আসক্তি পর্ব ১৫

আসক্তি পর্ব ১৫
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“কি রে মা এভাবে চলে এলি! জামাই কই?”
“তুই সুস্থ্য আছিস তো”
“কি রে কিছু বলছিস না কেন, সব ঠিকাছে তো!

মা বাবা ভাইয়ের কথার কোনই জবাব দিতে পারে নি পাখি।চোখের জল আড়াল করে দ্রুত উপরে উঠে যায়।দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হয় সার্জন সাহেব তার কাছে একটা ফোন করে না।বার বার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে পাখি।নিজেকে বড্ডো বেশি অসহায় লাগে ।চার দেয়ালের বাহিরে এখনো বের হয় নি সে।
সিম কোম্পানি গুলোও যেন পাখির অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে।বার বার টুং টাং শব্দে মেসেজ দিয়েই চলেছে আর পাখিও নিজের অজান্তেই অনেক আশা নিয়ে ফোনের কাছে চলে এসে;ব্যর্থ হয় সে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“মেয়েটার কি হলো বলোতো?এসেছে থেকে ঘরের বাহিরে বাহির হচ্ছে না।শানও তো কিছু বললো না।কাল থেকে ঘরের দরজাও খুলছে না, কিছু খাচ্ছেও না”-পাখির মা সোফায় বসতে বসতে বলে চলেছেন কথাগুলো।
“তোমার এই হেয়ালিমার্কা মনোভাব কি কখনো যাবে না?মেয়েটার মনে না জানি কতো ঝড় বইছে তুমি আমার কথার কোন গুরুত্বই দিচ্ছো না”

“ওদের সমস্যা ওদেরকেই মেটাতে দাও রাশিদা।আর একটা কথাই মাথায় রাখো শান আমাদের মেয়েকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না “-চা’র কাপে চুমুক দিতে দিতেই নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জবাব দেন পাখির বাবা।
দেখতে দেখতে দুইদিন চলে যায় অথচ সার্জন সাহেবের কোন খবর নেই।যে মেয়ে সারাটা দিন ফোনের ধারে কাছেও যেতো না ফোন দিয়েও খবর হতো না সে আজ বাথরুমে গেলেও যেন ফোন সাথে করে নিয়ে যায়।দুইদিনের দূঃচিন্তায় চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে মেয়েটার।
খেতে বসলেও নেড়ে চেড়ে ছেড়ে যায়।ঘরের কোণে একা বসে বসে থাকে।

“এই সময়ে উনি অফিস থেকে ফেরে।কি করছে এখন সে?”
“আমাকে দেয়া সেই রাত টা কি তার মনে আছে যেদিন ওতোগুলো গাছ উপহার দিয়েছিলো!”
“সেদিন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম,সে কথাও কি তার মনে নাই!কি করে পারলো সবটা ভুলে যেতে”
“আচ্ছা আমি এসব কেন ভাবছি?ভাববো না এসব কথা বদ লোক একটা।থাকুক নিজের মতো।”-হাজারও আবোল তাবল ভাবনা আজ পাখির মগজে গিজগিজ করছে।

খেতে বসলেও শানের কথা মাথায় আসে,ছাদে গেলেও শানের কথা মনে ওঠে। এখন তো বাড়ির প্রতিটা কোণাতেও শানের শরীরের ঘ্রান খুঁজে পায় পাখি।খুব নিঃশ্ব লাগে নিজের। দম বন্ধ হয়ে আসছে পাখির।
“এমন কেন হচ্ছে আমার!আমি তো নিজেই চাইতাম না তার সংস্পর্শ তাহলে আজ কি হলো আমার।মনে হচ্ছে তিনি ছাড়া শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে”-পাখি নেশাগ্রস্থদের মতো এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।কোন উপায় পাচ্ছে না।

বাধ্য হয়ে শ্বাশুরির কাছে ফোন দেয়। কুশল বিনিময় করে কিন্তু শানের কথা জিজ্ঞেসা করার সুযোগ হয় না। তার আগেই কল কেটে যায়।
ফেসবুকে লগ ইন করে শানের প্রোফাইল চেইক করে।সেখানেও এক্টিভ পায় না তাকে।হতাশ হয়ে অফলাইনে চলে আসে। সবকিছুই বিরক্ত লাগছে পাখির কাছে।
রাত তখন ১২ টা। দিনটা কোনমতে কাটাতে পারলেও রাতের বেলা শানকে ছাড়া তার কিছুই মাথায় আসছে না।শেষমেষ সব জল্পনাকল্পনাকে পাশে রেখে শানের নম্বরে কল করে।একবার রিং যেতে না যেতেই রিসিভ হয় কলটা।

