিয়তা জিজ্ঞেস করল না কী কাজ। শুধু বলল, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করব?’
‘করো?’

‘এখানে আসার আপনার অন্যকোন উদ্দেশ্য আছে তাইনা? আমাদের হানিমুনটা একটা কভার। রাইট?’
‘রাইট।’ কোনরকম ভনিতা না করে বলল রুদ্র।
প্রিয়তা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলল। হয়তো কষ্ট পেয়েছে। রুদ্রর খারাপ লাগল। ও প্রিয়তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘সরি। সব ঠিক থাকলে পরশু কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন তোমাকে এখানে সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখাব।’
প্রিয় রুদ্রর পিঠে হাত রাখল। বিষণ্ন গলায় বলল, ‘আমার খুব ভয় হয় রুদ্র। আমাকে একা করে দেবেন না প্লিজ। নিজের খেয়াল রাখবেন।’

রুদ্র কিছু বলল না। প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর বলল, ‘প্রিয়?’
‘হুম?’
রুদ্র প্রিয়তাকে ছেড়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কাল দুপুর অবধি ফ্রি আছি। কাল বের হবে? পরশুতো কুহুর জন্মদিন। ওর জন্যে গিফটও কিনে নেব।’
‘আচ্ছা। খাওয়া হয়েছে সাহেব?’
‘ উমহুম। তোমার?’

‘ না। রুমে খাবার দিয়ে গেছে। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি ওভেনে দিচ্ছি।’
রুদ্র পেটে হাত বুলিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল, ‘তাড়াতাড়ি হ্যাঁ? খুব ক্ষিদে পেয়েছে।’
‘যান আপনি।’ প্রিয়তা রুদ্রকে ঠেলে ভেতরে পাঠিয়েও দিল। রুদ্র ঢুকে গেল ওয়াশরুমে। প্রিয়তা বারান্দার দরজা বন্ধ করে খাবার ওভেনে দিতে দিতে আনমনেই হেসে উঠল।

বেশ ভালো ঠান্ডা পড়েছে। সকাল সকাল গলির রাস্তা দিয়ে হাঁটছে উচ্ছ্বাস। ঠান্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মোটামুটি ভারী একটা জ্যাকেট জড়িয়ে নিয়েছে গায়ে। চারপাশে আবছা কুয়াশা। নীরব রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভালোই লাগছে। হাঁটার এক ফাঁকে পাড়ার দোকান থেকে এক কাপ চা খেয়ে নিয়েছে। এখন শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। এমনি এমনি অনেক্ষণ হেঁটেছে। একঘেয়েমি কাটামে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল উচ্ছ্বাস। প্যাকেটটা নতুন। উচ্ছ্বাস খুলতে নিলেই পেছন কেউ ডেকে উঠল,

‘উচ্ছ্বাস?’
উচ্ছ্বাস থমকালো। মনে হলো কিছুক্ষণের জন্যে জমে বরফ হয়ে গেছে ওর শরীর। একবছরেরও বেশি সময় পর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত, কিন্তু অতি প্রিয় কন্ঠস্বর। অতি পরিচিত সেই ডাক। উচ্ছ্বাস মনে প্রাণে প্রার্থনা করল এটা যেন ওর ভ্রম হয়। ও চায়না আবার সেই রমনীর দেখা পেতে, তারসাথে কথা বলতে। একরাশ ইতস্তত ভাব নিয়ে পেছন ফিরে তাকাল উচ্ছ্বাস। এবারও উচ্ছ্বাসের প্রার্থনা বিফলে গেল।

ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাত মাসের গর্ভবতী নাজিফা। উচ্ছ্বাস ভালোভাবে লক্ষ্য করল প্রিয়তমাকে। আকাশি রঙের একটা শাড়ি পরে আছে। খোলা চুলগুলো একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো। সাতমাসের উঁচু পেট। রোগাপাতলা শরীরটা এখন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েছে। বেশ লাগছে দেখতে। তবুও চোখজোড়াতে কোথাও একটা বিষাদের ছাপ রয়েই গেছে। সেটা নজর এড়ায়নি উচ্ছ্বাসের। নাজিফা মলিন হেসে একটু এগিয়ে এসে বলল, ‘কেমন আছো?’
উচ্ছ্বাস জোরপূর্বক হেসে বলল, ‘ভালো। তুমি?’

