আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৭

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৭
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

“আই বেগ ইউ।স্টে হেয়ার “,অনুভূতিহীন চাহনীতে চেয়ে বলে শান।পাখি অবাকের তুঙ্গে নিজেকে রেখে ভাবে,”এই মানুষ কাল রাতেও তো কতো কথা বলল আমায়?আর আজ?”
পাখিকে সর্বচ্চভাবে অবাক করে দিয়ে শান হাতজোড় করে পাখির সামনে।
“প্লিজ!”

পাখি নজর এদিক সেদিক করে নিজেকে ধাতস্থ করে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে।
সরাসরি শানের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেসা করে, “আমার কিছু জানার আছে ইনায়াহ্’র ব্যপারে”
“কি জানতে চাও বলো!”
পাখি ভাবতেও পারে নি শান এতো সহজে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইবে।শানের আচরনে বুঝা যায় একপাশে পৃথিবী অন্যপাশে ইনায়াহ্’কে রাখলে শান ইনায়াহ্’কে বাছাই করবে।
“কি হলো বলো, কি জানতে চাও?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ইনায়াহ্’র কি রোগ?ইনায়াহ্ আপনার কি হয়?সে যে আপনার মেয়ে নয় তা আমি জানি।তাহলে ইনায়াহ্ কে?,” শানের চোখে সরাসরি চোখ রেখে কাটকাট গলায় প্রশ্ন করে পাখি।
শান সোজা দাঁড়িয়ে বলে,”আজ অবধি কোন মেয়ের সাহস হয় নি এই ফয়সাল আহমেদ শানের চোখে চোখ রেখে কথা বলবার যা তুমি করছো”
শানের কথায় পাখি চোখ নামিয়ে অন্যদিকে চেয়ে থাকে।
“ইনায়াহ্’র অসুস্থ্যতার এডভান্টেজ নিও না।ফল ভালো হবে না।”,স্বগতোক্তি করে শান চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

“আমি কোন এডভান্টেজ নিচ্ছি না।আমি যেহেতু ওর গভারনেস হিসেবে থাকব সেহেতু ওর ব্যপারে সব কথা জানার অধিকার আমার আছে।আর এটা যদি এডভান্টেজ হয় তো হবে”,শেষের কথাটা কাপা কাপা স্বরে বলে বুকে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে পাখি।
কিছুক্ষন আগে…

খুব ভোরবেলা উঠে পাখি ফ্রেশ হয়। রুমে ঢুকে ইনায়াহ্’র পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে স্বরে বলে,”খুব অল্প সময়ে তোমার বাঁধনে বাঁধা পরেছি সোনা।কিন্তু কি করব বলো নিজের আত্মসম্মানটাকে খোয়াতে যে পারব না। তোমার সান সাইনের চোখে পৃথিবীর প্রতিটা মেয়েই এক। আমিই বা বাদ থাকি কী করে!তাই তো কারণে -অকারণে আমায় হেয় করতে তার বাঁধে না।”
নিজের হাতটার দিকে চোখ রেখে বলে,”আঘাত দিতেও ভাবে না”

এরপর দুচোখের পানি মুছে বলে,”আমি জানি না আমি কোথায় যাব।শুধু এটুকু জানি এ বাড়ি আমার জন্যে না।হয়ত এই পৃথিবীটাই আমার জন্যে না।সরি মা।আমি আসছি।আমায় ভুল বুঝো না ”
বলেই ইনায়াহ্’র কপালে চুমু এঁকে উঠে দাঁড়ায়।দুহাতে চোখের জল মুছে পাখি সিদ্ধান্ত নেয় এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে সে।ভাবনা অনুযায়ী সন্তর্পণে পা বাড়িয়ে দেয় চৌকাঠের বাহিরে।
“মুন সাইন”

