আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩২

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩২
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

দূর থেকেই আসসালামু আলাইকুম বলে তোড়া গেস্টের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।এদিকে ওনাদের নাস্তা খাওয়াও শেষ হয়ে গেছে।তোড়াকে এতো বেশি সুন্দর লাগছিলো যে পাত্রপক্ষ তাকেই কনে ভেবে বসেছে।
পাত্রের মা মিসেস লাবুনি বেগম হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন আর তোড়ার হাত ধরে টেনে ওনার পাশে বসিয়ে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলেন,

–তোমার পুরো নাম কী মা??
তোড়া এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, জ্বি তোড়া?
মিসেস লাবুনি বেগম তা শুনে বললো :- বাহ,,খুব মিষ্টি নাম তো তোমার মামণি।তা স্টাডি করছো তো?কিসে পড়ো তুমি?
তোড়া এখনো বুঝতে পারে নি তাকেই পাত্রপক্ষ পাত্রী ভেবেছে।সেজন্য সে নির্ধিদ্বায় বললো, জ্বী স্টাডি করছি।আমি অনার্স প্রথম বর্ষে এবার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিসেস লাবুনি বেগম তা শুনে প্রশংসা করে বলে উঠলেন,
ভালো,, খুব ভালো। তা রান্নাবান্না কিছু পারো তো মা তুমি?
মিসেস লাবুনি বেগমের কথা শুনে কামিনী এগিয়ে এসে বললো,
রান্নাবান্না পারে না মানে?সে সবকিছুই পারে।আজকের সমস্ত রান্নাবান্না তো সে নিজেই করেছে।আসলে ঘরের বউ এরকম না হলে হয় না।

মিসেস কামিনী ও বুঝতে পারে নি পাত্রপক্ষের মনের খবর। সে আরো উলটো তার ছেলের বউ এর প্রশংসা করা শুরু করে দিলো।
তোড়া এতো সুস্বাদু খাবার রান্না করে যা বলে শেষ করা যাবে না! তোড়ার হাতের রান্না যে একবার খেয়েছে তার জিভে এখনো সেই স্বাদ লেগে থাকবে।

তাছাড়া সে সকল প্রকারের কাজকর্মেও অনেক পটু। শুধু রান্না বান্নায় না।তোড়া বউ হিসেবেও খুবই লক্ষী আর ভালো মনের মানুষ।আমি বেশি বলতে চাচ্ছি না।শুধু একটা কথায় বলবো সে রূপে গুনে সবদিক দিয়ে একদম পারফেক্ট।
কামিনীর কথা শুনে তোড়া হা হয়ে গেলো।কামিনী যে তাকে সত্যি মন থেকে মেনে নিয়েছে এতে আর কোনো বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইলো না।কামিনী নিজেও তোড়ার দিকে তাকালো।কারণ এতোদিন পর তার মুখ দিয়ে তোড়ার প্রশংসা বের হলো।সে যে নিজেও তোড়াকে আপন করে নিয়েছে সেটাই বোঝালো সবার সামনে।

কিন্তু মিসেস লাবুনি বেগম কামিনীর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন,এই মেয়ের এতো সুন্দর গুন?কারণ রান্না শুধু জানলেই তো হয় না,,,তার সঠিক স্বাদ বুঝা লাগে। ক’জনের হাতের রান্না এত সুস্বাদু হয়?আর লাবুনি তো তোড়ার হাতের রান্না খেয়ে একদম ফিদা হয়ে গেছে।লাবুনি বোকার মতো এখনো তোড়াকেই কনে ভাবছে।
হঠাৎ লাবুনি বেগম একটা খাম বের করে তোড়ার হাতে দিয়ে বললো,

