আসক্তি পর্ব ৩৭

আসক্তি পর্ব ৩৭
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“পাখি প্লিজ স্টপ।আগে আমার কথা শুনো”-ঘরে ঢোকার আগ মূহূর্তে বলে ওঠে শান।
পাখি পিছন ঘুরে শানের কাঁধের উপর দুই হাত রেখে হেসে হেসে বলে,”উুহুহহহম,আজ আগে আমার কথা শুনবেন”

বলেই আবারও ঘরের ভিতর টানতে থাকে।শান বুঝতে পারছে না কি বলে শুরু করা উচিত। অনুভুতি গুলো বড্ডো ভোতা হয়ে গেলো এই মূহূর্তে।স্তম্ভের ন্যায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।হাতে টান পরায় পাখি পিছন ঘুরে তাকিয়ে বলে, “আসেন না!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“পাখি লালমনিরহাট যেতে হবে রাইট নাউ”-চোখ বন্ধ করে কথাটা বলে পূনরায় চোখ খুলে তাকায় শান।
খুশির এ মূহূর্তে কথাটা স্পষ্ট শোনালো না পাখির কাছে।ভ্রুকুচকে জানতে চায়,”বুঝি নি!”
শান ঐ মূহূর্তে আর কিছু না বলে পাখির হাত টেনে নিয়ে নিচে চলে যায়।সদর দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই পাখি বলে ওঠে,”কোথায় যাচ্ছি আমরা এতো রাতে?আর আমি তো রেডিও নই!”
শানের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। সে পাখিকে বের করে এনে গাড়ির দরজা খুলে দেয়।হা হয়ে চেয়ে দেখে পাখি।

“ভিতরে বসো ”
পাখি মুখটা থমথমে করে জবাব দেয়,”কোথায় যাচ্ছি সেটা তো বলবেন!
শান পাখির দিকে চেয়ে থাকে অসহায়ভাবে।চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নেয় ;কোন জবাব দিতে পারে না।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।কেউ কোন কথা বলছে না।পাখি বার বার ফিরে তাকাচ্ছে শানের দিকে কিন্তু কোন ইশারা কিংবা সাড়া কোনটাই পাচ্ছে না
“মনে মনে কতো প্ল্যান করে রাখলাম।সবটাই ভেস্তে গেলো।এই সার্জন যে কই নেয় আমায় সেটাই দেখার পালা!হুহহ,সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তো!”-আনমনে ভেবে পাখি মৃদুস্বরে চিৎকার বলে, “ওহহহহ আপনার সারপ্রাইজ টা দেবেন তাই তো?”

পাখির কথায় তড়িৎগতিতে ব্রেক কষে শান।হঠাৎ মনে হয় সারপ্রাইজের কথা।
“সারপ্রাইজ তো হবাই পাখি, তবে যা দিতে চেয়েছিলাম তার সম্পূর্ণ বিপরীত। খুশির বদলে অনন্তকালের চোখের পানি উপহার দিতে চলেছি আজ।আমি পারলাম না শেষ রক্ষা করতে”।
শানের ভাবনার মাঝেই পাখি বলে ওঠে, “কি হলো গাড়ি থামালেন যে আর কি এতো ভাবছেন?”
শান চোখের ইশারায় “কিছু না” বলে আবার ড্রাইভ শুরু করে।

“সেই গত দুই মাস ধরে সারপ্রাইজের কথা বলছেন।কালকেও বলেছেন।নিশ্চই দুপুরে সময় সুযোগ হয় নি তাই রাতে দিতে চাচ্ছেন! অবশ্য আপনার জন্যেও একটা গ্রেট সারপ্রাইজ ওয়েট করছে মি.সার্জন”-বলেই ফিক করে হেসে দেয় পাখি।শানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আপন মনে গাড়ি চালিয়েই যাচ্ছে।
“আরে আপনি তো তিস্তা পার করলেন!”-ব্যারেজ পার হয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে পাখি।
রাতের শহর, ফাঁকা রাস্তা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যে এতো তাড়াতাড়ি তিস্তা পার হলো বুঝতেই পারে নি শান।

“আমরা আমাদের বাড়ি যাচ্ছি?”-পাখির কথায় এবারও কোন প্রকিক্রিয়া নেই শানের।
কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে দাঁড়ায় পাখিদের বাড়ির গেইটের সামনে।মানুষের সমাগমে সুই ফেলবার মতোও জায়গা নেই। ঘাবড়ে যায় পাখি।চারিদিকে চেয়ে ঠাওর করতে পারে এটা তাদেরই বাড়ি।শুকনো ঢোক গিলে আস্তে করে দরজা খুলে বাহিরে দাঁড়ায়।বুঝতে পারে না এতো রাতে বাড়িতে কি হয়েছে!বুকটা ধকধক করছে তার।অজানা ভয়ে পা অবশ হয়ে আসছে।

“ভাবি!ভাবির কিছু হলো না তো!”-ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে পাখির।
শান ততোক্ষনে গাড়ি থেকে নেমে পাখির পাশে এসে দাঁড়ায়।শানের উপস্থিতি টের পেয়ে পাখি অসহায় মলিন মুখে সেদিকে চায়।শান তড়িৎগতিতে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।পাখিকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে পাখিকে ধরে ভিতর গেইট পর্যন্ত নিয়ে যায়।আশেপাশের সবাই করূন চোখে দেখছে পাখিকে।চেনা অচেনা লোকের ভীড়ে কিছুই বুঝতে পারছে না পাখি।শান ভীড় ঠেলে ভিতরে নিয়ে যায় পাখিকে।

সন্ধ্যের পরপরই শেষ গোসল করানো হয় শফিক সাহেবকে।সাদা কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে রেখে দেয়া আঙ্গিনার মাঝে, একমাত্র মেয়ের অপেক্ষায়।পাখি এদিক সেদিক তাকিয়ে বাড়ির সবাইকে খোঁজে ;পায় না।ফয়েজকে দেখতে পায় কারো সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারে কথা বলতে।

“ভাইয়া এখানে….”-আনমনে ভাবতেই শানের নজর অনুসরন করে হাতের বাম দিকে তাকায় পাখি।
মূহূর্তেই শীতল পাথরে পরিণত হয় পাখির সারা শরীর।নিথর হয়ে আসছে ধীরেধীরে। নিজের শরীরের ভারটা বড্ডো বেশি ভারি লাগছে। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে সেদিকে এগিয়ে যায় পাখি।ততোক্ষনে পাখির আসার কথা শুনে বাহিরে বেরিয়ে আসে বাড়ির সবাই।সবাই মুখে আঁচল চেপে কেঁদে চলেছে।এ দৃশ্য সত্যিই পৃথিবীর অন্যতম করূন দৃশ্যের মধ্যে একটি।ছোট বড় সবার চোখেই আজ ব্যথার জল সাথে কিছু প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা।

শানও পাখির পিছনে পিছনে ধীরপায়ে এগিয়ে যায়।সবাই নিস্তব্ধ এখন। পুরো বাড়ি নীরব। পিনপতন নীরবতায় ছেঁয়ে গেছে বাড়ির প্রত্যেকটা ইট বালির স্তর।
পাখি প্রশ্নবাণ চোখে চেয়ে থাকে খাটিয়ায় শুয়ে রাখা কাফনে মোড়ানো দেহটার দিকে।শুকনো ঢোক গিলে কাপা কাপা হাতে খাটিয়ার হাতল ধরে বসে পরে।
পাশ থেকে কেউ একজন বলে,”মুখের কাপড়টা সরিয়ে দাও কেউ। মুখটা দেখতে দাও”।বলেই কেঁদে ফেলে লোকটা।

পাখি সেদিকে একবার অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে পাশে দাঁড়ানো শানকে দেখে।
কেউ এসে মুখটা আলগা করে দিতেই বাবার কপালটা নজরে পড়ে পাখির।বুকের হার্ট বিট যেন হাতুরির ন্যায় শব্দ করছে।পুরো মুখটা খুলে দিতেই মাথার উপর থেকে ছাঁৎ করে দুটো কাক কা কা করে উড়ে যায়।মুখটা এক নজর দেখে সিটকে সড়ে আসে পাখি। শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় হাই ভোল্টেজের।শান বসে এক হাতে জড়িয়ে নেয় পাখিকে।নজরের ভুল ভেবে পাখি আবারও মুখটার দিকে তাকায়। না এবার আর কোন ভুল হয় না।চোখ বড় বড় করে সেদিকে চেয়ে দেখে।

“বাবা,বা বা,বাবাআআ”-চিল্লিয়ে ডুকরে ওঠে পাখি।পুরো বাড়ি যেন আবার মৃত্যুপুরীর বাড়িতে পরিণত হয়। কান্নার রোল পরে যায় আবারনআকাশ-বাতাস চারদিকে। সমস্ত প্রকৃতিও যেন পাখির কষ্টের কাছে হার মেনে চোখের জল ফেলছে।
পাখির আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে আসছে।দম বন্ধকর বিদঘুটে একটা সময় তৈরী হলো।
“ও বাবা বা বা, আমায় ছেড়ে কি করে চলে গেলে বাবা?তোমার একমাত্র আদরের মেয়েকে ছেড়ে গেলে বাবা?”

বোনের এমন অবস্থা দেখে সোহান দৌড়ে এসে বোনকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
“এভাবে কাঁদিস না রে। কাঁদিস না।আমি আছি তো!”-বলে শান্তনা দেয় সোহান।
ভাইয়ের বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে ওঠে।আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অস্ফুট স্বরে বলে,”ভাইয়া রে বাবা….. বাবা আমাদের এতিম করে চলে গেলো রে ভাইয়া”
রাশিদা বেগম সিঁড়িতে পিঠ ঠেকিয়ে নিষ্পলক চেয়ে আছে এতোদিনের সঙ্গীর দিকে। দ্বীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের পথচলা তাদের।মৃত্যুই যেন দুজনকে আলাদা করতে সক্ষম হলো।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরোচ্ছে না তার।

পাখির এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য সহ্য করার মতো ক্ষমতা শানের নেই।উপরে পাখির রুমে চলে যায়।বিছানায় বসে দুহাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে শান।উপর থেকেও পাখিরর গগনবিদারী আর্তনাদ শানের কানে পৌঁছাতে সক্ষম।বুকটা যেন ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে শানের।
“সরি পাখি, জান।আমি পারলাম না তোমায় আসল সারপ্রাইজ টা দিতে।মূহূর্তের মাঝে আমার গোছালো সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো।আমি পারি নি তোমার বাবাকে বাঁচাতে।ফেইলর ডাক্তার আমি;নিষ্কর্মা”
বলেই কেঁদে চলেছে শান।

পাখি কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে যায়।বার বার সেন্স ফিরছে আবার কান্না করতে করতে সেন্স হারিয়ে ফেলছে।শান ওর অবস্থা বুঝে ঘরে এনে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
রাত বাজে দুইটা।লাশ আর বেশিক্ষন রাখা যাবে না।তাই সবাই তড়িঘড়ি করে লাশের দাফনের ব্যবস্থার কাজে লেগে পড়ে।আর পাখিও ঘুমন্ত তাই যা করার এখনিই করতে হবে।কারণ পাখি কিছুতেই শোকটা সহ্য করতে পারছে না।সত্যিই কি একটা মেয়ের পিতৃ বিয়োগের শোক সহ্য করবার মতোন ক্ষমতা আছে?
শোকের মাত্রাটা এতো বেশি লাগছে পাখির কাছে ঘুমের ইনজেকশনটাও কাজে দিলো না।

“বাবা”-বলে চিল্লিয়ে উঠে বসে পাখি।নিচ থেকে পাখির চিৎকারে অবাক হয়ে যায় শান।দৌড়ে চলে আসে উপরে।দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখিকে।
“বাবা, বাবা কই আমার?”-অনুভূতিহীন চোখে শুকনো মুখে বলে পাখি।
শান পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আছে, বাবা আছে তো”
কথা জড়িয়ে আসে শানের।
বুঝতে পারে এভাবে মেয়ের অগোচরে বাবাকে দাফন করা উচিত হবে না।তাই ধীরপায়ে পাখিকে সাবধানে উপর থেকে নিচে নামিয়ে আনে।

একটু পর লাশ কাঁধে নিয়ে সবাই রওনা হয় দাফনের উদ্দেশ্যে।পাখির ধৈর্যের বাঁধ আর মানছে না কোনকিছুতেই।শানকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে ছুটে যায় চারজনের কাঁধে রাখা খাটিয়ার হাতল ধরতে। কান্নায় ভেঙ্গে পরে চারপাশ।
“কই নিয়া যাস ভাইয়া। বাবাকে ছেড়ে কি করে থাকব আমি”-পাখির মুখ থেকে উচ্চারিত একেকটা কথা যেন উপস্থিত সকলের বুক ফালাফালা করার ক্ষমতা রাখছে।
চোখের পানি সংবরন করে সোহান পিছনে না তাকিয়েই বাকিদের সামনে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়।
শান কোনমতে পাখিকে সামলে নিয়ে ভিতরে চলে যায়।
চোখের পানি মুছে মা কে বলে,”মা ওকে দেখে রেখো।আমি আসছি”
বলেই দাফনের জন্যে চলে যায়।খাটিয়া দৃষ্টির অগোচরে চলে যায় ;পিছন পিছন শানও।

এতোক্ষনে পাখি একটু শান্ত হয়।শান্ত হয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় সবার কাছে জানতে চায়, “বাবার কি হয়েছিলো?আমাকে একটি বারও ডাকার প্রয়োজন মনে করলে না কেউ?”
সবাই সবার দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কিন্তু কিছু বলছে না।পাখি কিছুটা ধমকের স্বরে বলে,”কেউ বলবা কিছু, কি হয়েছিলো”

“আজকে ভোরবেলা বাবা ফজরের নামাজ পড়ে এসে বেশ ফুরফুরে মেজাজে কুরআন শরীফ পড়েছে।এরপরর মা নাস্তা রেডি করে বাবাকে ডেকে আনে।নাস্তা সেড়ে পেপার পড়তে পড়তে ঝিমিয়ে পড়ে ওখানেই।মা একটু পর গিয়ে ডাকতে গেলে দেখে বাবার শরীর ঘামে ভিজে একাকার।বুকের বাম পাশে ডান হাতটা চিপে আধশোয়া হয়ে বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।মা দৌড়ে গিয়ে ধরে নেয় বাবাকে।বাবা কোন সাড়া দেয় নি;তবে শ্বাস চলছিলো।

চোখ খুলে মাকে সহ আমাদের সবাইকে একনজর দেখে বলে আমার অবস্থা ভালো না।শানের সাথে কথা বলব একটু।তোমার ভাইয়া ফোন বের করে শানের নম্বর ডায়াল করে কিন্তু শান রিসিভ করে না।দশ বার কল করে তোমার ভাই কলটা রিসিভ হয় না।এদিকে বাবার অবস্থা আরো খারাপের দিকে চলে যায়।পরে আমরা বাধ্য হয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে বের হলে তখন শানের কল পাই।আর তিনিই মেডিকেলে নিতে বলে”-পাখির ভাবি দম নিয়ে নিয়ে কথাগুলো বলে থেমে গেলেন।এরপর বাইপাস সহ সমস্ত কথা বলে পাখিকে।পাখির কান্নার বেগ বেড়ে গেছে আবারও।

ঘোর অন্ধকার চারিদিকে।শেষ রাতের সময় শুরু হয়েছে।আত্মীয়-স্বজনে বাড়ি ঘর ভরে গেছে।সবাই পাখিকে কিছু না কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কোন কাজ হচ্ছে না।রাশিদা বেগম অশ্রুশূন্য অবস্থায় বাকরূদ্ধ হয়ে বসে পথের দিকে চেয়ে আছে।বারান্দার অপর প্রান্তে বাবার একটি ফতুয়া জড়িয়ে নীরবে অশ্রু ফেলছে পাখি।

সবে মাত্র বাড়ির ছেলেরা দাফনকাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছে।ভীড়ের মাঝে কোথাও নিজের স্বামীকে দেখতে না পেয়ে এবার রাশিদা বেগমের আত্মা হুহু করে ডেকে ওঠে।দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে বলে,”কোথায় রেখে এলি তোর বাবাকে। কোথায় রাখলি?তোর বাবা আমাকে ছেড়ে একটা রাতও কাটায় নি রে সোহান।আজ কি করে থাকবে?”

বলতে বলতে কান্নায় লুটিয়ে পরে উঠানের মাঝে।শান এগিয়ে এসে ধরে নেয় শ্বাশুরিমাকে।সামলে নিয়ে নিজের ঘরে দিয়ে আসে তাকে।
পাখি নিষ্পলক চেয়ে আছে শানের দিকে।শান সেদিকে চেয়ে বুঝতে পারে পাখির আর কোনকিছুই বুঝে উঠার বাকি নেই।এলোমেলো পায়ে পাখির দিকে এগিয়ো যায়।শান কাছাকাছি আসতে পাখি উঠে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় নিজের রুমে।শানও চলে যায় একটু পর

“আমি জানি পাখি, তোমার চোখের ভাষা বোঝার মতো মন আমার রয়েছে।আমি জানি এবারই হয়ত সেই মূহূর্তের মুখোমুখি হতে হবে যেটা থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাচ্ছি”-ভাবতে ভাবতেই শান একদম দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়।দরজা হালকা ভেড়ানো। শান দরজাটা ঠেলে ভিতরে যেতেই পাখির কথায় থমকে যায়।
“এতো নামি, এতো দামি ডাক্তার হয়েও পারলেন না তো নিজের শ্বশুরকে বাঁচাতে?”
শানের পা যেন চলছে না আর।পুরো দুনিয়া ঘুরছে তার কাছে।জীবনের চরম বাস্তবতার মুখোমুখি আজ শান অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সে।

“আমার বাবাটা চলে গেলো সার্জন সাহেব, আপনারই চোখের সামনে।আপনি কিচ্ছু করতে পারলেন না।”-বলেই আবারও কেঁদে ওঠে পাখি। শান এলোমেলো পায়ে পাখির সামনে এসে দাঁড়ায়
পাখি শানের কোমড় আঁকড়ে জোড়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে,”সার্জন সাহেব আপনি আমার বাবাকে বাঁচাতেই পারলেন না।চলে গেলো তো আমায় এতিম করে! ”

আসক্তি পর্ব ৩৬

শান পাখির পাশে বসে চোখের পানি মুছে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে।কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায়।শান পাখির মাথাটা বুকের কাছে চেপে ধরে আস্তে আস্তে বলে,”সরি জান আমি পারলাম না বাবাকে বাঁচাতে।সে ক্ষমতা আমার হাতে ছিলো না।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি আপ্রান চেষ্টা করেছি। জানো আমি বার বার চেষ্টা করেছি কিন্তু..কিন্তু পারি নি। বিশ্বাস করো…. ”

শানের পাগলের মতো আচরন দেখে পাখি ঘাবড়ে গিয়ে মাথা তুলে বলে,”আমি বিশ্বাস করছি তো আপনাকে সার্জন সাহেব।আমি জানি আপনি কতোটা ভালোবাসেন আমার পরিবারকে।আমি এটাও জানি মৃত্যুর উপর আমাদের কারোরই হাত নেই।কিন্তু মনকে বোঝাতে পারছি না….. ”

শান শান্ত হয়ে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাবতে থাকে, “যাক ভুল বুঝোনি আমায়”
একটু পর ফজরের আজান দেয়।নির্ঘুম একটি রাত কেটে যায় অনায়াসে।সময় হলে সবাই সবার মতো নামাজে দাঁড়িয়ে পরে।ছেলেরা চলে যায় মসজিদে।

নামাজ শেষে মুনাজাতে বাবার কথা মনে পড়তেই ডুকরে কেঁদে ওঠে পাখি।এ কান্না শুধু স্রষ্টা আর সৃষ্টির মাঝে মেলবন্ধন তৈরী করে,এ কান্না পার্থিব জগতে বেঁচে থাকা সন্তানদের পবিত্র কান্না।এ কান্নার দোয়ার বেগ তীরের থেকেও দ্রুত ছুটে চলে

আসক্তি পর্ব ৩৮