‘ভালোই।’
উচ্ছ্বাস নাজিফার দিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে হেসে বলল, ‘আরে! প্রেগনেন্ট না-কি? কনগ্রাচুলেশনস্।’
নাজিফা মাথা নিচু করে হাসল। অতঃপর দুজনেই ধীরপায়ে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল। নাজিফা বলল, ‘আমের ভিলার সবাই কেমন আছে?’
‘ভালো আছে। তোমার স্বামী, শ্বশুরবাড়ির সবাই ভালো আছে?’
নাজিফা কয়েক সেকেন্ড চপ থাকল। অতঃপর তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল, ‘আছে। কুহুর কী খবর? নীরব ফিরেছে? বিয়ে কবে ওদের?’

‘ফেরেনি। তবে এই সপ্তাহেই ফিরে আসবে। দু সপ্তাহ পর বিয়ের ডেইট। ইনভেটেশন কার্ড পৌঁছে যাবে তোমাদের বাড়ি।’
‘ওহ।’
উচ্ছ্বাসের একবার ইচ্ছে করল জিজ্ঞেস করবে, এখানে কী করছে? ওরতো শ্বশুরবাড়ি থাকার কথা। পরে ভাবল হয়তো এইসময় মেয়েরা বাপের বাড়িতে থাকে, তাই এখানে আছে। তাছাড়াও নাজিফার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার যে ওর আর নেই। দু মিনিট চুপচাপ হাঁটল দুজনে। কেউ কোন কথা বলল না।

কুয়াশাঘেরা নীরব রাস্তা। ভারাক্রান্ত দুটো মন। কত না বলা কথা আছে, কতো কিছু শোনার আছে। অথচ বলার বা শোনার অধিকার কারো নেই। অস্বস্তি কাটাতে উচ্ছ্বাস প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরল। লাইটার দিয়ে সিগারেট জ্বালানোর সময় উচ্ছ্বাসকে ভালোভাবে খেয়াল করল নাজিফা। রোদে পুড়ে গায়ের রঙ তামাটে হয়ে গেছে। চোখের নিচে হালকা কালি পড়েছে। সিগারেটে পোড়া তামাটে ঠোঁটের কালচে ভাব আরও ফুটে উঠেছে। নাজিফা বলল, ‘আবার সিগারেট খাওয়া শুরু করেছো?’

‘ছাড়ার কারণ আছে কী?’
নাজিফা জবাব দিলোনা। কী জবাব দেবে? বুকটা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। করুণ দৃষ্টিতে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বিয়ে করছো না কেন?’
উচ্ছ্বাস ঠোঁট থেকে সিগারেট নামিয়ে হাসল। নাক দিয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া বেরিয়ে এলো। সকৌতুকে বলল, ‘কাউকে বিয়ে করার যোগ্যতা আমার আছে নাজিফা?’

‘সারাজীবন এভাবেই থাকবে?’
‘ক্ষতি কী?’
‘জীবনটা গুছিয়ে নাও উচ্ছ্বাস। এভাবে বাঁচা যায়না।’
উচ্ছ্বাস দাঁড়িয়ে গেল। প্রসঙ্গটা পছন্দ হচ্ছেনা ওর। নাজিফার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ফাঁকা রাস্তায়, প্রাক্তনের সঙ্গে এতক্ষণ যাবত গল্প করছো। তোমার স্বামী রাগ করবে না? সে জানে আমার ব্যপারে?’

নাজিফার মাথা নিচু কর‍ে লম্বা করে শ্বাস নিল। দু হাতে খামচে ধরল শাড়ির আঁচল। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, গা গুলিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে। বমি করে দেবে। কিন্তু শক্ত মনের মেয়েটা নিজেকে শক্ত রেখেই বলল, ‘আমাকে যেতে হবে। ভালো থেকো। আর পারলে জীবনটা গুছিয়ে নিও। জীবন কারো জন্যে থেমে থাকেনা, উচ্ছ্বাস।’

