আমি মায়াবতী পর্ব ২১

আমি মায়াবতী পর্ব ২১
তাহমিনা মিনা

(মায়ার ভাষ্য পরিবর্তন করে সাবলীলভাবে লিখবো এখন থেকে গল্পটা।)
কবিতার বাসার ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে দাত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে মায়া। কবিতার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। মেয়েটা এখন মাথা ব্যথার অজুহাত দিয়ে তাকে বাড়ি দিতে যেতে চাইছে না।মায়া ভালোভাবেই বুঝতে পারছে কবিতা কাব্য স্যার এর সাথে তাকে একা পাঠাতে চাইছে। মায়া যতোই কবিতাকে তার সাথে যেতে বলছে, কবিতা নিজের না থেকে সরছে না।
” কবিতা, বোঝার চেষ্টা কর। স্যার এর সাথে আমি কিভাবে বাইকে চড়ে যাবো? কেমন একটা লাগবে না? আর রাস্তায় পরিচিত কেউ দেখলে ভুলভাল ভাববে। চল না তুই।”

“বাহ! আমার ভাইয়ের বাইকে চড়ার কি শখ। তোকে কে বলেছে ভাইয়া তোকে বাইকে করে নিয়ে যাবে? গাড়ি আছে না? শোন, এতো কাছাকাছি বসতে হবে না তোকে। তুই চাইলে গাড়ির পিছনেও বসতে পারিস। কিছু মনে করবো না। কিন্তু তুই পিছনে বসলে আমার ভাইয়াকে মনে হবে গাড়ির ড্রাইভার। আমার ভাই কি তোর ড্রাইভার? তবে, ব্যক্তিগত ড্রাইভার বানাতে চাইলে অন্য কথা। আমি মানা করবো না।” বলেই চোখ টিপলো কবিতা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়া অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে বুঝে গেছে তার কথার কোনো মূল্যই দিবে না এখন। অগত্যা কবিতার মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো গাড়ির উদ্দেশ্যে। ও বের হওয়া মাত্রই কবিতা ছুটে এলো ওর পিছুপিছু। মায়া চোখ সরু করে বললো,”তোর না মাথা ব্যথা? এলি কেন এইখানে?”

“আরেহ, তোকে নিয়ে এসেছি গাড়ি করে৷ নিজ দায়িত্বে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে তবেই না ছুটি আমার। ”
“হুমম, বুঝলাম। কিন্তু তোর মতলব তো ভালো না। আমাদের একা ছাড়ছিস কেন?”
“কারণ তোকে আমার ভাইয়ের বউ বানাতে চাই। ”
“এইটা জীবনেও সম্ভব না। ”
“কেন সম্ভব না?”
“উনি আমার শিক্ষক।”
“তোকে কিন্তু আগেই শিক্ষক এর সঙা দিয়েছি। সেই হিসেবে দেখতে গেলে দুনিয়ার কাউকেই বিয়ে করা যাবে না।”
“তবুও।”

“কিসের তবুও?”
মায়া অধৈর্য হয়ে বললো,”তুই তো জানিস আমার সবকিছুই। আমার মায়ের জন্য কি কি হয়েছে। এখন আমি যদি তোর ভাইকে বিয়ে করতে চাই, তাহলে সবাই আমাকেও আমার মায়ের মতোই খারাপ ভাববে। সবাই বলবে শিক্ষক কে বিয়ে করলো।”

কবিতা কিছুটা দমে গেল। মায়া আবার বললো,”তাছাড়া আমি আমার পরিবারের একজন সদস্য এখন। সবাই আমাকে মেনে নিয়েছে৷ এখন আমি যদি এইরকম একটা কাজ করি, তাহলে আমি ওদের সামনে মুখ দেখাতে পারবো না।”
“আর যদি সবকিছু ওদের সম্মতি নিয়ে হয়? তাহলে?”
“ওফফ, কবিতা। এমনভাবে বলছিস যেন আমি আর তোর ভাই দুইজন দুজনকে ছাড়া বাঁচবো না। বাদ দে তো। এমন তো না যে আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি। চল তো। বেশি বকিস না।”

