আসক্তি পর্ব ১৬

আসক্তি পর্ব ১৬
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“পাখি, মা দরজা কেন খুলছিস না?এতো বেলা করে তো কখনো ঘুমাস না তুই। কি হলো বলবি তো! “-মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখির।চোখ যেন খুলতেই চাইছেনা আজ। দূঃচিন্তার স্পষ্ট ভাব মায়ের কন্ঠে।মেয়ের মনটা ক’দিন ধরে খুব অন্যমনস্ক এক্ষেত্রে মায়ের দূঃচিন্তা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
পিটপিট করে চোখ খুলে পাখি নিজেকে শানের বুকের মাঝে আবিষ্কার করে।আস্তে করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে পাখি মা কে জবাব দেয়,”আসছি মা”

যাতে শানের ঘুম ভেঙ্গে না যায়।রাশিদা বেগম কিছুক্ষন বিড়বিড় করে চলে যায়।পাখি মাথাটা তুলে শানের মুখের দিকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করে।কপালের উপর নেমে আসা চুল গুলো আলতো হাতে সরিয়ে দেয়।নাকের ডগাটা একটু আস্তে করে চিপে ধরে।এতে শান নড়েচড়ে উঠে কিন্তু ঘুম ভাঙ্গেনা। পাখি মুখ টিপে হালকা হেসে আবারও শানের মুখে আঙ্গুল দিয়ে এটা সেটা পর্যবেক্ষণ করে।এরপর ধীরেধীরে শানের ঠোঁট দুটোর উপর নিজের ডানের হাতের আঙ্গুল গুলো ছুঁয়ে দেয়।ঘুমের ঘোরেই কেপে ওঠে শান।চোখ খুলে পাখিকে চেয়ে দেখে সে।আর পাখি লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেলে শানের লোমশ বুকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শান আলতোভাবে পাখিকে সরিয়ে দিয়ে নিজে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় আর মনে মনে বলে,”সরি জানপাখি, আমি জানি এই সকালটা কতো মধুর হতে পারতো।হয়ত তুমিও তাই চেয়েছিলে কিন্তু আমি ব্যর্থ আজ”
এরপর পাখির দিকে আড়চোখে দেখে পাখির থমথমে মুখটা।শান দুএকবার দেখে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে ফোনটা হাতে নেয়।

“আপনার মেডিকেল নেই আজ, ১০ টা তো বাজতে চললো!”-অভিমানী স্বরে ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে জানতে চায় পাখি।
শান ফোনের দিকে তাকিয়েই জবাব দেয়, ‘আজ ছুটি।আগামি ৩ দিন ছুটিতে আছি।বেশি দেরি করো না।আমরা সকাল বেলাতেই রংপুর পৌঁছাব।”

শানের এমন খাপছাড়া ব্যবহার পাখির মেনে নিতে বড্ডো কষ্ট হচ্ছে। শানের কথার পিঠে কোন কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দুজনে নাস্তার জন্যে নিচে নামে।
সিঁড়ি বেয়ে শানকে নিচে নামতে দেখে অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে রাশিদা বেগম।পাখির বাবা শফিক সাহেব একবার সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রাশিদাকে বলেন, “আরো দুইটা রুটি দাও”

রাশিদা বেগম থতমত খেয়ে শফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে কাজে মনোযোগ দেয়। বুঝতে বাকি থাকে না যে মেয়ের ঘরের দরজা আজ কেন ৯ টা অবধি বন্ধ ছিলো।আনমনেই হেসে ফেলেন তিনি।
শানের পিছে পিছে পাখিও এসে ডায়নিং এ বসে।ভাবির দিকে চোখ পড়তেই চোখ টিপে দেন সে। লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় পাখির।কি রকম একটা অবস্থা।
শান চেয়ারে বসতে বসতেই সালাম দেয় সকলকে।শফিক সাহেব কুশল বিনিময় করেন।ও বাড়ির সকলের খবর জানতে চান।

