আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩০

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩০
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

এডমিশন টেস্টের চাপে মেঘের নাজেহাল অবস্থা। প্রতিদিন ই জান্নাত পড়াতে আসে, টানা ৩ ঘন্টা পরীক্ষা নেয়া, বুঝানো শেষে বাসায় ফেরে। অন্যান্য দিনের মতো আজও মেঘ সব পড়া শেষ করে ১১.৩০ এর দিকে শুয়েছে। আবির এখনও ফিরে নি। মেঘ একবার আবিরের রুম থেকে ঘুরেও আসছে৷ আরও ২০ মিনিট অপেক্ষা করেছে, আবির ফিরছে না বলে বাধ্য হয়ে ফোনে সেইভ করা আবিরের নাম্বার টা বের করে, কোচিং এর ঘটনার পর আজ দ্বিতীয় বারের মতো আবির ভাইকে কল দিতে যাচ্ছে।

অষ্টাদশীর হৃদয়ের কম্পন তীব্র হতে শুরু করেছে। কল রিং হচ্ছে, কয়েক মুহুর্তেই রিসিভ হলো ।
সঙ্গে সঙ্গে মেঘ কাঁপাকাঁপা গলায় সালাম দিল,
একই সময় ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ স্বর ভেসে আসছে। সালাম আর ওপাশের মেয়েলি কন্ঠের বলা কথাটা একসাথে হওয়ায় মেঘ কথাটা বুঝতে পারে নি।
আবির উচ্চস্বরে কাকে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“Stop!”
সহসা স্বাভাবিক কন্ঠে সালামের উত্তর দিয়ে বলল,
“ঘুমাস নি এখনও?”
আবিরের স্টপ শুনে মেঘ এখনও স্টপ হয়েই আছে, কোন মেয়ে, কি বলেছে, আবির ভাই এখন কোথায়, কিছুই ভেবে পাচ্ছে না৷ কিছুটা ভেবেচিন্তে মেঘ প্রশ্ন করল,
” আপনি এখন কোথায়? বাসায় কখন আসবেন?”
আবির গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিল,

” বাসায় ফিরতে একটু দেরি হবে। কেন?”
মেঘ পুনরায় প্রশ্ন করল,
“কোথায় আছেন?”
আবির রাশভারি কন্ঠে উত্তর দিল,
“একটা কাজে আসছি, তানভিরও আছে আমার সাথে, চিন্তা করিস না।”
মেঘ খুশি হয়েও হতে পারলো না। মেয়ের কন্ঠ শুনে মনে ভ*য় ঢুকে গেছিল, তানভির সাথে আছে শুনে একটু খুশি হলেও বেশি খুশি হতে পারল না। কারণ তানভির আপন ভাই হওয়া সত্ত্বেও ভাইয়ের খোঁজ না নিয়ে আবির ভাইয়ের খোঁজ নিচ্ছে। বিষয়টা কেমন হয়ে গেলো না!
মেঘ আস্তে করে শুধালো,

“ভাইয়া কি আপনার পাশে?”
আবির উত্তর দিল,
“না একটু দূরে, কথা বলবি? ডাকব?”
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,
“না না, এমনিতেই। আসছেন না যে। অপেক্ষা করতেছি। ”
আবির ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
“অপেক্ষা করতে হবে না। আমরা চলে আসবো। ”
মেঘ আস্তে করে বলল,

” টেনশনে ঘুম আসছে না। ”
আবির কপাল কুঁচকে স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল,
“আচ্ছা, আসতেছি। ”
মেঘ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। অনেকক্ষণ পর আবির আর তানভির বাসায় ফিরেছে। তানভির আগে আগে বাসায় ঢুকে পরলেও আবির নিচে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। মেঘ বেলকনি থেকে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছে, ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি।মেঘ বিড়বিড় করে বলছে,

” আবির ভাইয়ের উপস্থিতিই যে আমার হৃদয়ে বসন্ত জাগাতে সক্ষম। ওনি কবে বুঝবেন এটা?”
মেঘ আনমনে কতকিছু ভেবে যাচ্ছে। কখন আবির বাসায় ঢুকেছে অষ্টাদশীর সেই খেয়াল নেই। আবির নিজের রুমে না গিয়ে, সোজা মেঘের রুমে এসেছে। মেঘকে রুমে না পেয়ে যেই না বেলকনির দিকে যাবে, তখন ই দৃষ্টি পরে মেঘের খাতার দিকে। কেমিস্ট্রির বিক্রিয়ার পাশে বড় বড় অক্ষরে লেখা, “আবির ভাই “। আবির তৎক্ষনাৎ খাতাটা হাতে নিয়েছে। লাস্ট কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখেছে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে খাতা জুড়ে আবির ভাই লেখা, আরও কিছু কিছু রোমান্টিক লাইন, কবিতার অংশ, গানের লাইন এসব লেখা। এসব দেখে আবির মাথায় র*ক্ত উঠে গেছে। খাতা টেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলে বেলকনিতে পা রাখতে রাখতে চিৎকার দিয়ে উঠল,

