আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৬

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৬
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

অসুস্থ তোড়াকে রেখেই চলে যেতে হলো কুশানকে।কুশান যে জন্য তার শশুড়বাড়ি এসেছিলো সেই আশা আর পূরণ হলো না তার।সে তো তোড়াকে নেওয়ার জন্যই গিয়েছিলো তার শশুড়বাড়ি।কিন্তু কে জানতো তোড়া এভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে?অন্যদিকে কামিনিও নাকি অসুস্থ।আর তিনি অসুস্থ হওয়া মানে কুশান কুশান বলে চিল্লাচিল্লি করা।যতক্ষন কুশান তার সামনে না আসে তিনি আর সুস্থ হন না।

কুশান নিজেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয় নি।কিন্তু মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে তাকে যেতেই হলো বাড়িতে।
কুশান বাড়ি এসে দেখে কামিনী বেগম শুয়ে আছেন বিছানায়। কুশানকে দেখামাত্র কামিনী উঠে বসতে ধরলে কুশান বললো,
আম্মু থাক থাক।উঠতে হবে না।এখন কেমন আছো তুমি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কামিনী তখন বললো আছি বাবা ভালো।কিন্তু তুই এমন শুকিয়ে গেছিস কেনো?এই বলে কামিনী কুশানের মুখ চোখ বুলিয়ে দিতে লাগলো।কুশান তখন বললো,কই শুকায়ছি?জার্নি করে আসলাম তো এজন্য এরকম লাগছে।
কামিনী তখন বললো যা বাবা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আগে।

–হ্যাঁ যাচ্ছি আম্মু।তার আগে বলো কি অসুখ হয়েছে তোমার?
কামিনী কুশানের প্রশ্ন শুনে চুপ করে থাকলে জারিফ চৌধুরী বললো, বাবা কুশান তুই চোখের সামনে না থাকলেই তোর আম্মু অসুস্থ হয়ে যায়।এখন এসেছিস না?দেখবি কয়েক মিনিটের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবেন তিনি।

–মানে কি আব্বু?তুমি না বললে আম্মু খুব অসুস্থ।যার জন্য আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বললে।
জারিফ চৌধুরী তখন বললো হ্যাঁ অসুস্থই তো।হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলো কামিনী।
কুশান সেই কথা শুনে বললো ডাক্তার ডাকো নি?

–হ্যাঁ বাবা ডেকেছিলাম।
–তা ডাক্তার কি বললো?
–ডাক্তার জানালো প্রেসার আর ডায়াবেটিস দুটাই বেড়ে গেছে।আর তার সাথে অনেক বেশি শরীর দূর্বল।
কুশান জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে কামিনীকে জড়িয়ে ধরে বললো, আম্মু কোনো টেনশন করবে না।এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাবে তুমি।

কামিনী তখন বললো যা বাবা এখন ঘরে যা।ফ্রেশ হয়ে নি আগে।
–আচ্ছা আম্মু।এই বলে কুশান তার রুমে চলে গেলো।
আর রুমে গিয়েই আগে তোড়াকে কল করলো।তোড়া এখন কেমন বোধ করছে সেটা জানতে চাইলো।তোড়া জানালো এখনো বার বার হাঁচি পড়ছে তার।তবে জ্বর টা একটু কমেছে।

এদিকে কুশান রুমে চলে যাওয়ার সাথে সাথে জারিফ চৌধুরী কামিনী কে বললো,
এখন কি অসুখ ভালো হইছে তোমার?ছেলেকে বাসায় আনলে তো ছাড়লে।
কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে বললো,তুমি কি আমাকে হিংসা করো জারিফ?আমাদের মা ছেলের ভালোবাসা দেখতে কি তোমাকে ভালো লাগে না?

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো ভালো লাগবে না কেনো?অবশ্যই লাগে।কিন্তু তুমি কুশানকে নিয়ে যেরকম পাগলামি শুরু করছো এটা একদম মাত্রা ছেড়ে যাচ্ছে।
কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলো।কিন্তু তিনি তার রাগটা প্রকাশ না করে চুপ করে শুয়ে থাকলেন।কারন এখন জারিফের সাথে বেশি তর্ক করা যাবে না।কামিনী যে সত্য টা নিয়ে ভয় পাচ্ছে সেটা ইতোমধ্যে জারিফ জেনে গেছে।সেজন্য জারিফ কে রাগালে ও কখন যে সত্য টা প্রকাশ করে দেবে কে জানে?

তাছাড়া কামিনী আরো একটা মারাত্মক পাপের বোঝা মনে মনে টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছেন।সেটা সম্পর্কে জারিফ এখনো কিছু জানে না।আর কামিনীর বিশ্বাস কোনোদিন জানবেও না।

তবে ইদানীং কামিনী কুশানকে নিয়ে কি সব আজেবাজে স্বপ্ন দেখছে। কাল রাতেও ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখেছে।
এক মহিলা তার কুশানকে নিয়ে টানাটানি করছে।কামিনী তার চোখের সামনে ছেলেকে কি অন্য জনের কাছে যেতে দিতে পারেন?সেজন্য তিনিও টানাটানি শুরু করেছেন।

এক পর্যায়ে কুশানের হাত টায় ছিড়ে যায়।এই স্বপ্ন দেখামাত্র কামিনী অসুস্থ হয়ে যায়।তিনি কিছুতেই কুশানকে এভাবে তার থেকে দূরে রাখতে পারছিলেন না। যার কারণে জারিফ চৌধুরীকে বলে,আমার অসুস্থতার কথা জানিয়ে দাও কুশানকে।জারিফ কামিনীর কথামতো কুশানকে কামিনীর অসুস্থতার খবর দেয়।কিন্তু কামিনী শারিরীক ভাবে এতোটাও অসুস্থ নয়,তবে মানসিক ভাবে ভীষণ অসুস্থ বোধ করছে সে।

পরের দিন যামিনী চৌধুরী যুথিকে নিতে এলো।যে আশায় যুথিকে কামিনীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো সেই আশা তো আর পূরন হলো না তার।কামিনী অনেক বোঝানোর ফলেও যামিনী কিছুতেই শুনলো না। যামিনী উলটো বকাবকি শুরু করলো কামিনী কে।

–কুশান যখন অবিবাহিত ছিলো তখনই তারা যুথির সাথে বিয়ে দিতে পারে নি।আর এখন তো কুশান বিবাহিত।এখন আর কি আশায় সে তার মেয়েকে এই বাড়িতে রাখবে?

আসলে কামিনী আর যামিনীর ভীষণ ইচ্ছা ছিলো কুশানের সাথে যাতে যুথির বিয়ে টা হয়।কারণ মিঃ সুলেমান চৌধুরী মানে কুশানের নানা তার সমস্ত প্রোপার্টি হজ্জে যাওয়ার আগে ভাগ করে দিয়ে গেছেন দুই মেয়ের মধ্যে।যার জন্য দুই বোনের ইচ্ছা ছিলো কুশান আর যুথির বিয়ে হয়ে গেলে তাদের প্রোপার্টি আর বাহিরে যাবে না।অন্য মেয়ে এসে এই বাড়িতে রাজত্ব করবে সেটা কিছুতেই চায় নি কামিনী আর যামিনী।

কিন্তু যুথিকে আবার ইরা,মিরা লিরার পছন্দ ছিলো না।তারা চাইতো না যুথি এ বাড়িতে আসুক।এই জন্য তারা নিজেরা পাত্রী দেখা শুরু করেছিলো।এখান থেকেই ঝামেলা টা শুরু হয়।আর বাহিরে পাত্রী দেখা শুরু করে সবাই।অবশেষে ভাগ্যের পরিক্রমায় তারা কুশানের গার্লফ্রেন্ড কেই চয়েজ করে নিয়ে আসে।

তবে সম্পত্তি ভাগ হওয়ার ব্যাপারে সবাই জানে পুরো সম্পত্তি কামিনী আর যামিনীর নামে।কিন্তু আসলে সুলেমান চৌধুরী তার মূল্যবান প্রোপার্টি গুলোই কুশানের নামে লিখে দিয়েছেন।যেহেতু সে বংশের মধ্যে একমাত্র নাতী।আর এটা সুলেমান চৌধুরী আগে থেকেই ঘোষনা দিয়েছিলেন যার ছেলে হবে তিনি তাকে তার ব্যবসা বাণিজ্য, শহরের জায়গা গুলো আর বাড়ি গুলো সব লিখে দিবেন।

