আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৮

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৮
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

হাবিজাবি অনেক চিন্তা মেঘের মাথায় ঘুরছে।হঠাৎ মনে হলো,
“আচ্ছা আমার নাম তো মাহদিবা, দিবা নাম তো D দিয়ে শুরু। তাহলে কি আমি? কিন্তু এই জীবনে আবির ভাইয়ের সাথে আমার কখনো সুসম্পর্ক ছিল বলে তো আমার মনে হয় না৷ তাহলে বোধহয় আমি না, অন্য কেউ। ”

সবকিছু ভালোই থাকে কিন্তু জান্নাত আপু বা আবির ভাইয়ের জীবনে অন্য কেউ আছে এটা ভাবলেই যেনো মা*থা গ*রম হয়ে যায় মেঘের। তারসাথে ঐ ছেলের ঘটানো কা*ন্ড তো মাথায় আছেই। মেঘ চেয়ারে বসে কফি টা কোনোরকমে খেলো। মাথা ব্য*থার জন্য কিছুই ভালো লাগছে না। বেশি কা*ন্না করছে যার ফলে মাথা ব্যথাটাও অনেক বেশি হচ্ছে । কফি টা শেষ করে মেঘ টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। ঘন্টাখানেক পর আবির এসে ডাকছে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মেঘ!”
মেঘ দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে আবার চেয়ারে বসে পরলো, মাথা ব্য*থার জন্য বসে থাকতে পারছে না। পুনরায় টেবিলে মাথা রেখেছে। আবির রুমে ঢুকে কপাল কুঁচকে তাকালো, টেবিলের উপর সব খাবার ই পরে আছে। শুধু কফি টায় খেয়েছে। মেঘের কাছে গিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো,

“মাথা ব্য*থা করছে?”
মেঘ ওভাবেই উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ!”
আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে ভারি কন্ঠে শুধালো,
“খাস নি কেন কিছু?”
মেঘ মুখ তুলে তাকালো, তারপর মন খারাপ করে উত্তর দিল,

“খেতে ইচ্ছে করছে না। ”
মেঘ পুনরায় প্রশ্ন করল,
“আমরা বাসায় যাব না?”
আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“এইযে খাবার দিয়ে গেলাম কিছুই খাস নি। বাসায় গিয়েও তো খাবি না। তাই তোকে খাইয়ে তারপর দিয়ে আসবো। ”

আবির পিএস কে ডেকে এক প্যাকেট কাচ্চি আর ঔষধ আনতে বলছে।
আবির ফোন বের করে মামনিকে কল দিলো। হালিমা খান কল রিসিভ করতেই আবির সালাম দিলো।
হালিমা খান সালামের উত্তর দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে শুধালেন,
“কিরে এসময় কল দিলি যে। কোন দরকার?”
আবির ঠান্ডা কন্ঠে বলল,

“মেঘ আমার অফিসে আছে। এটা জানানোর জন্য তোমাকে কল দিয়েছি। গাড়ি জ্যামে আটকে ছিলো তাই আমি গিয়ে নিয়ে আসছি। আমার একটু কাজ আছে। শেষ করে ওকে নিয়ে বাসায় ফিরবো। আর আংকেল কে বলেছি গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যেতে। ”
একসাথে কথাগুলো বলে তারপর থামলো।
হালিমা খান হাসিমুখে উত্তর দিলেন,

“আচ্ছা ঠিক আছে। মেঘ জ্বা*লালে মা*থা গর*ম করিস না বাবা। কাজ শেষ করে চলে আসিস । ”
আবির মৃদু হেসে বলল,
“সমস্যা নাই। তুমি চিন্তা করো না। ”
কল কাটতেই মেঘ বলল,
“আপনি আম্মুকে বললেন না কেনো?”
আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,
“সব কথা সবসময় সবাইকে বলতে হয় না। ”

মেঘ কিছুই বলছে না। চুপচাপ বসে আছে। এরমধ্যে তানভির মেঘের নাম্বারে কল দিয়েছে,মেঘ রিসিভ করার আগেই আবির মেঘের ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে তানভিরের সাথে কথা বলছে। রুমে এসে মেঘের ফোন টেবিলের উপর রেখে পাশের চেয়ারে বসে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“কি হয়েছিলো তোর সাথে ? সম্পূর্ণ ঘটনা বল!”
মেঘ ঢুক গিলে ধীরে ধীরে বলা শুরু করলো,