উচ্ছ্বাস নাজিফার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে হাসল। নাজিফা দ্রুত চোখ সরিয়ে চলে যেতে নিলে উচ্ছ্বাস বলল, ‘এইসময় এতো ঘোরাফেরা ঠিক না, নাজিফা। বাচ্চাটা তোমার। খেয়াল তোমাকেই রাখতে হবে। বাড়িতে থেকে রেস্ট করো। আর নিজের খেয়াল রেখো।’

নাজিফা দাঁড়াল না। পেছন ঘুরে তাকালোও না। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রাখল। আস্তে আস্তে হেঁটে ঢুকে গেল পাশের গোলিতে। নাজিফা চোখের আড়াল হতেই সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল উচ্ছ্বাস। নাকমুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো ঘন বিষাক্ত ধোঁয়া।

হ্যাঁ, এই নাজিফার প্রেমেই উচ্ছ্বাস পাগল ছিল। একটাবার তার দেখা পাওয়ার জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতো। গেইটের দিকে তাকিয়ে থাকতো চাতক পাখির মতো। তার কন্ঠস্বর শোনার জন্যে হাজাররকমের ছলনার আশ্রয় নিতো। আজ সেই নাজিফারই মুখোমুখি হতে চায়না উচ্ছ্বাস। চায়না তাকে দেখতে, তার কন্ঠস্বর শুনতে। কথায় বলে, যখন মায়া বাড়িয়ে লাভ হয়না, তখন মায়া কাটাতে জানতে হয়।

কিন্তু সব মায়া কী সত্যিই কাটিয়ে ওঠা যায়? কিছু মানুষ, কিছু স্মৃতি, কিছু ভালোবাসাকে কী ভুলে যাও বললেই ভুলে যাওয়া যায়? ঘুরে দাঁড়াও বললেই ঘুরে দাঁড়ানো যায়? যদি যায় তো উচ্ছ্বাস কেন পারেনা। আজও কেন নাজিফার কথা মনে পড়লে ওর চোখ জ্বালা করে? কেন হঠাৎই মাঝরাতে সশব্দে কেঁদে ওঠে? কেন নাজিফার স্বামীর কথা বলতে গিয়ে ওর দম আটকে আসছিল? কেন নাজিফাকে গর্ভবতী অবস্থায় দেখে ওর ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছিল? কাছে কোন এক বিল্ডিং থেকে সাউন্ড বক্সে গানের আওয়াজ পেল উচ্ছ্বাস-

তারে আমার আমার মনে করি
আমার হয়ে আর হইল না
দেখেছি,
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

কেন জানি নিজের ওপরেই হাসতে ইচ্ছে হলো উচ্ছ্বাসের। ভালোবাসার তীব্র যন্ত্রণার কথাতো সবাই জানে। তবুও কেন ভালোবাসে মানুষ? জীবন কারো জন্যে থেমে থাকেনা। কথাটা সত্যি। কিন্তু প্রাণোচ্ছলভাবে দৌড়ে চলা আর হাজার আঘাতে বিধ্বস্ত শরীরকে টেনে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। মুখে হাসি টেনে, ভালো আছি বলে প্রতিনিয়ত নিজেকে ঠকিয়ে যাওয়ার নামই বোধ হয় মানিয়ে নেওয়া। জীবনে এগিয়ে যাওয়া।

কক্সবাজার। হোটেল কল্লোল। বুক করে রাখা একটা টেবিলে আছেন করিম তাজওয়ার, সম্রাট আর পলাশ মীর্জা। শওকত মীর্জার আশার জন্যে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওনাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগমন ঘটল শওকতের। পাঁচ ফুট আটের মতো উচ্চতা। কাঁচাপাকা চুল। ক্লিন সেভ করা। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে। নিজের বাঁ পা হালকা টেনে এগিয়ে এলেন টেবিলের কাছে। সকলের দিকে তাকিয়ে সরল হাসি দিলেন। চেয়ারটা টেনে বসে বলল, ‘বেশি অপেক্ষা করালাম না-কি?’