“বাবা আমি ঢাকা থেকে ডিরেক্ট এখানে চলে এসেছি।বাড়ির সবাই কেমন আছে জানি না আসলে।”
পাখি যেন আসমান থেকে পরে। খাওয়া রেখে শানের দিকে আড়চোখে তাকায়।শান সেদিকে একবার চেয়ে আবার রুটির একটা টুকরা মুখে পুরতে পুরতে বলে, “কাল সকালের দিকে মায়ের সাথে কথা হয়েছে ;ভালোই আছে।

“এই লোক ঢাকা গেছিলো? তারমানে নিশ্চই কোন কাজে;ব্যস্ত ছিলো! আর এদিকে আমি এমনি এমনিই কতো কষ্ট পেলাম”-মনে মনে ভাবতেই রুটির একটা টুকরো মুখে দেয় পাখি।
রাশিদা বেগম আগ্রহ ভরে জানতে চায়, “দুপুরে কি খাবে বাবা?”
“মা, আমি পাখিকে নিয়ে একটু পরই রওনা হবো।তাই খাবার নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই”-পাখির দিকে চেয়ে কথাগুলো বলে শান।পাখি বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে এসব!

“আপনি ঢাকা গেছিলেন আমায় মিথ্যে কেন বলেছিলেন”-রুমে ঢুকে প্রশ্নাতুর চোখে তাকিয়ে থাকে পাখি।শান ড্রেসিং টেবিলের সামনে রেডি হচ্ছে।পিছনে ঘুরে চোখ ছোট ছোট করে পাখির সামনে এসে দাঁড়ায়
“আমি কখন মিথ্যে বলেছি?”
“আপনি আমায় ঐদিন হুট করে রেখে গেলেন আমি ভাবলাম রাগ করে রেখে গেছেন আর আপনি রংপুরেই আছেন কিন্তু আপনি তো…..”
“আমি তো কি? একবারও তোমায় মিথ্যে কিছু বলেছি? নিজে নিজেই ভেবে বসে আছো”-কিছুটা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে ওঠে শান।
“এভাবে কেন কথা বলছেন? এমন তো ছিলেন না আপনি। আর….!
“আর?”

“নাহহ, কিছু না”-বলেই চলে আসতে নিলে শান ওর বাম হাত টা টেনে পিছনে ভাঁজ করে ধরে পাখিকে ওর সামনে দাঁড় করায়।
“আমি আধা-আধুরা কথা যে পছন্দ করি না তা এতোদিনে তোমার জানা কথা”
“ছাড়ুন, লাগছে তো”
শানের চোখে প্রগাঢ় ভালোবাসা আর ব্যবহারে কাঠিন্য প্রকাশ পাচ্ছে। পাখি শানের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে,”কাল আপনি ঢাকা থেকে এতোদূর এসেছেন কেন তাও শেষ রাতে?”

শান পাখির চাহনীর বিপাকে পরে যাচ্ছে। চট করে পাখিকে ছেড়ে বিপরীত পাশে ফেরে
“তুমিই তো পাগোল হয়ে যাচ্ছিলে।প্রতিদিন ফোন করে বিরক্ত করো।কান্না কাটি করো। তুমি নাকি নিয়মিত খাচ্ছো না, ঘরের বাহিরে যাচ্ছো না, মানে তুমি নাকি দেবদাসি হয়ে যাচ্ছিলে তাই ইচ্ছে না থাকলেও এসেছি এই আর আরকি!আর কিছু??”-শান ভাবলেশহীন ভাবে কথাগুলো বলে ফোন, হাত ঘরি নিয়ে চশমা টা পরে নেয়।

“পাঁচ মিনিট সময়, রেডি হয়ে নাও”
পাখি শুধু ভেবেই চলেছে, “কেন উনি আমায় রেখে গেলেন, ঢাকা গেলেন তাও বললেন না আর এখন কেমন যেন ব্যবহার করছে!”
“মাত্র পাঁচ মিনিট পাইছো কিন্তু”-পাখির মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে শান।
পাখি কিছু একটা ভেবে পিছন থেকে শানকে জড়িয়ে ধরে করুন কন্ঠে প্রশ্ন করে, “এমন কেন করছেন?”
শান কোন উত্তর দিতে পারে না।চুপচাপ পাখির হাত দুটো আলগা করে দেয়।

“তোমরা কখন আসছো কখন যেন আবার বেরিয়ে যাচ্ছো কিছুই তো বুঝতেছি না”-শান আর পাখি দুজনে সবেমাত্র ড্রয়িং রুমে পা রেখেছে,তখনি সামিহা ওদের সামনে আসছে আর কথাটা বলছে”
“সংসারের সাথে যাদের যোগসূত্র নেই। তারা সংসারের সদস্যদের খোঁজ রাখবে কি করে ভাবি!”-বলেই শান পাখির দিকে এক নজর তাকিয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।
সামিহা তীক্ষ্ণ চোখে শানের যাওয়ার দিকে চেয়ে মনে মনে বলে ওঠে,”তোমার এই ট্যাগর ট্যাগর কথা আমি একদিন ছুটিয়ে দিবো শান”

পাখি শ্বাশুরি মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করে উপরে উঠে আসে।তার চোখ এখন চারিদিকে শুধু শানকেই খোঁজে।শানই যেন চোখের প্রশান্তি।
আজ ছুটির দিন, শান বাড়িতেই থাকবে।তাই শানের পছন্দের সব খাবারের আয়োজন করেছে পাখি নিজের হাতে।কয়েক পদের পিঠাও করেছে।দুপুরে ডায়নিং টেবিলে এতো খাবারের সমাহার দেখে শানের চোখ ছানা বড়া।শান একে একে সব টেষ্ট করছে তবে পরিমানে একদম কম।তার ভাষ্যমতে আহার সবসময় পরিমিত গ্রহন করা উচিত ;তা সে যতো প্রিয়ই হোক।

“আজ সব রান্না, পিঠা, পায়েস ছোট বউমা করেছে শান।কেমন হয়েছে বললি না তো?”
“হুম ভালো ”
শানের কথায় পাখির মুখটা মলিন হয়ে যায়।
“মানুষ টা তো এমন ছিলেন না, কি হলো হঠাৎ”-ভাবতেই হঠাৎ চোখ পড়ে শানের দিকে। শানও তাকিয়ে আছে ওর দিকে।পাখি অভিমান করে নিজের রুমে চলে আসে।
শানও খাওয়াটা কোনমতে শেষ করে দ্রুত উপরে উঠে আসে।এসে দেখে পাখি কোথাও নেই। বেলকনিতে খেয়াল হয় গ্রিল ভেদ করে বাহিরের আকাশ দেখছে সে।

“তোমায় এ অবস্থায় দেখে আমার একদমই ভালো লাগছে না আর না ভালো লাগছে তোমার সাথে মিসবিহেব করতে।কিন্তু আমি নিরুপায় জানপাখি”-ভাবতে ভাবতেই খুব ধীরস্থীর ভাবে পাখির পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।পাখি চট করে ঘুরতেই শানের বুকের সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নেয়।শান ওকে আটকে নেয়।পাখি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শানকে।
“দেখে চলতে পারো না, এতো গায়ে পরা স্বভাব কেন তোমার?”
“কিহহহ আমার গায়ে পরা স্বভাব!”
“তোহ কি আমার!”

“আপনি ইদানিং একটা খাটাশে পরিনত হচ্ছেন, বদ লোক কোথাকার “-বলতে বলতেই পাখি চলে যেতে চায়।শান তাকে আটকে ধরে গ্রিলের সাথে চেপে ধরে। এরপর পাখির কাঁধের কাছে মুখ এনে চুপ করে থাকে কিছুক্ষন। অভিমান ভরা মন নিয়ে সরে আসতে চাইলে পাখির কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় শান।চমকে ওঠে সে।
এক পা ও নাড়ানোর সক্ষমতা খুঁজে পায় না পাখি।কাঁধের উপর শানের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে।

নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার সংস্পর্শে। চোখ বন্ধ করে শাড়ির আঁচল চেপে ধরে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শান গভীর চুমু এঁকে দেয় পাখির কাঁধে, ধীরেধীরে গলায়।অজানা অনুভূতি এসে জেঁকে ধরে শানকে।এই মূহূর্তে ডক্টর নীরার কথা বেমালুম ভুলে যায় শান।পাখিকে খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে তার।কারোর মুখে কোন কথা বেরোচ্ছে না।

“ভাবি আসব? “-দরজায় টিনার নক করার শব্দে সিটকে সরে আসে শান।
“কি করে ভুলতে পারলাম নীরার কথা।নীরা তো…”-ভাবতেই পাখির দিকে চোখ পরে।চোখ ভরা জল মেয়েটার। মনে হচ্ছে একটু পলক ফেললেই গড়িয়ে পরবে।পাখির কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।চোখ সরিয়ে নিয়ে কাটাকাট গলায় বলে,”দরজায় টিনা এসেছে।শুনো গিয়ে ডাকছে কেন”
পাখি বিপরীতে ফিরে চোখের জল টা বুড়ো আঙ্গুলে মুছে টিনার কাছে চলে যায়।

“আমি কি করব বুঝতে পারছি না।পাখিকে তো পুরোপুরি সুস্থ্যই মনে হচ্ছে। ও তো এখন আর ছটফট করে না, অস্থিরতা নেই ওর মাঝে।মনে তো হয় পাখি সম্পর্কটাকে আগাতে চাচ্ছে।কিন্তু নীরা যে বললো এসব করতে! উফফ,কেমন করে পাখিকে দূরে সরিয়ে রাখব আমি!”-খাটের কোনায় বসে মাথা নিচু করে দুহাতে নিজের চুল মুঠো করে ধরে মনে মনে কথাগুলো আওরাতে থাকে শান।
হঠাৎ চোখের সামনে একজোড়া পা এসে দাঁড়ায়।মাথা নিচু রেখেই বুঝতে পারে পা জোড়া পাখির।কিন্তু মাথা তুলে না।পাখিও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।কিছুক্ষন পর শান মাথা তুলে তাকায় পাখির মুখের দিকে।

“উঠুন”
“মানে?”
“মানে বিছানা ছেড়ে মেঝেতে পায়ের উপর দাঁড়াবেন।বাংলা কথা বুঝেন না?”
শান অগত্যা দাঁড়িয়ে পরে।পাখি চট করে শানের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।
“সরি সার্জন সাহেব,আমি আর কোনদিনও আপনাকে ছেড়ে যাবো না।সংসার করতে চাই আপনার সাথে”-কান্না কান্না ভাব নিয়ে পাখি বলে।
পাখির কথায় শান খুব খুশি হয়।আবেগে পাখিকে জড়িয়ে ধরতেই হাত দুটো থেমে যায় শানের।পাখি বুঝতে পেরে শানের হাত দুটো নিয়ে নিজের পিঠ জড়িয়ে ধরায়।শান আর বাঁধা দিতে পারে না।

রাতে ডিনার সেড়ে পাখি ঘরে এসে দেখে সার্জন সাহেব ল্যাপটপে ভিডিও কনফারেন্সে ব্যস্ত।পায়ে এক প্রকার বিরক্তিকর শব্দ তুলে পাখি ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারী করছে।মূলত সে চাইছে শানের দৃষ্টি আকর্ষন করতে।শান দু একবার ওর দিকে দেখে আবারও কলে মনোযোগ দেয় কিন্তু কল বন্ধ করে না।
আবারও পাখি নিজের কাজে মন দেয়।
ল্যাপটপ বন্ধ করে বিরক্ত হয়ে শান বলে, “কি কি কি হইছে টা কি?হোয়াট’স ইওর প্রবলেম ড্যাম ইট!দেখছো না কলে আছি”

বলে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
“ডক্টর সার্জন এতোদিন আপনার অনেক খেলা দেখেছি, নাউ ইট’স মাই টার্ন।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ”-মনে দুষ্টু বুদ্ধি আনে পাখি।এরপর শানের কোল থেকে ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে কল কেটে বন্ধ করে রাখে।
“হোয়াট দ্যা……… ”
এরপর শানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার বুকের উপর মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে।
শান হতভম্ব বনে যায়।

“আপনি কলে কথা বলছেন, আমি ঘুমাবো না?”-শানের বুকের লোমে বিলি কেটে পাখি বলে।
“তো আমি কি নিষেধ করেছি ঘুমাতে”
“আপনার পটরপটরে কার ঘুম আসবে?”
“পাখি আমার মিটি……”
পাখি ডান হাত টা শানের ঠোঁটের উপর রেখে ওকে থামিয়ে দেয়।কিছুক্ষন পর পাখি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।পাখির নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। শান বুঝতে পেরে ঠোঁটের উপর রাখা হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে এপিঠ ওপিঠ চুমু দেয়।তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কপালের চুল সরিয়ে কপালে চুমু দেয়।

“পাখি আগামিকাল থেকে স্কুল কলেজ সব খুলবে।তোমাদের কারমাইকেলও খুলবে।কি করবা এ বাড়ি থেকে পড়বা নাকি মেসে থাকবা?যদি মেসে সুবিধা মনে করো তো মেসে থাকো।চয়েজ ইওর.”
সকাল সকাল কলেজের কথা শুনে পাখির মনটা খুশিতে ভরে উঠলো।সেই যে ভর্তি হলো আর তো কলেজ যাওয়া হলো না।

“মেসে কেন থাকব আমি? আমার শ্বশুর বাড়ি এখানে আমি মেসে থাকব কেন?”
“সেটাই “-বলেই শান ঘর থেকে বের হয়
“কই যান? ”
ঘাড় ঘুরিয়ে শান জবাব দেয় “নিচে”
“না গেলে হয় না! না মানে সবে মাত্র নাস্তা করলেন তো তাই ভাবলাম ঘরে থাকেন। এই আরকি!”-মুখে ফেইক হাসি টেনে জবাব দেয় পাখি।
শান দরজা থেকে পাখির কাছে ফিরে আসতে আসতে নেশাতুর চোখে বলে ,”ঘরে থেকে কি করবো?হুমমম?”

আসক্তি পর্ব ১৫

“এমনিই বলছিলাম। এভাবে আগাচ্ছেন কেন?”
শানের চোখে মুখে দুষ্টুমির ছাপ স্পষ্ট।বাঁকা হেসে পাখির একদম কাছে চলে আসে।
এক হাতে কোমড় জড়িয়ে নেয়। পাখি চোখ বন্ধ করে থাকে।
“এই মানুষটা কাছে আসলে এমন দুষ্টুমি করে আর দূরে থাকলে আরো দূরে থাকার চেষ্টা করে।আমার তো লজ্জা লাগছে এবার।কি করবো?ইস ঘরের মেঝেটা যদি ফাঁক হয়ে যেত, আমি ঢুকে পরতাম।তবু এতো লজ্জা থেকে বাঁচতাম”

“কি ভাবছো গাধি “-শানের কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে পাখি।
“ককিছু না কিছু না তো হেহেহেহে”-বলতে বলতেই শানের হাত দুটো সরাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
শান পাখির অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে মাথায় টোকা মেরে বলে,”রেডিকুলাস গাধি একটা”
“আপনাকে আর এক দন্ডও চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করে না সার্জন সাহেব।ইচ্ছে করে সারাক্ষন আপনাকেই দেখি”

“আমার দিকে ওভাবে না দেখে পারলে বই খুলে বই দেখো ইডিওট।অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস রেজাল্ট মাস্টার্সেও সেইম চাই।নইলে মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না”-
পাখি চমকে উঠে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
“পড়াশুনার প্রস্তুতি নাও।এক্সামের বেশি দেরি নেই”-বলেই শান ঘর ছেড়ে বাহিরে যায়।

আসক্তি পর্ব ১৭