“কিছুদিন যাবৎ কয়েকটা ছেলে কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, সি*গারে*ট খাই আরও কি কি খায় আর মেয়েদেরকে উ*ল্টা*পা*ল্টা কথা বলে। অনেক স্টুডেন্ট একসাথে বের হয় তাই কোচিং এর সামনে দাঁড়ানো যায় না। এজন্য আমি আর বন্যা প্রতিদিন বের হয়ে একটু সাইডে দাঁড়ায়। আমাদের গাড়ি আসলে আমি চলে যায়। বন্যাও চলে যায়। কিন্তু বন্যা জ্বর-সর্দি এজন্য গতদিন আসে নি, আজও আসতে পারে নি। কোচিং থেকে বের হয়ে আমি অন্যান্য দিনের মতোই সাইডে দাঁড়িয়ে ড্রাইভার আংকেলকে কল দিচ্ছিলাম।

আংকেল বললো জ্যামে আছে, একটু দেরি হবে আমি যেনো কোচিং এর ভেতরে বসি। আমি আবার যখন ঘুরে কোচিং এ যেতে নিবো তখনই কয়েকটা ছেলে পথ আটকে দাঁড়ায়ছে। আমি সাইড দিতে বলছি কিন্তু মা*তা*লের মতো কি যেনো বলছিলো, আমি ভ*য়ে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করেছি৷ ঐখান থেকে একটা ছেলে আমার পিছু নিয়েছে। আমি দ্রুত হাঁটছিলাম, আর ফোনে ভাইয়ার নাম্বারে কল দিতেছিলাম। ঐ ছেলে বা*জে বা*জে কথা বলতে বলতে আমার কাছে চলে আসছে।

তারপর আমি দৌড় শুরু করি ঐ ছেলেও দৌড়ে এসে আমার হাত চেপে ধরে। আশেপাশে কোনো মানুষ নেই, আমি হাত ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছিলাম না। চিৎকার করছি কিন্তু কেউ নেই, ঐ ছেলে আমায় ধরতে নিলে দূর থেকে একটা লোক দৌড়ে আসে। ঐ লোককে আসতে দেখে ছেলেটা দৌ*ড় শুরু করে, অনেকটা যাওয়ার পর কয়েকজন মিলে ছেলেটাকে ধরে। আমি তখন আবারও ভাইয়াকে কল দিছি, ভাইয়া রিসিভ করে নি তারপর বাধ্য হয়ে আপনাকে কল দিছি। ঐ ছেলেকে আটকিয়ে ২-৩ জন এসে আমাকেও নিয়ে গেছে সেখানে, অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে । পরে কেউ একজন পুলিশ কল দিছে। ”

পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো আবির, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার চোখ যেনো কিছুতেই শান্ত হতে চাইছে না। আবিরের চোখ রাগে জ্বলছে।আবির নিজের ফোন বের করে কি একটা টেক্সট কাকে পাঠিয়ে ফোন রেখে দু’হাত টেবিলের উপর রেখে তারউপর মাথা রাখলো। তার এই রু*দ্রমূর্তি ধার*ণকৃত রূপ কোনো ভাবেই যেনো মেঘ না দেখে তাই নিজেকে আ*ড়াল করার চেষ্টা করছে।।

মেঘ নির্বোধের ন্যায় আবির ভাইয়ের চুলের দিকে চেয়ে আছে। সামনের দিকের লম্বা চুলগুলো টেবিলে পরে আছে। মেঘ মৃদু হেসে নিজের ডানহাত এগিয়ে দিলো আবির ভাইয়ের চুলের দিকে। টেবিলে পরে থাকা চুলগুলোকে আলতোভাবে ছুঁয়ে দিলো। ধ*ম*কের ভ*য়ে হাত সরিয়ে নিলো সঙ্গে সঙ্গে, আবিরের নিরবতা দেখে আবারও ছুঁয়ে দিলো আবিরের চুলে।। মেঘের এমন কা*ন্ডে আবিরের লুকানো রা*গা*ন্বিত মুখমন্ডলে অকস্মাৎ হাসি ফুটে উঠেছে। ক্ষণিকের ব্যবধানে আবিরের রা*গী অভিব্যক্তি বদলে গেছে।
মেঘ কিছুক্ষণ আবিরের চুল নিয়ে দু*ষ্টামি করে, চুল ছেড়ে স্বাভাবিক হয়ে বসলো, তারপর শীতল কন্ঠে ডাকলো,

“আবির ভাই…!”
সহসা সেই চিরচেনা সুমধুর কন্ঠে উত্তর আসলো,
“হুমমমমমম।”
মেঘ কয়েক সেকেন্ড এই ডাক শুনে মুগ্ধ হয়ে রইলো,তারপর ঢুক গিলে ভ*য়ে ভ*য়ে প্রশ্ন করলো,
“দেয়ালে যে D লেখা। D দিয়ে কার নাম?”
আবির মাথা তুলে, ভ্রু কুঁচকে মেঘের দিকে চেয়ে নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,
“হবে কোনো এক ঢং*গী। ”
আবির কথা ঘুরানোর জন্য শক্ত কন্ঠে বলা শুরু করলো,

” আজকের পর থেকে তোর কোনো ধরনের সমস্যা হলে বা যদি মনে হয় সমস্যা হতে পারে সঙ্গে সঙ্গে আমায় কল দিবি। তানভির ব্যস্ত থাকে, চাইলেও সবকিছু ম্যানেজ করতে পারে না তাই তানভিরকে কল দেয়ার আগে আমায় কল দিবি। আর কোচিং-এ আপাতত তোর যেতে হবে না। কোচিং এ গেলে কেউ কিছু বলবে বা খারাপ আচরণ করবে তারজন্য নয়, তুই চাইলে ঐখানের সবকয়টা ছেলে এখনই তোর পায়ে ধরে মাফ চাইবে, আর কোনোদিন কোচিং এর আশেপাশেও আসবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তুই তো এই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারবি না, তুই কোচিং এ যেতে আসতে ভ*য়, আমি চাই না আজেবাজে প্রেশার দিয়ে নিজের মাথাটা হ্যাং করে রাখিস। তার থেকে কোচিং এর রুটিন অনুসারে পড়বি আমি প্রশ্ন নিয়ে আসবো। জান্নাত তোর পরীক্ষা নিবে। দরকার হলে জান্নাত ৩ ঘন্টা সময় নিয়ে পড়াবে তোকে। ”

মেঘ আস্তে করে বলল,
“বেশি রাত হলে জান্নাত আপু কিভাবে যাবে?”
আবির কপাল কুঁচকে তাকালো, গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“জান্নাতের চিন্তা তোর করতে হবে না। আগে নিজের চিন্তা কর। ”

এরমধ্যে পিএস খাবার আর ঔষধ নিয়ে আসছে। মেঘকে খেতে দিয়ে আবির অফিসে বাকি কাজগুলো দ্রুত শেষ করছে, রাকিব আর রাসেলের সাথেও কথা বলে আসছে। পিএস ছেলেটা এক ফাঁকে আবিরের কাছে মাফ ও চেয়েছে।আবির সারাদিন যাবৎ ই রা*গে ফুঁ*সতে। অফিসের সবার সাথেই হুট*হাট রা*গ দেখাচ্ছে। নিজের রা*গ ক*ন্ট্রোল করতে পারছে না। কয়েকবার চোখে -মুখে পানিও দিয়েছে তাতেও কাজ হচ্ছে না।
মেঘ খাচ্ছে আর আর বিড়বিড় করে বলছে,

” আপনার জান্নাত আপুর প্রতি কেয়ার টা খুব তাড়াতাড়ি সরাতে হবে।কোথাও চান্স পেলেই জান্নাত আপুর কাছে আর পড়বো না। তারপর আপনার কেয়ারও কমে যাবে। ধীরে ধীরে আমি নিজেই আপনার প্রেমিকা হয়ে যাবো।” কথাগুলো বলতে বলতে মেঘের ঠোঁটে সহসা হাসি ফুটে উঠেছে।
কাজ শেষ করে নিজের রুমে এসে মেঘকে হাসতে দেখে,আবিরের সব রা*গ নিমিষেই মিলিয়ে গেছে৷ মনে মনে ভাবছে,

“তোর ঐ হাসিতে কি এমন জাদু আছে? যে হাসি আমার সব রা*গ এক মুহুর্তেই নিঃশেষ করে দিতে সক্ষম। ”
মেঘ তাকাতেই আবির নড়ে উঠলো। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“রেডি হয়ে নে। বাসায় যাব। ”

