আসক্তি পর্ব ৩৫

আসক্তি পর্ব ৩৫
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

পাখি সেই যে অভিমান করে বেরিয়েছে আর ঘরে ফেরে নি।শানও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজে এতোই ব্যস্ত ছিলো যে পাখির খোঁজ নেয়ার সুযোগ টা আর হয় নি।ডিনারের সময় শর্মিলা বেগম বার বার করে পাখিকে বলেছেন শানকে খেতে ডাকতে।
“সুমি তোমার ভাইজানকে ডেকে আনো”-থমথমে মুখে সুমিকে বলে অন্যদিকে চলে যায় পাখি।
পাখির থমথমে মুখ দেখে চাচি আস্তে করে বলে উঠলেন, “আপা এদের কি হইছে বলোতো?”

“বুঝতেছি না রে, তবে যাই হোক।সকাল হলেই মিটে যাবে দেখিস”-শর্মিলা বেগমের কথায় দুজনেই মৃদুস্বরে হেসে ওঠে।
সুমির ডাকে শান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। দৃষ্টি তার হাতে রাখা ফোনের উপর।পাখি এক নজর সেদিকে তাকিয়ে ডায়নিং এ খাবার সাজাতে ব্যস্ত।খাবার শেষ হতে না হতেই শানের ফোনে কল আসে।দ্রুত উঠে বাহিরে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সবাই সেদিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।কিছুক্ষন পর সবাই সবার খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পরে।ডিনারের শেষে চলে যায় সবাই সবার ঘরে ঘরে।
এদিকে ক’দিন ধরেই পাখির খাওয়া দাওয়ায় অনিহা দেখা যাচ্ছে।খাবার দেখলেই বমি চলে আসছে।বেশি মানুষজন দেখলেই মাথা গুলিয়ে আসছে।কোনকিছুই ভালো লাগছে না।কখনো মেজাজ তিরিক্ষি হচ্ছে কখনো বা গুমোট থাকতে ভালো লাগছে।

ইচ্ছের বাহিরে গিয়ে শ্বাশুরি মায়ের কথায় জোড় পূর্বক সামান্যকিছু খাবার প্লেটে নেয়।শান তখন ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।
“পাখি,এই পাখি”-ফিরে এসে শান ডাক দেয় পাখিকে।
পাখি মাথাটা সামান্য ঘুরিয়ে রাখে।কিছু জবাব দেয় না।
“তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসো।ফার্স্ট!”-বলেই শান এক মূহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায়।
মা চাচিরা মুচকি হেসে পাখিকে বলে,”তাড়াতাড়ি যাও বউ মা”
পাখি আধখাওয়া প্লেটটা বেসিনে রেখে ওড়নার আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ধীরপায়ে উপরে চলে যায়।

“কি?”
“এদিকে আসো”
শানের দিকে এগিয়ে যায় পাখি।মাথাটা কেমন যেন চক্কর দিচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।শরীর টা দূর্বল লাগছে ভীষণ ওর।
“রাগ করেছো?”
“নাহহ”-অস্ফুট স্বরে জবাব দেয় পাখি।
“রাগ করো না, সরি।তখন মাথা ঠিক ছিলো না। একটু রেগে গেছিলাম। কাল দুপুরে তোমার জন্যে বিগ একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে জান।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”
পাখি মৃদু হেসে নিশ্চুপ থাকে।কিছু বলে না।

“তোমার এখনও মন খারাপ?”
“না তো ”
“লাগছে তো”
“শরীর টা ভালো লাগছে না”
পাখির কথা শেষ হতে না হতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে শান,”কি হয়েছে, আমায় আগে বলো নি কেন?”
“তেমন কিছু না।শরীর ব্যথা ব্যথা করছে।ভালো লাগছে না।”
“ঠিকাছে তোমায় জেগে থাকতে হবে না আর। দেখি ঘুমিয়ে পড়ো তুমি”-বলেই বিছানা রেডি করে দেয় পাখিকে।তারপর গাঢ় চুম্বন টা দিতে ভোলে না শান।

“ডক্টর নীরা!”
“ইয়েস স্পিকিং, হু’স দেয়ার?”
“রংপুর থানা থেকে পুলিশ সুপার পরশ বলছিলাম।”
চমকে ওঠে নীরা। সকাল সকাল থানা থেকে ফোন তাও আবার নীরার ফোনে পুলিশ সুপারের।এটা যেন বিপদের অশনিসংকেত হিসেবেই ধরে নেয় নীরা।কিন্তু কি দরকারে ফোন সেটা কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না তার।
দ্বিধাদ্বন্দ্ব শেষ করে ফিরতি প্রশ্ন করে অফিসারকে,”জ্বি বলুন।হাউ মে আই হেল্প ইউ?”
এসপি পরশ মুচকি হেসে বলেন,”আপনার সাথে কিছুদিন আগে এক্সিডেন্টের ঘটনা ঘটে, রাইট?”

“জ্বি! ”
“এক্স্যাক্টলি এই কারণে থানায় একবার আসতে হবে।”
নীরা সন্দিহান হয়ে আবার জানতে চায়,”কিন্তু আমি তো কোন কামপ্লেইন করি নি তবে….”
পরশ নীরাকে থামিয়ে বলেন,”আরে ম্যাম একবার আসুন তো।তারপর না হয় বাকি কথা সরাসারি বলব”
বলেই ফোন কেটে দেয় অফিসার।
এদিকে শান কারো ফোন পেয়ে বেরিয়ে যায় হন্তদন্ত হয়ে।দ্রুত গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে যায় রংপুর থানায়।
সকাল তখন ১০.৩০
হালকা নেভি ব্লু রঙ্গের শার্ট পরিহিত, কালো প্যান্ট, বাম হাতে খুলে রাখা কালো কোট, চোখে চশমা মোহনীয় এক সৌন্দর্যের অধিকরী পুরুষ এসে নীরার পাশের চেয়ার টা টেনে বসে পড়ে।নীরা হকচকিয়ে সেদিকে চেয়ে দেখে শান।

“শান!”-অস্ফুট স্বরে কথা বলে ভ্রুকুচকে যায় নীরার।
পুলিশ সুপার পরশ তখন নিজের চেয়ারে গা ছেড়ে দিতে দিতে বলে,”শান এই যে তোর ক্রিমিনাল”
নীরা চমকে ওঠে।মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে নীরার।সবকিছুই গোলমেলে লাগছে।
“আমি শানের ক্রিমিনাল, মানে”-ভেবেই শানের দিকে সরু চোখে তাকায়।শান গম্ভীর মুখে ঠাঁয় চেয়ে থাকে সামনে বসা পরশের দিকে।

পরশ। শানের বন্ধু।গত ২ মাস হলো বান্দরবন থেকে রংপুর শহরে জয়েন করার ।আর তার সহযোগীতায় শান নীরা অবধি পৌঁছাতে পেরেছে।
“পরশ রিড দ্যা এফ আই আর থ্রোলি এন্ড টেল হার টু লিসেন”-শান শান্ত স্বরে পরশকে কথা টা বলে।
এরপর পরশ পুরোটা এফ আই আর ভালোভাবে পড়ে শোনায় নীরাকে

“আমি মোহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ শান।পেশায় একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।পিতাঃমোহাম্মদ আহমেদ আলী মন্ডল।আমি এই মর্মে এজাহার লিখাতে ইচ্ছুক যে, গত ০৩-০৪-২০২১ ইং তারিখে ব্যক্তিগত পূর্ব শত্রুতার জেরে আমার মিসেস মোছাঃতাশনুভা তানহা পাখিকে ভুল ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগীতে পরিনত করবার অপচেষ্টা চালায় প্রসূতি ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আফিয়া আফরিন নীরা।আমি এই ন্যাক্কারজনক অপচিকিৎসার ব্যপারে ধিক্কার জানাই এবং এই ব্যপারে দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আইনি সহযোগীতা কামনা করছি।অতঃপর আমি এই ব্যপারে আইনে মামলা করার সিদ্ধান্তের ইচ্ছে পোষণ করছি।

আমি আরো জানাচ্ছি যে,ডাক্তার নীরা দিনাজপুর নিজ এলাকা হিলি বর্ডার থেকে মাদক সাপ্লাইয়ের কাজেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।অতঃপর দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তার ব্যপারে পূর্বের ন্যায় আবারও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সদিচ্ছা জ্ঞাপন করছি”
নীরার দুই কান দিয়ে গরম সীসা বের হচ্ছে। কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছে না নীরা।ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে পাশে বসা শানের দিকে। শান চোয়াল শক্ত করে চেয়ে আছে সামনের দিকে।নীরা অবাক হয়ে অস্ফুট স্বরে প্রশ্ন করে, “এসবের মানে কি শান?”

শান ফট করে নীরার চেয়ারের হাতল টেনে এক মূহুর্তের ব্যবধানে নীরাকে নিজের সামনে নিয়ে আসে।শানের হঠাৎ এমন আচরনে চমকে পরে যতে ধরে নীরা।নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রেখে ভয়ার্ত চোখে চেয়ে থাকে।শান বাঁ হাতে চশমা টা খুলে টেবিলের উপর রাখে।পরশ সহ অন্যান্য পুলিশরা শানের কর্মকান্ড পরোখ করছে মনোযোগের সহিত।
“কি মনে করেছিলে?গলে গেছি?পটে গেছি?
কয়জন নেতাকে হাত করেছো রূপের বশে,এতে নিজেকে খুব বিশাল কিছু মনে করো তাই না?”-শান একটু পিছিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, “রংপুরিয়া ভাষায় একটা কথা আছে -মুই কি হনুং রে!(আমি কি হলাম রে!)

সেরকম ভাবছো নিজেকে?ভেবেছিলে গোপনে সব কর্মকান্ড চালিয়ে যাবে আর কেউ কিচ্ছু টের পাবে না?”
শান টেবিলে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত টা রেখে হালকা বারি দিয়ে বলে,”তুই সেকেন্ড ধাপে যে মেডিসিন গুলো দিয়েছিস সেগুলো তো আমি খাওয়াই নি রে।কজ আমার ওয়াইফ তার আগেই সুস্থ হয়ে যায়।যেদিন ফ্ল্যাটে ভাবি সহ তোকে দেখলাম তারপরই তোর দেয়া দু নম্বর মেডিসিন নিয়ে রিসার্স করি এই আমি।ভুলে গেছিলি তাই না,যে আমিও একজন ডাক্তার!তুই ভাবলি কি করে তোর দেয়া ঔষধের রিসার্স হবে না?”

নীরা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে।শান ভাবলেশহীন জবাব দেয়,”তোদের এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের (ফেইক নাম) সাথে তোর অন্তরঙ্গ মূহূর্তের ভিডিও টা কিন্তু ভাইরাল করতে জাস্ট দু সেকেন্ড সময় লাগবে আমার।রংপুরের *** এমপির বড় ছেলের কেপ্ট উইমেন তুই।এটা আমার অনেক আগে থেকেই জানা। সত্যি বলতে কি জানিস, আমি যখন বুঝে গেছি ক্ষমতার জোড়ে তোকে কাবু করতে পারব না,জানতাম তোর এগেইন্স্টে কেইস ফাইলের দ্বিতীয় দিনেই তা ডিসমিস হয়ে যাবে তখন একটু বুদ্ধির জোড় খাটালাম”-নিজের মাথায় এক আঙ্গুলে টুকে বলে শান।

কিছুক্ষন দম নিয়ে নিজের ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুল গুলো দেখছে শান।এরপর আবার বলতে শুরু করে,”আমাকে কি কাঁচা হাতের খেলোয়াড় মনে হয়?
সায়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জব টা আমিই ছুটিয়েছি,তোর দিনাজপুর থেকে তোকে আমিই সরিয়েছি আর চলতি মাসে যে এক্সিডেন্ট টা হলো তাও আমিই করিয়েছি।কিন্তু কোন ক্ষতি তোর করি নি,যাতে তোর সন্দেহ আমার দিকে আসে।তোকে যে ফোন কল গুলো দেয়া হয়েছিলো তা এই শানই দিয়েছে।ভয়েস টা একটু চেঞ্জ করে।কতো চালাক তুই অথচ আমার একটু চালাকিতেই টুপ করে টোপ গিলে ফেললি!হাউ ফানি! হাহাহাহা”-অট্টোহাসিতে ফেটে পরে শান।

শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে থানায়।কেউ কোন কথা বলছে না।নীরা শুধু ফোঁসফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে।চোখে যেন আগুন ঝড়ছে তার।
পরশ মুচকি হেসে শানের দিকে ঠান্ডা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেয়।
“থ্যাংকস “-বলেই পানি খেয়ে শান একটু জিড়িয়ে আবার বলতে শুরু করে।

“এই যে গত তিন টা মাস ধরে তোকে দৌড়ের উপর রেখেছি কেন জানিস?তোকে তোর মাদকের মতো অবৈধ ব্যবসা থেকে একটু ডিসট্রাক্ট করে রেখেছিলাম কেন জানিস? যাতে সেই সুযোগে আমি আমার কাজ হাছিল করতে পারি, মুখোশের আর ক্ষমতার আড়ালে তোর রমরমা ব্যবসার খুঁটিনাটি ধরতে পারি।নিজেকে আড়ালে রেখে তোকে এতোদিন পুতুল নাচ নাচিয়েছি যাতে তুই নিজে থেকে আমার পাতানো ফাঁদে পা দিস।শেষমেশ আমার আশাটা গতকাল পরিপূর্ণ করে, আমার সাথে দেখা করার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিস।

চু চু চু, বড্ডো বোকামি করে ফেলেছো নীরা।তুমি কাল যা যা বলেছো তার সবটার প্রত্যক্ষ প্রমানের ভীষণ প্রয়োজন ছিলো আমার।কারণ তোমার ব্যপারে একশান নেয়ার মূখ্য যে কারণ টা তার কোন স্ট্রং এভিডেন্ট আমার ছিলো না।পরিকল্পিত ভাবেই যে আমার ওয়াইফের ক্ষতি করার চেষ্টা তুমি করেছিলে তার স্বপক্ষে যথাযোগ্য প্রমান আমি কাল পেয়েছি।হাহাহা….কি ভেবেছিলে কাল? নতুন করে প্রেমে মজে গেলাম তোমার?আরে প্রোস্টিটিউট পার্সোন তোর সাথে যে কি করে অতোক্ষন ওভাবে বসে ছিলাম তা আমি ভালো জানি”-কথা টা শেষ করতে করতেই ফোনের অডিও রেকর্ডার টা চালু করে শান।এরপর ফোনটা এগিয়ে দেয় পরশের দিকে।

“মি.রফিক যথাযথভাবে অডিও টা শানের এভিডেন্ট ফাইলে ট্রান্সফার করে দিন”-মুচকি হেসে একজন কনস্ট্যাবলকে বলে পরশ।
শান একটু পিছনে এসে চেয়ারে গা এলিয়ে বলে,”নীরা কাল আমার শ্বশুরের সাথে যে মিসবিহ্যাভ টা করেছো তার জন্যে কালকেই ওখানেই তোমার গলা চিপে মেরের ফেলার বড্ডো ইচ্ছে করেছিলো আমার।করিনি কেন জানো, কারণ আমি চাই নি একটা রাতের ব্যবধানে সবটা পাল্টে যাক। আমি জানি এক ঘন্টার ব্যবধানেই তোমার অনেক কিছু করার ক্ষমতা আছে।আফটার অর লম্বা হাত বলে কথা”-শেষের কথাটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে শান।

“শেষ?”-শানকে লক্ষ্য করে পরশ বলে।
শান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “ইয়াহ,আপাতত”
“সরি ম্যাম উই হ্যাভ টু এ্যারেস্ট ইউ রাইট নাউ”-বলেই পরশ একজন মহিলা কনস্ট্যাবলকে চোখে ইশারা করে।
“হোয়াট দ্য হেল ইজ দিস?এভাবে থানায় ডেকে এনে আপনারা কি করে এ্যারেস্ট করতে পারেন?এসব এলিগেশনের সত্যতা কতোটুকু?আপনারা জেনেছেন সবটা?প্রমান আছে?আপননার সাথে শানের পার্সোনাল রিলেশনের অপব্যবহার করছেন আপনি একজন পুলিশ সুপার হয়ে”-রাগে তেতে গিয়ে বলে নীরা।

মুখে সৌজন্যমূলক হাসি বজায় রেখে পরশ বলে,”আপনার কি মনে হয়, পুলিশরা ঘাসে মুখ দিয়ে চলে? না।এফ আই আর দেখুন দেন মামলা দেখুন।আপনার নামে আরো তিন মাস আগে এফ আই আর করা হয়েছে।আর গতকালকে সমস্ত প্রমাণাদির উপস্থিতিতে আপনার এগেইন্স্টে মামলা করা হয়।এই তিন মাসে পুলিশ আপনার সমস্ত অবৈধ কর্মকান্ডের নাড়িনক্ষত্র টেনে হিচরে বের করেছে।অবশ্য এক তৃতীয়াংশ কাজ শানই করেছে।আপনাকে কোন ইনফর্ম করা হয় নি কেন জানেন? আপনার হাত তো আবার অনেক দূর ওঁচা। তাই ভাবলাম প্রমাণাদি সহ একবারেই ভাত দিয়ে মুরগী ধরব।”-বলেই প্রমানের সমস্ত কাগজপত্র নীরার সামনে রাখে।

নীরা একে একে সব লেখা পড়ে থমকে যায়।মাথায় যেন চারদিকে থেকে সজোড়ে কেউ আঘাত করছে।ভনভন করছে আশপাশের প্রকৃতি।নীরার এতো গোপন ক্ষমতা থাকার পরেও সে কিচ্ছু করতে পারছে না।
“আমি জাস্ট তিনটা নম্বরে কল করব,মে আই?”
নীরার কথায় শান ভ্রুকুচকে ফেলে।পরশ ঠোঁট প্রসস্ত করে হেসে বলে, “ইয়াহ ইয়াহ, শিওর!”

“বাট শর্ত একটা আমাদের এখানে আই মিন সর্ব সম্মুখে কথা বলতে হবে।রাজি?”
নীরার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।কাপা কাপা হাতে নীরা ফোনটা নেয়।শান প্রশ্নাতুর চোখে পরশের দিকে চিন্তিত ভঙ্গিতে চায়।পরশ চোখের ইশারায় তাকে শান্ত থাকতে বলে।

” নীরা বলছি,আই নিড ইওর হেল্প রাইট নাউ”
“কোথাকার কোন নীরা বে, আমি তো তোমারে চিনতেছি না।খামোখা বিরক্ত করো না তো”-অপর পাশ থেকে বলা কথাতে পরশ হেসে ওঠে।শান নিশ্চুপ থাকে।
দ্রুততার সাথে পরশ ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,”হ্যালো স্যার, ডক্টর নীরা আপনাকে রেকমেন্ড করলো।আমাদেরকে যদি আপনার উত্তর জানাতেন?”
“পরশ তুমিও কিসব বলো, কোন নীরা টিরা কে চিনি না আমি। যা করার করো গিয়ে। “-পরশ হেসে ফোন কেটে দেয়।

আসক্তি পর্ব ৩৪

আগ বাড়িয়ে পরশ আবার বলে,”আর দুটো ফোন কলসের সুযোগ পাবেন ম্যাম। একটু তাড়াতাড়ি করবেন আমার আবার অন্য কাজ আছে”
নীরার বোঝার বাকি নেই এই বিপদে তাকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই আজ।তাই মনঃস্থির করে কাউকে ফোন দেবে না।
কিছুক্ষন ভেবে আবার বলে,”দুটো না আর জাস্ট একটা কল করব।”
“এজ ইওর উইশ ম্যাম”
নীরা নম্বর ডায়াল করে, রিং ও হয় কিন্তু কলটা কেটে যায়।আরেকবার রিং হতেই রিসিভ করে। নীরা ফোনটা চেপে ধরে পরশকে বলে,”আমি একটু পার্সোনালি কথা বলতে চাই”
শান তেতে ওঠে,”নো, নেভার। অনেক হয়েছে তোমার খেলা। আর কোন খেলা তোমায় খেলতে দিবো না আমি”

পরশ নীরাকে অনুমতি দিয়ে শানকে বলে,”রিল্যাক্স বস,এতো হাইপার হতে হবে না।ও চাইলে হাজার জন এমপি মন্ত্রীর সাথে কন্টাক্ট করুক না কেন কেউই ওকে হেল্প করবে না।কারন ওর এগিইন্স্টে সমস্ত এভিডেন্ট এই যে টেবিলে জ্বলজ্বল করছে।তাই টেনশনের কোন কারণ নেই।আর আমি আছি তো!”
শান শান্ত হয়ে বসে আছে। নীরা পাঁচ মিনিট পর ফিরে এসে থমথমে মুখে পরশকে ফোনটা ফিরিয়ে দেয়।
পরশ মুচকি হেসে মহিলা পুলিশকে ইশারা করে নীরাকে এ্যারেস্ট করতে।

শান এখন দূঃচিন্তা মুক্ত।পরশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ির অভিমুখে রওনা দেয়।উদ্দেশ্য পাখিকে সাথে নিয়ে এসে নীরার অবনতি দেখানো।খুশিতে ঝলমল করছে দুচোখ।

শানের ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে তখন থেকে।গাড়ির শব্দে তা খেয়ালই করে নি শান।ফোনের জ্বলতে থাকা আলোয় গাড়ি ড্রাইভ স্টপ করে রাস্তার পাশে দাঁড় করায় শান।নোটিফিকেশনে ১০ টা মিসড কল।ভ্রুকুচকে যায়।ভয়ে ভয়ে ফোনের লক প্যাটার্ণ খোলে…..

আসক্তি পর্ব ৩৬