আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩০

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩০
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

কামিনী খাবার মুখে দিতেই কুশান বললো,আম্মু তোমার হাতের রান্না খেয়ে আজ সবাই ভীষণ খুশি হয়েছে।এই প্রথম তুমি সবার জন্য এতো কষ্ট করে রান্না করলে সেজন্য তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই আমরা।
কামিনী তা শুনে খাবার রেখে দিয়ে বললো,

কি সারপ্রাইজ দিবি?
কুশান তখন কামিনী কে চেয়ার থেকে তুলে ঘরে নিয়ে গেলো।আর বললো,
পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি।ঝটপট রেডি হয়ে আসো।তারপর বলছি।
কামিনী তখন বললো বাবা আমি এখনো কিছু মুখে দেই নি।আগে কিছু খেয়ে নেই।
কুশান তখন বললো, তাহলে তো সারপ্রাইজ টা হবে না আম্মু।সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।এই বলে কুশান চলে গেলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কামিনী কুশানের কথা শুনে আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে রেডি হতে লাগলো।
এদিকে কুশান সবাইকে বলে দিলো ভুল করেও কেউ বলবে না যে খাবার ভালো হয় নি।আর টুনি,জয়া কাল থেকে আম্মুকে রান্না করতে দিবি না।আম্মু ওঠার আগেই যেনো সব রান্না রেডি থাকে।

তাছাড়া আম্মুর শরীর ভালো নয়।তাকে কেনো রান্না করতে হবে?তার কি এখন রান্না করার বয়স নাকি?আম্মু এখন থেকে পুরোদমে বিশ্রাম করবে।
টুনি তখন বললো ভাইয়া আমি বারণ করেছিলাম।কিন্তু খালামনি শোনেন নি।তিনি জোর করেই রান্না করতে বসেছেন?

–ঠিক আছে।আজকে করেছে করুক।কাল থেকে আর করবে না।এখন কে কে বাহিরে যাবে রেডি হয়ে নাও?আম্মুকে নিয়ে আমরা আজ সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে যাবো।তারপর পার্কে।আজ সারাদিন আমরা অনেক মজা করবো।
সোনিয়া আর সুমন বললো আমরা যাবো ভাইয়া।রেডি হয়ে আসছি আমরা।

কুশান তখন তোড়ার গা টেলা দিয়ে বললো তুমিও রেডি হয়ে নাও।এই সুযোগে বাহির থেকে একটু ঘুরে আসি।সেই কবে বিয়ে হয়েছে,এখন পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া হয় নি।
তোড়া তখন বললো কুশান তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।একটু রুমের মধ্যে আসবে?
কুশান সেই কথা শুনে বললো কি কথা?বলো?

তোড়া তখন কুশানের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো আর বললো আপুরা যে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তাদের কে আনতে হবে না?ওনাদের দেখলে আম্মু কিন্তু আরো বেশি খুশি হতো।তুমি তা না করে কি সব ঘোরাঘুরির কথা বলছো?ওনারা না থাকায় বাড়ি টা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
কুশান তখন তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো ননদ দের উপর দেখি ভালোই টান।তোমাকে এতো কথা শুনাতো,এতো অপমান করতো তবুও তাদেরকে এ বাড়িতে আনার কথা বলছো?

–হ্যাঁ বলছি।ওনারা হয়তো ভাবছেন আমরা তাদের ভুলে গেছি।কিন্তু আমার কিন্তু ওনাদের কথা ভীষণ মনে পড়ে।বিশেষ করে আজ আম্মুর হাতের রান্না খেয়ে আরো বেশি মনে পড়ছে।না জানি ওনারা কিভাবে কি করছেন?নিজেরা তো জীবনেও এক গ্লাস পানি ঢেলে খায় নি।

কুশান তখন বললো কিছুদিন একটু কষ্ট করুক।কারণ ওদের এরকম একটা শিক্ষার প্রয়োজন আছে।তাছাড়া আমার মনে হয় না ওদের কোনো কষ্ট হচ্ছে?যা কষ্ট সব দুলাভাই দের হচ্ছে।ওনারাই হয় তো রান্নাবান্না করে খাওয়াচ্ছে।আর ওরা সেই আগের মতোই রাজ রানীর মতো বসে বসে খাচ্ছে।