এই কথাটা শুধুমাত্র কামিনী আর যামিনী কে জানিয়েছেন সুলেমান চৌধুরী।যামিনী কথাটা শুনে প্রথমে রাগারাগি ঝগড়াঝাটি করলেও পরে যখন কামিনী আশ্বাস দিয়েছিলো তার কুশানের সাথেই তো যুথির বিয়ে হবে।তাদের সম্পত্তি তো তাদের মধ্যেই থাকবে তখন দিয়ে শান্ত হয়ে যায় যামিনী।কিন্তু যামিনীর সেই আশায় জল ঢেলে দিলো সবাই।

তবে কিছুদিন হলো জারিফ চৌধুরী ও ব্যাপার টা জেনেছেন।আর এখন কথায় কথায় তিনি এ নিয়ে বেশ মজা করেন কামিনীর সাথে।কামিনী সেজন্য ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছে।যদি ব্যাপার টা সবাই জেনে যায় তখন তো তার আর দাম থাকবে না এ বাড়িতে।সবাই তো তখন কুশান আর তোড়াকে মাথায় তুলে রাখবে।যেহেতু বাড়ির সবাই জানে সমস্ত প্রোপার্টি কামিনীর নামে।সেজন্য সবাই তাকে দেখে ভয় করে।

দুই দিন পর তোড়া পুরোপুরি সুস্থ হলো।এখন তো তাকে আনতে হবে বাড়িতে।সেজন্য কুশান তার আম্মুকে বললো,আম্মু আর কতদিন থাকবে তোড়া?ওকে তো এখন আনতে যেতে হবে।
কামিনী সেই কথা শুনে বললো,

বাবার বাড়িতে যখন গিয়েছে থাক না কয়েকটা দিন?এতো তাড়া কিসের?
কুশান তার আম্মুর মুখে এমন কথা শুনে আর এ ব্যাপারে কিছু বললো না।সে চুপচাপ ভার্সিটিতে চলে যেতে ধরলো।কামিনী বুঝতে পারলো ছেলে তার এমন কথায় মন খারাপ করেছে।তার ছেলে যে পুরোপুরি বউ পাগল হয়েছে এতে কামিনীর আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইলো না।

কামিনী যে কারণে সবার পছন্দ করা মেয়ের সাথে কুশানের বিয়ে দিলেন সেই মেয়েই যে দুইদিনে এভাবে কুশানের মন জয় করে নিবে সত্যি অবাক হয়ে যাচ্ছে কামিনী। কামিনী ভেবেছিলো তাদের অত্যাচারে এমনিতেই কুশানের বউ চলে যাবে।

আসলে বাস্তবে কামিনী চাচ্ছে না কুশানের বউ এই সংসারে থাকুক।শুধুমাত্র কুশানকে তিনি নামের বিয়ে করায়ছেন।যেহেতু সুলেমান চৌধুরী নিজে বলেছেন তাড়াতাড়ি কুশানের বিয়ের ব্যবস্থা করো।এতো অত্যাচার আর অপমান করার পরও তোড়া যে এই বাড়িতে এখনো আছে ব্যাপার টা এখন বেশ ভাবায় কামিনী কে।কারণ অন্য কোনো মেয়ে এইরকম সংসার কিছুতেই করতে চাইতো না।

কুশানকে মন খারাপ করে চলে যাওয়া দেখে কামিনী কুশানের হাত ধরে বললো,
তুই নিশ্চিন্তে ভার্সিটিতে চলে যা কুশান।আমি নিজে তোড়াকে আনার ব্যবস্থা করতিছি।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, আমি গেলে কি প্রবলেম আম্মু?আমি যাই আনতে?

