আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩১

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩১
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

কামিনী কে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকা দেখে জারিফ চৌধুরী চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন কুশানকে।
–কুশান?কুশান?তোর আম্মু মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।তাড়াতাড়ি আয়।
কুশান তার বাবার চিৎকার শোনোমাত্র দৌঁড়ে চলে এলো।

কুশান এসেই কামিনী কে কোলে করে নিয়ে সামনে রাখা একটা বেঞ্চে শুয়ে দিয়ে ডাকতে লাগলো,
আম্মু?আম্মু?কি হয়েছে তোমার?
কামিনী কুশানের কথা যেনো শুনতেই পেলো না।কুশান তখন জারিফ চৌধুরী কে বললো, আব্বু তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে এসো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পানির কথা শোনামাত্র তোড়া একটা বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো এই নাও পানি।
কুশান তখন সেই বোতল থেকে কিছুটা পানি নিয়ে কামিনীর মুখে ছিটিয়ে দিলো।পানির ঝাপটা চোখে দেওয়ার সাথে সাথে কামিনী নড়েচড়ে উঠলো।আর চোখ মেলে তাকিয়েই বললো,

কুশান আমার সন্তান।ও কখনোই অন্যজনের সন্তান হতে পারে না।কুশান? বাবা বিশ্বাস কর আমিই তোর আম্মু হই।
কামিনীর কথা শুনে সবাই ভীষণ অবাক হলো আর একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ইরা,মিরা,লিরা তখন কামিনীর পাশে বসে বললো,

আম্মু এরকম কুশান কুশান করছো কেনো?আর কুশান অন্যজনের সন্তান কেনো হতে যাবে?কুশান তো তোমারই ছেলে।
কামিনী মেয়েদের কথা শুনে আর কোনো উত্তর দিলো না।সে তখন কুশান কে বললো,
বাবা আমাকে এখন বাড়ি নিয়ে চল।আমি বাড়ি যেতে চাই।আমার এখানে আর ভালো লাগছে না।
কুশান তা শুনে বললো, আম্মু তোমাকে এখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।তুমি অসুস্থ আম্মু।

–না আমি ঠিক আছি।আমি সুস্থই আছি।আমি এখন বাড়ি যেতে চাই।তাড়াতাড়ি বাড়ি নিয়ে চল আমাকে।
কুশান কামিনীর কথা শুনে আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে সবাইকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো।ইরা,মিরা আর লিরা কামিনীকে অসুস্থ দেখে তারাও সমস্ত রাগ অভিমান ভুলে গিয়ে বাড়িতে চলে আসলো।সাথে শাহিন,মাহিন আর তুহিন ও চলে গেলো।

কিছুক্ষন আগেই সবাই কত আনন্দ করছিলো।কামিনী অসুস্থ হওয়াই মুহুর্তের মধ্যে সবার আনন্দ একদম মাটির সাথে মিশে গেলো।
কুশান বাসায় এসে কামিনী কে তার বেডে শুয়ে দিলো।সবাই ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।হঠাৎ করে কামিনী এমন অসুস্থ কেনো হলো?কুশান বাড়ি এসেই আগে তাদের ফ্যামিলি ডক্টর কে কল করলো।ডাক্তার সাহেব শোনামাত্র কুশানদের বাড়ি চলে এলো।আর কামিনীর চেকাপ করার পর বললো,

আবার প্রেসার হাই হয়ে গেছে কামিনীর।অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা আর উত্তেজনায় এরকম সমস্যা হয়েছে।সেজন্য কামিনী কে সবসময় চিন্তামুক্ত রাখতে হবে।আর এতো বেশি উত্তেজিত হতে দেওয়া যাবে না।তা না হলে যেকোন একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে।
ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে কুশান বললো,

ডাক্তার সাহেব কি বলছেন এসব?ভালো করে চেকাপ করুন আম্মুর।আমার আম্মু কি নিয়ে এতো বেশি চিন্তা করবেন?আমার আম্মুর কোনো চিন্তায় নাই ডাক্তার সাহেব।
ডাক্তার সাহেব তখন বললো, সেটা শুধুমাত্র তোমার আম্মুই বলতে পারবেন।অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে এরকম সমস্যা হচ্ছে।এর আগেও কিন্তু আমি সেম কথা বলেছি।আরেকবার সতর্ক করে গেলাম।

জারিফ চৌধুরী তখন কুশানকে বললো, হয় তো ইরা,মিরা, লিরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় এরকম দুশ্চিন্তায় ভুগছে কামিনী। তাছাড়া আর তো কোনো দুশ্চিন্তা থাকতে পারে না ওর।
ইরা,মিরা,লিরা সেই কথা শুনে তার মায়ের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আম্মু আমরা তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবো না।প্লিজ তুমি সুস্থ হয়ে যাও।আর কোনো দুশ্চিন্তা করবে না তুমি।আমরা আবার তোমার কাছেই থাকবো।প্লিজ আম্মু ভালো হয়ে যাও তাড়াতাড়ি। আমরা তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

কামিনী মেয়েদের কথা শুনে তাদের সবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো শুধু। কিন্তু কোনো কথা বললো না।
কামিনী তো দুশ্চিন্তায় আছে কুশানকে নিয়ে।কারণ কুশান কামিনীর নিজের সন্তান নয়।সে ইদানীং শুধু এ নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।কেউ একজন তার ছেলেকে নিয়ে টানাটানি করছে।আর সে বার বার হেরে যাচ্ছে।অপর মহিলাটি জিতে যাচ্ছে।আর তখনি কামিনীর স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে।

কামিনী যখন জানতে পারলো তার বাবা মিঃ সোলেমান চৌধুরী তার সমস্ত প্রোপার্টি দুইবোনের মধ্যে যার ছেলে সন্তান হবে তাকেই দিয়ে দেবে তখন কামিনী একের পর এক সন্তান নিতে থাকে।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তার এক নাগারে তিন টা মেয়ে সন্তান হয়।তবুও থামে না কামিনী। সে সাহস করে আরো একবার সুযোগ নেয়।

আর এইবারে সে সম্পূর্ণভাবে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়।কিন্তু চতুর্থ বারের বেলায় তার ভাগ্য এতোটাই খারাপ ছিলো যে, ছেলে সন্তান জন্ম দিলেও সে তার ছেলেকে জীবিত অবস্থায় পায় নি।কামিনী একদম ভেঙে পড়ে।মৃত ছেলের কথা শুনে বার বার সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।

কামিনীর এমন অবস্থা দেখে এক নার্স কামিনীর মাকে প্রস্তাব দেয় সে এই মুহুর্তে একটা ছেলে বাচ্চা এনে দিতে পারে বিনিময়ে সে অনেক টাকা চায়।কামিনীর মা শোনার সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়।কারণ এখন সবার আগে তার মেয়েকে সুস্থ করতে হবে।নার্স টি তখন পাশের এক কেবিন থেকে কুশানকে এনে দেয়।কামিনী তার ছেলেকে পেয়ে এতো বেশি খুশি হয়ে যায় যে সে ভুলেই যায় সে একটা মৃত বাচ্চার জন্ম দিয়েছে।কামিনী আর দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করে নি এটা কার বাচ্চা?কামিনীর মাও ভুল করেও মুখ ফুটে কথা টা কাউকে বলে নি।

অন্যদিকে সে সময় জারিফ তিন মেয়েকে নিয়ে বাসায় ছিলো।কারণ তিন মেয়ের দেকভালো করার জন্য তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
অন্যদিকে যামিনী নিজেও তখন প্রেগন্যান্ট ছিলো। তার বড় মেয়ে হওয়ার পর ছেলের আশায় আবার বাচ্চা নেয় সে।তখন যুথি ছিলো পেটে।

কামিনী এজন্য সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকতো।কখন বুঝি কে জেনে যায় তার কুশানের কথা।কিন্তু একমাত্র প্রমান তার মা হঠাৎ করেই মারা যায়।যার কারনে কামিনী কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
এদিকে কামিনীর ধারণা নিশ্চয় নার্স টা সবকিছু ভুলে গেছে।কারণ হাসপাতালে ওরকম কত শত রোগী আছে?নার্স তাকে কি করে মনে রাখবে?
কিন্তু ইদানীং সে বুঝতে পারছে না কেনো এমন হচ্ছে?কেনো সে বার বার এরকম স্বপ্ন দেখছে?

আজ কুশানদের বাড়ি জুড়ে একপ্রকার হইচই চলছে।আশেপাশের সবাই আসতেছে কুশান দের বাড়িতে।কারণ কুশানের নানা মিঃ সুলেমান চৌধুরী ওমরাহ হজ্জ্ব করে আজ বাসায় ফিরেছেন।তিনি সবার জন্য জায়নামাজ, তসবিহ, খেঁজুর আর জমজম কুপের পানি নিয়ে এসেছেন।আর সেগুলো নেওয়ার জন্য সবাই ভীড় ধরে আছে।

এদিকে সুলেমান চৌধুরী প্রথমবার দেখবেন তার একমাত্র আদরের নাতীর বউকে, খালি মুখে কি করে দেখবেন?সেজন্য তিনি তোড়ার জন্য সুন্দর একটা মালার সেট এনেছেন।বাকি সবার জন্যও এনেছেন।কিন্তু তোড়ার গিফটা ছিলো সবচেয়ে বেশি স্পেশাল।

কুশানের পাশে তোড়াকে দেখে সুলেমান চৌধুরী খুবই খুশি হয়েছেন।সেজন্য তিনি দুইজনকে মন ভরে দোয়া করে দিলেন।সুলেমান চৌধুরী হজ্জ্বে যাওয়ার সময় বলে গেছেন আর কিছুদিন পরে কুশানের ২৩ বছর হবে।আর ২৩ বছর পূর্ণ হওয়া মাত্র তারা যেনো কুশানের বিয়ে দিয়ে দেয়।সে থাক বা না থাক।
কামিনী তার বাবার কথা শুনেই পাত্রী দেখা শুরু করে দেয়।

এখন সুলেমান চৌধুরী দেশে ফিরে নতুন করে ঘোষণা দিলেন এই মাসের মধ্যেই নতুন করে আবার তার একমাত্র নাতনির ধুমধামে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।কোনো কমতি রাখা যাবে না সেই অনুষ্ঠানে।পুরো দেশের মানুষ কে তিনি জানাতে চান।
কুশান তার নানুর কথা শুনে বললো,
নানু আমার একটা কথা ছিলো।তুমি পারমিশন দিলে কথাটা বলতে চাই।

–কি কথা?
–আমাদের সোনিয়ার জন্য আমি একটা ছেলে পছন্দ করে রেখেছি।তুমি পারমিশন দিলে তাদের আসতে বলবো।
সুলেমান চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তুই ভালো করে খোঁজ নিয়েছিলি?ছেলে বা ছেলের পরিবার কেমন?
–হ্যাঁ নানু।অনেক ভালো পরিবার।আমি ভালো করেই খোঁজ নিয়েছিলাম।

সুলেমান চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে একসাথে দুই টা বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে।
বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা শুনে সবার মন একদম আনন্দে নেচে উঠলো।অনেকদিন পর এই বাড়িতে এরকম জাকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠান শুরু হবে।

কুশানের কথামতো আজ সোনিয়াকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।
পাত্রের পরিবার বিশাল বড়লোক। পাত্র নিজেও একজন ইন্জিনিয়ার। টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই।কুশানদের মতোই বিশাল বড় ফ্যামিলি।তাদেরও নিজস্ব বিজনেস আছে।ছেলেদের গ্রামের বাড়িতে প্রচুর জায়গা জমিও আছে। এক কথায় কোনোকিছুরই কমতি নেই। সাথে ওনারা সবাই খুব ভালো মনের মানুষ। এরকম পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করার জন্য কে না চায়?

তাইতো সারা বাড়ি জুড়ে এলাহি আয়োজন করা হচ্ছে। যাতে পাত্রপক্ষের অতিথি আপ্যায়নে কোনো কমতি না হয়।
যদিও সোনিয়া কুশানের নিজের বোন হয় না তবুও কুশান কিন্ত সোনিয়া কে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে।সেজন্য কুশান চায় সোনিয়ার যাতে খুব ভালো একটা ঘরে বিয়ে হয়।কুশান খুঁজে খুঁজে সেই রকম একটা ফ্যামিলিই বের করেছে।
পাত্রপক্ষের আপ্যায়নের জন্য সেই সকাল থেকে রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত আছে তোড়া।তার সাথে কামিনী আর লতিফাও আছে।টুনি আর জয়া তো আছেই।ওরা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে।গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে সবাই।কাজের চাপে গোসলও করতে পারে নি কেউ।

সেজন্য তোড়া কামিনী আর লুতফাকে বললো আপনারা গিয়ে গোসল টা করে নিন।আমি বাকি কাজ সামলাচ্ছি। একাহাতে বিভিন্ন পদের রান্না বান্না করতে লাগলো তোড়া।এখন সে পুরোপুরি সংসারি হয়ে গেছে।সবকিছু নিজে নিজেই করতে পারে।
চা,নুডুলস, লাচ্ছি, সেমাই, হরেক রকমের পিঠা, বিস্কিট, চানাচুর, নাগেটস,পাস্তা,রসমালাই, রসগোল্লা,ছানার মিষ্টি,দই,ফালুদা,কোল্ডকফি শিককাবাব, সব রকমের নাশতার আয়োজন করা হয়েছে।

কী নেই খাবারের আইটেমে!পাত্র পক্ষের মনরক্ষা করার জন্যই এতকিছুর আয়োজন। কারণ পাত্রপক্ষ যদি সোনিয়াকে পছন্দ করে তাহলে আজকেই আংটি পরিয়ে দিয়ে যাবে তারা।কারণ কুশান,সুমন আর জারিফ চৌধুরী ছেলেদের বাড়ি আগেই দেখে এসেছেন।ওদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েই তবে দিয়ে তারা পাত্রপক্ষকে আসতে বলেছে।

এদিকে তিন বোন ইরা,মিরা আর লিরা কাল থেকে সোনিয়ার রূপচর্চা শুরু করে দিয়েছে।পাত্র পক্ষ না আসা পর্যন্ত তারা সোনিয়ার রূপচর্চা করতেই থাকবে।সোনিয়া এতে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলো।তার এসব রুপচর্চা করতে একদম ভালো লাগে না।তবুও এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাকে চুপচাপ থাকতে হচ্ছে।কারণ ইরা,মিরা, লিরার মুখের উপর কথা বলার ক্ষমতা তার এখনো হয় নি।

কিন্তু তিন বোনের পরিশ্রমের ফলাফল একদম শূন্য হয়ে গেলো।কারণ তারা সোনিয়াকে যে হারে মেকাপ করিয়েছে ওকে দেখতে একদম সাদা ভুতের মতো লাগছিলো।

তোড়া তিন বোনের এমন কান্ড দেখে হা হা করে হাসতে লাগলো।শুধু তোড়া না বাড়ির সকলেই হাসতে লাগলো।সোনিয়া সবার হাসাহাসি দেখে তাড়াতাড়ি করে মুখ ধুয়ে আসলো।তার ভীষণ অসহ্য লাগছিলো ইরা,মিরা আর লিরার কান্ড দেখে।
তোড়া তখন বললো,পাত্রপক্ষ পছন্দ করার হলে এমনিই করবে। এত সাজগোছ করার কী দরকার?তাছাড়া সোনিয়াকে এমনিতেই ভালো লাগে।হালকা করে একটু সাজালেই হবে।

ইরা,মিরা,লিরা সেই কথা শুনে বললো, না এটা হতে পারে না।আমার বোনকে আমরা পাত্রপক্ষর সামনে এমন ভাবে উপাস্থাপন করবো যে তাদের চোখ যেনো শুধু সোনিয়ার দিকেই থাকে।আমাদের সাজানো ভালো হয় নি তো কি হইছে?পার্লার আছে না?সেখানে নিয়ে যাবো।এই বলে তিন বোন সোনিয়াকে আবার পার্লারে নিয়ে গেলো।

ইরা,মিরা,লিরার এমন কান্ড দেখে মিসেস লুতফা চৌধুরীও হেসে উঠলো।তার মেয়েকে যে সবাই এতো ভালোবাসে সত্যি তার বিশ্বাস হচ্ছে না।লুতফা কিন্তু কামিনীর আপন কেউ হয় না।লুতফার স্বামী মিঃ তায়েব চৌধুরী জারিফ চৌধুরির চাচাতো ভাই হয়।জারিফ চৌধুরী নিজে এনেছেন তায়েব আর তার ফ্যামিলিকে এ বাড়িতে।

লুতফা কামিনীর সংসারের সমস্ত কাজকর্ম করতো।সেই হিসেবে কামিনীর সাথে খুব ভালো সম্পর্ক লুতফা চৌধুরীর।এক সময় তায়েব নিজেও খুব অবস্থাবান লোক ছিলো।কিন্তু জুয়ার নেশায় সমস্ত কিছু শেষ করে ফেলেছেন।জারিফ তাদের এই বাড়িতে নিয়ে আসায় অনেকে মনে করে তারাও এই ফ্যামিলিরই লোক।আর কুশানরাও লুতফা আর তায়েব চৌধুরী কে এই পরিবারেরই সদস্য মনে করে।

অবশেষে সোনিয়াকে সুন্দর করে সাজগোছ করে নিয়ে তবে দিয়ে বাড়ি ফিরলো ইরা,মিরা,লিরা। খুব স্টাইলিশ ভাবে শাড়ি পড়ানো হয়েছে সোনিয়াকে।গোল্ডেন কালার এর শাড়ি আর চুলগুলো ছেড়ে রাখা হয়েছে। সাথে আছে গর্জিয়াস মেকওভার ও গয়নাগাটি। যেন আজকেই বিয়ে হয়ে যাবে সোনিয়ার।খুব মিষ্টি লাগছিলো দেখতে সোনিয়া কে।

এদিকে তোড়া সব খাবার দাবার রেডি করে নিজেও একটু ফ্রেশ হতে গেলো।কারণ সকাল থেকে কাজ করতে করতে তাকে একদম কাজের মেয়ে জরিনার মতো লাগছিলো।যেহেতু সে এ বাড়ির একমাত্র বউ,তাকেও তো একটু সাজগোছ করতে হবে।

তোড়া তার কাপড়চোপড় নিয়ে বাথরুমে যেতেই হঠাৎ কুশান এলো রুমে।আর তোড়ার হাত ধরে টেনে তার কাছে এনে বললো,
ইসস, আমার বউ টা আজ কাজ করতে করতে একেবারে শেষ হয়ে গেছে।কাজের চাপে আমাকে পর্যন্ত ভুলে গেছে।শুধু কাজ করলে হবে, না আমাকেও একটু সময় দিতে হবে?
তোড়া তখন বললো কুশান ছাড়ো প্লিজ।গরম লাগতেছে আমার।দেখো আমার জামা ঘেমে একদম চপচপ করছে।আগে ফ্রেশ হয়ে আসি পরে এসে কথা বলতিছি।

–না,না।পরে না।এখনি একটু দরকার আছে।আমার বউ এতো পরিশ্রম করলো আর আমি তার জামাই হয়ে তার বিনিময়ে কিছু দিবো না তা কি করে হয়?দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ আমার।এই বলে কুশান তোড়াকে কোলে তুলে নিলো।
তোড়া কুশানের কোল থেকে নামার জন্য অনেক
লাফালাফি শুরু করে দিলো কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না।অবশেষে সে রাগ করে কুশানের বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি ও মারলো।তবুও কোনো লাভ হলো না।

কুশান তা দেখে বললো, এতো লাফালাফি করছো কেনো? লাফালাফি বন্ধ করো না হলে কিন্তু নিচে ফেলে দিবো।
তোড়া সেই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।কারণ কুশান যখন বললো সে ফেলে দেবে,তাহলে সে সত্যি সত্যি ফেলে দিবে।কারণ কুশান আর আগের মতো নাই।তার মনে আর আগের মতো এতো বেশি দয়ামায়াও নাই।

দুই দিন আগেও যখন এরকম কোলে তুলে নিয়েছিলো আর তোড়া নামাতে বলেছিলো তখন কুশান ঠিক সেম কথাই বলেছিলো।তোড়া ভেবেছে হয় তো তাকে ভয় দেখাচ্ছে কুশান।কিন্তু না, কুশান সত্যি সত্যি তাকে ফেলে দিয়েছিলো।সেই ব্যাথা এখনও আছে তার।কুশান তখন আবার একটা মুভ এনে নিজে মালিশ করে দিয়েছে।তবুও ব্যাথা কমে নি।

এদিকে পাত্রপক্ষ এসে গেছে।পাত্রের নাম শ্রাবণ। শ্রাবণের সাথে তার আম্মু, আব্বু আর একমাত্র বোন শ্রাবণীও এসেছে।সোনিয়াকে এখনো আনা হয় নি পাত্রপক্ষের সামনে।
তাকে আপাতত লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

পাত্রপক্ষ কে আসা দেখে লুতফার হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেলো।না জানি কি হবে?আর কি কি জিজ্ঞেস করবে তার মেয়েকে।কামিনী লুতফাকে এরকম দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বললো, এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো লুতফা?তাড়াতাড়ি তোড়াকে ডেকে আন?পাত্রপক্ষ কে নাস্তা দিতে হবে না?

–হ্যাঁ বুবু।ডাকছি।এই বলে লুতফা তোড়াকে ডাকতে গেলো।কিন্তু গিয়ে দেখে তোড়ার রুম ভিতর থেকে লাগানো।সেজন্য সে বুঝতে পারছিলো না ডাকবে, না ডাকবে না।এদিকে কামিনী চিল্লাতে লাগলো,কি হলো ডেকে আন তোড়াকে।ও ছাড়া কে পরিবেশন করবে খাবার?

লুতফা তখন দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললো, তোড়া?তোড়া?পাত্রপক্ষ এসে গেছে।তাড়াতাড়ি একটু এসো মা।
তোড়া লুতফার কন্ঠ শোনামাত্র বললো, জ্বি চাচী, যাচ্ছি।আমি একটু রেডি হচ্ছি।
লুতফা সেই কথা শুনে বললো,আচ্ছা মা তাড়াতাড়ি একটু আসো।

তোড়া এবার কুশানকে সরে দিয়ে এক নাগারে বকতে লাগলো।কত বার বললাম যে এখন ডিস্টার্ব করো না।পাত্রপক্ষ যেকোন মুহুর্তে আসবে। সে ছাড়া আর কে সামলাবে এসব?তবুও শুনলে না।এখন কি হবে?আমি কখন কি করবো?গোসল কখন করবো?আর রেডিই বা হবো কখন?
কুশান তখন বললো,শুধু ঘ্যান ঘ্যান করা ছাড়া কিছুই শেখো নি?এতো কথা না বলে যাও এখন।

–কি? আমি ঘ্যান ঘ্যান করি?
কুশান তা শুনে বললো তোড়া তুমি এতোক্ষনে কিন্তু গোসল করে রেডি হয়ে বের হতে পারতে রুম থেকে যতক্ষন পর্যন্ত তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো।

–যা আমি যাবোই না।গোসল ও করবো না।আর অতিথিদের আপ্যায়ন ও করাবো না।তুমি করবে এসব।
–না গেলে নাই।আমার কি?এই বলে কুশান ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলো।
তোড়া কুশান কে ঢোকা দেখে বললো,কুশান তুমি পরে করো গোসল।আমাকে আগে করতে দাও।সবাই কিন্তু অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

কুশান তখন বললো, এই যে ম্যাডাম?আমার জন্যও কিন্তু সবাই অপেক্ষা করছে।সেজন্য এখন আমি আগে ফ্রেশ হবো।
তোড়া তা শুনে জোর করেই কুশানকে টেনে বের করলো।আর তাড়াতাড়ি করে ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো।
এদিকে বাহির থেকে কুশান চিল্লায়ে বললো, তোড়া খোলো বলছি।আমার কিন্তু বেশিক্ষন লাগবে না।
তোড়া কোনো উত্তর দিলো না।

কুশান তখন বললো ওকে।একসাথে করি তাহলে।প্রমিজ করলাম, কোনো ডিস্টার্ব করবো না।
তোড়া তখন বললো না।আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না।এই বলে তোড়া তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
তোড়ার আসতে দেরি হওয়ায় কামিনী নিজেই পরিবেশন করতে লাগলো নাস্তাগুলো।সাথে ইরা,মিরা,লিরাও আছে।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩০

কিছুক্ষন পর তোড়া আসলো সবার সামনে।সে নিজেও একটা সুন্দর শাড়ি পড়েছে।আর হালকা করে একটু সাজুগুজু ও করেছে।ম্যাজেন্টা কালারের এক কালারের শাড়ি,যার পাড় টা কালো,আর তাতে সোনালী কালারের চুমকি বসানো আছে।মাত্র গোসল সেরে এসেছে যার কারনে চুলগুলো ছেড়ে দিয়েই রুম থেকে বের হয়েছে সে।তোড়া তো আর জানে না গেস্ট দের ডাইনিং রুমেই বসতে দেওয়া হয়েছে।সে রুম থেকে বের হয়েই একদম সরাসরি পাত্রপক্ষের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩২