এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১০ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১০
নুর নাফিসা খুশি

(গল্প শুরু করার আগে আমি কিছু কথা বলি শুনুন। আপনারা প্রথম পর্ব থেকে গল্প পড়ছেন।তো কোথাও পড়েছেন আমি বাংলাদেশে নিয়ে কিছু লিখেছি? বা বলেছি আমি বাংলাদেশের? তাহলে ৯ পর্ব তে আমি স্বাধীনতা দিবস নিয়ে লিখেছি এতে আমাকে কথা শুনাচ্ছেন কেন?আমি ইন্ডিয়ান তাই ইন্ডিয়া নিয়েই গল্প লিখছি।তাই ইন্ডিয়াতে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস তাই আমিও ৯ পর্ব তে স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠান দিয়েছি। হয়তো জানেন না তাই এমন কমেন্ট করেছেন আবার ইনবক্সে এসে বলছেন সমস্যা নাই।তবে আমি ইন্ডিয়ান মনে রাখবেন সব।)

আজ পাঁচ দিন মাহির খুশির সঙ্গে কথা বলছে না। খুশি অনেক বার চেষ্টা করেছে কথা বলার কিন্তু মাহির সুযোগই দেয়নি কথা বলার। মাহির এমনিতেই খুশির সঙ্গে কম কথা বলে কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর কথাই বলছে না। খুশির অনেক খারাপ লাগছে। নিজের রুমে পায়চারি করছে আর ভাবছে কি করে মাহিরের সঙ্গে কথা বলা যায়।
“কি এমন ভুল করেছি যে এতো দিন কথা অফ রাখতে হবে। বজ্জাত একটা,হনুমান, সাদা পিপড়া। কি করলে কথা বলবে।আল্লাহ গিভমি একটু আইডিয়া প্লিজ।”

নিজে নিজে বলছে আর রুমের এই দিক থেকে ওই দিক যাওয়া আসা করছে। খুশি আর কিছু ভাবতে না পেরে মনে অনেক সাহস নিয়ে মাহিরের রুমের দিকে এগোলো। মাহিরের রুমের কাছে এসে ভাবছে ঢুকবে কি না।একটু উকি দিয়ে দেখলো খুশি। মাহির কানে হেডফোন গুজে ফোনে কি যেনো দেখছে। খুশি আস্তে আস্তে রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল।অনেক ভয় লাগছে খুশির।মাহির রুমে খুশিকে ঢুকতে দেয়না তবুও লুকিয়ে আজ ঢুকল খুশি। সেই প্রথমদিনে ঢুকেছিল আর আজ। সেদিন ওতো ভালো করে রুমটা দেখতে পারেনি আজ খেয়াল করে দেখল রুমটা অনেক পরিস্কার গুছানো আর অনেক বড়। মাহিরের কানে হেডফোন থাকায় এখনো বুঝতে পারেনি তার রুমে একটা বিড়ালের বাচ্চা মানে খুশি ঢুকেছে। দেখলে হয়তো খুশির এতোক্ষনে ৩৬ টা বেজে যেতো নিশ্চিত। খুশি এবার রুম দেখা বাদ দিয়ে মাহিরের একটু কাছে গিয়ে ডাকতে লাগে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” মাহির দা,এই মাহির দা! শুনতে পাচ্ছো?”
রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মাহির সামনে তাকায়। সামনে খুশিকে দেখে মেজাজ গরম হয়ে যায় মাহিরের।কান থেকে হেডফোন খুলে রাগ নিয়ে বলে,
“কি চাই?”
” আমার কথা ছিলো তোমার সঙ্গে মাহির দা।”(মিন মিন করে)
“কি কথা?”
” তুমি আমার সঙ্গে কথা কেন বলছো না?”
“আমি কথা না বললে তোর কি এসে যায়?”
” জানি না কিন্তু আমার ভালো লাগছে না তুমি কথা বলো না তাই।”
“যা তুই আমার রুম থেকে। কতবার বলেছি আমার রুমে আসবি না।”
” যাবো না কি করবা? কি আছে এই রুমে যে আসতে দাও না। আমি কিছুতেই যাবো না।”(জেদ নিয়ে বলেই মাহিরের পাসে বেডে বসে পরে খুশি মুখ ফুলিয়ে)

“তুই দিন দিন জেদি হয়ে যাচ্ছিস খুশি।”
“সেটা তো আমি ছোট থেকেই ছিলাম।”
“থাক তুই বসে।আমি কথা বলব না।”
” হুহহ আমিও দেখছি তুমি কথা না বলে কোথায় যাও।”
মাহির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আবার কানে হেডফোন গুজে নিল। খুশি দেখতে নিল ফোনে কি দেখছে মাহির। কিন্তু মাহির দেখতে দিচ্ছে না।খুশি আরও চেষ্টা করতে লাগে। কিন্তু মাহির দেখতেই দিচ্ছে না। খুশি এবার মাহিরের কান থেকে হেডফোন খুলে বলে,

“কি দেখছো তুমি ভাইয়া?”
” যাই দেখি, তোকে বলতে হবে নাকি?”
“আমিও দেখবো।দেখাও আমাকেও।”
” তোর দেখার জিনিস না এটা।”
“কেন? দেখবো দাও।”
“নে দেখ। পরে আবার ছি ছি বলতে পারবি না।”(মাহির শয়তানি হাসি দিয়ে ফোন এগিয়ে দেয় খুশির দিকে)
খুশি কিছু একটা ভেবে বলে,
“না না আমি দেখবো না।ছি ছি ভাইয়া!তুই কতো খারাপ!তুই খারাপ জিনিস দেখিস! ছি ছি ছি!”
“এতোক্ষন দেখার জন্য পাগল হচ্ছিলি এখন দেখ।”
“না দেখবো না।”
” দেখ দেখ। ”

বলেই মাহির খুশির সামনে ফোন ধরে খুশি ভয়ে ভয়ে দেখে তো অবাক।আরে মাহির তো মুভি দেখছিল আর খুশি কি না কি ভেবেছে ছি ছি। এখন নিজেরই খারাপ লাগছে।মাহির মজা নিয়ে বলে,
“তুই কি ভাবছিলি? আমি খারাপ ভিডিও দেখছিলাম। আর তুই এটাও জানিস ফোনে খারাপ ভিডিও দেখা যায়।বাহ অনেক কিছু শিখে গেছিস তো। খালামনি কে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি দাঁড়া।”
” ভাইয়া তুই অনেক খারাপ।” (বলেই খুশি মাহিরের চুল টেনে ধরে)
“আহ খুশি ছাড়।আমার ব্যাথা লাগে।”

” না ছাড়ব না। বল আগে,কথা বলবি কি না বল।এখনি বল।”
“ওকে ওকে বলবো।এবার ছাড় আমার এতো সুন্দর সিল্কি চুল গুলো নষ্ট হয়ে যাবে।”
” যাক নষ্ট হয়ে তাতে আমার কি।তুই টাকলু আঙ্কেল হলে তোকে আর কোনো মেয়ে হা করে তাকিয়ে দেখবে না।”
“আমাকে মেয়েরা দেখলে তোর এতো জ্বলে কেন? আমাকে হিংসা করিস আমার মতো সুন্দর না তাই।”
” আহা এসেছে দেখ।সুন্দর তুই!একটা পচা আলু,পচা টমেটো বুঝলি। তোর থেকে আমি বেশি কিউট আর সুন্দরী।”
“আসছে দেখ পেত্নি রানী নিজেকে সুন্দরী বলতে।”

” ভাইয়া তোকে আমি মেরেই ফেলবো এবার। আমি পেত্নি না তুই পেত্না।”
বলেই খুশি মাহিরের গলা চেপে ধরে। মাহির বেডে শুয়ে থাকায় খুশি আরও ভালো করে মাহিরের গলা ধরতে পেরেছে। মাহির খুশির হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে বেডে ফেলে দেয় আর মাহির ওপরে। খুশি বলে,
“আহহ আল্লাহ কোন হাতি রে তুই।আমার কোমর গেলো,আর নেই। তুই এতো ভারি কেন।”
” এখন কেমন লাগছে বল। কিছু বলি না বলে খুব উরছিস না?এখন তোর ডানা কেটে ফেলি আয়।”
“ভাইয়া ছাড়।”
” তুই আবার আমাকে ভাইয়া আর তুই করে কেন বললি বল।এবার শাস্তি নে।”

বলেই মাহির খুশির গলায় সজোরে একটা কামড় বসিয়ে দেয়। খুশি ব্যাথায় চিৎকার করতে গেলে এক হাতে মাহির খুশির মুখ চেপে ধরে। কামড়টা অনেক জোরেই ছিলো তাই খুশির চোখে পানি চলে আসে। মাহির খুশিকে এতো কাছে পেয়ে কি করছে সে নিজেই ভুলে গেছে। কামরের যায়গায় গভীর ভাবে একটা কিস করে মাহির।খুশির এতে পুরো শরীর শিউরে উঠে। আগে কখনো এমন ছোঁয়া পায়নি খুশি। মাহির এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে যেনো।আস্তে আস্তে খুশির ঠোটের দিকে এগুতে যায় মাহির। তখনই মাহির খেয়াল করে খুশির চোখের পানি।তখনই ছেড়ে দেয় খুশি কে।খুশি কে ছেড়ে মাহির বলে,
“আর কখনো আমার রুমে আসবি না খুশি।” (বলেই বারান্দায় চলে যায় মাহির)

খুশি উঠে নিজের রুমে চলে আসে।এসে গলার কামরের যায়গাটা আয়নায় দেখে আর বলে,
” রাক্ষস একটা।কি করে কামর দিল।কোন মায়া দয়া নেই এই বজ্জাত টার হুহ।”
এই দিকে মাহির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।দেওয়ালে জোরে একটা ঘুসি দিয়ে বলে,

“তুই কেন বারবার আমার কাছে আসিস খুশি।তুই বুঝবি না আমার কষ্ট ঠিক কোথায়। তোর আসে পাশে থাকলে আমি নিজেকে সংযত করতে পারি না। তোকে কাছে পাওয়ার তীব্র চাওয়া আমাকে পাগল করে দেয়। তোকে এই জন্য আমার রুমে আসতে দেইনা। আজ একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম আমি। আমি তোর মনের কথা না জেনে কিছু করতে পারবো না।জোর করেও তোকে নিজের করতে পারবো না আমি। তোর মা নতুন শর্ত দিয়েছে তোর মনে আমি থাকলে তোকে আমি পাবো নয়তো না। তুই কি আমাকে ফিল করতে পারিস না খুশি? আমি তোকে এতো এতো ভালোবাসি তুই কি আমাকে একটু ভালোবাসতে পারবি না? কখন বুঝবি তুই সব খুশি কখন। এর আগে যদি তোর মনে অন্য কেউ চলে আসে তখন আমি কি করবো। আমি যে মরে যাবো তোকে ছাড়া।

নিজে নিজে বলে থাকে মাহির। এই দিকে খুশি নিজের বেডে শুয়ে ভাবছে।
” মাহির দা কি আমাকে ভালোবাসে? না না মাহির দা তো আমাকে পছন্দই করে না ভালোবাসবে কি করে। আর তার তো জিএফ আছে। থাকলে আমার কি আমি কেন এতো কিছু ভাবছি। যাক মরুক সব আমি তো এখন ঘুম দেই।”
বলেই ঘুমিয়ে গেলো খুশি। খুশি কি কখনো বুঝবে না মাহিরের ভালোবাসা? আর বুঝলেও কি খুব বেশি দেরি করে ফেলবে না তো আবার।যখন কিছুই করার থাকবে না।

সকালে খুশি উঠে নামায পড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়। আজ খুশির উঠে হাটতে ইচ্ছা করছে না তাই আবার শুয়ে পরেছে।সকাল ৯ টায় নাস্তার টেবিলে সবায় বসে আছে খুশি ছাড়া।এখনো খুশি আসে নি দেখে মাহির ভাবে খুশি কালকের জন্য রাগ করেনি তো আবার। তাই মাহির খুশির রুমের দিকে যায়। রুমের দরজা খোলাই থাকে খুশির।তাই মাহির নক না করেই ভিতরে ঢুকে যায়। দেখে খুশি এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে। মাহির খুশির পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৯

“পুচকি টা কত্তো বড় হয়ে গেছে অথচ এখনো সব কাজ বাচ্চাদের মতো করে।”(খুশির কপালে গভীর চুমু দিয়ে বলে)
মাহির শুনতে পায় খুশি ঘুমের ঘোরে কি যেনো বলছে। তাই শুনার জন্যে একটু কাছে যায় মাহির।
” আহ বাঁচাও ওই বজ্জাত মাহির ভুত সেজে আমাকে মারতে আসছে বাঁচাও কেউ আহ বাঁচাও। এই বজ্জাত হনুমান মাহির তোকে আমি ভয় পাই না।তুই হুদাই আমারে ভয় দেখাস জল্লাদ একটা।টিকটিকির নানা। বিড়ালের জামাই, সাপের মেস। জলহস্তি একটা, থাপ্পর মেরে সব দাঁত ফেলায় দিব তোর।দূরে যা তুই দূরে যা নাগিনের জামাই নাগ।”

খুশির এমন উদ্ভট কথা শুনে কাঁদবে নাকি হাসবে বুঝতে পারছে না মাহির। রাগ ও আসে না ফেসে। মাহির এবার পানি এনে খুশির ওপর ঢেলে দেয়।খুশি লাফিয়ে উঠে বলে,
“আব্বু আম্মু খালামনি ছাদ ফুটে গেছে। কই তোমরা, বাঁচাও আমাকে।আমি ডুবে যাচ্ছি।”
মাহির এবার খুশির মুখ চেপে ধরে বলে,
” এই মেয়ে পাগলের মতো করিস কেন? ভালো করে তাকিয়ে দেখ। ”

খুশি এবার ভালো করে দেখে কিছুই হয়নি। আর মাহির যে তার উপর পানি ঢেলেছে সেটাও বুঝতে পেরেছে। খুশি রেগে মাহিরের দিকে তাকায়। মাহির এবার একটু দূরে সরে দাঁড়ায় খুশি কে ছেড়ে দিয়ে।
“তুমি আমার গায়ে পানি দিলা কেন?”
” তোর সাধের ঘুম উড়ানোর জন্য।”
“এটা ঠিক না মাহির দা।”
” আমার কাছে সব ঠিক। এখন ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। সবাই ওয়েট করছে আর কলেজেও যেতে হবে।”
বলেই মাহির চলে যায় সেখান থেকে।খুশি রাগ নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১১