করিমও মুখে হাসি ধরে রেখে বলল, ‘না, তা নয়। বেশিক্ষণ হয়নি এসেছি আমরা।’
‘ভাট না বকে কাজের কথায় আসি? খুব বেশি সময় নেই আমাদের হাতে।’ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল সম্রাট।
শওকত মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। আজকালকার ছেলেমেয়ে তো কথায় কম কাজে বেশি বিশ্বাসী।’
মনে মনে শওকতকে ঝেড়ে কয়েকটা গালি দিল সম্রাট। নিজের স্বার্থে খোড়াটাকে সহ্য করছে। ইচ্ছে করছে সমুদ্রের নোনা পানিতেই এটাকে চুবিয়ে মারতে। করিম বলল, ‘যাই হোক। সম্রাট শুরু করো।’

‘আপনার ছেলে, শান কোথায়?’ প্রশ্ন করল সম্রাট।
শওকত বলল, ‘ও ঢাকায়। কোনকারণে যদি ‘প্লান বি’ কাজে লাগাতে হয় ওকে ওখানে দরকার হবে।’
সম্রাট মাথা নাড়ল। বড় সাইজের একটা কাগজ টেবিলের ওপর বেছালো। একটা রঙিন কলম দিয়ে একটা জায়গা মার্ক করে বলল, ‘এটা হচ্ছে রূপসা বিচ।

এখান থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে ঐ গ্রিন মার্ক করা জায়গাটায় আমাদের লোক থাকবে। কাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। সোলার সিস্টেমের মাল ডেলিভারি দিতে আসবে সন্ধ্যা আটটায়। আমাদের সাজানো পরিকল্পনাও অনুযায়ী সোলার সিস্টেমের লোকেরা মাল নিতে আসবে নটায়। ঐ এক ঘন্টার মধ্যে সোলার সিস্টেমের লোক হয়ে মাল রিসিভ করব আমরা। ওদের বিদায় করে, আসল মাল লুকিয়ে নকল মালগুলো রাখব। তারপর আমাদের লোকেরা সাজবে ডেলিভারী ম্যান। আর এই রেড মার্ক করা জায়গাতে সোলার সিস্টেমের লোকেদের জন্যে অপেক্ষা করবে।’

এরপর কীভাবে কোন রাস্তা দিয়ে পাস করবে। চেকপোস্টগুলো কীভাবে সামলাবে সব একে একে বর্ণনা করে গেল সম্রাট। পলাশ বলল, ‘কিন্তু এই স্ট্রাটেজিতো আমরা এতোদিন ব্যবহার করেছি। কিন্তু কাল সেটা করা যাবেনা। তুমি ভুলে যাচ্ছো কেন রুদ্র কক্সবাজারে-ই আছে। আর এই সময়, এখানে, বউ নিয়ে সত্যি সত্যিই হানিমুন করতে আসেনি নিশ্চয়ই?’
গর্জে উঠল সম্রাট। হাত দিয়ে টেবিলে আঘাত করে বলল, ‘শাট আপ! আমি জানি কে, কোথায়, কীভাবে আছে। শোনানোর দরকার নেই। চুপচাপ আমার কথা শুনুন। নয়তো বিদায় হন।’

শওকত মীর্জা পলাশকে ধমকে বললেন, ‘পালাশ! ওকে বলতে দাও।’
পলাশ দাঁতে দাঁত চেপে চুপচাপ বসে রইল। হাঁটুর বয়সী এক ছেলে তাকে ঝাড়ি মারে। পলাশ মীর্জাকে! একবার শুধু কাজটা আদায় হোক। এই ছেলেকে কুত্তার মতো গু’লি করে মারবে। মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করল পলাশ। সম্রাট আবার বলতে শুরু করল, ‘আমরা যাই করিনা কেন, আগামীকাল রুদ্র সবটা বুঝে ফেলবে। যখন দেখবে ওদের আগেই ওদের মাল আমরা ডেলিভারী নিয়ে নিচ্ছি। তখন ওর মনে কয়েকটা প্রশ্ন উঠবে।

এক, আমরা কীকরে জানলাম কোথায়, কোন কোন পয়েন্টে ওদের মাল ডেলিভারী হবে? দুই, ওদের মাল ডেলিভারী নেওয়ার জন্যে সিক্রেট কোড প্রয়োজন। ঐ কোড ব্যবহার করা ছাড়া মাল ডেলিভারি দেওয়া হয়না। সেই কোডটা আমরা কোথায় পেলাম? তিন, নিশ্চয়ই এইসব ইনফরমেশন ওদের ভেতর থেকেই কেউ আমাদের দিচ্ছে। যে সবকিছুই খুব ভালো করে জানে। সে কে? আর রুদ্রর মগজ নিয়ে নিশ্চয়ই এখানে কারো কোন সন্দেহ নেই? দুইদিন। জাস্ট দুইদিনে গোটা খেলাটা ধরে ফেলবে।’

