আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৬

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৬
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তোড়া তার দুই হাত দিয়ে কুশানের মাথার চুল টেনে ধরে চিৎকার করে বললো, তুই আমার পিছে পিছে কেন এসেছিস?এসব আজাইরা দরদ দেখাবি না আমাকে খবরদার।তোর বোন আর মা যখন আমাকে উল্টাপাল্টা কথা বলতেছিলো তখন কি করেছিলে?
কুশান তখন বললো তোড়া ব্যাথা পাচ্ছি আমি।চুল ছেড়ে দাও আমার।

–না,দেবো না ছেড়ে।তোর মা আর বোনের উপর হওয়া রাগ সব আমি তোর উপর ঝাড়বো।তুই যে এতো টা বলদ সত্যি আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।এই বলদটার সাথে আমি কোন দুঃখে প্রেম করতে গিয়েছিলাম?এখন তো আমার মরতে ইচ্ছে করতেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কুশান তখন বললো আমি আমার আম্মু আর বোনের মুখে মুখে কোনো তর্ক করতে পারি না।এখন আমি কি করতে পারি?
তোড়া তখন কুশানের চুলগুলো আরো জোরে জোরে টানতে লাগলো।আর বললো,তোকে তর্ক করতে বলেছে কে?তুই কি ন্যায় অন্যায় বুঝিস না?তুই ন্যায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবি।সবাই যে আমাকে অপমান করে করে কথা বলছে সেটা শুনতে কি তোর খারাপ লাগে না?তোর কি কষ্ট হয় না?এটা তোর কিসের ভালোবাসা?সত্যি করে বল দেখি আদৌ কি তুই আমাকে ভালোবাসিস?না আমি মরিচীকার পিছনে পড়ে আছি।

হঠাৎ কামিনী প্রবেশ করলো রুমে।আর তিনি যখন দেখলেন তোড়া কুশানের চুল ধরে টানছে তখন কামিনী চিৎকার করে বললো,এই মেয়ে কি করছো এটা?
তোড়া কামিনী কে আসা দেখে একদম হতভম্ব হয়ে গেলো।সে এই মুহুর্তে কি করতে পারে?এদিকে কুশানের তো ভয়ে কাঁপা-কাঁপি উঠে গেছে।নিশ্চয় তার আম্মু আবার তোড়াকে অপমান করবে।
কিন্তু তোরা কামিনী কে না দেখার ভার করে

ধীরে ধীরে তার মুষ্টি খুললো।তারপর আলতো করে চুলগুলো ধরে বললো,
কি অবস্থা হয়েছে চুলগুলোর?আজকেই সেলুনে যাবে।বুঝেছো?
কামিনী তখন বললো এই মেয়ে চুল ধরতেছো কেনো বাবুর?ও ব্যাথা পাবে।চুল ছেড়ে দিয়ে কথা বলো।
তোড়া তখন তাড়াতাড়ি করে কুশানের চুল ছেড়ে দিয়ে বললো,আম্মু আমি তো ওকে চুলগুলো কাটার জন্য বলছিলাম।দেখো না কেমন বড় বড় হয়েছে চুল গুলো।
কামিনী তখন বললো সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।আমার বাবুর চুল কখন কাঁটতে হবে তা আমি ভালো করেই জানি।

তোড়া তখন বললো, হ্যাঁ সেটা তো ঠিকই আছে।কিন্তু এখন যেহেতু আমি ওর স্ত্রী। সেজন্য তো এখন আমাকেও ওর ব্যাপারে ভাবতে হবে।
কামিনী তখন বললো স্বামীকে নিয়ে কেমন ভাবো তা তো দেখতেই পারছি।বাবু যে এখন পর্যন্ত সকালের নাস্তা খায় নি সে খেয়াল আছে তোমার?ঘরের মধ্যে বসে থাকলে বাবুর কি পেট ভরবে?আসছে বাবুর দরদ দেখাতে।আজাইরে।কথায় আছে না মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশি।

এই বলে কামিনী কুশানকে সাথে করে নিয়ে আবার ডাইনিং টেবিলে আসলো।আর নিজের হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো।
কুশান তখন কামিনীর হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, আম্মু আজ আমি নিজের হাতে খাবো।তোমাকে খাওয়াতে হবে না।
কামিনী তখন তার ভ্রু উল্টিয়ে বললো,কি বলছিস?তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস বাবা?
কুশান তখন রাগ করে বললো হ্যাঁ করেছি।তোমরা তখন তোড়ার সাথে ওরকম বাজে ব্যবহার কেনো করলে?তোড়া ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।