কামিনী তখন বললো, এতো ঘন ঘন শশুড় বাড়ি যেতে হয় না বাবা।এতে জামাই এর আদর কমে যায়। তাছাড়া তোর সামনে ফাইনাল পরিক্ষা।আর মিস দিস না প্রাইভেটগুলো।
কুশান তখন বললো আম্মু আমি গিয়ে এবার থাকবো না তো।জাস্ট ওকে নিয়েই চলে আসবো।
কামিনী তবুও রাজি হলো না।তবে কামিনী আশ্বাস দিলো আজকের মধ্যেই তিনি তোড়াকে আনবেন।

কুশান ভেবেছে হয় তো তার আম্মু আব্বু আনতে যাবে তোড়াকে সেজন্য সে খুশিমনে ভার্সিটিতে চলে গেলো।
এদিকে কামিনী তোড়াকে আনার জন্য সুমন কে পাঠাবে বলে ঠিক করলো।সুমন তো শোনামাত্র রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু সুমনের আনন্দে জল ঢেলে দিলো সোনিয়া।

সে বায়না ধরলো সেও যাবে সুমনের সাথে।কিন্তু সুমন তো যেতে চাচ্ছিলো এই সুযোগে যদি একটু সে স্বর্ণার সাথে ভাব জমাতে পারে?সোনিয়া তার সাথে থাকলে কি সেই আশা পূরণ হবে তার?সুমন অনেক বোঝালো সোনিয়াকে।যে আরেকদিন যাস তুই।এবার শুধু আমি একাই যাই।সোনিয়া তবুও রাজি হলো না।তার কথা সেও যাবে তার তোড়া ভাবিকে আনতে।

অবশেষে সুমন আর সোনিয়া তোড়াকে আনার জন্য রওনা দিলো।
এদিকে কুশান আগেই তোড়াকে জানিয়ে দিয়েছে তাকে আজ আনতে যাবে আব্বু আম্মু।সে যেনো রেডি থাকে।তোড়া কুশানের কথা শুনে সবকিছু গুছিয়েও রাখলো।তার শশুড় শাশুড়ির জন্য খাবার দাবার রেডি করলো চামেলি বেগম।
চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব কামিনী আর জারিফ চৌধুরীর আসার কথা শুনে ভীষণ খুশি হলেন।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সুমন আর সোনিয়া গিয়ে উপস্থিত হলো তোড়ার বাড়িতে।সুমন আর সোনিয়াকে দেখেও সবাই খুশি হলো।কিন্তু কুশান তো বলেছিলো কামিনী নিজে আসবেন তোড়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।এই জন্য সবাই একটু অবাক হয়ে গেলো। তোড়া আর এ ব্যাপারে কুশানকে কিছু বললো না।যেকোন একজন তো এসেছেই তাকে নেওয়ার জন্য।

সুমন আর সোনিয়ার অনেক খাতির যত্ন করলো চামেলি বেগম।স্বর্ণা আবার সোনিয়া আসার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে চলে এলো তোড়াদের বাড়িতে।দুইজনে সেই খুশি!তাদের দুইজনের এতো খুশি দেখে সুমন হা করে তাকিয়ে রইলো।সে এতোক্ষণে বুঝতে পারলো সোনিয়াও তাহলে এই স্বর্ণার জন্যই আসতে চেয়েছে।

আজ আর তোড়ার যাওয়া হলো না।কারণ সুমন আর সোনিয়া নিজের মুখে বলেছে ভাবি আজকেই আমরা যাবো না।তোমাদের গ্রামে একটু কিছুদিন থাকবো।যদি তোমার কোনো প্রবলেম না থাকে।
তোড়া সেই কথা শুনে কি করে না বলতে পারে?সেজন্য সে বললো নো প্রবলেম। তোমাদের যতদিন মন চায় তোমরা থাকতে পারো।সে নিজেও বেশ খুশি হইছে সুমন আর সোনিয়াকে দেখে।

অন্যদিকে কুশান ভাবতেছে তোড়া বাড়িতে এসেও গেছে।সে আর তোড়াকে কল না করে প্রাইভেট শেষ করে তোড়ার ফেভারিট কিছু খাবারদাবার নিয়ে বাসায় ফিরলো।তার যে আজ অনেক বেশি আনন্দ হচ্ছে।কত দিন পর তার বউ বাসায় ফিরছে এই খুশি সে আর ধরে রাখতে পারছে না।

কিন্তু বাসায় এসে যখন দেখলো পুরো বাসা একদম নিরব হয়ে আছে তার রুম সেই আগের মতোই ফাঁকা রয়েছে তখন কুশানের মুখখানা একদম চুপসে গেলো।মুহুর্তের মধ্যে কুশানের মুখের হাসি হারিয়ে গেলো।এই মুহুর্তে তার মুখের যে অবস্থা যে কেউ দেখলে না হেসে থাকতে পারবে না।তবে কুশানের কিন্তু ভীষণ খারাপ লাগছে।তার আম্মু কথা দিয়েও কথা রাখলো না এই ব্যাপার টা সে মানতে পারলো না।

কুশান সেজন্য চিৎকার করে করে কামিনী কে ডাকতে লাগলো।কুশানের চিৎকার শুনে যুথি আর যামিনিও বের হলো রুম থেকে।কুশান সবার সামনেই কামিনী কে জিজ্ঞেস করলো ব্যাপার কি আম্মু?তোড়া আসে নি কেনো?তুমি আনতে যাও নি তোড়াকে?

কামিনী কুশানের মুখে তোড়ার কথা শোনামাত্র বললো,আচ্ছা কুশান?তোর হয়েছে টা কি? মাত্র বাসায় আসলি।কই ফ্রেশ হয়ে নিবি তা না করে এসেই তোড়া তোড়া করছিস?
কুশান তখন সেই আগের মতোই রাগ হয়ে বললো, তুমি যে বললে তোড়াকে আনতে যাবে।আর রুমে তো তোড়া নাই।এজন্য জিজ্ঞেস করলাম।

কামিনী তখন বললো হ্যাঁ পাঠায়ছি তো তোড়াকে আনতে।কিন্তু যাদের কে পাঠায়ছি তোড়ার বাড়ির লোকজন তাদের কে আসতে দেয় নি।সুমন নিজে ফোন দিয়েছিলো আমাকে।সে বললো,চাচী আজ আর আমরা যাবো না।তোড়া ভাবির আম্মু আর দাদী আমাদের যেতে দিচ্ছে না।

অন্যদিকে তোড়া ভাবিও বলছেন তিনিও আরো কিছুদিন থাকবেন তার বাবার বাড়িতে।সেজন্য এ কয়েকদিন আমাদের ও থেকে যেতে বলছে।সেজন্য সুমন আর সোনিয়া আসে নি তোড়াকে নিয়ে।
কুশান কামিনীর কথা শুনে রাগান্বিত স্বরে বললো তুমি সুমন আর সোনিয়াকে পাঠাইছো তোড়াকে আনার জন্য?বাসায় কি আর কোনো লোক ছিলো না?কেনো পাঠায়ছো ওদের?

কামিনী কুশানের এমন রাগান্বিত স্বর শুনে নিজেও বেশ উচ্চস্বরে বললো কেনো সমস্যা কি কুশান?তুই তো জানিস আমি অসুস্থ।তোর আব্বু গেছে বাহিরে। এ অবস্থায় আমরা কিভাবে যাবো?এজন্য পাঠালাম ওদের কে।এতে প্রবলেম কি কুশান?ওরা কি এ ফ্যামিলির সদস্য না?

কুশান তখন বললো আম্মু তুমি কিন্তু দুই এক লাইন বেশি বোঝো।আমি কখন বললাম যে ওরা এ ফ্যামিলির সদস্য নয়?ওরা দুইজন হলো ছোটো মানুষ। এইভাবে ছোটা মানুষেররা কি বাড়ির বউকে আনতে যায়?ওদের সাথে দুইজন মুরুব্বি কে পাঠালে কি হতো?তুমি না গেলে আব্বু আর চাচ্চুকে পাঠাতে।সাথে সোনিয়া আর সুমন যাইতো।তাছাড়া আমাদের তিন দুলাভাই ও তো আছে।এতো লোক থাকতে পোলাপানদের পাঠাইছো।এখন তোড়ার বাড়ির লোকজন কি ভাববে তুমিই বলো?

কামিনী কুশানের মুখে এরকম কথা শুনে বললো,বাবা কুশান,তুই কিন্তু এবার একটু বেশি বেশি করছিস।মানুষের বউ কি বাপের বাড়ি থাকে না?তুই এরকম কেনো করছিস?তুই যা শুরু করেছিস মনে হয় দুনিয়াতে তুই শুধু বিয়ে করেছিস।আল্লায় জানে এই মেয়ে আর তার বাড়ির লোকজন কি খাইয়ে তোর মাথাটা এমন পাগল করেছে?