দুবার তুড়ি বাজিয়ে বলল শান। করিম বলল, ‘খেলাটা এতো তাড়াতাড়ি এই জায়গায় এসে মোড় নেবে কল্পনাও করতে পারিনি। আর দুটো বছর এভাবে চললে শেষ করে দিতে পারতাম সোলার সিস্টেমকে।’
শওকত বলল, ‘যেটা আর হওয়ার নয় সেটা ভেবে লাভ কী। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পরিণতি যখন এসেই গেছে তখন আর কী করার? প্লান ‘বি’ তো রেডি করেই রেখেছিলাম আমরা। এখন সেটাই একমাত্র পথ।’

করিম বলল, ‘কিন্তু রিস্ক? প্লান বি তে কী ভয়ানক রিস্ক সেটা আমরা সবাই জানি। সোলার সিস্টেম শেষ হবে সেটা নিশ্চিত। কিন্তু তারসাথে আমাদের সকলের ধ্বংসও নব্বই শতাংশ নিশ্চিত।’
‘ দশ শতাংশতো বেঁচে যাওয়ার চান্স আছে না? কিন্তু কিছুই না করলে বেঁচে থাকার চান্স জিরো পয়েন্ট জিরো জিরো জিরো ওয়ান পার্সেন্টও নেই। তাই রিস্ক নিতেই হবে। লেটস্ ডু প্লান বি।’

পিলে চমকে উঠল উপস্থিত সকলের। সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। পলাশ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল, ‘আর ইউ শিওর?’
‘আর কোন উপায় নেই।’
ওরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। শওকত পলাশকে ইশারা করতেই পলাশ খানিকটা ইতস্তত করে ফোন বের করল। কল করল ঢাকায়। শানকে। কল রিসিভ করতেই শুধু দুটো শব্দ বলল, ‘প্লাব বি।’
ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ কোন আওয়াজ এলোনা। হয়তো শানও থমকে গেছে। কয়েক সেকেন্ড পড়েই কম্পিত কন্ঠে শুধু একটাই শব্দ ভেসে এলো, ‘অলরাইট।’

ফোন রেখে লম্বা শ্বাস নিল সবাই। ঠান্ডার মধ্যেও ঘেমে গেছে সবাই। সম্রাট বলল, ‘যাই হয়ে যাক, এইসব খবর আমরা কীভাবে, কার কাছ থেকে পাচ্ছি সেটা যেন রুদ্র কোনভাবেই টের না পায়। দরকারে ইকবালের মতো_’
এইটুকু বলে থেমে গেলো সম্রাট। চারপাশে একবার তাকিয়ে লক্ষ্য করল কোনভাবে কেউ ওদের কথা শুনছে কি-না। নিশ্চিন্ত হয়ে শওকতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘নাউ গেট রেডি ফর দ্য ক্লাইম্যাক্স।’
শওকত কিছু বললেন না। নিজের কাঠের বাঁ পাটার ওপর হাত বুলিয়ে হিংস্র এক হাসি হাসলেন।

ঘড়ির কাটায় এগারোটা বেজে পঞ্চান্ন। আবছা অন্ধকার রুম। আলো বলতে কেবল টেবিল ল্যাম্প। গাল ফুলিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে আছে কুহু। বারবার ফোন চেক করছে। গত দুদিন হল নীরব ওকে ফোন করছেনা। ও ফোন করলে রিসিভ করছেনা। এক কথায় কোন যোগাযোগই করছেনা ওর সাথে। কাল ওর জন্মদিন সে নিয়ে নিশ্চয়ই কোন সারপ্রাইজ প্লান করে বসে আছে এই ছেলে। সারপ্রাইজ দিতে বুঝি কথা বন্ধ করে দিতে হয়? যত বড় সারপ্রাইজই দিক। তবুও খুশি হবেনা কুহু। নীরব ওর সাথে দুদিন কথা বলেনি। ও নীরবের সাথে চারদিন কথা বলবেনা। মনে মনে কথাগুলো আওড়ে নিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলো কুহু।