শাহিন,মাহিন আর তুহিন কিন্তু আপন তিনভাই।কামিনী চৌধুরী নিজে পছন্দ করে তার মেয়েদের এই তিন ভাই এর সাথে বিয়ে দিয়েছেন।কারণ ইরা,মিরা,লিরা যে জীবনেও শশুড় বাড়ি গিয়ে সংসার করতে পারবে না তা কামিনী ভালো করেই জানেন।শাহিন, মাহিন আর তুহিন কিছুতেই ঘর জামাই থাকতে রাজি ছিলো না।

তখন কামিনী তাদের এক প্রকার জোরপূর্বক ধরে রেখেছে তাদের বাড়িতে।শর্ত একটা,হয় ঘরজামাই থাকতে হবে তা না হলে দেনমোহরের টাকা বুঝে দিয়ে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।শাহিন,মাহিন আর তুহিনের বাবা একজন পেশায় কৃষক মানুষ। তারপক্ষে এতোগুলো টাকা যোগাড় করা সম্ভব ছিলো না।

তবে শাহিন, মাহিন,আর তুহিনের বাবা মা এখনো বেঁচে আছে।গ্রামে কিছু জমিজমা আছে সেগুলো চাষাবাদ করেন তিনি।এতোদিন ইরা,মিরা লিরার চক্করে পড়ে তারা তাদের বাবা মার সাথেও দেখা করতে পারে নি।তবে তিন ভাই ই কিন্তু শিক্ষিত।কুশানদের কোম্পানি তে তিন ভাই চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলো।তখন তিন ভাইকে দেখে আর তাদের বায়োডাটা শুনে কামিনী মনে মনে ঠিক করেন এইরকম একটা মধ্যবিত্ত পরিবারই তার মেয়েদের জন্য দরকার।যাতে তারা ঘরজামাই থাকতে বাধ্য হয়।

ইরা,মিরা,লিরা যখন রাগ করে তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো তখন কিন্তু শাহিন,মাহিন আর তুহিন বেশ খুশিই হয়েছিলো।তারা এই দিন টার অপেক্ষায় ছিলো শুধু।সেজন্য তিন বোন রাগ করে বের হয়ে এলে তারা আর এক সেকেন্ড দেরি করে নি।সাথে সাথে তাদের গ্রামে নিয়ে আসে।

ইরা,মিরা,লিরা এখন চাপে পড়ে গেছে।না যেতে পারছে তার মায়ের বাড়িতে না থাকতে পারছে শশুড়বাড়িতে। এদিকে তিন ভাইও বেশ কড়া হয়েছে।তারা আর তিন বোনকে কিছুতেই ভয় করছে না।ইরা,মিরা আর লিরা যদি ভুল করে ধমকও দেয় তখন তারা উলটো দ্বিগুন ধমক দিয়ে বলে,

এখন আর তোমাদের ওসব বাহাদুরি খাটবে না।এই গরীবের সাথেই থাকতে হবে এখন সারাজীবন।এটাই এখন তোমাদের আসল ঠিকানা।এতোদিন যে সম্পদের বড়াই করতে তা অন্যজনের ছিলো।আমরা এতোদিন ধৈর্য্য ধরে ছিলাম শুধু,এখন তোমরা ধৈর্য্য ধরে চুপচাপ সংসার করো।

ইরা,মিরা,লিরা সেই কথা শুনে একসাথে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।কারণ তারা কিছুতেই আর থাকতে পারছিলো না গ্রামে।এদিকে শাহিন,মাহিন,তুহিন ভুল করেও রান্নাঘরের ধারেকাছে যায় না।তারপর শাহিন,মাহিন,তুহিন তাদের মাকেও বলে দিয়েছে সেও যেনো রান্নাঘরে না যায়।তারা তিন বোন যেভাবে মন চায় সেভাবেই রান্না করবে।এখন থেকে তিন বোন একসাথে মিলেমিশে কাজ করবে।