এটা তোমার এই আন্টির তরফ থেকে সামান্য একটা গিফট। আজ তুমি আমাদের এত মজাদার খাবার রান্না করে খাইয়েছো, সারাদিন ধরে এত এত কষ্ট করে আমাদের জন্য এত সুস্বাদু খাবার বানিয়েছো,,, তার তুলনায় এটা কিছুই না মামণি।তোমার মতো এত ভালো ও সুন্দর মনের মেয়ে আমি এর আগে দেখি নি।তোমাকে আমাদের ভীষণ ভালো লেগেছে।আল্লাহ চাহেন তো আবার আমাদের দেখা হবে।

মিসেস লাবুনি বেগমের এমন আবেগঘন কথা শুনে আর তার হাতে খামে ভর্তি টাকা দেখে এতোক্ষন দিয়ে তোড়া বুঝে গেলো যে পাত্রপক্ষ তাকেই পাত্রী ভাবতেছে।
মিসেস কামিনী চৌধুরীও অবাক হলেন।
তোড়া আর চুপ করে না থেকে তাড়াতাড়ি করে দাঁড়িয়ে গেলো।আর বললো,

আপনাদের বোধ হয় ভুল হচ্ছে।আমি আসলে এ বাড়ির বউ।পাত্রী রুমে আছে।আমি তো পাত্রী না।
মিসেস লাবুনি বেগম তোড়ার কথা শুনে একদম লজ্জা পেয়ে গেলেন।এতো বড় মিস্টেক তিনি কি করে করলেন?
অন্যদিকে শ্রাবণ তো তোড়াকে এক দেখায় পছন্দ করে বসে আছে।সে তার বোন শ্রাবণীর কানে কানে তার পছন্দের কথা বলেও দিয়েছে।

মিসেস কামিনী চৌধুরী তখন হাসতে হাসতে বললো,তোড়া তো আমার ছেলের বউ।এই বলে কামিনী ইরা,মিরা,লিরাকে বললো,এই সোনিয়াকে নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি।
মিসেস লাবুনি বেগম তখন তোড়ার হাত ধরে আমতা আমতা করে বললো, সরি মা।আসলে বুঝতে পারি নি আমি।
তখন কামিনী এগিয়ে এসে বললো,ভুল হতেই পারে।কোনো সমস্যা নেই।আমি পাত্রীকে আনছি।এই বলে কামিনী নিজেই গেলো সোনিয়াকে আনতে।

শ্রাবণ এখনো শুধু তোড়ার দিকেই দেখছে।তার ঘোর এখনো কাটে নি।সে ভাবতেই পারছে না এই মেয়ে অন্যজনের বউ।সে তো তোড়াকে এক মিনিটের দেখায় তাকে মনে মনে বউ বানিয়ে ফেলেছে।এটা কি হলো তার সাথে?

তোড়া নিজেও ভীষণ লজ্জিত হলো।এতো বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে যাবে সে ভাবতেই পারছে না।সেজন্য তোড়া খামটি মিসেস লাবুনি বেগমের হাতে দিয়েই রুমের দিকে চলে গেলো।সে আর পাত্রপক্ষের সামনে এক সেকেন্ড ও থাকলো না।
ইরা,মিরা,লিরা এবার সোনিয়াকে সামনে আনলো।সোনিয়ে নিজেও যথেষ্ট সুন্দরী। তবুও তাকে কেনো জানি মনে ধরলো না শ্রাবনের।সে তোড়ার রুমের দিকে তাকিয়ে আছে এখনো।এখনো তাকে এক পলক দেখার আশায় অন্যদিকে তাকাচ্ছে না শ্রাবণ।

শ্রাবণ যে কিছুতেই ভুলতে পারছে না তোড়াকে।তার সামনে শুধু বার বার তোড়ার চেহারা টাই ভেসে উঠছে।একদম নেচারাল সুন্দরী মেয়েটা।ইসঃ আগে কেনো দেখা হলো না মেয়েটার সাথে।লজ্জায় গাল গুলো কেমন যেনো টমেটোর মতো লাল হয়ে গিয়েছিলো।কি তরতরে মসৃণ খাঁড়া নাক।গোলাপি টসটসে ঠোঁট জোড়া দেখতে এতো বেশি আকর্ষণীয়। এককথায় অসাধারণ লেগেছে তোড়াকে তার।