“হ্যালো, ডক্টর শান স্পিকিং…হু’জ দেয়ার”
“আমার নম্বরটাও সেইভ করা নেই তার ফোনে! ছিহহ,আর আমি কিনা তার জন্যে মরিয়া!আর দিবো না কখনো ফোন “-ভাবতে ভাবতেই পাখি কলটা কেটে দেয়।
শানের ব্যবহারে দুচোখের কোণ ঘেষে জল গড়িয়ে পরছে অজান্তেই।ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছে না সে।সারারাত নির্ঘুম কাটাতে হয় পাখিকে।

এদিকে তিনদিন পর পাখির ফোন পেয়ে শান অনেক বেশি খুশি আজ।ভাবতে থাকে তিনদিন আগের কথা।
সেদিন নীরার চেস্বার থেকে বের হবার পর ঢাকা থেকে আর্জেন্ট কল আসে বাৎসরিক মিটিং এবং ট্রেইনিং এর জন্যে।যেটা প্রতি বছরেই ক্লিনিক থেকে আয়োজন করা হয়।দেশ বিদেশ হতে অনেক হার্ট সার্জনরা আসেন সেখানে। মিটিং এর ডাক পরায় পরদিনই ব্যতিব্যস্ত হয়ে বেড়িয়ে পরে শান।

“সেদিন যদি মিটিং এর তাড়া না থাকত হয়ত তোমায় ছেড়ে দুটো দিনও থাকতে পারতাম না পাখি।নীরার ট্রিটমেন্টটাও চালাতে পারতাম না।আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যেই করে।পাঁচদিনের মিটিং। অলরেডি ৩দিন চলে গেলো। দেখি বাড়ি পৌঁছে আল্লাহ্ ভালো কি রেখেছেন”-ভাবতে ভাবতেই দুহাত মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে শান।

সকালের প্রতিটা আভা যেন পাখির চেনা।এখন তো সব রাত চোখ খোলা রেখেই ভোর হয়ে যাচ্ছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাখি ভাবে,”জীবন টা তো এমন ছিলো না!কেন তাকে ছাড়া থাকতে পারছি না!”মনে হচ্ছে সে ছাড়া আমার জীবনে কেউ নেই।আর ভাববো না তার কথা থাকুক নিজের মতো ভালো।”-এভাবেই নিজের মনকে শান্ত করতে থাকে পাখি।
“পাখি, কই রে ”
“হ্যা ভাবি”

“কি হয়েছে বলোতো,শানের সাথে ঝগড়া হয়েছে?”-পাখির পাশে বসতে বসতে জানতে চায় পাখির ভাবি
“না ভাবি কিছু হয় নি, তেমন কিছুই হয় না।”
“আরে বলো না, আমিই তো নাকি!”
এরপর পাখি আর কোন কথা বলার ভাষা পায় না।হুহু স্বরে কেঁদে ওঠে।পাখির হঠাৎ এমন অবস্থা দেখে ভাবি হতভম্ব হয়ে যায়।কি বলবে বুঝতে পারে না।পাখির থেকে সবটা শুনে হেসে ফেলেন তিনি।
“ওহহহ এই কথা, আগে বলবা না?”
পাখি কিছু না বলে চোখের জল মুছতে ব্যস্ত।
“তুমি বরং ফোন করো শানকে।আমার মনে হয় সে তোমার সাথে মজা করছে।আর ননদিনী তুমি তো ডাক্তার সাহেবের প্রেমে পড়েছো গো, হুমমমম!”
পাখি এবার পুরোই থ মেরে যায়।

“প্রেম তাও আমি?এও মানতে হবে?অসম্ভব।ওসব প্রেম ট্রেম আমার দ্বারা হবে না”
“এই কি এতো ভাবছো, শানকে ফোন করে কথা বলে সবটা মিটিয়ে নাও।দেখবে তোমার নিজেকে অনেক হালকা লাগছে।”-বলেই উঠে যায় পাখির ভাবি।
এদিকে পাখি ভাবির কথাগুলো মনে মনে ভাবছে।সত্যিই কি প্রেমে পড়ে গেলাম!
আবারও দিন গড়িয়ে রাত হলো।পাখির মনে যেন শান জেকে বসেছে। কিছুতেই কিছু ভালো লাগছে না পাখির।আজ আবারও সকল লজ্জা ভুলে ফোন দেয়।একবার কেটে যায় কলটা। আবার কল করে পাখি।

