আসক্তি পর্ব ৩০

আসক্তি পর্ব ৩০
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

জীবন কখনো সরল গতিতে চলে না, আর সরল গতিতে চললে তাকে ঠিক জীবন বলা চলে না।উত্থান-পতন লেগেই থাকে।সুখ দূঃখ একে অপরের পরিপূরক। ঋতু বদলের মতো আমাদের জীবনেও সুখ দূঃখের আগমন ঘটে।মাঝে মাঝে কালবৈশাখীর আগমন ঘটে।সবকিছুকে বিশ্বাস,ভালোবাসা আর ভরসার মাধ্যমেই অতিক্রম করতে হয়।

ওখান থেকে আসার পর পাখি যেন শানের প্রতি আরো বেশিই আসক্ত হয়ে পড়ে।একটা মূহূর্তও চোখের আড়াল করতে চায় না।সবসময় শানের কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছে করে।
পরদিন সকাল বেলা নাস্তার পর শান বেলকোনিতে বসে সিগারেটের ধোঁয়া টানছে।পাখি ঘরে আসেনি এখনো। এই সুযোগে একটু ছোঁয়া আর কি!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পাখি নাস্তা সেরে ওড়নার আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ঘরে ঢোকে। নাকে সিগারেটের উটকো গন্ধ আসতেই সেদিকে যায় আর ভাবে,”সিগারেটের গন্ধ কেন?কে সিগারেট খাচ্ছে এ ঘরে?”
এগিয়ে যায় বেলকোনির দিকে।চোখের সামনে শানকে দেখতে পায় বেলকোনির রেলিং এ হাত রেখে নিচে কিছু একটা দেখছে আর দ্রুত সিগারেটে ফু দিচ্ছে।গন্ধে আর ধোঁয়ায় বেলকোনির বাজে অবস্থা।পাখির রাগে যেন গা রি রি করা শুরু করছে।

“উদ্ভট কিছু করতে হবে”-চোখ রাঙ্গিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।এরপর বালতিতে ভরে পানি এনে ঢেলে দেয় শানের মাথায়।হঠাৎ গায়ে পানির ঝাপটায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে শানের।হকচকিয়ে পিছন ফেরে।ভিজে জবুথবু অবস্থা তার।পুরো বেলকোনি ভিজে গেছে একদম।
“এইটা কি করলা”-হাতে সিগারেটের ভেজা প্যাকেটটা দেখিয়ে বলে শান।
পাখি টি-শার্টের কলার চিপে চোয়াল শক্ত করে বলে,”এসব কি? আপনি সিগারেট খান ছিহহহ?
পাখির রাগি মুখের দিক চেয়ে শান দুটো শুকনো ঢোক গেলে।কিছু বলতে পারে না।

“আপনি নামাজ পড়েন আবার সিগারেটও খান, এসবের মানে কি? আর আপনি না ডাক্তার তাও হার্টের! নিজেই তো জানেন সিগারেট কতোটা খারাপ জিনিস”-মুখের গাম্ভীর্যতা প্রগাঢ় করে বলে পাখি।
শান বুঝতে পারে ব্যপার টা পাখি সহজে মেনে নিতে পারছে না।রাগ উঠেছে পাখির।
“আমার কথা তো শুনো”-পাখির হাতদুটো দুহাতে চেপে বলে শান।
“কি শুনবো? সিগারেটের উপকারীতা কি সেটাই শুনব?”
“আরে তা বলেছি নাকি?”
“তো?”

“আসলে আমি তো চেইন স্মোকার নই, না!মাঝে মাঝেই একটু খাই যখন খুব অস্থির লাগে বা টেনশন জাগে”
“তা এখন কিসের অস্থিরতা আপনার বা কিসের দূঃচিন্তা শুনি একটু”
শান চট করে পাখিকে পিছনে ঘুরিয়ে নেয়।এবার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ ডোবায়।আস্তে আস্তে দাড়ি সমেত ভেজা মুখটা পাখির কাঁধে রেখে আলতো ঠোঁটের স্পর্শ দেয়।
জবাব দেয় শান,”তোমার জন্যে,তোমার নেশায় আসক্ত হয়েছি”
কেপে ওঠে পাখি।দুহাতে চেপে ধরে ওড়নার আঁচল।শানের স্পর্শের গতি বেড়ে যায়।কারো মুখে কোন কথা নেই।নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে পাখির।কাপা কাপা স্বরে বলে,”এসব কি হচ্ছে আমার গা ভিজে যাচ্ছে তো!”
ঘোর লাগা কন্ঠে শান জবাব দেয়,”ভিজুক”

“আমি তো এখনো….”
শান এবার কোন উত্তর দেয় না।কোলে তুলে নেয় পাখিকে।শানের নজরে ঘোরলাগা নেশা পাখির নজর এড়ায় না।গলা জড়িয়ে নেয় শানের।হঠাৎ মাথার উপর বৃষ্টির ফোটার স্পর্শে ধ্যান ভাঙ্গে পাখির।চারিদিকে তাকিয়ে দেখে ওয়াশরুমে আছে ওরা। শান একহাতে শাওয়ার ট্যাপ চালু করে তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“কি করছেন এসব, ছাড়ুন।সকাল সকাল কেন ভেজালেন আমায়?বজ্জাত লোক একটা!”-হকচকিয়ে উঠে পাখি কোল থেকে নামার চেষ্টা করে। শানের কোনই হেলদেল নেই পাখির কথায়।

সে এবার শক্ত করে কোলে জড়িয়ে বাথটবের পানিতে আকষ্মাত শুইয়ে দেয় পাখিকে।নাকে মুখে হঠাৎ পানি ঢুকে চোখ বড় বড় করে তাকায় শানের দিকে।শান কোমড়ে হাত রেখে রেখে খিলখিলিয়ে হাসে।হাটুঁতে দুহাত রেখে সামান্য ঝুকে এসে পাখির কানের কাছে মুখ এনে বলে,”জান তুমি যে অসুস্থ্য তা আমি জানি। কিন্তু আমার ছোঁয়ায় তুমিই সেটা ভুলতে বসেছিলে।তাই তোমার ঘোর টা কাটালাম।”

বলেই চলে আসতে চায় শান, পিছন থেকে টেনে তাকেও পানিতে ভিজিয়ে পাখি বলে,”টিট ফর ট্যাট”
এবার বলেন সিগারেট কবে ছাড়ছেন?
শান পাখির ভেজা চুল গুলো দুহাতে চিপে পানি ঝড়িয়ে বলে,”তুমি যখন বলবা ”
“এক্ষুনি”
“ওকে দেন। “-এরপর ভেজা শরীরে জড়িয়ে নেয় পাখিকে।
“মেডিকেল নাই আজ?”
“শুক্রবার তো”
এরপর দুজনে ভেজা কাপড় বদলে নেয়।পাখির চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।শান তার মুখের সামনে এসে তোয়ালে আর নিজের মাথাটা এগিয়ে দেয়।
“মুছে দাও”

পাখি মুচকি হেসে শানকে বিছানায় বসিয়ে ঘষে ঘষে মাথা মুছে দেয় ।হঠাৎই বলা নেই শান পাখির কোমড় জড়িয়ে নেয়।মুখ গুজে চুপচাপ বসে থাকে।
“কি হলো, ছাড়া হবে না নাকি? আমার মাথার চুলে যে মেঝে ভিজে যাচ্ছে?”-পাখির কথায় শানের খেয়াল ফেরে।দ্রুত পাখির হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে পাখিকে বসিয়ে এবার আআলতো হাতে মাথাটা মুছে দেয়।এরপর হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে ব্রাশ করে দেয়।
পাখি শুধু মিটিমিটি হাসছে আর শানের কাজ গুলো দেখছে।

দুপুরের পর পাখি শানের ফোন টা নিয়ে দেখছে আর বলছে,”আমার না ভীষণ আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে সার্জন সাহেব”-
কিছু একটা ভেবে শান বলে, “বাইক রাইড?”
প্রফুল্লিত চোখে পাখি সায় দেয়” হুমমমমম,যাবো তো”
“ওকে, রেডি হও তবে”

এরপর দুজনে ছুটিটাকে উপভোগ করতে ছুটে চলে অজানা গন্তব্যের দিকে।শহর ছেড়ে একদম গ্রামের রাস্তা।এলাকা গুলো বেশ মনোরোম।এরকম লং জার্নি তাও বাইকে করে অনেক দিনের শখ ছিলো পাখির। তাও যেন পূর্ণ হলো।পূর্ণ ভালো লাগায় ছেঁয়ে গেলো পাখির মন।পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”আই লাভ ইউ হার্ট সার্জন”
শান আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”শুধো মুখের লাভ ইউ নিবো না।গালে একটা ইয়ে সমেত নিবো”

বলেই নির্জন একটা জায়গায় বাইক দাঁড় করায়।লজ্জায় পাখি এদিক সেদিক তাকিয়ে ফট করে গালে আলত চুমু এঁকে দেয়।
আবার গাড়ি চলতে থাকে অজানা গন্তব্যে।সামনেই একটা বাজার চোখে পড়ে।সেখান থেকে কয়েকটা আইসক্রিম কিনে আবার গাড়ি দ্রুত এগিয়ে নেয় শান।লোকালয় ছেড়ে অনেক টা দূরে এসেছে তারা।আইসক্রিম খুলে দেখে গলতে শুরু করেছে। ঠোঁট উল্টে পাখি বলে,”কি হলো এইটা?”
শান হেসে বলে, “আমি কি করব? চাইলে বলো তোমার জন্যে এখানেও ফ্রিজের ব্যবস্থা করি!”

পাখি মুখ বাকিয়ে আইসক্রিম খাওয়া শুরু করে।ঠোঁটের চারপাশে ছোট বাচ্চাদের মতো ক্রিম গুলো লেগে আছে সেদিকে খেয়াল নেই পাখির।শান নিজের খাওয়া থামিয়ে হাসতে থাকে।
“হাসছেন কেন পাগলের মতো!”-কপোট রাগে বলে পাখি
“তোমায় খুব সুন্দর লাগছে পাখি”-হাসি চেপে রেখে বলে শান।কিন্তু হাসি যেন থামছেই না।
পাখি শানের নজর অনুসরন করে নিজের ঠোঁটে হাত রাখে।বুঝতে পারে শানের হাসির কারণ।হাতের উল্টোপিঠে মুছতে নিলেই শান ওর হাত ধরে ফেলে মুখটা থমথমে করে বলে,”একটা ভুল করি জান।সরি”
কথাটা শেষ করতে না করতেই শান পাখির অধরকে নিজের দখলে করে নেয়।

পাখি আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ দেখলো কিনা।না কেউ নেই এদিকে।কেমন যেন বন জঙ্গলের মতো এলাকা।না আছে মানুষ, না আছে কোন গাড়ির শব্দ।
শান আবার পূর্বের কাজ করে।
কিছুক্ষন পর পাখি নিজেকে ছড়িয়ে নিয়ে হাফাতে হাফাতে বলে,”আপনি কি মানুষ?”
শান হাসতে হাসতে হাতের আইসক্রিমের দিকে দেখে হেসে ফেলে।কারণ ততোক্ষনে আইসক্রিম গলে জল।
পাখির অভিমান বেড়ে দ্বিগুন।

“আপনার জন্যে আমার সব আইসক্রিম শেষ হলো”-নাকে কান্না টেনে বলে পাখি।
পাখিকে একহাতে টেনে জড়িয়ে ধরে শান বলে,”এরকম আইসক্রিমের স্বর্গে রাখব তোমায় জানপাখি।”
এরপর কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে দেয়।
পাখিও পরম আবেশে বুকে মাথা রেখে সামনে তাকায়।সবুজে সবুজে ভরা মাঠ। চোখ যতোদূর যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।
“একটা কথা বলব?”-শানের বুকে মাথা রেখে দৃষ্টি সামনে রেখে বলে পাখি।
“বলো!”

“নীরাকে আমি খুন করব। ডাইনি বুড়ির সব চুল আমি পুরে ছাই করে দিবো। ”
“হাহাহা,তোমার কিচ্ছু করা লাগবে না। ভরসা রাখো নিজের বরের উপর।সময়েই কথা হবে।তবে জীবনে যাইই ঘটুক আমি তোমায় ছাড়ছি না পাখি।এট এ্যানি কস্ট আই ওয়ান্ট ইউ
তা হঠাৎ আমাদের এই রোম্যান্টিক টাইমে নীরাকে টানলে কেন?”
“মনে হলো তাই।আচ্ছা নীরা আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলো? ওহহহ হ্যা আরেকটা কথা সামিহা ভাবি কাল এসেছিলো আমাদের ঘরে নীরা ফোন দেয়ার আগে”

পাখির কথায় শানের শরীর রাগে টনটন করে উঠছে।বুঝতে বাকি রইলো না সামিহাই পাখির ফোন নম্বর নীরাকে দিয়েছে।
“আমার অবর্তমানে ভাবিকে আমাদের ঘরে এলাউ করবা না।আর তুমিও তার থেকে ডিসটেন্স মেইনটেইন করবা, ওকে?
“হুমমম”
শান পাখিকে আরেকটু জড়িয়ে আনমনে বলে,”নীরা তোমাকে তো এবার কোন ছাড় নয়।দেখো তোমায় আমি কোথায় এনে নামাই।আমার বউয়ের চোখের প্রতিটা ফোটা পানির মূল্য তোমায় সুদে আসলে দিতে হবে।আর সামিহা ভাবির সময় ফুরিয়ে এসেছে আমাদের বাড়ি ছাড়ার”
এরপর বিকেল নামার পরপরই আবার বাইক চালিয়ে ছুটে আসে বাড়ির দিকে।

“বড্ডো ক্লান্ত লাগছে পাখি, এক জগ কফি হলে মন্দ হয় না “-ড্রয়িং রুমে সোফায় গা এলিয়ে দিতে দিতেই বলে শান।
“এই মেঝ ভাইয়া, জগ কি রে বালতিতে দিই”-টিপ্পনী কেটে বলে টিনা।
শান চোখ খুলে রাগি চোখে টিনার দিকে তাকিয়ে চাচিমা কে বলে,”চাচি মা এরে বিয়ে দিবা কবে?ইন্টারমিডিয়েট তো পাশ করলো কোনমতে।আর দেখতে ইচ্ছে করছে না। চোখের সামনে ঘুর ঘুর করছে খালি”

শানের কথা শেষ না হতেই সেই মূহূর্তে রনির আগমন “অটোপাশ,অটোপাশ,অটোপাশ”
রাগে, অভিমানে টিনা ন্যাকা কান্না জুড়ে দেয়।
“মা এবার সত্যিই আমার বিয়ে দিয়ে দাও।তোমাদের এইছেলেদের জ্বালায় আমি পারবো না এ বাড়ি থাকতে”
ভাইবোনের দুষ্টুমির মাঝে পাখি এক প্লেট সিঙ্গারা আর সস ওদের সামনে রাখে।হামলে পরে টিনা আর রনি।দুজনের মারামারির মাঝখান দিয়ে প্লেট কেড়ে নেয় শান।ওরা দুজন হতভম্ব বনে যায়।হা করে চেয়ে থাকে শানের দিকে।

“ভাইয়া কি হইলো এইটা?”
“আমার বউয়ের হাতের বানানো জিনিসে আমার অগ্রাধিকার বেশি।আর তোরা তো মারামারি করছিস, কর না ভাই! “-সিঙ্গারার কোনা ভেঙ্গে মুখে পুরে দিতে দিতে বলে শান।
শানের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে চাপা স্বরে পাখি বলে,”ওদের দেন। ওরা ছোট মানুষ না?”
শান ওর কোন কথাই কানে নিলো না।টপাটপ মুখে দিলো সিঙ্গারা গুলো।সবাই হা করে চেয়ে আছে শানের দিকে।পাখি বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে আবার রান্না ঘরের দিকে যায়।থমথমে মুখে বসে থাকে টিনা আর রনি।ওদের দেখে ঠোঁট টিপে হাসে শান।
কিছুক্ষন পর আবারও একপ্লেট সিঙ্গারা আর সস নিয়ে আসে।শান এবার ছোঁ মারতে নিলেই টিনা প্লেট নিয়ে দৌড় দেয়।

আগামিকালকের কিছু কাজ গুছিয়ে রাখছে শান। আর পাখি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়।রাত অনেক হয়েছে, ঘুমাতে হবে।কিছুক্ষন পর বের হয়ে দেখে শান এখনো ল্যপটপে চোখ গুঁজে রেখেছে।কিছুটা ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে পাখি চটাং চটাং করে মেঝেতে হাঁটছে।এরপর আয়নার সামনে বসে গায়ে মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগাচ্ছে আর আড়চোখে শানকে দেখছে।সেদিকে শানের কোন তাকাবার সময় নেই।এক ধ্যানে চোখ রেখেছে ল্যাপটপে।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে পাখির।

“কি এতো কাজ ওতে বুঝিনা”-বিড়বিড় করতে করতে বিছানার কাছে যায়।ওড়নাটা মাথার কাছে রেখে ধপ করে শুয়ে পড়ে।শান এবার আড়চোখে একটু তাকিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দেয়।
দু মিনিট পর পর পাখি বিছানায় ধুপ ধাপ শব্দ করে বার বার পাশ ফিরছে।একটু পর শান বিরক্ত হয়ে বলে,”কি হলো টা কি?বিছানার এতো শব্দ কেন করছো স্টুপিড? পাশের রুমে রনি আছে না? ”
“তো কি হইছে,তাই বলে আমি ঘুমাব না?”
“সাধে কি আর গাধি বলি!”
পাখি মুখ বাঁকিয়ে বলে,”লাইট বন্ধ করেন আমি ঘুমাব”
বলেই শানের দিকে পিঠ করে শুয়ে পরে।মন খারাপ হয়ে যায় পাখির।প্রতিদিনকার অভ্যেস কি করে ভোলে সে।

“তার বুকে মাথা না রাখলে ঘুম আসে আমার?জানেন না তিনি?-ভাবতেই জল গড়িয়ে পরে চোখ থেকে।
শান বুঝতে পেরে ল্যাপটপ বন্ধ করে পাখির হাত টেনে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসে।
“ছাড়ুন আমায়,”
“উুহু”
“আপনি আপনার কাজ নিয়ে থাকুন”
শান নিঃশব্দ হেসে পাখিকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নেয়।
জীবনকে পরিপূর্ণ মনে হয় শানের।পরিবারে হাসি আনন্দ সব মিলিয়ে সবাই কতো সুখী আজ।
“সরি জানপাখি”
“কেন?”.
“সে রাতে তোমায় অনেক টর্চার করেছিলাম।”
“আমি ওসব মনে রাখি নি সার্জন সা……”
পাখিকে বলতে না দিয়ে শান আবার বলতে শুরু করে,”

আসলে হয়েছিলো কি, তুমি আমার কাছে আসছিলে না।আমি বলছি না প্রথম রাত থেকেই তোমাকে পাওয়ার চেষ্টা করতাম।আমি চাইতাম আমরা পরিচিত হই,একে অপরকে জানি কিন্তু তুমি শিটকে সরে যেতে যেটা বিশ্বাস করো আমার খুবই খারাপ লাগতো।নিজেকে হিংস্র পশু মনে হতো। আর তার কিছুদিন পর ঢাকা থেকে নাবিদের ওয়াইফের কথাটা কানে আসা।সব মিলিয়ে জগাখিচুড়ী চলছিলো আমার মগজে।যার প্রেক্ষিতে সে রাতে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।গায়ে হাতও তুলেছি। আমি বুঝতে পারি নি তুমি একটা রোগে আক্রান্ত ছিলে।সরি পাখি।ক্ষমা করে দিও আমায়।আর কোনদিন এমন টা হবে না”

আসক্তি পর্ব ২৯

পাখির ঠোঁটে হাত রেখে বলে,”হয়েছে আর কতো?আর কতোবার সরি চাইবেন এ নিয়ে?এর আগে এই একই কথা আগেও বহুবার শুনেছি।এমনকি স্বপ্নের মাঝেও রাতে এসব বিড়বিড় করেন আপনি।নিজের ডায়েরির প্রতিটা পাতায় সরি পাখি লেখা।আর কতোবার বলবেন সার্জন সাহেব।আমি ভুলে গেছি গো ওটা।আমরা নতুন করে বাঁচতে চাই;নতুন ভাবে”
শান পাখিকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে কপালে আর চোখে অজস্র চুমু এঁকে দেয়।
পাখি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,”ঘুমাবো”
“ঘুমাও”

“সার্জন সাহেব সেদিন যদি আপনার সাথে রাগ করে নিজের ইগোকে প্রাধান্য নিয়ে রাগ নিয়ে বসে থাকতাম হয়ত এই বুক টা আমার হতো না আর না হতো এই পরিবার টা আমার।আমার এতো সুখে নিজেরই হিংসা হয়।আবার ভয়ও হয়।পারব তো আপনাকে ভালো রাখতে।সেদিনের সামন্য মানিয়ে নেয়া আজ আমার জীবনের সুখের চাবিকাঠি হয়েছে।তাই ঐসব কে নিছক দূঃসময় ছাড়া কিছুই মনে হয় না”-শানের বুকে মাথা রেখে আনমনে ভাবে পাখি।প্রশান্তি আর তৃপ্তির পরিপূর্ণ হাসি ঠোঁটে এলিয়ে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে সে।
একটু পরই শানের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে পাখির সিথির কাছে।মাথা তুলে শানের থুতনিতে একটা চুমু আর গলার উচু জায়গায় আরেকটা চুমু এঁকে দেয়।এরপর বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে ঘুমিয়ে পরে।

আসক্তি পর্ব ৩১