কামিনী তখন বললো কখন বাজে ব্যবহার করলাম?ওকে তো শুধু বললো একটু পরে নাস্তা করতে।বাড়ির বউদের একটু দেরীতেই খেতে হয়।এতে দোষের কি দেখলি বাবা?
কুশান তখন বললো এখন তো ওর নাস্তা করা উচিত তাই না?ডেকে আনো ওকে।আমরা দুইজন একসাথে নাস্তা করবো।
কামিনী কুশানের কথা শুনে দাঁত কটমটিয়ে বললো,বাবু তুমি খেয়ে নাও।আমি বলছি গিয়ে।
এই বলে কামিনী আবার কুশানের রুমে গেলো।

এদিকে তোড়া গলা ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে কাঁদছে।সে ভাবতেই পারছে না কুশান এতো টা অপদার্থ?তার তো প্রতিবাদ করার কোনো ক্ষমতাই নাই।এই ছেলের কি দেখে সে পাগল হয়েছিলো?
হঠাৎ কামিনী প্রবেশ করলো রুমে।আর সে তোড়াকে বললো,এভাবে ঘরের মধ্যে বসে থাকলে কি পেট ভরবে?না চারটা খেতে হবে।যাও তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নাও।নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি দুপুরের জন্য খাবার রেডি করো।
তোড়া এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।সে তখন তার কান্না মুছিয়ে বললো,

আম্মু আমি কিন্তু এ বাড়ির কাজের মেয়ে না।যে আপনার হুকুম মতো আমাকে চলতে হবে।আমার যখন মন চাইবে তখন আমি নাস্তা করবো আর যখন মন চাইবে দুপুরের জন্য রান্না করবো।
কামিনী তখন রেগে গিয়ে বললো কি বললে তুমি?আমাকে তুমি এতো বড় কথা বললে?কামিনী তেড়ে আসতে ধরে থেমে গেলো।আর বললো,থাক এখন কিছু বলবো না।দুপুরে মেয়েরা যখন খেতে এসে খাবার রেডি পাবে না তখন দেখো কি করি?
তোড়া তখন বললো,কি করবেন?মারবেন আমাকে?আমার গায়ে যে হাত তুলবে তার হাত আমি একদম ভেঙ্গে ফেলবো।আর হ্যাঁ আপনার বাড়িতে আমি কাজ করার জন্য আর চারটা ভাত খাওয়ার জন্য আসি নি।ওরকম ডাল ভাত আমার বাড়িতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আপনারা যেমন পায়ের উপর পা তুলে খান আমিও আজ থেকে তেমন পায়ের উপর পা তুলেই খাবো।কারণ আমি এ বাড়ির বউ।আপনাদের চাকরানী না।

কামিনী তখন বললো, ও মোর আল্লাহ। আমরা কি তাহলে ভুল মেয়ের সাথে কুশানের বিয়ে দিলাম?খুবই তো সহজ সরল মনে করেছিলাম একে।কিন্তু এ তো মোটেও সহজ সরল নয়।এই বলে কামিনী রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কামিনী চলে যাওয়ার পর তোড়া আবার গলা ফাটিয়ে কাঁদতে লাগলো।সে বুঝতে পারছে না জেনেবুঝে কি করে এই জাহান্নামে সে পাঁ রাখলো।তার কপালে যে কি লেখা আছে তা উপরওয়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।
হঠাৎ তোড়ার ফোনে কল বেজে উঠলো। তোড়া তখন তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করলো ফোনটা।অপর পাশ থেকে তোড়ার আম্মু বললো,মা কেমন আছিস?

কেমন আছিস শুনেই তোড়ার আরো বেশি কান্না পেলো।সে যতই তার কান্না চেপে রাখতে চাইলো ততই তা আরো জোরে বের হয়ে আসলো।
চামেলি বেগম তখন বললো, মা তোড়া!কথা বলছিস না কেনো?
এরই মধ্যে আবার কুশান এলো খাবার নিয়ে।সে খাবারের প্লেট তোড়ার সামনে নিয়ে এসে বললো,আম্মু যে তোমাকে ডাকতে এলো গেলে না কেনো?

তোড়া কুশানের কথায় জবাব না দিয়ে চামেলি বেগম কে বললো,এই তো ভালো আছি আম্মু।তোমরা কেমন আছো?
–আমরা তো ভালোই আছি।কিন্তু তুই ছাড়া বাড়িটা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
তোড়া তখন বললো এখন এভাবে বলছো কেনো?তোমরা তো এটাই চাইতে সবসময়।মাসের মধ্যে ১৫ দিনই পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যেতে।যাতে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়।এখন তো তোমাদের খুশি হওয়ার কথা।
চামেলি বেগম তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,এভাবে বলিস না মা।মেয়েদের কে বাবা মা সব দিতে পারে কিন্তু তাদের ঘরে যে রাখতে পারে না।এটাই যে দুনিয়ার নিয়ম।

তোড়া তখন বললো মন খারাপ করো না আম্মু।এমনিতেই বললাম।আচ্ছা রাখছি এখন।পরে কথা বলবো।
–ঠিক আছে মা।ভালো থাকিস।
কুশান কে দেখে তোড়া বললো, খাবারের প্লেট ঘরের মধ্যে আনছো কেনো?যাও প্লেট রেখে আসো।
কুশান তখন একটু রুটি আর সবজি তোড়ার মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে বললো হা করো। তোমার জন্য এনেছি খাবার টা।
তোড়া তখন চিৎকার করে বললো কুশান! যাবে আমার সামনে থেকে?

–না যাবো না।এই বলে সে জোর করেই তোড়ার মুখে ঢুকে দিলো খাবার।
তোড়া এখন না পারছে খেতে না পারছে ফেলে দিতে।সে খাবার মুখে নিয়ে বললো,আমি খেতে পারি এক শর্তে।
–সবসময় এতো শর্ত জুড়িয়ে দাও কেনো?এই বলে কুশান আরো একবার খাবার তুলে দিলো তোড়ার মুখে।
তোড়া তখন বললো,কুশান!প্লিজ থামাও তোমার এসব ভন্ডামি।আমাকে কিন্তু ভালো লাগছে না কিছু।
কুশান তখন বললো ওকে।বলো তোমার কি শর্ত?

তোড়া তখন বললো,এতোদিন তো অনেক মিথ্যা কথা বলেছো।আজ কিছু সত্য কথা বলবে আমাকে?
–হ্যাঁ বলবো।তার আগে খাবার টা শেষ করো।
তোড়া তখন বললো কেনো ভয় লাগতেছে আম্মুকে?বউ কে খাওয়ানো দেখলে তো তোমার মায়ের প্রেসার আরো হাই হয়ে যাবে।
কুশান তখন বললো কাজের কথা বলো।

— তুমি তো জব করো না।তাহলে করো টা কি?আজ একদম সত্য কথা বলবে।
;কিছুই করি না।আম্মু আমাকে কোনো চাকরিই করতে দেয় না।
তোড়া তখন বললো এই একদিনে যা বুঝলাম,তোমাদের পুরো ফ্যামিলিকে মেইনটেইন করে তোমার আম্মু আর বোনেরা।
–হ্যাঁ।
–কিন্তু তোমার বাবার ব্যবসা তো সবার আগে তোমার সামলানো উচিত।তুমি ঘরে এভাবে মেয়ে মানুষের মতো কেনো বসে থাকো?

কুশান তোড়ার মুখে আরো একবার খাবার তুলে দিলো আর বললো,সবাই ভাবে আমি এখনো ছোটো। আমি এসব ব্যবসা বানিজ্যের কিছুই বুঝবো না।
তোড়া তখন বললো তাহলে এতো ছোটো বাচ্চাকে ওনারা বিয়ে করালো কেনো?সারাবছর মায়ের আঁচলের তলে রাখলেই তো পারতো।

কুশান তখন বললো এটা আমাদের বংশের নিয়ম।আমাদের বংশে ছেলেমেয়েদেরকে খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে দেওয়া হয়।আর আমাদের বংশের আরেকটা নিয়ম তা হলো এই বংশের কেউ বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা করতে পারে না।সেজন্য আমি আমাদের প্রেম ভালোবাসা প্রকাশ করি নি।যার জন্য তুমি আমাকে শুধু শুধু ভুল বুঝছো।

