আমি মায়াবতী পর্ব ২০

আমি মায়াবতী পর্ব ২০
তাহমিনা মিনা

“তুমি কি এই ছুটির দিনে এখন বান্ধবীর বাসায় যাবে নাকি আপু?” রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো সাব্বির।
“আজকেই চলে আসবো তো সাব্বির। সন্ধ্যার দিকে চলে আসবো। দেরি করবো না। প্রমিস।”
“তোমার বান্ধবী ভালো নয়।”

“কেন? ও তো অনেক ভালো। দেখো না, কি সুন্দর করে কথা বলে। ও তো তোমাকে চকলেট ও দিয়েছে।”
“নাহ ও ভালো না। ও তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ও ভালো না। আর ও অনেক দুষ্টু কথা বলে।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,”ও তোমাকে কি দুষ্টু কথা বললো?”
“ও আমাকে বলেছে আমাকে নাকি বিয়ে করবে। আমি তো ছোট। আমি কি এখনই বিয়ে করবো নাকি? ”
“অহ। এইজন্য ওকে ভালো না বলছো? ও তো একটু মজা করেছে শুধু। ও সবার সাথেই মজা করে। ”
“আমি ওকে বিয়ে করবো না।” মুখ ভোঁতা করে বললো সাব্বির।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তোকে বিয়ে করতে কে বসে আছে? কাকে বিয়ে করবি না?” ঘরে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলো সাবিহা।”
“আমার ভাইকে কে বিয়ে করবে না বল? কত মেয়ের লাইন পড়ে যাবে জানিস?”
“তা কে ওকে বিয়ে করবে শুনি?” কবিতা ঘরে ঢুকেই বললো,”কে আবার? আমি করবো। আমাকে কি ভাবী হিসেবে পছন্দ হয় না তোমার?”

“আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। তুমি দুষ্টু কথা বলো। আবার মায়া আপুকে নিয়ে যাচ্ছো।”
“আমাকে বিয়ে না করলে কিন্তু তোমার মায়া আপুকেই আমি আমার ভাইয়ের বউ বানিয়ে ফেলবো। বুঝলে?”
সাব্বির আড়চোখে কবিতার দিকে তাকালে কবিতা তার দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিল। সাব্বির লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল।

কবিতাসহ সবাই সবাই হোহো করে হাসতে লাগলো। কবিতা সাবিহাকে উদ্দেশ্য করে বললো,”তোমার বোনের বিরুদ্ধে কিন্তু আমার একটা অভিযোগ আছে। এর বিচার চাই আমি।”
“এই আমি আবার কি করেছি?”
“আপু কি করেছে কবিতা আপু?”

“আমার ভাই যে তার এতো বড় একটা উপকার করলো, তার কোনো মুল্যই দিল না। একটা ধন্যবাদ তো দূরে থাক, দেখাও করলো না। আমার ভাই ক্লাসে আসলে উল্টো মুখ নিচু করে থাকতো। এইটা কি মেনে নেওয়া যায়?”
“এইটা তুমি ঠিক করোনি আপু। আজকেই উনাকে ধন্যবাদ দিয়ে আসবে। বুঝেছো?”
“আচ্ছা। দিব।”

“এই তোর কি হয়েছে? রেডি হতে এতো সময় লাগে?”
“হয়ে গেছে। আম্মাকে বলে বের হবো শুধু। ”
“আপু, কবিতা আপুর ভাইয়াকে ধন্যবাদ বলো কিন্তু।মনে রেখো কিন্তু। ভুলে যেওনা আবার যেন।”
“যথাআজ্ঞা ম্যাডাম।”

কবিতার রুমে বসে ফিজিক্স এর ম্যাথগুলো করছিলাম। বিরক্ত লাগছিল কিছুটা। বন্ধুর বাসায় এসে নাকি এখন স্টাডি করতে হচ্ছে। হঠাৎই হুট করে রুমে ঢুকে পড়ে কাব্য স্যার। কবিতাকে হয়তো কিছু জিজ্ঞেস করতো, কিন্তু আমাকে দেখে থম মেরে গেলো। উনি পাঞ্জাবি পাজামা পড়ে আছেন। কিন্তু এমনিতে আমি উনাকে প্যান্ট শার্ট পড়া অবস্থায়ই দেখেছি৷ এখন তাই দেখতে একটু অন্যরকম লাগছে। উনি হয়তো কিছু বলতো, কিন্তু তার আগেই কবিতা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,”ভাইয়া,আমরা গ্রুপস্টাডি করছি। তুমি যাও এখন এখান থেকে। আমাদের বিরক্ত করো না। আর কারো রুমে ঢুকার আগে যে নক করে ঢুকতে হয়, সেটা তুমি জানো না?”

ওর কথা শুনে আমরা দুজনেই হতবাক হয়ে গেলাম। আমার মনে পড়লো ওর ইচ্ছের কথা। আমার হো হো করে হাসতে ইচ্ছে করলো। কোনোমতে ঠোঁট চিপে হাসি আটকালাম। স্যার এর মুখ থেকে যেন কথা সরে গেছে। উনাকে দেখেও আমার হাসি পাচ্ছে। উনি কোনোমতে নিজেকে সামলে আমতাআমতা করে বললো, “আমি আসলে আমার ফোনের চার্জারটা নিতে এসেছিলাম। তোর কাছেই আছে মনে হয়৷ তুই তো মাঝেমধ্যেই আমার চার্জার নিয়ে আসিস।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ আছে আমার কাছেই। ঐখানেই দাঁড়াও। আমি দিচ্ছি।”
কবিতা কাব্য স্যার এর হাতে চার্জার দিয়ে বললো, “নেক্সট টাইম কারো রুমে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে। বুঝলে?”
কাব্য স্যার এর মুখ মুহুর্তেই কেমন হয়ে গেলো। একবার আমার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
কাব্য স্যার রুম থেকে বের হতেই কবিতা হো হো করে হেঁসে উঠলো। আমিও আর নিজের হাসিকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। দুইজন মিলে বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে লাগলাম।

“আহ!আমার কতদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো আজ। ভাবতেই শান্তি লাগছে খুব। আজ তোর জন্য আমার ইচ্ছে পূরণ হলো মায়া। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোকে। এই খুশিতে চল তোকে কাল ফুসকা ট্রিট দিব। ৫০ টাকার ফুসকা চাইস না বইন। ১০ টাকার রাস্তার ছোট ফুসকা খাওয়াবো। বাজেট কম। বুঝিসই তো।”
“উনি রাগ করবেন না তোর উপর?”
“উনি কে?”
“তোর ভাইয়া। কাব্য স্যার। ”

“আমার ভাইয়া তোর উনি হলো কবে থেকে? উনি তো মানুষ নিজের স্বামীকে বলে।” চোখ ছোট ছোট করে জবাব দিল কবিতা।
“আরেহ!যা বলি তার উল্টো বুঝিস সবসময়। ”
“করবে না রাগ। আমাদের মধ্যে সবসময়ই এইরকম ঝগড়া লেগেই থাকে। ব্যাপার না। চল, আম্মুকে গিয়ে এই মজার কাহিনি বলে আসি।”
“আরেহ! শোন দাঁড়া। আমাকে নিয়ে তো যা।”

কবিতার মা রান্না করছিল। কবিতা গিয়েই হড়হড় করে সবকিছু বলে দিল। কবিতার মা কবিতার মাথায় চাটি মেরে বললো,”করলি তো ঠিক আছে। কিন্তু মায়ার সামনেই কেন?বেচারা ছেলেটা আমার লজ্জা পাবে না? তোর কি বুদ্ধিসুদ্ধি হবে না কখনো?”

“আমার সাথে এযাবৎকাল ধরে হয়ে আসা অন্যায়ের প্রতিবাদ এইটা। কেবল তো শুরু। ”
কবিতার মা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,”তুমি কিছু মনে করোনা মা। ওরা দুই ভাই-বোন এমনই করে সবসময়। টম & জেরির মতো বাসায় ঝগড়া করতেই থাকে। ”
“স্যার তো অনেক শান্তশিষ্ট। কবিতাই এইরকম করে?”
“আরেহ না। তোমার স্যার ও কবিতার মতোই। কেউ কাউকে এক চুল ও ছাড় দেয় না।”
কবিতা মুখ বেঁকিয়ে বলে,”তোমার স্যার হচ্ছে একটা মিচকে শয়তান। বুঝলে মায়া?”

কবিতার ছাদের বাগানের গাছগুলোতে পানি দিতে দিতে বললাম,”তোমার ভাইকে দেখে তো আমার মোটেও মিচকে শয়তান মনে হলো না কবিতা৷ তুমি তো খেতে বসেও কত কথা বললে কিন্তু সে তো কিছু বললো না।”
“তুই আছিস তো। এইজন্য কিছু বলেনি। তোকে বাসায় দিয়ে আসার পর আমাকে ঝাড়বে। বুঝলি? কিন্তু ততোক্ষণে বাবা চলে আসবে। আমাকে আর কিছুই করতে পারবে না। বাই দ্যা ওয়ে তোর মাথা থেকে দেখছি আমার ভাইয়ের চিন্তা কিছুতেই বের করতে পারছিনা। কাহিনি কি মামু? দিলের মধ্যে কি কিছু লাফালাফি করছে নাকি?”

“ধ্যাৎ, কি যে বলিস তুই। আমি তো উনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু উনার ঘরে কিভাবে যাব? তুই তো ম্যালা কাহিনি করলি। এখন কি উনার সামনে যেতে পারবি? তোকে ক্যালাবে না ধরে?”
“শোন মায়া, তোর উনি হচ্ছে আমার ভাইয়া। বুঝলি? আমি আমার ভাইকে কিভাবে এইখানে আনবো, সেটা আমার উপর ছেড়ে দে। তুই শুধু আমার গাছগুলোর যত্ন কর। একদম নিজের গাছের মতো। ওকে? আমি যাচ্ছি ভাইয়াকে আনতে।”

আমি কিছু বলার আগেই ও ছুটে নেমে গেলো। ওদের বাড়িটা আমার বেশ লাগলো। ডুপ্লেক্স বাড়ি। সামনে কিছুটা জায়গা আছে, সেখানে গাছপালা আছে। ফুলের বাগান আছে। আবার ছাদেও বাগান আছে। আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল আমার অনেক বড় একটা বাগান হবে৷ কিন্তু জায়গার স্বল্পতার জন্য সেটা আর হয়ে উঠেনি। এইখানে আসার পর সাবিহার রুমে শিফট হওয়ার পর বারান্দায় কিছু গাছ লাগিয়েছি। কিন্তু সেখানে ও সমস্যা। বারান্দা বেশি বড় না হওয়ায় মনের মতো সাজাতে পারিনি।

কবিতা পা টিপে টিপে কাব্যর রুমে গিয়ে উঁকি দিলো। দেখলো কাব্য বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছে। সে গলা খাঁকারি দিয়ে ভেতরে গিয়ে বললো,”ভাইয়া।”
কাব্য কোনো কথা বললো না। কবিতা আবার বললো,”ভাইয়া। একটা কথা বলার ছিল তোকে। তুই কি আমার উপর রেগে আছিস?”
কাব্য মাথা না তুলেই জবাব দিল, “তোর বান্ধবী এখনও যায়নি। তাইনা? গেলে তোকে মজা দেখাবো। আমি মিচকে শয়তান?”

“আমার বান্ধবী তোমাকে ছাদে ডাকছে, ভাইয়া।”
“আমাকে? আমাকে কেন ডাকবে?”
“জানিনা। আমাকে বললো,যা তোর ভাইকে ডেকে নিয়ে আয়।”
কাব্যর বিশ্বাস হলো না। তবুও সে উঠে দাঁড়ালো। কবিতার সামনে এসে বললো, “আচ্ছা, তুইও চল।”
“আমি?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই তুইও যাবি।”
“ও তো কফি খেতে চেয়েছে। আমি ওর জন্য কফি করে আনছি। তুমি যাও। আমি আসছি।”
কাব্য ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

“আমাকে ডেকেছো মায়া?”
কাব্য স্যার এর আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কোনোমতে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আসলে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাইছিলাম। যদিও আমার এই কথাগুলো আগেই বলা উচিত ছিল। ”
“কি কথা মায়া?”

“সেদিন আমাকে বাঁচানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ স্যার। আপনি না থাকলে সেদিন যে আমার কি হয়ে যেতো। আল্লাহই জানে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার আরো আগেই বলা উচিত ছিল কিন্তু আমি অনেক ঝামেলার মধ্যে ছিলাম। তাই বলা হয়ে উঠেনি। সেজন্য আমি ভীষণই লজ্জিত স্যার।”
‘কোনো ব্যাপার না মায়া। এটা আমার কর্তব্য ছিল। তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও আমি এটাই করতাম।”
আমি মাথা ঝাঁকালাম
উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কবিতা কোথায়?”

“ও তো কফি আনতে গেছে।তুমি তো কফি খেতে চেয়েছো এইজন্য। ”
“আমি কফি খেতে চেয়েছি? ওর কাছে?”
“তুমি চাওনি?”
“নাহ। আমি তো কিছুই চাইনি।”.”
“তুমি আমাকে ডেকে আনোনি? বলোনি যা তোর ভাইকে ডেকে নিয়ে আয়?”
“না তো। আমি তো শুধু আপনার সাথে দেখা করতে চাইছিলাম।”

আমি মায়াবতী পর্ব ১৯

আমরা দুজনেই বুঝলাম কবিতা কেন আমাদের একা রেখে গেছে এইখানে। আমার ভীষণ লজ্জা লাগলো। আমি উনাকে বললাম,”আমি নিচে যাচ্ছি। আমাকে বাসায়ও ফিরতে হবে।”
আমি নিচে নামার আগে উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “সারা বাংলাদেশে কি আর কোনো কলেজ খুঁজে পাওনি তুমি? তোমাকে আমারই ডিরেক্ট স্টুডেন্ট হতে হলো?

আমি মায়াবতী পর্ব ২১