আসক্তি পর্ব ১২

আসক্তি পর্ব ১২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“পাখির বাড়ি যাওয়া উচিত ছিলো,বড্ডো উচিত ছিলো।কেন এটা ভুলে গেলাম যে ওর মন খারাপ হতে পারে”-মনমরা হয়ে ভাবতে ভাবতেই নিজের ঘরে ঢোকে শান।চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়।কি যেন নেই নেই মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে কলিজাটা ই নেই।কেমন শূন্য শূন্য লাগছে ভিতর-বাহির।
হঠাৎ চোখ পড়ে সাইড টেবিলের উপর মানি প্ল্যান্টের টবের নিচে। সাদা একটা কাগজ।দরজা থেকেই চোখে পড়লো।অথচ একটু আগে নজরেই আসে নি শানের তাড়াহুড়োয় ছিলো কিনা!
শান দ্রুত এগিয়ে বেশ কৌতূহল নিয়ে কাগজ টা খোলে।

“সার্জন সাহেব,আমার ঘরের গাছ গুলোতে নিয়ম করে দু বার পানি দেবেন।ফিরতে দেরি হলে একবারই যথেষ্ঠ।ছাদের গাছ নিয়ে ভাবতে হবে না।সুমিকে বলেছি ওগুলোর যত্ন ও নিবে।আপনি শুধু ঘরের গুলো দেখবেন একটু।পারবেন না ! প্লিজ!”-চিরকুট পড়ে ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিত হাসি ফোটে শানের।চোখ বুজে নেয় আবেশেই।পরোক্ষনেই পাখির অভিমানী মুখটা মানষপটে ভেসে ওঠে।লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে মানি প্ল্যান্টটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিজের তোয়ালে টা বিছানার উপর দেখে তারাতারি বেলকোনিতে এলিয়ে দেয়।
“ওর কথা সারাক্ষন ভাবলে চলবে না শান,কনসেনট্রেট অন ইওর ওয়ার্ক শান”-নিজের মনকে বুঝিয়ে কাবার্ডের ড্রয়ার থেকে কনফিডেনসিয়াল ফাইলটা বের করে কাবার্ডের দরজা বন্ধ করতেই চোখ আটকে যায় সেদিকে।
বিয়ের আগের মতো শানের সমস্ত ড্রেস দিয়ে কাবার্ড গুছানো।পাখির একটা শাড়ি বা জামা কোন কিছুই সেখানে নেই।কলিজা কেপে ওঠে ওর।

“ও সব ড্রেস নিয়ে গেলো কেন?ও কি আর আসবে না নাকি?আমি কি তবে ব্যর্থ হাজব্যান্ড? “-ভাবতে ভাবতে কাবার্ডের সমস্ত জিনিস এলোমেলো করে তবু পাখির ব্যবহার্য একটা জিনিসও সেখানে পায় নি।অজানা ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।
দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে পাখির নম্বরে ডায়াল করে।

“নাহ, কল দিবো না তাকে।সকাল বেলা এতো বাড়োন করার পরেও সে চলে গেলো তাও আমায় না জানিয়ে।থাকুক নিজের মতো।আমার দরকার নেই ফোন দেয়ার।”
“কিন্তু আমারও তো ভুল। ফোন তো আমিই ধরি নি”
“থাক তবুও দিবো না”- এমন হাজার রকম চিন্তা ভাবনা থেকে কলটা কেটে দেয়।বিছানায় ছুড়ে মারে নিজের ফোন।তারপর কাজ কর্ম সব ফেলে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরে।ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরে তারাতারি ঘুম চলে আসে।

এদিকে পাখি বাড়িতে পৌঁছে গেছে ঘন্টা দেড়েক হলো।পৌঁছেই শ্বাশুরি মাকে জানাতে ভোলে নি সে।শানের নম্বরে ফোন দিলে ব্যস্ত পেয়ে আর ফোন দেয় নি।
এতোদিন পর জেনিকে পেয়ে সারাদিনে শানের কথা বেমালুম ভুলে যায় পাখি।
সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়।পাখি আর জেনির গল্পের ঝুড়ি যেন ফুরায় না।ছাদের উপর পা এলিয়ে এটা থেকে সেটা বলেই চলছে দুজনে।পাখির চাল চলনে আবারও ছোট্টবেলার চাঞ্চলতা খুঁজে পায় জেনি।