মেঘকে বাসার সামনে নামিয়ে আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“রুমে গিয়ে ডিরেক্ট ঘুমাবি। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। যদি কিছু বলতে হয়, আমি বাসায় ফিরে বলবো।”
কয়েক ঘন্টা সময় পার হওয়াতে মেঘও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে । ঘন্টাদুয়েক পর চিল্লাচিল্লির শব্দে মেঘের ঘুম ভাঙে, করিডোর থেকে নিচে তাকিয়ে দেখে বাড়ির তিন কর্তা সোফায় বসা, তিন কর্তী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সোফা থেকে কিছুটা দূরে আবির ভাই দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ওনার মতো ভদ্র আর শান্ত ছেলে দ্বিতীয় আর নেই। আবিরের থেকেও কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে তানভির ।
আলী আহমদ খান চিৎকার দিয়ে উঠলেন,

“তোমাকে এতবার সাবধান করার পর আবারও মা*রপি*ট কেনো করেছো?”
বড় আব্বুর রা*গা*ন্বিত স্বরে মেঘের শরীর কেঁপে উঠলো। আবির ভাই তো জানাতে চাই নি তাহলে বড় আব্বু জানলো কিভাবে। এই বাড়িতে আসার পর থেকেই আবির ভাইকে প্রতিনিয়ত নি*ষে*ধ করা হচ্ছে কিন্তু আজ তো মেঘ নিজের চোখে আবির ভাইয়ের ক্রো*ধ দেখেছে, মা*র*পিট দেখেছে। আজ আবির ভাইয়ের কি হবে এটা নিয়ে ভাবনায় পরে গেছে মেঘ। অথচ আবির ভাইয়ের মধ্যে কোনো ভ*য় ডর কিছুই নাই।
মেঘ সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে , এলোমেলো চুল, আর ক্লান্ত মুখশ্রী নিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে কিছুটা নিচে নামলো।

আবিরকে নিরুত্তর থাকতে দেখে আলী আহমদ খান পুনরায় ধম*কে উঠলেন,
“কথা কেনো বলছো না ? গু*ন্ডা*মী করার জন্য তুমি দেশে আসছো?”
আবির ভণিতা ছাড়াই উত্তর দিল,
“এই বাড়ির মেয়ের গায়ে কেউ হাত দিবে, আমি তা সহ্য করতে পারবো না। ”
আলী আহমদ খান পুনরায় বললেন,

” সহ্য করতে না পারা একবিষয় মা*র*পি-ট করা অন্য বিষয়। মা*রপি*ট কেন করলা? লোকে কি বলবে, বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরছে ছেলে, সে এখন রাস্তাঘাটে মা*রপি*ট করে?”
আবির মাথা নিচু করে ভারি কন্ঠে বলল,
” আপসোস আমাকে নিয়ে যতটা মাথা ঘামাচ্ছেন, তার কিছুটা মাথা যদি ঐ ছেলেগুলোর জন্য ঘামাতেন , তাহলে কেনো মে*রে*ছি প্রশ্ন টা আমায় করতেন না।”
মোজাম্মেল খান কঠিন স্বরে বললেন,

“ঐ ছেলেগুলোর জন্য আ*ইন আছে, পু*লি*শ আছে। তোমাকে তো দায়িত্ব দেয়া হয় নি। তুমি ছেলেকে না মেরে মেঘকে নিয়ে চলে আসতে পারতে। ”
আবির বিড়বিড় করে বলল,
“আ*ই*ন আর পু*লি*শ ছিল বলেই তো ঐগুলারে আবা*র পি*টা*তে হয়ছে। ”
ইকবাল খান চিন্তিত স্বরে বললেন,

“দেখ আবির, এসপি আমার বন্ধু ছিল আর তোকে চিনছে বিধায় ঝামেলা করে নি। আর আমাকেও কল দিয়ে জানিয়েছে। এখানে অন্য কেউ থাকলে তো ঝামেলা হইতো। ”
আলী আহমদ খান পুনরায় বলে উঠলেন,
“মানসম্মানের চিন্তা কি এই ছেলের আছে?”
আবির রা*গ ক*ন্ট্রোল করতে না পেরে চিৎকার করে উঠলো,
“আমায় ক্ষমা করবেন। আমি আপনাদের মতো ভদ্রলোকের মুখোশ পরে চলতে পারবো না আর আপনাদের মতো পা*ষা*ণ হৃ*দ*য় নিয়ে বাঁ*চতে পারবো না। কেউ আমার গ*ন্ডিতে ছোঁয়ার চেষ্টা করলে সেই হাত ভেঙ্গে দিতে আমি দ্বিতীয় বার ভাববো না।”

কথা গুলো বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে মেঘকে দেখে দ্বিতীয়বার ধম*কে উঠলো,
“তোকে ঘুমাতে বলছি, বের হইছিস কোন সা*হসে। ”

আবিরের পিছন পিছন মেঘও নিজের রুমে ছুটে গেছে৷ ড্রয়িং রুমে পিনপতন নিরবতা। তানভির নিষ্পলক তাকিয়ে ছিল, আবিরের যাওয়ার পথে, তানভিরের চোখের সামনে ভেসে উঠেছে, কিছুক্ষণ আগে আবিরের ঘটানো তা*ন্ডব । যে কয়টা ছেলে কোচিং এর সামনে ছিলো সবকটাকে ধরে এনে, মেরে আধমরা করেছে। আর যেই ছেলেটা মেঘের হাত ধরেছিলো, ঐ ছেলেকে পু*লিশ শা*সিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। ঐ ছেলেকে এনে, ধা*রা*লো ছু*রি*তে এই ছেলের হাত কা*ট*ছে। গ*লা কা*টা*র জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলো কিন্তু রাকিব, রাসেল আরও কয়েকজন মিলে জোর করে আ*টকিয়েছে।আবিরের রা*গ ক*ন্ট্রোলের একমাত্র পন্থা হলো মেঘ৷ মেঘের কথা বলে অনেক কষ্টে আবিরকে শান্ত করে, র*ক্তে রঞ্জিত জামা পাল্টিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসছে তানভির। আর রাকিব, রাসেল সহ বাকিরা ঐগুলোরে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।

যেখানে দুপুরে রাস্তায় সামান্য মা*রের কারণে বাড়ির মানুষের এত প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে, সেখানে বাড়ির মানুষ যদি দ্বিতীয় দফার মা*র সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে নিশ্চিত ভাবে ২-১ জন হার্ট-অ্যাটার্ক করবে।
সকলের নিরবতা দেখে তানভিরও নিজের রুমে চলে গেছে।ঘন্টাখানেক পর মেঘ চুপিচুপি নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে আবির ভাইয়ের রুমের দিকে যায়। আবিরের রুমে দরজা লাগানো, ভেতর থেকে রা*গা*ন্বিত কন্ঠে হুংকার শুনা যাচ্ছে। ফোনে হয়তো কাউকে ঝা*ড়*ছেন। ভ*য়ে মেঘ দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেছে।

কয়েকদিন কেটে গেছে। আবির ইদানীং বাড়ির সবাইকে এড়িয়ে চলে। একসাথে খায় না। অফিসে গেলেও নিজের মতো কাজ শেষ করে চলে যায়। মেঘ তো ভ*য়ে সামনেই যায় না। গত ৩ মাসে আবির ভাইয়ের এত রাগ সে আগে দেখে নি। আবির ভাইকে দেখলেই আ*ত*ঙ্কে থাকে। ঠিকই লুকিয়ে লুকিয়ে আবির ভাইয়ের যাওয়া আসা দেখে।
মাঝখানে নির্বাচন হয়ে গেছে। তানভিরদের এমপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন।

সেই সুবাদে আগামীকাল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বাড়ির সবাইকেই দাওয়াত দিয়েছেন কিন্তু বাড়ির মানুষ রা*জনী*তি পছন্দ করে না বিধায় তানভির কাউকে বলেই নি। শুধু মেঘকে বলেছে যাওয়ার কথা। মীম বা আদিকে বললে ওরা বাসায় বাকিদের বলবে। আর বাকিদের বললেই শুধু শুধু ঝাড়ি খেতে হবে। এমনিতেই আবিরের কথাতে ওনারা রে*গে আছে। তাতে অবশ্য আবিরের কিছু যায় আসে না। এই পৃথিবীতে আবিরের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান মা আর মেঘ, তাই মেঘের বিপরীতে যা খুশি থাকুক তার কোনোকিছুতেই আবিরের আগ্রহ নেই।