তোড়া তখন চিৎকার করে বললো তাহলে প্রেম কেনো করেছিস?কেনো আমার জীবন টা এভাবে নষ্ট করলি?কেনো আমাকে প্রপোজ করলি?কেনো এতোদিন রিলেশন টা চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলি?প্রেম টা কি তোর কাছে ছেলে খেলা মনে হয়েছে?
কুশান তখন তোড়ার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, তোড়া প্লিজ বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।প্রথম ফোনে তোমার কথাবার্তা শুনে আমি একদম ফিদা হয়ে গিয়েছিলাম।তারপর প্রথম যেদিন দেখলাম সেদিন থেকে দিন রাত শুধু তোমার চেহারায় চোখের সামনে ভাসতো আমার।তখন একবারের জন্যও মনে হয় নি আমার মনে এসব প্রেম ভালোবাসার চিন্তা আনা যাবে না।আমার জন্য এসব প্রেম ভালোবাসা নয়।প্লিজ বিশ্বাস করো আমার ভালোবাসা কিন্তু মিথ্যে ছিলো না।

তোড়া তখন বললো এই চুপ কর।মেয়েদের মতো এতো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবি না।তুই আমারে যে ঠকায়ছিস তার জন্য জীবনেও মাফ পাবি না।তুই তো একটিবার সত্য কথাগুলো বলতে পারতি আমাকে।

কুশান তখন বললো সত্য কথা বললে তুমি ভালোবাসতে আমাকে?তুমি যদি শুনতে আমি একজন বেকার ছেলে তখন কি কথা বলতে?যদি শুনতে আমাদের পরিবারে এতোগুলো মেম্বার,যেখানে তিন বোন জামাই ই শশুড় বাড়ি থাকে তখন কি রাজি হতে?যখন শুনতে আমি আম্মু আর বোনের মুখের উপর কোনো কথা বলতে পারি না, পুরো সংসার মায়ের কথামতো চলে তখন কি একসেপ্ট করতে আমার ভালোবাসা?আমি তোমাকে হারাতে চাই নি তোড়া।প্লিজ ব্লিভ মি।এজন্য মিথ্যে কথা বলে পটিয়েছি।

তোড়া তখন বললো, তোমার ভালোবাসার এমন সস্তা গল্প আর বিশ্বাস করছি না আমি।তুমি যদি এতই ভালোবাসতে আমাকে তাহলে এভাবে অন্য মেয়েকে দেখতে যেতে না।শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আমাকে বেছে নিতে।
কুশান তখন বললো দেখতেই তো পারছো আমার হাত পা বাঁধা।আম্মু আর বোনের মুখে মুখে তর্ক করতে পারি না।শুধু আমি না।আমাদের পরিবারের সবাই আম্মু আর আপুদের কথার উপর কথা বলতেই পারে না।
তোড়া তখন বললো, কি হবে বললে?আমি তো বলছি।কি করেছে তারা আমার সাথে?আজ থেকে তুই ও বলবি।যদি না বলিস তাহলে কিন্তু আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো।

কুশান এবার আর কোনো জবাব দিলো না।
তোড়া তখন বললো, আর একটা সত্য কথা বলবে?
কুশান তখন বললো আর আমি একটা মিথ্যা কথাও বলবো না।তোমার যা মন চায় জিজ্ঞেস করতে পারো তুমি।
–তুমি কি সত্যি অনার্স পাশ করেছো?না সেটা নিয়েও মিথ্যা কথা বলেছো?
কুশান তখন বললো আসলে আমি তোমার সাথে প্রেম করার সময় যা যা কথা বলেছি সবই মিথ্যায় বলেছি।
তোড়া অবাক হয়ে বললো মানে?

কুশান তখন বললো, আমি এখনো অনার্স শেষ করি নি।আমি এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে উঠেছি মাত্র।
তোড়ার আবার প্রচন্ড রাগ উঠলো।সে তখন দুই হাত দিয়ে আবার কুশানের চুলগুলো টেনে ধরে বললো,তুই পড়ালেখা নিয়েও মিথ্যা বলেছিস?ছিঃ ছিঃ ছিঃ।তুই তো এক নাম্বারের চিটার,বাটপার আর ফালতু একটা ছেলে।
হঠাৎ কামিনী আবার আসলো রুমে।কামিনী কে দেখামাত্র কুশান ভয়ে নিজের মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলো।তোড়া তখন বললো কি হলো দাও আমাকে?এই বলে সে নিজেই কুশানের হাত টেনে নিলো তার মুখে।
কামিনী তা দেখে বললো, বাবু তুই তো নিজের খাবারই কখনো হাত দিয়ে খাস নি।সেখানে এই মেয়েটাকে তুলে খাওয়াচ্ছিস?