ইনায়াহ্’র কথায় বাহিরে রাখা পা টা থমকে যায় মূহূর্তেই।চোখ বন্ধ করে ফেলে পাখি।
“সান সাইন তোমায় খুব বকে, তাই না?”,কাঁদো কাঁদো স্বরে কথাটা বলে ইনায়াহ্।
ইনায়াহ্’র গলার কান্নার স্বরে পাখি পিছন ফিরে তাকায়।বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ইনায়াহ্ তার বলা প্রত্যেকটা কথাই শুনেছে। খেয়াল করে দেখে ইনায়াহ্ কাঁদছে।দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে পাখি ইনায়াহ্’র মাথাটা বুকে জড়িয়ে বলে,”কাঁদছো কেন?তুমি না আমার স্ট্রং বেবি।কাঁদে না মা।ঘুমের ভান করে আমার সব কথা শুনছিলা না?”

ইনায়াহ্ কোন প্রতিউত্তর ছাড়াই শব্দহীন কেঁদে চলে।ওর মায়াবি মুখটা যেন পাখিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে ওর মায়ায়।
“আমার কথা শুনো মা, এভাবে কেঁদো না।আমি যা বলি মন দিয়ে শুনবা।কোনরকম হাইপার হবা না কেমন?”,দুহাতে ইনায়াহ্’র চোখ মুছে বলে পাখি।
“তোমার হাতে কি হয়েছে?দেখি দেখি?”,হন্তদন্ত হয়ে পাখির হাত দেখতে চায় ইনায়াহ্
পাখি আমতা আমতা করে বলে,”ওও ককিছু না মা। এমনিই কালো হয়েছে”
“এটা তো কারো হাত।ঐ যে পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ দেখা যায় মুন সাইন”,মুখে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে ইনায়াহ্।

পাখি চায় না ইনায়াহ্’কে মিথ্যে বলতে।আবার সত্যিটা বলাও অসম্ভব।তাই উপায়ন্তর না পেয়ে বলে,”কাল রাতে একটা বিশাল দেহের ভ্যাম্পায়ার এসেছিলো আমার ইনায়াহ্ বেবিকে ধরতে। পরে আটকে দিলাম।ব্যাস আমার হাত চেপে ধরলো।দেখো না কি করেছে”,বলতে বলতে পাখি ঠোঁট উল্টিয়ে কান্নার ভান করে।
পাখির আচরন দেখে খিলখিলিয়ে ওঠে ইনায়াহ্।পাখি বুঝতে পারে এটাই মূখ্যম সময় ইনায়াহ্কে সবটা বুঝনোর।ও নিশ্চই বুঝবে।

“আমি তোমায় এখন কিছু কথা বলব বেবি।মন দিয়ে শুনবা, হুমমম?”
“হুম”

“আমি আজ তোমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছি।তুমি তো জানো আমি তোমায় কতো ভালোবাসি। কিন্তু তোমার সান সাইন চায় না আমি এ বাড়িতে থাকি।আমায় একটুও দেখতে পারে না সে।আমি কি করব বলো?তোমার সান সাইনের কথায় আমি অনেক হার্ট হয়ে যাই।খুব কষ্ট হয় তোমার সাথে থাকতে।তাই আমি চলে যাই।আমি রোজ তোমার সাথে কথা বলব।মাঝে মাঝে চলে আসব তোমায় দেখতে।তুমি বুঝেছ তো আমি কি বললাম,”বলেই পাখি ইনায়াহ্’র প্রতিক্রিয়া বুঝার চেষ্টা করে।ওতোটুকু মাথায় কি ঢুকল কে জানে।স্থির দৃষ্টি মেলে বললো,”তোমার তো যাওয়ার কোন জায়গা নেই।তুমি কোথায় যাবে?”

“আমি ঠিক আমার বাড়ি চলে যাব সোনা।”
পাখির কথা শুনে ইনায়াহ্ একবাক্যে বলে ওঠে, “না।আমি তোমায় কোত্থাও যেতে দিবো না।দরকার পরলে আমি সান সাইনকে বকবো।তবু তোমায় যেতে দিবো না”
পাখি চিন্তিত মুখে ভাবতে থাকে,”কি করে, কি করব আমি”
“একটু বুঝার চেষ্টা করো মা।এভাবে আমার পক্ষে থাকা টা একেবারেই অসম্ভব।”,ইনায়াহ্’র হাত দুটো হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে পাখি।
“আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না।তোমার কোথাও যাওয়া হবে না”,ইনায়াহ্’র একরোখা জবাবে পাখি থম মেরে বসে পরে।

ইনায়াহ্ আবার বলে,”তোমার কোথাও যাওয়া হবে না,হবে না, হবে না।গট ইট!”
বলেই এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।মূহূর্তেই চোখ মুখ উল্টে আসে ইনায়াহ্’র।
“ইনায়াহ্, বেবি।কি হলো বাবা এমন করছো কেন?”,ঘাবড়ে গিয়ে পাখি ইনায়াহ্কে জড়িয়ে নেয়।মূহূর্তেই ইনায়াহ্’র সারা শরীর দরদর করে ঘামতে থাকে।এক দৃষ্টে চেয়েই ইনায়াহ্’র ডান পা টা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে।অবস্থা বেগতিক দেখে পাখি জোড়ে জোড়ে ইনায়াহ্ বলে চিৎকার করে।
গত রাতে ঘুমাতে দেড়ি হওয়ায় শানের ঘুম এখনো ভাঙ্গছে না।ঘুমের মাঝে পাখির গলার তীব্র আওয়াজে বিছানায় টিকতে পারে না শান।উঠে বসে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টার করে।”

“ইনায়াহ্” নামটা কানে আসতেই সমস্ত ঘুমের ঘোর কেটে যায় শানের।একপ্রকার দৌঁড়ে ছুটে আসে এ ঘরে।
“ককি হয়েছে? ইনায়াহ্,মাম্মাম”,গলার স্বর নিচু হয়ে আসে শানের।দ্রুত এগিয়ে পাখির থেকে ইনায়াহ্’কে ছড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয় শান। মূহূর্তেই ইনায়াহ্’র সারা শরীরে প্রবল ঝাঁকুনি শুরু হয়ে যায়।শানের বুঝতে বাকি থাকে না ইনায়াহ্ এ্যাটাক্ড।
দ্রুত পাল্স ধরে ফেলে শান।পাখি ইনায়াহ্’র অবস্থা দেখে ঘাবড়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
শান ধমকে বলে, “কি বলেছো তুমি ওকে? ”

পাখি কিছু বলার আগেই শান আবার বলে,”ঘড়ি?ঘড়ি কোথায়? ঘড়ি ধরো?”
শানের হুংকারে পুরো বাড়ি সমেত কেঁপে ওঠে পাখি।তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে।
দুই মিনিট অতিক্রম হবার পর ইনায়াহ্’র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।পিটপিট করে চোখ খুলে বলে,”পানি, পানি খাবো ”

পাখি দ্রুত জগ থেকে পানি ঢেলে ইনায়াহ্’র মুখের কাছে ধরে।ঢকঢক করে পানিটা শেষ করে ইনায়াহ্।এরপর পাখি ওকে আবার শুয়ে দিতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয় ইনায়াহ্’র দু’চোখ।
শান বিছানায় বসে হাটুঁতে কনুই গেড়ে দুইহাতে মুখ চেপে বসে থাকে।পাখি এতোক্ষনে হাফ ছেড়ে সরে আসতেই শান ঐ অবস্থা থেকেই জানতে চায়, “ইনায়াহ্’কে কী বলেছো?”

পাখি দাঁড়িয়ে পরে।কোন কথার উত্তর দেয় না।শান এবার ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,”ইনায়াহ্’কে এমন কী বলেছ যার জন্যে ও এতো হাইপার হলো?”
“কোন রকম ঘুরানো প্যাচানো ছাড়াই কথা বলবা।বলো কি বলেছো?”
শানের চোখের দিকে তাকিয়ে পাখি দারাজ কন্ঠে বলে,”আমি আপনার বাড়িতে আর এক মূহূর্তও থাকব না মি.শান।”

শান কয়েক মূহূর্তের জন্যে চোখ বন্ধ করে। বোধগম্য হতে দেরি হয় না পাখি ইনায়াহ্’কে কি বলতে পারে।
চোখ খুলে বলে,”সেদিন কেন এই কথা বলো নি যেদিন চোরের মতো ডিকিতে করে আমার বাড়ি এসছিলে?”
“সেদিন বুঝতে পারি নি আপনি কতোটা জঘন্য।আপনার মন মস্তিষ্ক কতোটা নোংড়া”,দাঁতে দাঁত চেপে নির্ভয়ে জবাব দেয় পাখি।
“শাট ইওর মাউথ আপ।”,পাখির দিকে তেড়ে এসে রাগি কন্ঠে বলে শান।
পাখি অপরিবর্তিত থেকেই জবাব দেয়,”মেইনটেইন ডিসটেন্স।”

শান অবাক হয়ে যায়।ভাবতেও পারে নি পাখি তার কথা তাকেই ফিরিয়ে দেবে।বুকের দিকে চেয়ে দেখে আর মাত্র ইঞ্চি কয়েকের দূরত্ব তাদের মাঝে।তবুও শান দাঁড়িয়ে থাকে পাখির সামনে।
“সামনে থেকে সরুন।আমায় যেতে দিন।আর এক মূহূর্ত এ বাড়িতে না “,বলেই পাখি শানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই নিজেই দুই পা সরে যায়।চেয়ে দেখে শান নিজের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়ে নি।এদিকে নিজের অবস্থা দেখে ভাবে,”কি গন্ডার একটা!একটু নড়লোও না!আমিই সরে গেলাম!”

শান ওর দিকে সামান্য ঘুরে বলে,”ডু ইউ হ্যাভ এ্যানি আইডিয়া,হাউ মাচ ইনায়াহ্ লাভস ইউ!হুমম?
পরপর দুইদিন সে এমন হলো তাও তোমার জন্যে।এটাকে কি ছেলেখেলা মনে করো তুমি?”
শানের কথায় পাখি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে কিন্তু মনে মনে ভাবে,”সত্যিই তো আজ নিয়ে দুইদিন ইনায়াহ্ এমন হলো।সেটাও আমার জন্যে।কিন্তু কেন?কি এমন কারণে এমন হয় ইনায়াহ্? আজকে এই সুযোগে সবটা জানতে হবে আমায়।”

পাখির বাহ্যিক ভঙ্গিমা বলছে সে আজ কারো কথা শুনবে না;চলে যাবেই।
“কিন্ত আমার মাম্মাম!ও তো একে ছাড়া থাকতেই পারবে না”,ভাবতেই মুখটা অন্ধকারে ঢেকে যায় শানের।
পাখির সামনে অসহায় হয়ে পরে মূহূর্তেই।
“যাই করা লাগে করব তবু আমার ইনায়াহ্’র জন্যে ওকে যেতে দেব না আমি।”
ভেবেই পাখিকে অনুভূতিহীন চোখে বলে, “আই বেগ ইউ।প্লিজ স্টে হেয়ার”

“এপিলেপসি।ইনায়াহ্ এপিলেপসি রোগে আক্রান্ত ;মানে শুদ্ধ বাংলায় যেটাকে আমরা মৃগী বলি।খুব বেশি জিদ বা রাগ বা ওর ব্রেইন যখন কোন কিছু মানতে চায় না তখন এই সমস্যা দেখা দেয়।অনেক লম্বা সময় ধরে এই রোগের ট্রিটমেন্ট চালাতে হয়।ওরও ট্রিটমেন্ট চলছে।এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোন ফল পাচ্ছি না।তুমি আসার পর পরপর দুইদিন এমন হলো।যেটা মোটেও ভালো লক্ষন নয়।এবার বুঝতে পেরেছ ইনায়াহ্ তোমায় ঠিক কতোটা ভালোবেসেছে?”,স্বাভাবিকভাবে বলে শান।
শানের মুখে ইনায়াহ্’র রোগের কথা শুনে থমকে যায় পাখি।কিচ্ছু বলার মতো খুঁজে পায় না।নিজেকে কেমন যেন দোষী লাগে তার।

“আমার অবর্তমানে এমন হলে ওকে কোন প্রকার জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করবে না।পারলে ওর আশপাশে থেকে সমস্ত বিপদজনক জিনিস সরিয়ে রাখবে।আর ওকে শুইয়ে দিবে।এই ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি সাধারনত দুই মিনিটের বেশি থাকে না।আর যদি কোনও ভাবে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে তবে ইমিডিয়েট আমায় কল করবে নয়ত আব্দুল্লাহ্ চাচাকে নিয়ে মেডিকেলে পৌঁছে যাবে। “,শান কথাগলো বলে পাখির প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করে।
পাখি অবাক বিষ্ময়ে মনোযোগ দিয়ে শানের কথা গুলো শুনে বিড়বিড় করে বলে,”ইন শা আল্লাহ্, আজকের পর থেকে আর কোনদিন ইনায়াহ্’র এই অবস্থার পূনরাবৃত্তি হবে না।”
“কিছু বললে?”

“নাহ”,মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে নির্লিপ্ত চোখে চেয়ে জবাব দেয় পাখি।
“ওকে”,বলেই শান বিপরীত দিকে ঘুরে চলে যেতেই পাখি আবারও বলে,”আমার সেকেন্ড প্রশ্নের উত্তর? ”
শান একরোখা জবাব দেয়,”ওটা তোমার এখতিয়ারের মাঝে পড়ে না।”
“তবুও আমার জানতে চাই!”,ফিরতি উত্তর জানায় পাখি।
“নইলে,নইলে আমি থাকব না”,এলোমেলো ভঙ্গিতে স্বগতোক্তি করে পাখি।
শান কটাক্ষ করে হেসে বলে,”এই নাকি তোমার ভালোবাসা হ্যাহ?যে কিনা নিজের জিঘাংসা পূরনের জন্যে ছোট্ট একটা অবুঝ শিশুর নাজুক অবস্থাকে কাজে লাগায়;এডভান্টেজ নেয়!”
“বলেছি না, এডভান্টেজ হলে সেটাই।তবুও আমি জানতে চাই ইনায়াহ্ আপনার কে হয়?”,নাছোড়বান্দার মতো প্রশ্ন করে পাখি।

শান বিরক্ত হয়ে বলে,”ভাগ্নি।আমার ভাগ্নি হয় ও।একমাত্র আদরের ছোট বোন টিনার একমাত্র মেয়ে ও ।যাকে ঘিরে আমার পূরো পৃথিবী আবর্তিত।ওর বয়স যখন আঠার মাস তখন ওর মা মারা যায়।মাম্মামের জন্মের সময় কিছু জটিলতার কারণে আজ ও এপিলেপসি রোগের রোগী।আর এখন ও আমার মেয়ে।পুরো দুনিয়া জানে ও আমার মেয়ে।আর এটাই ওর পরিচয়”

পাখি ভাবতেও পারছে না কেউ নিজের ভাগ্নিকে এতো আদরে নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড় করে তুলতে পারে।পাখির সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,”তোমার আরো কিছু জানতে চাই?”
মুখ টা হা করা অবস্থাতেই পাখি মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়, “না”
“তবে কিছু বলার আছে।”,পূনরায় বলে পাখি।শান ভ্রুকুচকে চেয়ে থাকে।প্রশ্ন করে, “কী?”

“আমি আপনার বাড়িতে গভারনেস হিসেবে থাকব।যেমনটা অন্য গভারনেসকে বেতন দিতেন আমাকেও অনুরূপ দিতে হবে।মানে বেতনভুক কর্মী হিসাবে রাখবেন।তবে, তবে মাস শেষে যে টাকাটা আমায় দেবেন সেটা নিজের কাছেই রেখে দেবেন।আপনার বাড়িতে থাকা, খাওয়া,কারেন্ট বিল,পানি বিল ইত্যাদি আনুষাঙ্গিক খরচ হিসেবে সেটার পুরোটাই কেটে রাখবেন।এটুকুই বলার ছিলো।তবুও আমায় হেয় করে কোন আচরন করবেন না।কিংবা আমায় কোনভাবে অপমান করার চেষ্টাটিও করবেন না।আপনার জীবনে কোন মেয়ের কি অবস্থান ছিলো আমি জানি না;জানতে চাইও না।তবে আমায় সম্মান করে কথা বলতে হবে।মনে রাখবেন পৃথিবীতে সব মানুষ এক নয়”,এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে দম নেয় পাখি।
শান কিছু না বলে রাগিচোখে পাখির দিকে চেয়ে থাকে।পাখির এই কথাগুলো মেনে নেয়া ছাড়া তার কাছে কোন দ্বিতীয় অপশন নেই।

“সান সাইন”,ইনায়াহ্’র ডাকে দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়। পাখি দ্রুত গিয়ে বসে পরে মাথার কাছে।
“এখন কেমন লাগছে মা?”,
“ভালো “,অস্ফুট স্বরে জবাব দেয় ইনায়াহ্।
শান দ্রুত গিয়ে ইনায়াহ্’র পায়ের কাছে বসে বলে,”আর ইউ ওকে মাম?”
ইনায়াহ্ মুখ ফিরিয়ে গাল ফুলিয়ে থাকে।শান ভ্রুকুচকে বলে, “কি হলো?এতো রাগ করেছে কেন আমার জান টা”
ইনায়াহ্ মুখ ফুলিয়ে বলে,”তুমি খুবই পচা।তুমি আমার মুন সাইনকে হার্ট করো। আমি তোমার সাথে কথা বলব না”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৬

“ওকে বাবা ।আর করব না”,শেষের কথাটা পাখির তাকিয়ে বলে শান।
ইনায়াহ্ পাখিকে দেখিয়ে বলে, “সরি বলো”
“পরে বলি?”,শান মুখে মিথ্যে হাসির রেখা টেনে বলে।
ইনায়াহ্ কঠিন স্বরে জবাব দেয়, “নো, রাইট নাউ।”
“ওকে ওকে মাম,বলছি”
“হুম বলো”
শান পাখির দিকে তাকিয়ে দেখে রাজ্যজয়ের ভাব তার চোখে মুখে বিরাজ করছে।পাখি ডান ভ্রু টা সামান্য উচিয়ে ভাব নিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।
শান সেদিকে একবার চেয়ে বলে,”সরি”

“বলো আর কখনো তোমায় হার্ট করব না।বলো?”,দ্বিতীয় হুংকার দেয় ইনায়াহ্।
শান ইনায়াহ্’র বলা কথাটার দ্বিরুক্তি করে পাখির দিকে দাঁত কটমট করে বলে,”আর কখনো তোমায় হার্ট করব না”
“এবারে ঠিক আছে,”বলেই ইনায়াহ্ শানের গলা জড়িয়ে ধরে।
শান ওকে জড়িয়ে পাখির দিকে চেয়ে বলে,”তুমি খুশি তো মাম?”
“হ্যাএএএ,অনননেক”
শানের চাহনীতে পাখির বোঝার বাকি থাকে না শান কি বোঝাতে চাইলো।এটাই যে ইনায়াহ্’র খুশির জন্যে সে সবকিছু করতে রাজি।

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৮