“হ্যালো ডক্টর শান স্পিকিং, হু’জ দেয়ার?”
পাখি নিশ্চুপ।নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না
“হ্যালো, হ্যালো কে বলছেন? ”
” আমি”
“হু’জ আমি?”
পাখি এবার নির্বাক চোখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থাকে।
“পাখি”

“ওকে,তা কি মনে করে হঠাৎ।আমার কাছে কোন দরকার আছে বলে তো আমার জানা নাই”
…..পাখির এবার কান্নার বাঁধ ভেঙ্গে যায়।জোড়ে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”দরকার আছে মানে একশ বার আছে, হাজার বার আছে”-বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে
শানের বুকে যেন কয়েকশ মন ভারি হাতুরি দিয়ে কেউ বারি দিচ্ছে।চোখ মুখ খিঁচে পাখির কান্না সহ্য করে যায়।

“তা কি দরকার বলবা তো? তুমি তো নিজেই আমার সাথে থাকতে চাও না।তাই তো রেখে আসলাম। আফটার অল, কাউকে তো আর জোড় করে সংসার করানো যায় না।তুমিই বললে নতুন কাউকে নিয়ে সুখে থাকত, তারই চেষ্টা করছি। আর আজ তুমি কথা পাল্টাচ্ছো মানে”-বহু কষ্টে শান গড়গড় করে কথাগুলো বলে
পাখি আবারও কিছু বলতে পারে না।ফোনের ওপাশ থেকে শুধু হালকা স্বরে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে
“আমি ভীষণ ব্যস্ত আছি। কিছু বলার থাকলে বলো নয়ত কল কাটো”-বলেই শান চুপ করে থাকে।কিছুক্ষন পর পাখি কলটা কেঁটে দেয়।

“লোকটা এতোটা বদলে গেলো?তার বদলটা কেন সহ্য হচ্ছে না আমার!কেন দম আটকে আসছে।আমি তাকে ছাড়া কেন থাকতে পারছি না?আমার কেন পৃথিবীতে এক মূহূর্তও আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না?এতো কেন’র উত্তর কোত্থেকে পাবো আমি”-বলেই হাঁটুতে মুখ গুজে অঝোর ধারায় কেঁদে ফেলে পাখি।আরেকটা নির্ঘুম রাত কেটে যায়।

এ কয়দিনে পাখির অবস্থা বেশ অনেকটাই খারাপ হয়ে গেছে।যেকেউ দেখলেই তাকে নেশাখোর বলতে দ্বিতীয় বার ভাববে না।ঘুমহীন কয়টা রাত কেটে গেলো, কার জন্যে ঐ মানুষটার জন্যে যাকে কখনোই সহ্য করতে পারতে না পাখি।

“তাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না। পারব না মানে পারব না।এতো টা সাহস কি করে হয় আমারে ছেড়ে দেয়ার।খুন করে ফেলব তাকে আমি”-চোখের পানি মুছে রাগে গজগজ করে ওঠে পাখি।
“আজ যদি উল্টা পাল্টা কথা বলে তবে আমিও ছাড়ব না।যদি না করতে পারি তবে আমার নামও পাখি নয় হুহহ”-বলতে বলতেই আবারও ফোন করে শানের কছে।

“হ্যালো”
শানের হ্যালোতেই যেন আটকে গেলো পাখি।ফুফিয়েই কান্না জুড়ে দেয়।
“কিছু বলবা পাখি?”-শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে শান।
“আমায় এসে নিয়ে যান।”-বলেই কেঁদে ফেলে
“তুমিই তো বলেছো সংসার করবা না।অনেক তো হলো পাখি এবার আমাদের আলাদা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ”
অনবরত কেঁদেই চলছে পাখি।
“তেমন কিছু না আমায় হয়ত একটু মনে পড়ছে।পরে ঠিক হয়ে যাবা।রাখো কাজ আছে আমার।আর ফোন টোন দিও না, বিরক্ত লাগে”