“তুই অনেক চেঞ্জ হয়েছিস পাখি।আমাদের আগের সেই পাখি হয়ে গেছিস”
পাখি পলকহীন চেয়ে থাকে জেনির দিকে।
পাখির কোন উত্তর না পেয়ে ওকে এক প্রকার জাপটে ধরে আবার বলে,”বর বুঝি সব চাঞ্চলতা ফিরিয়ে দিলো হুমমম?কেমনে রে? খুব আদোর করে না? জানিস, তোর ডাক্তারকে সামনে থেকে দেখার খুব শখ আমার।শুধু ঐ টিভিতেই দেখিছি আর ফেজবুকে। বিয়েতে তো আসতে পারলাম না।নিজের সংসারে ব্যস্ত ছিলাম।”-বলতে বলতেই জেনির মুখটা মলিন হয়ে যায়।

“এসছি থেকে মানুষটাকে একবারও কল করা হয় নি।এতোক্ষনে তো বাড়ি আসার কথা।রুমে গিয়ে কথা বলব একবার।”-
“কি এতো ভাবিস বলতো?”
“হুমমম, কিছু নাহহ।আচ্ছা দেখাবো এবার যাহহ”-জেনিকে আর কোন প্রশ্ন করতে না দিয়ে পাখি বলে ওঠে,”চল ঘুমাবি না?নাকি রাত সাবার করার ইচ্ছা আছে এখানে?”

“আরে কতোগুলো দিন পর দেখা।রুমে পরে যাই।তুই যা ঘুমকাতুরে গিয়েই তো ঘুমাবি”
“হাহহহ,আমার সত্যি এবার ঘুম চলে এসছে জেনি।চল রুমে চল।রাত অনেক হলো ভাইয়া বকবে”-পাখি হাই তুলে জেনিকে ঘরে আসার তাগিদ দেয়।
ঘরে ঢুকেই বিছানা দেখে আর লোভ সামলাতে পারে না পাখি। ধপ করে বিছানায় শুয়ে পাতলা চাদর টা গায়ে টেনে নেয়।
এদিকে জেনি ওর কান্ড দেখে হেসে কুটিকুটি

“কেমনে তোর বর তোকে সহ্য করে রে? তোর ঘুমে তো বেচারার বারোটা বাজার কথা”-বলেই পাখিকে চিমটি কাটে
“আউউউ,ঘুমা তোহহহ বিরক্ত করবি না একদম।”
“আমার উনি তোদের বরের মতো অসভ্য না। আমায় একটুও বিরক্ত করে নাআআআ”-গভীর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলতে বলতেই মুখের কথা মুখেই মিলিয়ে যায় পাখির।

সকাল সকাল উঠে নামাজ সেড়ে জেনিকে ডাকে। হঠাৎ শানের কথা মাথায় আসতেই চট করে ফোন হাতে নিয়ে কল করে শানকে।একবার রিং হতে না হতেই কেটে দেয় কলটা।
“হয়ত ফরেইনারদের সাথে মিটিং এ আছে।মাঝে মাঝে তো এতো সকালেও ভিডিও কনফারেন্স করতে দেখেছি”-ভাবতে ভাবতেই ফোন টা রেখে বেরিয়ে আসে নিজের ঘর থেকে
এদিকে শান নামাজ সেড়ে ফোনের কাছেই পরে আছে পাখির একটা কলের আশায়।আশা পূর্ণ করে পাখি কলও দেয়। কিন্তু একরাশ অভিমানে কল কেটে বসে থাকে আবার কল দেবে ভেবে।কিন্তু সে গুড়ে বালি।বাধ্য হয়ে মনকে প্রস্তুত করে নেয় দুটো কথা শোনাবে বলে।কল দেয় অথচ পাখি আর রিসিভ করে না।রাগে ফোনটা বন্ধ করে রাখে।

সারাদিন একথা সেকথায় পরিবার এবং জেনির সাথে বেশ জাকজমকপূর্ণ ব্যস্ত সময় কাটায় পাখি।পাখির পরিবর্তনে বাড়ির সবাই খুব খুশি।আগের মতো চঞ্চল হয়ে যাচ্ছে সে।
দেখতে দেখতে তিন দিন হয়ে যায়।শ্বাশুরি মা’র সাথে নিয়ম করে দু বেলা কথা বলতে ভোলে নি পাখি।লজ্জায় শানের কথা জানতে চায় নি।কিন্তু শ্বাশুরি মা’ই আগ বাড়িয়ে অনেক রসিকতা করত।শানের নম্বরেও এই তিনদিনে মাত্র দুই বারই কল দেয়ার সময় হয়েছিলো পাখির।কিন্তু আগের দিনের মতো কলটা কেটে দেয়।একটু একটু মন খারাপ হতো পরোক্ষনেই শানের ব্যস্ততার কথা ভেবে সামলে নিতো নিজেকে।