শ্রাবণ তোড়ার উচ্চতাও আন্দাজে ধরে নিয়েছে।প্রায় ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির তোড়ার ওজন প্রায় ৪৮ কেজির মতো হবে।
ইরা,মিরা,লিরা মিসেস লাবুনি বেগমের সাথে সোনিয়ার পরিচয় করে দিলো।সোনিয়া বেশ হাসিমুখে আন্তরিকতার সহিত সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।লাবুনি বেগম পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বোঝানোর জন্য বেশ হাসিমুখে কথা বললেন সোনিয়ার সাথে।তারপর শ্রাবনকে বললো, তোর কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করতে পারিস শ্রাবণ।

শ্রাবণ মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো না নেই।শ্রাবণী তখন নিজেই কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো।এইভাবে মোটামুটি সবার পছন্দ হয়ে গেলো সোনিয়া কে। কিন্তু শ্রাবণ হা বা না কিছুই বললো না।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরী আর শ্রাবনের বাবা মিঃ শহিদুল সাহেব সবার মাঝে এসে বসলেন।জারিফ চৌধুরীর সাথে আবার মিঃ শহিদুল সাহেবের আগে থেকে পরিচয়।যার জন্য দুইজন এতোক্ষন বাহিরে বসে গল্প গুজব করছিলেন।
মিঃ শহিদুল সাহেব সোনিয়াকে দেখামাত্র বললো, আলহামদুলিল্লাহ। আমার তো পছন্দ হয়েছে।তোমার কেমন লাগলো শ্রাবণের মা?

–জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।আমারও পছন্দ হয়েছে।
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ।
শহিদুল সাহেব তখন বললো অনুমতি দিলে আজকেই আমরা সোনিয়ার হাতে রিং পড়াতে চাই।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ অবশ্যই। যদি আপনাদের পছন্দ হয়ে থাকে।তাহলে কিসের জন্য লেট করবেন?
মিসেস লুবনা বেগম সেই কথা শুনে শ্রাবন কে আবার জিজ্ঞেস করলেন,কিছু তো বল?পরে আবার বলবি এই বিয়ে আমি করবো না তখন কিন্তু আমরা শুনবো না তোর কথা।
শ্রাবণ সেই কথা শুনে বললো, তোমাদের যেটা ভালো মনে হয়।আমার কিছু বলার নাই।

মিসেস লুবনা বেগম সেই কথা শুনে সোনিয়ার হাতের মধ্যাঙ্গুলিতে ডায়মন্ডের কারুকাজ করা একটি রিং পরিয়ে দিলেন।
এবার শ্রাবণ আর সোনিয়া কে আলাদা করে কথা বলার জন্য সোনিয়ার রুমেই পাঠানো হলো।
সোনিয়া বেশ লজ্জা পাচ্ছিলো।কারণ এই প্রথম বার তাকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে।সেজন্য তার অনুভূতি টা সম্পূর্ণ আলাদা ছিলো।তবে শ্রাবনের দিকে এক পলক তাকিয়েই সে শ্রাবনকে পছন্দ করে ফেলেছে।

সোনিয়া নিচ মুখ হয়ে আছে।আর শ্রাবন চুপচাপ হয়ে আছে।কে প্রথম কথা বলবে বুঝতে পারছিলো না।কিছুক্ষন পর শ্রাবণ নিজেই জিজ্ঞেস করলো,
আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?