কুহু মনে মনে এসব কল্পনা-জল্পনা করতে করতেই ফোনে ‘টুং’ করে আওয়াজ হলো। হোয়াটস্ অ‍্যাপ ম্যাসেজ টোন। কুহু দ্রুত ম্যাসেজটা ওপেন করল। একটা ভিডিও সাথে একটা টেক্সট। টেক্সটের গায়ে ইংরেজি বর্ণে লেখা আছে, ‘ইউজ ইয়ারফোন। এন্ড প্লিজ প্লে দ্য ভিডিও এট টুয়েলভ ও’ক্লক।’ কুহু তাই করল। ইয়ারফোন কানে গুঁজে অপেক্ষা করল বারোটা বাজার। ঠিক বারোটায় ভিডিওটা প্লে করল। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এলো নীরবের সুন্দর কন্ঠস্বর,

‘নীরবতা! সবার কাছে তুমি কুহু হলেও আমার কাছে তুমি নীরবতা। আমার নিজস্ব নীরবতা। তুমি জানো আমি প্রথম তোমার জন্যে ফিল কখন করি? যখন আমার বন্ধুরা তোমাকে র‍্যাগ করছিল। আর তুমি নিঃশব্দে কাঁদছিলে, তখন। কারো নীরব কান্নাও বুঝি এতো সুন্দর হয়? আমার জীবনে সকল কথা যা আমি কাউকে বলতে পারিনি সেসব আমি তোমাকে বলেছি। কারণ তুমি একমাত্র মানুষ যে চুপচাপ আমার সব কথা শুনেছো। মনোযোগ দিয়ে শুনেছো।

কখনও বাঁধা দাওনি। পাল্টা জবাব দাওনি। প্রচণ্ড কলহলপূর্ণ জীবনে যখন আমি ক্লান্ত, তখন তুমি নীরবতা হয়ে এলে। আমায় বিশ্রাম দিলে। আর আমি হারিয়ে গেলাম তোমার মাঝে। চিরকালের মতো। আজও যখন ভাবি কুহু নামক মেয়েটা শুধু আমার, শুধুই আমার। তখন আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়।
হ্যাপিয়েস্ট বার্থডে মাই ডিয়ার। ধন্যবাদ, এই পৃথিবীতে আসার জন্যে। ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্যে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার নীরবতা হওয়ার জন্যে।’

প্রতিটা কথা শব্দের সাথে সাথে ফোনের স্ক্রিনেও লেখা আকারে ভেসে উঠছিল। কুহু এক হাতে মুখ চেপে হেসে ফেলল। খুশিতে ওর নাচতে ইচ্ছে হলো। সারা জগতকে ওর সাথে নাচাতে ইচ্ছে হলো। ওর অঢেল খুশির মাঝে আরও খুশি ঢেলে দিয়ে নীরব ভিডিও কল করল। কুহু ভেবেছিল নীরবের সঙ্গে চারদিন কথা বলবেনা। কিন্তু নিজের সেসব প্রতিজ্ঞা নিমেষেই ভুলে গেল। আনন্দ, উত্তেজনায় সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করল। স্ক্রিনে নীরবের মুখটা ভেসে উঠতেই চোখ পানি চলে এলো কুহুর। নীরব হেসে বলল, ‘শুভ জন্মদিন মাই ডিয়ার উড বি ওয়াইফ।’

কুহু তাকিয়ে রইল নীরবের দিকে। নীরব ভালো করে লক্ষ্য করে বলল, ‘এই মেয়ে কাঁদছো কেন?’
কুহু ইশরায় বলল, ‘দুদিন কল করোনি কেন?’
নীরব হাসল। ও এখন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝে। এই দুই বছরে শিখে নিয়েছে। শুধুমাত্র কুহুর জন্যে। নীরব বলল, ‘দুদিন কথা বললে আজ এতো আনন্দ পেতে?’

