আসক্তি পর্ব ৩৪

আসক্তি পর্ব ৩৪
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“হাউ ডেয়ার ইউ টু চিট মাই ডটার?মুখোশধারী ভদ্রলোক! তুমি আমার মেয়েকে সরিয়ে দেয়ার প্ল্যান করছো তাও বাহিরের একটা মেয়ের সাথে সাথ মিলিয়ে!এত্তো বড় সাহস তোমার?কি ভেবেছো কি তোমার মুখোশের আড়ালের চরিত্রটা কখনো কেউ ধরতে পারবে না?”-লোক সমাগামে গিজগিজ করা রেস্টুরেন্টে শানের শার্টের কলার ঝাকিয়ে কথা গুলো বলছেন শানের শ্বশুর মশাই শফিক সাহেব।

তার অতর্কিত আক্রমনে ঘাবড়ে যায় শান।ভয়ানক অন্ধকারের বলিরেখা শানের কপালে স্পষ্ট।
শুকনো ঢোক গিলে বার বার শার্টের কলার ঠিক করার বৃথা চেষ্টা করছে আর চাপা চাপা স্বরে বলছে,”বাবা প্লিজ কলার ছাড়ুন।এটা একটা পাবলিক প্লেস।আর আমায় অত্র এলাকায় সবাই চেনে।প্রেস্টিজের ব্যপার আছে।বুঝার চেষ্টা করুন”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তোমার মুখোশ টা সবাই চেনে তোমায় চেনে না ফয়সাল আহমেদ শান।আর এবার তোমার সেই কলঙ্কিত মুখোশটাই টেনে হিচরে খুলে ফেলব আমি”-বলেই শানের দু গালে এলোপাথাড়ি থাপ্পোর দেয়া শুরু করে।জব্বার সাহেব বার বার আটকাচ্ছেন তাকে।শান হতভম্বের ন্যায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।ভাবতেও পারে নি শফিক সাহেব এরকম কিছু করবেন।তাদের তকঝকে চারপাশে মানুষের ভীড় যেন ক্রমেই বেড়েই চলছে।
“আপনার সাহস কি করে হয় একজন ডাক্তারের গায়ে হাত তোলার?বেয়াদব লোক।যেমন ম্যানারলেস বাবা তেমন মেয়ে।নির্লজ্জ লোক।ওর একটা স্ট্রং পার্সোনালিটি আছে আর আপনি কিনা!শুনুন আপনি যা যা শুনেছেন সব ঠিক শুনেছেন।তাই সম্ভব হলে মেয়েকে নিজে থেকে নিয়ে বিদেয় হোন আমাদের লাইফ…..”

নীরার কথা শেষ হতে না হতে শান চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে টেবিলে স্বশব্দে আঘাত করে রাগ নিবারনের চেষ্টা করছে।কারণ সে চায় না তীরে এসে তরী টা ডুবে যাক।আজকের দিনটার জন্যে গত তিনটা মাস ধরে অপেক্ষা করছে সে।

নীরার কথায় শফিক সাহেব নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলেন না।বুকের বাম পাশ চেপে রেখে, চোখ মুখ উল্টে ফেলেন।শান দ্রুত তাকে পাশের চেয়ারে বসতে বলেন।শান এতোক্ষন এই ঘটনারই ভয় পাচ্ছিলো বলেই শ্বশুরের এতো বাজে ব্যবহারেও চুপ করে ছিলো।
জব্বার সাহেব এক গ্লাস পানি এগিয়ে পাখির বাবাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।

“বাবা প্লিজ আপনি একটু শান্ত হোন, এতো উত্তেজিত হবেন না।মাত্রই তিন মাস হয়েছে আপনার অপারেশনের”-নীরা একটু দূরে কাকে যেন ফোন করছে সে ফাঁকে শান শ্বশুরের কানে কানে বলে কথাটা।
শানের কথায় শফিক সাহেব আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে আবারো কলার চেপে ধরে শানের।উত্তেজিত হবে নাই’বা কেন একমাত্র মেয়ে জামাইয়ের মুখে যদি মেয়েকে তাড়ানোর গোপন ফন্দির কথা কোন বাবা জানতে পারে তবে সে কোনভাবেই নিজেকে সংবরন করতে পারবে না।পাখির বাবারও সেই একই অবস্থা।

গত দু মাসে নীরার অবস্থা বেশ খানিক টা শোচনীয় হয়ে
পড়েছে।কিভাবে কিভাবে দুটো সেন্টার থেকে বাদ দেয়া হলো, তারপর নিজের সাথে অস্বাভাবিক কিছু আচরন সে খেয়াল করেছে এতোদিন।রাস্তায় তার অস্বাভাবিক এক্সিডেন্ট তবে কোন ক্ষয় ক্ষতি না হওয়া, আবার মেডিকেলে ওর সাথে সবার ছন্নছাড়া ব্যবহার এমন হাজারও ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে নীরা শানের সাথে দেখা করার ইচ্ছে পোষণ করে।কথায় আছে চোরের মন সব সময়ই পুলিশ পুলিশ করে।নীরা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে এসবের পিছনে শানেরই হাত রয়েছে।তাই সে কোন প্রকার ভণিতা না করে শানের সাথে দেখা করতে চায়।শেষ পর্যন্ত শানও রাজি হয় নীরার সাথে দেখা করার।

ডেইট ফাইনাল হয় তারা মেডিকেল মোড়ে জিহা রেস্টুরেন্টে বসবে।কথা অনুযায়ী সেই ডেইটে তারা রেস্টুরেন্টে বসে আছে মুখোমুখি।
অন্যদিকে শফিক সাহেবের মান্থলি চেকাপের জন্যে পাখির ফুপা জব্বার সাহেব সহ রংপুর জামাইয়ের চেম্বারে চলে আসেন।চা নাস্তার জন্যে তাদেরকে ঢুকতে হয় রেস্টুরেন্ট।আশপাশের সবগুলোয় বেশ ভীড় থাকায় বেছে বেছে জিহাতেই ঢোকে তারাও।শানের ঠিক পিছনের চেয়ারটা টেনে বসে পড়েন শফিক সাহেব।
কেউ কাউকে খেয়াল করতে পারে নি।নিজেদের মতো খাবার অর্ডার করে বসে আছেন।গুনধর জামাইয়ের ব্যপারেই খোশ গল্পে মত্ত হয়ে গেলেন পাখির বাবা।

“হ্যা নীরা বলো”-ফোনটা টেবিলের উপর রেখে যথাসম্ভব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে শান। পারতপক্ষে শান নীরার সামনে নিজের ইতিবাচকতা উপস্থান করতে চাইছে।
শানের এহেন আচরন, ভাব-ভঙ্গি নীরার কেমন যেন লাগল।সন্দিহান চোখে শানের দিকে চেয়ে ভাবতে থাকে,”সেদিনকার ঘটনা কি পাখি শানকে কিছুই জানায় নি?জানালে তো এতো স্বাভাবিক থাকত না সে?তাহলে কি আমার সন্দেহ ভুল?আমার সাথে ঘটনার পিছনে কি অন্য কেউ;শান নয়!
নীরার ভাবনার মাঝে বিরতি ঘটে শানের তুড়িতে। শান্তস্বরে বলে,”কি ব্যপার কি জন্যে ডেকেছো তা তো বলবা নাকি?চেম্বার ছেড়ে এসেছি তো”

“আসলে শান আমার দুটো চেম্বার বন্ধ হয়ে গেছে।বাড়িতেও অদ্ভুতুড়ে কিছু ঘটনা ঘটছে।রাস্তায় সেদিনের এক্সিডেন্টের কথা ভাবলে এখনো শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে।অথচ আমার কোন ক্ষতি সেদিন হয় নি।আমি বুঝতেছি না এসবের কারণ কি!বাই এ্যানি চাঞ্ছ তুমি….”
নীরা গড় গড় করে কথা গুলো বলে শানের দিকে চায়।
শান এতোকিছু শোনার পর সরুচোখে নীরার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার কি মনে হয় আমি করিয়েছি এসব?”

সুচতুর নীরা ঢোক গিলে জবাব দেয়, “না, সেরকম টা নয়।আবার খানিকটা সেরকমই।”
নীরা আবার বলে,”আসলে সেদিন সামিহা আপুর সাথে আমার বলা কথা গুলো শুনলা, রেগে গেলা ভাবলাম তার বিপরীতে এসব…..”
পাখিকে জানানো শানের ব্যপারে সমস্ত মিথ্যা কথাগুলো চেপে যায় নীরা।সে ভেবেছিলো পাখি শানকে কিছুই জানায় নি।তাই এখন সবটা চেপে যাওয়াই বেটার।

“নীরা আমি গত পাঁচ মাস ধরে সংসার করে একটা জিনিস ভেবে দেখলাম ও আমার টাইপ নয়।কেন জানি না কোনদিক থেকেই মিলছে না আমাদের।ভাবছি ডিভোর্স দেবো।কিন্তু একটা তো লিগ্যাল কারণ লাগবে তাই না।ও আবার অনেক সাদাসিধা ধাঁচের মেয়ে।কি অজুহাতে ছাড়ব বুঝতেছি না।”-বলেই শান ফোনের পাওয়ার বাটন করল।
আবার বাটন অফ করে বললো,”এ্যানি আইডিয়া?”

ততোক্ষন থেকে শফিক সাহেব পাশের টেবিলে বসা ছেলে-মেয়ে দুটোর কথা শুনতে পাচ্ছে তবে অস্পষ্ট।পাশের কথায় কান দেয়া একরকম অসভ্যতামি।তিনি একজন শিক্ষিত মানুষ তাই মাত্রা ছাড়ানো পছন্দ নয় বলে ভালো করে কান দেয় নি তাদের কথায় । কিন্তু শানের শেষের কথা গুলো শুনে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। কন্ঠটা বেশ চেনা চেনা লাগলো।কিন্তু চিনতে পারলো না। ঘাড় টা সামান্য ঘুরে মুখ দেখার চেষ্টা করলো;পারলো না।অগত্যা বোন জামাইকে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন, “দেখো কি করে একজন পাঁচ মাসের সংসার করা ওয়াইফ কে তাড়ানো যায় তারই ফন্দি আঁটছেন।আর আমার জামাই তো লাখে একজন।এসব ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের কলঙ্ক বুঝলে, জব্বার”

শানের কথায় নীরার চোখেমুখে খুশির ঝলকানি বয়ে গেলো।তা শানের নজর এড়ালো না।খুশিতে গদগদ হয়ে নীরা চিল্লিয়েই বললো,”এক্স্যাক্টলি!
নীরার কথায় বসে থাকা সবার নজর পরলো শানদের দিকে।পাখির বাবাও ফিরে তাকালেন ভালোভাবে।শান ঘাড় ঘুরিয়ে আশপাশে দেখে মাথা নিচু করে বললেন, “আস্তে কথা বলো”
পাখির বাবা এবার সন্দেহভাজন পুরুষটির গালের বাম পাশের গঠন টা দেখলেন।মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তার।তিনি ভাবতেই পারছেন না সেটা শান;তারই আদর্শ জামাই।তিনি মনের ভুল ভেবে ঠাঁয় বসে রইলেন সবটা শোনার অপেক্ষায়।

“এক্স্যাক্টলি শান!আমিও সেটাই বলছি”-এবার চাপা স্বরে বলরো নীরা।
“বিশ্বাস করো শান আমি তোমাকে এখনো অনেক ভালোবাসি।তোমার প্রতি যে আমার আলাদা একটা অনুভূতি ছিলো তার টের পেয়েছি যখন তুমি পাখিকে নিয়ে আমার চেম্বারে এসেছিলে।বিশ্বাস করো মোচর দিয়ে উঠেছিলো আমার কলিজা।বাসায় গিয়ে নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি যাতে তোমাতে আকৃষ্ট না হয়।তুমি বিবাহিত এখন, এসব হাজারও কথা বুঝিয়েছি ;লাভ হয় নি।তাই তোমাদের আই মিন পাখির অঅসুস্থ্যতার সুযোগ নিতে চেয়েছিলাম।বিলিভ মি শান যা করেছি তোমাকে ভালোবেসেই করেছি।”

ছোট্ট স্বরে শান আদুরে গলায় বলে,”আচ্ছা নীরা কি কি প্ল্যান করেছিলে পাখিকে সরাতে?বলো না প্লিজ!এবারও না হয় সেই প্ল্যান করে ওকে সরাবো।বুঝতেই পারছো এক জিনিসে কতোদিন আর রুচি টানে!তাও কালো, অসুন্দর, ক্ষ্যাত মার্কা মেয়ে!”

শফিক সাহেবের জান এবার ওষ্ঠাগত। হাত পা কাপছে। গা থেকে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে।বুকের ভেতর চিন চিনে হালকা ব্যথা অনুভব করছেন।হাতের বুড়ো আঙ্গলটা অবশ হয়ে যাচ্ছে।যা সন্দেহ করেছিলো তাই।অর্থাৎ বিপরীতমুখী মানুষটা তারই গুনধর আদর্শ জামাই!তিনি এটা কিছুতেই মানতে পারছেন না তার জামাই এমন চরিত্রের অধিকারী।আসলে কেউই মানতে পারবে না।

“ভাইজান আপনি ঠিকাছেন, ঘামছেন এভাবে?”-হন্তদন্ত হয় জানতে চায় জব্বার সাহেব।
শফিক সাহেব নিজেকে যথেষ্ঠ স্বাভাবিক রেখে জবাব দেন,”হুম ঠিকাছি”
চোখ ফেটে তার জল গড়াতে চাচ্ছে।পাবলিক প্লেসে কি করে নিজেকে সংবরন করবেন তাই ভাবছে পাখির বাবা।

“সত্যি বলতে শান, সেকেন্ড বার যখন চেম্বারে আসলে উইথআউট পাখি, তোমায় দেখলাম তখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব হয় নি।আবার শুনেছিলাম পাখির মাঝে তখন ধীরেধীরে নরমাল ভাব চলে এসেছে তখন আমি পাখির মেন্টাল ডিজওর্ডারের জন্যে কিছু মেডিসিন দিয়েছিলাম আর তোমাকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছিলাম। কারণ এসেক্সুয়াল পেশেন্টরা সুস্থ হলে সঙ্গীকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসতে পারে। চোখের আড়াল হতে দেয় না।যেটা ভাবতেই আমার মনে কুবুদ্ধির উদয় হয়।আর তাই সামিহা আপু সহ নানান প্ল্যান সাজাতে থাকি।যাতে পাখি নিজে থেকেই তোমার থেকে দূরে সরে যায়।কিন্তু যখন দেখলাম তা হলো না, মানে তোমরা সংসার করছো স্বাভাবিক ভাবে তখন আমি বাধ্য হয়ে পাখিকে ফোন করে মিথ্যা মিথ্যা সব জানাই।বিশ্বাস করো শান সবটাই করেছি তোমাকে নতুন করে পাবো বলে।”-নীরা এক দমে কথাগুলো বলে খান্ত হয়।

শান তখন দুহাত টেবিলের উপরে রেখে মাথাটা নিচু করে শুনছিলো।নীরার কথা শেষ হতেই মাথা উচু করে ঠোঁট দুটো গোল করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে থাকে নীরার দিকে।
শানের এতো পরিবর্তনে নীরা প্রথম প্রথম বেশ চমকে গেলেও শানের কথার জালে জড়িয়ে নিজের সাথে ঘটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা গুলো বেমালুম ভুলে যায়।নীরা আদৌ বুঝতে পারে না সে শানের পাতানো ফাঁদে জড়িয়ে গেছে।

শান এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে নীরার দিকে। আর চতুর নীরার বোকামির কথা ভেবে বাঁকা হাসছে।
“নীরা, অনেক চাল চেলেছো।আর দিবো না। ইট’স মাই টার্ণ।বি প্রিপেয়ার্ড ফর ডায়ার কনসিকুয়েন্স ”
“কি ভাবছো শান?”-নীরার কথায় বাস্তবে ফেরে শান।
জবাবে বলে,”নাহ তেমন কিছু না।ভাবছি পাখিকে কি কজ দেখিয়ে বিদেয়…… ”

শানের কথা শেষ হতে না হতেই কলারে কারো অতর্কিত আক্রমন সাথে সাথেই গালে কারো থাপ্পোরের অনুভুতিতে চোখ মুখ খিচে ফেলে শান।চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তার।দাঁতে দাঁত চিপে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ডান হাতটা ঘুষির ন্যায় উঠিয়ে চোখ মেলে অবাক হয় শান।উচিয়ে রাখা হাত টা নিমিশেই নেমে আসে নিচের দিকে।

“নীরা, স্টে আওয়ে ফ্রম হেয়ার।চলে যাও।পরে কথা হবে আমাদের “-রাগান্বিত চোখে চেয়ে নীরাকে বলে শান।
নীরা কিছু একটা ভেবে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে।
শানের কিছুক্ষন পূর্বের আচরনগুলো কিছুতেই মানতে পারছেন না শফিক সাহেব।উনাকে শান্ত করতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হয় শানকে।
নীরাকে পাঠিয়ে শ্বশুরের সাথে আগের টেবিলে বসেই কিছুক্ষন আলাপচারিতা শেষ করে শান।এরপর চেম্বারে এসে মান্থলি চেকাপ করে।

“বাবা বাড়িতে যাবেন তো?”-মিনমিনে গলায় বলে শান।
শফিক সাহেব থমথমে মুখে এক শব্দে জবাব দেয়,”নাহ”
শান আর কিছু না বলে তাদেরকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।
“কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। করতে চাইলাম কি আর হলো কি! শেষটা ভালো ভাবে মিটলেই হয়!”-ভাবতে ভাবতে শান নিজেও গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে।এরপর গন্তব্য থেকে দরকারি কাজটা সেড়ে বাড়ির পথে চলে যায়।

সন্ধ্যে নামার একটু পর শান বাড়ি ফেরে। পাখি তখন ড্রয়িং রুমে বসে সবার সাথে গল্প করছিলো।এলোমেলো পায়ে বাড়িতে ঢুকে সবার দিকে একনজর ফেলে পাখির দিকে তাকায়।পা থামিয়ে শান্ত চাহনীতে তাকিয়ে থাকে।এরপর কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।
ড্রেসিং টিবিলের উপর চশমাটা রেখে, দাঁড়িয়ে একটা একটা করে শার্টের বোতাম খুলছে আর পাখির বাবার সাথে হওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ভাবছে।

পাখি দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকে বোতামে হাত রাখে।খুলতে শুরু করে সব বোতাম।শান মুচকি হেসে কোমড় জড়িয়ে ধরে পাখির।দুষ্টু হেসে গলা সামান্য ঝেড়ে হালকা ঠোঁট নাড়িয়ে বলে,”কি করছো কি, সবে মাত্র ফিরলাম বাহির থেকে।অনেক ক্লান্ত আমি।এখন আর এসব হচ্ছে না পাখি।”
পাখির কান গরম হয়ে আসছে।বুকের কাছের কয়েকটা বোতামে হাত রেখে শার্ট খামচে চিপে ধরে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। শান আরেকটু ঝুকে এসে বলে,”রাত হোক”
পাখি লজ্জায় রাগে শানের বুকে দুটো কিল বসিয়ে দেয়।

শান মুখে “আউউউচ”শব্দ করে বুক চেপে ধরে বসে পরে। ব্যথার ভঙ্গিতে চোখ মুখ কুচকে ফেলে। পাখি দৌড়ে এসে বলে,”সরি সরি আমি জোড়ে দিতে চাই নি।দেখি কোথায় লাগলো, দেখি না! ”
পাখির অস্থিরতা দেখে শান হেসে ওকে বুকের সাথে পিষে ফেলে,”যেখানে মাথা রেখেছো সেখানে”
পাখিও হেসে জড়িয়ে ধরে শানকে বলে,”আপনাকে অনেক ক্লান্ত লাগছিলো।তাই ভাবলাম আপনার কাজে হেল্প করি তাই ওভাবে বোতামে….”

“আমি জানি তো জান”-বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয় পাখিকে।
“এই একটা মানুষকে বুকে জড়াতে পারলেই আমার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়।আমার প্রতিটা দিনের সমস্ত ক্লান্তি দূর করার জন্যেও হলেও আমার তোমাকেই চাই পাখি”
“বাবা এসেছিলো আজ?”-শানের বুকে মুখ গুজেই বলে পাখি। ধ্যান ফেরে শানের।
“হুমমম?”.

আসক্তি পর্ব ৩৩

“বলছি যে বাবা এসেছিলো আজ চেম্বারে?বাবা কাল বলেছিলো ফুপার নাকি কি কাজ আছে রংপুরে তা শেষ করে নাকি আপনার সাথে করে চলে যাবে।আসছিলো কি? ”
শান স্বাভাবিক হয়।গা মোটামুটি ঝেড়ে দাঁড়িয়ে বলে, “হ্যা এসেছিলো। তুমি জানলে কি করে?”
“বললামই তো বাবা কাল ফোন করেছিলো!”-মাথা তুলে বলে পাখি।
“বাবা কি আজ আরো ফোন দিয়েছিলো, আরো কিছু বলেছিলো”-আমতা আমতা করে বলে শান।কন্ঠে জড়তা প্রকাশ পাচ্ছে শানের।

“নাহ,আজ আর কথা হয় নি।কিন্তু আপনি এমন করে বলছেন কেন?গলাটা কাপছে যে?”
“না কিছু না।”-শান সরে এসে কাবার্ড খুলতে খুলতে বলে।
এবার পাখি এমন কিছু বলে যে শানের শ্বাস ভারি হয়ে আসে।
“কিছু আকাম কুকাম করেছেন নাকি হুমমম,যেটা বাবা দেখেছে!”-দুষ্টু হাসি ঠোঁটে রেখে বলে পাখি।
শান নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,”কি যা তা বলছো, মাথা কি গেছে?”

শানের এরকম রাগি চেহারা সে দ্বিতীয় বার দেখলো।প্রথম দেখেছিলো যেদিন রাতে ঢাকা থেকে ফিরে ওর গায়ে হাত তুলেছিলো আর আজকে দ্বিতীয়।পাখি বার বার সেদিনটা ভুলতে চায়।আজ শানের সেই রূপটা দেখে চোখ ভরা উপচে পরা কান্না নিয়ে দৌড়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে যায়।
এদিকে শান চোখ মুখ কুচকে ভাবতে থাকে,”আজ পুরো দিনটাই খারাপ গেলো।শেষমেশ পাখিকেও কাঁদাইলাম”
নিজের উপর বিরক্ত হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে সজোড়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

আসক্তি পর্ব ৩৫