কবিতা মুখ গোমড়া করে মায়ার পিছনে হাটতে থাকে। বাইরে এসে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে। তাদের দেখেই বলে,”তাড়াতাড়ি করো দুজন। আমাকে আবার অন্য জায়গায় যেতে হবে।”
মায়া কবিতাকে বাই বলে গাড়ির পিছনের দরজা খুলতে গেলে কবিতা ধমক দিয়ে বলে,”এই মেয়ে, আমার ভাইকে কি তোর ড্রাইভার মনে হয়?আমার ভাই কেন তোকে ড্রাইভ করে নিয়ে যাবে এইভাবে?সামনে বস।”
কাব্য কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই বস না সামনে। সামনে তো মাত্র দুটো সিটই আছে।”

“আমি তো যাচ্ছি না ভাইয়া। ”
“কেন?তুই কেন যাবি না?”
“আমার মাথা ব্যথা করছে রে ভাইয়া। তুই যা না ওকে দিয়ে আয়।”
“তোর আবার মাথা ব্যথা? ব্যাঙের আবার সর্দি? মাথা আছে নাকি তোর?”

“আমাকে আমার বান্ধবীর সামনে অপমান করবি না বলে দিচ্ছি। মায়া, সামনে গিয়ে বস। আর মিস্টার কাব্য শুনেন একটা কথা বলে দিচ্ছি আপনাকে। আমার বান্ধবীকে সহিসালামতে বাসায় দিয়ে আসবেন। বুঝলেন? কথার যেন কোনো নড়নচড়ন না হয়। আমি যেন কালকে শুনি না যে কোনো কিছু হয়েছে।”
কাব্য একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ছাড়ে। এখানে কথা বলা মানে শুধুশুধু নিজের মাথা নিজে খাওয়া। মায়াকে গাড়িতে উঠতে বলে সেও উঠে বসে।

” তোমার জীবনের লক্ষ্য যেন কি?” গাড়ি চালাতে চালাতে প্রশ্ন করে কাব্য।
“চাইছি তো যাতে আল্লাহ ডাক্তার বানায়।”
“শুধু আল্লাহ বানালে তো হবে না। তোমাকে পরিশ্রমও করতে হবে।”
“সেটাতো অবশ্যই। ”
“তোমাকে দেখে কেন মনে হচ্ছে তুমি আমাকে কিছু বলতে চাইছো?”

মায়া হুট করেই কাব্যর দিকে তাকায়। সে কিভাবে বুঝলো? মায়া ঢোক গিলে বলে,”হ্যাঁ, কিছু বলতে চাই।”
“বলে ফেলো। পরে কিন্তু আবার সময় সুযোগ নাও পেতে পারো।”
“আসলে বিষয়টা কবিতাকে নিয়ে।”
“কবিতাকে নিয়ে?”
“হুমম। ”
“কি করেছে ও আবার?”

মায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমতা-আমতা করে বললো,”আসলে…আসলে ও প্রেমে পড়েছে। কিন্তু সেটা আপনার ভয়ে বলতে পারছে না।”
“আমাকে ও পাত্তা দেয় নাকি? আজকে তো দেখলেই আমাকে কিভাবে নাকানিচোবানি খাওয়ালো তোমার সামনে।”
“আসলে ও যেমনই হোক না কেন, ওর মনটা অনেক ভালো। কিন্তু জীবনের এইরকম একটা সিদ্ধান্ত আসলে ও একা নিতে পারছে না।”

“ওর পছন্দের মানুষটা কি আমার বন্ধু?”
মায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,”আপনি কিভাবে জানলেন?”
কাব্য একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,”মায়া, তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো, আমি ওর ভাই। আমার কি এইটা বোঝার কথা না?”

