এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১১ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১১
নুর নাফিসা খুশি

সকাল সকাল মাহিরের পিছে পিছে ঘুরঘুর করছে খুশি।এই দিকে মাহির পাত্তাও দিচ্ছে না।মাহির যেখানেই যাচ্ছে পিছু পিছু খুশিও যাচ্ছে।এই নিয়ে মাহির পুরো বাড়ি ঘুরে বেরিয়েছে আর সঙ্গে খুশিও ঘুরেছে। মাহির এবার তার রুমে চলে যায় খুশিও যায় সঙ্গে আর বলতে থাকে,
“মাহির দা প্লিজ এমন করো না।চলো না আমার সঙ্গে। আমি একা যেতে পারবো না তাই তোমাকে বলছি প্লিজ।”(মাহিরের পিছনে দাঁড়িয়ে)

“তুই আসার সময় একাই এসেছিলি।”(খুশির দিকে না তাকিয়ে)
” ভাইয়া প্লিজ চল না আর কতো ঘুরাবি তোর পিছু।”
মাহির এবারও পাত্তা না দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগে আর খুশি ও মাহিরের পিছু পিছু যেতে লাগে তখনি মাহির পিছু ঘুরে খুশির দিকে তাকিয়ে বলে,
“বাথরুমে যাচ্ছি,যাবি তুই আমার সঙ্গে ? আয় যাবি তো আয়।”(মাহির খুশির হাত টেনে)
” আরে না না থাক।তুই একাই যা আমি বাইরে ওয়েট করছি।”(নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে খুশি)
“আবুলের ডিম একটা।”

বলেই মাহির ওয়াশরুমে চলে যায় আর এই দিকে খুশি মাহিরের বেডে বসে ভাবতে থাকে কি করে মাহির কে রাজি করানো যায়।” (কাহিনি বুঝছেন না তো আচ্ছা আমি বুঝাই)
রামপুর থেকে নানুর ফোন এসছিল। তিনি মাহির কে আর খুশি কে এক সঙ্গে দেখতে চান। খুশি এটা শুনেই তো সেই খুশি। কতোদিন পরে নিজের গ্রাম যাবে। আব্বু,আম্মু,মামা,মামি,নানু,অর্জুনকে দেখবে। কিন্তু মাহির কিছুতেই যেতে রাজি হয় না।সেই সকাল থেকে খালামনি,খুশি কতো বুঝালো তবুও তার একটাই কথা সে যাবে না। খালামনি বুঝাতে হার মানলেও খুশি এখনো মানে নি।খুশির একটাই জেদ মাহিরকে রাজি করিয়েই ছাড়বে।তাই সকাল থেকে বিকেল ৩ টা বাজে এখন।তবুও খুশি মাহিরের পিছু ছাড়েনি। আজ রবিবার কলেজ অফ(ইন্ডিয়া তে রবিবার সব কিছু অফ থাকে।তাই বাড়িতেই আছে মাহির খুশি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কি করে মাহিরকে রাজি করানো যায় তা গালে হাত দিয়ে ভাবছে খুশি। তখনই ওয়াশরুম থেকে মাহির বের হয়ে আসে শুধু টাওয়াল পরে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে গোসল করেছে।চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে মাহিরের। গায়ে একটা সাদা সেন্টু গেঞ্জি পরা। সুঠাম দেহে অনেক সুন্দর লাগছে মাহিরকে।খুশি হা করে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু পরক্ষনে ভাবে,
” আরে দূর খুশি পরেও হা করে তাকানো যাবে এই কিউট ব্যাটার দিকে.এখন আমার মিশন কমপ্লিট করতে হবে।”(বির বির করে নিজে নিজেই বলে খুশি)

খুশি উঠে মাহিরের কাছে গিয়ে মাহিরের হাত ধরে টেনে বেডে বসিয়ে দেয়।মাহির বলে,
“কি করছিস বলতো তুই।আমি কিন্তু মাত্র গোসল করেছি আবার গোসল করতে পারবো না।”(শয়তানি হেসে বলে)
মাহিরের কথার মিনিং বুঝতে খুশির দুই মিনিট মতো সময় লাগলো।যখন বুঝল তখন মাহিরকে একটা ঘুসি দিয়ে বলে,
“লুচু তুই চুপ থাক। বড়ই হয়েছিস কিন্তু এখনো চুল মুছতে পারিস না দাড়া আমি মুছে দেই।”
বলেই খুশি আলমারি থেকে আরেকটা টাওয়াল এনে মাহিরের চুল খুব যত্নে মুছে দিতে লাগে। মাহির চোখ বন্ধ করে খুশির এই কেয়ারিং ফিল করছে।মাহিরের অনেক ভালো লাগে যখন খুশি তার ওপর অধিকার খাটাতে আসে। চুল মুছা হলে মাহির খুশিকে পঁচানোর জন্য বলে,