রাত ১ টা বেজে ১৫ এর কোঠায়।ফরেইন ডাক্তারদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে শান।এতো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং অথচ ল্যাপটপের পিছনে মানি প্ল্যান্টটা রেখে অপলক সেদিকে চেয়ে পাখির কথা ভাবছে সে।
“যেদিন এটা আনলাম পাখি খুব খুশি হয়েছিলো”পাখির সেদিনের মুখশ্রীটা চোখে ভাসছে শানের।
“হ্যালো ডক্টর শান,আর ইউ দেয়ার?আর ইউ হেয়ারিং আস?প্লিজ কন্টিনিউ? মি.শান!”-ডক্টরদের ডাকে হুশ ফেরে শানের।

“আই ওয়ান্না পোষ্টপোন দ্যা মিটিং হেয়ার, ক্যান আই?
“ওহহহ ইয়াহ,শিওর শিওর। হোয়াই নট!”
বলেই ডক্টররা ভিডিও কনফারেন্স ক্যান্সেল করে।খানিক বাদে মেডিকেলের সিনিওর স্যার ফোন করেন।
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ শান?হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?তোমার কোন আইডিয়া আছে মিটিং টা কতো টা জরুরী ছিল?আজকাল মেডিকেলেও তোমার ছন্নছাড়া ভাব সবাই খেয়াল করছে।শোন শান,ফরেইন ডক্টররা কখনোই তোমায় মিটিং কন্টিনিউ করতে বাধ্য করবে না তাই বলে এটা ভেবো না তারা খুশি খুশি কল কেটে দিয়েছে”

“সরি স্যার।আমার মাইন্ড ডাইভার্ট হয়ে গেছিলো”
“বাই দ্য ওয়ে। কাজে মন দাও আর ওনাদের ইমেইল করে জানিয়ে দিও কখন মিটিং রাখবে”-বলেই কল কেটে দেন তিনি।
এদিকে পাখির চলে যাওয়ার পর ছেলের মাঝে খাপছাড়া ভাব লক্ষ্য করেছেন শর্মিলা বেগম।ঘরে পানি শেষ হওয়ায় রান্না ঘরে পানি আনতে গিয়ে খেয়াল হয় শানের ঘরের লাইট জ্বলছে।বোতলে পানি ভরে এক পা দু পা করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ছেলের দরজায় চোখ বুলায় সে।

ল্যাপটপ, ফোন এদিক সেদিক ছড়ানো।মানি প্ল্যান্টের টবটা কোলের উপর বসানো।অ্যাশ ট্রে টা ভরে গেছে । সিগারেটের টুকরো সবদিকে ছড়ানো।মিটিং এর ফলে ফরমাল ড্রেসটা এখনো শরীরে জড়ানো।টাই টা গলায় ঝুলছে এলোমেলো ভাবে।দু আঙ্গুলের ফাঁকে অনবরত টেনেই চলছে সিগারেট।আরেক হাতে পাখির কানের একজোড়া দুলের দিকে চেয়ে আছে।

এসব দেখে নিজেকে আটকাতে পারে নি শানের মা।ধীরেধীরে ছেলের রুমে ঢোকে।সটান হয়ে ছেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।শান চোখ মেলে সেদিকে একবার চেয়ে আবার চোখ বুজে সিগারেটে টান দেয়।
হঠাৎ মা কে খেয়াল হতেই সিগারেট দ্রুত ফেলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়।
“এসব কিরে শান?ঘরের এ অবস্থা কেন?আর তুই এতো এতো সিগারেট কবে থেকে খাচ্ছিস?তাই তো বলি কেন ঘরে তালা মেরে চলে যাস?”