ভোর বেলা উঠেই তানভির চলে গেছে। সবকিছু আগে থেকেই প্যানিং করা। মেঘদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা মোড় আছে। আবির অফিস থেকে ফিরে ঐ মোড়ে দাঁড়াবে, মেঘ বেড়িয়ে যাবে। প্ল্যান মোতাবেক সব হলো। আবির সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট ইন করে পরে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে পুরাই নায়ক সেজে আসছে। মেঘও পছন্দের একটা কালো রঙের জামা পরেছে। ইদানীং আবির ভাইয়ের পছন্দের কালার গুলো মেঘ একটু বেশিই পড়ছে। দুজনকে একসাথে দেখলে যে কেউ ভাববে তারা কাপল।

এমপির বাড়িতে এসে এমপির সাথে দেখা করে কথাবার্তা বলেছে। তারপর তিন ভাইবোন ছবি তুলেছে।সবশেষে খাওয়াদাওয়াও করেছে। সেই অফিসের পর, আজ আবির ভাই মেঘের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছে এটা দেখেই মেঘের মন উড়ু উড়ু করছে। প্রোগ্রাম শেষে মেঘ আর আবির চলে যাবে। তানভির মেঘকে একটু দূরে নিয়ে কি যেনো বলছিলো। আবির কিছুটা এগিয়ে বাইকের কাছে যাচ্ছে আচমকা এমপির মেয়ে হাজির হলো সামনে।
এমপির মেয়ে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন?”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?”
মেয়েটা হেসে উত্তর দিলো,
“আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো, আব্বু এমপি হয়েছেন তার ক্রেডিট তানভির ভাইয়া সহ আরও অনেকের৷ আপনিও শুনেছি অনেক হেল্প করেছেন। তার জন্য ধন্যবাদ ”

আবির মৃদু হাসলো আর কিছুই বলল না। মেয়েটা আবার প্রশ্ন করলো,
“ভাইয়া আপনার গার্লফ্রেন্ড কেমন আছে?”
আবির মৃদু হেসেই উত্তর দিল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

তানভির মেঘকে বিদায় দিয়ে ভেতরে চলে গেছে, মেঘ আবির ভাইয়ের দিকে তাকাতেই চোখে পরলো একটা সুন্দরী মেয়ে আবির ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। ভালোভাবে দেখতেই মনে পরলো আবির ভাইয়ের ফোন থেকে ব্লক করা সেই মেয়েটা মানে এমপির মেয়ে। আবির ভাইয়ের সাথে কথা বলছে দেখে মেঘের মে*জাজ খা*রাপ হয়ে যাচ্ছে। এক প্রকার দৌড়ে মেঘ আবির ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো,
মেয়েটা মেঘের দিকে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে ফেললো, ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো,

“ওনি কি আপনার গার্লফ্রেন্ড? ”
এমপির মেয়ে এমন প্রশ্নে মেঘ ভ্যাবাচেকা খেলো। তীব্র উৎসাহ নিয়ে তাকিয়েছে আবির ভাইয়ের চোখে মুখে৷ এ যেনো আবির ভাইয়ের মনের কথা জানার বিশাল সুযোগ৷ এই সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চাই না মেঘ। বৃহৎ নয়নে চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের চোখ-মুখ নিরীক্ষণ করছে। আবির ভাই চোখের ইশারায় কিছু বললে, সেটাও আজ বুঝে নিবে অষ্টাদশী৷ আবির মেঘের দিকে এক পলক তাকালো, পুনরায় চোখ সরিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“না, ও আমার কাজিন। ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৭

এই সামান্য কথায় অষ্টাদশীর হৃ*দয় ভে*ঙে চূ*র্ণ*বিচূ*র্ণ হয়ে গেছে। মেয়েটা হাসিমুখে মেঘকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করেছে মেঘ মনের বি*রুদ্ধে উত্তর গুলো দিয়েছে। মেয়েটা বিদায় নিয়ে চলে গেছে কিন্তু মেঘ এক পা ও নড়ছে না, ছলছল নয়নে চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে । মনে মনে ভাবছে,
“আমি কি শুধুই মোহের পেছনে ছুটছি?”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৯