সোনিয়া কিভাবে নিজের মুখে বলবে সেজন্য চুপ করে রইলো।শ্রাবণ তখন বললো কি হলো কিছু তো বলুন?
সোনিয়া তখন বললো আগে আপনি বলুন,আমাকে আপনার কেমন লেগেছে?
শ্রাবণ সেই কথা শুনে বললো,পছন্দ হয়েছে।
সোনিয়া তা শুনে বললো, আমারও।

প্রায় আধাঘন্টার মতো আলাদা টাইম স্পেন্ড করলো ওরা দুজন।
তারপর শ্রাবনীর ডাকে সোনিয়া আর শ্রাবণ দুইজনই আবারও সবার মাঝে ফিরে এলো।
কুশানদের পরিবারের সাথে আত্নীয়তা করতে পেরে মিঃ শহিদুল সাহেব আর মিসেস লাবুনি বেগম ভীষণ খুশি হলেন।সেজন্য সবাই বেশ আড্ডা ফুর্তিতে মেতে উঠলেন।

মিঃ শহিদুল সাহেব জানিয়ে দিলেন পরের সপ্তাহেই ধুমধাম করে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। এবং এনগেজমেন্টের দিনই সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে ঠিক কোনদিন বিয়ে হবে!তিনি এটাও জানিয়ে দিলেন, কোনো ধরনের যৌতুক দাবি করবেন না তারা।উল্টো সোনাদানা দিয়ে মুড়িয়ে রানীর মতো করে সাজিয়ে ছেলের বউকে নিয়ে যাবেন তাদের বাড়িতে।

মিঃ সুলেমান চৌধুরী তখন নিজেও জানালেন সেদিন শুধু একটা বিয়ে হবে না।আমার নাতী কুশান আর নাতবউ তোড়ার বিয়ের অনুষ্ঠান ও হবে সেদিন।কারণ তাদের শুধু ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়েছে।সেজন্য আমি চাচ্ছি দুইটা বিয়ের অনুষ্ঠান যাতে একসাথেই হয়।

মিঃ সুলেমান চৌধুরীর কথা শুনে মিঃ শহিদুল সাহেব বললো,এটা তো আরো বেশি খুশির সংবাদ।একসাথে দুই টা বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়া মানে ডাবল আনন্দ।
শহিদুল সাহেবের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।আসলে শহিদুল সাহেব হলেন ভীষণ মজার মানুষ।
রাতের ডিনার সেরে তারপর পাত্রপক্ষ বাসায় ফিরলেন।

তোড়া টেনশনে তার রুমের মধ্যে পায়চারি করতে লাগলো।কারণ তার শ্রাবনকে সুবিধার ছেলে মনে হলো না।কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে যেনো তার দিকে বার বার তাকাচ্ছিলো।সেজন্য তোড়া রুমে এসে বসে আছে।
এদিকে কুশান মেহমান দের বিদায় দিয়ে রুমে চলে এলো।

কুশান রুমে এসে দেখলো তোড়া শুয়ে আছে সে জন্য সে সাথে সাথে তোড়ার কাছে এসে বললো,কি হয়েছে তোড়া?তুমি শুয়ে আছো যে?মেহমানদের সাথে ঠিক করে তো কথাও বললে না।
তোড়া তখন বললো, সবাই তো আছেই।আমি কি কথা বলবো?
কুশান তখন একটু রাগান্বিত লুকে বললো,মানে কি তোড়া?কি কথা বলবা মানে?তুমি হলে এ বাড়ির একমাত্র বউ,সেই তুমি যদি এইভাবে রুমের মধ্যে চুপটি করে বসে থাকো তখন মেহমান কি ভাববে?

তোড়া কুশানের কথা শুনে বেড থেকে নেমে যেতে ধরলে কুশান তোড়ার হাত ধরে টেনে আবার তার কাছে এনে বললো,তোমাকে কোনো কথা বলা যায় না।একটুতেই রেগে যাও।আমি খারাপ কি বললাম?
এই বলে কুশান তোড়ার কপালে একটা কিস করলো।আর দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকলো।
তোড়া নিজেও চুপটি করে কিছুক্ষন কুশানের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো নিজেকে।

কুশান তখন বললো, আজ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।আমার সুন্দরী বউ টা।সব ঠিক আছে শুধু রাগ টা একটু বেশি।
তোড়া কুশানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে হঠাৎ সে জিজ্ঞেস করলো,কুশান তুমি কি শ্রাবন ছেলেটার একটু ভালো করে খোঁজ নিয়েছিলে?ছেলেটার চরিত্র কেমন বা কোনো রিলেশন করেছে কিনা?