“এই মেয়ে, সমস্যা কি তোর?”
আচমকা আবির ভাইয়ের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে মেঘ। আবিরের রাগান্বিত মুখবিবর দেখে ভ*য়ে দু-পা পিছিয়ে মাথা নিচু করে নরম স্বরে বলল,
“কোনো সমস্যা নেই। ”
আবির দ্বিতীয় বারের মতো চিৎকার দিয়ে উঠল,
“তুই কি পড়াশোনা করবি নাকি করবি না?”

মেঘের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আবির ভাইকে বাসায় আসতে বলার সাথে মেঘের পড়াশোনার কি সম্পর্ক। জান্নাত আপুর নেয়া পরীক্ষাতেও তো ভালোই মার্ক পায় তাহলে আবির ভাই এমন কেন করছেন।
মেঘ ঢোক গিলে ছোট করে বলল,
“করবো। ”
আবির রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“লোক দেখানো পড়াশোনা করার কোনো দরকার নেই। এটা তোর জন্য লাস্ট ওয়ার্নিং, যদি তুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাস তাহলে তোর পা দুটা ভেঙে ঘরে বসাইয়া রাখবো। পড়াশোনা যদি করতে চাস তাহলে চান্স পাইতে হবে আর না হয়…”

এটুকু বলেই আবির থামলো, চোখে মুখে এক রাশ বিরক্তি আর ক্রো-ধ। এক সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে চলে যায়, মেঘের টেবিলের পাশে থাকা কাঠের চেয়ারে সজোরে লা*ত্থি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরেছে। লা*ত্থি টা চেয়ারে দিলেও কেঁ*পে উঠেছে অষ্টাদশীর সর্বা*ঙ্গ। মাথায় ঢুকছে না কিছুই। কি এমন হলো যে আবির ভাই এতটা রে*গে আছেন। বাসায় ফেরার কথা বলে কি ভুল করে ফেলেছি, ওনি কোথায় ই বা গেছিলেন ।

মেঘ কিছুক্ষণ পর রুমের দিকে পা বাড়ায়, চেয়ারটা ফ্লোরে পরে আছে। মেঘ চেয়ার টা তুলে ঠিকমতো রাখতে গেলেই চোখে পরে খাতাটা। ফ্যানের বাতাসে খাতার পৃষ্ঠাগুলো উড়ছে। মেঘ সঙ্গে সঙ্গে খাতা তুলে নেয় হাতে। খাতা জুড়ে আবির ভাই লেখা দেখে কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বিড়বিড় করে বলছে,
“স*র্বনা*শ, এই খাতা কি আবির ভাই দেখে ফেলেছেন?”

তখনই আবির আবার রুমে আসছে। ফ্যান বন্ধ করে মেঘের হাত থেকে খাতাটা এক টানে নিয়ে, হাতে থাকা লাই*টার দিয়ে আ*গুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। মেঘ বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, বিশালাকার চোখে সেই আ*গুন স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। আগুনের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে, তাই আবির খাতা ছেড়ে দিয়েছে। ফ্লোরে খাতা টা পরতেই আ*গুন দ্বি*গুণ বেড়ে গেছে। আবির সেই আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে রাশভারি কন্ঠে বলল,
“ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে,
তার ফলাফল টা আরও বেশি ভ*য়ানক হবে। মনে থাকে যেন।”

আবির চলে গেছে। মেঘ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সেই আ*গুন দেখে তারপর সেখানেই বসে পরেছে। নির্বাক চোখে চেয়ে আছে পুড়া খাতার অবশিষ্ট অংশের পানে। আবির শুধু খাতায় পুড়ায় নি পুড়িয়েছে অষ্টাদশীর হৃদয়ে বাড়তে থাকা ভালোবাসাকে। আবির কিছু না বলেও বুঝিয়ে দিয়েছে, আবিরকে ভালোবাসার যোগ্যতা মেঘের নেই। আবির ভাইয়ের ক্রো*ধিত আঁখিতে অষ্টাদশীর কোমল মন ঝলসে গেছে। চোখ বেয়ে আজ এক ফোঁটা পানিও পরছে না কেমন যেনো পাথরের ন্যায় বসে আছে।

এক সপ্তাহ পর শুক্রবার সন্ধ্যেতে আবির বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তানভির হাজির হলো সেখানে। আজ তানভিরের তেমন কাজ নেই। বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি করেছে, বিকেলের দিকে এমপির বাড়ি থেকেও ঘুরে এসেছে। কি করবে ভেবে না পেয়ে বড় ভাইদের সাথে আড্ডা দিতে আসছে। তানভির হাসিমুখে সবার সাথে হ্যান্ডসেক করে একটা চেয়ার টেনে বসলো। সবাই তানভিরকে পেয়ে গণহারে প্রশ্ন করা শুরু করেছে। নির্বাচন নিয়ে, তানভিরের কাজ নিয়ে, এমপির কর্মসূচি নিয়ে। তানভির যা জানে সব উত্তর ই ঠিকঠাক মতো দিচ্ছে। আবির চুপচাপ বসে বসে ফোন চাপছে।

আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু তানভির হওয়ায় মেঘের টপিক উঠতে বেশি সময় লাগলো না। এতদিন সবাই তানভিরকে আবিরের ছোট ভাই হিসেবেই সম্বোধন করে এসেছে। রাকিব সব জানলেও বরাবরই সে ভদ্র মানুষ ছিল। তবে এখন সবাই মেঘের কথা জানে। মেঘ আর আবিরের কথা জানার পর আজই তানভিরকে পেয়েছে৷ তাই সবাই নতুনভাবে তানভিরের সাথে পরিচিত হচ্ছে।
কথার কথা লিমন বলে উঠল,

” তানভির, তুই তোর বোনকে আবিরের কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিস কেন?”
তানভির আবিরের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“আমার বিশ্বাস, ভাইয়া আমার বোনকে সারাজীবন রাজরানী করে রাখবে। আমার বোনের জীবনে যত ঝড় ই আসুক না কেন, ভাইয়া সবসময় তার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াবে। ভাই হিসেবে এর থেকে বেশি আমি কি চাইবো?”
রাসেল সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,
“আমার একটা প্রশ্ন আছে।”
তানভির বলল,
“বলো ভাইয়া।”

রাসেল একটু ভেবে বলল, “এইযে তুই আবিরকে ভাইয়া ডাকিস, তোর বাকি ভাই বোনেরাও আবিরকে ভাইয়া ডাকে, তাহলে মেঘ কেনো ভাইয়া ডাকে না?”
তানভির স্ব শব্দে হেসে উত্তর দিল,
“তোমার কি মনে হয়, বনু ডাকে নি? সত্যি বলতে বনু আমায় ভাইয়া বলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাই ভাইয়াকে শুধু ভাইয়া ডাকতে পারে না। ভাইয়া দেশে ফেরার পর প্রথম প্রথম বনু ভাইয়াকে একবার “আবির ভাইয়া”, একবার “আবির ভাই”, এমন করে ডাকতো। একদিন বড় আম্মুর সামনে আবির ভাই বলায় বড় আম্মু বললেন,
ভাইয়ের নাম ধরে ডাকিস না, বড় ভাইয়া বলে ডাকবি। ”

লিমন বলল,
“পরে?”
তানভির আবিরের দিকে একবার তাকালো। আবির চুপচাপ বসে আছে। কারণ সে ভালো করেই জানে তানভির আসলে বন্ধুরা আবিরের কুকীর্তি জানতে চাইবেই। আবিরকে চুপচাপ থাকতে দেখে তানভির একটু সাহস নিয়ে পুনরায় বলা শুরু করলো,

পরে আর কি, বনু কিছু বলার আগে ভাইয়াই চিৎকার দিয়ে উঠছে। ভাইয়া বলে,
“ভাইয়া ডাকার কোনো প্রয়োজন নাই, যা ডাকছে তাই ডাকুক।”
বড় আম্মু এখান থেকে যাওয়ার পর বনু মজা করে বলছে,
“আবির ভাইয়া…”
ভাইয়া সঙ্গে সঙ্গে বলে,