শানের শেষের কথায় পাখির দূঃখে কষ্টে চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পরছে।
“মানুষটা এতো এভোয়েড করছে তারপরেও তাকে ভুলতে পারছি না।মনে হচ্ছে আরো কাছে যাই।এরকমটা ভালো লাগছে না। “-ভাবতেই কঠিন বেগে কান্না চলে আসে।
“আই নিড ইউ শান।আই রিয়্যেলি নিড নিউ”-কথাটা শানের কর্ণকুহরে পৌঁছায়।থমকে যায় শান।হাত পা কাঁপছে তার।তবুও না শোনার ভান করে কলটা খট করে কেটে দেয়।
ফোন হাতে নিয়ে আবারও কেঁদে ওঠে পাখি।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় পাখির মন আরও বেশি খারাপ হতে থাকে। সাথে শরীর টাও।পাখি মনকে বুঝায় আর কখনো শানের সাথে যোগযোগ করবে না সে।তাকে ভুলেই বাঁচবে সে।আর যাই হোক নিজের আত্মসম্মানকে খোয়াবে না ।
এদিকে পাখির শেষের কথাটা বার বার শানের কানে রিপিট হচ্ছে।খুশি যেন উপছে পরছে। মিটিং কম্পিলিট করে বিকেল বেলাতেই পাখিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়ি ঘোরায়।

পাখি জোড় করে আজ অনেক খাবার খেয়েছে।শানকে ভুলতে সে সবরকম কাজ করছে।বাড়ির সব রান্না সে করেছে।তা বাদেও অন্যান্য সব কাজ করেছে সে। ঘুমানোর উদ্দেশ্যে নিজের ঘরে ঢুকে শানের একটা টি-শার্ট নজরে পরে।দম টা যেন বন্ধ হবার উপক্রম।সারাদিনের পুষে রাখা সমস্ত কষ্ট এবার আবারও কান্না হয়ে ঝড়ে যায়।টি-শার্ট জড়িয়ে কেঁদে দেয়।
ঘড়ির কাটার টিকটিক আওয়াজ খুব বিরক্ত লাগছে তার।ঘুম আসছে না দুচোখে।সজাগ সটান হয়ে ফোনে শানের ছবি বের করে জুম করে করে দেখছে পাখি।

“কবে এতোটা কাছে আসলাম আপনার?আজ আমার একটা দিনও আপনাকে ভুলে পার হচ্ছে না।কি করলেন আমায়”-বলে আবারও কেঁদে ফেলে
ঘড়িতে তখন ২ টা ৩০ মিনিট। পাখি ওজু সেরে নামাজে দাঁড়ায়।ভিতরকার সমস্ত কষ্ট এবার জায়নামাজে বসে বসে উগড়ে দেয় পাখি।
“হে আল্লাহ্,আমার সার্জন সাহেবকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।তাকে ফিরিয়ে দাও।আমি তার সাথে সংসার করব।”-হাজারটা কষ্ট জানিয়ে দেয় আল্লাহ্ র দরবারে।

নামাজ শেষ করতে ৩ টা ৩০ বেজে যায়।এরপরে গুটিসুটি হয়ে বসে পরে বিছানায়।চোখ মুখ ফুলে উঠেছে কান্না করতে করতে।বিছানার একপাশে রাখা ফোনটা হাতে নেয় সময় দেখতে। ফোন হাতে নিয়ে প্যাটার্ন খুলে পাখির চোখ ঝলমল করে ওঠে।লাস্ট মেসেজটা জ্বলজ্বল করছে হার্ট সার্জনের নামে।অনেক গুলো মিসড কলও এসেছে।তাও ১৫ মিনিট আগে।
“গেইট খুলে দাও গাধি।কতোক্ষন ধরে ফোন দিচ্ছি তোমায়, ফোন তুলছো না কেন?”
পাখির পুরো শরীর থরথর করে কাপছে।
“আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তব?”

নিজের বাস্তবিকতা প্রমান করতে দৌড়ে বেলকোনিতে গিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই চোখ পরে গাড়ির জানালার পাশে ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে শান পাখির বেলকোনির দিকে চেয়ে আছে।চাঁদনি রাতের ঝলমলে আলোয় শানের ফর্সা মুখটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।চেয়ে আছে অপলক বেলকোনির দিকে।শানের দিকে চেয়ে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে।কাল বিলম্ব না করে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে দৌড় লাগায়।

পাখির শরীর যেন অসাড় হয়ে আসছে।কিছুতেই চলছে না। সময় যেন আটকে আছে। উপরতলা থেকে রাস্তা যেন বিশাল দূরত্বের পথ মনে হচ্ছে।একটু দেরি হলে হয়ত শানকে হারিয়ে ফেলবে আবারও।চোখ মুচছে আর লম্বা লম্বা পা ফেলছে মেয়েটা।
এক সময় গেইট খুলে শানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।মনে হচ্ছে গত পাঁচ দিন থেকে অক্সিজেন নামোক জিনিসটা তার ধরাছোঁয়ার বাহিরে ছিলো।এই মূহূর্তে পৃথিবীর আর কোন চিন্তা ভাবনা পাখির মাথায় আসছে না।