কুশান তখন বললো আসলে আম্মু,আসলে হয়েছে কি,না মানে আমি,
কুশান এইভাবে আবোলতাবোল বকতে লাগলো।
তোড়া তখন বললো,স্বামী বউকে তুলে খাওয়াচ্ছে এতে প্রবলেম কি শাশুমা?আর হ্যাঁ এখন আপনার বাবু আর আগের সেই বাবু নেই,যে যখন তখন এভাবে পারমিশন ব্যাতিত তার রুমে ঢুকবেন।নেক্সট টাইম এভাবে বিনা পারমিশনে আমাদের রুমে ঢুকবেন না প্লিজ।এতটুকু ভদ্রতা আপনার জানা উচিত ছিলো।যেহেতু এটা সদ্য বিবাহিত একটা কাপলের বেডরুম।আমরা কখন কোন মুডে থাকি সেটা নিজেরাও জানি না।

কামিনী তোড়ার কথা শোনামাত্র একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে তিনি আর দুনিয়ায় নাই।কামিনী হঠাৎ মাথা ঘুড়ে পড়ে গেলো মাটিতে।
কুশান তখন চিৎকার করে বললো,আম্মু,আম্মু।কি হয়েছে তোমার?ওঠো আম্মু।কিন্তু কামিনী চোখ ও খুললো না,কথাও বললো না।
কুশান তখন চিৎকার করে বললো,আব্বু,দুলাভাই তোমরা কোথায়?তাড়াতাড়ি এসো আমার রুমে।
তোড়ার বিন্দুমাত্র মায়া হলো না,বা তার একটুও খারাপ লাগছে না।সে বরং খুশিই হয়েছে।
কুশান তখন তোড়াকে বললো,আম্মুকে এভাবে অপমান করে কথা কেনো বললে?
এটা কিন্তু তুমি ঠিক করলে না তোড়া।

তোড়া তখন বললো, বাহঃ ভালোই তো প্রতিবাদ করতে জানো।নিজের মায়ের অপমান সহ্য করতে পারো না।আর আমাকে নিয়ে যখন সবাই অপমান করে,হাসাহাসি করে তখন তোমার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা থাকে না।তখন তুমি দূর্বল হয়ে যাও।
এদিকে কুশানের চিৎকার শুনে সবাই তার ঘরে আসলো।
তখন কুশান তোড়ার সাথে আর তর্ক না করে সে তার আম্মুকে কোলে করে বিছানায় ওঠালো।তারপর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতে লাগলো।

কামিনী সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।আর তাকাতেই কুশানকে জড়িয়ে ধরে বললো, বাবা এই দিন দেখার জন্য কি আমি বেঁচে আছি?তোর বউ আমাকে এইভাবে অপমান করে কথা বললো আর তুই কিছুই বললি না?ভাবতে পারছিস সে আমাকে তোর ঘরে আসতে নিষেধ করছে?
জারিফ চৌধুরী তখন কামিনী কে বললো, কি হয়েছে কামিনী তোমার?আমাদের ও বলো।
কামিনী তখন বললো কিছু হয় নি।তবে এখন হবে।আমি এই মেয়ের সাথে আর কুশানকে থাকতে দেবো না।তাড়াতাড়ি তোমরা ডিভোর্সের ব্যবস্থা করো।এই মেয়ে মোটেও সহজ সরল নয়।এই মেয়ে একটা কালনাগিনী। আমার ছেলের জীবন টা এ শেষ করে দিবে।

কামিনীর কথা শুনে সবাই যেনো আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।মাত্র এক দিন হলো বিয়ে হয়েছে আর তাতেই কামিনী ডিভোর্সের কথা বলছে।কি করেছে তোড়া?
কামিনী তখন বললো ওভাবে সবাই হা করে আছো
কেনো?আমার মেয়েদের তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ডাকো তোমরা।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৫

নিশ্চয় এই মেয়ে আমাদের শত্রুপক্ষের লোক।ছদ্মবেশে আমাদের সংসার টা তছনছ করার জন্য এসেছে।আমার কুশানকে বশ করার আগেই আমাদের কে একে এ বাড়ি থেকে তাড়াতে হবে।
এই বলে কামিনী নিজেই কল দিলো মেয়েদের।আর কাঁদতে কাঁদতে বললো,কই আমার ইরা,মিরা,লিরা?মা তোরা তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।মস্ত বড় একটা ভুল হয়ে গেছে আমাদের।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৭