কুশান তার মায়ের মুখে এরকম কথা শুনে বললো আম্মু প্লিজ এরকম উদ্ভট কথাবার্তা আমার সামনে বলবে না।তোমার এই রকম কথা শুনতে শুনতে আমার কান কিন্তু একদম ঝালাপালা হয়ে গেছে।কি খাওয়াইছে মানে?তোমার মাথায় কি কোনোদিন ভালো চিন্তা আসে না?

নিজে যে রকম অন্যদের ও কি সেরকম মনে করো নাকি?ওনারা তোমার থেকে যথেষ্ট ভালো।তারা তো কোনোদিনও আমাদের সংসারের ব্যাপারে কিছুই বলে না,তারা শুধু বলে তাদের মেয়ে যেনো মিলেমিশে সবার সাথে থাকতে পারে।আর সেখানে তুমি ওদের কে নিয়ে আজেবাজে কথা বলো।

কামিনী কুশানের মুখে এতোবড় কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
তুই ইদানীং আমার সাথে খুব বাজে আচরণ করছিস কুশান।তুই তো এমন ছিলি না বাবা?আজ বউ এর হয়ে সবার সামনে মাকে অপমান করলি?এই দিনটা দেখার জন্য তোকে এতো কষ্ট করে বড় করলাম?বাহঃ ভালো।এই বলে কামিনী কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো।

কুশান তার মাকে এভাবে কাঁদতে দেখে নিজেও কামিনীর পিছু পিছু চলে গেলে কামিনী দরজা বন্ধ করে দিলো।কুশান তা দেখে বললো আম্মু দরজা খোলো।এভাবে দরজা বন্ধ কেনো করলে?
বাহিরে এতো চিৎকার শুনে ইরা,মিরা,লিরা তিন বোন একসাথে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।তারা এতোক্ষন অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম করছিলো।

তিন বোন যখন জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?সবাই এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেনো?
যামিনী তখন বললো,

তোমরা এতোক্ষনে এলে?এতোক্ষণ কুশান তোমার মায়ের সাথে কি ঝগড়া টাই না করলো?আমি নিজে উপস্থিত না থাকলে তো বিশ্বাসই করতাম না বুবুর ছেলের এই অবনতি হয়েছে।একটা ছেলে ছেলে করে যে বুবু দিন রাত আল্লার কাছে দোয়া করেছে আজ সেই ছেলেই বউ এর হয়ে মায়ের সাথে এমন খারাপ আচরণ করতে পারলো?

ভাগ্যিস এরকম ছেলে আমার পেটে জন্মায় নি?দরকার নেই কোনো ছেলের আমার।আমার দুই মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি আমি।এখন দুইজন ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিলেই ঝামেলা মুক্ত আমি।এই বলে যামিনী তার রুমে চলে গেলো।
ইরা যামিনীর কথা শুনে কুশানকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,খালা এভাবে বললো কেনো রে?কি বলেছিস আম্মুকে?

কুশান সেই কথা শুনে বললো কি বলেছি?শুধু বললাম তোড়াকে আনার জন্য সুমন আর সোনিয়াকে শুধু পাঠাইসো কেনো?ওদের সাথে দুলাভাই বা চাচ্চু গেলে,,,,

কুশান পুরো কথা শেষ না করতেই মিরা এগিয়ে এসে বললো,তুই আজ আবার তোর বউ এর জন্য আম্মুকে বকেছিস?
কুশান মিরার কথা শুনে বললো আমি কখন বকলাম আম্মুকে?শুধু তো জিজ্ঞেস করলাম?
লিরা তখন বললো মিথ্যে বলবি না কুশান।খালা তো নিজেই দেখেছে।ছিঃ কুশান!আম্মুকে এভাবে আঘাত দিয়ে কথা বলতে পারলি?

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৫

কুশান তার বোনদের সাথে অযথা কথা না বলে কামিনী কে আবার চিৎকার করে করে ডাকতে লাগলো,আম্মু?আম্মু?দরজা খোলো তাড়াতাড়ি। কেনো এভাবে দরজা বন্ধ করলে?আম্মু আমার ভুল হয়ে গেছে।সরি আম্মু।
কামিনী তবুও দরজা খুললো না।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৭