এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৯ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৯
নুর নাফিসা খুশি

কলেজে স্বাধীনতা দিবসের প্রোগ্রামের খুব তোড়জোড় চলছে।মাহির খুব বিজি। বিজি হবেই না কেন কলেজের ভিপি বলে কথা অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব মাহিরের ওপরে।আজ ১০ আগস্ট আর ৪ দিন পরে ১৫ই আগস্ট, ইন্ডেপেন্ডেন্স ডে। কলেজের সব স্টুডেন্ট নাচ, গান, আবৃতিতে অংশ গ্রহণ করছে।এই নিয়ে খুশির কোন মাথা ব্যাথা নেই। সে চুপচাপ ক্যান্টিনে বসে বার্গার খাচ্ছে।পাশে বসে অথৈ বকবক করেই যাচ্ছে সে কোন গান টা গাইবে তা নিয়ে। অথৈ গানে নাম দিয়েছে।অথৈ গান খুব ভালো পারে।

“খুশি তুই কিছুতে নাম দিলি না কেন বলতো?”(অথৈ খুশি কে বলে)
” নাম দেওয়ার জন্য ট্যালেন্ট লাগে।যা তোমার ফ্রেন্ড এর নেই।বুঝেছো ছোট বোন।”
সাইড থেকে মাহির বলে উঠে। মাহিরের কথায় রাগি চোখে তাকায় খুশি।মাহির এক কথায় খুশিকে অপমান করলো। মুখে বার্গার থাকায় কিছু বলতেও পারছে না খুশি।মাহির আবার বলে,
“একে শুধু খেতে দাও।খাওয়া ছাড়া কিছুই বুঝে না এই মেয়ে।”
বলেই মাহির চলে যেতে লাগে। খুশি মুখের বার্গার টা তারাতাড়ি শেষ করে বোতলের পানি ঢকঢক করে খেয়ে বলে উঠে,
” ওহ হ্যালো মিস্টার ভাইয়া,আমি সব কিছুই পারি ওকে। সব রকমের ট্যালেন্ট নিয়ে জন্মানো আমি বুঝেছো।”
মাহির পিছনে ঘুরে খুশির দিকে এগিয়ে এসে বলে,

“মুখে বললেই ট্যালেন্ট দেখানো যায় না বুঝলি। কাজে দেখাতে হয়।”
খুশি রেগেমেগে বলে,
“ওকে অথৈ চল রোদ স্যারের কাছে।আমি নাচে নাম দিব।”
“ওই সাদা চামচিকার কাছে কেন যেতে হবে।”(অথৈ মন খারাপ করে বলে)
অথৈ এর কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে খুশি,মাহির দুইজনেই অথৈ এর দিকে তাকায়।ওদের এভাবে তাকানো দেখে অথৈ বলে,
” না মানে বলছিলাম চল খুশি আমরা যাই।”
“কোথাও যাওয়া লাগবে না। নাম দেওয়ার লিস্ট আমার কাছে।আমি অ্যাড করে দিচ্ছি।”(মাহির বলে)
অথৈ খুশি কমন রুমে বসে আছে।খুশি পুরো চিল মুডে আছে কিন্তু অথৈ খুব চিন্তায় আছে। কারণ খুশি কি সত্যিই নাচতে পারবে তা নিয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“বড় মুখ করে তো নাম দিয়েই দিলি। এখন এটা বল নাচতে পারবি তো তুই?”(অথৈ)
“আরে বেবি চিল না! এতো টেনশন কেন নিচ্ছিস?আমি নাচ অনেক ভালো পারি।”
“সত্যি?”
“হুমম।”
খুশির মাহিরের খুব গায়ে লাগছে তাই নাচতে ইচ্ছা না থাকলেও নাম দেয়। যদিও খুশি নাচ অনেক ভালো পারে কিন্তু স্কুল কলেজে নাচা হয়নি তার কোনদিন। তা নিয়েই একটু নার্ভাস লাগছে খুশির। চারদিন ধরে খুব নাচের প্রাকটিস করে খুশি আর গানের অথৈ। দুই জনেই ফুল রেডি গান আর নাচ করার জন্য। দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের দিন চলে আসে ১৫ ই আগস্ট,
স্বাধীনতা দিবস।

সকাল সকাল মাহির কলেজে চলে গেছে,অনেক কাজ তার আজ।সব কিছু ম্যানেজ করতে হবে। এইদিকে খুশি অথৈকে নিয়ে পার্লারে গেছে রেডি হতে।
সকাল ৮ টায় কলেজের সব স্টুডেন্ট চলে আসে কারণ ৮ টা ৩০ মিনিটে পতাকা উত্তোলন করা হবে।কলেজের সব স্টুডেন্ট কলেজ মাঠে ছোট ছোট লাইন ধরে দাঁড়িয়েছে আগে জাতীয় সংগীত গাইবে। অথৈ খুশি ও রেডি হয়ে চলে এসেছে কিন্তু মাহির এখনো খুশি কে দেখেনি খুশিরা পিছনে দাঁড়িয়েছে।
সবাই মিলে এক সঙ্গে জাতীয় সংগীত শুরু করে।

“জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উত্‍‌কল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিস মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয়, জয় হে॥” ??

জাতীয় সংগীত গাওয়ার পরে পতাকা উত্তোলন করা হয়।তার পরে সবাই স্টেজের জায়গাতে চলে আসে।যারা নাচ,গান,আবৃতি,লেকচারে পার্টিসিপেট করেছে তাদের জন্য আলাদা একটা রুম ঠিক করা আছে সেখানে চলে যায় সবাই। অনুষ্ঠান শুরু হয় স্যারেদের লেকচার দিয়ে।অনেক সময় ধরে বক্তব্য দিয়ে স্যার নামে। তারপরে আসে মাহির।মাহির স্টেজে উঠা মাত্র মেয়েরা চিৎকারে করে উঠে।কারণ মাহিরকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে ব্ল্যাক পাঞ্জাবিতে। মাহির বলে,
“সবাই কে জানাই ‘হ্যাপি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’। তো আজকের অনুষ্ঠান শুরু করা যাক। প্রথমে আবৃতি করতে আসবে মৌমিতা দাস।”

বলেই মাহির চলে যায়।আবৃতি করতে লাগে মৌমিতা। একে একে সবাই নিজের নিজের নাচ গান করে গেলো।মাহির খুশিকে খুঁজছে।কিন্তু চোখেই পরে না খুশি কে তার। এবার অথৈ আসে গান নিয়ে,

Ae watan, watan mere, aabaad rahe tu
Ae watan, watan mere, aabaad rahe tu
Main jahan rahun, jahaan me yaad rahe tu
Ae watan… mere watan!
Tu hi meri manzil, pehchan tujhi se
Pahunchu main jahaan bhi
Meri buniyad rahe tu
Ae watan, watan mere, aabaad rahe tu
Main jahan rahun, jahaan me yaad rahe tu
Ae watan… mere watan!
Tujhpe koi gham ki aanch aane nahin doon
Kurbaan meri jaan tujhpe, shaad rahe tu
Ae watan, watan mere, aabaad rahe tu
Main jahan rahun, jahaan me yaad rahe tu
Aye watan…
Mere watan…
Aabaad rahe tu…
Aabaad rahe tu…
Ae watan… mere watan
Aabaad rahe tu!

অথৈ খুব সুন্দর করে গানটা শেষ করলো। সবাই করতালিতে মেতে উঠলো অথৈ এর গান শুনে। অসাধারণ গান গেয়েছে অথৈ।সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। রোদ তো হা করেই আছে এখনো। রোদের ধারণা অথৈ একটা ইউজলেস মেয়ে,কিন্তু তার ধারণা ভুল করে অথৈ যে এতো সুন্দর গান উপহার দিবে সবাইকে ভাবতেও পারে নি।
সবার শেষে এবার খুশি আসে নাচ করতে।মাহিরের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে খুশি আসে এবার।গান শুরু হওয়ার আগে স্টেজের লাইট অফ করে দিল।খুশি এসে স্টেজের মাঝে দাঁড়াল। গান শুরু হওয়া মাত্র লাইট জ্বলে উঠে। খুশিকে দেখে মাহিরের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।এতো বেশি সুন্দর লাগছে খুশিকে। খুশি নাচ করছে,

( Yahaan Har Kadam Kadam Pe Dharti Badle Rang
Yahaan Ki Boli Mein Rangoli Saat Rang… ) (x2)
Dhaani Pagdi Pehne Mausam Hain
Neeli Chaadar Taane Ambar Hain
Nadi Sunehri Hara Samundar Hain Re Sajila
Des Rangila Rangila Des Mera Rangila… (x4)
Sindoori Gaalon Wala Suraj Jo Kare Thitholi
Sharmeelen Kheton Ko Dhank De Chunar Peeli Peeli
Ghoonghat Mein Rang Panghat Mein Rang Cham Cham Chamkila
Des Rangila Rangila Des Mera Rangila… (x2)

মাহির খুশির নাচ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মাহিরের জানা ছিলো না খুশি এতো ভালো নাচতে পারে। সেদিন খুশি কে না রাগালে মাহির তো দেখতেই পারতো না খুশির এতো ভালো নাচ।
বিকেল ৩ টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়। মাহির খুশিকে আগেই বলে দিয়েছে যাতে একা বাড়ি না যায়। মাহির নিয়ে যাবে সাথে। কিন্তু মাহির কলেজের বাকি কাজ গুলো সারতে দেরি করে ফেলে। এই দিকে খুশি আর ওয়েট করতে না পেরে একাই হাঁটা ধরে বাড়ি যাওয়ার জন্য।কিন্তু পথ আটকে ধরে নীল।

“কি চাই?”(খুশি বিরক্ত হয়ে)
” তোমাকে।”
“মানে কি?”(রেগে)
” আজ তোমাকে খুব হট লাগছে।এতো সুন্দর নাচতে পারো তুমি আগে বলবে না?তাহলে আমি নিয়ে যেতাম তোমাকে। আমার বাড়িতে নাচ দেখাতে আমাকে।”
“মুখ সামলে কথা বলুন মিস্টার নীল।আগের থাপ্পড় ভুলে গেছেন?”(খুশি রেগে)
” ভুলিনি বলে তো বারবার আসি তোমার কাছে। তোমার ওই নরম হাতের ছোঁয়া পেতে।”(খুশির হাত ধরে বলে)
“কি অসভ্যতা করছেন। হাত ছাড়ুন নয়তো চিৎকার করবো আমি।”

” আচ্ছা করো তাহলে চিৎকার।এখানে আমার মুখের ওপর কথা বলার কেউ নেই বুঝেছো?”
তখনই সজরে একটা লাত্থি পরে নীল এর গায়ে।নীল ছিটকে খুশির থেকে অনেক দূরে মেঝেতে পরে যায়। রেগে ওপরে তাকিয়ে দেখে মাহির রেগে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মাহির নীল এর কলার ধরে তুলে মুখে এক ঘুসি দিয়ে বলে।
“তোকে বলেছিলাম না খুশির থেকে দূরে থাকবি। কথা কানে যায়নি তোর?কোন সাহসে খুশির হাত ধরেছিস?”(বলেই আবার ঘুসি দেয় মুখে)
মাহির যেমন পারছে তেমন করেই মারছে নীল কে। নীল আধমরা হয়ে যায়। কলেজের কিছু ছেলে এসে মাহির কে আটকায়।মাহির বলে,

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৮

” আজ ১৫ আগস্ট,স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু তোদের মতো কিছু নোংরা পাবলিকের জন্য আজও অনেক মেয়ে স্বাধীন না। আজও অনেক মেয়ে লুকিয়ে থাকে, ঘরে বন্দি থাকে তোদের মতো পশুর হাতে যাতে না পরে তাই।”(বলেই আবার এক লাত্থি দিয়ে খুশি কে নিয়ে চলে যায় মাহির)
খুশি ভয়ে কান্না করেই যাচ্ছে।মাহিরের এতো রাগ সে ভাবতেও পারে নি। মাহির রেগে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।অনেকক্ষন যাওয়ার পর একটা ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মাহির খুশির হাত ধরে গাড়ি থেকে নামে।খুশি কিছু বুঝতে পারছে না মাহির কি করছে। মাহির বলে,

“তোকে বলেছিলাম না আমার জন্য ওয়েট করতে।তুই কেন কলেজ থেকে বের হলি? খুব পাখনা গজিয়েছে তোর?নিজেকে কি ভাবিস তুই হ্যাঁ?বারবার বিপদে পরবি আর আমি আসবো বাঁচাতে।তোর আব্বু আম্মু আমাদের ভরসায় রেখে গেছে তোকে আর তুই আমার কথাই শুনিস না।বেয়াদপ মেয়ে একটা!”(বলেই গাড়ির চাকায় এক লাত্থি দেয় মাহির)
খুশি ভয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। কিছু বলতেও পারছে না,
“এমন ভাবে না কেঁদে গাড়িতে বস গিয়ে।”
বলেই মাহির গাড়িতে উঠে বসে।খুশি ও বসে। তারপরে বাড়িতে চলে যায় দুই জনে। মাহির একটা কথাও বলেনি খুশির সাথে আর খুশি ও বলে নি।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১০