“অহ। হ্যাঁ, আমিই আসলে বেশি বুঝেছিলাম।”
“কবিতা আমাদের বাড়িতে ৭ বছর বয়সে পার্মানেন্টলি এলেও আমার মা ই কিন্তু ওকে ছোট থেকে দেখাশুনা করেছে। তখন তো অনেক ছোট ছিল। মামী মারা যাওয়ার পর প্রথমে আমাদের বাড়িতেই এনেছিল হাসপাতাল থেকে। আমি ভেবেছিলাম মা হাসপাতাল থেকে বোন কিনে এনেছে। কিন্তু কয়েকমাস পর বুঝেছিলাম ও আমার বোন নয়। যখন নানু ওকে নিয়ে যেতে এসেছিল। আমি খুবই কান্না করেছিলাম সেদিন। জানো তো সেদিন আমি…” কথা অসমাপ্ত রেখেই কাব্য থেমে গেল।
ভেবেছে মায়া কিছুই জানে না হয়তো।

মায়া কাব্যকে বলে,”আমি সবকিছু জানি, স্যার। কবিতা আমায় বলেছে।”
সহসাই কাব্য মায়ার দিকে তাকায়। রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে বলে,”তুমি জানো সবকিছু? ”
“হুমম। জানি।”
“ও তো কাউকেই কখনো বলে না এইসব। তোমাকে কিভাবে বললো?”

মায়া একটু মুচকি হেসে বলে,”আপনি যদি ওর ভাই হয়ে থাকেন, তাহলে আমিও কিন্তু ওর বেস্টফ্রেন্ড হই। কথাটা মাথায় রাখবেন।” বলেই চুপ করে গেলো মায়া। কি বললো সে এইটা? হাজার হোক, সে তো তার শিক্ষক।
কাব্য গাড়ি স্টার্ট দিল। সারারাস্তা আর কেউই তেমন কোনো কথা বললো না। কাব্য মায়াকে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে বললো।

বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলে মায়া গাড়ি থেকে নেমে কাব্যকে ধন্যবাদ দিয়ে বাসায় আসার জন্য অনুরোধ করলো। কিন্তু কাব্য কাজ আছে বলে চলে গেলো।
মায়া খুশিমনে বিল্ডিং এর ভেতরে ঢুকলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর লিফট আসলে লিফটে উঠার পর হঠাৎ তার মনে হলো,কাব্য স্যারকে সে একবারের জন্যও বলেনি এই এলাকায় তার বাসা। কিংবা এই বিল্ডিংয়ে সে থাকে। তবে স্যার কিভাবে জানলো সব?

“আপু, তোমার কাব্য স্যার কিন্তু খুবই সুন্দর। একদম হিরো হিরো।”
মায়া চুলে চিরুনি চালানো থামিয়ে সাবিহাকে বলে,”তুই কিভাবে জানিস?”
“ফেইসবুক থেকে।”
“ওনার একাউন্ট পেলি কই?”
“কবিতা আপুর ফ্রেন্ডলিস্টে। যাই বলো না কেন, তোমার স্যার কিন্তু সেই।”
“এতোই যখন ভালোলেগেছে, তাহলে গিয়ে প্রোপোজ করে দে না।”
“আমার তো তোমার জন্য ভালো লেগেছে।”

“মাথা খাস না তো আমার। প্লিজ। আজকে সারাদিন কবিতা বকবক করেছে। এখন আবার তুই শুরু করিস না।”
“তুমি স্যরি বলেছো? কি কি বলেছো? আর কবিতা আপু বললো তুমি নাকি উনার সাথে এক গাড়িতে এসেছো। কি কি কথা হয়েছে তোমাদের মাঝে? আমাকে বলোনা প্লিজ। ”
“সাবিহা। আম্মাকে গিয়ে বলবো, অল্প বয়সে পেকেছিস তুই? তোকেই বিয়ে দিতে বলি? ”
“নাহ। নাহ আপু প্লিজ। এই আমি এখনই শুয়ে পড়ছি।”

আমি মায়াবতী পর্ব ২০

মায়াও কিছুক্ষণ পর গিয়ে শুয়ে পড়লো সাবিহার পাশে। কিন্তু ঘুম আসছে না তার। কাব্য স্যার কি আসলেই অনেক সুন্দর? অনেক মেয়েরাই বুঝি এইভাবে ক্রাশ খায় উনার প্রতি? উফফ! অসহ্য লাগছে সবকিছু। মায়ার কেন যেন কিছুই আর ভালো লাগছে না। বারবার মনে হতে থাকে, জীবন তুমি এতো বিষাদ কেন?

আমি মায়াবতী পর্ব ২২