কুশান তা শুনে বললো, হ্যাঁ,নিয়েছি খোঁজ।কোনো রিলেশন করে না।আর চরিত্রও ভালো।ভালো দেখেই তো মনে হলো সোনিয়ার সাথে বিয়ে হলে মন্দ হবে না।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো, ভালো হলেই ভালো।আর ছাড়ো এখন।যেতে হবে আমাকে।সোনিয়ার সাথে একটু কথা বলবো।

কুশান সেই কথা শুনে আরেকটা কিস করলো তোড়াকে।এবার কিস টা করলো ঠোঁটে।
তোড়া তা দেখে বললো কুশান ছাড়ো তো।সবসময় কিন্তু তোমার এই দুষ্টামি ভালো লাগে না আমার।
–ওকে ছাড়লাম।যাও কই যাবা যাও।
তোড়া তখন কুশানের গলা ধরে বললো, তুমি আবার রাগ করলে নাকি?
–না।

— তুমি রাগ করলে না তোমাকে একদম মেয়েদের মতো লাগে কুশান।সেজন্য আমার মনে হয় তোমার রাগ না করাই ভালো।এই বলে তোড়া মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কুশান তখন চিল্লায়ে বললো, তাড়াতাড়ি এসো রুমে।আমি কিন্তু শুয়ে পড়লাম।
তোড়া সেই কথা শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো,আজ আর আসছি না।তুমি আমার জন্য না অপেক্ষা করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো।
কুশান তা শুনে বললো, তিরিশ মিনিট পার হয়ে গেলেই রুমে দেখতে চাই তোমাকে।

–যদি না আসি।
–কোলে করে নিয়ে আসবো।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো আচ্ছা নিয়ে আসিও।এই বলে সে সোজা সোনিয়ার রুমে চলে গেলো।
সোনিয়া রুমে একা একা বসে আছে।সে তার শাড়ি চেঞ্জ করে হাতের কাজ করা একটা থ্রি পিচ পড়েছে।সেই মুহুর্তে তোড়া প্রবেশ করলো রুমে।তোড়াকে দেখামাত্র সোনিয়া বললো,

ভাবি তুমি আজ এতো সুন্দর একটা শাড়ি কেনো পড়েছো?তোমাকেই তো ওনারা পাত্রী ভেবে বসে ছিলো।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো,ভাবলাম মেহমান আসতেছে,সেজন্য বাড়ির বউ হিসেবে তো একটু শাড়ি পড়তেই পারি।কে জানতো তারা আমাকেই পাত্রী মনে করবে?তাছাড়া আম্মু বার বার বাড়ির বউ বলে আমাকে সম্বোধন করেই যাচ্ছে,তারপরেও যদি ওনারা না বোঝেন তাতে কিছু করার নাই।

সোনিয়া সেই কথা শুনে তোড়ার গলা ধরে বললো, তুমি আবার মন খারাপ করলে নাকি ভাবি?আমি তো জাস্ট মজা করে বললাম কথাটা।এই দেখো আংটি।আমার হবু শাশুড়ী আম্মু পড়িয়ে দিয়েছে।এই বলে সোনিয়া খামটিও দেখালো।আর বললো, এখনো খুলে দেখি নি কত আছে।তবে ওজন দেখে মনে হচ্ছে অনেক টাকাই দিয়েছে।ভাবতেছি টাকা গুলো আমি যত্ন করে তুলে রাখবো।

সোনিয়ার হাসিভরা মুখ দেখে তোড়ার ভীষণ ভালো লাগলো।সে নিজেও হাসি মাখা মুখে বললো,
খুব ভালো আইডিয়া সোনিয়া।এই বলে তোড়া সোনিয়া কে জিজ্ঞেস করলো,
শ্রাবণ তোমাকে কি কি জিজ্ঞেস করলো সোনিয়া?

–অনেককিছু।আমার কোনো রিলেশন আছে কিনা?তাকে আমার পছন্দ হয়েছে কি না?
–তা তুমি কি উত্তর দিলে?
সোনিয়া তোড়ার কথা শুনে হেসে উঠে বললো,যা সত্যি সেটাই বললাম।
–তোমার পছন্দ হয়েছে শ্রাবনকে?

সোনিয়া তা শুনে বললো, আমার পছন্দ অপছন্দ বড় কথা না ভাবি।আমার ফ্যামিলির লোকজন যেটা ভালো মনে করছে আমার জন্য আমার কাছে সেটাই ভালো।বিশেষ করে কুশান ভাইয়া তো আর খারাপ ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেবে না।
–হ্যাঁ।তা তো ঠিকই।
তোড়া আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলো না সোনিয়া কে।সে মনে মনে ভাবলো,আল্লাহ শ্রাবণ যেনো ভালো ছেলেই হয়।সোনিয়ার মতো সহজ সরল ভালো মনের মেয়েটাকে তুমি সুখী রেখো।

তিন দিন পর কুশান ভার্সিটিতে চলে গেলো।এ কয় দিন ব্যস্ত থাকার কারণে যেতে পারে নি সে।তাছাড়া আজকের পর থেকে সে দুই সপ্তাহের জন্য সবকিছু থেকে ছুটি নিবে।কারন সামনে তার বিয়ের অনুষ্ঠান। শুধু তার না,তার সাথে সোনিয়ারও বিয়ের অনুষ্ঠান। সেই জন্য আজ কুশান তার বন্ধুদের ইনভাইট দেওয়ার জন্যই শুধুমাত্র ভার্সিটিতে যাচ্ছে।বেচারা এখন পর্যন্ত কুশানের বউকে দেখে নি।সেই আফসোসে শেষ হয়ে যাচ্ছে কুশানের বন্ধুরা।

কুশান ভার্সিটিতে চলে গেলে তোড়া একদম একা হয়ে যায়।এতোদিন সোনিয়া আর সুমন তাকে সময় দিলেও এখন তারাও ব্যস্ত।কারণ সোনিয়া তার হবু জামাই এর সাথে কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত।অন্যদিকে আজকাল সুমন তেমন একটা তোড়ার রুমের দিকে আসে না।

হয় তো কুশান বারণ করে দিয়েছে,যার জন্য সুমন আর আগের মতো হাসি ঠাট্টাও করে না তোড়ার সাথে।তো তোড়া বেলকুনিতে একটু পায়চারি করে ছাদের দিকে চলে গেলো।হঠাৎ সে খেয়াল করলো কেউ একজন তাদের বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তোড়া না দেখার ভান করে আছে।কিন্তু ছেলেটি হঠাৎ হাত দিয়ে ইশারা করলো তোড়াকে।ছেলেটির হাত নাড়ানো দেখামাত্র তোড়ার বুকটা ধক করে উঠলো।এই অচেনা ছেলে তাকে এভাবে ডাকছে কেনো?

ছেলেটিকে দূর থেকে স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে না।যার কারণে তোড়া তাড়াতাড়ি করে তার রুমে প্রবেশ করলো।
তবে তোড়ার বুকটা এখনো ধড়ফড় করে কাঁপছে।সে শুধু ভাবতেছে কে হতে পারে ছেলেটা?
সেজন্য তোড়া দেখার জন্য আবার ছাদে চলে গেলো।

কিন্তু তোড়া এবার ছেলেটিকে দেখতে পেলো না।যার জন্য সে তাড়াতাড়ি করে ছাদ থেকে নেমে এলো।কিন্তু ছাদ থেকে নামতেই তোড়ার সাথে সোনিয়ার দেখা হয়ে গেলো।
সোনিয়াকে এই অসময়ে বাহিরে যাওয়া দেখে তোড়া বললো,

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩১

তুমি কই যাচ্ছো সোনিয়া?
সোনিয়া তখন বললো আসলে ভাবি একটু তাড়া আছে আমার।পরে এসে বলছি তোমাকে।এই বলেই সোনিয়া বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৩