“ভুলেও যদি আর একবার ভাইয়া ডাকিস তাহলে এমন থা*প্পড় দিব, জীবনের মতো ভাইয়া ডাক বন্ধ হয়ে যাবে।”
সেই থেকে বনু আবির ভাই বলেই ডাকে। ”
সবাই আবিরের দিকে চেয়ে হাসছে৷ লিমন আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” ভাই ডাক শুনতে কেমন লাগে বন্ধু?”
আবির বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিল,

“ভাই ডাকটা অনেক কষ্টে সহ্য করে নিয়েছি। কিন্তু ভাইয়া ডাক সহ্য করতে পারবো না। ”
রাকিব তানভিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“এমপির মেয়ের কি খবর রে? এখনও কি উল্টাপাল্টা কিছু বলে?”
তানভির স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল,
“মেয়ে ভালোই আছে। তবে ইদানীং আরেকটা কথা বলছে যেটা আমি ভাইয়াকেও বলি নি। ”
আবির ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,

“কি বলছে?”
তানভির ঢোক গিলে আস্তে করে বলল,
“এমপির মেয়ের বনুরে অনেক ভালো লাগছে। ”
আবির কপাল কুঁচকে, গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” তো?”
তানভির আস্তে করে বলল,
“এমপির ছেলের বউ মানে এমপির মেয়ে ভাবি বানাতে চাই। ”
আবির বসা থেকে উঠে রাগান্বিত কন্ঠে শুধালো,

“কি?”
তানভির চেয়ার থেকে উঠে দৌড়ে গিয়ে রাকিবের পেছনে লুকাইছে। রাকিব ও দাঁড়িয়ে পরেছে। লিমন আর রাসেল সঙ্গে সঙ্গে আবিরকে ধরেছে।
তানভির রাকিবের পেছন থেকে উচ্চস্বরে বলে উঠল,
“তুমি এভাবে আমায় মা*রতে পারো না, ভুলে যেয়ো না আমি তোমার সম্বন্ধী হয়। ”
আবির রা*গে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
“এই কথাটা মাথায় রাখি বলেই আজ পর্যন্ত তুই আমার হাতে মাই*র খাস নি। ”
রাকিব হাসতে হাসতে বলছে,

“তানভির তোর ভাগ্য ভালো। শা*লা হলে যে কি দশা হইতো তোর। আল্লাহ ভালো জানেন। ”
আবির রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“তানভির, তোরে আমি আগেই না করছিলাম মেঘরে ঐ বাড়িতে নেয়ার দরকার নেই। তুই জোর করছিলি বলে আমি নিছিলাম। এমপির মেয়েরে এমনেই সহ্য হয় না। এখন আবার ভাই। ছেলের নাম কি, কই পাবো এটা বল শুধু! ”
তানভির ঠান্ডা কন্ঠে বলল,

“ছেলে UK তে থাকে, ছেলে এসবের কিছুই জানে না। এমপির মেয়ের ই ভালো লাগছিল। আমি না করে দিছি। বলছি বনু তোমার বউ। কাহিনী যেনো না বাড়ায়। ”
আবির গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
“আমায় আগে বলিস কি কেনো?”
তানভির তখনও রাকিবের পেছনেই লুকিয়ে আছে। ধীর কন্ঠে বলল,
“এখানে ৪ জনের সামনে বলেই জান বাঁচানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে, বাড়িতে আমায় একা পেয়ে মাই*র যে দিবা না তার কি গ্যারান্টি আছে! ”
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বলল,

“এমপির মেয়েটা যদি ছেলে হইতো তাহলে এর খবর আছিল৷ এমপির ছেলে দেশে ফিরলে জানাইস তো। ”
তানভির চিন্তিত স্বরে বলল,
“কেন মা*রবা নাকি? কিন্তু ছেলে তো কিছুই জানে না!”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল,
” সেটা সময় বলে দিবে। ”

আরও ঘন্টা দুয়েক আড্ডা দিয়ে ১০ টার পরে বাসায় ফিরেছে দুই ভাই। মেঘের জন্য খাবার নিয়েছে। তবে সেই খাবার আজ আর আবির দেয় নি। তানভির কে দায়িত্ব দিয়ে আবির নিজের রুমে চলে গেছে। আবির চাইছে মেঘ তার সর্বোচ্চ চেষ্টা টা করুক। আবিরের জন্য যেনো মেঘের পড়াশোনায় কোনো সমস্যা না হয়। মেঘকে শক্ত আর স্বাভাবিক করতেই আবিরের এত কঠিন পদক্ষেপ নেয়া।

অবশেষে আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা।
মেঘ সকাল সকাল রেডি হয়ে নিচে নামলো। পরীক্ষায় কান ঢাকা নি*ষেধ এজন্য হিজাব পরে নি আজ। খেতে বসেছে ঠিকই কিন্তু খাবার গলা দিয়ে নামছে না৷ প্রিপারেশন আলহামদুলিল্লাহ কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় গত দু-রাত ঘুমাতে পারে নি। গতকাল রাতেই ঠিক হয়েছে, গাড়ির থেকে বাইকে গেলে সুবিধাজনক হবে তাই তানভির মেঘকে পরীক্ষার হলে নিয়ে যাবে। কিন্তু সকাল থেকে তানভিরের হদিস নেই। এখনও ঘুম থেকেই উঠে নি।
ইকবাল খান যেই না তানভির কে ডাকতে যাবে তখনই চোখে পরলো আবির রেডি হয়ে নামছে।
ইকবাল খান আবিরকে দেখেই উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,

“কিরে আবির তুই কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল,
“তানভির একটু অসুস্থ, বললো মেঘকে আমি নিয়ে যাইতে। যেহেতু আজ শুক্রবার তাই ভাবলাম নিয়েই যায়। ”
মোজাম্মেল খান বলে উঠলেন,
“ভালোই হয়েছে। ঐ ছেলেরে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নাই। দেখা গেল যাইতে যাইতে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। তার থেকে ভালো তুই ই নিয়ে যা। ”
আবির মৃদু হাসলো। মালিহা খান ছেলেকে ডেকে বললেন,
“তোকে খেতে দিব ?”

আবির খাবে না বলে বেড়িয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘও বেড়িয়েছে। সবাই গেইট পর্যন্ত মেঘকে বুঝাতে বুঝাতে এগিয়ে দিয়ে এসেছে৷ এক ঘন্টার মধ্যে উপস্থিত হলো পরীক্ষার কেন্দ্রে। চারপাশে অসংখ্য শিক্ষার্থী আর তাদের সাথে অভিভাবক, শুধু বন্ধুরা মিলেও পরীক্ষা দিতে এসেছে। কেউ কেউ রাস্তার পাশে বসে পড়তে ব্য*স্ত। মেঘ আশেপাশের পরিবেশ দেখে আরও বেশি শঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে । এখনও গেইট খুলা হয় নি। মেঘ আশেপাশে এত এত শিক্ষার্থী দেখতে ব্যস্ত । অথচ আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।
আবির হঠাৎ ই শীতল কন্ঠে ডাকলো,

“মেঘ!”
মেঘ আবিরের মুখের পানে তাকিয়ে উত্তর দিল,
“জ্বি। ”
আবির অকস্মাৎ দু-হাতে আলতোভাবে মেঘের দু-গাল স্পর্শ করে মেঘের চোখে চোখ রেখে নিরেট কন্ঠে বলল,
“আমি গর্ভ করে বলতে পারি, এখানে উপস্থিত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আমার মেঘ সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমতী। পরীক্ষা শেষে আমি তোর মুখে সেই অকৃত্রিম হাসিটা দেখতে চাই,যেই হাসিটা শুধুই বিজয়ের। আমার বিশ্বাস তুই পারবি। ”

মেঘ নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে আবিরের মুখবিবরে।
মেঘকে ছেড়ে একটু দূরে সরে আবির পুনরায় বলল,
“টেনশন করিস না, বের হয়ে সোজা এখানে আসবি। আমি এখানেই থাকবো। ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ২৯

ততক্ষণে গেইট খুলে দিয়েছে৷ হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর ভিড়ে মেঘও কেন্দ্রে ঢুকে গেছে। আবির বাহিরে অপেক্ষা করছে, পরীক্ষা মেঘের হলেও চিন্তা সব আবিরের। তার প্রথম আর একমাত্র চিন্তা অসময়ে দেশে ফেরা। ভেবেছিল ভর্তি পরীক্ষা শেষে ফিরবে কিন্তু জয়ের জন্য তা আর হলো কই। দেশে ফেরার পর থেকে একটায় চিন্তা আবিরের জন্য মেঘের না কোনো সমস্যা হয়। ৩ মাস যাবৎ কত কৌশলই না অবলম্বন করছে মেঘকে শক্ত করতে। আজকের পরীক্ষাতেই বুঝা যাবে আবির কতটুকু সফল আর কতটুকু ব্য*র্থ।

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩১