মধুমাস পর্ব ৩২

মধুমাস পর্ব ৩২
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

ফিরোজ চলে যাবে,রেডি হয়ে শ্যামার এলোমেলো শাড়িটা গুছাচ্ছে আর বারবার শ্যামার দিকে তাকাচ্ছে।শ্যামা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে ফিরোজকে দেখছে,এইতো কিছুক্ষণ আগেও পাগল মানুষটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো পরিস্থিতিতে পরে দুজন আলাদা হয়েছে।শ্যামার খুব কষ্ট হচ্ছে,ইচ্ছে করছে সারা রাত ফিরোজের বুকে চুপটি করে ঘুমাতে,আদুরে হাতে ফিরোজকে ছুঁয়ে দিতে।
ফিরোজ শাড়ি আর অন্যান কাপড় গুছিয়ে টেবিলের উপরে রাখে।

“এগুলো আগামীকাল রাতে ধুয়ে রুমেই শুকিয়ে নেবে তাহলে কেউ দেখবেনা।”
শ্যামা মাথা নাড়ে।ঠোঁট সামান্য নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।”
ফিরোজ কিছুটা থেমে বললো,
“অসুস্থ লাগলে আমাকে জানাবে।”
“আচ্ছা।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফিরোজ নজর না ফেলে শ্যামার দিকে তাকিয়ে থাকে।এই ঘর থেকে যেতে ইচ্ছে করছেনা,পা গুলো যেনো কোনো দৈব শক্তির সাহায্যে আটকে রাখা হয়েছে।শ্যামার দিকে তাকিয়ে শ্যামার মনোভাব খুব সহযেই বুঝতে সক্ষম হয়।এখনি তার চলে যেতে হবে এটা ভাবতেই বুকে জানা ব্যাথারা জেগে উঠে।মেয়েটা এভাবে তাকাচ্ছে কেনো?এমন দীঘল কালো চোখ নিয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে তাকালে কি সে ঠিক থাকবে? তার কষ্ট হচ্ছে না?ফিরোজ আবারো বিছানায় বসে।

“তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো শ্যামা?আর কি চাই?”
শ্যামার চোখভরে পানি আসে।ঠোঁটের ভাজ মৃদু কেঁপে উঠে,অবুজ বাচ্চার মতো মাথাটা দু’দিকে নাড়িয়ে না করে।
ফিরোজ অপলক তার সুনয়না স্ত্রীর মিষ্টি কোমল মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকে।শ্যামা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়।ফিরোজ তার কাছে বসায়।

“কি সমস্যা?”
শ্যামা চুপ করে বসে থাকে।ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“এমন কান্নাকাটি করছো কেনো?এমন করলে আমার যেতে ইচ্ছে করবে?”
শ্যামা ফিরোজের বুকে মাথা রেখে বললো,
“কান্না করি না। ”
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
“ছাড়তেই ইচ্ছে হচ্ছে না।”
ফিরোজ হেসে বললো,
“আমারো যেতে ইচ্ছে করছে না।”

হাসি একটা ছুঁয়াচে জিনিস,ফিরোজের হাসি দেখে শ্যামার ঠোঁটেও হাসি ছড়িয়ে পরে।বউয়ের মুখে এমন মিষ্টি হাসি দেখে ফিরোজ সন্তুষ্ট হয়।কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।বউকে ছেড়ে যেতে একটুও ইচ্ছে করছে না,নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।শ্যামার দিকে তাকিয়ে হাসে,শ্যামাও হাসে।ফিরোজের দুষ্টুমিমাখা হাসি দেখে শ্যামার উপর হঠাৎ করে একরাশ লজ্জা ভর করে,আদুরে কথা,বেশামাল স্পর্শর কথা মনে হওয়াতে মাথা নিচু করে নেয়।ফিরোজ আস্তে করে বললো,
“আচ্ছা,ভালো থেকো।”

শ্যামা মাথা নাড়ে,লজ্জা নিয়েই ফিরোজের দিকে তাকায়।ফিরোজ বউয়ের কাঁচুমাচু মুখ দেখে হেসে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কিছু বলবে?”
শ্যামা ফিসফিস করে বললো,
“এতো কাছে এসেছি বলে ভালোবাসা কমে যাবে না তো!”
ফিরোজ কিঞ্চিৎ অবাক হয়,মেয়েটা কি ভাবছে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তাকে ভুলে যাবে এমন কিছু?তা না হলে ভালোবাসা কমবে কেনো?সে বললো,

“আমার উপর এই বিশ্বাস?”
শ্যামা আৎকে উঠে।মাথা নেড়ে না ভঙ্গিমা করে বললো,
“বিশ্বাস না করলে কি আর ঘরে আনতাম?”
“দেখো শ্যামা।সোজা কথা বলি,একটা মেয়ে আর একটা ছেলে যখন প্রেম করে তখন তারা না বললেও কিন্তু তাদেরও ইচ্ছে করে একটু দুষ্টুমি করতে,উলটপালট ভাবতে আর সেক্ষেত্রে আমি তোমার হাজবেন্ড।আমি জানি আমি যেমন তোমাকে চাই তুমিও আমাকে চাও,আর এই চাওয়াটা স্বাভাবিক,একে অপরের প্রতি আকর্ষণবোধ করবো এমনটাই কাম্য।আর এই মিলনের ফলে ভালোবাসা কমে না বরং বাড়ে।আমার উপর আস্থা রাখো,রাজার রানীকে সিংহাসনে বসাবই।প্রমিস।”

শ্যামা কিছু বলছে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।ফিরোজ আবার বললো,
“আমার কাজে তুমি কি কষ্ট পেয়েছো?আগে বলতে,আমি এতোটাও খারাপ না।”
শ্যামা ফিরোজের ঠোঁট হাত রেখে কথা থামায়।
“আমি কি বললাম আর আপনি কি বুঝলেন!আমি বলেছি ভালোবাসা কি কমে!আর আপনি একটা ভাষণ দিয়ে দিলেন।”
শ্যামার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরোজ হেসে দেয়,

“আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে।ভালোবাসা কমে না বরং বাড়ে।এই দেখো আজকের এই প্রলয়কারী ভালোবাসার জন্য আমাকে প্রতরাতেই আসতে হবে।”
ফিরোজের কথায় শ্যামা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়।
“মানে?”
ফিরোজ দাঁত কেলিয়ে হাসে।

“কেনো?কোনো সমস্যা?”
“জ্বী, অনেক সমস্যা।চারটা বাজে আরেকটু পরে আজান দিবে।”
“আমাকে তাড়ানোর এতো তাড়া?”
“কেউ দেখলে কি ভাববে?”
“আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো না!আর কখনো পাবে না হুহ।”
শ্যামা হেসে বললো,
“আমি জানি পাবো কি পাবোনা।যান এখন।”
“আচ্ছা।যাচ্ছি।”

শ্যামার ঘুম ভাঙ্গে একটু বেলা করে।তখন ঘড়ির কাটা দশটা ছুইছুই।ঘুম ভেঙ্গে রাতের কথা ভেবে হাসে,ফিরোজ তাকে সত্য এক সুখের সাথে পরিচয় করিয়েছে যা সব নর নারীর কাম্য।সে চোখ বন্ধ করে ফিরোজের হাসিমুখটা দেখার চেষ্টা করে।সারা শরীরে অজানা শিহরণ নেচে যায়।উঠতে গিয়ে বুঝতে পারে শরীরে নতুন এক ব্যাথার সূচনা,সে চোখ বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়ে।

তার মনে হচ্ছে বিছানা থেকে এখনো পাগলাটে পুরুষের গায়ের মিষ্টি সুঘ্রাণ বেরোচ্ছে।দুজনে যা করেছে শ্যামা যানে না কতোটুকু সঠিক কিংবা ভুল কিন্তু সে এটা জানে যে ফিরোজ তার মর্যাদা দেবে,তাকে কষ্ট দেবে না।বিয়ের পর স্বভাবতই ছেলেরা নিজের স্ত্রীর কাছে আসতে চায়,আর সেদিক দিয়ে ফিরোজ তো তার প্রেমিক;পাগলাটে প্রেমিক বিয়ের দুইমাস পেরিয়ে অবশেষে সে এসেছে,ঝড় বয়িয়ে দিয়েছে।
দরজায় ধুমধাম শব্দ হয়,

“শ্যামা! অ শ্যামা!”
শ্যামা ভাবনারা লাইন হারায়।সে উঠে বসে।ঘুম জড়ানো গলায় বললো,
“কি আম্মা?”
“কয়টা বাজে দেখেছিস?উঠে যা এবার।”
“উঠছি।”
“কি ঘুম ঘুমায় কতোবার ডেকে গেলাম।”
“উঠেছি।”

ফাতেমা বেগম চলে গেলে শ্যামা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।গলার কাছে একটা কালসিটে দাগ।হাত দিয়ে ছুঁয়ে লাজুক হাসে।পায়ের আলতা এখনো অক্ষত।শ্যামা ভাবে তার এখন গোছলের প্রয়োজন কিন্তু কিভাবে করবে?
অনেককিছু ভেবে কাপড় নিয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে গোছলখানার দিকে যায়।পথে ফাতেমা বেগম আটকে বললো,
“কই যাচ্ছিস?”

শ্যামা চমকে যায়।যুতসই উত্তর মিলাতে পারে না।
“মাথাটা ব্যাথা করছে ভাবছি গোসল করলে ঠিক হয়ে যাবে।”
ফাতেমা বেগম মেয়ের কপালে হাত রেখে বললো,
“শরীর খারাপ নাকি?”

শ্যামা সরে যায়,তার মনে হচ্ছে ফিরোজ আসার কথা সবাই জেনে যাবে,ফিরোজের গায়ের সুঘ্রাণ সবাই পেয়ে যাবে,ফিরোজের স্পর্শগুলো সবাই দেখে ফেলবে।কথায় আছেনা চোরের মন পুলিশ পুলিশ।সে বললো,
“না শরীর ভালো কিন্তু বেশী ঘুমানোতে মাথা ব্যাথা।”
ফাতেমা বেগম আর কিছু বলার আগে শান্তা এসে বললো,

“মনে রঙ লেগেছে নাকি?পায়ে আলতা পরেছিস।”
শ্যামার মুখে ভ,য়ের ছাপ চেপে আসে।সে বলে,
“কেনো আমি কি খারাপ কাজ করেছি?আলতা পরতে পারি না?”
শান্তা ঠেস দিয়ে বললো,
“বি,চ্ছেদের জ্বালা শেষ?”
ফাতেমা বেগম বললো,

“আহ শান্তা কি বলো এগুলো? আলতা পরাতে কি হয়েছে?নিজের মতো থাকুক না।”
শাশুড়ির উত্তর শান্তার মনমতো হয় না।সে চলে যায়।
সবাই চলে গেলে শ্যামা গোসলে যায়।দুরুদুরু বুকে গোসল করে বের হয়।উঠোনে কাপড় মেলার সময় তার মনে হচ্ছিলো সে যেনো পূর্ণ নারী,আত্মতৃপ্তিতে ঠোঁট থেকে হাসি সরছিলোই না।
ফিরোজ একমনে কাজ করে যাচ্ছে।আজকে তার মন ভিষণ ভালো।মেয়েটা নিশ্চয়ই যাদু জানে।তখনি ফোন বাজে।মোবাইলের দিকে তাকিয়ে অতী কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটা দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে।

“হ্যালো, মধুমাসের মধুরাজা বলছি।আপনি কে?”
শ্যামা লাজুক হাসে।
“আমি মধুরাজার মধুরানী।”
“সব ঠিকঠাক?”
“হুম।”
“এই সময় ফোন?”
শ্যামা চুপ করে থাকে। ফিরোজ বললো,
“আমায় মিস করছো?”
“হুম।”

“তুমি কি চাচ্ছো আজকেও আসি?”
শ্যামা চাচ্ছে কিন্তু মুখে বলবে কি করে?সে আবারো নিশ্চুপ হয়ে যায়।ফিরোজ বললো,
“আর যাওয়া হবেনা।”
শ্যামা চমকে যায়।
“কেনো?”
“ভালোবাসা কমে গিয়েছে।”
“আপনি খুব খারাপ।”
“জানি।”
শ্যামা আস্তে করে বললো,

“আসলেই ভালোবাসা কমে গেলো?”
ফিরোজ খিলখিল করে হাসে।
“কমেনি বরং বেড়েছে তাই তোমার ভালোর জন্যই। ”
ফাতেমা বেগম রুমে ঢুকে বললো,

মধুমাস পর্ব ৩১

“রেডি হ”
কিন্তু শ্যামার হাতে ফোন দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো।মেয়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।মেয়ে কি তবে এখনো হাত ছাড়েনি?

মধুমাস পর্ব ৩৩