শান এলোমেলো চোখে মায়ের দিকে একবার চেয়ে আবারও মাথা নিচু করে নেয়।শান নিয়মিত সিগারেট খায় না;মাঝে মাঝেই।এর আগে কখনোই সে সিগারেট খাওয়া অবস্থায় মা তাকে দেখে নি।
“কিরে কথা বলছিস না কেন? চোরের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে উত্তর দে”
শান মায়ের প্রশ্নে অপরাধীর ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে।ফ্যালফ্যাল করে তাকায় মায়ের দিকে।আচমকাই মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না সংবরনের বৃথা চেষ্টা করে।
শানের মা ছেলের হঠাৎ এমন কাজে হতভম্ব বনে যান।বুঝতে পারছে তার ছেলে ভেতরে ভেতরে দংশিত হচ্ছে।

“কি হয়েছে তোর?এমন ফোঁসফোঁস করছিস কেন বাবা?মাকে বলবি না? “-মা অবাক হয়ে ভয়মিশ্রিত গলায় বলে ওঠেন।
শানের কোন পরিবর্তন পেলেন না।দুই বাহু ধরে ছেলেকে খাটে বসালেন।
“৪দিন ধরে ঠিক মতো খাচ্ছিস না,দারোয়ান বিকেলে বলছে তুই নাকি বেশ রাত করে ফিরছিস ইদানিং আর আজ এভাবে নেশাখোরের মতো সিগারেট খাচ্ছিস।কি হয়েছে বলবি তো?এতো পরিবর্তন তোমার মাঝে কেন শান?”

শান চোখ মুখ বন্ধ করে ঘনঘন নাক টানছে।
শানের হাতের দুল জোড়া দেখে মায়ের বুঝতে অসুবিধে হলো না কিসের জন্যে এ অবস্থা।
পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,”বুঝেছি বাবু, তোর কেইস তো জন্ডিস”
শান মায়ের দিকে একবার চেয়ে ঢকঢক করে পানিটা শেষ করে

“কাল চলে যাস।অভিমানে দূরত্ব বাড়ে। বাড়তে দিস না।বউমা কে সাথে নিয়ে আসিস।”বলেই শানের এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে আরো এলোমেলো করে দেয়।
“তুই যে এমন বউ পাগল হবি ভাবতেও পারি নি রে।এখন ঘুমা”
শান মেঝের দিকে অনুভুতিহীন ভাবে চেয়ে আছে।শর্মিলা সন্তুষ্ট চিত্তে ঘর থেকে বের হয়।
“পাখি নিজেকে তোমার আসক্তি বানাতে গিয়ে তেমাকেই নিজের আসক্তি বানিয়ে ফেলেছি বোধহয়”

“সকাল বেলা নাস্তা না করে মেডিকেল না গিয়ে এমন পায়চারী করছিস কিসের জন্যে বলবি তো”
…..(শান নিশ্চুপ)
“বলবি তো বাপ হইছে কি তোর?”
“মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঔষধ ছিলো। সেটা সে রেখে গেছে। ফোন করে বলে দাও তার ভাইকে পাঠিয়ে ঔষধ নিয়ে যেতে।”শান হাত নেড়ে নেড়ে একপ্রকার গলা উঁচিয়ে উঁচিয়ে কথাগুলো মা কে বলছে।
“বোনের দরদ যেন উতলে উঠছে।এতো দরদ থাকলে বিয়ে দেয়ার কি দরকার ছিলো!ঘরে শো-পিচ বানিয়ে রাখতো”-

“তোমার ছেলে পায়চারী করছে বিড়বিড় করে কিসব বলছে শুনছো ভাবি?”
“আস্তে বল,খেপে গেলে খবর খারাপ আছে”
“তা হ্যা রে, তোকে কাল বললাম যা বউয়ের বাপের বাড়িতে।ক’টা দিন থেকে বউকে নিয়ে আয়”
“যাবো না আমি, যাবো না কাউকে আনতে।নিজ গরজে গেছে আবার নিজ গরজে আসবে।শুধু বলিও ঔষধ গুলো যেন নিয়ে যায়”
“কিসের ঔষধ রে, তুই না সেদিন বললি পা ঠিক হয়েছে।আবার কিসের ঔষধ?”