“শুধু মনে হচ্ছে মানুষটা হারিয়ে যাবে তাকে বেঁধে রাখতে হবে আমার।আমার বেঁচে থাকার অঅবলম্বন সে”
টলমলে পায়ে অনুভুতিহীন হয়ে শানের দুকদম সামনে এসে দাঁড়ায়।
এদিকে পাখির অবস্থা দেখার পর শানের নিজের মাঝে বয়ে চলা ঝড় যেন জলোচ্ছ্বাস হয়ে চোখ দিয়ে বের হতে চাইছে।পুরো বাকরূদ্ধ আজ সে।পাখির নাজেহাল অবস্থা শানের ভিতর বাহিরে হাতুরি পেটাচ্ছে।

শানকে পুরো অবাক করে দিয়ে পাখি নিজের পায়ের গোড়ালি উঁচিয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরে শানকে।গলার দুপাশে দুহাত রেখে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় তার হার্ট সার্জন কে।একটু ছেড়ে দিলেই বুঝি উড়াল দিবে তার ডাক্তার।পাখির অতর্কিত কাজে শান টাল সামলাতে গাড়ির জানালার নিচে বাম হাত ঠেস দিয়ে ধরে আরেক হাতে পাখির কোমড় জড়িয়ে ধরে।কোন কথা বের হচ্ছে দুজনের মুখ থেকে।সুনসান নীরবতায় ছেয়ে গেলো শেষ রাত।থেকে থেকে পাখির হিচকি তুলে কান্নার শব্দ যেন কান ভারি করে তুলছে শানের।চোখ ভরে আসে তার।পাখিকে শান্তনা দেবার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না সে।

আসক্তি পর্ব ১৪

পাখি এবার শানকে আরো অবাক করে দিয়ে শানের গলায়, ঘারে,কানে,গালে, নাকে সারা মুখে অজস্র চুমু এঁকে দেয়।মনে হচ্ছে কতো বছরের হারানো সম্পদ সে খুঁজে পেয়েছে।পাখির এ অবস্থায় শান কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।চারিদিক থেকে হঠাৎ আজানের ধ্বনি কানে আসে।
“এভাবে বাহিরেই আদোর করবা নাকি ঘরেও ঢুকতে দিবা!আমার কিন্তু এবার ভয় করছে পাখি!
“কিসের ভভভয়?””
“না না ভুতের ভয় না, তোমার ভয়।তুমি রাস্তার ধারেই যা শুরু করলে কখন না জানি কামড়ে খেয়ে ফেলো আমায়”

ফিক করে হেসে দেয় পাখি।তারপর দুজনে বাড়ির ভিতর ঢুকে পরে।
দুজনেই অজু সেড়ে নামাজ টা পড়ে নেয়।এরপর শানের বুকে মাথা রাখে পাখি।পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ স্থান এটাই মনে হচ্ছে তার কাছে।এতোদিনের সমস্ত কষ্ট, নির্ঘুম কাটানো প্রতিটা রাত সব যেন প্রশান্তির ঘুম হয়ে ধরা দিতে চাইছে তার কাছে।গভীর আবেশে চোখ বুজে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় পাখির চঞ্চল দুটো চোখ।

“আজ কতোটা কাছে আছো, তবু তোমায় প্রান ভরে কাছে টানতে পারছি না। এতোগুলো দিন তোমায় ছেড়ে আমিও ভালো ছিলাম না সোনাপাখি।কিন্তু এটা যে করতেই হবে।তোমায় যে একটু এভোয়েড করতে হবে আমাদের ফিউচারের জন্যে।তোমার অসুস্থতা জড়িয়ে না থাকলে তোমায় কষ্ট দেবার কথা কোনদিনও ভাবতাম না।জানি না আরো কতোটা কষ্ট দিতে হবে তোমায়।”-ভাবতে ভাবতেই শান পাখির কপালের চুল গুলো এক হাতে সরিয়ে কপালে গাঢ় চুমু এঁকে দেয়।এরপর দুহাতে শক্ত করে নিজের মাঝে মিলিয়ে নেয়
এদিকে পরম আবেশের উষ্ণ পরশে বিড়াল ছানার মতো মিইয়ে শানের বুকের মাঝে লুকিয়ে যায় পাখি।

আসক্তি পর্ব ১৬