ইরা,মিরা,লিরা এখন সারাদিন কাঁদে আর ভাবে তাদের কপালে কি এটাই ছিলো?
লাকড়ি জ্বালিয়ে মাটির চুলায় রান্না বান্না করা যত টা কঠিন তার চেয়ে বেশি কঠিন ছাই দিয়ে পাতিল আর থালাবাসন মাজা।এদিকে আবার কল চেপে চেপে পানি আনা,কাপড় ধোয়া, আঙিনা ঝাড় দেওয়া।তিন বোন একদম অতীষ্ট হয়ে গেলো।

শেষ মেষ ইরা বললো, আমি আর পারবো না এসব করতে।আম্মুর কাছে যাবো আমি।মিরা তখন বলে,আম্মু নিজেই তো বের করে দিয়েছে বাড়ি থেকে।এখন কোন মুখ নিয়ে যাবো সেখানে।লিরা তো একদম চুপচাপ হয়ে গেছে।সে শুধু দুইবোনের কথা শুনে।তার যে কিছুই বলার নাই।কারণ এটা তাদের আগে ভাবা উচিত ছিলো।এখন তারা আর কি করে ওই বাড়িতে যাবে?

এদিকে শাহিন,মাহিন,তুহিন চেষ্টায় আছে একটা চাকরির জন্য।তবে কুশান আর জারিফ চৌধুরী অফার দিয়েছিলো তারা আগের মতোই তাদের কোম্পানি তে চাকরি টা করতে পারবে।কিন্তু শাহিন,মাহিন,তুহিন সেই অফার গ্রহন করে নি।যেহেতু এখন তারা স্বাধীন হয়েছে সেজন্য নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী কিছু করতে চায় তারা।

কুশান সবাইকে নিয়ে বের হলো বাসা থেকে।সবাই বেশ হৈ-হুল্লোড় করতে করতে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো।কামিনী তখন বললো, বাবা কুশান রেস্টুরেন্টে কেনো?
–এটাই তো সারপ্রাইজ। আজ সারাদিন আমরা আনন্দ করবো,ঘুরবো,অনেক অনেক মজা করবো।
কামিনী তখন বললো,
আল্লাহই জানে ইরা,মিরা, লিরা কি করছে এখন?ওদের কোনো খবর নিয়েছিলি কুশান?

–হ্যাঁ নিয়েছিলাম।তবে আপুদের কাজ থেকে নয়।দুলাভাইদের ফোন দিয়েছিলাম।দুলাভাইরা বললো, ওদের সাথে কথা বলার দরকার নাই।ওরা আগে ভালোভাবে মন বসাক নিজেদের সংসারে।আগে বাস্তবতা বুজুক।তারপর কথা বলিও।তা না হলে ওরা জীবনেও শুধরাবে না।
কামিনী তা শুনে বললো, নিশ্চয় মেয়েগুলো আমার ভীষণ কষ্টের মধ্যে আছে।ওরা কি কখনো ওমন পরিবেশে থেকেছে?

কুশান তা শুনে বললো, ওরা ভালোই আছে।তুমি অযথা চিন্তা করো না ওদেরকে নিয়ে।তাছাড়া তোমরা তো জেনেবুঝেই ওমন ফ্যামিলিতে বিয়ে দিয়েছো।
কামিনী তখন বললো তাহলে আমাকেও আমার শশুড় বাড়িতে পাঠিয়ে দে।আমার মেয়েরা কষ্ট করবে আর আমি রাজরানীর মতো থাকবো এখানে?
কুশান তখন বললো,

আম্মু তুমি যদি সত্যি দাদুর বাড়ি যেতে যাও।অবশ্যই যাবো আমরা।এটা তো অনেক খুশির সংবাদ।
–তুই কেনো যাবি বাবা?তুই চলে গেলে এখানকার ব্যবসা বানিজ্য,বাড়িঘর,জমিজমা কে দেখবে?আমি আর তোর বাবা যাবো।
কুশান সেই কথা শুনে কামিনীর হাত ধরে বললো,তা হয় না আম্মু।আমি এক জায়গায় আর তুমি অন্য জায়গায় থাকবে এটা সম্ভব না।

তবে আমরা একবারে না থাকলেও কিন্তু মাঝে মধ্যে দাদুর বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে পারি।এতে আব্বুও খুশি হতো।আর তুমিও তোমার শশুড়বাড়িতে মাঝেমধ্যে পা রাখতে পারতে।
কামিনী মাথা নাড়ালো শুধু।তবে সে মনে মনে ভীষণ অনুতপ্ত হলো।

কুশানের দাদা দাদী বেঁচে থাকতে একদিনও যায় নি সেখানে।এটাই তার এখন সবচেয়ে বড় আফসোস।কামিনী আর এ নিয়ে কথা বললো না।যেহেতু কুশান তার খুশির জন্য এই জায়গায় নিয়ে এসেছে তার হাসি মাখ মুখ টা সে কিছুতেই আর মলীন করতে চায় না।তবে কামিনী মনে মনে মেয়েদের চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন।

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে সবাই মিলে একটা পার্কে চলে গেলো।এদিকে কুশান অনেক আগেই তার আব্বুকে কল করে জানিয়ে দিয়েছে তারা এখন কোথায় আছে।জারিফ চৌধুরী শোনামাত্র আর এক সেকেন্ড দেরি করলো না।সাথে সাথে তিনিও চলে আসলেন পার্কে।

হঠাৎ কিছুক্ষন পরে শাহিন,মাহিন,আর তুহিন আসলো সেখানে।তাদের সাথে ইরা,মিরা লিরাও আছে।কুশান তাদের দুলাভাইকে কল করে আসতে বলেছে বিধায় তারা এসেছে।তবে ইরা,মিরা, লিরা এসবের কিছুই জানে না।তারা ভেবেছে শাহিন,মাহিন,তুহিন হয়তো তাদের নিজের থেকে বেড়াতে নিয়ে এসেছে।

ইরা,মিরা আর লিরাকে দেখামাত্র কামিনী দৌঁড়ে গিয়ে মেয়েদের জড়িয়ে ধরলো। তার এতো বেশি আনন্দ হচ্ছিলো যে সে কি কথা বলবে সেটাই বুঝতে পারছিলো না।তবে ইরা,মিরা,লিরা কামিনী কে দেখে মনে মনে খুশি হলেও বাহিরে এমন ভাব দেখালো যে তারা মোটেও খুশি হয় নি।

শাহিন,মাহিন,তুহিন তখন বললো, ওভাবে মুখ গোমড়া করে আছো কেনো তোমরা?আম্মুকে জিজ্ঞেস করো তিনি কেমন আছেন?
শাহিন,মাহিন,তুহিনের কথা শুনে তিন বোন এগিয়ে এসে বললো,
তোমরা কি ইচ্ছা করেই এখানে নিয়ে এসেছো আমাদের?কেনো আমাদের আগে বলো নি এটা?
শাহিন,মাহিন, আর তুহিন তখন বললো কুশান আসতে বলেছে আমাদের।সেজন্য নিয়ে এসেছি।
কুশান সেই কথা শুনে তার বোনদের কাছে গিয়ে বললো, কেমন আছিস আপু?

ইরা,মিরা,লিরা কোনো উত্তর দিলো না।কুশান তখন বললো তোরা কি আমার উপর রেগে আছিস?আমি কি বলেছিলাম বাড়ি ছেড়ে যেতে?না তোরা নিজের ইচ্ছাতেই গিয়েছিস?
ইরা তখন শাহিন কে বললো, তুমি কি আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে না আমরা একাই যাবো?মিরা আর লিরাও মাহিন আর তুহিনের হাত ধরে সেম কথা বললো।

তিন ভাই তখন বললো, এখন বাড়ি গেলে কিন্তু দুপুরের জন্য রান্নাবান্না করতে হবে।এখন ভেবে দেখো কি করবে?রেস্টুরেন্টে বসে ভালোমন্দ খাবে?না বাড়ি গিয়েই রান্না বসাবে?
ইরা,মিরা,লিরা সেই কথা শুনে বললো, বাড়ি গিয়ে রান্নাবান্না করবো।সেটাই অনেক ভালো হবে।তবুও এদের কারো মুখ দেখবো না আমরা।