” ঐ মানসিক দূঃচিন্তার ঔষ…..”
“ও আপনি বুঝবেন না মা তাই না শান”-বলতে বলতেই সামিহা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।
শানের রক্তচক্ষু দেখে সামিহা তেমন কিছু বলার সুযোগ পায় না।শ্বাশুরির পাশে এসে বিড়বিড় করে বলে,”বুঝলেন না মা বউয়ের উপর রাগ করেছে আপনার ছেলে।নিজের ইগো ডিঙ্গিয়ে কি করে ও বাড়ি যায় তাই একটু বাহানা খুঁজছে”
বিড়বিড় করে বললেও শানের বুঝতে অসুবিধা হলো না সামিহা কি বললো।তাই রাগি চোখে তাকিয়ে সামিহাকে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সামিহা বলে ওঠে,”তা শান তুমিই তো দিয়ে আসতে পারো।যাও না কেন?নিজের শ্বশুর বাড়ি বলে কথা!”
“সেটার জন্যে আমার মেজাজ মস্তিস্কই জরুরী।তুমি বলবে তবে নিয়ে আমি যাবো এটা ভেবো না”-দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয় শান।এরপর গজগজ করে গাড়িতে এসে বসে।

এদিকে পাখির বাসায় আজ রাখি এসছে,জেনি তো ছিলোই।এ যেন সোনায় সোহাগা।তিনজন সারাদিনে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বিকেলে নদীর পাড় ঘুরে ফুসকা হাউজে যাওয়া।যেই ভাবা সেই কাজ।তিন জনেই প্রচুর রকম ফুসকাখোর।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই তিনজনে রওনা হয় নদী অভিমুখে।এতোদিন পর আজ একখানে হয়েছে তিনজন।সারা বিকেল নৌকা চড়েছে,নদীর ওপাড় গেছে শেষে এপাড়ে আসতে আসতে সন্ধ্যে হয়ে যায়।তবুও ফুসকা খাওয়ার লোভ দমাতে পারে নি তারা।তিনজন তিনজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে দৌড়ে ফুসকা হাউজে ঢুকে পরে।

শান হাজার দ্বিধাদ্বন্দ্ব একপাশে রেখে মেডিকেলের কাজ সেড়ে রাফিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তারপর লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে গাড়ি ঘুড়ায়।ঘন্টা খানিক পর পাখিদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাড় করায়।গ্রাম হলেও মেইন রাস্তার
পাশেই দোতলা বাড়ি পাখিদের।উপরের কর্ণারের বেলকোনিওয়ালা রুমটা পাখির। মেইন গেইট দিয়ে ঢুকে বাড়ির পিছনে বিশাল ফাঁকা আঙ্গিনা।পাখির ঘরের দিকে চোখ রেখে গেইট খোলা পেয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ির পিছনে পার্ক করে রাখে।

পাখির মা হন্তদন্ত হয়ে বাহিরে এসে দেখেন তার একমাত্র জামাই চলে এসেছে।কি করবেন ভেবে পান না।এদিকে পাখিও বাড়িতে নেই।সাতপাঁচ ভেবে ভিতরে ড্রয়িং রুমে বসতে বলেন। শান পাখির খোঁজ জানতে চান।পাখির মা সবটা বলে দেয়।মায়ের কথায় শান রেগে যান ভীষণ।কারণ সন্ধ্যা হয়েছে অনেক্ষন হলো।এখনো বাড়ির বাহিরে মেয়ে।
“বাবা টেনশনের কিছু নেই।নদীর পাড় পাশেই।ওরা তারাতারি চলে আসবে”-
জামাইয়ের মাঝে অস্থিরতা লক্ষ্য করেন তিনি।তারাহুরো করে পাখির নম্বরে ডায়াল করতেই একবার কেটে যায়।শান আর স্থীর হয়ে বসে থাকতে পারে না।
পাখির মা আবারও কল করে।

“হ্যা, কি রে কই তোরা? ”
“হ্যা মা বলো, এই যে ফুসকা হাউজে ফুসকা খাই”-মুখে ফুসকা ঠেসে তিনজন একসাথে জবাব দিয়ে খিলখিলিয়ে ওঠে।
“এই মূহূর্তে বাড়ি চলে আসো।শা…”-পাখির মাকে শান নিজের আসার কথা ইশারায় বলতে বাড়োন করে দেয়।
তিনি কপোট রাগ দেখিয়ে ওদেরকে তারাতারি বাড়ি ফিরতে বলে।

ত্রিশ মিনিট পর বাড়িতে ঢোকে জেনি আর পাখি।ঘরিতে তখন রাত আটটা বেজে গেছে অলরেডি।রাখিদের বাড়ি ফুসকা হাউজের পাশে হওয়ায় সে আর এবাড়ি আসে নি। ওরা দুজন হেলতে দুলতে বাড়িতে ঢোকে।ঢুকেই ড্রয়িং রুমের সোফায় নির্লিপ্ত চাহনীতে বসে থাকতে দেখে শানকে।
“পাখি রে এই হিরো টা কে রে?ডাক্তার শানের ওতো লাগছে না? “-জেনি চাপা চাপা স্বরে ঠোঁট না নাড়িয়ে পাখিকে বলে।
“হিহহহহ,আওয়ারও তো তাই অনে হচ্ছে”
সাথে সাথে জেনি বিষ্ফোরিত চোখে পাখির দিকে তাকায়।পাখির সাথে তো শানের বিয়ে হইছে তা যেন মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো।

ওদের দুজনের কান্ড দেখে রাগে কটমট করে পাখির দিকে চেয়ে থাকে।এরপর ড্রয়িং রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে চট করে পাখিকে কাঁধে তুলে উপরতলা দিক যায়।পাখি কিছু বুঝে ওঠার আগেই শান ওকে কাঁধে নেয়।না পারছে জোড়ে চিল্লাতে না পারছে চুপচাপ কাঁধে থাকতে।
“নামান আমায়। সবাই কি সব ভাবছে ছিহহ”
শান থমথমে মুখে পাখির ঘরের মেঝেতে এনে ওকে নামিয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।পাখি গোল গোল চোখে দরজার দিকে তো একবার শানের দিকে তাকায়।

“বোরখা খোল ”
“???”
“খুলতে বলছি কুইক।
তুমি সোজা কথার মানুষ নও”
বলেই বোরখা চট করে খুলে দেয়।
“এসব কি করছেন এসব, বাহিরে সবাই ”
শান ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে পাখির দিকে।
“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই বাইরে সবাই?হুমমম?
আমি তোমার সাথে রোমান্স করার জন্যে বোরখা খুলতে বলি নি, গাধা কোথাকার”
“আমায় বলে কেন আসো নি?
“কি হলো বলো?আন্সার মি ড্যাম ইট!”-শান ক্ষীণ চিৎকারে একের পর এক প্রশ্ন করছে আর পাখির দিকে এগোচ্ছে

“আআপনাকে তো মমা ফোন দিয়েছিলো, রিসিভ হয়য়য় নি”পাখি ভয়ে পিছাতে পিছাতে ঘরের দরজায় গিয়ে পিঠে ঠেকে যায়।শান ওর দু পাশে হাত রেখে ভাবহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
“লেইম এক্সকিউজ! হাজার বার কল দিতে ইডিওট। আর তুমি না ধার্মিক মেয়ে এতো কিছু জানো এটা জানো না স্বামীর বিনা হুকুমে স্ত্রীদের বাড়ির বাহিরে পা রাখতে নেই?তাহলে আসলে কেন, বলো?”
শানের চোখে মুখে রাগের বিশাল স্তর বুঝতে পেরে পাখি চোখ দুটো বুজে কোণ বেয়ে চোখের জল ছেড়ে দেয়।

আসক্তি পর্ব ১১

শান সেদিকে চেয়ে আরেকবার হংকার ছেড়ে বলে,”ওটা না হয় মানলাম আমার মা হুকুম দিয়েছিলো। আজ?নির্লজ্জের মতো তিনটা গাধা ধেইধেই করে নদীর পাড় গেলা, আবার ফুসকা খাইতেও গেলা।একবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ হয়েছে তোমার।যদি কিছু হতো আজ, ব্লাডি ইডিওট কোথাকার?”
“অননননেক দিন পর তিনজনে এখানে….. ”

“কাঁদবে না একদম বলে দিচ্ছি।একদম ন্যাকা কাঁদবে না।আর কাঁদলেই নিচের ঠোঁট বার বার চেপে ধরতে হবে কেন?”-কথাগুলো যেন শানের গলায় দলা পাকিয়ে আসছে।
“আমমমি কি করবো,ভয় লাগছে আপনাকে।চোখ খুব লাল হয়েছে আপনার,ঘুমান নি!”
কথা শেষ হতে না হতেই শান নিজের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে নেয় পাখির ওষ্ঠদ্বয়ের সাথে।
পাখি ভাবতেও পারে নি শান হঠাৎ এমন কিছু করে বসবে।চোখ খুলে আসার উপক্রম তার।এদিকে নিজেকে খুব অবশ অবশ লাগছে।
“এভাবে কতোক্ষন থাকবে মানুষ টা “-বড় বড় চোখ করে ভেবে ওঠে পাখি

আসক্তি পর্ব ১৩