এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১২ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১২
নুর নাফিসা খুশি

কিছুক্ষন হাঁটার পর খুশির চোখ যায় নদীর দিকে। সেখানে একজনকে দেখা যাচ্ছে। খুশি একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে চিনে ফেলে।চিৎকার করে বলে,
“অরিন!”
খুশি দৌড়ে নদীর দিকে যায়। মাহির কিছুই বুঝল না। সেও গেল খুশির পিছু পিছু।
“অরিন এই অরিন।দেখ আমি এসেছি।”(খুশি)

বড় বটগাছের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো অরিন। তখনি খুশির ডাক শুনতে পায়।খুশি এসে অরিনকে জরিয়ে ধরে আর বলে,
” অরিন তোকে অনেক মিস করেছি আমি। কেমন আছিস কুত্তি।”
“আমিও মিস করেছি অনেক আর আমি ভালো আছি।”
খুশি কিছু একটা ভেবে এদিক সেদিক কি যেনো খুঁজতে লাগে।ততক্ষনে মাহিরও তাদের কাছে চলে আসে।অরিন একটু ভয় পেয়ে বলে,

” কি খুঁজছিস?”
“আরে দাঁড়া দাঁড়া আমার নাকে ইটিস পিটিস করার গন্ধ আসছে।”
” মানে কি?”(মাহির বিরক্ত হয়ে বলে)
“আরে ভাইয়া তুমি বুঝবা না ওয়েট আমি বার করছি।”
বলেই খুশি বটগাছের পিছনে গিয়ে অর্জুনের কান ধরে বের করে নিয়ে আসে। মাহির অর্জুনের ছবি দেখেছে তাই দেখেই চিনতে পেরেছে অর্জুনকে। মাহির বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আরে তুই অর্জুন না! তুই গাছের আড়ালে কেন লুকিয়ে ছিলি?”
“আরে ভাইয়া তুমি কি বুঝবা অর্জুন ভাইয়া কেন লুকিয়েছিল। যদি তুমি প্রেম করতা তো বুঝতা।”(খুশি)
” আমার কানটা ছেড়ে কথা বল খুশি।ব্যাথা লাগছে আমার।”(অর্জুন)
“তুই থাম শালা।খুশি কি বুঝাতে চাচ্ছিস খুলে বল।”(মাহির)
” ওই যে দেখছো সুন্দরী।আমার ছোট কালের ফ্রেন্ড, অরিন।আর এই যে আমার ধোয়া তুলসীপাতা অর্জুন ভাইয়া।অরিনের প্রেমে পাগল। এখন নিশ্চয়ই প্রেম করতে এসেছিলো এখানে।”

খুশির কথায় অরিন অর্জুন অনেক লজ্জা পাচ্ছে কারণ মাহির অর্জুনের বড়।
“আরে শালা আর লজ্জা পেতে হবে না।”(বলেই মাহির অর্জুনকে জরিয়ে ধরে)
” কেমন আছো ভাই।”(অর্জুন)
“ভালোই।”
” মাহির দা তুমি অর্জুন ভাইয়াকে বার বার শালা কেন বলছো?মামার তো মেয়েও নেই যে তুমি বিয়ে করবা?”( খুশি)
মাহির অর্জুন দুই জনেই খুশির মাথায় বারি দিয়ে বলে,
“তুই বুঝবি না আবুল।”

” আচ্ছা এবার বাড়িতে চলো সবাই।তোমরা অনেক জার্নি করে এসেছো,রেস্টের প্রয়োজন।” (অরিন)
তারপর অর্জুন,অরিন,খুশি,মাহির আবার হাঁটা ধরে বাড়ির দিকে। রাস্তাতেও খুশি মাহিরের সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে যাচ্ছে। ঝগড়া করতে করতে এক সময় খুশি মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদা ওয়ালা জমিতে ফেলে দেয়।মাহির তো রেগে আগুন।খুশি ভয়ে দৌঁড় লাগায় কিন্তু মাহির গিয়ে খুশিকে ধরে ফেলে আর কাদায় ফেলে দেউ। দুইজনেই কাঁদায় মাখামাখি।ওদের কান্ড দেখে অরিন অর্জুন হাসতে হাসতে শেষ।খুশি ব্যাগ নিয়ে আসে নি কারণ তার জামাকাপড় এখানেও আছে।আর মাহিরের ব্যাগ অর্জুনের কাছে তাই ব্যাগ গুলো বেঁচে গেছে কাঁদা থেকে।মাহির খুশি একে ওপরের সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে এক সময় কাঁদাতেই বসে পরে ক্লান্ত হয়ে। এইদিকে অরিন অর্জুন হেসেই যাচ্ছে। তখনি খুশির মাথায় একটা প্লান আসে। মাহির কে ইশারায় বুঝিয়ে দেয় কি করতে হবে। তখনই মাহির আর খুশি উঠে দাঁড়ায়। মাহির বলে,

“অর্জুন হেল্প মি আমার হাত টা ধরে ওপরে নিয়ে যা।”
খুশিও সেম কথা অরিন কে বলে। অর্জুন ব্যাগ রেখে মাহিরের হাত ধরে আর অরিন খুশির তখনি জোরে টান মারে মাহির আর খুশি। আর অর্জুন অরিন ধপাস করে কাঁদায় পরে। মাহির,খুশি এবার হেসে দেয়।
” ভাই এটা কি করলা?”(অর্জুন)
“খুশির বাচ্চা এটা হলো?” (অরিন)

” ঠিক হয়েছে ঠিক হয়েছে।আমাদের এই অবস্থা দেখে তোমরা মজা নিবা আর আমরা ছেড়ে দিব হুহহহ।”(খুশি)
৪ জনে অনেক দুষ্টুমি করে বাড়িতে চলে যায়। অরিন তার নিজের বাড়িতে চলে যায় আর খুশি মাহির অর্জুন নানু বাড়িতে আসে। কাঁদা মাখা অবস্থায় তিন জনে বাড়ি ঢুকে।নানু চিনতে না পেরে বলে,
“এই এই কে রে তোরা বাড়িতে ঢুকস।”
” আরে দাদি আমি অর্জুন আর সঙ্গে খুশি মাহির।”
তখনি বাড়ির ভিতর থেকে মামা মামি বের হয়ে আসে।
“আরে তোদের এই অবস্থা কি করে হলো?”(মামি)

” আসলে মামি আসার সময় একটা বড়ো মাছ দেখেছিলাম একটা জমিতে তো আমরা ধরতে যাই তিনজনে।কিন্তু কেউই পারলাম না ধরতে। উলটা কাঁদায় লেপ্টে গেলাম।”(মন খারাপ করে বলে খুশি)
“মিত্থুক একটা।”(মাহির মনে মনে)
” কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে মাহির যখনই এই বাড়ি আসে তখনি কাদায় লেপ্টে আসে।ভালো ভাবে কখনো আসে না।”(বলেই হাসতে লাগলো মামা)

তারপর তিন জনে গোসল করে নিল। গোসল করে মাহির সবার সাথে অনেকক্ষন কথা বললো। পুরা ১২ টা বছর পর নানু বাড়ি এসেছে।নানুর সঙ্গে অনেক গল্প করে মাহির খুশির বিষয় নিয়েও বলে। কথা শেষ করে রুমে আসে মাহির,ঘুমাবে তাই। এই দিকে খুশির চোখে ঘুম নেই।ঘুম থাকবে কি করে মাহিরের কাধে মাথা রেখে ৯ ঘন্টা ঘুমিয়েছে খুশি। মাহির খুশিকে অনেক যত্নে আগলে রেখেছিল ঘুম ভাঙ্গতে দেয়নি একদমই। খুশি উঠে নিজের বাড়িতে চলে যায় আব্বু আম্মুর সঙ্গে দেখা করতে। খুশি ভেবেছিল মাহিরকেও নিয়ে যাবে কিন্তু মাহির ঘুমিয়ে আছে তাই আর ডাকেনি।

রোদ তার এক ফ্রেন্ড এর সঙ্গে দেখা করার জন্য শপিং মলে আসে। এসেই তার চোখ পরে অথৈ এর দিকে। অথৈ একটা ছেলের সঙ্গে শপিং মলে এসেছে আর শপিং করছে। রোদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় অথৈ কে অন্য ছেলের সঙ্গে দেখে।কারণ রোদ অথৈকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করে। অথৈ রোদের স্টুডেন্ট হওয়ায় ব্যাপারটা ওতো পাত্তা দেইনি রোদ কিন্তু আজ অন্য ছেলের সঙ্গে ঘুরাফিরা দেখে অনেক রাগ লাগছে তার। রোদের মন করছে এখনি ওদের কাছে গিয়ে অথৈকে টানতে টানতে নিয়ে আসতে। কিন্তু কোন অধিকারে নিয়ে আসবে?

অথৈ শপিং করতে করতে এক সময় অনুভব করে তার দিকে কেউ তাকিয়ে আছে। অথৈ এদিক ওদিক দেখে কিন্তু কাউকে দেখতে পায়না কারণ রোদ আড়েলে চলে গেছে তাই। অথৈ এর কেমন জানি লাগে কিন্তু পাত্তা না দিয়ে শপিং এ মন দেয়।এই দিকে রোদ ফ্রেন্ড এর সঙ্গে দেখা করা বাদ দিয়ে অথৈ এর পিছু পিছু ঘুরতে লাগে। প্রেম পরলে মানুষ কি না করে। তাই তো রোদের মতো একটা ভদ্র ছেলে কি না একটা মেয়ের পিছু ঘুরছে। অথৈ আর ছেলেটা শপিং শেষ করে রেস্টুরেন্টে ঢুকে।খাবার অর্ডার দিয়ে গল্প করছে দুইজনে। রোদ একটু দূরে থেকে দেখছে সব। রোদ বুঝতে পারছে না শুধু ফ্রেন্ড নাকি বয়ফ্রেন্ড তা। খাবার আসলে অথৈ আর ছেলেটা খেতে থাকে। এক সময় ছেলেটা অথৈকে নিজের হাতে খাইয়ে দেই যা দেখে রোদের মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। রোদ উঠে অথৈ এর কাছে গিয়ে অথৈ এর হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যায়।কাউকে কিছু বলার সুযোগই দেয়না রোদ।

মাহিরের ঘুম ভাঙলে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। তার আগে খুশির রুমে দেখে খুশি আছে নাকি।কিন্তু নেই। নিচে এসে দেখে নিচেও নেই। রান্না ঘরে মামি ছিলো।কোন ভনিতা ছাড়াই বলে,
“মামি খুশি কোথায়?”
” নিজের বাড়িতে গেছে বাবা। তুমি বসো আমি নাস্তা দেই।”
“না মামি পরে খাব।”

বলেই মাহির চলে যায় নিজের রুমে।মাহিরের অনেক রাগ লাগে যে তাকে ছাড়া একা কেন গেলো। মাহির তো এমনিতেও যাবে না ওই বাড়ি কিন্তু মাহিরকে বলে যায়নি খুশি তাই রাগ লাগছে তার। মাহির কসম করেছে জামাই সেজে খুশিকে বিয়ে করতে একে বারে যাবে মাহির খুশিদের বাড়ি তার আগে না। মাহির খুশিকে ফোন করার জন্য ফোন বার করে কিন্তু মাহিরের মনে আসে খুশির নাম্বারই তো নেই তার কাছে। কি আজব ব্যাপার এতো দিন থেকে এক সঙ্গে আছে অথচ নাম্বারটা নেয়নি। মাহির উঠে অর্জুনের রুমে যায়। অর্জুনের রুমে গিয়ে দেখে অর্জুন ফোনে কথা বলছে অরিনের সঙ্গে। মাহির গিয়ে বলে,
“অর্জুন খুশির নাম্বার টা দে।”

অর্জুন অরিনকে বলে পরে কথা বলবে।দিয়ে কেটে দেয়।মাহিরকে বলে,
” ভাই এতোদিন থেকে এক সঙ্গে আছো আর নাম্বার জানো না?”
“দরকার পরেনি তাই নেইনি এখন দে তুই।”
” আচ্ছা।”

বলেই অর্জুন নাম্বার দিয়ে দেয় মাহির কে। নাম্বার পেয়ে মাহির নিজের রুমে চলে যায় আর খুশি কে কল দেয়।
কিছুখন রিং করার পর কল ধরে খুশি।মাহির বলে।,
“ওই তুই আমাকে না বলে গেছিস কেন?”
” তুমি ঘুমাচ্ছিলা যে তাই।”
“ডেকে দিতে কি হইছিলো?” (রেগে)
” সরি।”

“রাখ তোর সরি। তুই এখনি এই বাড়িতে আসবি।”
” এখন? কিন্তু এখন তো রাত। আমি যেতে পারবো না একা।”
“ওকে তুই বের হ আমি যাচ্ছি নিতে।”
” আজ এখানে থাকি না? কি হবে থাকলে?”
“না থাকতে হবে না তুই আয় আমি যাচ্ছি।”
বলেই ফোন কেটে দেয় মাহির। এই দিকে খুশি রেগে মেগে বলে।
” আহা আসছে দেখো।এমন ভাব যেনো আমি তার বিয়ে করা বউ আমাকে ছাড়া ঘুম আসবে না। বজ্জাত একটা হুহহ।”(বিরবির করে বলে খুশি)

খুশি তার আব্বু আম্মুর রুমে গিয়ে বলে সে নানু বাড়িতে যাবে মাহির ভাইয়া ডাকে তাই। এতে আব্বু আম্মু কিছু বলে না শুধু আব্বু বলে,
“আমি কি রেখে আসবো মামনি?”
” না আব্বু মাহির ভাইয়া আসছে নিতে আমি যাই।”
বলেই খুশি বেরিয়ে বাড়ি থেকে।খুশির আব্বু খুশির আম্মু কে বলে,
“তোমার এখনো মনে হয়না খুশি মাহিরকে ভালোবাসে? ভালো না বাসলে মাহিরের বলায় এতো রাতে চলে যেতো না।”
” আমিও জানি খুশি মাহির কে ভালোবাসে কিন্তু সেটা বুঝতে পারছে না খুশি।আর আমি চাই খুশি বুঝুক।না বুঝে কোন সম্পর্কে জড়াতে দিব না আমি আমার মেয়েকে।”

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১১

খুশি বের হয়ে দেখে বাইরে মাহির দাঁড়িয়ে আছে। মাহির খুশিকে আসতে দেখে খুশির দিকে তাকায় মাহির। খুশি সাদা একটা টি-শার্ট পরে আছে আর প্লাজু।চুল গুলো এলোমেলো করে খোপা করা। মাহির খুশিকে নিয়ে বাড়িতে না গিয়ে নদীর পারে নিয়ে যায়। চাঁদনি রাত আকাশে এক থালা একটা চাঁদ উঠে আছে। চাঁদের আলোয় নদীর পানি ঝলমল করছে। অনেক স্নিগ্ধ পরিবেশ। খুশিরও অনেক ভালো লাগছে। মাহির খুশি এক জায়গায় বসে পাশাপাশি। এখন রাত ১০টা কিন্তু গ্রামে মনে হচ্ছে ১২ টা ১ টা রাত।কারণ গ্রামের সবাই খুব জলদি ঘুমিয়ে পরে। মাহির খুশি কে বলে,

“তোর কখনো কাউকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে না?”
মাহিরের কথায় খুশি চমকায়। তবে বুঝতে দেয়না সেটা মাহিরকে।ভালোবাসা শব্দটা শুনলে খুশির আগে মাহির মুখ টা ভেসে উঠে।কিন্তু কেন এমন হয় সেটা বুঝতে পারছে না খুশি। মাহির জবাব না পেয়ে আবার বলে,
” উত্তর দে খুশি।”
“জানি না আমি।”(খুশি)
খুশির উত্তরে মাহির সন্তুষ্টি হয়নি তা মাহিরের দীর্ঘশ্বাসে বুঝতে পারা যায়।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৩