কামিনী মেয়েদের কথা শুনে বললো,এতো রেগে আছিস কেনো তোরা?আমি না হয় ভুল করে যেতে বলেছি তাই তোরা সাথে সাথে চলে যাবি?আমি তোদের ছাড়া ভালো নেই মা।
ইরা তখন বললো, না,আমরা কারো উপর রেগে নাই।আর আমরা ভালো করেই জানি আমরা না থাকায় সবাই বেশ খুশিই হয়েছো।এই বলে তিন বোন চলে যেতে ধরলো।

তোড়া এবার ইরা,মিরা,লিরার সামনে এসে দাঁড়ালো। আর তিন বোনের হাত ধরে বললো,
আপু,প্লিজ আপনারা রাগ করে থাকবেন না।আবার ফিরে আসুন বাসায়।প্লিজ আপু।আমরা আপনাদের ছাড়া কেউই ভালো নেই।
মিরা তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো, কার বাড়িতে যাবো?কুশানের না কামিনীর?

–এভাবে বলছেন কেনো আপু?আপনাদের বাড়িতে যাবেন।
লিরা তখন তোড়ার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, আমাদের বাড়িতেই তো আছি এখন।আগে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি আমাদের আসল বাড়ি কোনটা?স্বামীর বাড়ি ছোট হোক বা বড় হোক ওটাই যে মেয়েদের আসল ঠিকানা তা আজ হারে হারে টের পাচ্ছি।
কুশান তখন বললো, আচ্ছা ঠিক আছে।যাবিই তো।তার আগে সবার একটা ছবি ওঠায়।এই দিনটা আবার কবে আসবে কে জানে?

এই বলে কুশান একটা ছেলের হাতে ক্যামেরা দিয়ে বললো,
ভাইয়া সবার একটা ছবি তুলে দিন।কারণ আজকের দিনটা খুবই স্পেশাল একটা দিন।
ইরা,মিরা,লিরা সেই কথা শুনে সরে গেলে শাহিন, মাহিন আর তুহিন যে যার বউ এর হাত ধরে টেনে সবার সাথে দাঁড়ালো।আর ছেলেটি তখন ক্লিক ক্লিক করে কয়েকটা ছবি ওঠালো।কারণ আজকের এই দিনটাকে ক্যামেরাবন্দী না করলে যে চলবেই না।

শুধু ফ্যামিলি ফটোই না।কুশান এক এক করে তার বাবা মার,দুলাভাই আর বোনদের আলাদা আলাদা করে কাপল পিক ওঠালো।তারপর তোড়া আর কামিনীর কয়েকটা ছবি ওঠালো।সোনিয়া আর সুমন, এদিকে টুনি আর জয়া,মানে যে যার সাথে মন চাচ্ছে ক্লিক ক্লিক করে ছবি ওঠাচ্ছে।মনে হচ্ছে আজ যেনো ছবি ওঠার ধুম পড়ে গেছে।
হঠাৎ কুশান সোনিয়ার হাতে ক্যামেরা দিয়ে বললো,

এখন তোড়া আর আমার কয়েকটা ছবি তুলে দে।এই খুশির দিনে ওর আর আমার কয়েকটা কাপল পিক না তুললে আমাদের ছেলেমেয়ে আবার ভাববে তাদের বাবা মার মধ্যে কোনো মিল ছিলো না।ছেলেমেয়েদের তো দেখাতে হবে তার বাবা মার মধ্যে কত ভালোবাসা ছিলো?