কুহু একহাতে চোখ মুখে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইল। নীরব ঠোঁট কামড়ে দেখল প্রিয়তমার অভিমান। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ‘এতো সুন্দর সারপ্রাইজ দিলাম। তবুও রাগ করে থাকবে?’
কুহু পাত্তা দিলোনা। তাকালোও না নীরবের দিকে। নীরব বলল, ‘যাহ! ভেবেছিলাম কালকেই আমি দেশে ফিরছি, খবরটা দিয়ে একজনকে আরেকটা সারপ্রাইজ দেব। কিন্তু কেউতো শুনছেই না আমার কথা।’

কুহু চোখ বড় বড় করে তাকাল নীরবের দিকে। দ্রুত গতিতে হাতের ইশারা করল, ‘তোমার না তিনদিন পরে আসার কথা?’
‘কথাতো ছিল। কিন্তু আমার কুহুরাণীর জন্মদিনে আমি বাইরে থাকলে চলে?’
এরমধ্যেই পেছন থেকে কুহুর মাথায় টোকা মারল জ্যোতি। কুহু চমকে পেছনে তাকাল। জ্যোতি হেসে বলল, ‘আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সেই সুযোগে প্রেম হচ্ছিলো বুঝি?’

তারপর ইয়ারফোনটা খুলে নিয়ে বলল, ‘এইযে নীরব সাহেব। এভাবে দূরে থেকে থেকে আমার বোনের সাথে প্রেম করলে হবে? দু সপ্তাহ পরতো বিয়ে। তাড়াতাড়ি চলে আসুন।’
নীরব মাথা চুলকে মৃদু হেসে বলল, ‘কালকেই চলে আসব, আপু।’
জ্যোতি অবাক হল। কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘সত্যি? দাঁড়াও আমি উচ্ছ্বাস আর রুদ্র-প্রিয়তাকেও এড করি। কুহুকে উইশ করাও হয়ে যাবে। আর তোমার সাথে ওদের কথাও হয়ে যাবে।’
নীরব অসহায় কন্ঠে বলল, ‘রুদ্র ভাইকে এড করতেই হবে?’

জ্যোতি আর কুহু একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। নীরবকে রুদ্রকে এতো ভয় পেতে দেখে। উচ্ছ্বাস রুদ্র-প্রিয়তা তিনজনকেই এড করা হলো। উচ্ছ্বাসকে পাওয়া গেলোনা লাইনে। রুদ্র নিজেই ফোন করল উচ্ছ্বাসকে। কল রিসিভ হতেই রুদ্র বলল, ‘অনলাইনে এসে কলে এড হ। কুহু আর নীরব আছে।’
উচ্ছ্বাস একটু ভেবে বলল, ‘ওহ। আজতো কুহুর জন্মদিন না? আমার কাছে একটা ড্রয়িং সেট চেয়েছিল। ভুলেই গেছি, দেখেছিস?’

‘সারাদিন এতো মদ গিললে মনে থাকবেও না। কলে এড হ।’,অনেকটা ধমকের সুরে বলল রুদ্র।
রুদ্র বিনাবাক্যে তাই করল। অনেকদিন পর ছয়জনের বেশ জমিয়ে আড্ডা হলো। তবে রুদ্র আড্ডার অংশিদার ছিলোনা বললেই চলে। যা কথা বলার প্রিয়তাই বলেছে। ও শুধু পাশে শুয়ে ছিল। আর টুকটাক কথার জবাব দিয়েছে। নীরবতো তিন লাইন মনে আসলে, এক লাইন বলে দুই লাইন পেটে রেখে দেয়। রুদ্রর ভয়ে তটস্থ হয়ে ছিল বেচারা। কল কাটার আগে কুহু ইশারায় বলল, ‘ভাবী! ওয়েট, ওয়েট। আমি কী গিফ্ট চেয়েছিলাম মনে আছে তো?’

প্রিয়তা বলল, ‘ হ্যাঁ সোনা। তোমার গিফ্ট রেডী আছে। আমরা ফিরলেই পেয়ে যাবে। এখন রাখছি। বাই হ্যাঁ?’
উচ্ছ্বাস বলল, ‘চুপ কর, ছ্যাচরা! চেয়ে চেয়ে জন্মদিনের গিফ্ট নিচ্ছে সবার কাছে।’
কুহু মুখ ফুলিয়ে ইশারায় করল, ‘ভাই, ভাবিদের কাছে চাইব না তো কী বাইরের লোকের কাছে চাইব? খোটা দিচ্ছিস কেন? যখন থাকব না। শ্বশুরবাড়ি চলে যাব। তখন দেখব কে যায়।’

উচ্ছ্বাস এক ভ্রু উঁচু করে বলল, ‘কেউ বলবে এই মেয়ে আবার কী বলছে। ডান্সিং ল্যাঙ্গুয়েজে?’
জ্যোতি বোঝাল উচ্ছ্বাসকে। কুহুর যাওয়ার কথা শুনে উচ্ছ্বাসের মন কেমন করে উঠল। কিন্তু কিছু বলল না।
ওদের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কল কেটে দিল প্রিয়তা। রুদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখল রুদ্র চুপচাপ শুয়ে আছে। প্রিয়তা আস্তে করে রুদ্রর বুকে মাথা রেখে প্রশ্ন করল, ‘কী হয়েছে?’

রুদ্র চুপ থাকল কিছুক্ষণ। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘কয়েকদিন পরেই কুহুর বিয়ে। কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল মেয়েটা। তাইনা?’
‘খুব ভালোবাসেন ওকে তাইনা?’
রুদ্র জবাব দিলোনা। প্রিয়তা বুকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ শুয়ে রইল। কেমন অদ্ভুত লাগছে রুদ্রর। মনে হচ্ছে ভয়ানক কোন অঘটন ঘটতে চলেছে।

এদিকে জ্যোতি কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে গেছে। নীরব আর কুহু এখনো হোয়াটস্অ‍্যাপে ম্যাসেজিং করছে। নীরব লিখল, ‘কাল ভার্সিটিতে যাচ্ছো তো?’
‘ হ্যাঁ, যাচ্ছি। পরীক্ষা আছে একটা। আপনি কখন আসবেন?’
‘আমি তোমার সাথে গিয়ে সোজা ভার্সিটিতে দেখা করব।’
কুহু খুশি হয়ে গেল। লিখল, ‘সত্যি!’
‘ হ্যাঁ সত্যি। আর তোমার বাবাকে বলে, তোমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যাব। ঐ দুই কালো হাতিও সঙ্গে যাবে। নো প্রবলেম।’

কুহুর বিশ্বাস হচ্ছেনা। প্রায় দুই বছর পর নীরবকে দেখতে পাবে। এই প্রথম ভার্সিটির বাইরে কোথায় একসঙ্গে বসবে সময় কাটাবে। এটা স্বপ্নের চেয়ে কম কী? কাল ওর জীবনের সেরা জন্মদিন কাটবে। ওর তাই মনে হচ্ছে।
‘কী হলো? কিছু বল?’
নীরবের ম্যাসেজ টোনে চমকে উঠল কুহু। ও লিখল, ‘সত্যি? মানে সত্যি বলছেন? কাল সত্যি ভার্সিটিতে আমার সাথে দেখা করবেন আপনি? আমাকে নিয়ে বের হবেন?’

‘হ্যাঁ রে পাগলী! দুটো বছর হলো আমার প্রাণভোমড়াটাকে ছুঁয়ে দেখিনা। টাইটলি হাগ করে কপালে লম্বা একটা চুমু না খাওয়া অবধি আমার ঘুমই হবেনা।’
কুহু লজ্জা পেয়ে গেল। গাল লাল করে লিখল, ‘যাহ!’
‘ আড়াইবছর যাবত প্রেম করেও এতো লজ্জা! বিয়ের ডেইটটাও তো এগিয়ে আসছে। বিয়েটা হতে দাও। সব লজ্জা ভেঙে দেব।’

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৫৩ শেষ অংশ

কুহু ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে রাখল কিছুক্ষণ। লম্বা লম্বা দুটো শ্বাস নিলো। তারপর লিখল, ‘আমার ঘুম পাচ্ছে। গুড নাইট!’
মেসেজটা পাঠিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অফলাইন হয়ে গেল। আপনমনেই কিছুক্ষণ হাসল, লজ্জা পেল। এরপর জ্যোতিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করল। যাতে কালকের বিশেষ দিনটার অপেক্ষা দীর্ঘ না হয়।

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৫৫