“তুমি যতই আমার সেবা যত্ন করো আমি কিন্তু রামপুর যাচ্ছি না।”
” সত্যিই যাবি না?”(মন খারাপ করে)
“না।”
খুশি মন খারাপ করে রুম থেকে বের হয়ে যেতে লাগে তখনি মাহির বলে,
” কেউ যদি আমার সঙ্গে অর্জুনের বাড়ি যেতে চায় তো রেডি হতে পারে।”
খুশি থমকে দাঁড়ায় আর ভাবতে থাকে মাহির কি বললো।
“অর্জুনের বাড়ি মানে তো মামার বাড়ি আর মামার বাড়ি মানে তো নানুর বাড়ি আর নানুর বাড়ি মানে রামপুর?তার মানে ভাইয়া রাজি হয়ে গেছে।”(খুশি নিজে নিজে এগুলা বলে)
খুশি পিছনে ঘুরে দৌড়ে মাহিরের কাছে গিয়ে মাহির কে জরিয়ে ধরে বলে,

” আয়ায়ায়া ভাইয়া তুই রাজি হয়ে গেছিস আমরা রামপুর যাবো।ইয়েপ্পি।আমি এখনি রেডি হচ্ছি। আমাদের বিকেল ৫ টায় ট্রেন।”
বলেই খুশি মাহিরের গালে কিস করতে যায় কিন্তু মাহির এতো লম্বা যে গাল পর্যন্ত যাচ্ছেই না খুশি। খুশি এবার মাহিরকে টেনে সোফার কাছে নিয়ে আসে তারপর খুশি সোফায় উঠে মাহিরের গালে কিস করে নাচতে নাচতে নিজের রুমে চলে যায়। এই দিকে মাহির গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে খুশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কি করলো মেয়েটা।খুশির কান্ড দেখে মাহির হেসেই দেয়।
“পাগল একটা।”

বলেই মাহির রেডি হতে লাগে আর যেহেতু গ্রামে কিছু দিন থাকবে তাই ব্যাগে নিজের দরকারি জিনিস আর জামা কাপড় ভরে নিল মাহির। ৪ টা ৩০ মিনিটে বাড়ি থেকে বের হয় মাহির আর খুশি। স্টেশনে যেতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগে। মাহির খুশি নিজেদের ব্যাগ নিয়ে স্টেশনে আসে ট্রেন আসতে এখনো ২০মিনিট বাকি কারণ ট্রেন লেট আসবে আজ ৫ টায় আসার কথা কিন্তু ৫টা১৫ তে আসবে আর এখন বাজে ৪টা ৫৫। মাহির খুশি কে বলে।
” তুই এখানে বসে থাক আমি কিছু কিনে নিয়ে আসি ট্রেনে খুদা লাগতে পারে।”
“ঠিক আছে।”(খুশি মুচকি হেসে বলে)

মাহির খুশি কে বসিয়ে রেখে চলে যায়।। ১৫মিনিট হতে চললো মাহির এখনো আসছে না দেখে খুশির অনেক টেনশন হতে লাগে। ট্রেনের হর্ন ও বাজছে তার মানে ট্রেন ঢুকছে। খুশি এই দিক ওই দিক দেখতে লাগে কিন্তু মাহির কে কোথাও পায়না। খুশির কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। তখনি দূরে পরিচিত মুখ টা ভেসে উঠে। মাহিরকে দেখে খুশি প্রান ফিরে পেল। মরুভূমুতে পানির দেখা মিললে যতটা খুশি লাগে ঠিক মাহিরকে দেখে খুশির তেমনই লাগছে। মাহির দৌড়ে এসে খুশির কাছে দাঁড়ায়। খুশি বলে,
” কই গেছিলি স্টেশনেই তো কতকিছু পাওয়া যেত।ট্রেন আসার সময় হয়ে গেছে তবুও তুই আসছিলি না।”

“আরে এখানে কিছু ভালো নেই। তাই একটু দূরে গিয়ে নিয়ে এলাম।”
ট্রেন চলে এসেছে তাই খুশি আর কথা বাড়ালো না। মাহির খুশি নিজেদের বুক করা কামরায় চলে গেলো। নিজের কামরায় ঢুকে খুশি ধপাস করে বসে পরে সিটে। আর মাহির কে বলে,
” মাহির দা ট্রেনের রুমে লেখা কেন থাকে মহিলা কামরা পুরুষ কামরা?”
“হিন্দি তে রুম কে কামরা বলে আর ইন্ডিয়া তে হিন্দি কথার চর্চা বেশি।
” জানো মাহির দা আমি না একটা ফানি ভিডিও দেখেছি। জিজ্ঞেস করো কি”
মাহির না চাইতেও জিজ্ঞেস করে”কি” তখন খুশি বলতে লাগে,

“একটা লোক তার ফ্রেন্ড কে বলে যে,হ্যাঁ রে তুই কাল পাবলিকের কাছে গনধোলাই খেলি কেন? তখন তার ফ্রেন্ড বলে আমার কোন দোষ নেই ট্রেনের রুমের বাইরে লেখা ছিলো মহিলা কামরা তাই আমি ওখানে দাঁড়ি থাকা এক মহিলাকে কামড়ে ধরেছি বাকি টা ইতিহাস।”
বলেই খুশি নিজেই খিল খিল করে হাসতে শুরু করে মাহিরের হাসি পেল না মোটেও তবুও বললো,
” ভেরি ফানি।”

খুশি মাহিরের এমন রসকস হিন রিয়েকশন দেখে চুপ করে যায়। আর মনে মনে ১০৭ টা গালি শুনায়।
কলকাতা থেকে হাওরা ৫ ঘন্টা জার্নি করে নামে মাহির আর খুশি। কলকাতা থেকে মুরারাই ডাইরেক্ট ট্রেন পায়নি তারা তাই কেটে কেটে যেতে হচ্ছে।এখন হাওরা স্টেশনে ট্রেন ধরে মুরারাইয়ে নামবে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় এখানে ট্রেন আসতে প্রায় ভোর ৫ টা বাজবে। তার আগে ট্রেন নেই। মাহির গাড়ি নিয়ে আসতে চেয়েছিল কিন্তু খুশি নিতে দেয় নি কারণ খুশির ট্রেন জার্নি করতে অনেক ভালো লাগে।(বাস্তবে খুশি মানে আমি এখনো ট্রেনে চড়িনি?)।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১০

খুশি ঘুমে ঝিমুচ্ছে।মাহিরের ঘুম পাচ্ছে খুব।কিন্তু সঙ্গে একটা মেয়ে কে নিয়ে এতো রাতে স্টেশনে ঘুমানো তার ঠিক হবে না তাই সে ফোন গুতাচ্ছে। খুশি মাহিরের পাশে বসে মাহিরের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়। মাহির ও পরম যত্নে খুশিকে বুকে আগলে রাখে।
সকাল ৯ টা খুশির চোখে পানির ছিটা পরায় লাফিয়ে উঠে। ঘুম ঘুম চোখে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কেমন পরিচিত পরিচিত লাগে সব কিছু। ভাল করে তাকিয়ে দেখে মুরারাই স্টেশন। খুশি ঘড়ি দেখে ৯ টা বাজে চোখ বড় করে মাহিরের দিকে তাকায়।
“এতো ঘুমাস কেমনে তুই? সেই রাত ২টায় ঘুমালি আর উঠলি এখন।আমার কত কষ্ট হয়েছে জানিস তোকে বইতে।”(মাহির)
“আমাকে উঠালেই তো পারতি।”

“কতো ডেকেছি তুই শুনলে তো”
” সরি।”
“থাক আর সরি বলা লাগবে না চল এখন।”
মাহির খুশি ট্যাক্সি তে উঠে বসে। ৩০ মিনিট পরে রামপুরে নামিয়ে দেয় তাদের।ভাড়া মিটিয়ে সেই মাটির রাস্তার কাছে যায় মাহির বলে।

” আরে এটা সেই মাটির রাস্তা না? কিন্তু এখন আর মাটির নেই পাকা হয়ে গেছে বাহ।”
“আপডেট হয়েছে সব কিছু।(খুশি)
এই রান্তায় রিকশা চললেও মাহির খুশি উঠলো না। হেঁটেই যাচ্ছে। এখন ধান লাগানোর সময় তাই সব জমিতে কাঁদা আছে।
কিছুক্ষন হাঁটার পর খুশির চোখ যায় নদীর দিকে। সেখানে একজনকে দেখা যাচ্ছে। খুশি একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে চিনে ফেলে।চিৎকার করে বলে,
“অরিন!”
খুশি দৌড়ে নদীর দিকে যায়। মাহির কিছুই বুঝল না। সেও গেল খুশির পিছু পিছু।
“অরিন এই অরিন।দেখ আমি এসেছি।”(খুশি)

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১২