তোড়া সেই কথা শুনে বললো,আব্বু আম্মুর সামনে কি বলছো এসব?সবাই কি ভাববে?
কুশান তখন বললো কি ভাববে?আব্বু,আম্মু যদি কাপল পিক তুলতে পারে আমার দুলাভাইরা তাদের বউদের নিয়ে যদি কাপল পিক তুলতে পারে তাহলে আমরা কেনো পারবো না।

সোনিয়া সেই কথা শুনে ক্লিক ক্লিক করে কুশান আর তোড়ার কয়েকটা ছবি ওঠালো।
আজ ফ্যামিলির সবার মুখে এতো হাসি আর খুশি দেখে কামিনী মনে মনে ভাবতে লাগলো,
এতোদিন এতো গুলো লোকের হাসিখুশি মুখ সে কেড়ে নিয়েছিলো?এতোদিন সে সবার উপর এমন ভাবে আধিপত্য স্থাপন করেছে যে কেউ ভুল করেও বাহিরে বেড়াতে যাওয়ার সাহস প্রকাশ করে নি।কেউ মুখ ফুটে বলতে পারি নি আজ বাসায় কোনো রান্না হবে না চলো আজ বাহিরে খাবো সবাই।আর কুশান এক দিনেই সবার মুখে সেই হারিয়ে যাওয়া আনন্দ ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছে।সত্যি তার ছেলেটা যাদু জানে।

কিন্তু কুশান তো তার নিজের সন্তান নয়।নিমিষেই কামিনীর চোখে জল চলে এলো।সে আড়ালে গিয়ে কাঁদতে লাগলো।আর ভাবতে লাগলো যেদিন সবাই সত্য টা জানতে পারবে সেদিন তো সবাই তাকে আবার ঘৃণা করা আরম্ভ করবে।আর কুশান যখন শুনবে সে তার নিজের আম্মু নয় সেদিন কি হবে তার?কুশান যদি তার থেকে মুখ ফিরে নেয়?আর যদি তাকে আম্মু বলে না ডাকে?রাগে আর ঘৃণায় যদি তার মুখ আর না দেখে কি হবে তখন?কি করবে তখন কামিনী? কামিনী আর ভাবতে পারছে না।হঠাৎ কামিনী নিজের অজান্তেই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো, না, না,না।কুশান শুধু তারই ছেলে।এই বলেই কামিনী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।

এদিকে সবাই যে যার মতো করে আনন্দ করছে।
জারিফ চৌধুরী তিন মেয়ে আর জামাইকে সাথে নিয়ে বোঝাতে লাগলেন।কিন্তু ইরা,মিরা,আর লিরা সাফ জানিয়ে দিলো তারা আর কিছুতেই ফিরবে না ও বাড়িতে।
অন্যদিকে কুশান তোড়াকে নিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় বসে গল্প করতে লাগলো।কুশান তোড়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর বলছে,
তোড়া!কবে আমাদের একটা ছোট্ট বেবি আসবে?কবে আমি বাবা হবো?আমার কেনো জানি আর দেরী সহ্য হচ্ছে না।

তোড়া তা শুনে বললো, কুশান তুমি কিন্তু খুবই বেয়াদব হয়ে গেছো?যখন যা মুখে আসছে সেটাই বলছো।দুই দিনেই কিভাবে বাচ্চা হবে?একটু তো অপেক্ষা করতেই হবে।
কুশান তা শুনে বললো, ইসঃ আমার না সেই মুহুর্তের কথা ভেবে এখনি আনন্দ লাগছে।কেমন হবে আমার মনের অবস্থা?সেদিন মনে হয় আমি আনন্দে একদম মরেই যাবো।যেদিন আমি আবার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে চুমু খাবো।আমার সন্তান আমাকে আব্বু বলে ডাকবে।

তোড়া তা শুনে বললো কি পাগলামি শুরু করলা তুমি বলো তো?চলো এখন যাই।সবাই মনে হয় খুঁজছে আমাদের।
–যেতে ইচ্ছে করছে না।এইরকম যদি আনন্দ সারাজীবন থাকতো।এই বলে কুশান তোড়ার মুখমন্ডল স্পর্শ করতে করতে তার বেসুরো কন্ঠে গাইতে লাগলো,

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৯

সাজিয়েছি ছোট্ট একফালি সুখ
রাজি আছি আজকে বৃষ্টি নামুক
তুমি আমি ভিজবো দুজনে খুব
ভরসা দিলে..
এই ভালো এই খারাপ,
ওও.. প্রেম মানে মিষ্টি পাপ
চলো মানে মানে দিয়ে ফেলি ডুব
তুমি আমি মিলে।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩১